এক পশলা বৃষ্টি আর সে, পর্ব – 24

0
800

৪৪
,
,
,
নাস্তা শেষ করে ওনি অফিস চলে গেলেন সেই আগের মতো দরজা অব্দি গিয়ে পানির জন্য ডেকে নিয়ে পানি খেয়ে কপালে চুমু খেয়ে বেরিয়ে পরলেন….. যাবার আগে বলে গেলেন টেবিলের উপর প্যারাসিটামল রেখে গেছেন…. গরম পানি দিয়ে যেনো খেয়ে নিই….. আমি কিছু বললাম না….. কিছু বলতেও ইচ্ছে করছিলো না….ব্যাথায় সারা গা টলমল করছে….. ঘুমটা ফের চেপে ধরেছে…. কিচ্ছু ভালো লাগছে না একেবারে…….. সারা গা যেনো বিছানা বিছানা করে গুমরে গুমরে উঠছে…… টেবিলে ফিরে এসে সব কিছু গুছিয়ে রেখে ফের রান্নাঘরে গেলাম…. যেহেতু ফুলি খালা নেই রান্নার বন্দোবস্ত তো নিজেদেরই করতে হবে….আম্মু ততক্ষণে ডায়নিং এ চলে এলেন…. রান্নার সবজি বের করে গুছিয়ে নিয়ে বসেছেন….. পাশে আমি ও হাতে হাত লাগালাম……
,
,
,
———- কিরে টুকি তোর কি শরীর খারাপ লাগছে!!
,
,

