এক টুকরো মেঘ,Part : 6
Write : Sabbir Ahmed
-রাইট (শুভ)
-আমার জীবনে প্রেম আসবে না। আসলে আমার চেঁচামেচির ঠেলাঠেলিতে দৌড়ে পালাবে(ইরা)
-ওহহ
,,
সন্ধ্যায় কণের গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান শেষ হয়৷ শুভ ও তার বোনকে হলুদ দিয়ে দেয়। তবে বড়দের অনেকেরই মন খারাপ ছিলো বরের বাড়ি থেকে কেউ না আসায়৷
,,
রাতে খাওয়া শেষে ফারিহা শুভর সাথে দেখা করে। শুভ রাতের খাওয়া শেষ করে বাড়ির এখানে ওখানে হাঁটছিলো। মাঝে মাঝে কারও সাথে কথা বলছিলো। ফারিহা শুভ কে ডেকে নিয়ে বাইরের বাইরে যায়৷
-জ্বি কিছু বলবেন? (শুভ)
-হ্যা একটা কথা বলব, তুমি যে কিভাবে নিবে (ফারিহা)
-আপনি বলেন
-তুমি আজ বাইরে না থেকে আমার রুমে থাকো, আর আমি ইরার সাথে থাকবো
-নাহহ কি বলেন আপনার রুমে আমি!
-কেনো থাকা যাবে না?
-আপনি তো একটু আলাদা, আপনার রুমে এমনিতে কেউ ঢোকে না, আর আপনি গিয়ে ইরার সাথে ঘুমাবেন এটা কেমন দেখায়
-আমি যা বলেছি তাই করতে হবে তোমাকে
-আমি বাইরে ঠিক আছি তো
-আবার কথা বলে (ফারিহা একটু কড়া গলায় বলল)
-….(শুভ চুপ)
-ব্যস্ততায় তোমার খেয়াল রাখতে পারছি না। কথা বলো না তো আসো
,,
এক ধমকেই কাজ হয়ে গেছে। ফারিহা শুভকে রুমে নিয়ে গিয়ে দাঁড় করিয়ে রেখে বিছানা ঠিক করে দিলো।
-শোনো সকালে যখন মনে চায় উঠবা, দেড়ি করে উঠলে সমস্যা নেই। তুমি শুধু দরজা টা না লাগিয়ে একটু শুধু ধাক্কা দিয়ে রাখবে (ফারিহা)
-আপু (শুভ ডাকলো)
-হ্যা বলো
-আপনার তো ঘুমানো কষ্ট হয়ে যাবে
-তোমাকে কথা বলতে মানা করেছি কিন্তু
-জ্বি
-হুমম আমি যাচ্ছি
-ঠিক আছে
,,
ফারিহা গেলো ইরাদের রুমে।
-আপু কিছু বলবা? (ইরা)
-আজ আমি তোদের সাথে থাকবো(ফারিহা)
-কেনো! আপু তোমার রুমে..
-শুভ ঘুমাচ্ছে
-বাহহ আজ পর্যন্ত আমি তোমার রুমে ঘুমাতে পারলাম না, আর ও এসে…
-এত কথা বলতেছিস কেনো?
-সরি!
-জায়গা হবে তো?
-অবশ্যই হবে
,,
এদিকে শুভ বিছানায় শুয়ে এপাশ ওপাশ করছে কিছুতেই ঘুম আসছে না তার। একসময় বিরক্ত হয়ে বিছানা থেকে উঠে দাঁড়ায়। একটা বইয়ের তাঁকে অনেক বই সাজানো শুভ সেগুলোতে শুধু চোখ বুলাচ্ছে।
,,
পুরো রুমটা অনেক বই, গিফ্ট আর হাবিজাবি কাগজ পত্র দিয়ে ভর্তি। যা দেখে শুভর মাথা আরও খারাপ হয়। রুমের বাইরে যে যাবে সে সাহস ও হচ্ছে না তার। সবশেষে তাকে সেই বিছানায় আসতে হলো৷ কিছুক্ষণ শুয়ে থাকার পর সে কিছু একটা অনুভব করা শুরু করে। সে ভাবতে থাকে..
