#এক_খণ্ড_কালে_মেঘ
#পর্ব_৩০
#নিশাত_জাহান_নিশি
“আঙ্কেল আন্টি আপনারা কাঁদবেন না। আপনাদের ছেলে যেখানেই থাকবে ভালো থাকবে।”
ধীরে ধীরে আমার পৃথিবী অন্ধকার হয়ে আসছিল। শ্বাস-প্রশ্বাস তখন বন্ধ প্রায়। রুহটা যেন দেহ থেকে বের হয়ে যাচ্ছিল এমনটিই মনে হচ্ছিল আমার। মৃ’ত্যু’র মত কঠিনতম যন্ত্রণা তখন ক্রমশ গ্রাস করছিল আমায়। এই সুন্দর পৃথিবীতে বুঝি আর থাকা হলোনা আমার। এতে অবশ্য তিল পরিমাণ আফসোসও হচ্ছিল না আমার! যে পৃথিবীতে বেঁচে থেকেও তোমায় পাওয়া হবেনা সে পৃথিবীতে আমি নাই বা থাকলাম! আ’ত্ন’হ’ত্যা তো করতে পারতাম না। কারো হাতে খু’ন হওয়া অবশ্য আ’ত্ন’হ”ত্যা হতে পারেনা! অজান্তে হলেও অনিক এবং তার দলবল আমাকে সাহায্য-ই করছিল! তুমি বিহীন আমাকে ম’র’তে সাহায্য করছিল। আমার স্বস্তি হচ্ছে জানলে হয়ত এই সাহায্যটিও তারা আমায় করত না। বরং ধুঁকে ধুঁকেই ম’র’তে দিত আমায়।
কিছু অমিমাংসিত প্রশ্ন তখন আমার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছিল। কী এমন ক্ষতি হতো বলো? যদি একটি বারের জন্যে হলেও আমি তোমার সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করতাম? তোমাকে ভালোবাসার কথাটি নাই বা বলি কিন্তু দূর থেকে হলেও তো তোমাকে একটু দেখে আসতে পারতাম? চোখের শান্তি জুটতো, মনের খোঁড়াক মিলত। কিন্তু এখন যে আমি ম’রে যাচ্ছি অয়ন্তী! আর তো কখনো দেখা হবেনা আমাদের। আমার করা একটা অযাচিত ভুল তোমারে আমার হতে দিলো না! তোমাকে দেখতে না পারার যে যন্ত্রণাটা বুকে চেপেছিল না? সেই অদৃশ্য যন্ত্রণাটা সত্যিই আমাকে আর বাঁচতে দিচ্ছিল না! বুকের ভেতর তীব্র এক আফসোস নিয়ে ম’র’তে হচ্ছিল আমায়। না চাইতেও চোখ বুজে নিলাম আমি। যন্ত্রণা ক্রমশ হ্রাস হচ্ছিল আমার। হয়ত ম’রে যাচ্ছিলাম!
