এক পশলা বৃষ্টি আর সে, পর্ব – ১০

0
1052

১৯
,
,
,
দুপুরের দিকে বড় আপু এসে আমাকে শাড়ি গয়না দিয়ে গিয়েছেন আর যাবার সময় বলে গেছেন তিনি মেঝো ভাবি কে পাঠিয়ে দিচ্ছে ততক্ষণে আমি যেনো হাত-পা ধুয়ে রেডি হয়ে থাকি…… এর মধ্যেই যম ঠাকুরকে দেখলাম বকতে বকতে বড় আপু রুমে পাঠালেন……. রুমে ঢুকে মুখটাকে বাংলার পাচের মতন করে দারিয়ে আছেন….. হয়তো খেয়াল ই করে নাই আমি যে রুমে আছি…… ওনাকে এভাবে দেখে আমি পেটে হাত চেপে হু হু করে হেসে উঠলাম…… যা লাগছে না দেখতে একেবারে পেঁচামুখি……হাসির আওয়াজ শুনে আমার দিকে কপাল কুচকে তাকালেন….ওনার এভাবে তাকানো তে আরও বেশি করে হাসি পাচ্ছে….. অবস্থা বেগতিক দেখে মুখে হাত চাপা দিলাম কিন্তু তাও হাসি থামাতে পারছি না…..ওনি ঝট করে আমার সামনে দাড়িয়ে নিজের কোমড়ের দু পাশে হাত ঠেকিয়ে কটমট করে জিজ্ঞেস করলেন ———
,
,
,
——— হোয়াট ডু ইউ মিন বাই ” বাল ” তুলি!!!!কাল রাতে কিন্তু আমি শব্দটা স্পষ্ট শুনেছি….
,
,
,
ব্যাস ওতেই আমার হাওয়া টাইট যাকে বলে…..হাসি যে কর্পূরের মতো করে কখন উবে গেছে নিজেই টের পাই নি…. কাল রাতের কথা তো ভুলেই গিয়েছিলাম….. এখন কি হবে!!! ওনি তো স্পষ্ট শুনেছেন গালিটা….. এখন আমার পিলে না চটকায় আবার…..আমাকে ভ্যাবাচেকা খাওয়াতে পেরে সেই তখন থেকেই শয়তানি হাসি হেসে যাচ্ছে…… মনে মনে যম ঠাকুরের তুলোধুনো করে মুখটাকে নিষ্পাপ করে রাখলাম…… ওনি বাথরুমের দিকে যেতে যেতে বলে গেলেন আলমিরার ২য় তাক থেকে যেনো শপিং ব্যাগ টা বের করে রাখি….. ব্যাটা খচ্চর সকালে ত খুব ডায়লগ বাজি করেছিলেন……. নিজের কাজ নিজে করতে….. নিজের বেলায় কি!!! হারে বজ্জাত কোথাকার….. ওনার শপিং ব্যাগ বের করে বিছানায় রাখতে রাখতেই মেজো ভাবি এসে আমাকে তাড়া দিয়ে রেডি করাতে শুরু করলেন….
,
,
,
——— এমা তুলি!! চুল এখনো শুকাউ নি কেন!! তুমি কি আবার গোসল করলে নাকি গো!!!
,
,
——— না ভাবি……গোসল তো সেই সকালে করেছি ঘুম থেকে উঠে…..
,
,
——— তাই নাকি!! তা এতো সক্কাল সক্কাল গোসল!! ব্যাপার টা কি!! তুলির কাধে হালকা ধাক্কা দিয়ে….
,
,
——— আমার নানি বলে দিয়েছিলেন….. বিয়ের পর নাকি সকাল সকাল গোসল করতে হয় এটা নাকি নিয়ম!!! ভাবি আপনাদের কি আরো সকালে গোসল করার নিয়ম!!!