-আমি উনার বিছানায় শুয়ে আছি, এটা উনার বালিশ! এই বিছানায় সে ছাড়া আর কেউ থাকে না। আমাকে যে কেন এখানে থাকতে দিলো। এখন তে আমারই সমস্যা হয়ে গেছে ঘুম পাচ্ছে না। বাইরে শুয়ে থাকলে কত ভালো হতো এতক্ষণে ঘুমাই যাইতাম।
তবে আপুটা খুব ভালো। যেমন রূপবতী তেমন গুণবতী, তবে একটা দোষ ও আছে। কথা না শুনলে বেশি বেশি ধমক দেওয়ার অভ্যাস আর রাগী। তবে তার গুণের কাছে দোষ গুলো কিছুই না৷ যাই হোক এসব ভেবে লাভ নেই আমি একটু ঘুমানোর চেষ্টা করি
,,
ভোররাতে ফারিহা তার নিজের রুমে আসলো। ওয়াশরুমে গিয়ে অজু করে রুমে এসে নামাজ পড়া শুরু করলো। রুমে কারও উপস্থিতিতে শুভর ঘুম ভাঙে। তাকিয়ে দেখে ফারিহা নামাজ পড়ছে।
,,
শুভ ততক্ষণে শোয়া থেকে উঠে বসে আছে। ফারিহা নামাজ শেষ করে বিছানার দিকে তাকাতেই দেখলো শুভ তার দিকে তাকিয়ে আছে। ফারিহা মিষ্টি হেসে বলল..
-কখন উঠছো? (ফারিহা)
-এইতো এখনি(শুভ)
-নামাজ পড়ো না তুমি?
-পড়ি তো, কিন্তু নিয়মিত না
-নিয়মিত হতে হবে।
,,
ফারিহা জায়নামাজ ভাজ করতে করতে বলল…
-আমি রুমে এসে ভাবলাম ডাক দিবো তোমাকে, কিন্তু কি ভেবে যে ডাকলাম না৷ এখন মসজিদে গিয়ে জামাত ও ধরতে পারবে না। এখানে পড়ে নিবা?
-যোহর থেকে পড়বো
-ঠিক আছে। জানো আজ আমার কোনো কাজ নেই
-সব কাজ শেষ বুঝি.
-আরে নাহহ সব দায়িত্ব কয়েকজনের উপর দিয়ে দিয়েছি তারাই সব সামলাবে
-তাহলে আপনি কি করবেন?
-আমার একটু কলেজে যেতে হবে।
-ওহহহ
-তুমি যাবে আমার সাথে
-কতদূর?
-বেশি দূর না কাছেই। আমি সেখানে গিয়ে লেট করবো না হাজিরা টা দিয়েই চলে আসবো
-আচ্ছা একটা কথা বলি
-বলো
-আমি আজ চলে যাই হ্যা?
-কেনো?
-আমার এখানে ভালো লাগছে না।
-মাইর চিনো?
-না না আমি থাকবো এখানে
-এখানে মানে এখানেই থাকতে হবে।
-……(শুভ চুপ)
-আচ্ছা তুমি স্মোক করো?
-না
-তোমার বদ অভ্যাস গুলো বলো তো
-কেনো?
-বলতে বলেছি বলো
-সময় মতো কিছুই করতে পারি না । আর চুল আঁচড়াতে ইচ্ছে করে না
-হুমমম বেশ ভালো, আমি সব ঠিক করে দিবো
-আপনি কেনো দিবেন?
-দরকার আছে তাই। চলো বাইরে যাই তোমাকে আমাদের জমি গুলো দেখিয়ে দেই
-জমি!
-হ্যা চলো
,,
ফারিহা শুভকে নিয়ে বাইরে এলো। বাড়ি থেকে রাস্তার ওপাশে যেতেই বিশাল এক ফাঁকা মাঠ।
-এই যে ফাঁকা জায়গা টা দেখছো প্রায় সবগুলো আমাদেরই। বাড়ির পশ্চিম দিকে অনেক গুলো পুকুর আছে। আর এমনিতে আম আর লিচুর বাগান এর অভাব নেই। আমাদের বাড়ির পূর্ব পুরুষ এসব রেখে গেলেও এগুলো নিয়ন্ত্রণ করা বেশ কঠিন৷ কত ঝামেলা হয় এসব নিয়ে
-আপনি একা এসব দেখেন তাই না?
-আরে নাহহ আমি দেখি তোমাকে কে বলল?
