#এক_চিলতে_রোদ- ২,০৪,০৫
#Writer_Nondini_Nila
৪.
স্টেজ ফাঁকা হয়ে গেলো। বিরতি দিয়ে সবাই নেমে গেছে। আমি কাচুমাচু মুখ করে বসে এদিক ওদিক তাকাচ্ছি। সবার চেয়ার ছেড়ে উঠার অপেক্ষা করছি।সবাই জায়গা ত্যাগ করলো না। অনেক এখানে বসেই আড্ডা শুরু করে দিয়েছে। অনেকে দোকানে গিয়ে ভীড় জমাচ্ছে।
আমি কাচুমাচু করেই উঠে দাঁড়ালাম।
‘ তুই এইভাবেই থেকে যা না। একা আমার ভালো লাগবে না।’ তুলি বলে উঠলো।
‘ চৈতি দের সাথে থাকিস। আমি আর এই অবস্থায় থাকবো না রে অনুরোধ করে লাভ নাই।’
‘ আচ্ছা সাবধানে যা।’
নিচের দিকে তাকাতে থেকে গেট পেরিয়ে এলাম। বাইরে এসে ওই ধাক্কা দেওয়া ছেলেটাকে দেখতে পেলাম। ছেলেটার নাম শুনেছিলাম যখন গান গাইতে স্টেজে থেকে নাম ডাকলো,
কি যেন বললো?
ভেবেও মনে করতে পারলাম না। আমাকে দেখেনি মনে হয়। দেখলে আবার সেই ফোন নিয়ে ঝামেলা করতে এসে পরতে পারে মনে হলো তাই মুখ ঘুরিয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম।
অটো পেতেই ঝটপট উঠে গেলাম। তখন এতো কথা কিভাবে বললাম নিজেও জানিনা কিন্তু এখন যদি আবার ছেলেটা ঝামেলা করতে আসে আমি একটা কথাও বলতে পারবো না জানি। তাই ওই ছেলের নজরে না পরা টাই ভালো।
অটোতে উঠে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললাম। আমার থেকে দূরে দাঁড়িয়ে ছিলো ছেলে গুলো। অটো তাদের অতিক্রম করে যাবে আমি তাকিয়ে ছিলাম সেই মেয়ের দিকে যে আমাকে কথা শুনাতে এসেছিলো।
‘ এই ঝগড়ুটে মেয়ে! আমার ফোন ভেংগে পালিয়ে যাওয়া হচ্ছে।’
আমার নজর ঘুরে গেলো। আমি ঢোক গিলে ছেলেটার দিকে তাকালাম। আমার দিকে রাগী দৃষ্টি নিক্ষেপ করে আছে। আর চেঁচিয়ে কথা গুলো বলছে। আমার নিজের শাড়ির দিকে তাকিয়ে ভাবছি। দোষ তো উনার উনার জন্য শাড়ি নষ্ট হলো সাথে আমার অনুষ্ঠান দেখা ভঙ্গ হলো। তাতে কিছু না যেন। আমাকে আবার চেঁচিয়ে বকা হচ্ছে খুব বাজে ছেলেটা।
বাসায় আসতেই আম্মু বললো,
‘ এতো তাড়াতাড়ি বাসা এলি কেন? বিকেল পর্যন্ত না বলে থাকবি!
বলতে বলতে আম্মু আমার দিকে ভালো করে তাকিয়ে বললো, ‘ একি শাড়ির এই অবস্থা কেন?’
আমি বললাম, ‘ আমি পরে গেছিলাম কলেজে।’
‘ কিহহ! কিভাবে পরলি? কোথায় পরেছিলি? আর ব্যাথা পেয়েছিস নাকি দেখ!”
বলেই আমাকে চেক করতে লাগলো।আর হাতের আঘাত দেখে ব্যস্ত হয়ে গেলো।
আম্মু আব্বু এমনি আমার একটু কিছু হলেই পাগল হয়ে যায়। আব্বু কে ভয় পেলেও আম্মু আমার বন্ধুর মতো। তাকে আমি সব বলি তাই আজ ও বাদ দিলাম না। ধাক্কা লাগা থেকে ঝগড়া করা সব কিছু আম্মু কে খুলে বললাম। আম্মু সব শুনে খুশি হলো খুব যেন।
আম্মু বললো, ‘ আমার ভীতু মেয়েটা এতো কথা বলেছে বাব্বাহ। ছেলেটা আবার গান ও গায়। আচ্ছা দেখতে খুব হ্যান্ডসাম নাকি রে তোর পছন্দ হয়েছে?”
