এক টুকরো মেঘ,,Part : 5
Write : Sabbir Ahmed
-না আপনি ভুল বুঝতেছেন (শুভ)
-ভুল না সঠিক একটু পরেই টের পাবেন। করলার খাওয়ালেই পেট থেকে সত্যি কথা বের হবে (ইরা)
,,
শুভ ফিরে এসে টেবিলে বসে খেতে লাগলো। কিছুসময় পর ইরা ওয়াশরুম থেকে বের হলো। এখন সে বাইরে চলে যাবে শুভর খাওয়াও শেষের মধ্যে। ইরা শুভর দিকে আড় চোখে তাকায় একটু রাগী ভাব নিয়ে।
শুভ বুঝতে পারে মেয়েটা তারউপর রাগ করেছে আর সে হয়তো তাকে খারাপ ভাবছে।
,,
ইরা চলে গেলো তার রুমে। শুভ খাওয়া শেষ করে বাইরে এলো। বেলা যত গড়াচ্ছিলো বাড়িতে উৎসবের আমেজ টা বাড়তেছিলো। আজ শুভর বাচ্চাদের সামলাতে হচ্ছে না। যে যার যার মতো খেলছে। শুভকে যে দায়িত্ব দিয়েছিল ব্যাপার টা সে ঠিকই খেয়াল করেছে।
,,
ফারিহা কাজে ফাঁকে শুভকে ডেকে বলে…
-আজ তো বাচ্চাদের নিয়ে খেলছো না (ফারিহা)
-ওরা কেউ আমার কথা শুনছে না (শুভ)
-হুমমম, আর একা একা এদিক ওদিক দাঁড়িয়ে থেকে কি করো? কারও সাথে তো কথাই বলতে দেখি না
-কেউ তো আমার সাথে এসে কথা বলে না
-হুমম খুব একাকী লাগছে
-তা লাগছে, তবে এমনিতে ভালোই লাগছে
-হুমম আমি খুব ব্যস্ত তোমাকে সময় দিতে পারছি না
-আরে নাহহ কি যে বলেন আপনি আমাকে সময় দিতে হবে কেনো? আপনি এমনিতে অনেক দামী মানুষ
-সেটা কিভাবে
-আপনি একজন টিচার তারউপর এই বাড়ির নিয়ন্ত্রক ও আপনি।
-তাতে কি হয়েছে? তুমি আমার এক মাত্র ফুপাতো ভাই। আর তোমার হঠাৎ করে আসা আমার খুব ভালো লেগেছে। তোমাকে সময় দিতে পারলে আরও ভালো লাগতো
-আচ্ছা সে দেখা যাবে,
-হুমম আচ্ছা আমি যাই এখন অনেকক কাজ পরে আছে
-ঠিক আছে
-তোমার কোনো সমস্যা হলে আমি খুঁজে তারপর বলবা কেমন?
-হুমম বলব। আপনার কোনো দরকার হলে আমাকে বলবেন
-আচ্ছা ঠিক আছে (ফারিহা মিষ্টি হেসে বলল)
,,
শুভ বাড়িটার একদম বাইরে চলে আসলো। আর এসেই দেখে ইরা আর তার সাথে দুটো মেয়ে কি নিয়ে যেন হাসাহাসি করছে। ইরা শুভকে দেখতে পাওয়ার সাথে সাথে ডাকা শুরু করে…
-এই কামরুইল্লা এম্মে আইয়ো (ইরা)
,,
শুভ গুটি গুটি পায়ে হেঁটে তাদের সামনে গিয়ে বলল..
-আমার নাম কামরুল না শুভ
-এহহ আসছে, আপনাকে দেখতে আমার হোস্টেল এর দারোয়ান কামরুইল্লার মতো দেখতে(ইরা)
-কি জন্য ডেকেছেন সেটা বলেন
-ডেকেছি বলে খুব ভাব দেখাচ্ছেন?
-আপনার যা মনে হয়
-শোনেন
-বলেন
-চলুন একটু হেঁটে আসি
-আমি একা ছেলে হয়ে আপনাদের সাথে…
-ছেলে হয়েছেন তো কি হয়েছে? ভাইয়া তো হন
-সেরকম সম্মান একবারও দেননি
-এত কথা বলেন কেনো? আমাদের সাথে যেতে বলেছি যাবেন৷
-চলুন যাওয়া যাক
,,
শুভ পেছন পেছন হাঁটছে, ইরা আর তার বান্ধবী গুলো সামনে হাঁটছে।
তারা তাদের গ্রাম ছেড়ে অন্য গ্রামে চলে আসছে। সামনের তিনজন ফিসফিস করে কি কথা বলে সেটা শুভ শুনতে পায় না৷
,,
হঠাৎ একটা জায়গায় এসে ইরা দাঁড়িয়ে গেলো। পেছন থেকে শুভ বলল..
