#এক_চিলতে_রোদ-২,১৪,১৪ ( ২য় অংশ)
#Writer_Nondini_Nila
১৪.
রিমঝিম আপুর রুমে আসলাম। এখনো রুমে ফুলের ছড়াছড়ি। আমি গিয়ে রুমটা ভালো করে দেখলাম। একটা ড্রেসিং টেবিল, আলমারি আর খাট ব্যতীত আর কিছু নাই রুমে। সবগুলোই নতুন মনে হয় বিয়ের আগে রুমটা নতুন করে সাজিয়েছে। রিমঝিম আপু বিছানায় বসে আছে তার পাশে আছে তার ননদ শাশুড়ি তাদের সাথে তার ফটো শুটিং হচ্ছে। আমি রুম থেকে বেরিয়ে এলাম তুলির হাত ধরে এক তলায় বাসাটা ঘুরে ঘুরে দেখলাম। এখানে রিমঝিম আপু ভালোই থাকবে মনে হচ্ছে বাসার প্রত্যেকটা মানুষই ভালো। শুধুই বড় ভাইয়ের বউ টা বাদে। তেনার সাজ দেখে তো আমি ভড়কে গেছিলাম। বউয়ের থেকেও তিনি বেশি সেজেছে একদম লাল টকটকে একটা বেনারসি পড়েছে ফর্সা এমনিতেই তার ওপর গর্জিয়াস আজ একদম নতুন বউ লাগছে তাকে। আর রিমঝিম আপু আজকে মিষ্টি কালারের শাড়ি পড়েছে তাকেও সুন্দর লাগছে কিন্তু ওই বড় ভাবি টা কে বেশি সুন্দর লাগছে। আমিতো রিমঝিম আপুর ওই বড় ভাবি টা কে দেখেছি আগে আর আমি ভেবেছি এ মা রিমঝিম আপুর চেহারা বদলে গেলে কিভাবে? আজকের সাজে রিমঝিম আপুকে একদম চেনাই যাচ্ছে। পরে দেখি না স্টেজে বসা মেয়েটা রিমঝিম আপু আর নিচে দাড়িয়ে স্টাইল করে ছবি তোলার মেয়েটা বড় ভাবি।
তারপরে আমি বিরক্ত মুখে ওই ভাবি টার দিকে তাকিয়ে ছিলাম। বউ এর থেকে বেশি সাঁজার কি দরকার? মনে হচ্ছে আজ উনার বিয়ে। আজকে তো বউ সাজবে সবচেয়ে বেশি সুন্দর করে। সবাই থেকে স্পেশাল হবে তার সাজ। আর এই মহিলাটা কিনা একদম নতুন বউ সেজে বসে আছে।
ফিরানির সবাই চলে গেছে শুধু দুইটা গাড়ি আছে সেখানে রিমা আমাকে আর তুলিকে রেখে দিয়েছে রিমঝিম আপুর সাথে আমরা যাব বলে।তাই আমাদের রাতেই যেতে হলো। বেশি রাত করতে দিল না কারণ আপুর সাথে অনেক গহনা আছে। আমাদের আগে বেরিয়ে পরাটাই ভালো রাস্তায় আবার ডাকাতের কবলে পড়ার চান্স থাকতে পারে। সাড়ে আটটার বের হতে হল তবুও।
এই সারাটা সময় শাহিন আমার পিছনে ঘুরঘুর করেছে।আমি পাত্তা দেইনি নিজের মত ঘোরাফেরা করেছি। পাশে ট্রেন রাস্তায় গেছিলাম তখন শাহিন কথা বলতে আসে। আমি বিরক্তি হলেও হাসিমুখেই তার সাথে কথা বলার মনস্থির করি।একদিনই তো কাল বাদে আর এর সাথে দেখা হবে না তাই একদিনে খারাপ ব্যবহার করতে মন চায়নি আমার।শাহিন হাসিমুখে এগিয়ে এসে আমাকে কি যেন বলতে যাবে তখন কোথা থেকে ইহান চলে আসে আর শাহিনের কাঁধে নিজের হাত রেখে ফিস ফিস করে কি যেন বলে উলটো ঘুরে যায়। দেখতে পেলাম শাহিন নের মুখেও হাসি সেই হাসিটা কেন জানি আমার লোকদেখানো মনে হলো। দুজনে কথা বলতে বলতে উল্টো দিকে ঘুরে সামনে এগিয়ে গেল আমি হা করে তাকিয়ে রইলাম দুজনের দিকে। এদের আবার এত সব ভালো সম্পর্ক কখন তৈরি হলো। একদম কাঁধে হাত রেখে হেসে হেসে কথা বলছে।
‘ এই ঊষা ওইভাবে কি দেখছিস?’