,
,
——— সাদাফ ঠিকই বলে তার বউ নিতান্তই বাচ্চা…. তুলির কপালে চটি মেরে….তা সাদাফ কাল রাতে কি উপহার দিলো ঘুমটা তুলে….. এই তুমি সালাম করেছিলে মনে করে!!
,
,
——— হু….. ঘুমটা তুলে কি উপহার দিয়েছে জিজ্ঞেস করতেই তুলির মন খারাপ হয়ে গেলো…… যম ঠাকুর তো কোন উপহার দেয় নি….. সে তো আমার উপর উপহাস করাতে ব্যাস্ত ছিলো…. (মনে মনে)
,
,
——— কি দিয়েছে বললে না তো… এই তুলি তোমার কোমড়ের বিছা টা তো বেশ সুন্দর….. কত খানি রূপা লেগেছে!! বিয়েতে পরো নি নাকি!!! কাল রাতে তো দেখলাম না….. ও বুঝেছি এইবার….. এই তাহলে…. আর কথা না বাড়য়ে তুলিকে শাড়ি পড়াতে শুরু করলেন মুচকি হেসে….
,
,
,
এদিকে তুলি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে কোমড়ের বিছার দিকে….. এটা কোত্থেকে এলো….. মা তো কোন বিছা পড়ায় নি তাকে!! সেইবা কখন পড়লো এটা!!! যতটুকু মনে আছে কেউ তাকে বিছা দেয় নি তো!! তাহলে এটা কোমড়ে আসলো কি ভাবে!! কখন ই বা পড়লো!! এর জন্যই সকাল থেকে কোমড় ভাড়ি লাগছিলো!! সকালে তো এতো খেয়াল করে নি…. গোছল করেই কোন রকমে শাড়ি পেচিয়ে বেরিয়ে এসেছিলাম…. তাহলে!!!
,
,
——— তুলি…. চুল গুলো বেশিই ভেজা বোন…. এখানে বসে চুল টা শুকিয়ে নাও তারপর গয়না গুলো বেরোনোর আগে পড়ে নিয়ো…. আমি একটু ওদিকটায় দেখে আসি কেমন!!
,
,
,
তুলি মাথা নাড়িয়ে সায় দিতেই ওনি চলে গেলেন….পিঠের আচল ফেলে চুল গুলো পিঠে ছড়িয়ে দিলেন…. বেশি লম্বা না হওয়ায় কোমড়ের উপরেই ছড়িয়ে আছে….. এর মধ্যেই সাদাফ বেরিয়ে এলো গামছা হাতে নিয়ে…… প্যান্ট সে একেবারে বাথরুম থেকে পড়েই বেড়িয়েছে….. গায়ে মেলানো গামছাটা চেয়ারের হোল্ডারে রেখে সেন্ডু গেঞ্জি টা পড়ে নিলো জলদি….. তুলি তখনও সাদাফ কে খেয়াল করে নি…. সে আপন মনে চুলের ভেতর আঙুল চালিয়ে চালিয়ে ছড়িয়ে দিচ্ছে….. সাদাফ শপিং ব্যাগ থেকে নতুন শার্ট বের করে ক্লিপ খুলে একদম তুলির পেছনে ড্রেসিং টেবিলের বরাবর দাড়ালো….. তুলি তখন হাতে বালা পড়ছিলো….. বা হাতে বালা ঢুকাতে গিয়ে বেশ মুশকিল হচ্ছে……. সকালে ক্যানেলা করার জায়গাটাতে বাথরুমের দরজায় বাড়ি খেয়েছিলো তার জন্যই ফুলে আছে….. কাইকুই করে বালা ঢুকাতে হচ্ছে….
,
,
,
——— এই হাতে বালা পড়া লাগবে না…. ডান হাতেই দুইটা পড়ে ফেলো….এই হাত শাড়ির নিচেই থাকবে কেউ খেয়াল করবে না…..
