১৭
,
,
,
ওনার এমন ধরনের ঠাট্টায় খুব অভিমান হলো আমার……. অসুস্থ হবার পর থেকেই যে যেভাবে পারছেন আমার সাথে মশকরা করে যাচ্ছেন……. অথচ একবার ও কেউ ভেবে দেখছেন না যে আমার উপর দিয়ে কি গিয়েছে এই কয়দিন……… আমার অসুস্থতা আমার মন মানষিকতা কি হতে পারে তাদের কি আদৌ কোন ধারণা আছে!!! ঠাট্রা করতে পারলে হাসি তামশা করতে পারলেই।শুধু হলো……. তাদের এতো সব আয়োজন এতো সব আনন্দ সব কিছু আমাকে ঘিরে আমার বিয়েকে ঘিরে অথচ সেই আমি টাই অসুস্থ এই নিয়ে তাদের কোন হেলদোল নেই……. মনে হচ্ছে মেইন কালপ্রিট আমি….. আমার অসুস্থতার জন্য আমি দায়ী যম ঠাকুর ও এভাবে বললো!!! আজকে তো তার সাথে ও এমন টা হতে পারতো নাকি…….. না আর ভাল্লাগছে না….. আবার গা গুলাচ্ছে…… আমি বিছানায় বসে গেলাম….. যম ঠাকুরকে দেখলাম পেছনে ফিরে পাঞ্জাবির পকেট থেকে মানি ব্যাগ টা টেবিলের উপর রাখলো…… এতো ক্ষনে ভালো করে খেয়াল করলাম তাকে…… একটা অফ হোয়াইট পাঞ্জাবি আর সাদা পাজামা….. এই পোষাকেই তো বিয়ে করতে গিয়েছেন তিনি…… ইসসসস কি ভাব দেখো না….. যেনো কোন মন্ত্রী মিনিস্টার তিনি….. হলে হতেই পারে….. এই ব্যাটার যা বুদ্ধি…… এই পর্যন্ত যতবার ই অযুহাত দিয়েছি ততবারই ধরে ফেলেছেন…… আর মিথ্যা কথা তো ঠোঁটে আনার আগেই গজরাতেন……. বলা যায় এতোদিন আমাকে ওনার আঙুলের ডগায় ই রেখেছেন……. কেন যেনো এসব ভাবতে আর ভালো লাগছে না…..যম ঠাকুর কে কোন ভাবেই আমার জীবনে স্বাভাবিক ভাবে নিতে পারছি না…..ঘোর টা ভাঙলো ওনার ডাকে……
,
,
,
——— ঘুম পেলে ঘুমিয়ে পড়ো…… আর খাটের বাম দিকে শুবে….. ওপাশে আমি ঘুমাতে পারি না……
,
,
,
বলেই হন হন করে বাথরুমে ঢুকে পড়লো…… এদিকে সারা গা আমার ছেড়ে দিয়েছে….. হেলে দুলে যম ঠাকুরের কথা মতো বা পাশে দেয়ালের দিকে শুয়ে পড়লাম…… পুরো খাটটা রজনীগন্ধা আর থোকা থোকা গোলাপ দিয়ে সাজানো…… চাদরের উপর গাদা ফুল আর গোলাপ ফুলের পাপড়ি…… সারা ঘর জুড়েই ফুলের মিষ্টি গন্ধ মৌ মৌ করছে…… এর মধ্যে রজনী গন্ধাই তার গন্ধ বিলিয়ে বেশি রাজত্ব করছে…..
বাইরে মেঘের বেশ গুড়গুড় ডাক শুনা যাচ্ছে….. মনে হয় বৃষ্টি নামবে….. বিছানার ফুল গুলো নাড়াচাড়া করতে করতে করতেই আমি ঘুমিয়ে পড়লাম…… সবে মাত্র ঘুম টা গাড় হলো ঠিক তখনি মনে হলো কে যেনো ডাকছে….. আমি এদিকে ঘুমের জন্য চোখ টেনেও খুলতে পারছি না….. খুব কষ্ট করে চোখ খুলতেই ওনি আমাকে টেনে বসিয়ে দিলেন….. কাচা ঘুম থেকে টেনে উঠিয়ে দেবার কোন মানে আছে!!! খুব চটে গেলাম….. মাথায় ভেতর যেনো চিকন ঘাম ঝড়ছে….ওনি পানির গ্লাস আর মেডিসিন গুলো আমার সামনে ধরতেই রেগে গিয়ে বললাম……
,
,
——— ধুর বাল কি শুরু করেছেন এগুলা সাদাফ ভাই…… কাচা ঘুম থেকে ডেকে তুলে আপনি আমাকে পানি খাওয়াচ্ছেন!!!!আমি ঘুমাবো সরেন তো….