‘ কিছুনা।’
‘ ওইটা তোর শাহিন না?’ হাত উঁচু করে দূরের শাহিন আর ইহানকে দেখিয়ে বলে তুলি।
ওর কথা শুনে আমি রেগে বলি, ‘ আমার শাহিন মানে কি? একদম আলতো ফালতু কথা বলবি না।’
‘ ওকে রাগিস না। কিন্তু ওই ছেলের সাথে ইহান কি করে?’
‘ কি ভাবে বলবো?’
‘ হুম তাও কথা চল সবাই চলে যাচ্ছে।’
আমরা সবাই ফিরে আসি।
রিমঝিম আপুদের কারে আমরা বসলাম না। অন্যটায় বসলাম। ইহান ও আমাদের কারে সে ড্রাইভিং করছে। পাশে রিমঝিম আপুর শশুর বাড়ির লোক। যারা ভাইয়ার সাথে যাচ্ছে। পেছনে আমরা তিন বান্ধবী। আমি কিনারে মাঝখানে তুলি।
এই বাসায় আসার পর রান্না ঘরে উঁকি ঝুঁকি মারছি নতুন বরের জন্য পিঠা তৈরি হচ্ছে। আর আমার পিঠা খুব পছন্দ। রিমা সেটা জানে তাই তো বান্ধবী টা সবার আগে রান্না ঘরে থেকে লুকিয়ে পিঠা এনে দিলো। আমি লাফিয়ে খেতে লাগলাম।
‘লুকিয়ে খা। কেউ দেখলে বকবে। নতুন জামাইয়ের আগে তোকে পিঠা দিছি কিন্তু। বলেই রিমা চলে গেলো।
রুমে এসে বিছানায় পা তুলে খাচ্ছি। হঠাৎ চোখ গেলো দরজার দিকে ইহান তাকিয়ে আছে আমার দিকে। আমার মুখে এখনো পিঠা।
আমি গোল গোল চোখ করে তাকিয়ে লজ্জা পেলাম। দেখে ফেললো! আমি মাথা নিচু করে সামনের বাটির দিকে তাকালাম এখনো তিনটা পিঠা আছে আমি দুটা খাইছি। ছিঃ কি লজ্জা!
আমি আবার ও মাথা উঁচু করতে তাকাতেই ইহান বললো, ‘ চোর,’
আমি লজ্জা ভুলে গেলাম। তার বলায় রাগ উঠে
গেলো। চাপা রাগ নিয়ে বললাম, ‘ কি বললেন?’
‘ পিঠা চোর’ নির্লিপ্ত ভাবে বললো।
লজ্জায় অপমানে আমার মুখ লাল হয়ে উঠলো। বললাম,’ আপনি আমাকে চোর বললেন?’
‘ চুরি করে পিঠা খাচ্ছ? তো চোর বলবো না তো কি বলবো?’
আমি বিছানায় থেকে উঠে দাঁড়িয়ে পরলাম। ইহানের সামনে দরজার কাছে এসে দাঁড়িয়ে বললাম, ‘খবরদার আমাকে চোর বলবেন না! আমি চোর না এই পিঠা আমাকে রিমা দিয়েছে।’
‘ তো কি তুমি করো নি তো রিমা করেছে। সেই চুরি করা পিঠা এই তো হলো তাই না? না হলে তো আর রুমে লুকিয়ে বসে খেতে না! তুমি এত পিঠাখুর জানা ছিলো না তো। বাবাহ কেমন রাক্ষসীর মতো খাচ্ছিলে দম ও নিচ্ছিলে না…..