আমি অবাক গলায় বললাম, ‘ মানে কি? কি সব বলছো? পছন্দ হওয়ার কথা এখানে আসছে কেন? ছেলেটা কতোটা বাজে তুমি দেখেছো। তার কিছু বলছো না উল্টা কেমন দেখতে এসব নিয়ে পরলে কেন?’
‘ পছন্দ হয়েছে কিনা না জানলে বুঝবো কেমনে প্রেম হবে নাকি?’
আমি মাথা হাত দিয়ে বললাম, ‘ তুমি আমার মা নাকি বান্ধবী বুঝতেছিনা। এই ভাবে কেউ প্রেমের কথা বলে। আমার বুঝি লজ্জা করে না। আরেকটা কথা ওই সভ্য ছেলের সাথে আমি কখনো প্রেম করবো না।’
‘ তার মানে দেখতে ভালো না।’
‘ আমি কি বলেছে দেখতে খারাপ। দেখতে ভালো কিন্তু আমার জন্য না। আমি রুমে গেলাম এখানে থাকলে আজেবাজে কথা বলবে। তোমাকে এসব বলাই উচিত হয়নি।’
আম্মু আমার দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসছে। আমি রাগ দেখিয়ে রুমে চলে এলাম।
.
(কাল একটা শব্দ ভুল লিখেছিলাম। ইলা আপু কে ইহান এয়ারপোর্ট থেকে আনতে যাবে সেখানে হবে জেরিন আপু।)
জেরিন আপু কে ইহান ও ইহানের বড় খালু আনতে গিয়েছে। সেখানে থেকে ইহান ও বড় খালার বাসায় গিয়েছে। ইলিনা বেগম ছেলেকে দেখে খুশি সাথে বোনের মেয়েকে দেখে আরো খুশি। হা করে বিদেশি কালচারের বোনজিকে দেখছেন। কিন্তু বোনজি তার সাথে কথা বললো ইংরেজি তে তাতে তিনি আগামাথা কিছু বুঝলো না। বোকা চোখে তাকিয়ে রইলো।
ইহানকে ধরে বেঁধেও রাতে রাখতে পারলো না। নয়টায় ই বেরিয়ে পরলো। ইলিনা বেগম অনেক চেষ্টা করলো কিন্তু কাজ হলো না। ছেলে তার কথা শুনলো না মুখ কালো করে রইলো।
বাসায় এসে ইহান ফ্রেশ হয়ে কফি খাচ্ছে। ফোনের জন্য মনটা আনচান আনচান করছে। ল্যাপটপ নিয়ে ভিডিও কলে বন্ধুদের সাথে কথা বললো। ফোনের জন্য মেজাজ খারাপ হয়ে আছে। আর ওই ইডিয়েট মেয়েটা উপর রাগ লাগছে। রাগে গজগজ করতে লাগলো ও কল কেটে। এখন বাসায় ফোনের কথাও বলা মুশকিল। এক মাস হয়েছে ফোনের এখন আবার ফোন চাইতে হবে। বাবার কথা শুনতে হবে।
.