-নয়ন ভাইয়া সব বলেছে
-ও না বলে। এসব আমার চাচারা দেখে, আমি কলেজ নিয়ে ব্যস্ত থাকি
-আচ্ছা আপনাকে একটা কথা বলি
-বলো
-বকা দিবেন না বলেন
-আচ্ছা দিবো না বকা, বলো
-আমি এখানে আসছিলাম আমার মায়ের ভাগের জমির জন্য। আমার ঐ গ্যারেজে কাজ করতে ভালো লাগে না। নিজের দিন চালাতে কাজ টা করতে হয়৷ আমি ভেবেছিলাম আপনাদের থেকে জমি না নিয়ে শুধু কয়েকটা টাকা নিয়ে ব্যবসা করবো কিন্তু..
-কিন্তু কি?
-আমি কিছুই নিবো না
-কেনো?
-বাড়ির বেশ কয়েকজন আমাকে এখনো সন্দেহ করে।
-ওহহহ আচ্ছা তাদের উপর অভিমান করে আর কিছু নিবে না
-সেটা না, মা বেঁচে নেই আমি তাকে দেখিও নি, শুধু মুখের কথায় এতদূর চলে আসছি। আমি রাতে ভেবেছি আমি কিছু নিবো না, যে কাজ করছি সেটা করেই জীবন পার করে দিবো
-হুমম খুব অভিমানী তুমি
-নাহহ আপনি ভুল বুঝছেন
-তোমার কথায় বোঝা যায়
-না আমি ওভাবে বলিনি
-সে যাই হোক, আমি বেঁচে থাকতে তোমাকে কোথাও আর যেতে দিচ্ছি না
-কেনো দিবেন না?
-আমরা ছাড়া তোমার আর কে আছে? আমরাই তো তোমাক দেখবো
-কিন্তু..
-আর কোনো কথা না, অনেক বেলা হয়েছে চলো কলেজে যাই
-হুমমম চলেন
,,
শুভও বেশ খুশি
আপুর সাথে কলেজে যাচ্ছে। রাস্তা খারাপ হওয়ায় তেমন ভালো গাড়ি নেই আর নিজস্ব কিনে ব্যবহার করাও সম্ভব না। ফারিহা ভ্যানেই যাতায়াত করে।
,,
শুভকে কলেজে নিয়ে গিয়ে একটা রুমে বসিয়ে দেয়৷ গ্রামের কলেজ তেমন একটা বড় না, ছাত্র-ছাত্রী উপস্থিতি খুব কম৷ ঘন্টা দুয়েক অপেক্ষা করে শুভ, ফারিহা একটা ক্লাস শেষ করে আর তার হাতের কিছু কাজ শেষ করে শুভর কাছে আসে।
-চলো এখন যাবো (ফারিহা)
-আপনার ক্লাস শেষ? (শুভ)
-হ্যাঁ শেষ
-এত তাড়াতাড়ি?
-স্টুডেন্টদের যা অবস্থা! ক্লাসেই আসতে চায় না। গ্রামে যে কলেজ আছে এটাই অনেক
-হুমমমম
-বাড়িতে গিয়ে তুমি সবসময় আমার পিছু পিছু থাকবে
-কেনো??
-একা একা থাকো
-কেউ যদি কিছু মনে করে
-আবার কে কি মনে করবে
-একটা মেয়ের পেছনে সবসময় থাকতে হয় না
-কেনো থাকতে হয়না?
-আপনাকে বলা যাবে না
-বলো বলছি
-না না আপনি আবার বকা দিবেন মাইরও দিতে পারেন
-মারবো না বলো
-এই ধরেন আমি যদি আপনার পিছু পিছু সবসময় যদি থাকি তাহলে সবাই ভাববে আমার আপনার মধ্যে কিছু আছে
-কিছু আছে মানে কি??
-কিছু আছে বলতে ঐ যে থাকে না?
-ঐ যে টা কি??
-বলতে ভয় করছে
-বলো তাড়াতাড়ি (ফারিহা বুঝতে পেরে মিটিমিটি হাসছে)
-ভালবাসার সম্পর্ক যাকে বলে, লোকে সেটা ভাববে
-ওহহ আচ্ছা তুমি ভালোবাসা বোঝো?
-হ্যাঁ বুঝি তো
-দেখি বলো তো
-আপনাকে বলা যাবে না
চলবে