এক পশলা বৃষ্টি আর সে, পর্ব – ১৩

0
810

২৭
,
,
,
তারমানে ওনি এতো দিন আমাকে মিথ্যে ভয় দেখিয়েছেন….. কিন্তু কেন!!!
,
,
——— আপনি এতো দিন আমাকে মিথ্যে ভয় দেখিয়েছেন!!! আপনি…. ছাড়োন…. আমাকে ছাড়োন বলছি।।
,
,
——— ভয় তুমি তুমার দোষেই পেয়েছো….. বাসর রাতের উপহার নিয়ে ছুটছিলে শ্বাশুড়ির কাছে… জিজ্ঞেস করতে…. সিরিয়াসলি তুলি!!! আমি কতটা লজ্জায় পরতাম ভেবে দেখেছো!!! তাছাড়া বাড়ি সুদ্ধো লোক জানে কোমড়ের বিছা টা আমি তুমায় দিয়েছি…. অথচ তুমিই জানো না….. কি পরিমাণ গবেট একবার ভেবে দেখেছো!!
,
,
——— হ্যা আমি গবেট ই…. আমি তো আর দশ পনেরো টা বিয়ে করে বাসর করি নি যে এতো কিছু জানবো….
,
,
——— কেন!!! বিয়ের পর সক্কাল সক্কাল হুদাই গোছল করতে হয় এইটা বাপের বাড়ি থেকে যখন জেনে আসতে পারছো….. বাসর রাতে বরের উপহার দেবার কথা জেনে আসতে পারলে না…..আর হোয়াট ডু ইউ মিন বাই দশ পনেরো টা বিয়ে!! তুমি এতো গুলো বিয়ে করো নাই বলে কি আমাকে মিন করছো!!
,
,
——— হ্যা করেছি..উপহার মানুষ দেয় হাতে হাতে…. এইভাবে চোরের মতন কে দেয়!!!!
,
,
——— আমি…. আমি দেই….. যার বউ দুনিয়া ভুলে গাধার মতো ঘুমাতে পারে বাসর রাতে তাকে এভাবে চোরের মতন ই উপহার দিতে হয়…..
,
,
——— আমি গাধার মতোন ঘুমাই….. আপনি আমাকে ছাড়েন…. ছাড়েন বলছি…. আমাকে আর আপনি জড়িয়ে ধরে ঘুমাবেন না….. আমি গাধার মতো ঘুমাই…এখন থেকে আরও বেশি করে ঘুমাবো….
,
,
——— একশো বার জড়িয়ে ধরবো আর হাজার বার লতার মতন পেচিয়ে ঘুমাবো…. বললেই হলো নাকি…. এতো দিন কোলে পিঠে করে এতো কষ্ট করে লেখা পড়া শিখিয়ে গাধিকে পিটিয়ে মানুষ বানিয়েছি কি এমনি এমনি নাকি…
,
,
——— আমার কিন্তু এবার ভিষণ রাগ লাগছে আপনি ছাড়েন আমায়….. আমার প্রতি তো আপনার নূন্যতম দয়ামায়া ও নাই….. একবার ও খেয়াল করেছিলেন আমার অবস্থা টা!!
,
,
——— সে আর বলতে…. আমি তো ভয়েই ছিলাম শেষ পর্যন্ত না পাগলের সাথে সংসারি করা লাগে…..
,
,
——— করা লাগবে না সংসারি….. আমি আর থাকবোই না এখানে….. আম্মু আর ফুলি খালাকে নিয়ে আমাদের বাড়ি চলে যাবো…..
,
,
——— কি বললে আবার বলোতো শুনি….ছেড়ে দিয়ে চোখে চোখ রেখে….
,
,
——— আমি আপনার সাথে এই বাড়িতে থাকেবোউউউ…. উউউউউমমম্মম
,
,
——— যতবার বলবে ততবারই রিপিট হবে…..রিপিট করতে অবশ্য আমার কোন আপত্তি নাই…..
,
,
——— আপনি….. আপনি…..
,
,
——— এইতো তোমার সামনে আছি…. দেখা যাচ্ছে না বুঝি….বলেই কিছুটা আমার মুখের উপর ঝুকে গেলো…
,
,
——— এই সরেন বলছি….. আপনি ব্রাশ না করে ইয়ে করলেন কেন আমাকে….. ছিঃ
,
,
——— কই কি করেছি!!! আমিতো বসে ছিলাম…. আমিতো কিছু করি নাই তো..