আজ টিফিন টাইমে, দুপুরেই স্কুল ছুটি হয়ে গেলো। তুলি হাত ধরে বলছে ওর সাথে শপিংমলে যেতে। আমার যাওয়ার ইচ্ছা নাই। একা কখনো শপিং মলে যায় না আমি সব সময় আম্মু আব্বুর সাথে যাই। একা যাওয়ার অভ্যাস নাই। তাই তুলিকে বলছি যাব না কিন্তু ও তা মানতে নারাজ। ও একা যাবে না। আমাকে নাকি যেতে হবে। কানের কাছে ঘ্যানঘ্যান করতে লাগলো।
‘ আচ্ছা চল। দেরি করবি না কিন্তু।’
‘ আরে দেরি করবো কেন! কেনা হলেই চলে আসবো আমার এতো সময় লাগে না।’
‘ হুম জানি তো। মিশু দের সাথে গেছিলি তখন কতো লেট করেছিলি জানি না তো আমি। তাই না।’
‘ আরে ঊষা সেদিন তো অনেক জিনিস কিনেছি তাই এতো সময় লেগেছিলো। আজ এতো জিনিস কিনমু নাকি শুধু একটা স্ক্যাপ কিনবো।’
‘ আচ্ছা দেখা যাবে। চল তারাতাড়ি।’
দশ মিনিটের রাস্তা এখানে থেকে শপিং মলের তাই চাইলেই হেঁটে যাওয়া যাবে। কিন্তু তা নেওয়া হলো না। কারণ আকাশে রোদের তাপ তীব্র। তাই রিকশা নেওয়া হলো।
শপিং মলে ঢুকে গেলাম আমি আগেই এদিক ওদিক তাকাতে তাকাতে। তুলি ভাড়া মিটিয়ে এসে আমাকে নিয়ে লিফটের কাছে এলো। দুতালায় যেতে হবে এখন। মানে কি স্কাপ তো নিচেই আছে উপরে কেন যাচ্ছি।
‘ এই দুতালায় কেন যাচ্ছিস? স্কাপ তো নিচেই আছে।’
‘আমার একটা ঘড়ি ও কিনতে হবে চল না প্লিজ। দোতালায় ঘড়ির দোকান।’
‘ সে তো আমি জানি। কিন্তু তুই তো বলেছিলি শুধু স্কাপ কিনবি।’
‘ঘড়ির কথা তোকে বলতে মনে ছিল না।’
আমি রাগী চোখে ওকে দেখছি। আর কতো কিছু আছে আল্লাহ জানে। কিন্তু কি আর করার। এসেছি যখন সহ্য তো করতেই হবে। লিফটের দরজা খুলেই ঢুকে পরলাম। আমাদের সাথে আর দুইজন ঢুকলো। তাদের একজন কে দেখে আমার চোখ দুটো বড় হয়ে গেলো।এই তো সেই ধাক্কা দেওয়া ছেলেটা। এখানে কি করছে?
ছেলেটা আমার দিকে বড় চোখ করে তাকিয়ে এগিয়ে এলো।
‘ এই তো পেয়েছি । সেদিন পালিয়ে গেছিলে না। এখন আমার ফোন কেনার টাকা দাও।তোমার জন্য আমি ফোন ছাড়া চলছি দুইদিন যাবত।’
আমি বললাম, ‘ আমি আপনাকে ফোন কেনার টাকা কেন দেবো? ফোন আপনার দোষে ভেঙেছে। নিজের দোষ আমার ঘাড়ে কেন চাপাচ্ছেন? আর সেই দিন আমি পালিয়ে গিয়েছে কে বলল আপনাকে? আমি কি চোর নাকি যে পালিয়ে যাবো?’
‘ পালিয়েই তো গেছো। আমাদের দেখে তারাতাড়ি অটো করে হাওয়া।’
‘দেখুন আপনার জন্য আমার শাড়িটা নষ্ট হয়ে গেছে। তাতে তো আমি আপনাকে শাড়ি কিনে দিতে বলছি না। আর আপনি নিজের দোষে ফোন ভেঙে আমার পেছনে পড়ে আছেন টাকার জন্য? কি ফাজিল আপনি!”
‘তুমি শাড়ি কেনার কথা বলবে কেন তোমার শাড়ির আর কয় টাকা দাম হবে। আমার ফোন কত দামি ছিল জানো? দেড় লাখ টাকার ফোন ছিল ওইটা।’
‘জানি না জানতেও চাই না আমি কোন ফোন টোন কেনার টাকা পয়সা দিতে পারব না। যেটা দোষ আমার নয় তার খেসারত আমি দিতে যাব কোন সুখে?’
দুলাতায় চলে এসেছি দেখে ছেলেটাকে বললাম, ‘ সরে দাঁড়ান আমরা নামবো।’
‘ আমার ফোনের টাকা দাও।’
‘ বললাম তো দেবো না।’
‘ তাহলে আমি ও সরবো না।’
‘ পাগল নাকি। সরুন
কিন্তু অসভ্য বদ ছেলেটা খাম্বার মত দাড়িয়ে আছে। কি মুসিবতে পরলাম। এবার তুলি কথা বললো। কিন্তু সরলো না। ছেলেটার সাথে একটা ছেলে ছিলো সে এবার এগিয়ে এলো আর ছেলেটাকে টেনে ধরে বললো,
‘ ইহান সামান্য কারনে একটা মেয়ের সাথে এমন করছিস কেন? ছেড়ে দে না। তুই তো কখনো কোন মেয়ের সাথে এমন বিহেভ করিস নি আজ তাহলে এমন করছিস কেন?’
