#এক_খণ্ড_কালো_মেঘ
#পর্ব_১৬,১৭
#নিশাত_জাহান_নিশি
১৬
প্রতিউত্তর করার সময়টাও অবধি দেওয়া হলোনা রাফায়াতকে। অয়ন্তী যেন বালতি হাতে নিয়ে ঝড়ের বেগে ছুটে এলো রাফায়াতের দিকে! কোনো দিকে কালক্ষেপণ না করেই সে দাঁতে দাঁত চেপে বালতি ভরা দুধপানি ছিটিয়ে দিলো রাফায়াতের গাঁয়ে!
উপস্থিত সবার চক্ষু হয়ে গেল চড়কগাছ! এ কী অনর্থ করে বসল অয়ন্তী? হিতাহিতজ্ঞান কী লোপ পেয়েছে তার? না জানি আজ কী কী ঝড়-ঝঞ্ঝা বয়ে যায় তার উপর দিয়ে! সেই খবর কী অয়ন্তীর আছে? আদোতে ক্ষুব্ধ রাফায়াতকে আজ শান্ত করা যাবে তো? সেই অবিসম্ভাব্য ভয়ে সবাই কাতর হয়ে থাকলেও রাফায়াতের ভাবি ‘সুমা’ মুখ চেপে হেসে দিলো! হাসি বেশিক্ষণ চেপে রাখতে পারল না সে। রাখবেই বা কী করে? তার ঘাড়ত্যাড়া দেবরটাকে কেউ এই প্রথম এভাবে নাকানি চুবানী খওয়াবে আর সে শুধু মুখ চেপে হাসবে তা কী আবার ইহকালে সম্ভব হবে? রাফায়াতের মা মিসেস শায়লা মির্জা তো ভীষণ খুশি। পুরোপুরি গোসল না করে রাফায়াত নিশ্চয়-ই এখন এই ভেজা শরীর নিয়ে বাড়ির ভেতর প্রবেশ করবেনা। যা খুঁতখুঁতে স্বভাবের রাফায়াত। চিনতে বাকী আছে নাকি রাফায়াতকে উনার?
এদিকে তো রাফায়াত জ্বলছে, পুড়ছে আর লুচির মত ফুলছে! রাগ যেন তার ফারেনহাইটের পারদের ন্যায় উঠা-নামা করছে। পারছেনা সে এক্ষুণি অয়ন্তীর গ’লা টি’পে ধরতে! সমস্ত শরীর তার জ্বলে পুঁড়ে ছারখার হয়ে যাচ্ছে। দুই হাতের কোষে পাঁচ থেকে ছয়বার পানি ছিটানোর পর অয়ন্তী তার ক্ষোভ থেকে বেরিয়ে এলো! রাগী ভাবটা যেন মুহূর্তের মধ্যেই নিশ্চিহ্ন হয়ে তা পৈশাচিক হাসিতে পরিণত হলো। অচিরেই মনস্কামনা পূরণ হয়ে গেল তার। রাফায়াতের অগ্নিঝরা দৃষ্টিতে সে সাবলীল দৃষ্টি নিক্ষেপ করল। হাত দু’খানি ঝেড়ে স্বাভাবিক স্বরেই বলল,,
“যান যান। এবার ওয়াশরুমে যান। পুরো বালতি দুধপানি ঢেলে গোসল করে আসুন। আপনার অর্ধেক কাজ-ই তো আমি কমিয়ে দিলাম বলুন? এতে তো আপনার খুশি হওয়ার কথা তাইনা? কিন্তু খুশি হওয়ার বদলে আপনি মুখটাকে অমন বাংলার পাঁচের মত করে রেখেছেন কেন?”
না এবার আর চুপ করে থাকা যাচ্ছেনা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণাধীন হয়ে উঠছে। ভেতরের সব ক্ষোভ এবার বাইরে বের করতে-ই হবে। না হয় পেট ফেটেফুটে সব বাইরে বের হয়ে আসবে। তৎক্ষণাৎ দাঁতে দাঁত গিজগিজিয়ে রাফায়াত তার আধভেজা শার্ট এবং প্যান্টটিকে ঝেড়েঝুড়ে অয়ন্তীর সম্মুখস্থ হয়ে দাঁড়ালো। চোঁয়াল উঁচিয়ে বিড়বিড়িয়ে বলল,,
“রিভেঞ্জ নিলা তাইনা?”
অবিশ্বাস্যভাবে-ই অয়ন্তী চোখ মেরে দিলো রাফায়াতকে! বুকের উপর দু’হাত গুজে বড়ো রকমের ভাবসাব নিলো। মজার ছলে বলল,,
“কেঁচি লাগি মেরি পেহেলি রিভেঞ্জ? আচ্ছি হে না? বোলো বোলো আচ্ছি হে না?”
