#এক_চিলতে_রোদ-২,১২,১৩
#Write_Nondini_Nila
১২.
পরদিন তুলি চলে আসে সকাল সকাল। তুলি এসেই ইহানকে দেখে চমকে যায়। আর ইহানের কাছে গিয়ে কি যেন কথা বলে, আমি ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছি। ও এসে আমার বাহু খামচে ধরে রুমে আসে। আর এসেই কিভাবে গায়ে হলুদ এ শাড়ি পরবে তা নিয়ে আলোচনা করতে লাগলো। রিমা এসে আমাদের নিয়ে মাঠে এলো। এখানে গায়ে হলুদ এর আয়োজন করা হচ্ছে। স্টেজ সাজানো হচ্ছে। আর পাশে দাঁড়িয়ে ইহান তাদেরকে দেখিয়ে দিচ্ছে কিভাবে কি করতে হবে। আমরা চারপাশে ঘুরে দেখছি।
‘আমার না পা ব্যাথা করছে রে।’ তুলি বলেই পা উঁচু করে দেখালো কাটা জায়গা।
‘ কাটলো কি করে?’ রিমা বললো।
‘ আর বলিস না। আমার শয়তান মামাতো ভাই এর জন্য। একটু বসার কিছু দে না মনে হচ্ছে পায়ে ময়লা গেছে।’
রিমা বললো , দাঁড়া দিচ্ছি।’
রিমা চেয়ার খুঁজবে এমন সময় বাসা থেকে ওর ডাক পরলো আঙ্কেল ডাকছে কোন দরকারে মনে হয়।
‘ এই আব্বু ডাকছে। আমি শুনে এসে তোকে চেয়ার দেবো একটু দাঁড়া।’
বলেই রিমা দৌড়ে বাসায় চলে গেলো।
এবার তুলি আমাকে চেয়ারে ব্যবস্থা করতে বললো।ওর নাকি পা চুলকাচ্ছে। না দিলে বসেই পরবে।
আমি বললাম, তাহলে চল বাসায় গিয়ে দেখি।
‘ যেতে পারলে তো।’
আমি বললাম, ‘ কি দিবো। এখানে কি আছে বসার? যে কয়টা চেয়ার সব তো দখল করা।’
‘ ওই যে ইহান ভাইয়ের পেছনে ওইটা দে না। ভাই তো না বসে ফোনে কথা বলছে তার ওইটা দরকার নাই। আমি একটু বসে দেখি ময়লা ঢুকে গেলো নাকি!’
বাধ্য হয়ে এগিয়ে গেলাম ইহানের দিকে তিনি অনেকক্ষণ ধরে দাঁড়িয়ে আছে বসছে না ওইটাই আনি। ইহান বাম হাত পকেটে রেখে ফোন কথা বলছে আমি পেছনে থেকে চেয়ার টেনে একটু সরাতেই ধপাস করে শব্দ চমকে পেছনে তাকিয়ে থমকে গেলাম। আমি চেয়ার টেনে ঘুরে গেছিলাম আর এদিকে ইহান আমি চেয়ার নিতেই চেয়ার বসতে গেছিলো আর ঘটলো অঘটন।চেয়ার না থাকায় তিনি ঘাসের উপর পড়ে গেছে। আমি মৃদু চিৎকার করে উঠলাম। ভয়ে আমি মুখে দুই হাত চেপে তাকিয়ে আছি। আমার জন্য ই তো পরে গেলো এখন আমি না জানি কতো বকা খাই। ঢোক গিলে দাড়িয়ে আছি। আসে পাশের সবাই হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে আছে। তারপর হো হো করে হেসে উঠলো। ইহান রাগে গজগজ করছে। চোখ মুখ লাল হয়ে গেছে। বসা থেকেই পেছনে ঘুরে আমাকে দেখে আরো রেগে গেলো। অগ্নি দৃষ্টি আমার দিকে নিক্ষেপ করলো। চোখ দিয়ে গিলে খাবে এমন তার চাহনী। আমি তোতলানো কন্ঠে বললাম,
‘ আমি ইচ্ছে করে এটা করি নি বিশ্বাস করুন। আমি তো ভাবছি আপনি হয়তো বসতে চান না তাই এটা নিতে এসেছিলাম।’