সামনে ফাঁকা পেতেই দ্রুত পা চালিয়ে বেরিয়ে এলাম। কি ডেঞ্জারাস! আর কোনদিন যেন এই হাফ পাগল ছেলেটা সাথে দেখা না হয় আল্লাহ! এ তো আমাকে একটা সামান্য ফোন এর জন্য যেখানে সেখানে চেপে ধরবে আর অত টাকা নাই কোথা থেকে দেবো। মেয়েদের হেনস্তা করা শুধু। পাশের ওই বন্ধুটার না থাকলে আজকে নিশ্চিতই টাকার জন্য আমাকে আটকে রাখতো।
#চলবে……
#এক_চিলতে_রোদ-2
#Writer_Nondini_Nila
৫.
এক হাত উঁচু করে মুখ ঢেকে অন্য হাতে গাউনের কোনা ধরে তাড়াতাড়ি সবার থেকে আড়ালে এসে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললাম। উফফ কোথাও গিয়ে কি আমি একটু শান্তি পাবো না। যেখানেই যাই সেখানেই এই বেয়াদব ছেলেটা কোথা থেকে চলে আসে আল্লাহ জানে। চেয়ার টেনে একা গালে হাত দিয়ে বসে তাকিয়ে আছি আমার কয়েকদিনের মধ্যে তৈরি করা শত্রুর দিকে। এখানেই আব্বু আম্মু আছেন তাদের সামনে এমনকি এই বাসায় যদি ছেলেটা আমার সাথে মিসবিহেভ করে আমার মান সম্মান সব যাবে। লজ্জায় মাথা কাটা যাবে। না বাবা কিছুতেই তার নজরে পরা যাবে না। আমাকে সতর্কতার সাথে পালিয়ে থাকতে হবে। বাবাগো সেদিন লিফটে কি অবস্থা করেছিলো। আজ ও তেমন করলে একেবারে শেষ। আব্বু আমায় খুব বকবে।
একটা ছেলে এগিয়ে এসে আমার দিকে কোল্ড ডিংক্স এর গ্লাস এগিয়ে বললো,
‘ ম্যাম একটা নিন।’
‘ নো থ্যাংক্স!’
‘ কেন ম্যাম একটা অন্তত নিন। একা একা খালি মুখে বসে আছেন।’
‘ আমি এসব খাই না।’
‘ কিন্তু…
‘ জুস দিন।’
‘ আচ্ছা ‘
বলেই জুসের গ্লাস দিয়ে চলে গেলো। আমি গ্লাস হাতে বসে রইলাম গোমড়া মুখে। পিপাসা পেয়েছে কিন্তু খেতে ইচ্ছে করছে না। এই খানে এসে আমি চমকের উপর চমক পেয়েছি খাওয়া আর আসবে কি করে। আম্মু আব্বু কিছুটা দূরে তাদের বন্ধু দেয় সাথে আড্ডা দিচ্ছে আর আমি চুপচাপ লুকিয়ে এক স্থানে বসে আছি ভাবা যায়।
শয়তান মাইয়া তুলি আমাকে চারটা পর্যন্ত নিয়ে ঘুরেছে শপিং মলে। রাগ আমার মাথায় উঠে ছিলো। আমার হাতে আইসক্রিম কিনে দিয়ে ও এক বছরের ড্রেস মনে হয় কিনলো। কিন্তু না মাত্র একটা স্কাপ, একটা ঘড়ি ও নেলপালিশ কিনেছে এতেই ওর দুই ঘন্টা লেগেছে ভাবা যায়। এই মাইয়া এতো দাম ভনিভনা করে তার তুলনা নাই। এক জিনিস কিনতেও দশ দোকান ঘুরে। আমি রাগ দমিয়ে দাঁত চেপে এক জায়গায় দাঁড়িয়ে ছিলাম।বাসায় আসার পর জানতে পারি আব্বুর কোন এক বন্ধুর মেয়ের জন্মদিনে যেতে হবে। ফ্রেশ হয়ে ঘুম দেয়। সন্ধায় মায়ের ধাক্কানিতে উঠে বসি।
‘ তোর আব্বুর বন্ধুর মেয়ের বাথর্ডে পার্টিতে যেতে হবে ভুলে গেলি নাকি। তারাতাড়ি ফ্রেশ হয়ে রেডি হয়ে নে। এখন বের হবো আমরা।’
আমি বিরক্তিকর মুখ করে বলি, ‘ আমার ঘুম পাচ্ছে খুব। তোমরা যাও আমি যাব না।’