এরপর আমার সাথে কী ঘটেছে না ঘটেছে কিছুই আন্দাজ করতে পারিনি আমি। তবে অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবেই তখন আমি বেঁচে ফিরি।চোখ খুলে নিজেকে হসপিটালের বেডে আবিষ্কার করি। সবাই বলাবলি করছিল তখন আমার থেতলে যাওয়া মুখটিকে নাকি প্লাস্টিক সার্জারি করাতে হবে! এরজন্য আমাকে দেশের বাইরে নিয়ে যেতে হবে। আর সেই কাজটি ঠিক ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই করতে হবে। মা-বাবা, ভাইয়া-ভাবি সবাই খুব অস্থির হয়ে ওঠে। যেভাবেই হোক আমাকে দেশের বাইরে নিয়ে যায়। ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই আমার সার্জারি করানো হয়। তখন আমাকে দেশের বাইরে নেওয়া থেকে শুরু করে সার্জারির অধিকাংশ খরচ-ই আমার দলের নেতা মির্জা ফখরুল হক বহন করেন। এই ক্ষেত্রে আমি অবশ্য উনার কাছে ঋণি। তবে এই পৃথিবীতে স্বার্থ ছাড়া কেউ কারো হেল্প করেনা অয়ন্তী। দুনিয়াটা হলো স্বার্থের পাগল। মূলত তিনি চেয়েছিলেন যেকোনো মূল্যেই হোক আমি বেঁচে ফিরি। আমি না থাকলে উনার দলের অনেক বড়ো ক্ষতি হয়ে যেত তাই। দলকে পরিচালনা করতে হিমশিম খেয়ে যেত। আমার সেল্টারেই উনার দলবল আজও টিকে আছে। নয়ত মিন্টু ভাইয়ার তর্জনে গর্জনে কবেই দল ধ্বংস হয়ে যেত।
সার্জারির পর যখন আমি মোটামুটি সুস্থ হয়ে দেশে ফিরি এর চার থেকে পাঁচ দিনের মাথাতেই আমি ঢাকায় যাওয়ার রিস্ক নিই! তোমাকে দূর থেকে দেখে আসার রিস্ক নিই৷ বাড়ি থেকে বের হতে দিচ্ছিল না আমায়। তবুও জোর করে বের হই। তোমার ভার্সিটির সামনে প্রায় তিনঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকার পর তোমার দেখা পাই! ক্যাম্পাস থেকে বের হয়ে গেইটের বাইরে বেরিয়ে এলে তুমি। আমি তোমার পাশ ঘেঁষে দাঁড়িয়ে। তখন তুমি আমায় দেখেও দেখলে না! এক পলকের জন্য তাকিয়ে আবার চোখ ফিরিয়ে নিলে। বুঝতে পেরেছিলাম তুমি চিনতে পারোনি আমায়! চিনবেই বা কী করে? রাদিফ তো তার নিজস্বতা হারিয়ে ফেলেছে! তার আগের মুখটিকে হারিয়ে ফেলেছে সে। সারাক্ষণ তোমার চোখের সামনে দাঁড়িয়ে থাকলেও চিনতে পারবেনা আমায়। মনে এক সমুদ্র বিষাদের জল নিয়ে সেদিন বাড়ি ফিরি আমি। এরপর টানা এক মাসের জন্য বেড রেস্টে থাকি।
একমাস পর পুরোপুরি সুস্থ হয়ে আবারও রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়ি আমি! নিজেকে ব্যস্ত রাখার প্রয়াসে অটল আমি। তখনই এন.আই.ডি কার্ড নিয়ে বাঁধে আরেক বিপত্তি। সেই আগের এন.আই.ডি কার্ডে থাকা আমার চেহারার সাথে এখনকার চেহারার পুরোপুরি অমিল! রয়েছে অনেক অসামঞ্জস্যতা। নতুন করে আবারও এন.আই.ডি কার্ড তৈরী করতে হয়। তখন আমি আমার নামটাও চেঞ্জ করে ফেলি! আমার মনে হত আগের চেহারার সাথে রাদিফ নামটিই যেত। এখনকার চেহারার সাথে রাদিফ নামটি একদমই যায়না! তাছাড়া আগের চেহারা এবং রাদিফ নামটির সাথে অনেক স্মৃতি জড়িয়ে আছে আমার। সেই স্মৃতি আমি রাফায়াতের নষ্ট জীবনের সাথে জড়াতে চাইছিলাম না। তাই আমার বর্তমান নাম রাদিফ থেকে রাফায়াত করে ফেলি। আস্তে ধীরে সবাই আমাকে রাফায়াত নামে চিনতে শুরু করে। কাছে দূরের সবাই এখন প্রায় রাদিফ নামটি ভুলেই বসেছে। আমি নিজেও এখন মাঝেমধ্যে ভুলে যাই কোনো একসময় আমি রাদিফ ছিলাম!
রাফায়াতের মুখ থেকে এহেন হৃদয়বিদারক কথা গুলো শুনে শুনেই ডুকরে কেঁদে ওঠে অয়ন্তী। দুঃখ ভারাক্রান্ত হয়ে রাফায়াতকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরে। ভরাট গলায় প্রশ্ন ছুঁড়ে,,
“এরপর?”
