এক মুঠো রঙ,পর্ব_৭

0
5128

এক মুঠো রঙ,পর্ব_৭
ফারজানাআফরোজ

একাকী নীরবে অনেকক্ষণ ধরে দাঁড়িয়ে আছে নীর। এক নজর সিমরানকে দেখার তৃষ্ণা তৈরি হয়েছে তার মনে। হঠাৎ মন কেন এত উঠলে উঠলো বুঝতে পারছে না সে। নাহ কিছুতেই সে একা থাকতে পারবে না তাই চট করে সিমরানের নাম্বারে ডায়াল করলো। দু-বার রিং পড়তে আবার কেটে দিল। ফোন রিসিভ করার পর কি বলবে সে? সিমরান তো ছেড়ে দেওয়ার পাত্রী নয়। নাহ তাহলে তো আজ তার ফোন দেওয়াই হবে না। উপর আল্লাহ মনে হচ্ছে এখন নীরের সাথে আছেন। কেননা হঠাৎ তার সামনে নিবিড় দাঁড়িয়ে আছে। ছোট্ট মুখে চিন্তার ভাঁজ, গালে হাত দিয়ে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে নীরের মুখে দিকে।

নীর তার ভ্রু জোড়া নাচিয়ে বলল….

—” কোনো দরকার?”

বেচারা নিবিড় হঠাৎ করেই কেঁদে উঠল। নীর হকচকিয়ে উঠলো। ভয়ার্ত কন্ঠে বলল……

— ভয় পেয়েছিস নাকি? আয় আমার কাছে আয়।”

নিবিড় তার হাফ প্যান্টের দিকে ইশারা করলো। নীর নিবিড়ের ইশারা অনুযায়ী নিচে তাকাতেই নিজের মাথায় নিজেই চড় মেরে বলল…..

—” আবার হিসু করে দিয়েছিস? এত বড় ছেলে হয়ে রাতে বিছানায় হিসু করতে লজ্জা করে না , ফাজিল।”

—” আমি কি করে জানবো যে আমি হিসু করে দিবো?”

—” তাহলে হিসু করার পর কিভাবে বুঝলি?”

—” ওইটা তো প্যান্ট আর বিছানা ভিজা দেখে বুঝতে পেরেছি। আমি তো স্বপ্নে দেখছিলাম আমি একা একা বাথরুম যাচ্ছি, বাথরুমের দরজা খুলে ভিতরে চলে গিয়েছি, প্যান্টের চেইন খুলে হিসু করার পর বুঝতে পারলাম আমি শুয়ে শুয়ে জমিদারের মতো বিছানায় হিসু করছি।”

কথাগুলো বলে আবারও কাঁদতে লাগলো নিবিড়। নীর কান্না থামানোর জন্য বলল….

—” ওকে সমস্যা নাই তুই প্যান্ট চেঞ্জ করে আমার রুমে শুয়ে পড়।”

—” আম্মু তো সকালে ঘুম থেকে উঠে যদি দেখে বিছানা ভিজা আমাকে তো একবার বল, আরেকবার ফুটবল আবার দেখা যাবে জামা কাপড়ের মত ধোলাই করছে।”

—” তো এখন কি করতে হবে আমার?”

চোখ গুলো বাঁকা করে বলল নীর। নিবিড় তখন হাসি মুখে বলল…..

—” তুমি আজ আমার রুমে শুয়ে পড়ো আর আমি তোমার রুমে। সকালে যখন সবাই দেখবে যে আমরা রুম অদল বদল করেছি আর আমার রুমের বিছানা ভিজা তখন বুঝবে রাতে তুমিই হিসু করে দিয়েছো। তুমি তো বাচ্চা ছেলে কেউ কিছু বলবে না আর তোমার সম্মানও নষ্ট হবে না। তাছাড়া তোমার তো আর সম্মান তম্মান নেই যে যাবে।”

নীর বুঝতে পারছে না তার এখন কি করা উচিৎ। সে কি কান্না করবে নাকি হাসবে। নিবিড়ের কান্ড গুলো এমনেই যে না হেসে পারা যায় না তবে এই নীরকে বাঁশ দেওয়ার জন্য ওর কান্ড গুলো একদম উত্তম।

কোনো উপায় না পেয়ে নিবিড়ের প্যান্ট বদলিয়ে দুই ভাই বিছানায় গা এলিয়ে দিতেই নীর বলল….