‘ কি একা একা বাসায় থাকবি। অসম্ভব! চুপচাপ রেডি হয়ে আয়। নাহলে এইভাবেই নিয়ে যাব।’
‘ ধ্যাত। বিরক্ত হয়ে ওয়াশ রুমে ঢুকতে হলো। আম্মু আমার জন্য ড্রেস বিছানার উপর রেখে গেছে। এই গাউন এখন পরতে হবে ভাল্লাগে না। সবুজ রঙের গাউন পড়ে রেডি হয়ে নিলাম। আম্মু এসে চুল বেঁধে দিলো সুন্দর করে। চোখে কাজল ও ঠোঁটে হালকা গোলাপি লিপস্টিক দিয়ে বেরিয়ে পরলাম।
এখানে এসেই আব্বু বন্ধুর মেয়েকে দেখে চোখ দুটো বড় বড় হয়ে গেলো এই তো সেই অসভ্য মেয়ে। আমাকে ওই দিন ধাক্কা দেওয়া ছেলেটার হয়ে অপমান করে ছিলো।
আমি কটমট করে তাকিয়ে আছি। তার একটু পরেই আমার চোখ গেলো ইহান ছেলেটার দিকে। যে আমায় ধাক্কা দিয়েছিলো। নামটা জানতে পেরেছি লিফটে থেকে।তার বন্ধু তাকে এই নামে সম্বোধন করেছিলো। সেখান থেকে নামটা শুনে নিয়েছি।
ছেলেটা হাসছে কিছু বলে। তখন ওই বাথর্ডে গাল গাল ফুলিয়ে ইহানে সামনে গিয়ে কিছু বললো। ইহান হাসি হাসি মুখটা গম্ভীর করে কিছু বললো। ফারিয়া কেকের সামনে চলে এলো গাল ফুলিয়েই। ফারিয়া ওই মেয়েটার নাম। আব্বুর থেকে জেনেছি। কেক কাটলো তখন ইহান ছেলেটা একটা বক্স নিয়ে দিলো ফারিয়ার দিকে। ফারিয়া তার রাগ মাটি করে খুশি হয়ে জরিয়ে ধরলো ইহানকে। আমার দিকে তাকালো ইহান আমি সাথে সাথে পেছন ঘুরে …
‘ এই যে মিস ঝগড়ুটে!! আপনি এখানে কি করছেন?’
আচমকা কথার আওয়াজে চমকে ভাবনা থেকে বেরিয়ে এলাম। সামনে তাকিয়ে আমার প্রাণ যায় যায় অবস্থা সামনে ইহান ছেলেটা তাকিয়ে আছে দুষ্টু হাসি দিয়ে। আমি এতোটা চমকালাম যে আমার হাতে ধরে রাখা জুসের গ্লাস হাত থেকে পরে আমার পোশাকটা নষ্ট হয়ে গেলো। সাথে গ্লাসটা ও নিচে পড়ে ঝনঝন শব্দ করে গড়িয়ে পড়ে ভেঙে গেলো। আমি ভয়ার্ত চোখে গ্লাস থেকে চোখ সরিয়ে সামনে তাকালাম। ইহান এসব থেকে হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে আছে।
আমি ভাবছি ছিঃ কি করলাম এটা। আত্নীয় বাড়ী এসে কি আকাম করে বসলাম। কি ভাববে আমাকে! লজ্জায় লাল হয়ে উঠলো আমার মুখ মন্ডল। আশেপাশে আড়চোখে তাকিয়ে দেখলাম অনেকেই আমার দিকে তাকিয়ে আছে। লজ্জা আমি আরো কুঁকড়ে গেলাম। নিজের জামা ভিজে গেছে সেদিকে আমার খেয়ালই নাই।
আম্মু আব্বু দূরে ছিলো বিধায় এসব তাদের নজরে পরে নি। আমি নিচু হয়ে বসে আছি সবাই দুই সেকেন্ড তাকিয়ে নিজেদের কে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পরেছে। ইহান এখনো আমার সামনে দাড়িয়ে আছে। আমি ভাবছি এই ছেলে যায় না কেন গেলে তো আমি উঠতে পারি। কিন্তু এর সামনে আমার উঠতেও সংকোচ হচ্ছে।
‘ এটা কি হলো? এতো ভয় পেলে কেন আমাকে?’