,
,
——— আরে মিথ্যা বলছেন কেন!!! আপনি তো একটু আগেই আমাকে ইয়ে করলেন…
,
,
———- ইয়ে!!!!এই ইয়েটা আবার কি!!!!কখনো তো শুনি নি…খেতে অনেক টেস্ট বুঝি!!!!
,
,
——— উফফফফফ।।।।।আপনি আমায় চুমু খেলেন কেন!!!ছিঃ দাত ব্রাশ না করেই….. ওয়াক….
,
,
——— ও লিসেন মিস….. উম্মম না…. মিসেস দাত ব্রাশ তুমিও করো নি….. সো কাটাকাটি….. এখন মন দিয়ে কান খুলে একটা কথা শুনে মাথায় গেথে রাখো….যতোদিন আমি বেঁচে আছি ততোদিন সংসারি টা আমার সাথেই করতে হবে ইভেন আমি মরার পর ও….. সো এসব কথা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলো…. ওকে
,
,
,
কথা গুলো বলেই ধুম করে আবার চুমু খেয়ে নিলো কপালে….. তারপর হনহন করে বাথরুমে ঢুকে পড়লো….. নিজে ফ্রেশ হয়ে এসে আমার উপর হুকুম তামিল করে গেলো
,
,
,
——— আমি গরম জল করে নিয়ে আসছি….. ওতেই গোসল করবে….. টাংকির পানি বেশ ঠান্ডা এখন…. রাতে তো কাথা মুড়ি দিয়ে শুয়েছিলে…. এসে যেনো রুমেই পাই….
,
,
,
আমি কোন কথাই বলি নি….. কোনমতে বিছানা টা গুছিয়ে গুটিশুটি মেরে দারিয়ে আছি….. গোসল করার জন্য গা নিশপিশ করছে…… এদিকের কোমড় আবারো ভার হয়ে আছেন….. যম ঠাকুর গামলা ভর্তি করে গরম পানি বালতিতে ঢেলে দিয়ে গেলেন…… আমি কাপড় চোপড় নিয়ে সোজা বাথরুমে…… গোসল সেরে যেনো জান্নাতের সুখ পাচ্ছি….. গায়ের মেজমেজ ভাব টা ও কমে গেছে….. সাথে কোমড়ের ভার টা কিছুটা কমেছে….. কিন্তু ব্যাথাটা বাড়ছে তৃব্য গতিতে….. মাথায় গামছা পেচিয়ে শাড়ি নিয়ে রুমে চলে এলাম…. মূলত এই সময় টাতে ওনি রুমে আসেন না….আর বাথরুমে ভালো করে শাড়ি পড়াও যায় না….ভিজে একাকার হয়ে যায়…… ভেজা গামছা টা চুল থেকে খুলে বারান্দায় মেলে দিয়ে ওনার গামছা টা পেচিয়ে শুয়ে পড়লাম….. ইশ কি যে শান্তি লাগছে…… ঘুমে দু চোখ ভেঙে আসছে একেবারে …..ঘুম ভাঙলো এগারো টার দিকে….. পেটের উপর থেকে হট ব্যাগটা হাতে নিতেই…..
,
,
,
——— ওটা কোন জ্বিন দিয়ে যায় নাই….. আমি দিয়েছি….. আর মাথার টাওয়েল টাও আমিই খুলে নিয়েছি…..কারণ ওটা আমার ছিলো আর আমি গোসলে যাব তাই…..
,
,
আমি আর কিছু বললাম না….. কিন্তু অবাক হলাম….. যম ঠাকুর ও ব্যাখ্যা করে আজকাল….. বাহ…. রাগ থেকে যদি ভালো কিছু হয় তাহলে রাগই ভালো….. বিছানা টান করে রেখে আমি বাইরে বেরিয়ে এলাম….. রান্নাঘরে ঢুকে দেখলাম নতুন মহিলা রান্না করছে…… আম্মু দের খুব মিস করছি….গতকাল ফোন দিয়ে বললেন আপু এখন কিছুটা সুস্থ আছে….. দুই এক দিনের মধ্যেই ফুলি খালাকে নিয়ে চলে আসবে……. এদিকে খুদায় পেটে ছুচু লাফালাফি করছে…. হঠাৎ করে মনে হলো সকাল থেকে তো কিছুই খাই নি…. পেটের আর কি দোষ……খাবার টেবিলে ও কিছু নাই…. খালাকে জিজ্ঞেস করতেই বললো সকালের নাস্তা বানাতে নাকি যম ঠাকুর ই না করেছেন….. এখন কি খাবো….