——— না আম্মু…. মাথাটা একটু ধরেছে….
,
,
——— চা খাবি!! করে দিবো…
,
,
——— না না এই ভরদুপুরে চা খাবো না….. ভালো লাগছে না
,
,
——— তুই বরং গিয়ে একটু ঘুমিয়ে নে দেখবি হালকা লাগবে মাথাটা.. চোখ গুলিও কেমন লাল হয়ে আছে…. যা যা উঠে পর….
,
,
——— রান্নাটা হোক তারপর একটু ঘুমাবো নাহয়…
,
,
——— রান্নাতো আমিই করবো…. শুধু শুধু তুই বসে থেকে কি করবি…. সবজি তো সব কেটেই দিয়েছিস….. কিছু লাগলে ডাক দিবো….. যা গিয়ে একটু ঘুমিয়ে নে…. নাহলে সারাদিন শশরীর খারাপ লাগবে…. যা উঠ….
,
,
,
আম্মুর কথায় সেখান উঠে রুমে চলে এলাম….. হাত মুখ ধুয়ে বিছানায় বসে পড়লাম….. বেশ ক্লান্ত লাগছে…….শাড়ির আঁচল টা পিঠ থেকে টেনে বালিশে মেলে দিলাম…. ফ্যনের স্প্রিড আগেই বাড়িয়ে রেখেছিলাম…… এই সময় টাতে বেশ গরম পড়ে…… খোপা খুলে বালিশের উপর ভেজা চুল মেলে দিয়ে শুয়ে পড়লাম…… ঠিক যেন স্বর্গীয় সুখ….. বিছানার চাদরে হাত মেলে তাকিয়ে বুঝতে পারলাম চাদরটা ওনি সকালে চেঞ্জ করেছেন….. ও হ্যা সে তো আমি দেখেছিলাম ই…. ভুলে গিয়েছিলাম….. রাতে মানুষ টাকে বড্ড বাচ্চা মানুষের মতোন লাগছিলো…… কেমন যেনো অস্থিরতা…. কতো বারতো মিলেমিশে একাকার হয়েছি মানুষটাতে….. কই এমন তো কখনো দেখি নি……হয়তো চাহিদাটাই সেদিনগুলোর থেকে ভিন্ন ছিলো….
,
,
,
ঘুম ভেঙে গেলো আম্মুর ডাকে……. সেই কখন থেকে নাকি ডেকে যাচ্ছে….. এদিকে আমার সারা গা কেন যেনো অসার লাগছে….. পিটপিট করে চোখ খুলতে দেখে আম্মু আমার পাশে এসে বসে গালে হাত দিয়ে বেশ শিউরে উঠলেন. ———
,
,
,
——— একিরে টুকি গা তো বেশ গরম…… জ্বর দেখি গায়ে….. কিরে জ্বর কখন থেকে ………
,
,
,
আম্মুর কথার উত্তর দেবার মতো ইচ্ছে বা শক্তি কোনটাই আমার মধ্যে অবশিষ্ট নেই।।।।। আম্মু ফের বলতে শুরু করে দিলেন……
,
,
,
——— সেই কখন থেকে ডাকছি….. দুপুরেও খেলি না…..এই ভর সন্ধ্যায় উঠছিলি না দেখে ডাকতে এসেছিলাম….. এখন দেখি এই অবস্থা দেখি উঠ…. কিছু খেয়ে নে….
,
,
,
আম্মু জোর করে উঠিয়ে আমাকে বিছানা থেকে নামালেন…..
,
,
——— আম্মু একটু আস্তে ধরো ব্যাথা পাচ্ছি….
,
,
ওনি আমাকে বাথরুম পর্যন্ত নিয়ে গিয়ে নিজে দাড়িয়ে থেকে হাত মুখে জলের ঝাপটা দিয়ে রুমের সোফায় বসিয়ে দিলেন….. তারপর নিজ হাতে ভাত মেখে খাইয়ে দিলেন জোর করে…….. সবকিছু বিস্বাদ লাগার পরে ও পেটের খুদার কাছে হার মেনেছে….আম্মু খাইয়ে দিয়ে চলে গেলেন…… কেনো যেনো হঠাৎ করেই রুমে থাকতে ভয় করছিলো ভীষণ…… তাই আস্তে আস্তে উঠে আম্মুর রুমে চলে এলাম….. আম্মু তখন কি যেনো করছিলো…..
,
,
,
——— আম্মু আমি একটু তোমার রুমে শুই….. আমার কেন যেনো একা থাকতে ভয় করছে….
,
,
——— ওমা ডাকতি আমায়…. জ্বর নিয়ে উঠে আসতে গেলি কেনো…..আয় বস এখানে…..
,
,
,
যদিও আম্মু বসতে বলেছিলো কিন্তু বসার ইচ্ছে আমার ছিলো না….. আমি সাথে সাথেই শুয়ে পড়েছি…… আম্মু কথা বলছিলেন আমি হা হু করে যাচ্ছিলাম….. ফের কেমন যেনো একটা ঘুম ঘুম ভাব চলে এসেছে…… যখন চোখ মেললাম তখন দেখি নিজের রুমে শুয়ে আছি…… ওনি মাথায় পানি ঢালছে…… আম্মু হাতে পায়ে তেল মালিশ করে দিচ্ছিলেন…… চোখ মেলে তাকাতেই আম্মু হুড়মুড় করে মুখের সামনে চলে এলেন…..
,
,
,