রাগটা যেন তড়তড় করে মাথায় চেপে বসল রাফায়াতের। অয়ন্তীর ভাবসাব দেখে তার মাথায় চেপে থাকা সেই মারাত্নক রাগটা যেন বেগতিক ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করল! হাত বাড়িয়ে সে অয়ন্তীর বুকের পাঁজর থেকে হাত দু’খানা টেনে সরালো। ঝাঁজালো গলায় বলল,,
“নেক্সট টাইম যেন না দেখি আমার সামনে এভাবে বুকের উপর হাত গুজে না দাঁড়াতে। বড়োদের মত এসব ভাবওয়ালা গেট আপ না নিতে।”
হঠাৎ-ই তাদের মধ্যখানে এসে মিসেস শায়লা মির্জা ফোরণ কাটলেন। কারণ, তিনি বুঝতে পারছিলেন বদরাগী ছেলে উনার ভীষণ তেঁতে গেছে। কখন সেই গলন্ত লোহা এসে অয়ন্তীর গাঁয়ে ছিঁটকে পড়ে তা বলা ভারী মুশকিল। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে তিনি দ্রুত গলায় রাফায়াতকে বললেন,,
“হয়েছে হয়েছে। এবার যা গোসল করে আয়। মেয়েটা একদম ঠিক কাজ করেছে। তোকে এভাবে ভিজিয়ে না দিলে তুই কখনোই এই দুধ পানিটা দিয়ে গোসল করতে রাজি হতিসনা। তুই আমার ছেলে আর আমি তোকে চিনব না? যা হওয়ার হয়ে গেছে বাবু। যা এবার আর্লি গোসলটা সেরে আয়। খাবার বাড়ছি আমি। দুপুর থেকে সবাই না খেয়ে আছে। নিশ্চয়ই ইঁদুর দৌঁড়োচ্ছে সবার পেটে।”
ছেলের বউকে নিয়ে মিসেস শায়লা মির্জা চলে গেলেন রান্নাঘরের দিকে। রাফায়াতের বড়ো ভাই রায়হান উপর থেকে নিচ অবধি রাফায়াতকে খুব সূক্ষ্মভাবে প্রত্যক্ষণ করলেন। অতঃপর তিনি আচমকাই মুখ চেপে হেসে বললেন,,
“যা ভাই তাড়াতাড়ি শাওয়ারটা নিয়ে আয়। এই লুকে বেশিক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলে বলা যায়না কিন্তু মেয়ে মানুষদের নজর আবার বেসামাল হয়ে যেতে পারে!”
চটে গেল রাফায়াত। রুষ্ট গলায় বলল,,
“জাস্ট শাট আপ ভাইয়া! যে যেভাবে পারছ আমার মজা নিচ্ছ। আমি কিন্তু এসব টলারেট করতে পারছিনা একদম।”
হা হা শব্দে হাসতে হাসতে রায়হান জায়গা থেকে প্রস্থান নিলো। চঞ্চলসহ বাকী সবাই মুখ লুকিয়ে জায়গা থেকে পালালো! যদিও চঞ্চলের মুখে আগে থেকেই মাক্স পড়া ছিল। অয়ন্তী যেন কোনোভাবেই চঞ্চলকে চিনতে না পারে সেজন্যই রাফায়াতের কথায় চঞ্চলের এই বাড়িতে মাক্স পড়ে আসা! অয়ন্তীর প্রথম থেকেই রাফায়াতের বন্ধুদের দিকে তেমন একটা নজর ছিলনা। তার সম্পূর্ণ নজর নিবদ্ধ ছিল শুধু রাফায়াতের দিকে। কখন সে সবার সামনে রাফায়াতকে দুধে পানিতে ভেজাতে পারবে সেই প্রতিশোধের তাড়নায় মত্ত হয়েছিল।
বুকে হাত রাখার প্রসঙ্গে রাফায়াত স্পষ্ট ভাষায় অয়ন্তীকে বারণ করে দিলেও অয়ন্তী এই কাজটিই পুনরায় করল! ইচ্ছে করে আবারও বুকের পাঁজরে হাত গুজে দাঁড়ালো! রাফায়াত আবারও ক্ষুব্ধ হয়ে অয়ন্তীর বুক থেকে হাত দুটি সরিয়ে দিলো। খিঁচ খেয়ে অয়ন্তী আবারও একই কাজ রিপিট করল। রাফায়াতও তার জেদে অটুট থেকে আবারও সেই সেইম কাজটি করল। এভাবে-ই দুজন প্রায় পাঁচ থেকে ছয়বার এই একই কাজে লিপ্ত রইল। সপ্তম বারের বেলায় রাফায়াতের মাথায় এবার র’ক্ত ওঠে গেল! ধৈর্য্যের বাঁধও পুরোপুরি ভেঙে গেল৷ অয়ন্তীকে টানতে টানতে সে বাড়ির স্টোররুমে নিয়ে গেল। ধপাস করে মেঝেতে ছিটকে ফেলল। বদ্ধ জানালার ফিনকি দিয়ে হুড়মুড়িয়ে আসা এক ফালি রোদের আলোতে অয়ন্তীর উদ্ভ্রান্ত মুখের দিকে তাকালো রাফায়াত। মৃদু চিৎকার করে বলল,,
“তুমি ভালো কথার মানুষ না বুঝলে? ভেবেছিলাম বাড়ির সবার মাঝে তোমাকে রাখব। কিন্তু তুমি সবার সাথে থাকার যোগ্য নও। স্টোররুমে বন্ধী থাকবে না হয় কালই তোমাকে শুনশান একটা গেস্ট হাউজে নিয়ে ফেলে রেখে আসব। ওখানে তুমি একা পঁ’চ’বে, গ’ল’বে, ম’র’বে!”