“প্রিয়ার সাথে আমার বিয়ের কথাবার্তা সব ঠিক হয়ে যায়! মন থেকে মেনে না নিলেও পরিবারের কথা ভেবে আমি প্রিয়াকে জোরপূর্বক মেনে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিই। কারণ, আমি আমার পরিবারকে কখনও সুখ দিতে পারিনি। যবে থেকে রাজনীতির সাথে জড়িয়েছি তবে থেকেই তাদের জীবনটাকে দুর্বিষহ করে তুলেছি। আমার এই অপ রাজনীতির কারণে আমার পরিবারকে বিভিন্ন হুমকির মুখে পড়তে হয়েছে। বাবার প্রায় দু’একবার হার্ট অ্যাটাকও হয়ে গেছে। মাকে একবার কি’ড’ন্যা’প করা হয়েছিল। ভাবিকে র্যা’প করার হুমকি দেওয়া হয়েছিল। তবুও তারা মনে সাহস রেখে আমাকে সাপোর্ট করে গেছে। কখনো বলেনি বাড়ি থেকে বের হয়ে যা। বা কুলাঙ্গার ছেলে হিসেবে আমাকে অস্বীকৃতিও করেনি। বরং যেকোনো ঝামেলাতেই তাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা দিয়ে আমাকে সেইফ করে এসেছে। তাছাড়া আমি ভাবতাম তুমি হয়ত অনিকের সাথে ভালোই আছো। অনিক আমার সাথে যাই করুক না কেন তোমার সাথে অন্তত প্রতারণা করবেনা। এরমধ্যে আবার তোমাদের বিয়ের গুঞ্জনও শুনেছিলাম! অনিক সবার কাছে তখন বলাবলি করত তোমরা খুব শীঘ্রই বিয়ে করছ। আর এই বিয়েতে অনিকের চেয়ে তুমি বেশী খুশি! যদিও এসব কথা শুনে প্রতিবারই মন ভাঙত আমার। তবুও যেন নিজের ভাঙা মনকে তখন সন্তপর্ণে সামলে নিতাম। তুমি ভালো আছে ভেবেই ভেতরে একটা সুখ সুখ অনুভূতি হত।
এরমধ্যেই হঠাৎ জানতে পারি প্রিয়ার সাথে অনিকের প্রেমের সম্পর্ক আছে! শুধু তাই নয় তাদের মধ্যে ফিজিক্যাল রিলেশনও ছিল। হোস্টেলে থেকে প্রিয়া তার এবর্শনও করেছে! ইয়াদের থেকে চঞ্চল আকার ইঙ্গিতে এই খবর গুলো জানতে পারে। যা শোনার জন্য আমি মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না। একের পর এক ধাক্কা লাগছিল আমার। কারণ এই কয়েকদিনে আমিও প্রিয়াকে মন থেকে মানার চেষ্টা করেছিলাম! হয়ত মেনেও নিচ্ছিলাম। প্রথমত, প্রিয়া অতিম এবং অনাদ ছিল। আমি এবং আমার পরিবার ছাড়া পৃথিবীতে তার আপন বলতে আর কেউ নেই। উপরন্তু আমার মায়ের চাপ সৃষ্টি। প্রিয়ার ভবিষ্যত নিয়ে করতে থাকা দুঃশ্চিন্তা। অগাধ বিশ্বাসের বিনিময়ে আমার সহজ-সরল বাবা-মাকে ধোঁকা দেওয়া। শুধু তাই নয় অনিক তোমাকে ঠকাচ্ছিল এই বিষয়টি জানতে পেরেও যেন আমার মাথা ঠিক ছিলনা। চঞ্চল তখন আমাকে আইডিয়া দিলো ঢাকা যেতে। তোমার মুখোমুখি হতে। প্রেমের জালে তোমাকে ফাঁসাতে! দুজন লুকিয়ে বিয়েশাদি করে নিতে। এতে যেমন অনিক এবং প্রিয়ার থেকে রিভেঞ্জ নেওয়া হবে তেমনি আমার ভালোবাসাও পূর্ণতা পাবে। আস্তেধীরে হয়ত তুমিও আমাকে ভালোবাসতে শুরু করবে। প্রথমে আমি যদিও চঞ্চলের আইডিয়া মেনে নিতে পারিনি তবে দু-একদিন আমি ভেবেচিন্তে দেখলাম চঞ্চল অবশ্য খারাপ কিছু বলেনি! চান্সটা একবার কাজে লাগানো দরকার।
