এক টুকরো মেঘ,Part : 7
Write : Sabbir Ahmed
-ওহহ আচ্ছা তুমি ভালোবাসা বোঝো? (ফারিহা)
-হ্যাঁ বুঝি তো (শুভ)
-দেখি বলো তো
-আপনাকে বলা যাবে না
-কেনো??
-এটা একটু অন্যরকম আপনার সামনে বলতে লজ্জা করবে
-হা হা হা আচ্ছা বলতে হবে না চলো বাড়ি যাই
-হুমম চলেন
,,
বাড়িতে আসার পর শুভর সাথে ইরার দেখা…
-এ এ এ আপনাকে সকাল থেকে দেখলাম না যে (ইরা)
-আপুর সাথে কলেজে গিয়েছিলাম (শুভ)
-বাহহ আপু তো দেখছি আপনাকে কোলে করে নিয়ে ঘোরা শুরু করে দিয়েছে
-নাহহ কি বলেন এগুলা
-ঠিকই তো বলছি। দুপুরের খাওয়া খেয়ে নিন বরের বাড়ি থেকে একটু পরেই লোকজন আসবে
-আচ্ছা
,,
শুভ সেই দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পুরো সময়টা একা একাই পার করলো। যে যার যার কাজে ব্যস্ত, বিকেলের দিকে বরের বাড়ি থেকে লোকজন আসলো তাদের খাওয়ানো হলো। সন্ধ্যার পর পর তারা কণে নিয়ে গেলো।
,,
পুরো বাড়িতে কান্নার রোল পড়েছে। শুভর দাঁড়িয়ে সবার কান্না দেখছিলো। ফারিহা কান্না করছিলো না সে সবাইকে থামতে বলছিলো আর রাতের খাওয়াটা সবাইকে দ্রুত শেষ করতে বলেছিলো৷
,,
বাড়ির সবার সাথে শুভ তার খাওয়া শেষ করে। খাওয়া শেষ করেই সে ফারিহার সাথে দেখা করে ফারিহার রুমে।
-ভেতরে আসতে পারি?? (শুভ দরজায় দাঁড়িয়ে)
-হ্যাঁ আসো (ফারিহা বিছানায় বসে খাতায় কিসের যেন হিসাব করছিলো)
-কি করছিলেন?
-এই একটু হিসাব করলাম। তুমি কিছু বলবা?
-না
-খেয়েছো তো তাই না??
-হুমম আপনি খেয়েছেন?
-না আমি খাইনি
-কেনো??
-রাতে খেতে ইচ্ছে করে না
-ওহহহ
-তোমাকে দেখে মনে হচ্ছে তুমি কিছু বলবে
-বলতেই তো আসছি। যা বলব সেটা শুনে তো বকা দিবেন
-আমি কি সবসময় বকি?
-আসলে কথাটা হলো আমার আপনার বিছানায় ঘুম ধরে না আর…
-বলতে হবে না বুজেছি তুমি এখানে ঘুমাবে না তাই তো
-হ্যাঁ
-ঘুম পাইলেও এখানে থাকতে হবে না পাইলেও এখানে থাকতে হবে। এটাই শেষ কথা৷ আমার সামনে বসো গল্প করি
,,
শুভর আর কিছু বলার নেই। ফারিহা একবার যা বলেছে তাই করতে হবে।
শুভ ফারিহার সামনাসামনি বসলো।
-কাল কিন্তু তোমার বরের বাড়ি যেতে হবে (ফারিহা আবার হিসেবের খাতায় চোখ বোলানো শুরু করলো)
-আপনি তো যাবেন তাই না?(শুভ)
-না আমি যাবো না
-কেনো??
-এতো মানুষের মধ্যে আমার যেতে ইচ্ছে করে না
-ওহহ তাহলে আমিও যাবো না
-তুমি যাবে না কেনো?
-আপনি যে যাবেন না তাই
-আমার না যাওয়ার সাথে আপনার না যাওয়ার সম্পর্ক কি?
-তেমন কিছু না, আপনি একা একা বাড়িতে থাকবেন তাই আমিও থাকবো
-নাহহ তোমার যেতে হবে
-উহুমমম যাবো না
-তাহলে ভালোবাসা বলতে কি বোঝো সেটা বলো
-আবার!