ইহান বসা থেকে দাঁড়িয়ে যায় আর কারো দিকে না তাকিয়ে সোজা চলে গেলো। আমি হাঁ করে উনার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলাম। এটা কি হয়ে গেলো। আর উনি আমাকে কিছু বললো না কেন? পড়ে নিশ্চয়ই এর জন্য আমাকে ভুগতে হবে সব ওই তুলির জন্য। উনি ব্যাথা ভালোই পেয়েছে। মুখটা ব্যথিত ছিলো। পেছনে থেকে তুলি ডাকছে আমি রেগে ওর কাছে গেলাম চেয়ার ছাড়া। ওর সাথে এক দফা ঝগড়া করে বাসার ভেতরে ঢুকে গেলাম।
রিমা কে দেখলাম সিঁড়ি বেয়ে নামছে আমাদের কাছে যাওয়ার জন্য। আমার সামনে পরলো রিমার ফুফাতো ভাই বোনেরা তারা কেবল এসেছে বোধ হয় সাজ পোশাক দেখে মনে হল।তারা বোধহয় বাইরে যাচ্ছিল কি যেন বলে হাসছিল। আমি তখন ভেতরে আসছিলাম তাই গেটের কাছে দেখা হয়ে গেল।
তাদের পাশ কাটিয়ে ভেতরে গিয়ে দেখলাম ইহান সোফায় বসে আছে। আমি ঢোক গিললাম আবার। রিমা এসে বললো,
‘কিরে চলে আসলি কেনো? আমি তো তাদের কাছে যাচ্ছিলাম তুলি কোথায়!’
‘ জানিনা। ‘
বলেই রুমে চলে এলাম। রিমা হা করে আমার রাগ দেখলো। ও গিয়ে তুলির কাছে সব শুনে হাসতে হাসতে শেষ রিমা। আমি রুমে এসে রিমঝিম আপুর কাছে বসলাম।
বারোটার আগেই রিমঝিম আপু আমাকে আর তুলি কে নিয়ে পালারে চলে এলো।রিমাকে আনতে চেয়েছিল কিন্তু রিমার অনেক কাজ। মেয়েটা বোনের বিয়েতে একটু আনন্দ করতে পারছে না। এ ডাক দিয়ে একটা কাজ দিচ্ছে তো আরেকজন ডাক দেয়ার আরেকটা কাজ হাতে ধরিয়ে দিচ্ছে।
তাই ও আসে নি রাগ করে রয়ে গেছে। আর কেউ বউয়ের সাথে পার্লারে আসার সময় নেই। সবাই যার যার সাজ পোশাক নিয়ে চিন্তিত। কিন্তু আমি আর তুলি আনন্দের সাথেই আপুর সাথে চলে এসেছি। বসে আছি দুই ঘন্টা ধরে। এখনো সাজ কমপ্লিট হয়নি। আরো অনেক সময় লাগবে এদিকে যাওয়ার সময় ঘনিয়ে আসছে। তুলি রাগ করে নিজে নিজেই কাপড় পরতে লাগলো পার্লারের একজন তা দেখে সাহায্য করে। গায়ে হলুদে এত সময় বিয়ের দিন যে কত সময় লাগবে আল্লাহ। আমি গালে হাত দিয়ে বসে আছি।আমার অবশ্য সাজগোজ দেখতে ভালোই লাগছে কিন্তু মনে মনে ভাবছি। আমি যদি এখন রিমঝিম আপুর জায়গা থাকলাম পাগল হয়ে যেতাম এত সাজগোজ নিয়ে আমি উঠে দাড়াতে পারতাম না। পুতুল হয়ে বসে আছে রিমঝিম আপু আর পালারে মহিলা গুলো ইচ্ছে মতো নাচাচ্ছে।
সাজ কমপ্লিট হয়েছে যাওয়ার ও সময় হয়েছে।কিন্তু রিমঝিম আপু বসে আছে বলেছে আমাকে সাজানো দেন না হওয়া পর্যন্ত যাবে না যতই সময় যাক না কেন! আমি বলছি,
‘আপু আমি এমনিতেও সাজগোজ পছন্দ করিনা। আর শাড়ি পরে নিজেকে সামলাতে পারি না। আমাকে নিয়ে ভাবতে হবে না আমি হলুদ গাউন এনেছি বাসায় গিয়ে পড়ে নিবো। এখন চলো প্লিজ বাসায় থেকে কত বার ফোন এসেছে তোমার ফোনে জানো তুমি! অনেক বকবে আর লেট করলে।’
