এক টুকরো মেঘ,Part : 8
Write : Sabbir Ahamed
-কিছু ভাবছি না আমার খুদা লাগছে (শুভ)
-হঠাৎ! (ফারিহা)
-আপনার ধমক শুনে
-হুহহহ চলো
-কোথায়?
-এই না বললা খুদা লাগছে
-না এখন নেই
-মানে কি হুমম? এত মিথ্যে কথা আসে কোথা থেকে
-আপনার চোখ দেখলেই আপনা আপনি চলে আসে
-কেনো? আমার চোখ কি দেখতে ভয়ংকর??
-না আবার হ্যাঁ। আপনার চোখ গুলো তো ভাসা ভাসা আর চোখের মণি অনেক বেশি পরিষ্কার, যখন ধমক দেন তখন এই চোখ দেখে ভয় করে৷
-হুমমম আর যখন স্বাভাবিক থাকি?
-খুব সুন্দর দেখায়
-অনেক সময় ছাদে থেকেছি আর না চলো নিচে যাই
-আরেকটু থাকি
-নাহহ সন্ধ্যা হয়ে আসছে চলো
-হুমম চলেন
,,
সন্ধ্যার পর পর বর কণে আসলো। বাড়িটা আবার লোকজনে ভরে উঠলো। আবার বাচ্চাদের হৈ-হুল্লোড়, বড়দের কাজের ব্যস্ততা, জোর গলায় কেউ কাউকে ডাকা এসব কিছু শুরু হয়ে গেছে।
,,
পরদিন কণে চলে গেলো শ্বশুর বাড়ি। দূরের আত্মীয় স্বজনরা তাদের বাসায় ফেরা শুরু করলো। তারপর দিন তো বাসার লোকজন বাদে আর কেউ থাকলো না।
দুপুরের দিকে ইরা রেডি হচ্ছে সে চলে যাবে। বাড়ির সবার কাছ থেকে বিদায় নেওয়া হয়ে গেছে তার।
,,
ফারিহা আর শুভ ইরাকে এগিয়ে দেওয়ার জন্য বাড়ির বাইরে আসছে।
-আচ্ছা কামরুইল্লা আসি তাহলে(ইরা শুভকে বলল)
-দেখে যাইয়েন (শুভ)
-হ্যাঁ আর আপনি কোথাও যাবেন না এখানেই থাকবেন। ছুটিতে এসে আপনাকে যেন পাই
-না আমি আজকেই রওনা হবো
-এই কই যাবে তুমি?? (ফারিহা)
-আমার যেতে হবে না? আমি তো একবারে চলে আসিনি, আমার কর্ম আছে আর চাচা কে এটা বলিনি যে এখানে থেকেই যাবো(শুভ)
-তার মানে তুমি যাবে? (ফারিহা)
-হ্যাঁ
-ইরা তুই গাড়িতে উঠ আর দেখে যাস, পৌঁছে একটা কল করিস(ফারিহা এটা বলেই রওনা হলো)
,,
ইরা তার সামনে থাকা ভ্যানে উঠে বসলো। তারপর শুভর দিকে তাকিয়ে বলল..
-আপুর কথা শুইনেন, তা না হলে কপালে খারাপি আছে (ইরা)
-হুমম (শুভ)
,,
ইরা চলে গেলো। শুভ বুকের মধ্যে ভয় নিয়ে বাড়িতে আসলো। বাড়িটাতে একটু নীরব পরিবেশ দেখা যাচ্ছে। যদিও অনেক মেম্বার এখানে, তবুও বাড়ি থেকে একটা মেয়ে অন্য বাড়িতে চলে গেছে একদিনের মধ্যে সব আত্মীয় চলে গেছে তাই পরিবেশ টা এমন লাগছে।
,,
শুভ আর দেড়ি করলো না৷ প্রথমে মামাদের কাছ থেকে বিদায় নিলো, তারপর মামীদের কাছ থেকে। ফারিহার মা ছাড়া, আর মেজ মামা ছাড়া কেউ শুভকে থাকতে বলল না৷ যারা বলেনি তারাই শুধু সন্দেহ করে বা শুভকে দেখতে পারে না।
,,
এরপর ফারিহার কাছ থেকে বিদায় নেওয়ার জন্য তার রুমে গেলো। তার রুমের দরজা খোলা, ফারিহা যে বিছানায় শুয়ে ছিলো সেটা দরজায় দাঁড়িয়ে দেখা যাচ্ছিলো।
,,
শুভ একটু গলা ঝেড়ে বলল..