-হুমম বলো
-এই যে আপনি আমাকে বাইরে থাকতে না দিয়ে আপনার রুমে থাকতে দেন এটাই ভালোবাসা
-…(ফারিহা শুভর দিকে তাকালো)
,,
শুভ তো ভয়ে শেষ, ফারিহার চোখ দেখে বুঝতে পারছে না সে রাগ করেছে নাকি খুশিয় হয়েছে। কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকার পর ফারিহা মুখ খুলল…
-এটার মধ্যে ভালবাসা কই খুঁজে পাও? (ফারিহা)
-আমার কষ্ট দেখছেন এটাই ভালোবাসা (শুভ)
-উমমম বুঝেছো একটু একটু পুরোটা বোঝো নাই
,,
অনেক রাত পর্যন্ত দুজন হিসাব করলো আর সাথে টুকটাক গল্প।
গতরাতের মতো আজও শুভ ফারিহার রুমে ঘুমালো আর ফারিহা ইরাদের সাথে।
,,
পরদিন বিকেলের দিকে সবাই বরের বাড়ির উদ্দেশ্য রওনা হলো। সত্যি সত্যি ফারিহা আর শুভ গেলো না। বরের বাড়িতে যাওয়ার আগে শুভর সাথে ইরার দেখা..
-এই কামরুইল্লা (ইরা)
-আপনি এসব নামে ডাকেন কেনো? (শুভ)
-এমনি ভাল্লাগে। আপনি তো রেডি হননি যাবেন না?
-না যাবো না
-কেনো?
-এমনি শরীর টা ভালে নেই
-আপুর সাথে লাইন মারার জন্য বাড়িতে থাকছেন তাই না?
-কি বলেন এগুলা হ্যাঁ?
-বুঝি বুঝি সব বলে দিবো আমি
-আরে না শোনেন আমার এমনিতে ভালো লাগছে না
-উমমম ভালো না গেলেন…
,,
এটুকু কথা হওয়ার পর মামারও যেতে বলে কিন্তু শুভ যায় না। শুভর না যাওয়ায় ফারিহার কাছে অন্যরকম একটা ভালো লাগা কাজ করে।
ফারিহা আর শুভ সবাই কে বিদায় দোওয়ার পর বাড়ির মধ্যে চলে আসে। শুভর মামীরা কেউ যায়নি তারা বাড়িতে থেকে কাজ করছে।
,,
আর শুভ ফারিহা পেছনে লেগে গেলো তখন থেকেই। ফারিহা যেখানেই যাচ্ছে শুভ সেখানেই।
একসময় শুভ ইরার নামে নালিশ দেওয়া শুরু করে…
-ইরা কিন্তু ভালো না (শুভ)
-কেনো তোমাকে কিছু করেছে নাকি?(ফারিহা)
-না কিন্তু একটা কথা বলেছে
-কি বলেছে?
-উল্টা পাল্টা বলেছে
-কথাটা কি? সেটা বলো
-বলেছে আমার বাড়িতে থাকার কারণ আপনার সাথে লাইন মারা
-লাইন মানে??
-এটা বোঝেন না আপনি?
-উহুমম বুঝি না
-ঐ যে মনে করেন আপনাকে পটানোর জন্য ঘুরতেছি
-পটানো কি?
-নাহহ আপনি কিছুই বুঝেন না
-বুঝি না তো
-থাক, আপনি উনাকে একটু বকা দিয়েন যাতে এসব আর না বলে
-কিসব বলছে সেগুলো তো আমাকে বুঝিয়ে বলতে পারছো না
-আমার ভয় করে
-হুহহহ তোমার যা ভয় এটা নিয়ে কিভাবে বেঁচে থাকো
-শুধু আপনাকে দেখেই ভয় করে
-উমমম আমি তো শুধু আপনাকে বকা দেই
-নাহহ কিন্তু আপনাকে দেখলেই আর হাত পা আর বুক কাঁপে
-হায় আল্লাহ বলে কি!
-আচ্ছা এই বাড়ির ছাদে যাওয়া যায় না??
-হুমম যাওয়া যায়
-আমি একটু যাবো
-চলো
-আপনিও যাবেন??
-হুমমম ছাদ টাই আমার
-মানে??
-ওখানে গেলেই বুঝতে পারবে
,,
শুভ এই প্রথম ছাদে যাওয়ার সিঁড়ি দেখতে পেলো। শুভ ছাদে পৌঁছাতেই তার চোখ ছানাবড়া। এ কি দেখছে সে! পুরো একটা ফুলের বাগান। ছাদের এক কোণায় চারদিকে বাউন্ডারি দিয়ে ছোট্ট একটা পুকুর।
ছোট একটা পাইপ এর মুখ দিয়ে অনবরত টিপ টিপ শব্দে পানি পরছে।
সেই পানিতে কিছু পদ্ম ফুল, পুকুরের ভেতরে আরও রয়েছে নানা রঙের মাছ। ছোট্ট পুকুরের এক পাশে জল গোলাপ।
,,
ফারিহা সেখানে এগিয়ে গিয়ে হাতে কিছু ফিড নিয়ে পুকুরে দিলো। শুভ ছাদের এই অবস্থা দেখে বলল..