আমি বললো, ‘সেসব তোমার ভাবতে হবে না তাড়াতাড়ি তুমি বসে পড়ো। তোমার জন্য এখন কিন্তু লেট হচ্ছে ঊষা।’
বাঙালি স্টাইলে কাপড় পরিয়ে দিল আমাকে। হাতে চুড়ি ও মুখে হালকা করে সাজিয়ে দিতে বললাম। চুলগুলো বাধতে সময় লাগবে তাই খোলা রাখলাম। কপালে ছোট টিপ, ঠোটে হালকা লিপস্টিক, কানে ঝুমকা, চোখে মোটা করে কাজল।
আমার ফোনটা বেজে উঠলো গাড়িতে উঠতে ই।
সবাই ফোনের যন্ত্রণায় ফোন অফ করে রেখেছে শুধু আমার ফোনটা অন ছিলো আর আমার ফোনে কোনো কল আসছিল না। এখন থেকে আমার ফোনে বাজতে শুরু করলো পার্স থেকে ফোন বের করে দেখি ইহান কল করেছে। তার নাম্বারটা আমি ইমা আপু্য সাথে যোগাযোগ করার পরেই সেভ করে রেখেছি।
‘ হ্যালো! ‘
‘তোমরা কোথায় আছো?’
‘আমরা এইতো গাড়িতে কেন?’
‘এত সময় কারো লাগে! আর রিমঝিম কোথায়! ওর ফোন অফ কেন! ফোন রিসিভ করছো না কেন’
‘আপুতো আমার সাথে আছে আপুর ফোনে না চার্জ নাই তাই অফ হয়ে গেছে!’
ডাহা মিথ্যে কথা বললাম আসলে রিমঝিম আমার কানের সাথে কান লাগিয়ে কথাগুলো শুনে এই মিথ্যে কথাটা বলতে বলল।
‘রিমজিমে কাছে ফোনটা একটু দাও তো!’
‘আচ্ছা দিচ্ছি!’
আপু ফোন কানে ধরার পর দুই তিনটা ঝাড়ি খেলো।
গাড়িতে থেকে নেমে হেঁটে আপুকে নিয়ে স্টেজে বসে দিয়ে এলাম।দেখি রিমা শাড়ি পড়ে সাজগোজ করে দাঁড়িয়ে আছে। খুব সুন্দর লাগছে। এরা তো দেখি বাসায় ভালো সাজতে পারে। রিমা ফুফাতো ভাই-বোনরা ও সবাই খুব সুন্দর করে শাড়ি পরে সেজেগুজে বসে আছে। এজন্য এরা কেউ যায়নি
তারা জানত ওখানে গেলে বউ ছাড়া আর কেউ সাজার টাইম পাবে না। আমি রিমার ফুফাতো ভাই-বোনদের দিকে তাকাতে তাকাতে হাঁটছি তখন কারো বুকের সাথে ধাক্কা খেলাম। কপালে হাত দিয়ে সামনে তাকিয়ে দেখি ইহান রেগে তাকিয়ে আছে। খুব হ্যান্ডসাম লাগছে ইহানকে। ইহান হলুদ পাঞ্জাবি পড়েছে।
‘ এ মেয়ে চোখে দেখো না? তোমার সব সময় সমস্ত ধাক্কা আমার সাথে খেতে হয় নাকি। ইচ্ছে করে ধাক্কা খাও তাইনা। হ্যান্ডসাম ছেলে দেখলেই ধাক্কা খেতে ইচ্ছে করে তাই না। আমার থেকে দূরে থাকবে সবসময় ইডিয়েট গার্ল!’
বলেই ইহান গটগট করে চলেই এলো। আমি হাঁ করে তাকিয়ে রইলাম। নিজেকে নিজেই হ্যান্ডসাম বলল। কি ভাব আমার বয়েই গেছে ওনার সাথে ধাক্কা খেতে। ঊষা ভেংচি কাটলো।
সামনে ইমা আপু কে দেখে তারাতাড়ি গেলাম আর তাকে জড়িয়ে ধরলাম। আপু হয়তো আমাকে দেখে অবাক হয়েছে।
‘ ঊষা তুই এইখানে?’ আপু আমাকে এখন তুই করেই বলে।
‘হ্যাঁ এটাতো আমার ফ্রেন্ডের বাড়ি!’