ভাবশূণ্য ভঙ্গিতে অয়ন্তী ঠোঁট উল্টালো। স্বাভাবিক স্বরে-ই বলল,,
“এজ ইউর উইশ! আমি তো আমার বাঁচার আশা পুরোপুরিই ছেড়ে দিয়েছি। শুধু আমার পরিবার সুরক্ষিত থাকলেই চলবে। তাই আমার এই বদ্ধ স্টোররুমে বা শুনশান কোনো গেস্ট হাউজে থাকতেও কোনো অসুবিধে নেই।”
মেঝেতে উল্টো পাশ ফিরে শুয়ে পড়ল অয়ন্তী। মুখ লুকিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠল সে। অয়ন্তীর আচরণে রাফায়াত বেশ অবাক হলো। এত সহজে অয়ন্তী হার মেনে নিলো? নিজেকে বাঁচানোর কথা চিন্তা করলনা অবধি? অয়ন্তীকে দেখে মনে হচ্ছে যেন এভাবে সে আরও অনেকবার নিজেকে ত্যাগ করে এসেছে! যেকোনো পরিস্থিতিতে নিজেকে জোর পূর্বক মানিয়ে নিয়েছে। কিন্তু সবক্ষেত্রে তো নিজেকে এমন জোর করা ঠিক নয়। এভাবে অন্য কাউকে জিতিয়ে দিয়ে নিজে হেরে যাওয়া মোটেও উচিৎ নয়। মৃত্যুর আগ অবধি নিজেকে বাঁচিয়ে যাওয়ার লড়াই চালিয়ে যেতে হবে। হার মানা যাবেনা কারো কাছে-ই। অয়ন্তীকে খুব শক্ত হতে হবে। রাগী ভাব ঝেড়ে ফেলল রাফায়াত। কণ্ঠে কোমলতা নিয়ে এলো। মলিন স্বরে বলল,,
“দেখি ওঠো।”
নাছোড়বান্দা অয়ন্তী নিজেকে আরও গুটিয়ে শুটিয়ে শুয়ে পড়ল। ভরাট গলায় জবাবে বলল,,
“আপনি যান এখান থেকে। আমাকে একটু একা থাকতে দিন।”
“উঠতে বলেছি উঠো। ঠিক জায়গায় তো রাগ দেখাতে পারো না। বেহুদা জায়গায় রাগ দেখাতে আসো।”
“আমার এখন কারো সাথে কথা বলতে ভালো লাগছে না। প্লিজ আপনি যান।”
“আচ্ছা কী করতে ভালো লাগছে বলো?”
“বললাম তো একা থাকতে ভালো লাগছে।”
গাঁ ছাড়া ভাব নিলো রাফায়াত। ভেজা চুলগুলো পেছনের দিকে টেনে ধরল। ভাবশূণ্য গলায় বলল,,
“ওকে ফাইন। তাহলে একা-ই থাকো। তবে তোমার সাথে একটা টপ সিক্রেট শেয়ার করার ছিল! শুনতে চাইলে শুনবে। না হয় চলে যাচ্ছি ওকে?”
নাক টানল অয়ন্তী। আগ্রহ থেকে বেশ উৎসুক গলায় শুধালো,,
“কী সিক্রেট?”
“আগে বলো ভয় পাবে না তো?”
“উঁহু। আমি ভয়-টয় পাইনা। যা বলার বলে ফেলুন।”
“ওকে বলছি তাহলে। এই রুমে না? কালো দেখতে একটা ভূ”ত আছে!”
দম নেওয়ারও সময়টা পেলনা রাফায়াত। এর অতিপূর্বেই অয়ন্তী দৌঁড়ে এসে রাফায়াতের ডান হাতটা জড়িয়ে ধরল। রাফায়াতের ঠিক পেছনে লুকিয়ে যাওয়ার মত উপক্রম হলো তার। ভয়ে তার শরীর থরথর করে কাঁপতে লাগল। জবান প্রায় বন্ধ হয়ে এলো। হাত দুটো ঘামে ভিজে রাফায়াতের কব্জির সাথে মিশে যাচ্ছিল। কাঠ কাঠ গলায় বলল,,
“আমাকে প্লিজ আপনাদের সাথে থাকতে দিন না? আমি আর কখনও আপনার কথার অবাধ্য হবনা!”
ঠোঁট টিপে হাসি চাপল রাফায়াত। কণ্ঠে বেমালুম কঠোরতা এনে বলল,,
“শিওর?”
“হুম।”
“ভেবেচিন্তে বলছ তো?”
“হুম।”
“আমি যা করতে বলব তাই করবে?”
“হ্যাঁ তো। প্লিজ চলুন না এই গস্টরুম থেকে।”
“বুকের উপর আর হাত গুজে দাঁড়াবে না শিওর তো?”
“হ্যাঁ শিওর।”
“আমি যা বলব তাই শুনবে?”
“শুনব তো!”