আমি কাচুমাচু মুখ করে তাকালাম, ‘ আপনি প্লিজ যান এখান থেকে। আর দয়া করে ফোনের জন্য এখানে সিনক্রিয়েট করবেন না। এখানেই সবার সামনে এসব বললে আমাকে খুব…..
‘আরে ওয়েট ওয়েট, তোমাকে কে বললো আমি এখানে ওইসব বলতে এসেছি?’
‘ তাহলে কেন এসেছেন? আমি জানি আপনি আবার ফোন, টাকা চাইবেন!’
‘ আরে না। আমি তো তোমার কাছে এলাম আড্ডা দিতে। তুমি এখানে একা বসে আছো। তাই দেখতে পেয়ে এলাম। ‘
‘ কি আপনি আমার সাথে আড্ডা দিতে এসেছেন?’ অবাক গলায় বললাম।
‘ ইয়েস। আর লিফটের ব্যবহারের জন্য সরি। আসলে আমার মাথাটা তখন খুব গরম ছিল। আর গরম হবেই না কেন বল? কেবল কিছুদিন আগে ফোনটা কিনেছি আর বেশিদিন ইউজ করতে পারলাম না তার আগেই শেষ ওইটা তো ঠিক ও করা যাবে না। ফোনের চিন্তায় আমার মাথাটা খারাপ হয়ে গেছিলো কি থেকে কি করেছি কিছুই বুঝতে পারি নাই। দোষটা আসলে আমাদের কারোরই না এইটা একটা এক্সিডেন্ট।’
ছেলেটার কথা শুনে একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললাম। উনি আর ওমন বিহেভ করবে না জেনে আমার বুকের উপর থেকে যেন পাহাড় নেমে গেল। কি দুশ্চিন্তায় ছিলাম এই কয়দিন।
‘তুমি আমাকে দেখে এতটাই ভয় পেয়ে গেছো যে নিজের জামাটা নষ্ট করে দিলে! আবার আমার ভয়ে এই এইখানে বসে আছো তাই না?’
আমি লাজুক হেসে মাথা নাড়ালাম। আমার মাথা নাড়ানো দেখে ওনি হা হা করে হাসতে লাগলো।
‘ওরে বাবা দুইদিন যে ঝগড়া করলে এখন আবার তুমি আমাকে দেখে ভয় পাও! হা হা হা
আমিও হাসলাম।হাত দিয়ে জামা মুছছি। তা দেখে বললো,
‘ ওয়েট টিস্যু এনে দিচ্ছি।’
বলেই এগিয়ে গিয়ে টিস্যু এনে আমার দিকে বাড়িয়ে দিলো। আমি কাচুমাচু করে তা নিলাম।
‘ তুমি এখানে কিভাবে?’
‘ এটা আমার আব্বুর বন্ধুর বাসা।’
‘ ও আচ্ছা। তোমার নামটা?
‘ মানে?’
‘ মানে তোমার নামটা কি যেনো? এতো ঝগড়া করলাম কিন্তু এখনো তোমার নামটাই জানা হলো না?’
আমি হেসে উঠে বললাম, ‘ ঊষা।’
.
‘ কি বললি ওই ছেলের সাথে তোর সব মিটমাট হয়ে গেছে!’