-এটা কি বানিয়েছেন! (শুভ)
-এ জন্যই তোমাকে বলেছিলাম ছাদ টা আমার। এসব আমার কাজ (ফারিহা)
-সত্যি ছাদ টা দেখে আমি অবাক হয়েছি
-হুমম পুরো টাই আমার চেষ্টা
-আপনি মানুষ ও যেমন লেখাপড়াও তেমন। আবার দারুণ দারুণ কাজ ও করেন
-আর তুমি! এমন ভাবে কথা বলো মনে হয় কোনো একটা বাচ্চার সাথে কথা বলছি৷ এত বিনয়ী কেনো?
-আপনারা নতুন মানুষ নতুন মুখ তাই
-হুমমম
-আপনি মনে হয় ছাদে কাউকে আসতে দেন না
-একটুও না
-আপনি একা এই সৌন্দর্য উপভোগ করে কি মজা পান?
-আরেহহ একবারে যে আসতে দেই না এমন না, মাঝে মাঝে সবাই মিলে এখানে আড্ডা দেই
,,
ছাদ টা বেশ নিরিবিলি হওয়ায় ফুলে অনেক হলুদ প্রজাপতি এসে বসেছে৷
-একটা কথা বলি? (শুভ)
-বলো (ফারিহা)
-আপনাকে যতই দেখছি ততই অবাক হচ্ছি
-কিন্তু আমি তোমাকে যতই দেখছি ততই রেগে যাচ্ছি
-আমি আবার কি করলাম?
-তোমাকে খুব অগোছালো লাগে
-আপনি ভয় দেখানোর পর থেকে তো চুল গুছিয়ে রাখি
-আরে জীবন এর কথা বলছি আমি
-হুমম আমিও বুঝি। আর দেখেন অগোছালো হবেই না বা কেনো? একা মানুষ আমি, আমার কি পরিবার আছে? নিজে কাজ করে চাচা কে কিছু দিয়েছি আর কিছু খেয়েছি
-এভাবেই জীবন পার করতে চেয়েছিলে?
-নাহহ মাঝে মাঝে মনে হয় ভালো কিছু করবো কিন্তু হয় না৷
-হুমমম
-শুনেছি আপনার অনেক ভালে ভালো বিয়ে আসছে সবগুলো মানা করে দিয়েছেন
-হ্যাঁ দিয়েছি
-কেনো?
-তাদের দেখে আমার অতটা ভালো লাগেনি
-মানুষ দেখে তো ভালো মন্দ বুঝবেন না
-আমি বুঝি মানুষ দেখলেই বুঝি সে কেমন হবে
-আপনি তে আবার অনেক গুণের অধিকারী। এটা বিশ্বাস করা যায় যে আপনি বুঝতে পারবেন
-তুমি খুব বোকাসোকা
-হ্যাঁ আমার চাচাও একই কথা বলে। আর আপনিও খুব বোকা
-কিহহহ!! আমি বোকা
-রাগবেন না সত্যি কথাই বলি। আপনি এত কিছু বুঝেও অনেক ভালো ভালো বিয়ে ফিরিয়ে দিয়েছেন।
-আমার বিয়ে নিয়ে তুমি এত টেনশনে আছে কেনো??
-টেনশন না, সুন্দরী মেয়ে আপনি, অনেক গুণ ও আছে আপনার বিয়ে করলে খুব ভালো একটা সংসার হবে
-আমাকে নিয়ে তুমি এসব ভেবেছো?
-না না আমি তো..
-এই সত্যি বলো
-না আমি এসব ভাবিনি
-না ভেবে এগুলো কিভাবে বলছো
-ইয়ে মানে এই যে
-এই তোমার ব্যাপার টা কি হুমম?
-আপনি আসলে ব্যাপার টা কঠিন ভাবে নিয়েছেন , আমি তো এভাবে বলতে…
,,
শুভর কথার মাঝে ধুপ করে ফারিহা বলে উঠলো..
-ভালোবাসি..(ফারিহা)
শুভ ভালোভাবে শুনতে পায়নি
-কি যেন বললেন শুনতে পায়নি (শুভ)
-আমি ব্যাপার টা কঠিন ভাবে নেই নি (ফারিহা)
-হ্যাঁ এটা তো আমি বলছিলাম
-হুমম বলতে থাকো আমি শুনছি
-আপনি যেন কি বললেন
-ওটা বাদ দাও, বলতে থাকো তুমি
-…(ফারিহা কি বলপছিলো শুভ সেটা মনে করে বোঝার চেষ্টা করছে)
,,
শুভর কিছুক্ষণ চুপ থাকা দেখে ফারিহা দিলো এক ধমক.
-ওইইই(ফারিহা)
-জ্বি জ্বি বলেন (শুভ)
-কি ভাবছো হ্যাঁ
-কিছু ভাবছি না আমার খুদা লাগছে। -হঠাৎ!
-আপনার ধমক শুনে
-হুহহহ চলো…
চলবে