‘ও আচ্ছা! ভালোই হয়েছে আবার আমাদের দেখা হয়ে গেল।’
‘ হুম তোমাকে খুব সুন্দর লাগছে আপু।’
‘তাই তো কেউ খুব সুন্দর লাগছে।’
বাকিটা সময় আমি আপুর সাথে থাকলাম ওই বাসায় যাওয়ার সময় আপুর সাথে বসলাম আর অনেক কথা বললাম। অনেক আড্ডা দিলাম।
#চলবে…….
( ভুল ত্রুটি হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।)
#এক_চিলতে_রোদ-২
#Writer_Nondini_Nila
১৩.
বরের গায়ে হলুদ দেওয়া শেষ করে খাওয়া-দাওয়া শেষ করে আবার গাড়িতে উঠে বসলাম। এইবার ইমা আপু আমার সাথে বসে নাই। তার গাড়ি ফুল এজন্য আমাকে অন্য কারে উঠতে হলো। কিন্তু এখানে এসে রিমাকে পেয়ে স্বস্তি পেলাম। দুজন দুই জানালায় বসে আছি মাঝখানে আরো দুজন বসা যাবে। তুলি পেছনের সিটে বসেছে। ওকে ডাকলাম কিন্তু আসলো না। কারণ ওর ও জানালা লাগবে। এবার রিমার মামাতো ভাই রাতুল এসে গাড়ি বসলো। ও একাই দুইজনের জায়গা দখল করে বসেছে।এতো মোটা এই ছেলেটা আমি চোরা চোখে ওকে একবার দেখে আল্লাহ আল্লাহ করছি।আর যেন কেউ না আসে তাহলে আমি চেপ্টা হয়ে যাব চিপায় পরে। রাতুল কে দেখে আমার ই অস্থির লাগছে। সব গাড়ি ছেড়ে দিয়েছে এবার আমাদের টা ছারবে কিন্তু সামনে থেকে অতুল ভাই ইহান ইহান করে ডাকছে। ইহান এগিয়ে এলো,
‘ ইহান পেছনের সিটে উঠে পর একটা সিট খালি আছে।’
‘থ্যাংক গড অবশেষে সিট পেলাম। মহিলা মেয়ে গুলোকে সিট দিতে দিতে আমিই গাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়েছি। ভাব একবার।’
‘ হুম দেখছি। উঠে পর। ‘
ইহান আমার পাশে এসে দরজা খুলল। আমি অসহায় মুখে তাকিয়ে আছি। একবার রাতুল এর দিকে তাকিয়ে ঢোক গিললাম।
ইহান আমার দিকে তাকিয়ে বলল, ‘ ভেতরে যাও। ‘
আমি আঁতকে ওঠে বললাম, ‘ আমি জানলার পাশে বসবো। আপনি ভেতরে যান প্লিজ।’
ইহান গম্ভীর মুখ করেই বললো, ‘ নেমে দাঁড়াও।’
আমি নেমে পরলাম। ইহান ভেতরে গিয়ে বসলো আমি একটুখানি জায়গার দিকে তাকিয়ে আছি আজকে যে আমার কি অবস্থা হবে? কাঁদো কাঁদো মুখ করে উঠে বসলাম।
‘মুখ যতই মলিন করো না কেন? তোমাকে জন্য আমি এখন গাড়ি থেকে নামতে পারবো না সরি!’