“ওকে। তাহলে ঠিক আছে। আর একটা কথা।তোমাকে থাকার জন্য যে রুমটা দেওয়া হয়েছে তুমি সেই রুমটিতেই থাকবে। খবরদার আমি বলার আগে ঐ রুম থেকে এক পা ও বের করবেনা ওকে?”
“ওকে! এবার তো চলুন প্লিজ।”
রাফায়াতের বাহুতে শক্তভাব চেপে ধরা অয়ন্তীর হাত জোড়ায় ভরসার হাত রাখল রাফায়াত! অনেকক্ষণ যাবত গাঁ ভেজা থাকার দরুন হঠাৎ তার ঠাণ্ডা লেগে গেল। বিরামহীনভাবে হাচ্চি দিতে লাগল সে। অনর্গল ছয়টা হাচ্চি একসাথে দেওয়ার পর রাফায়াত একটু ক্ষান্ত হলো। এর ফাঁকেই অয়ন্তী রাফায়াতকে টেনে হেঁচড়ে স্টোররুম থেকে বের করল। আচমকাই রাফায়াতের কনুইতে জোরে এক চিমটি কেটে দিলো! তড়িঘড়ি করে রাফায়াতের হাতটি ছেড়ে সে তার বরাদ্দ করা রুমটির দিকে দ্রুত পায়ে হাঁটা ধরল। উত্তেজিত গলায় রাফায়াতকে ডেকে বলল,,
“ব’জ্জা’ত বেটা। ভূতের ভয় দেখাও আমারে? একদম ঠিক হয়েছে ঠাণ্ডা লেগেছে। আর একটা কথা। আমি ভুলেও আপনার কথামত চলব না। যখন যা মনে হবে তখন ঠিক তাই করব। যেটা না করতে বলবেন সেটাই আরও বেশি করে করব!”
অয়ন্তীর বড়ো নখের আঁচড়ে যদিও রাফায়াতের কনুইটা বেশ অনেকখানিই কেটে গেছে তবুও সে কোনো রকম উহ্ আহ্ শব্দটুকুও করলনা। ব্যথাকে তার ব্যথাই মনে হলোনা! প্রাণপনে দৌঁড়োতে থাকা অয়ন্তীর যাওয়ার পথে তাকিয়ে সে স্মিত হাসল। অয়ন্তীর একটু আগের করা নাটক ধরতে তার আর বাকী রইলনা! মাথা চুলকে সে বিভোর গলায় বলল,,
“ইশশ! আমার হারানো অয়ন্তীটাকে আবারও ফিরে পেলাম!”
ইতোমধ্যেই পেছন থেকে চঞ্চল এসে উদ্বিগ্ন গলায় রাফায়াতকে ডাকল। অনর্গল বলল,,
“একটা প্রবলেম হয়ে গেছে রাফায়াত!”
তড়িঘড়ি করে পেছনে ঘুরে তাকালো রাফায়াত। কপালের ভাঁজে নিগূঢ় দুঃশ্চিন্তার ছাপ ফুটিয়ে তুলল। শুষ্ক গলায় প্রশ্ন ছুড়ল,,
“কী প্রবলেম?”
“প্রিয়া ফোন করেছিল। তোর ফেরার খবরটা সে পেয়ে গেছে! আমাকে বলছিল কিছুক্ষণের মধ্যেই নাকি এই বাড়িতে আসছে!”
মাথায় হাত চলে গেল রাফায়াতের। চরম সংকটে ভুগতে লাগল। খারাপ কিছুর আঁচ করতে পেরে আতঙ্কগ্রস্ত গলায় বলল,,
“কী বলছিস তুই বুঝতে পারতিস তো চঞ্চল? প্রিয়া এখন এই বাড়িতে আসলে পরিস্থিতি সব উল্টে পাল্টে যাবে।”
“হ্যাঁ। এজন্যই তো আর্জেন্ট তোকে কথাটা বলা। যা করার আমাদের কিছুক্ষণের মধ্যেই করতে হবে।”
“যা মনে হচ্ছে অয়ন্তীকে এই বাড়িতে রাখাটা সেইফ নয়! হতে পারে প্রিয়ার সাথে অনিকও আসতে পারে। অনিক কিন্তু আমাকে পাগলের মত খুঁজছে!”
#চলবে…?
#এক_খণ্ড_কালো_মেঘ
#পর্ব_১৭
#নিশাত_জাহান_নিশি
“যা মনে হচ্ছে অয়ন্তীকে এই বাড়িতে রাখাটা সেইফ নয়! হতে পারে প্রিয়ার সাথে অনিকও আসতে পারে। অনিক কিন্তু আমাকে পাগলের মত খুঁজছে!”