এরমধ্যেই আবার ইয়াদের সাথে আমার দলীয় কাজ নিয়ে ঝামেলা হয়। ঝামেলার এক পর্যায়ে আমি কন্ট্রোললেস হয়ে ইয়াদকে গুরুতরভাবে জ’খ’ম করি। এই নিয়ে পুলিশ কেইসও হয়। বাবা তখন আমার কাজটা আরও সহজ করে দেয়। ঢাকায় ভাবির আত্নীয়ের বাড়িতে আমাকে পাঠিয়ে দেয়। কাকতালীয়ভাবেই ভাবির খালাতো বোনের সাথে তোমার আবার বন্ধুত্ব! ঐ বাড়িতে যাওয়ার দুদিনের মাথাতেই খবরটা আমি আলিজার মুখ থেকে জানতে পারি। এরপর আলিজার ছোটো বোনের বার্থডেতে আসার পর থেকে তোমার সাথে যা যা ঘটেছিল সব আমার প্ল্যানমাফিক ছিল। অনিকের প্রতি তোমার মিছেমিছি ভালোবাসা দেখে প্রথমে আমি খুব রুড হলেও পরে আরিফের থেকে জানতে পারি অনিকের আসল কীর্তি! অনিক মূলত তোমাদের সম্পত্তির জন্য তোমাকে বিয়ে করতে চায়। তোমাকে এবং তোমার বাবা-মাকে সামলে রাখার অভিনয় করে। অনামিকার সু’,ই’সা”ইডের খবরটিও তখন আমার সামনে আসে। ভাবতেই তখন অবাক লাগছিল অনামিকার মত এত শক্ত মনের একটা মেয়ে সু’ই’সা’ই’ড করতে পারে? কী এমন ঘটেছিল তার সাথে যার কারণে সে সু’ই’সা’ইড করেছিল? অনিকের সাথে তোমার বিয়ে ঠিক হয়েছিল বলেই কী অনামিকা সু’ই’সা’ই’ড করেছিল? এই সত্যগুলো জানা তখন আমার জরুরী দরকার হয়ে পড়ে। এর সাথে তোমাকে এবং তোমার পরিবারকে প্রটেক্ট করাও আমার মূল লক্ষ্য হয়ে দাঁড়িয়েছিল।
এরপর আরিফের সাহায্যে তোমাকে বাড়ি থেকে উঠিয়ে আনি আমি। কি’ড’ন্যা’প করার মিথ্যে নাটকটা করি। কেন জানিনা আমার মন বলছিল অনামিকার সাথে যা ঘটেছে তোমার সাথেও হয়ত তা ঘটতে পারে! তাই রিস্ক নিতে চাইনি আমি। মিলিয়ে দেখো। তোমাকে যদি আমি কি’ড’ন্যা’প করে আমার সাথে না নিয়ে আসতাম তাহলে হয়ত এতক্ষণে তোমার বাবা-মায়ের মত তোমারও করুন অবস্থা হত। র্যা’প হতে হতো তোমাকে অনিকের হাতে! অনিক তখন যা ইচ্ছা তাই করত তোমার সাথে। তোমার বাবা-মা চেয়েও তখন কিছু করতে পারত না। সবকিছু ভেবে চিন্তেই তোমাকে আমি কি’ড’ন্যা’প করি। এদিকটা সামলে এরপর তোমার বাবা-মাকে চট্টগ্রাম নিয়ে আসি। তবে এরমধ্যে হঠাৎ অনিককে কে খু’ন করতে পারে তাই আমাকে বড্ড ভাবাচ্ছে।