,
,
,
ওনার কন্ঠটা শুনে আয়নায় তাকালাম….. ওনি আমাকে ওনার দু চোখ বুঝে মাথাটা সামান্য হেলিয়ে আস্বস্ত করলেন….. সাথে হালকা ঠোঁট ছড়ানো হাসি….. বেশ লাগছে তো যম ঠাকুরকে…. এই গোলাপি শার্টে….. কালারটা যেনো গায়ের রঙের সাথে মিশে গেছে…… বেশিক্ষন তাকাতে পারলাম না…. কেননা যম ঠাকুর তার নিজের থেকে চোখ সরিয়ে আমার দিকে আয়নায় তাকালেন হাতা ফোল্ড করতে করতে….. এবার আমি নিজের দিকে তাকালাম….. কলাপাতা আর লাল পাড়ের মিশেলে একটা শাড়ি পড়িয়ে দিয়েছেন ভাবি….. লিপস্টিক আগেই দিয়ে ফেলেছি…. তাই কানে ঝুমকা পড়তে শুরু করে দিলাম…… গলায় বিয়ের জড়োয়া নেকলেস টা পড়ার সময় ওনি বাধা দিয়ে বললেন কাল রাতে যেই নেকলেস টা পড়েছি সেটা যেনো পড়ি….. ওনার কথা মতোই ড্রয়ার থেকে বের করে পড়ে নিলাম…… তারপর ওনি আলমারি থেকে একটা চেইন এনে আমার গলায় নিজ হাতে পড়িয়ে দিলেন…… এটা মা বাবা ওনাকে দিয়েছিলেন…… আমি ওনার দিকে তাকাতেই বললেন ইসলামে তো ছেলেদের স্বর্ণ পড়া হারাম তাই এটা আমি তোমায় দিয়ে দিলাম …….. আমি আর কিছু বললাম না…. চেনের লকেট টা হাতে নিয়ে নেড়ে চেড়ে দেখছি….. বাংলা হরফে সাদাফ নামটা সম্পূর্ণ স্বর্ণ দিয়ে লিখা…… মা জুয়েলার্সের দোকান থেকে ডবল মুজুরি দিয়ে লকেট টা গড়িয়েছিলেন…… খুব অন্যরকম একটা ভালোলাগছিলো…. যমঠাকুর এখনো আমার পেছনেই দারানো ওনার মুখের দিকে তাকানোর সাহস পাচ্ছি না….. কিন্তু আড়চোখে বুকের দিকটায় তাকিয়ে আছি খুব করে….. কেনো যেন খুব পরিপূর্ণ লাগছিলো তখন নিজেকে….. সব কিছু আমার….. এই মানুষ টা আমার….. এই ঘড় টা আমার….. এইটা আমার সংসার….. এই যে আমার সামনের আয়নায় দুটো মানুষের প্রতিচ্ছবি!! এইটাই আমার ভবিতব্য…. এটাই আমার সংসার….. এই মানুষটার বউ আমি…. অর্ধাঙ্গিনী….. সহধর্মিণী…….
,
,
,
এতোসব ভাবনা ভেবে পরক্ষণে নিজেই বোকা বনে গেলাম…… যেই মানুষটাকে কাল ও আমি আমার জীবনে স্বাভাবিক ভাবে মানাতে পারছিলাম না আজ তাকে জুড়েই এতো সব বিশেষণ জুড়ে দিলাম নিজের সাথে…..