উদ্বিগ্ন হয়ে উঠল চঞ্চল। জিভ দ্বারা ঠোঁট ভিজিয়ে উত্তেজিত গলায় বলল,,
“যা করার ইমেডিয়েটলি কর ভাই। হাতে একদম সময় নেই।”
“গেস্ট হাউজের চাবিটা দে তো। অয়ন্তীকে আমি ঐ গেস্ট হাউজে রেখে আসছি। যেকোনো ক্রমেই হোক অয়ন্তীকে সেইফ রাখাটা আমার জন্য এসেন্সিয়াল।”
তাড়াহুড়ো করে চঞ্চল তার পকেট থেকে চাবিটি বের করে রাফায়াতের হাতে তুলে দিলো। চাবিটি হাতে পাওয়া মাত্রই রাফায়াত হম্বিতম্বি হয়ে প্রথমে তার রুমে প্রবেশ করল। সামনে যে প্যান্ট-শার্ট গুলো খুঁজে পেল তা নিয়েই বাথরুমে ঢুকে পড়ল। শাওয়ার নিতে খুব বেশী একটা সময় ব্যয় হলোনা তার। ভেতরে ঢুকল আর বের হলো ঠিক এমনটাই মনে হলো। তার উদ্দেশ্যই যেন ছিল বিনা সময় অপচয়ে অয়ন্তীকে নিয়ে এই বাড়ি থেকে বের হয়ে যাওয়া। অয়ন্তীর জন্য নিরাপদ একটা জায়গার ব্যবস্থা করে আসা। প্রিয়া এবং অনিককে তার আশোপাশে থেকে দূরে রাখা৷
ভেজা শরীরে-ই রাফায়াত শার্টের বোতম লাগাতে লাগাতে পুনরায় দৌঁড়ে তার রুম থেকে বের হলো। চুল থেকে টপটপ করে পানি পড়ছে তার। ভিজে যাচ্ছে শার্ট এবং দেহের প্রতিটি আনাচকানাচ। সেদিকে বিন্দুমাত্র ধ্যান নেই তার৷ জুতো ছাড়াই যে সে রুম থেকে বের হয়ে গেছে সেদিকেও কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই তার। উদাসীন এক অবস্থা তার। কেমন যেন দিশেহারা হয়ে যাচ্ছে অয়ন্তীর দুঃশ্চিন্তায়। এইদিকে আবার খাবার টেবিলে খাবার বেড়ে অপেক্ষা করছেন রাফায়াতের মা এবং ভাবি। সবাইকে খাবার খাওয়ার জন্য ডাকতে ডাকতে তারা ব্যস হয়রান হয়ে যাচ্ছেন। অবশেষে উদ্ভ্রান্ত রাফায়াতকে অয়ন্তীর রুমের দরজায় দেখতে পেয়ে রাফায়াতের মা ড্রয়িংরুম থেকে রাফায়াতের নাম ধরে ডেকে উঠলেন। উঁচু গলায় শুধালেন,,
“কী রে রাফু? খাবিনা? সেই কখন থেকে খাবার বেরে বসে আছি। অথচ তোরা কেউ আসছিসই না।”
অয়ন্তীর রুমের দরজা ধাক্কাতে গিয়েও থেমে গেল রাফায়াত। তার মাকে উদ্দেশ্য করে বিরামহীন গলায় বলল,,
“সরি মা। তোমাদের সাথে বসে এখন খাবার খাওয়ার সময় নেই আমার। তুমি বরং এক কাজ করো আমার এবং অয়ন্তীর খাবারটা প্যাক করে দাও। আমরা পরে খেয়ে নিব।”
মিসেস শায়লা মির্জা বিচলিত হয়ে উঠতেই চঞ্চল এসে ঠাণ্ডা মাথায় সব বুঝিয়ে বললেন মিসেস শায়লা মির্জাকে। প্রিয়া আসবে বলে যে রাফায়াত অয়ন্তীকে নিয়ে বাড়ি ছাড়ছে কথাটা পুরোপুরি ভেঙে না বললেও অনিককে মিন করে চঞ্চল ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে যা বলার বলেছে। মুহূর্তের মধ্যেই শায়লা মির্জা মুখটা কালো করে ফেললেন। বিষণ্ন মনে দুঃখী দুঃখী গলায় বললেন,,
“এতদিন পর ছেলেটা বাসায় এলো। কিন্তু ভাগ্য দেখো? একসাথে বসে খাবার খাওয়ার তৌফিকটাও হলোনা তার।”
সুমাকে নিয়ে মিসেস শায়লা মির্জা খাবার প্যাক করতে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন। ঠেসেঠুসে খাবার বাড়তে লাগলেন বক্সে বক্সে। পারছেন না তিনি যা যা রান্না করেছেন সেসব বক্সে বক্সে ভরে দিতে! উনার এই কীর্তিকলাপ দেখে সুমা হাসতে লাগল। মায়েরা বোধ হয় এরকমই হয়৷ সন্তানদের ক্ষেত্রে তাদের কোনো কৃপণতা নেই। হাজার খাওয়ালেও তাদের যেন কোনো সন্তুষ্টি নেই! মুখে সেই একই কথা লেগে থাকে তাদের,,
“ইশশ আরেকটু দিতে হয়ত ভালো হত। কী না কী দিয়েছি। হবে তো আমার ছেলেটার?”
অয়ন্তীর রুমের দরজায় একবার কড়া নাড়তেই অয়ন্তী দৌঁড়ে এসে রুমের দরজাটা খুলে দিলো৷ ক্ষুধার্ত বাঘিনীর ন্যায় সে রাফায়াতের দু’হাতের দিকে তাকালো। হাঁপানো গলায় বলল,,
“কই? খাবার এনেছেন?”