‘ হুম এক কথা আর কতো বার জিজ্ঞেস করবি বলতো। আমি তো এসেই সব তোকে বললাম। কি হয়েছিলো সেদিন। ছেলেটাকে যতটা খারাপ ভেবেছিলাম ততটা না।’
‘ আসলেই আমার তো প্রথম থেকেই ভালো লেগেছে আহা কি সুন্দর দেখতে ঠোঁট গুলো লাল টকটকে। হাসলেই গালে টোল পরে। আমি না প্রেমে পরে গেছি রে দোস্ত। কিন্তু একি করলি সব মিটমাট করে ফেললি এখন আমি ওই হ্যান্ডসাম কে কই পামু।’
তুলির দিকে বিরক্তিকর চোখে তাকিয়ে বললাম,
‘ তুই কি চাইছিলি এই ঝামেলা না মিটুক।’
‘ আরে এমন করে তাকাচ্ছিস কেন? আমি তো জাস্ট এজন্য বলেছি কারণ এই উসিলায় ওই ছেলেটা আমাদের ফলো করতো আর আমি ওকে পটিয়ে নিতাম। ‘
‘ চুপপ ফাজিল মেয়ে।
স্যার এলো। ক্লাস চলতে লাগলো। তুলি আমাকে ডিস্টার্ব করছে কথার জুলি খুলে।
‘ আরে চুপ যা না প্লিজ। কিছু বুঝতে পারছি না। আমাকে শান্তিতে ক্লাস করতে দে নাহলে আমি অন্য সিটে গিয়ে বসবো বলে দিলাম।’
‘ ধুর তোর সাথে কথা বলেও শান্তি নাই। এতো পড়া পাগল কেউ হয়। এতো পড়ে কি হবে। কয়দিন পর তো বিয়ে করে শশুর বাড়ি গিয়ে রান্না করতে হবে।’
‘ চুপ করবি।’
এবার আর কথা বললো না। তুলি অমনোযোগী ভাবে বসে আছে।
স্কুল থেকে বের হয়ে আজ কেন জানি হাঁটতে হচ্ছে করলো। কিছুটা পথ হেঁটে তারপর রিকশা নেবো। যেই ভাবা সেই কাজ। ব্যাগের ফিতা ধরে লাফিয়ে লাফিয়ে হাঁটছি আর এদিক ওদিক তাকাচ্ছি। সামনে আমড়া ওয়ালা পেলাম। দেখেই আমার জিভে জল চলে এলো। রোড পার হতে হবে। এটা করতে খুব ভয় পাই আমি কিন্তু আমড়া খাওয়ার লোভ এ সব ভুলে দৌড় দিলাম কিন্তু মাঝরাস্তায় আসতেই পা থেমে গেল। হাত পা কাঁপছে আমার। সামনে থেকে মালপত্রের বড় গাড়িটা এগিয়ে আসছে। আমি তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে আছি। নড়তে পারছি না। পা যেনো আটকে আছে এখানে। সারা শরীর কাঁপছে ভয়ে। আমার এই এক বাজে অভ্যাস, চাইলেই এই গাড়ি আসার আগেই রোড ক্রস করা যাবে কিন্তু আমার পক্ষে সম্ভব না। আমি এই ক্ষেত্রে অত্যন্ত ভীতু। ভয়ে আমি নড়তেই পারবো না এখনো
পারছি না। আমি চোখ বন্ধ করে বুকে হাত রেখে আল্লাহ কে ডাকছি। এখন কি এই গাড়ির নিচে চাপা পরে আমাকে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করতে হবে। আব্বু আম্মুর হাসি মুখটা ভেসে উঠছে। তুলির বিরক্ত মনে পরছে। ইশ সবাইকে ছেড়ে আমাকে এতো তাড়াতাড়ি মরে যেতে হবে। খুব কষ্ট লাগছে চোখ দিয়ে টপটপ করে জল গড়িয়ে পরছে। এই মুহূর্তে আমার নিজেকে পৃথিবীর সবচেয়ে নিরিহ লাগছে।
গাড়ির হর্ন কাকে বাজছে কথাও আসছে কারা যেন সরতে বলছে আমি তো সরতে পারছি না। এই বুঝি নিঃশ্বাস টা বন্ধ হয়ে যাবে ঊষা নামক মিষ্টি মেয়েটি মরে যাবে এই সুন্দর ভুবন ছেড়ে। আব্বু আম্মু আমি মরে গেলে খুব কষ্ট পাবে একটা মাত্র মেয়ে তাদের আমি। কতো শত চিন্তা করছি তখন একটা পুরুষালী ঠান্ডা হাতের স্পর্শ পেলাম নিজের হাতে। সাথে টেনে নিয়ে সে আমাকে ধাক্কা দিলো পরতে পরতে পরলাম না। আমি চমকে চোখ মেলে তাকালাম। সামনের মানুষটির দিকে তাকিয়ে অস্পষ্ট সুরে বলে উঠলাম, -‘ইহান!
#চলবে……
( ভুল ত্রুটি হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।)