—” জানিস ভাই সিমরানের কথা খুব মনে পড়ছে। ওর সাথে কথা বলতে বড্ড ইচ্ছা করছে।”

—” তাহলে ফোন দিয়ে কথা বলো। আমি কি এখন মোবাইল হয়ে তোমাদের দুজনের মধ্যে ঘুরাঘুরি করব।”

—” কথা বলার জন্য তো কোনো বিশেষ কারণ দরকার। আমার কাছে তো কোনো কারণ নেই।”

নিবিড় বিছানা থেকে লাফিয়ে উঠলো। কোমড় ধরে নেচে নেচে বলল…..

—” তোমার সমস্যার সমাধান পেয়ে গেছি, ব্রো।”

এক হাত কোমড়ে রেখে অন্য হাত মাথায় দিয়ে কোমড় হেলিয়ে হেলিয়ে সে নাচতে লাগলো। নীর সন্দিহান নজরে বার বার নিবিড়কে দেখছে। এই ছেলে কি আদো বাচ্চা ছেলে নাকি একশো সন্তানের পিতা বুঝতে পারছে না নীর। ওর মতো বয়সে তো নীর বুদ্ধি কি তাই বুঝত না আর এই ছেলে কিনা অতি সহজে সমস্যার সমাধান করে ফেলে, স্ট্রেঞ্জ…….

—” ব্রো ফোন দেও ভাবীর কাছে।”

—” ফোন দিয়ে কি বলব?”

—” বলো, নিবিড় নাকি আপনার ব্যাগে চকোলেট রেখে এসেছে সে এখন চকোলেটের জন্য কান্না করছে।”

নীর এইবার চোখ পাকিয়ে বলল….

—” এইটা তোর বিশেষ কারণ? রাতে বিছানায় হিসু করার ফলে তোর মাথা খারাপ হয়ে গেলো নাকি?”

—” ধুর ছাই, কিছুই তো বুঝ না। বলবা, আমি নিবিড়কে বুঝাচ্ছি তাকে দোকান থেকে অনেক চকোলেট কিনে দিবো কিন্তু ও মানছে না ওর নাকি আপনার ব্যাগের চকোলেট চাই চাই। তাই আর কি আপনার সাথে দেখা করার জন্য আমরা দুই ভাই আসছি। ”

—” ভাই তোর পা দে তো একটু ধুলো নেই।”

নিবিড় তার পা দুটো এগিয়ে দিয়ে বলল…..

—” সরি বৎস পায়ে কোনো ধুলো নেই। তুমি বরং সকালের জন্য অপেক্ষা করো ধুলো তুমি পেয়ে যাবে।”

নীর জোড়ে জোড়ে হাসতে লাগলো। সিমরানের নাম্বারে পাঁচ বার ফোন দেওয়ার পরেও রিসিভ হচ্ছে না। আশা ছেড়ে দিয়ে শেষ বারের মত ফোন দিতেই ওপাশ থেকে ঘুম ঘুম কণ্ঠে সিমরান বলে উঠলো….

—” কে বলছেন?”

—” আমি।”

—” আমি তো বুঝলাম বাট এই আমি মানুষটা কে?”

—” নীর আহমেদ।”

—” কোন নীর?”

—” তোমার ফিউচার সন্তানের বাবা।”

সিমরান এইবার চমকে উঠলো। তড়িঘড়ি করে উঠে বলল…..

—” আপনি? আপনি আমার ফোন নাম্বার কিভাবে পেয়েছেন?”

—” ফোন নম্বর পাওয়া এখন কঠিন কোনো কাজ নয় মিস।”

—” ফোন কেন দিয়েছেন? নাকি ওই সাজিয়া ভেবে ফোন দিয়েছেন?”