,
,
,
২০
,
,
,
আম্মু নিজে দাঁড়িয়ে থেকে সব নিয়ম কানুন পালন করলেন আমাকে আর যম ঠাকুরকে দিয়ে….. বিকেলের দিকেই প্রায় সব আত্নীয় স্বজন চলে গেলেন….. বড় আপু চলে গেলেন সন্ধ্যায়….. মেজো ভাবিরা কাল ভোরে রউনা দিবেন….. ভাইয়ার ছুটি শেষ আজকেই…. আম্মু অনেক চেচামেচি করে ওনাকে রেখেছেন…… এদিকে আমার অবস্থা ছাইড়া দে মা কাইন্দা বাচি….. আম্মু আমার অবস্থা বুঝতে পেরে আমাকে ঘরে পাঠিয়ে দিলেন….. কাপড় খুলার সময় আবারো কোমড়ের বিছাটা চোখে পড়লো….. কে না কে দিলো…. তার চেয়ে বরং আম্মু কে দেখিয়ে নিলে ভালো হবে…. ভেবেই বিছাটা খুলে হাতে নিয়ে বের হলাম বাথরুম থেকে….. ওনি তখন রুমেই ছিলেন….. আপুদের স্টেশন ছেড়ে সবে মাত্র রুনে এসেছেন…… প্যান্টের ভাজ থেকে শার্টের ইং ছাড়িয়ে বুকের দিকের দুটো বোতাম খুলে পকেট থেকে মানিব্যাগটা টেবিলের উপর রাখতে রাখতে ———
,
,
,
——— তুলি একগ্লাস পানি দাও তো…
,
,
——— দিচ্ছি
,
,
পানি খেয়ে আমার দিকে গ্লাস ফিরিয়ে দিতে গিয়ে খেয়াল করলেন হাতের বিছাটা…. আমি গ্লাস টা টেবিলে উপর রেখে দরজার দিকে এগুতেই ———
,
,
,
——— কোথায় যাচ্ছো!!
,
,
——— আম্মুর কাছে এটা দিতে….. আমাকে কে যেনো উপহার দিয়েছে এইটা মনে করতে পারছি না….
,
,
——— মানে!!
,
,
——— দুপুরে মেজো ভাবি শাড়ি পড়াতে গিয়ে কোমড়ে বিছাটা দেখে জিজ্ঞেস করেছিলেন….. তখনই প্রথম খেয়াল করলাম…. কিন্তু কখন কিভাবে পড়লাম কিছুই মনে পড়ছে না….
,
,
——— ওমা সেকি তোমাকে আম্মু, বড় আপু কেউ কিছু বলে নি!!!
,
,
——— কি বলবে!!
,
,
——— এই বাড়িতে….. ইনফেক্ট আমার রুমেই থাকে…
,
,
——— কে থাকে!!! আশেপাশে তাকিয়ে
,
,
——— জ্বিন…… খারাপ না কিন্তু….. এবাড়িতে যারা নতুন সদস্য হয়ে আসে তাদের সে কিছু না কিছু উপহার দেয় আর কি….. আমাকে তো খুব স্নেহ করে…..ওনিই তোমাকে এইটা দিয়েছে…..
,
,
——— ম্মমানে!!!!
,
,
——— মানে এতোক্ষণ যা বললাম….. তুমি এটা খুলেছো কেন!! কোনক্রমে যদি বুঝতে পারে যে তার দেওয়া উপহার তুমি খুলে রেখেছো তাহলে একেবারে অনর্থ করে ফেলবে….. জলদি পড়ো…… ওয়েট আমি পড়িয়ে দিচ্ছি….. আর যেনো খুলতে না দেখি…. মানে আর খোল না যেনো।।।।।
,
,
,