প্রতিউত্তর করলনা রাফায়াত। তবে বুঝতে পারল অয়ন্তীর বেশ জোরে সোরেই ক্ষুধা পেয়েছে! এদিকে খুব একটা মনোযোগ না দিয়ে রাফায়াত অয়ন্তীর হাতটা ঝট করে চেপে ধরল। টানতে টানতে অয়ন্তীকে নিয়ে ড্রয়িংরুমের দিকে চলে এলো। চঞ্চল আর এই মুহূর্তে রাফায়াতের সামনে এলোনা। কারণ অয়ন্তীর তাকে চিনে ফেলতে বেশী সময় লাগবেনা! রান্নাঘর থেকে সুমা দ্রুত পায়ে হেঁটে এসে খাবারের বক্সগুলো রাফায়াতের হাতে ধরিয়ে দিলো। মিহি কণ্ঠে বলল,,
“নাও। খাবারগুলো তোমরা পরে খেয়ে নিও।”
অয়ন্তী বেশ বিরক্ত হয়ে উঠল৷ নাক-মুখ কুঁচকে সুমার দিকে প্রশ্ন ছুড়ে বলল,,
“আমরা কোথায় যাচ্ছি আপু? খাবার কেন দিচ্ছ আমাদের?”
“গেলেই বুঝতে পারবে। এখন যাও তোমরা।”
ঘ্যান ঘ্যান করে অয়ন্তী সেই একই প্রশ্ন রাফায়াতের দিকে ছুড়তেই রাফায়াত চটে গেল! এমনিতেই তার মেজাজ বিগড়ে আছে। তার উপর অয়ন্তীর অযাচিত সব প্রশ্ন। তাই উঁচু গলায় সে অয়ন্তীকে শাসিয়ে বলল,,
“কানের কাছে একদম ঘ্যান ঘ্যান করবে না। আমি যা করছি তোমার ভালোর জন্যই করছি। চুপচাপ মুখটা বন্ধ রেখে এখন আমার সাথে চলো। কিছুক্ষণ পরে-ই তুমি তোমার সব প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবে।”
অয়ন্তী খামোশ খেয়ে গেল৷ কেবল অবিন্যস্ত দৃষ্টিতে উৎকণ্ঠিত রাফায়াতকে দেখতে লাগল। একহাতে খাবারের বক্স এবং অন্যহাতে অয়ন্তীকে নিয়ে রাফায়াত দৌঁড়ে বাড়ি ত্যাগ করল। বের হওয়ার সময় বাইরে থাকা একজোড়া স্যান্ডেল পড়ে নিলো! বাইকে ওঠে সে অয়ন্তীকে নিয়ে তার ঠিক করে রাখা গেস্ট হাউজের দিকে গতিপথ নির্ধারণ করল। তবে এর আগে সে অয়ন্তীর আপাদমস্তক ওড়না দ্বারা ভালো করে ঢেকে দিলো! তাকে চিনতে পারার কোনো ব্যবস্থাই রাখল না। অয়ন্তী চুপচাপ বাইকের পেছনে বসে রইল। রাফায়াতের কাঁধে তার শক্ত হাত। নিজেকে খুব বিচিত্র প্রাণী মনে হতে লাগল তার! যে যেভাবে পারছে তাকে নিয়ে টানা হেঁছড়া করছে। বিপরীতে মুখে রা কাটারও সুযোগ নেই তার। মুখ বুজে সব সহ্য করা ছাড়া। প্রতিবাদ করার জায়গাটুকুনিও অবশিষ্ট নেই তার। ব্যক্তি স্বাধীনতা জলাঞ্জলি দিয়েছে প্রায়!
রাস্তার মাঝখানে হুট করেই একটা অটো রিকশা চোখে পড়ল অয়ন্তীর। ওড়নার উপর থেকেই সেই তিক্ত একটি মুখ তার দু’চোখে স্পষ্ট হলো। বুকের বাঁ পাশে জমা ক্ষতটাও কেমন যেন তাজা হয়ে উঠল! এক সময় এই মানুষটির জন্যই তার হৃদয় ভেঙেছিল! অতি সূক্ষ্মভাবে তার হৃদয় ভেঙেছিল। সেই হৃদয় ভাঙ্গনকারী মানুষটিকে চিনতে বুঝি ভুল হবে তার? তবুও এই হৃদয়হীনা মানুষটিকে দেখে যেন তার মনে আশার আলো জ্বলে উঠল! রাদিফের খবর জানতে উদাসী হৃদয় যেন ব্যাকুল হয়ে উঠল। মৃদু আওয়াজে সে মানুষটিকে ডেকে উঠল,,
“প্রিয়াআআআ?”
রাফায়াতের বাইকের স্পিড যেন আরও দ্বিগুণ বেড়ে গেল! বুঝতে বেশী বেগ পেতে হলোনা অয়ন্তী প্রিয়াকে দেখে নিয়েছে। বিরাট এক বিপদ বাঁধতে পারে এখন। শো শো বেগে সে বাইক চালিয়ে অটোরিকশাটি থেকে প্রায় অনেকখানি দূরে চলে এলো। যেখানে প্রিয়ার ছায়াটিও নেই। রিকশা থেকে মুখ বের করল প্রিয়া! পেছনের রাস্তায় উদগ্রীব দৃষ্টি ফেলল। কাউকে কোথাও দেখতে না পেরে সে মুখটা আবার ভেতরে ঢুকিয়ে নিলো। ঠোঁট উল্টে বলল,,
“স্ট্রেঞ্জ। কে আবার আমার নাম ধরে ডাকল?”