-আমার ব্যাগটা?? (শুভ)
-….(ফারিহা চুপ, সেভাবেই শুয়ে থাকলো)
-আমি কি ভেতরে আসতে পারি?
-……………….
-আমার ব্যাগটা নিবো
-…………….
-কিছু তো বলেন
,,
ফারিহা বিছানা থেকে উঠলো তাড়াহুড়ো করে। দরজায় এসে শুভর হাত ধরে শুভকে ভেতরে ঢোকাল তারপর দরজাটা লাগিয়ে দিয়ে ফারিহা হেলান দিয়ে দাঁড়ালো।
-তুমি যাবে না (ফারিহা)
-বুঝতেছেন না কেনো? আমার যেতে হবে (শুভ)
-আমি তোমাকে ভালবেসে ফেলেছি, তুমি আমার কাছে থাকবে৷ তুমি যাবে না
,,
ফারিহার কথা শুনে শুভর চোখ মুখ উল্টিয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা। ফারিহার কথা যেন সে বিশ্বাস ই করতে পারছিলো না৷ ফারিহা যা শুনেছে এরকম কিছু হলে শুভর কপালে দুঃখ আছে। সবাই ছি ছি বলবে আর মামারা তো আছেই।
,,
-আপনি কি বলেন এগুলা? (শুভ)
-তোমার বোকাসোকা মুখটা আর সরলতা আমার ভালে লাগে (ফারিহা)
-মামারা শুনলে মাইর দিবে
-তুমি আমার কথা না শুনলে আমি তোমাকে মাইর দিবো
-আপনি কিসের সাথে কি যে করলেন। আমি কই আর আপনি কই?
-আমি কিছুই শুনতে চাই না, কিচ্ছু মিলাতে হবে না
-আমার কপালে সত্যি মাইর আছে, আপনি না মারলেও বাকিরা ভর্তা বানিয়ে দিবে
-সবাই আমার পছন্দ টাকে গুরুত্ব দিবে
-আপনি আমাকে পছন্দ করতে গেলেন কেনো? আমি কই একটা গাড়ির মেকার সারাদিন হাতুড়ির ঠুকঠুক শব্দে কাজ আর কালি মাখা হয়ে থাকি
-নাহহ এত কথা শুনতে চাই না। আমাকে বুঝাতে হবে না, আমি যা বলেছি তাই হবে
-না
-ওহহ তুমি আমাকে পছন্দ করো না তাই তো?
-প্রথম দেখেই পছন্দ হয়েছে
-তাহলে বলোনি কেন?
-মানে ফেস দেখে পছন্দ হয়েছে, ভালবাসার জন্য না
-ওহহহ
,,
ফারিহা এগিয়ে গেলো শুভর দিকে। শুভর হাত থেকে ব্যাগটা নিয়ে দূরে ছুড়ে মারলো। তারপর নিজের হাতদুটোর মধ্যে শুভর ডান হাতটা নিলো। এটাই প্রথম স্পর্শ! দুজনেই উঞ্চতা অনুভব করলো। শুভর হাত কাঁপতে শুরু করলো তবে সেটা খুব ধীর গতিতে।
,,
ফারিহা এবার একটু ন্যাকাস্বরে বলল..
-আমাদের মাঝে যোগ্যতার কথা আনবে না, আমি তোমাকে যেভাবে চাই সেভাবে আমার কাছে থাকবে (ফারিহা)
-আপনার কথা শুনলে কি মানুষের মাঝে মুখ দেখাতে পারবো? সবাই বলবে যে আমি আপনাকে পটিয়েছি ভালো মেয়ে পেয়ে… আরও অনেক কিছু বলবে
-লোকের কথা শুনতে হবে না তো। তুমি আমার কথা শুনবা
-আচ্ছা আপনি আমার সাথে বিয়ে মানে থাকতে চান সারাজীবন তাই তো?