ওনার কথা শুনে হতবিহ্বল আমি….. এক যম ঠাকুর কি কম ছিলো যে তার উপর আবার জ্বিন এসে জুটেছে….. এ কোন বাড়িতে বিয়ে দিলে মা….. দুনিয়াতে কি আমার উপযুক্ত এই ভুতুইরা বাড়ির যমদূত ই ছিলো…. যদি ও বা ছিলোই তাও কেন এই পোলার কাছে আমাকে বিয়ে দিলা…..!!! আমার প্রাণের মায়া তোমাদের নাই…!!! তোমাদের তো আমি একটা মাত্রই সন্তান ছিলাম নাকি!! ….. দেখে যাও ভূতের প্রিয় হয়ে গেছে এখন তোমাদের মেয়ে…..ভূতেরা এখন তোমাদের মেয়েকে উপহার দিয়ে যায়….. কোমড়ের দিকে তাকাতেই দেখলাম বিছাটা একদম শাড়ির ভাজে সুন্দর করে পড়ে আছে……
,
,
,
রাতের খাবার খেয়ে ফ্রেশ হয়ে মাত্র রুমে ঢুকেছি….. এর মধ্যেই যম ঠাকুর স্যালাইন নিয়ে রুমে ঢুকলেন…… ফার্মেসি বন্ধ হয়ে যাবে বলে খাবার টাও পর্যন্ত খেয়ে যায় নি…..একটু আগে ভাবি এসে রুমে খাবার ঢাকা দিয়ে গেছেন…… আমার ক্যানেলা ফিট করবার কথা মনে হতেই গা কাটা দিচ্ছে…..গায়ে হলুদের দিন অই কম্পাউন্ডার কয় ডজন গুতা দিয়েছে তা বলা বাহুল্য….. বেচারার ই বা কি দোষ নার্ভই খুজে পাচ্ছিলেন না……ওনার দিকে তাকাতেই দেখলাম ওনি ডান পাশে স্টানের দিকে স্যালাইন ঝুলিয়ে বাধছেন….. বা পাশে দেওয়াল অইপাশে ফিট করতে পারবেন না বলেই এপাশে বাধলেন……. স্যালাইন ঝুলানো শেষে ওনি আমার পাশে এসে বসে শার্টের উপরের দিকের দুটো বোতাম খুলে দিলেন….. পিঠের দিকটায় একেবারে ঘেমে লেপ্টে আছে…… কিছুটা জিড়িয়ে আমার বা হাতটা নিজের তালুতে নিয়ে একেবারে কপাল কুচকে জিজ্ঞেস করতে লাগলেন ———
,
,
,
——— কি অবস্থা হাতের!!! এতো গুলো সিরিঞ্জের ফুটোর দাগ কেন!!! হাতই বা এতো নিল হয়ে ফুলে আছে কেন!!
,
,
,
——— বাথরুমের দরজায় সকালে লেগেছিল
,
,
——— সিরিঞ্জের ফুটো গুলো!!
,
,
——— ওগুলো ক্যানেলা ফিট করার সময় হাতের রগ খুঁজে পায় নাই বলে….
,
,
,
আর কিছু না বলে পাশ থেকে উঠে একেবারে রুমের বাইরে চলে এলেন….. কিছুক্ষণ পর বাটিতে করে বরফ এনে বাটি সহ হাতের উপর হালকা চেপে ধরলেন…… বেশ কিছুক্ষণ বরফ ছেকা দেবার পর নিজেই প্রসেসিং করে দুইবারের মাথায় ক্যানেলা ফিট করলেন…… তারপর স্যালাইন অন করে দিলেন…..আমাকে শুইয়ে দিয়ে নিজে ফ্রেশ হয়ে এসে খাবারের প্লেট হাতে নিয়ে আমার পাশেই এসে বসলেন…..মাঝে মাঝে স্যালাইনের ফ্লু চেক করে দিচ্ছেন….. লোকটার যে কত গুণ……. মেডিক্যাল ক্যাম্প এটেন্ড করে ট্রিটমেন্ট এর ফাস্ট স্টেপ গুলুও জেনে নিয়েছেন…… এতো গুনী লোকের কপালে কিনা আমি গাধী জুটলাম….. ছে যম ঠাকুর আপনার কপাল বড্ড খারাপ…..