,
,
বিছানার উপর মুখ ফুলিয়ে বসে আছে অয়ন্তী। রাগে কেমন রি রি ও করছে। চোখ মুখ পাকাচ্ছে বারবার। ভাগে পেলে এখনি সে রাফায়াতের গলার টুটি চেপে ধরবে সেই বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। একটা মানুষ এত নি”কৃষ্ট কীভাবে হতে পারে? জা’লি’ম, পা’ষ’ণ্ড, অ’ত্যা’চারী। অয়ন্তীর দিকে তেমন কোনো মনোযোগ নেই রাফায়াতের। ভেজা শার্টটা গাঁ থেকে খুলে সে চেয়ারের উপর শার্টটা মাত্র ছড়িয়ে দিলো। পিছু ঘুরে অয়ন্তীর দিকে কেমন যেন আক্রোশিত দৃষ্টি নিক্ষেপ করল। চোঁয়াল উঁচিয়ে প্রশ্ন ছুড়ল,,
“হোয়াট’স ইউর প্রবলেম হুম? রাস্তাঘাটে নাম ধরে ডাকাডাকি করছিলে কেন? মিনিমাম কমনসেন্সটুকুও নেই তোমার?”
ঝগড়া করার মত এমন সুবর্ণ সুযোগ খুঁজে পেতেই অয়ন্তী সেই সুযোগ হাতছাড়া করতে চাইল না! বিছানার উপর সে হাঁটু গেড়ে দাঁড়ালো। কোমড়ে হাত গুজে নাক ফুলিয়ে পাল্টা বলল,,
“প্রবলেম তো আমার না ম্যান। প্রবলেম তো আপনার। দেখেছেন একজন পরিচিত মানুষকে দেখে আমি তার নাম ধরে ডেকেছি তাও আপনি বাইকটা কয়েক সেকেন্ডের জন্য থামাতে পারলেন না? এখন উল্টে এসে আমাকে ঝাড়ি দিচ্ছেন হুম? কমনসেন্স তো আপনার নেই।”
“আরেহ্! আজব পাবলিক তো। তোমাকে কি’ড’ন্যা’প করে এনেছি আমি। তো কী করে ভাবলা তুমি? তোমরা পরিচিত মানুষজনদের সাথে আমি তোমার কথা বলার সুযোগ করিয়ে দিব? মাথায় কী বুদ্ধি সুদ্ধি নেই নাকি? মাথামোটা তুমি? একটুর জন্যই কেইস খাওয়াতে নিচ্ছিলে আমাকে।”
“শুনুন? আমি জানি আমাকে আপনি অ”পহর”ণ করেছেন। আমি আপনার কাছে কি’ড’ন্যাপড। সব কথার বড়ো কথা হলো আমি যাকে নাম ধরে ডেকেছিলাম না? তার সাথে আমার দেখা হয়ে গেলেও কিংবা তার সাথে কথা হলেও সে ইচ্ছে করেই আমার কোনো হেল্প করতনা! উল্টো সে চাইত আমাকে জিম্মি করে আপনি মে’রে ফেলুন! আমার জাস্ট তার থেকে একটা খবর নেওয়ার ছিল। খবরটা পেয়ে গেলেই হয়ে যেত।”
সোজা হেঁটে অয়ন্তীর দিকে খানিক এগিয়ে এলো রাফায়াত। ডান চোখের ভ্রুটা ঈষৎ উঁচিয়ে সন্দিহান গলায় প্রশ্ন ছুড়ল,,
“কী খবর?”
“সেটা আপনাকে কেন বলব?”
“বলবে। কারণ, আমি শুনতে চাইছি।”
মাথা নুইয়ে নিলো অয়ন্তী। মুখশ্রীতে মন খারাপের রেশ টেনে বিষণ্ন গলায় বলল,,
“রাদিফ ভাইয়া কেমন আছে জানতে!”