মুচকি হাসলো নীর। এখনও রেগে আছে সিমরান।

—” আপনার ব্যাগে আমার ছোট ভাই নিবিড়ের চকোলেট। এখন সেই চকোলেটের জন্য রাত জেগে কান্না করছে।”

—” আপনাদের এলাকায় কি দোকান নেই বা চকোলেট কিনার টাকা নেই?”

রেগে গিয়ে বলল সিমরান। মাঝ রাতে চকোলেটের জন্য ফোন দিয়ে ঘুম ভাঙ্গল তার। মেজাজ এখন তার এক হাজার ভোল্ট। ইচ্ছা করছে তার এখন নীরকে মারতে কিন্তু পারছে না। নীর বুঝতে পারলো সিমরান রেগে আছে তাই আর কিছু না বলে ফোন কেটে দিলো। নিবিড়ের ঘুম যেন এখন ধরা ছোঁয়ার বাইরে চলে গিয়েছে। সে যেন বড় ভাইয়ের প্রেম সম্পর্কে জানার জন্য ভীষণ আগ্রহী। নীর ছোট ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে বলল…..

—” বিড়ালের মত ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছিস কেন যা ঘুমা। আরেকবার যদি দেখেছি আমাকে আজে বাজে বুদ্ধি দিয়েছিস তখন তোকে ভুতের কাছে রেখে আসবো।”

শুয়ে পড়লো নীর। নিবিড় রাগ করে উল্টো ঘুরে শুয়ে পড়লো। নীর তখন পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে বলল….

—” মজা করছি বস। আপনার বুদ্ধি কাজে দিয়েছে। কিন্তু এত রাতে তোর ভাবীর বাসার সামনে দাঁড়ালে খারাপ ভাববে মানুষ তাই আর কি যাবো না। উম্মাহ আমার লিটল ডল।”

বড় ভাইকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে পড়লো নিবিড়। শান্তির ঘুম ঘুমাচ্ছে দুই ভাই। তাদের দেখে মনে হচ্ছে খুবই সুখে আছে তারা।

অন্যদিকে সিমরান ভীষণ অবাক হলো নীরের ফোন কেটে দেওয়া দেখে। মনে মনে ভাবছে ভুল কিছু বলে ফেলেনি তো যার জন্য রেগে গিয়ে ফোন কেটে দিয়েছে। ফোন দিতে গিয়েও দিলো না যদি খারাপ কিছু ভাবে। মনে মনে ভাবলো আবার দেখা হলে সরি বলে ফেলবে।

__________________

আইরিনের মন খুব খারাপ। শশুর বাড়ি মোটেও ভালো লাগছে না তার। দম প্রায় বন্ধ হয়ে আসছে তার। সারাদিন কাজ করা সত্ত্বেও যখন ক্লান্ত শরীর বিছানায় এলিয়ে দিয়ে বিশ্রাম নিতে চায় তখনি শুনতে পায় শাশুড়ির চিৎকার। সারাদিন শুয়ে বসে থেকে মোটা হয়ে যাচ্ছে, কাজ কর্ম কিছুই করে না, জানলে এই বউ জীবনেও বিয়ে করাতো না। বউ খুবই অলস। আইরিনের চোখের পানি এখন সাগরে পরিণীত হচ্ছে, না পারছে সইতে, না পারছে কিছু করতে। এইটুকু বয়সে এতগুলো কাজ করা সত্ত্বেও শশুর বাড়ির মন সে পাচ্ছে না। রাতে স্বামীর কাছে নালিশ করলে ফয়সাল বলে…..

—” বিয়ের আগে তোমাকে সব কিছুই বলেছি। আমার পরিবার বউ নয় বুয়া চাচ্ছে তাহলে কেন তোমার পরিবার কিংবা তুমি রাজি হলে? আমার টাকা দেখে রাজি হয়েছ এখন টাকা দেখেই থাকো।”

অবশেষে স্বামীর কাছেও শান্তি না পেয়ে মুখ চেপে কাঁদতে থাকে আইরিন। এখন বুঝলো সে, টাকাই সব কিছু না ভালোবাসাই সব।

চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here