হুট করেই বসা থেকে ওঠে গেল প্রিয়া! অপরাধী মুখ নিয়ে সে কাঁদতে কাঁদতে রাফায়াত এবং অয়ন্তীর পাশাপাশি দাঁড়ালো। হাতজোড় করে তাদের দুজনকে বলল,,
“বিশ্বাস করো তোমরা? আমি অনিককে খু’ন করিনি! অনিক খু;ন হয়েছে তা আমি তোমাদের মুখ থেকেই একটু আগে জানতে পেরেছি। মানছি অতীতে আমি অনিকের সাথে মিলে যা করেছি ভুল করেছি। অনিকের কথার জালে ফেঁসে, তার মিথ্যে ভালোবাসার মায়ায় পড়ে আমি রাফায়াতকে ঠকিয়েছি। তবে কাউকে খু’ন করার মত এতবড়ো জঘন্য কাজ আমি করতে পারিনা। প্লিজ তোমরা আমাকে ভুল বুঝো না। মিথ্যে অভিযোগে আমাকে পুলিশের কাছে ধরিয়ে দিওনা প্লিজ। হাত জোর করছি আমি তোমাদের কাছে।”
অয়ন্তীকে ছেড়ে দাঁড়ালো রাফায়াত। কঠোর ভঙ্গিতে কান্নারত প্রিয়ার মুখোমুখি দাঁড়ালো সে। কঠিন গলায় প্রিয়ার দিকে প্রশ্ন ছুড়ল,,
“তুই সত্যিই অনিককে খু’ন করিসনি?”
“তিন সত্যি রাফায়াত। আমি সত্যিই অনিককে খু’ন করিনি।”
“কে খু’ন করতে পারে বলে তুই মনে করিস? অনিক কখনো তোকে আকার ইঙ্গিতে কিছু বলেছিল?”
“একবার বলেছিল তার দলের মধ্যেই তাকে নিয়ে রে’ষারেষি চলছে! এর বেশী কিছু আমাকে বলেনি রাফায়াত।”
চঞ্চল মুখ খুলল এবার। প্রিয়ার পাশাপাশি হয়ে রাফায়াতের মুখোমুখি দাঁড়ালো সে। ভাবুক গলায় বলল,,
“এ ও তো হতে পারে মিন্টু ভাই নিজেই অনিককে খু’ন করেছে! তোকে ফাঁসানোর জন্য। প্রথম থেকেই কিন্তু মিন্টু ভাই তোর পেছনে লেগে আছে রাফায়াত। এর আগের বারও কিন্তু মিন্টু ভাই-ই তোকে প্রথমে অ্যাটাক করেছিল। ভেবে দেখ বিষয়টা।”
চঞ্চলের কথায় রাফায়াত সহমত পোষণ করল। স্বাভাবিক গলায় বলল,,
“ভেবে দেখার কিছু নেই। ফখরুল ভাইও আমাকে বাজানোর জন্য বলেছিল অনিককে আমি খু’ন করেছি কিনা! সেম কথা ইয়াদও বলল। সবার টার্গেট এখন আমার দিকেই যাবে। হয়ত পুলিশররা এতক্ষণে আমাকে খুঁজতেও বের হয়ে গেছে। তবে যাই হয়ে যাক প্রিয়াকে আমাদের সেইফ রাখতে হবে। কোনোভাবে প্রিয়ার লকেটটা পুলিশের হাতে পৌঁছে গেছে। কেউ হয়ত উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে প্রিয়াকে ফাঁসাতে চাইছে নয়ত আমাকে। হয়ত দুজনকেই একসাথে ফাঁসাতে চাইছে।”
পেছন থেকে অয়ন্তী হঠাৎ ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠল! অয়ন্তীর কান্নার আওয়াজ পেয়ে রাফায়াত আতঙ্কিত হয়ে পিছু ঘুরে তাকালো। অমনি অয়ন্তী ছুটে এসে রাফায়াতকে জড়িয়ে ধরল। হেঁচকি তুলে বলল,,