,
,
——— দুই সেকেন্ড পর যেনো মেডিসিন গুলো আমার হাতে না থাকে…… এক প্রকার হুমকি দিয়ে….
,
,
,
এতো ক্ষনে আমার হুশ হলো আমি কার সামনে বসে আছি…..আড় চোখে ওনার দিকে তাকাতেই ওনার চোখে চোখে চোখ পড়ে গেলো….. কথা না বাড়িয়ে চুপচাপ মেডিসিন নিয়ে নিলাম……. ওনি গ্লাস রেখে বিছানার দিকে আসার আগেই আমি মাথা মুখে আচল ঘুড়িয়ে শুয়ে পড়লাম…… বাপরে ঘুমের ঘোরে কি বলে ফেলেছি….. এখন না আবার বিছানা থেকে নামিয়ে পিটানি শুরু করে….. একদম শক্ত হয়ে ঘাড় গুজে ছিলাম…… কখন ঘুমিয়েছি বলতে পারি না…..
,
,
,
সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি যম ঠাকুর তার পড়ার টেবিলে মাথা ফেলে ঘুমাচ্ছে……. বাপরে এই লোকের দেখি বুড়া বয়সে ও পড়াশোনা করা লাগে…… পড়াশোনা শেষ চাকরি করছে….. বিন্দাস চলবে তা না সেই বইয়ের মাঝেই পড়ে আছে….. যম ঠাকুরকে উপদেশ দিতে দিতে নিজের দিকে তাকাতেই ভুলে গিয়েছি প্রায়….. রাতে বড় শাড়িতে কাধের দিকটায় সেপটিপিন করে দিয়েছিলো……ব্লাউজ ছিড়ে সেপটিপিন শাড়ীতে আটকে আছে…. আর আচল পড়ে আছে পিঠের নিচে….. আচল ঠিক মতো টেনে বিছানা থেকে নেমে দাড়াতেই খেয়াল করলাম মাড়ের নতুন শাড়ি কুচকে দলা হয়ে ফুলে একেবারে লুঙ্গি হয়ে আছে….. আমি বেক্কেলের মতো শাড়ির দিকে তাকাই একবার আরেকবার তাকাই যম ঠাকুরের দিকে….. কোন মতে শাড়ি ঝেড়ে ব্যাগ থেকে কাপড় বের করে দিলাম বাথরুমে দৌড়……. বাথরুম থেকে বেড় হতেই দেখলাম যম ঠাকুর ঘাড় হাতে মালিশ করছেন সাথে আড়মোড়া দিচ্ছেন…… আমি চুলে গামছা পেচাতে পেচাতে বারান্দায় গিয়ে ভেজা কাপড় গুলো মেলে দিলাম…… এর মধ্যেই ওনি বিছানার চাদড় সহ সব ফুল এক সাথে করে বারান্দার কোনায় এনে রাখলেন……. আর আমাকে বললেন বিছানার উপর চাদর রাখা আছে……. যেনো সেটা বিছিয়ে দেই….. আমি মাথা নেড়ে রুমে চলে এলাম…. আর ওনি গামছা নিয়ে বাথরুমে ঢুকে পড়লো…….
,
,
,
১৮
,
,
,
সকালে বড় আপু আমাকে এসে নিয়ে গেলেন খাবার জন্য….. আমার জড়তা দেখে আপু আমাকে বেশ বুঝিয়ে শুনিয়ে বললেন তারা সবাই আমার আপন….. এতো জড়তা কিসের…… স্বাভাবিক ভাবেই যেন চলাফেরা করি ঠিক যেভাবে বিয়ের আগে চলাফেরা করতাম……
,
,
,
যমঠাকুরের পরিবারে বৌভাত নামক কোন আচার নেই….. বিয়ের পরদিন পরিবারের সব বড়দের নতুন বউ পাত বেড়ে খাওয়ায়… আমার ক্ষেত্রেও তা বহাল রইলো…… সকাল থেকেই তাদের আশেপাশের নিকতস্ত আত্নীয় স্বজন আসছে আমাকে দেখে যাচ্ছে….. এর মধ্যেই যম ঠাকুর আমাকে ঢেকে রুমে নিয়ে এলেন স্যালাই অন করার জন্য….. কারণ ডাক্তারের কথা অনুযায়ী আমার আরও তিনটা স্যালাইন নেওয়া বাকি আছেন…… এদিকে আমার অবস্থা পুরাই কাচোমাচো…..বাড়ি ভর্তি লোকজন….. এর মধ্যে যে কেউ যখন তখন আমার সাথে এসে দেখা করে যাচ্ছে…….. এই মূহুর্তে স্যালাইন…… অনেকটা সাহস সঞ্চয় করেই যম ঠাকুরকে বললাম যেন আজ স্যালাইন না দেওয়া হয়….. কথাটা বলতে দেরি হয়েছে আর আমার দিকে কটমট করে তাকাতে দেরি হয় নাই…..