,
,
,
২১
,
,
,
পরদিন ভোরবেলা মেজো ভাই -ভাবি চলে গেলেন….. সেদিন ও আমি দেখলাম যম ঠাকুরকে টেবিলে পড়ে পড়ে ঘুমাতে….. এতো কিযে পড়াশোনা ওনার আল্লাই জানে….. ভাইয়া ভাবিকে সিএনজি তে তুলে দিয়ে ওনি বিছানায় এসে শুলেন….. আমাকে বললেন যেন ওনাকে দশটার আগে না ডাকি….. ঠিক আছে ডাকলাম না….. কোন রকমে গোছল সেরে রুম থেকে বেরিয়ে গেলাম….. একা রুমে থাকতে ভীষণ রকমের ভয় করে এখন….. তার উপর যম ঠাকুর টা ঘুমে….. অই জ্বিন ব্যাটা যদি এর মধ্যে এসে হাজির হয়….. তাই আর রিস্ক নিলাম না….. বেরিয়ে চলে গেলাম আম্মুর রুমে…..বুয়া নাস্তা বানাচ্ছেন আর আম্মু পাশে বসে মটর ছুলে ডিপ ফ্রিজিং এর প্রসেসিং করছে….. আমাকে দেখে মুচকি হেসে কাছে ডেকে বুয়ার সাথে আলাপ করিয়ে দিলেন আর বলে দিলেন তাকে যেনো খালা বলে ডাকি……
,
,
,
যম ঠাকুর যখন ফ্রেশ হয়ে ডায়নিং এ এলেন তখন আমি টেবিলে খাবার সাজাচ্ছিলাম….. হাতের ক্যানেলা দেখে যদিও মা আমাকে ভারি কিছু নিতে দিচ্ছেন না….. এর মধ্যেই মা-বাবা আম্মুর কাছে ফোন দিলেন আমার আর যম ঠাকুরের ফিরানির কথা বলতে….. আম্মু কথা দিলেন কালকেই আমাদের পাঠিয়ে দিবেন….. আমাকে আর পায় কে….. ইশ মনে হচ্ছে যেনো কত বছর ধরে বাড়ি যাই না তাদের দেখি না…..
,
,
,
বুয়া তিনবেলার রান্না করে সব কিছু পরিষ্কার করে একেবারে সন্ধ্যার পর ফিরেন….. সারাদিনে তিনজন বেশ জমিয়ে আড্ডা দিলাম….. খালা চেয়ারে বসে আম্মুর মাথায় তেল দিয়েছে আর আম্মু একসাথে মুড়ায় বসে আমার মাথায় তেল দিয়েছেন….. এক মিনিটের জন্যও মনে হয় নি আমি আমার থেকে বড় কোন মুরুব্বির সাথে আছি….. কারণ আম্মু মানুষ টাই একদম শিশুর মতন সরল….. বিকালের দিকে যম ঠাকুর আবার স্যালাইন নিয়ে ফিরলেন…. এসেই হাক ডাক শুরু…. এখনি স্যালাইন নিতে হবে আমার…. এদিকে স্যালাইন ফিট করে দিয়ে ওনি আবার রেডি হতে যাচ্ছেন…. কোথায় নাকি বের হবেন…… তারমানে আমাকে একা একা এই রুমে থাকতে হবে….. শুরু হলো কান্নাকাটি….. কোন্মতেই আমি এই রুমে একা থাকতে রাজি হলাম না….. উপায় না দেখে যম ঠাকুরই আমার পাশে বসলেন…….