ইহানের কথা চমকে তাকালাম।
‘ আমি আপনাকে কি বলেছে আমার জন্য গাড়ি থেকে নেমে যান!’ নাক ফুলিয়ে।
‘ বললে ও নামবো না সেটাই বলেছি।’
‘ আপনি একটা ফালতু লোক।’
আমি জানালার দিকে ঘুরে গেলাম।
এতো চিপা হয়েছে যে আমি বাম ঘুরলে ডান দিকে আর ঘুরতে পারিনা। দাঁত চেপে সহ্য করছি কখন গাড়ি থামবে আর এই ঝন্ত্রণা থেকে নামতে পারবো।
ইহান এই চিপার মধ্যে ও আমার থেকে দূরত্ব রেখে বসেছে আমি তাই একটু স্বস্তি পাচ্ছি। আমিও গাড়ির দরজার সাথে লেপ্টে আছি। রিমা চেঁচিয়ে উঠলো।
‘ আমি এতো চিপায় বসতে পারুম না গাড়ি থামা। আমি নাইমা যাই। নাইলে এই রাতুল নামবো। আল্লাহ আমি শেষ।’
বলেই চিল্লাচিল্লি করতে লাগলো। অজ্ঞতা রাতুল নেমে পেছনে বসলো আর রিমার ফুপাতো বোন মিনা আসলো। চিকন করে মেয়েটা এখন শান্তি। সবাই নড়েচড়ে বসলাম। আমি ইহানের দিকে তাকিয়ে দেখি ফোন টিপছে।
তার এসবে কোন হেলদোল নাই। আমি সিটে হেলান দিয়ে একবার বাইরে তো একবার সামনে তাকাচ্ছি। ওইভাবে কখন ঘুমিয়ে গেছি খেয়াল নেই। ঘুম ভাঙলো রিমার চিৎকার এ। চোখ মেলে দেখি গাড়িতে আমি একাই বসে আছি। সবাই নেমে গেছে। রিমা কপাল কুঁচকে তাকিয়ে আছে রাগী চোখে। আমি বললাম,
‘ সবাই কোথায়?’
‘সবাই চলে গেছে।’
‘ কই গেছে? এটা কোন জায়গা?’
‘ ওরে আল্লাহ তারাতাড়ি নাম। আমরা চলে আসছি এটা আমাদের বাড়ি ভালো করে দেখ।’
আমি জানালা দিয়ে তাকিয়ে ফট করেই নেমে গেলাম। হামি দিতে দিতে হাঁটছি কখন ঘুমালাম কিছুই মনে নাই। ভেতরে আসতেই তুলি দুই হাত ভর্তি হলুদ নিয়ে গেছে আমার মুখে লাগিয়ে দিলো। আমি ঘুম ঘুম ঝুঁকে ওকে থামাতেও পারলাম না। রিমঝিম আপুকে হলুদ দিয়ে সবাই নিজেদের কেই লাগিয়ে ভূত করে দিচ্ছে। আমি যোগ হলাম সবার সাথে। লাফালাফি নাচানাচি করতে করতে একটা বেজে গেলো। রুমে এসে ড্রেস চেঞ্জ করেই থপ করে বিছানায় শুয়ে পরলাম।
পরদিন আর কাউকে পার্লারে নিয়ে যেতে হলো না। পার্লারে লোক বাসায় আসবে। আপু দশটায় দরজা বন্ধ করে বসলো আর খুললো একটার পর। এদিকে বর এলো তিনটায় আমরা ফিতা ফুল আর বিভিন্ন রঙের শরবত নিয়ে গেটে দাঁড়ালাম। ইহানকে আজ একবার ও দেখি নাই। পঞ্চাশ হাজার টাকার ত্রিশ হাজার এ গেট থেকে সরতে হলো। গেট থেকে ফুলের থালা হাতে পেছনে সরতে গিয়ে কার সাথে জানি একটা ধাক্কা খেলাম। বিরক্ত হয়ে পেছনে তাকিয়ে দেখি ইহান।এদিকে আমার হাতের থালা ধাক্কা খেয়ে পরে গেলো আমি প্লেটের দিকে তাকিয়ে জ্বিভে কামড় দিলাম। তারাতাড়ি তুলে নিয়ে মুখে হাসি আনার চেষ্টা করে ইহানকে সরি একটা ভো দৌড়ে চলে এলাম। আসলে আমি আরেকটা আকাম করছি। তা হলো আমার এই হিল জুতো দিয়ে ইহানের কালো শো জুতায় পা লাগিয়ে ব্যাথা ও সাথে জুতো সাদা করে ফেলেছি। তা দেখে ভয়ে আমি দৌড় দিয়েছি।
এদিকে ইহান কটমট চোখে ঊষার চলে যাওয়া দেখলো।