,
,
——— তুলিইইই…. এক গ্লাস পানি দিয়ে যাও
,
,
অগত্যা কোন উপায় না পেয়ে নিজেও একগ্লাস পানি খেয়ে যম ঠাকুরের জন্য পানি নিয়ে রুমে গেলাম……. ওনিও কি সকালে কিছু খায় নি নাকি….. না খেলে না খাবে….. তাও আমি জিজ্ঞেস করবো না……. গ্লাস নিয়ে ফেরার সময় দেখি খালা দরজায় বাটি হাতে দারিয়ে আছেন…..
,
,
——— কি খালা কিছু লাগবে!!!!
,
,
——— ভাইজান কইছিলেন….
,
,
——— খালা ভেতরে আসেন…. এখানে রেখে যান….
,
,
,
ওকি দিয়ে খালার বাটিতে কি আছে দেখতেই দেখলাম বড় বড় দুইটা হাসের ডিম ওতে….. এমা…. নিশ্চয় এগুলো এখন আমাকে গেলাবে…… মানে মানে কাট তুলি এখান থেকে……
আমার সব পরিকল্পনায় জল ঢেলে যম ঠাকুর দরজা আটকে আমাকে টেনে নিয়ে খাটে বসালেন…..
,
,
——— নিশ্চয় সকালের মতন ইয়ে খাবার ইচ্ছা নেই….. থাকলে বলতে পারো আই ডোন্ট মাইন্ড……. দুষ্টু হেসে আমার মুখের সামনে ডিম খানা ধরে…..
,
,
,
ব্যাস ও কথাতেই আমার কাজ হয়ে গেলো….. বাধ্য মেয়ের মতোই কামড় বসালাম ডিমে…..ঠান্ডা পানি না খাবার জন্য একেবারে কড়া করে নিষেধ করে দিলেন…..এতেকরে নাকি চকলেট সিস্ট আর ক্যান্সারের ছত্রাকের সংক্রামক বাড়ে….যম ঠাকুর টা যে কতো কিছু যানে আল্লাহ…. বেলা বারোটার দিকে রেডি হয়ে ওনি কলেজ চলে গেলেন…… এদিকে খালা ও তার কাজ শেষ করে চলে গেছেন…… আমি ড্র‍য়িং রুমে বসেই এক চোট ঘুমিয়ে নিলাম….. ঘুম থেকে ওঠে ফ্রেশ হয়ে…. রুমের এটা সেটা পরিষ্কার করতে করতেই যম ঠাকুর চলে এলেন……দরজা খুলে বাইরে মুখ বের করে উকি দিতেই ওনি ধুম করে আবার গালে চুমু খেলেন….. আমি ভ্যাবাচেকা খেয়ে ভেতরে চলে আসি….. ওনি আমার এই ভ্যাবাচেকা খাওয়া মুখ দেখে বেশ মজা নিয়ে হাসছেন…. আমার হাতে ওনার ওয়ালেড আর ঘড়ি ধরিয়ে দিয়ে শার্টের ইং খুলে বোতাম খুলতে খুলতে রুমে চলে গেলেন…..ভয়ে আর রুমে যায় নি….. এই লোকের আজ হয়েছে কি…. সকাল থেকে যখন তখন চুমু খাচ্ছে…… কিন্তু সে আর বেশিক্ষণ হলো না…. এর মাঝেই ওনি গলা ফাটিয়ে ডাকতে শুরু করলেন…..
,
,
——— তুলিইইইইইইইইই
,
,
জল চাইবে ভেবেই আমি একেবারে ড্রয়িং রুম থেকে পানির গ্লাস নিয়ে রুমে ঢুকলাম….
,
,
——— বাহ… বউতো বেশ বুদ্ধিমতি হয়ে গেছো…. আমার চুমুতে অনেক ভাইটামিন আছে বুঝলা…. একদিনেই কেমন তরতর করে বুদ্ধি বেরে গেলো….. বলেই ওনি এক ঢুকে পানিটা শেষ করে আমার হাতে দিয়ে দিলো…….. গায়ের শার্ট টা খুলে হ্যাঙারে রেখে আমি হাতে লুঙ্গি ধরিয়ে দিয়ে খুব ক্লান্ত ভঙ্গিতে বিছানায় হাত ছড়িয়ে বসে বললো….