‘কি বললেন আমি রাক্ষসী?’ রাগে গজগজ করতে করতে বললাম আমি। সামান্য কয়টা পিঠার জন্য আমাকে রাক্ষসী বানিয়ে দিল কত বড় খচ্চর এই লোকটা।
‘ যেভাবে খাচ্ছিলে যে কেউ রাক্ষসী বলবে। আরেকটা কথা এইভাবে যদি অন্য খাবারগুলো খেতে তাহলে শরীরের এই হাল হতো না নাদুসনুদুস থাকতে শুটকি থাকতে না।’
‘ আপনি আমাকে আবার শুটকি বললেন? একবার চোর , একবার রাক্ষসী, এবার শুটকি বলছেন। নিজে কি তা দেখছেন একবার আয়না? আপনি একটা, হনুমান, গন্ডার, ইদুর, টিকটিকি, বিড়াল, খাটাশ…..
‘চুপপপ
ঠোঁটের উপর ঠান্ডা হাতের স্পর্শ পেয়ে কেঁপে উঠলাম। ইহান আমার একদম কাছে এসে দাঁড়িয়েছে। ডান হাতটা আমার ঠোঁটের উপর রেখে চুপ করিয়ে দিয়েছে।ইহানের স্পর্শ আমার সারা শরীর কেঁপে উঠলো। আমি ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলাম হাত। আর একপা পিছিয়ে এলাম।আমার হৃদস্পন্দন বেড়ে গেছে। ঢকঢক করে শব্দ হচ্ছে। আমি আরেক পা পেছতে গিয়ে ধপ করে পরে যায় মুখ থুবড়ে।
আমি থুতনিতে ব্যাথা পেয়ে আহ করে উঠে বসলাম। ইহান দাঁড়িয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি মাথা উঁচু করে তাকালাম আরো একবার লজ্জা পেলাম। ইহান হো হো করে হেসে উঠলো। আমি লজ্জা পেয়ে উঠার চেষ্টা করেও পারছিনা কি বিরক্তকর একটা অবস্থা। লজ্জায় আমার মাথা কাটা। এইভাবে ওনার সামনে আমি পরে গেলাম ছিঃ। আবার কেমন আমাকে লজ্জা দিয়ে হাসছে। লজ্জায় আরো কুঁকড়ে গেলাম।হাঁটুতে ব্যথা পাওয়ার জন্য উঠতে পারছি না। ইহান এটা লক্ষ্য করেছে আমি ভাবছি হয়তো বা আমাকে সাহায্য করবে উঠতে। কিন্তু আমাকে অবাক করে দিয়ে ইহান হাসতে হাসতে চলে গেলো। আমি হা করে তার যাওয়ার পানে তাকিয়ে রইলাম।
তুলি এসে বললো,’এই তুই এইভাবে ফ্লোরে বসে আছিস কেন?’
‘আমাকে টেনে তোল প্লিজ আমি উঠতে পারছিনা!’
‘কেন কি হয়েছে? উঠতে পারছিস না কেন?’
‘তোর পাল্টা প্রশ্ন করা একটা স্বভাব হয়ে গেছেরে তুলি। আমি কি এখানে শখ করে বসে আছি!একা উঠতে পড়তে পারলে নিশ্চয় ফ্লোরে বসে থাকতাম না।’
‘হ্যাঁ তাও ঠিক!’
‘বোন দয়াকরে তুই ঠিক ভুল পরে বিচার করিস আমাকে আগে টেনে তোল।’
তুলির সাহায্যে বিছানায় উঠে বসলাম। তারপর ওকে সব বললাম ও শুনে হাসতে হাসতে শেষ। আমি পড়ে গিয়ে ব্যথা পেয়েছি সেটা শুনে ওর হাসি পাচ্ছে কি অদ্ভুত মেয়ে রে বাবা।
আমার আর পিঠা খাওয়া হলো না। বাকি পিঠা তুলি গল্পের ছলে শেষ করে ফেলল। আমি রেগে বিরবির করে বললাম,
‘আমার পিঠাগুলো তুই শেষ করে ফেললি। রাক্ষসী তো তুই আমার থেকে ও। আর উনা কি না আমাকে রাক্ষসী বলে গেলো।’
তুলি বললো, ‘কি বললি তুই?’