“অনিক ভাই খু;ন হয়েছে এতে আমার কোনো আফসোস নেই রাদিফ। বরং আ’জা’ব পাতলা হয়েছে সেই ভেবে আমার খুশি লাগছে। কিন্তু আমি তোমাকে আর হারাতে চাইনা রাদিফ! তোমাকে অনেক কথা বলার আছে আমার। মনের গহীনের সব লুকানো কথা। যা আমি কখনও চেয়েও তোমাকে বলতে পারিনি। সেই কথাগুলো জমাট জমাট বাঁধতে বাঁধতে মস্ত এক ডায়েরীতে পরিণত হয়েছে! মনের সেই ডায়েরীটি আমি তোমাকে পড়ে শুনাতে চাই রাদিফ। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে সেই সময়টা আমি পাব না! আমার ভালোবাসা আজ ভালো নেই। তার উপর অনেক বিপদ। মহা বিপদ।”
রুদ্ধশ্বাস ফেলল রাফায়াত। কোমলভাবে অয়ন্তীর মাথায় হাত বুলাতে লাগল। চোখজোড়া বুজে শান্তনার স্বরে বলল,,
“শান্ত হও অয়ন্তী। আমার বুঝতে বাকি নেই তুমি রাদিফকে ঠিক কতখানি ভালোবাসো। তোমার কাছে যাওয়ার পরই রাদিফ তোমার ভালোবাসা উপলব্ধি করতে পেরেছে। তোমার ভালোবাসা এখন ভালো আছে অয়ন্তী। তোমাকে কাছে পাওয়ার মধ্যে যে সুখ সেই সুখ রাদিফের সমস্ত অতীতের যন্ত্রণা ভুলিয়ে দিয়েছে। বর্তমানে হয়ত তার মত সুখী আর পৃথিবীতে দ্বিতীয় কেউ নেই। যদিও ভবিষ্যতে কী ঘটতে চলেছে আমি জানিনা! তবে তুমি যেহেতু আমার পাশে আছো আই হোপ আর কোনো খারাপ কিছু ঘটবেনা আমার সাথে।”
“আমি এত শত কথা শুনতে চাইনা রাদিফ। শুধু একটা কথাই শুনতে চাই।”
“কী কথা অয়ন্তী?”
“তুমি আমাকে আগে এনশিওর করো যে আল্লাহ্’র রহমতে যদি এই বিপদটা থেকে তুমি মুক্তি পাও তবে এসব অপ-রাজনীতির লাইন তুমি ছেড়ে দিবে?”
গভীর চিন্তায় পড়ে গেল রাফায়াত! কঠিন এক প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়েছে অয়ন্তী তার দিকে! আদৌ সে জানেনা অয়ন্তীর এই প্রশ্নের উত্তর তার জানা আছে কী-না। তবুও যেন মনে মনে আকাশ কুসুম চিন্তা করে রাফায়াত দৃঢ় গলায় বলল,,
“তুমি ছিলেনা বলেই রাজনীতির সাথে আমি বার বার জড়িয়ে পড়েছিলাম অয়ন্তী। তুমি আছো এখন আর রাজনীতির দরকার পড়বেনা আমার! আমি আমার হান্ড্রড পার্সেন্ট দিব এই লাইন থেকে সরে আসার।”
এরমধ্যেই চঞ্চল বেশ তাড়া দিলো রাফায়াতকে। প্রিয়াকে রেখে দ্রুত এই ফ্লাট ছেড়ে বের হতে বলল সবাইকে। ঘটনাচক্রে সশরীরে উপস্থিত না থাকলে এখন সবার সন্দেহ রাফায়াতের দিকে পড়তে পারে! চঞ্চলের কথা শুনে রাফায়াত সত্যিই অয়ন্তীকে নিয়ে ফ্লাট থেকে বের হয়ে গেল। সাথে চঞ্চলও তাদের পিছু নিলো।
____________________________
মধ্যরাত তখন। ঘড়িতে ভোররাত তিনটার কাছাকাছি প্রায়। রাফায়াতকে তার বাড়ি থেকে গ্রে’ফ’তা’র করে নিলো পুলিশ! জোর করে টেনে হেছঁড়ে তাকে বাড়ি থেকে নিয়ে যাওয়া হয় থানায়।
#চলবে…?