-হুমমম
-মামী কে বলেন দেখেন উনি কি বলে
-দাঁড়াও আমি মা কে ডেকে আনছি
,,
ফারিহা তার মা কে ডেকে এনে গড়গড় করে সব বলে দিলো।
-তোর জন্য এত সমন্ধ আসলো তুই একটাতেও রাজি হইলি না আর এখন…(ফারিহার মা ও শুভকে মানতে নারাজ)
-তুমি কি বলো? তোমার সিদ্ধান্ত কি?
-আমি সরাসরি না-ই বলব। কারণ এটা বেমানান
-ঠিক আছে
-আর ও এখন চলে যাচ্ছে যাক৷ আমি দুদিন থাকতে বললাম ও বলল ওর কাজ আছে
-তোমাকে কিছু বলতে হবে না ও এখনই চলে যাবে
-তুই যে এমনটা করবি কে জানতো (ফারিহার মা বিড়বিড় করে কথা বলে চলে গেলো)
-দেখলন তো আপনার মা রাজি না৷ মুরুব্বি রা জানে কোনটা করলে ভালো হবে (শুভ)
-আমি জানি আমার কোনটা হলে ভালো লাগবে(ফারিহা)
,,
ফারাহি আবার দরজা বন্ধ করে দিয়ে শুভর কাছাকাছি চলে আসলো। নিজের চোখের পানিটা মুছে নিয়ে শুভর আরও কাছে এগিয়ে গেলো। দুহাত দিয়ে শুভর গাল টা চেপে ধরলো।
-মাথাটা একটু নোয়াবে? (ফারিহা)
,,
শুভ নিজের অনিচ্ছাতে মাথাটা একটু নিচু করলো। শুভ বুঝতেছিলো না কি হচ্ছে। ফারিহা তার ঠোঁট দুটো প্রথমে শুভর কপালে ছোঁয়ালো। তারপর দুগালে আর সবশেষে থুঁতনি তে।
-আজ যে গুলো দিলাম ঠিক এক সপ্তাহ পর তুমি এসে এগুলো আমাকে দিয়ে যাবে
(ফারিহা)
-….(শুভ যে পেয়েছে তাতে সে স্তব্ধ কথা বলার শক্তি টুকুও নেই তার)
-শোনো এই বাড়িতে আসতে হবে না, তুমি আমার কলেজে আসবা ঠিক আছে?
-….(শুভ শুধু মাথা নাড়ালো)
,,
ফারিহা এমন যত্নের সহিত কথা গুলো বলতেছে যা শুভর ভেতরে একদম গেঁথে যাচ্ছে।
-তুমি আসবে তো? (ফারিহা)
-হুমম আসবো (শুভ)
-দু’সপ্তাহের মধ্যে তোমাকে কাছে রাখার সব ব্যবস্থা আমি করে ফেলবো
-হুমম আপনি সাবধানে থাকবেন
-হ্যাঁ থাকবো
,,
শুভ তার ব্যাগটা আবার হাতে নিলো। এবার যাওয়ার পালা..
-আমি তাহলে আসি(শুভ)
-শোনো, (ফারিহা)
-জ্বি বলেন
-আমার কাছে এক টুকরো মেঘ আছে সেটা নিতে অবশ্যই তুমি আসবে
-হুমমমম
-দেখে যেয়ো
,,
শুভ বিদায় নিয়ে বাড়ির বাইরে চলে আসলো। ফারিহা দৌড়ে ছাদে উঠলো। ছাদ থেকে বাড়ির সামনের রাস্তাটা দেখা যায় শুভ সেখান দিয়ে যাবে। আরও কিছুক্ষণ শুভকে দেখতে পাবে সে।
,,
কিছুসময় পর শুভকে সেই রাস্তায় দেখতে পাওয়া গেলো। গুটি গুটি পায়ে হেঁটে সামনের দিকে যাচ্ছে৷
ফারিহা শুভর যাওয়া দেখে খুব বেশি কান্না করছে৷ হঠাৎ করে তার যে কি হলো! এত ভালবাসা এলো কোথা থেকে? শুভর জন্য এত কান্নাই বা করবে কেনো?
,,
এসব ভাবতে ভাবতে শুভকে আর দেখতে পায়না ফারিহা। চোখের পানি মুছে তার ছোট্ট পুকুরটার দিকে তাকালো আর কি যেন ভেবে মুচকি হাসলো।
চলবে