আমি একদম রিমঝিম আপুর রুমে এসে থেমেছি। হাঁপাতে লাগলাম এসে। রিমঝিম আপু জিজ্ঞেস করলো কি হয়েছে? এমন করছি কেন আমি কিছু বললাম না। আপুর পাশে বসে রইলাম। তখন তুলি এসে খাওয়ার জন্য নিয়ে গেলো আমাকে। খেতে বসে ও শান্তি নাই। ভিডিও ম্যান আমাদের এইখানেই দাঁড়িয়ে ভিডিও করছে। তাই খেতে ও পারছি না একটু পর পর দাঁত কেলিয়ে হাসছি। খাওয়া শেষে গাউনের এক কোনা ধরে হাত ধুয়ে এলাম। এবার ইহানকে দেখলাম। বরের সাথে স্টেজে আছে অনেকের সাথে। সেখানে বররা খাচ্ছে আর তার তদারকি করছে কয়েকজন। ইহান ও এটা ও জিজ্ঞেস করছে। লাল পাঞ্জাবি তে ইহানকে খুব সুন্দর লাগছে। আমি তাকিয়ে রইলাম।
বিয়ে পরানো শেষ হলো সন্ধ্যায় পর। এবার বর বউকে একসাথে বসানো হলো।আর ফটো তুলার ধুম পরলো এবার আমি একাই বাইরে এসে বসে রইলাম। গরম লাগছে এতো মানুষের মধ্যে বসে থাকতে ভালো লাগে না। একটা ছেলেকে দেখলাম আমার পাশে এসে বসলো চেয়ার টেনে। আমি ভ্রু কুঁচকে তাকালাম। ছেলেটা বর পক্ষের।
এসেই নাম কি জিজ্ঞেস করলো। আর নিজের নাম ধাম একাই বললো। কয়েকটা কথা শুনেই বুঝতে অসুবিধা হলো না কেন এমন করছে। ভাব জমানোর চেষ্টা করছে। ফোন নাম্বার চেয়ে থামলো ওই শাহিন ছেলেটা। ছেলেটার নাম শাহিন। আমিও সুন্দর নাম্বার দিয়ে দিলাম। কিন্তু এটা আমার নাম্বার না আমার তৈরি করা বানানো নাম্বার। যাইহোক ছেলেটা আমার নাম্বার পেয়ে খুশী বাক বাকুম হলো।
আমি চেয়ার ছেড়ে উঠে বাসার ভেতরে ঢুকতে গিয়ে দেখি ইহান গেটের সামনে দাঁড়িয়ে রাগী চোখে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। আমি তাকে দেখেই তখনকার পারা দেওয়ার কথা মনে পড়ে গেল। আমি ভয় পেয়ে গেলাম। মারবে নাকি কিন্তু কিছু হলো না আমি কাচুমাচু মুখ করে তারাতাড়ি ভেতরে ঢুকে গেলাম। ইহান রাগে গজগজ করছে ওইখানে দাঁড়িয়েই।
বিদায়ের সময় আরেক দফা কান্নার রোল পরলো।
পরদিন ওই বাসা যাওয়ার পর শাহিনের সাথে দেখা হলো। ছেলেটা আমাদের খাবারের তদারকি করছে। আমার কাছে এসে এটা ওটা দিচ্ছে লাগবে কিনা জিজ্ঞেস করছে আমার বিরক্ত লাগছে কিন্তু কিছু বলতে পারছি না। হেসে না করছি। অসহ্য। আর তুলি তো সুযোগ পেয়ে খাটিয়ে মারছে এটা ওটা চেয়ে আবার হেসে একাকার। আমার কানে ফিসফিস করে বললো,
‘ দাঁড়া পোলাটারে শিক্ষা দেয়। তোরে পছন্দ করছে মনে হয়। এখন ই সুযোগ খাটানোর।’
একবার লবণ, একবার টমেটো, শশা, লেবু, হার খোশ, বলে ছেলেটাকে নাচাচ্ছে। আমি হাসতে হাসতে শেষ।
খাবার শেষে শাহিন আমাকে বললো , ‘ তোমার নাম্বার অফ কেন এতো বার কল করলাম ঢুকলো না।’
আমি হকচকিয়ে গেলাম।
‘ ওই আসলে চার্জ ছিলো না তাই বন্ধ হয়ে গেছে। বিয়ে বাড়ি বুঝতেই তো পারছেন। আর আপনি আমাকে এতো কল করেছেন কেন?’
আমার কথা শুনে শাহিন থতমত খেয়ে গেলো।
#চলবে…