,
,
——— আয়নায় দেখেছো নিজের অবস্থা!!! শরীরের কোন ব্যালেন্স রাখতে পারছো কি!! একটু আগেই তো মাথা ঘুরে পড়তে নিয়েছিলে…. আম্মা পাশে থাকায়…. নইলে তো এতোক্ষণে হাসপাতাল নিয়ে দৌড়াতে হতো….
,
,
——— না মানে…. আমি তো না করি নি…. এখন তো বাড়িতে অনেক মানুষ এরর মধ্যে আমি ঘরে একা একা বসে থাকবো!! রাতে দেই বরং…. হাত মুচরাতে মুচরাতে…
,
,
——— হাত টা খুলে যাবে তো!! বলেই আমার দুই হাত ছাড়িয়ে দিলেন….. ঠিক আছে রাতেই স্যালাইন নিয়ো….. তবে সাবধানে চলাফেরা করবে….. হুটহাট করে বসা থেকে না উঠে আস্তেধীরে উঠবে….. নইলে মাথা ঘুরে উঠবে ….. বাড়ি ভর্তি মেহমানের সামনে আছাড় খেয়ে আবার রুই কাতলের ভাজি খাওয়াতে যেও না….
,
,
এর মধ্যেই বড় আপুর হাসবেন্ড এসে দরজায় নক করলেন সাথে গলা ঝাড়লেন…..
,
,
,
——— কি শালাবাবু….. একদিনেই বউকে চোখে হারাচ্ছো
,
,
——— তা আর বলতে দুলাভাই……. এতো দিন কোলে পিঠে করে মানুষ করেছি বউকে চোখে তো হারাবই….. টান বলে তো একটা ব্যাপার আছে নাকি!!
,
,
——— একেবারে গড়ে পিঠে নিয়েছো বলো
,
,
——— সে আরো সময় লাগবে ভাই….. এতো জলদি কি!! ছোট মানুষ সময় তো লাগবেই তাই না৷…
,
,
——— তা তুমি জন্মের সময় নাও শালাবাবু….. আই ডোন্ট হ্যাভ এনি অবজেকশন….. আপাতত বউকে আমাদের জন্য ছাড়ো….. বাদ বাকি শিখানো পড়ানো টা নাহয় রাতেই করো বন্ধ ঘরে কেউ আর ডিস্টার্ব করবে না…..
,
,
——— সে করাই যায়…… নিয়ে যেতে চাইছেন যখন নিয়ে যান…… ছোট মানুষ তো সামলে রাখবেন নিজের বউ মনে করে না শালা বউ মনে করে……
,
,
——— এই সাদাফ আমি তোমার বোনের হাজবেন্ড হই কিন্তু মনে রাইখো মিয়া….. সুযোগ পেলেই দেখি চরিত্র নিয়া টান মারো….
,
,
——— আরে কি যে বলেন ভাই…..
,
,
,
ওনাদের কথা গুলো কথা না এক একটা লজ্জার বালতি ছিলো আমার জন্য…….. ওনারা মুখ থেকে বর্ষণ করছেন আর আমার মাথায় সেগুলো পড়ছে……যম ঠাকুর কে তো আমি যতই দেখছি ততই অবাক হচ্ছি….আমার তো বেশ সন্দেহ হচ্ছে ওনার কো জমজ ভাই আছে নাকি….. এদিকে দুলাভাই আমাকে নিয়ে ড্রয়িং রুমে চলে এলো…… ওনিও আমাকে ছাড়ছেন না…..কেউ জড়িয়ে ধরতে এলে বা গায়ে হাত ছুয়াতে এলেই বলছেন এই আস্তে আস্তে সাদাফের কোলে পিঠে মানুষ করা বাচ্চা বউ….. সাবধান….. কিছু হলে তো পরে আমারেই জবাবদিহি করতে হবে….. আমিই তো ওর কাছ থেকে নিয়ে এলাম কিনা….এই কথা শুনে ছেলে বুড়ো সবাই সমানে হেসে যাচ্ছে….. যম ঠাকুর ও তাদের রসিকতার সাথে পালটা রসিকতা করছে….. আমি দেখছি…. এখনো মনে হয় অনেক অবাক হওয়ার বাকি আছে……
,
,
,
চলবে…..
লেখনিতে: চৈত্র রায়