——— কিরে টুকি তোর এতো শরীর খারাপ একবার বলবিতো আমায় নাকি….একা থাকতে ভয় লাগছে বলে আমার রুমে গিয়ে শুলি…. আমিতো ভেবেছিলাম ঘুমোচ্ছিস…… বাবু অফিস থেকে ফিরে সেই কখন থেকে ডাকছে তোর কোন হেলদোল নেই….. হেলদুল থাকবেই বা কি করে জ্ঞান থাকলে তো…..তারপর বাবুই তো কোলে উঠিয়ে তোকে এই রুমে নিয়ে এলো….
,
,
,
আম্মুর কথা শুনে আমি নিজেই অবাক বনে গেলাম….. জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছিলাম….??? কিন্তু কখন??? তখন তো আমার কেমন মাথা ঝিম ঝিম করে ঘুম পাচ্ছিলো…. ওনি তখনো আমার মাথায় পানি ঢেলে যাচ্ছে……
,
,
,
——— আম্মু তুমি বসো এখানে….. আমি বরং তুলির জন্য দুধটা গরম করে নিয়ে আসি….
,
,
——— না বাবু তুই বোস….. আমি নিয়ে আসছি….
,
,
,
ওনি আর কিছু বললেন না…… আম্মু উঠে চলে গেলেন……
,
,
,
——— আর পানি দিবো না।।।। শীত করতেছে……
,
,
,
মাথার চুল ভালো করে মুছিয়ে দিয়ে আমাকে উঠিয়ে বসিয়ে দিলেন…..
,
,
,
——— সকালে যে পাই পাই করে বলে গিয়েছিলাম মেডিসিন নেবার কথা…. নাও নাই কেন?
,
,
——— ঘুমিয়ে পড়েছিলাম….. মনে ছিলো না….
,
,
——— এগুলাই করবা তুমি….. মনে রাখলে তো সুস্থ হয়ে যাবা…. মনে রেখে কি লাভ…. তারচেয়ে আমাকে খাটাবা…. নিজের সেবা করাবা…..
,
,
,
কেন যেন ওনার এই কপাল কুচকে বিরক্তি প্রকাশ করাটা খুব ভালো লাগছিলো……. ইচ্ছে করছিলো গাল দুটো আচ্ছা করে টেনে দেই….. মুখ চোখ কেমন হয়ে আছে…. অফিস থেকে ফিরে নিশ্চিত নাস্তা করে নি…… কখন এলো কিছুই টের পেলাম না…… রাতে শুধু দুধ পাউরুটি খেলাম…..আম্মু আমাকে খাইয়ে দিতে দিতে ওনিও খাওয়া সেরে নিলেন…… খাবার পর প্যারাসিটামল খাওয়ার পর গায়ের ব্যাথা কিছুটা লাঘব হলো কিন্তু তাপমাত্রা কোনভাবেই স্বাভাবিক হচ্ছে না….. রাতে আম্মু আমার সাথেই থাকতে চেয়েছিলেন….. কিন্তু ওনিই জোর করে পাঠিয়ে দিলেন….. যাই হোক হাই ব্লাড প্রেশারের রোগী…… ঠিক মতোন ঘুম না হলে কোন বিপদ আপদ ঘটে যেতে পারে…… আম্মুকে রোমে পাঠিয়ে দিয়ে নিজেও কেমন যেনো ভয় পাচ্ছে…… কিন্তু আমার কেনো যেনো নিজেকে খুব স্বাভাবিক ই লাগছে….. কিন্তু বিছানা থেকে দাড়ালেই নিজেকে নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারি না…..
,
,
,
মাঝ রাতে প্রবল শরীর ব্যাথায় ঘুম ভেঙে গেলো……. গোঙানি টা ইচ্ছে করে ও দমাতে পারছিলাম না…… রাতে হয়তো ওনি লাইট আর অফ করে নি ওনি…… ওনার দিকে তাকাতেই বুঝতে পারলাম বেঘোরে……. আমার গোঙানির আওয়াজ শুনে না আবার ঘুম ভেঙে যায়……. এদিকে শরীরে কোন জোর ই পাচ্ছি না যে উঠে অন্যকোথাও চলে যাবো…… যা ভেবেছিলাম……
,
,
,
——— উমম…. তুলি…. কি হয়েছে?? কোথায় কষ্ট হচ্ছে…..
,
,
,
ওনাকে দেখে যেনো আমার কষ্ট আরও বহুগুণে বেড়ে গেছে….. চোখের কোনা বেয়ে উপচে পানি পড়ছে….আমার গায়ে হাত ঠেকিয়ে কিছুটা শিউরে উঠলেন….
,
,
,
——— এএএএই মেয়ে কখন থেকে এতো জ্বর… ডাকলে না কেনোওঅঅ…
,
,
,
ওনার কথা গুলো কেমন যেনো জ্বড়িয়ে যাচ্ছে…..হুড়োহুড়ি করে রুম থেকে বেড়িয়ে গিয়ে আম্মুকে নিয়ে ফিরে এলেন…. নিজেকে তখন এতো অসহায় লাগছিলো…. আম্মু আমার পাশে বসে গলায় কপালে হাত ঠেকিয়ে কাধ থেকে কাপড় সড়িয়ে কাধে পিঠে পেটে কি যেন দেখতে লাগলেন…..
,
,
,
——— এগুলো তো জল বসন্ত….. কিরে টুকি…. আগে কি তোর কখনো পক্স হয়েছে….??
,
,
,
,
চলবে

লেখনিতে: চৈত্র রায়

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here