,
,
,
——— উফফফ…. খুব কাহিল লাগছে….প্যান্ট টা একটু চেঞ্জ করে দাও তো…আমার দিকে তাকিয়ে
,
,
——— হ্যাঁ।।।। এ…. আস্তাগফিরোল্লাহ…. বলেই এক দৌড়ে রুম থেকে বেরিয়ে এলাম….. ওনি এটা কি বললো….. এদিকে ড্রয়িং রুম থেকে ওনার খিলখিল করে হাসির শব্দ আসছে….. ওনি জেনেশুনে ইচ্ছে করে আমাকে এভাবে হেনস্তা করেন….. মনে মনে ওনাকে খুব বকলাম খুব…..
,
,
,
দুপুরে খাওয়া দাওয়া শেষ করে কিছুক্ষণ রেস্ট নিয়ে ওনি আবার বেরিয়ে গেলেন….. দরজা লাগিয়ে হাতে মুখে পানির ঝাপটা দিলাম বেশ কয়েকবার….. আবার দুনিয়া অন্ধকার করে ঘুম নামছে চোখে….. এদিকে গায়ের গয়না গুলো যেন মনে হচ্ছে কয়েক মন…… গলার, হাতের,কানের গায়ের যত গয়না আছে সব খুলে টেবিলের উপর রেখে খুব স্বস্তির একটা ঘুম দিলাম….. ঘুম ভাঙলো যম ঠাকুরের ডাকে….. চোখ পিটপিট করে তাকিয়ে দেখি ওনি আলুথালু বেশে আমার পাশে বসে আছেন বাইরের পোষাকে…. একি!!! ওনি ভেতরে আসলো কিভাবে!!! আমিতো রুম লক করে….
,
,
——— এভাবে কেউ ঘুমায় তুলি!!! দরজা কতক্ষণ ধরে নক করছিলাম…. কত কিছু মাথায় আসছিলো….. ভ্যাগ্যিস আমার কাছে এক্সট্রা কি ছিলো….. একটু তো কান খাড়া রাখতে হয় নাকি…..
,
,
ওনি ওঠে চলে গিয়েও আবার আমার পাশে বসে পড়লো….. চোখ টেনে চোখের ভেতর কি যেনো দেখলো…. আবার হাতের কবজি চেপে ধরে ঘড়ি তাক করলো….. ওনার হাত ঘড়িতে তাকাতেই দেখলাম আটটা বাজে,….. ইশ এতো সময় নিয়ে ঘুমালাম….. সেরাতে খাবার পর ওনি একগ্লাস দুধ আর আস্ত একটা আপেল খাওয়ালেন…..তারপর টেবিলের উপর থেকে গয়না গুলো এনে একে একে সবগুলো পরিয়ে দিলেন…. কোমড়ের বিছা আর পায়ের নূপুর টা পরিয়ে দিয়ে বললেন……
,
,
,
——— যত যাই হোক এগুলো তোমার গা থেকে খুলার একমাত্র হকদার আমি….. আর কেউ না তুমি ও না….
,
,
ওনার কথা শুনে মুখের দিকে তাকাতেই বুঝতে পারলাম ওনার রাগের পরিমাণ টা…. যা ওনি ক্রমশ দাতে দাত চেপে নিয়ন্ত্রণ করে যাচ্ছেন……. সেরাতে আবার ও আগের মতো লতার মতো পেচিয়ে ধরে শুয়ে ছিলো….. তবে সেভাবে ঝেকে ধরে নি….. ওনার বুকেরসাথে আমার পিঠ একেবারে লেপ্টে আছে….. সারা মুখে ওনার গরম নিশ্বাস ছড়িয়ে পরছে….. ওনার বা হাতের উপর আমার মাথা রেখে ডান হাতটা শাড়ির আঁচল গলিয়ে পেটের উপর রাখলেন…..
,
,
,
——— তুলি!!!
,
,
——— হু
,
,
——— আজকে কি খুব বেশি ব্লিডিং হয়েছে!!! তোমাকে বেশ দূর্বল দেখাচ্ছে….. কালকে একবার ডাক্তারের কাছে যাবে!!!
,
,
,
ওনার কথা শুনে লজ্জায় আমি শেষ….. লোকটার মুখে কি কোন কিছুই আটকায় না….. ওনি কিন্তু বেশ বুঝেন আমি লজ্জা পাচ্ছি কিন্তু তার পর ও এগুলো বলবেন….যম ঠাকুরটা দিনকে দিন লজ্জাদায়ক মহামারী হয়ে যাচ্ছে আমার জন্য…উফফফফ….
,
,
,
,
চলবে

লেখনিতে: চৈত্র রায়

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here