-কোনো সমস্যা? (শুভ)
-না, এদিকে আসেন আম চুরি করবো (ইরা)
-আরে নাহহ কি বলেন এগুলা?
-ঠিকই বলছি আপনি এখানে দাঁড়ান আমি গাছে উঠছি
-আরে পরে যাবেন তো
-আমার অভ্যাস আছে
,,
শুভ আর সাথে থাকা ইরার বান্ধবী গুলো ইরার কথা শুনে অবাক হয়ে যায়। গাছ থেকে কয়েকটা আম পেরে ইরা নিচে নেমে আসে। আসে পাশে মানুষ না থাকায় ইরা নিচে নেমেই আম খাওয়া শুরু করে৷
ইরা আম খেতে খেতে বলে….
-আমার বান্ধবী আর আপনাকে গ্রাম ঘুরিয়ে দেখাবো তাই এনেছি। সামনে আমার স্কুল (ইরা)
-তুই তোর বাড়ি থেকে এতদূর আসতি কিভাবে? (ইরার বান্ধবী)
-কিভাবে আবার! পায়ে হেঁটে
-বলিস কি!
-অবাক হওয়ার কিছু নেই, এটা তো সামান্য রাস্তা আরও কতদূর হেঁটে গিয়েছি তার হিসাব কে রাখে
-তাহলে তুই তো আমাদের থেকে স্ট্রং
-এতে আবার সন্দেহ আছে নাকি? তোরা তো হাইব্রিড, শহরের অখাদ্য খাস তারউপর বাতাস ও তেমন ভালো না। আমিও শহরে গিয়ে কেমন যেন হয়ে যাই কিছুতেই ভালো লাগে না
-হুমম দোস্ত আমরা খেয়াল করি
-ভাইয়া আমি কি ভুল বলতেছি?
-না ঠিকই বলতেছেন
-আপনি একটা আজিব মানুষ মাইরি, ছোট বোনকে আপনি করে বলেন। লজ্জা করে না?
-আসলে লজ্জা করে তাই আপনি করে বলি
-ধুররর আপনি যদি আমার ছোট হতেন এতক্ষণে পিটিয়ে সোজা করে দিতাম
,,
তারা আরও কিছুসময় ঘোরাঘুরি করলো৷ দুপুরের দিকে বাড়িতে আসতেই ফারিহা শুভর সামনে দাঁড়ালো। ফারিহাকে দেখতে অনেকটা অস্থির লাগছে..
-কোথায় গিয়েছিলে? (ফারিহা)
-ঐ যে ইরা আছে না? ও আর ওর বান্ধবীদের সাথে একটু ঘুরতে বের হয়েছিলাম (শুভ)
-আমি তাকেও খু্ঁজতেছি। বড় বোনের বিয়ে সেদিকে খেয়াল আছে তার!
-উনি কেমন যেন, কেমন কেমন করে কথা বলেন
-হ্যাঁ ও ওমনি, ওর সাথে বেশি কথা বলতে যেয়ো না। আর তুমি এখন এত বাইরে যাও কেনো? আমি তো ভাবছিলাম..
-কি ভেবেছিলেন?
-চলে গিয়েছো
-নাহহ আপু কি যে বলেন চলে যাবো কেনো? বিয়ে টা শেষ হোক তারপর যাওয়ার চিন্তা
-না
-কেনো?
-কিছু না আচ্ছা দুপুর হয়েছে আমার রুমে যাও। আমি খাবার পাঠিয়ে দিচ্ছি৷
-আচ্ছা ঠিক আছে
,,
শুভ এসে ফারিহার রুমে বসলো। কিছুক্ষণ পর একজন এসে খাবার দিয়ে গেলো সাথে পানি। আর তার কিছুক্ষণ পর ইরার প্রবেশ। আর সে দরজায় দাঁড়িয়ে থেকে বলতে লাগলো..