,
,
,
কান্নাকাটি করে একপর্যায়ে ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে গেলাম….. ঘুম ভেঙে দেখি ওনি ক্যানেলা থেকে স্যালাইন খুলে দিচ্ছেন তারমানে স্যালাইন শেষ!!! আমি এতোক্ষণ ঘুমাচ্ছিলাম!!! জানালার দিকে তাকাতেই দেখলাম সন্ধ্যা হয়ে গেছে….. সেদিন আর তিনি বের হলেন না…. কিন্তু রুমে থেকেই একটু পর পর আমাকে বেশ ভয় দেখালেন……
,
,
,
রাতে খাওয়ার পর ই আমার মন টা বেশ ভালো হয়ে গেলো….. আর মাত্র কয়েক ঘন্টা সকাল হতে…. ইশ তারপর ই আমি বাড়ি যাবো…… একপ্রকার ক্যাংগারুর মতোই লাফিয়ে লাফিয়ে খাটে উঠে ঘুমাতে গেলাম…… যম ঠাকুর তখন টেবিলে বসে কি যেনো ঘাটছিলেন বইয়ে….. আমার এই কান্ডে তিনি বই থেকে চোখ সরিয়ে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলেন…. তাকিয়ে থাকলে থাকুক…. আমিও সময় নষ্ট না করে ঘুমিয়ে পড়লাম……
,
,
,
সকালে ঘুম ভাঙলো একেবারে নিশ্বাস বন্ধ হয়ে যাবে যাবে এমন অবস্থায়….. চোখ খুলে তো একেবারে চড়কগাছ…… ওনি একেবারে আষ্টেপৃষ্টে হাত পা দিয়ে চেপে ধরে ঘুমাচ্ছেন…… পেছন থেকে জড়িয়ে ধরার কারনে ওনার গরম নিশ্বাস গুলো আমার গালে পড়ছেন…… নিজের দুই পায়ের মাঝখানে আমার পা একেবারে সেধিয়ে রেখেছে….. এক হাত শাড়ির ভেতর দিয়ে নিয়ে পেটের উপর আর আরেক হাত আমার ঘাড়ের নিচে…… এমন ভাবে পেচিয়ে ধরেছে যে চুল পরিমান ও নড়তে পারছি না…..প্রায় মিনিট দশেক এর মতো একইভাবেই রইলাম তার ঘুম ভাঙার অপেক্ষায় কিন্তু না তিনি তো সর্বস্ব দিয়ে ঘুমাচ্ছে….. এদিকে আমার শরীর ব্যাথা হয়ে যাচ্ছে…..আমার ছটফট করাতে ওনার ঘুমটা ভেঙে গেলো…… আমাকে ছেড়ে দিয়ে বালিশে ভালো মতোন শুতে শুতে….
,
,
,
——— সাত সকালে কি শুরু করলে তুলি!!! রাতে ঘুমের মধ্যে যে ভাবে হাত পা ছুড়তে থাকতো ফুটবল টিমে ঢুকিয়ে দশ বারোটা গোল এমনিতেই হয়ে যেতো…… স্বপ্নে কি ফুটবল খেলো নাকি!!!! দুই রাত এই উস্টা লাথি খাবার ভয়ে টেবিলে বসে বসে ঘুমিয়ে ঘাড় ব্যাথা করে ফেলছি….. আমার পক্ষে আর সম্ভব না টেবিলে ঘুমানো…… কাল রাতে ওভাবে হাত পা না আটকালে নিশ্চিত মাঝরাতে কোমড় ভেঙে পঙ্গু হাসপাতালের মেঝেতে পড়ে থাকতে হতো….. তোমার কি আর কিছু জিজ্ঞেস করার আছে!!! থাকলে দু সেকেন্ড এর মধ্যে করো…. আমি আরও আধ ঘন্টা ঘুমাবো….,
,
,
,
আমার প্রশ্নের অপেক্ষা না করেই যম ঠাকুর ঘুমিয়ে পড়লেন…. ওনার বলা প্রতিটি কথা আমার মাথায় রিপিট হচ্ছে বারবার….. আসলে একা ঘুমাতে ঘুমাতে আমার এই বদ অভ্যাসটা হয়েছে….. ইশ মানুষ টা আমার জন্য দু রাত পড়ার টেবিলে ঘুমিয়েছেন….. আর আমি উল্টাপাল্টা কতোকিছু ভেবে গেছি…… কথা গুলো ভাবতেই ওনার দিকে তাকালাম….. ওনি মাথা নিচে এক হাত আর বুকের উপর এক হাত রেখে মুখটা হাসি হাসি করে শান্তিতে ঘুমাচ্ছেন…..আর তার এলোমেলো চুল গুলো ফ্যানের বাতাসে কপালে উপর অগোছালো হচ্ছে…… আমি দেখছি তাকে…… কেন যেনো চোখ সরাতেই ইচ্ছে করছে না…..
,
,
,
,
চলবে…….

লেখনিতে: চৈত্র রায়

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here