রাফায়াত জানত তার প্রশ্নের উত্তরটা ঠিক কী হবে! অয়ন্তী যে রাদিফের ব্যাপারে জানার জন্যই প্রিয়াকে ডেকেছিল সেই বিষয়ে থাকা সন্দেহের অবকাশটুকুনিও আর অবশিষ্ট রইল না তার। বুকের ভেতর চিনচিনে ব্যথার অনুভূতি হতে লাগল রাফায়াতের। সর্বাঙ্গ জুড়ে কেমন যেন বিদ্রোহের ঝড় বইতে লাগল। রাগী চোখ দুটো নিমিষের মধ্যেই তার বিবশ হয়ে উঠল। অয়ন্তী যে এখনো তার হারিয়ে যাওয়া রাদিফকে খুঁজে বেড়ায় ঘটনাচক্রে অয়ন্তীর কাছাকাছি না গেলে সে জানতেই পারত না! মাঝখানে হাজার বারণ থাকা সত্ত্বেও রাফায়াত তার উচাটন মনকে সামলে রাখতে পারলনা। বিগলিত হয়ে সে দ্রুত পা ফেলে বিছানায় অয়ন্তীর মুখোমুখি এসে বসল! কান্নার আগে বেদনায় রঙিন চোখ দুটো যেমন ঘোলাটে এবং লাল বর্ণের হয়ে থাকে? বর্তমানে অয়ন্তীর চোখ দুটোও ঠিক তেমনই রক্তিম এবং ঝাপসা হয়ে আছে! এক্ষণি বুঝি শ্রাবণের বারিধারা অবিশ্রান্ত ভাবে ঝড়তে শুরু করবে। আর বুঝি দমিয়ে রাখা যাবেনা মনে বইতে থাকা এই বৈরী আবহাওয়াকে। নির্লিপ্ত, নির্বিকার ভঙ্গিতে রাফায়াত ঈষৎ ঝুঁকে অয়ন্তীর বিমূঢ় মুখপানে চেয়ে রইল। কেন জানিনা অয়ন্তীকে কিছু বলতে ইচ্ছে করছেনা তার। শুধু নিষ্পলক চেয়ে চেয়ে থাকতে ইচ্ছে করছে। কান্না করলে মেয়েটার গালদুটো অসম্ভব রকম লাল হয়ে যায়। দেখতে দারুন লাগে তখন। এই ভয়ঙ্কর সুন্দর রূপে তাকে দেখার এই সুযোগটা রাফায়াতের দুই বছর পর হয়েছে। এই সুযোগটা সে হাতছাড়া করবে কীভাবে?
ইতোমধ্যেই চোখ উঠিয়ে অয়ন্তী হঠাৎ রাফায়াতের দিকে তাকালো। ফুঁপিয়ে কাঁদার মতো অবস্থা তার। নাক ফুলিয়ে সে রাফায়াতের দিকে বিভৎস দৃষ্টি নিক্ষেপ করল। আর্ত গলায় বলল,,
“আপনার বাড়ি তো এই চট্টগ্রামেই রাফায়াত ভাই। রাদিফ ভাইয়ার খোঁজটা আপনি আমাকে দিতে পারবেন?”
ক্ষণিকের মধ্যেই অয়ন্তীর থেকে বিমুগ্ধ দৃষ্টি জোড়া সরিয়ে নিলো রাফায়াত। মাথা ঝাঁকিয়ে রূঢ় গলায় বলল,,
“পারব না। আমি চিনিনা ঐ রাদিফ টাদিফ কে।”
“চিনেন। মিথ্যে বলছেন আপনি। রাদিফকে যদি আপনি না-ই চিনতেন তবে ঐদিন নিশ্চয়ই রাদিফ ভাইয়ার কথা আপনি তুলতেন না! সত্যি করে বলুন কে আপনি? রাদিফ ভাইয়ার বন্ধু টন্ধু নন তো?”
উগ্র মেজাজ নিয়ে বিছানা থেকে ওঠে দাঁড়ালো রাফায়াত। অয়ন্তীর প্রশ্নবিদ্ধ চোখে অসহিষ্ণু দৃষ্টি নিক্ষেপ করল। অয়ন্তীকে আঘাতে আঘাতে জর্জরিত করতে যেন ওঠে পড়ে লাগল। ঝাঁজালো গলায় বলল,,
“এই তুমি কান খুলে শুনে রাখো। অনিকের থেকে রিভেঞ্জ নিতেই কিন্তু আমি তোমাকে কি’ড’ন্যা’প করেছি! অনিককে নাকে দঁড়ি দিয়ে ঘুরানোর পরই কিন্তু আমি তোমাকে ছাড়ব। ঐ রাদিফ টাদিফের সাথে আমার কোনো সম্পর্ক নেই বুঝতে পেরেছ? আমি যেহেতু তোমার ক্ষতি করতে-ই এসেছি তো আগে থেকেই তোমার সম্পর্কে অল ডিটেইলস আমার জানা ছিল। আর তখনই কোনোভাবে জানতে পেরেছিলাম রাদিফ নামের কোনো একটা ছেলের সাথে তোমার ওয়ান সাউডেড লাভ ছিল!”
হিংস্র বাঘিনীর ন্যায় অয়ন্তী বিছানা থেকে লাফ দিয়ে নিচে নামল। অপ্রত্যাশিতভাবেই রাফায়াতের বুকের পাঁজর বরাবর জোরে এক ঘু’ষি মারল! ক্ষোভে চিৎকার করে বলল,,
“কে বলেছে ওয়ান সাউডেড লাভ ছিল হ্যাঁ? কে বলেছে? রাদিফ ভাইয়াও আমাকে ভালোবাসত! আমি তার চোখে-মুখে আমার জন্য সেই অসম্ভব ভালোবাসা দেখেছিলাম। মাঝখান থেকে প্রিয়া এসে সব ঘেঁটে দিয়েছিল! জানিনা কেন রাদিফ ভাইয়া আমাকে ছেড়ে তখন প্রিয়ার কাছে চলে গিয়েছিল।”
#চলবে…?