-আমি জানি তো আপনি এখানেই বসে থাকবেন (ইরা)
-আপু এখানে বসে খেতে বলেছে (শুভ)
-আপনি কি মানা করতে পারেন না??
-মানা করবো কেনো? উনি তো ভালোর জন্যই বলেছেন
-হুমম আপু দেখি আপনাকে অনেক ভালোবাসে। আমি সহ আমরা সবাই আপনাকে অনেক ভালোবাসবো বুঝেছেন। তবে আমাদের এখানে আসতে দেড়ি করে ফেলেছেন
-হুমমম
-আচ্ছা আপনি ভয়ে ভয়ে থাকেন কেনো? আপনাকে তো আমি মারবো না বকাও দিবো না। আমি কথা বললেই আপনি ভয়ে চোখ যেন কেমন করেন
-হয়ে যায়
-ভয় নেই, আসলে আমি অনেক বেশি ফ্রি তো তাই এরকম
-হুমমম
-খাওয়া বাদ দিয়ে বসে আছেন কেনো? খাওয়া শেষ করেন
-জ্বি
-আচ্ছা একটা কথা বলি, আপনি খেতে খেতে উত্তর দেন
-জ্বি বলেন
-আপনি তো আবার চলে যাবেন তাই না?
-হ্যা তা তো যাবোই, বিয়ে টা শেষ হোক তার দুই একদিন পরেই চলে যাবো
-মাঝে মাঝে কি আসবেন
-হ্যা চেষ্টা করবো আসার জন্য
-ওহহ
-আমি একটা কথা বলি?
-বলেন
-আপনি এমন আজব আজব প্রশ্ন করেন কেনো??
-এমনিহহ আমি এমনই, আপনি আবার ব্যাপার টা অন্যদিকে নিয়ে যাইয়েন না৷ তবে আমি যা ভেবেছি সেটা হওয়ার সম্ভাবনা বেশি
-কি ভেবেছেন?
-আপনার ফিরে যাওয়ার সম্ভাবনা কম, বাড়ির লোকজন আপনাকে রেখে দিবে
-না, সবাই বললেও কাজ হবে না।
-কেনো কেনো??
-ঐ যে আমি ছোট বেলা থেকে যাদের কাছে বড় হয়েছি তাদের দেখতে হবে
-উমম তাও ঠিক,
-মাঝে মাঝে আমি হয়তো এখানে এসে সবাইকে দেখে যাবো
-হুমম ঝটপট খেয়ে নিন
-কেনো??
-আমার সাথে যেতে হবে
-কোথায় যাবো?
-বরের বাড়ি থেকে হলুদ দিতে আসবে না৷ এখন আমরাই আমাদের বোনকে হলুদ দিয়ে দিবো। তার জন্য কিছু কাজ বাকি আছে আপনাকে সাথে থাকতে হবে
-আসবে না কেনো?
-তাদের যেন কি সমস্যা হয়েছে
-ওহহ
-আমি আপুর কাছ থেকে শুনেই এখানে এসেছি বুঝেছেন। তাড়াতাড়ি খেয়ে নিন
-এইতো শেষ
,,
গ্রামের বিয়ে তাই কোনো ওয়েডিং প্ল্যানার আনা হয়নি। কণের হলুদ দিতে যত কাজ সব নিজেরাই সম্পন্ন করে৷ ইরা শুভকে সাথে নিয়ে অনেক গুলো কাজ শেষ করলো।
-দেখেন বরের বাড়ি থেকে কেউ না আসায় আমাদের কাজ আর কেউ ভুল ধরতে পারবে না৷ আর আমার বোনের এত সাজুগুজুও করতে হবে না। (ইরা)
-তা ঠিক(শুভ)
-হুমম অনেকেরই মন খারাপ হয়েছে
-তা তো হবেই
-আমার যদি এমন হতো আমি কখন বাড়ি থেকে পালিয়ে যেতাম
-তা কেনো?
-হলুদ সন্ধ্যা ছাড়া বিয়েই করবো না
-যদি এমন পরিস্থিতিতে পরেন যে হলুদের অনুষ্ঠান ছাড়াই বিয়ে হলো
-বুঝেছি যদি প্রেমিকের সাথে পালিয়ে যাই এমন হতে পারে
-রাইট
-আমার জীবনে প্রেম আসবে না৷ আসলে আমার চেঁচামেচির ঠেলাঠেলিতে দৌড়ে পালাবে
চলবে