‘কিছু না!’
‘এই তুই সবকিছুতে খালি কিছু না বলিস কেন রে?’
‘কিছু না!’
‘ ধ্যাত’
বলেই তুলি বিরক্ত নিয়ে চলে গেলো। ব্যথা পা নিয়ে এই উঠে দাঁড়ালাম। ওইভাবে পা ঝাড়তে লাগলাম। অতটাও ব্যথা না হাঁটতে পারব। আমি আরো ঝাড়তে লাগলাম মনে হচ্ছে ঝারতে ঝারতেই ঠিক করে ফেলব পা আহা কি বুদ্ধি আমার। খুরাতে খুরাতে রুম থেকে বেরিয়ে এলাম।
#চলবে…..
#এক_চিলতে_রোদ-২
#Writer_Nondini_Nila
১৪.( ২য় অংশ)
রিমা দের বাসা থেকে চলে এসেছি এক সপ্তাহ হলো। ফিরানির পর দিনই চলে এসেছি। সবাই অবশ্য আরো থাকতে বলেছিলো কিন্তু থাকি নি। এদিকে আব্বা আম্মুকে ছাড়া এতদিন আমি কখনো কোথাও গিয়ে থাকিনা। তবুও অনেক দিন থাকা হয়েছে জোর করেই চলে এসেছি। বাসায় এসে কেমন জানি খালি খালি লাগে। বিয়ে বাড়িতে এত লোকজন ছিল যে একাকীত্বটা বুঝতেই পারিনি। আম্মু নিজের কাজ কাজ নিয়ে থাকে। আর আমি একা থাকি নিজের মতো। তার মধ্যে আবার স্কুল অফ ছিল সেই দিন তো আমার আরো বেশি বোরিং লেগেছে।
একদিন স্কুলে গিয়ে আমি চমকে গেলাম। কারণ শাহিন হাসিমুখে দাঁড়িয়ে আছে। এই ছেলে আমাদের স্কুলে কি করে? আমি রিমার হাতে ধাক্কা মেরে বললাম। ও নিজেও শাহিনকে আমাদের স্কুলে দেখে অবাক।
আমি নখ কামড়াচ্ছি চিন্তায়। এই ছেলে স্কুল পর্যন্ত চলে এসেছে।এটাকে যে আমি ভুল ফোন নাম্বার দিয়েছিলাম। এখন ও কি নাম্বার বন্ধ। আমার খোঁজ করতে করতে কি এখানছ চলে এসেছে। হায় আল্লাহ কি হবে!
আজকে তুলিও নাই। আর ওইসব কিছুই রিমা জানে না।
‘কিরে দাঁড়িয়ে পড়লি কেন? চল! গিয়ে কথা বলি উনি এখানে কি করছে?’
‘না তুই যা আমার না একটা দরকার আছে! ওই ছেলে আমার কথা জিজ্ঞেস করলে বলবি আমি স্কুলে আসি নাই।’
বলেই আমি পেছনে হাঁটা দিলাম।
‘ এই ঊষা কই যাচ্ছিস? স্কুল ছুটি আবার স্কুলে ঢুকিছ কেন?’ গলা উঁচিয়ে বললো রিমা।
আমি কিছু বললাম না। এই ছেলে এখান থেকে যাওয়া না পর্যন্ত আমি স্কুল থেকে বের হবো না।
রিমা বোকা চোখে আমার দিকে তাকিয়ে থেকে চলে গেলো।
আমি আরও আধা ঘন্টা পর বের হলাম। বাইরে এসে দেখলাম শাহিন বা রিমা এবং স্কুলের সমস্ত স্টুডেন্ট চলে গেছে দুই একজন বাদে। যারা স্কুলে প্রাইভেট পড়ে তারা শুধু রয়ে গেছে। আমি স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে বাইরে চলে এলাম।
রাতে বই খুলে হা করে তাকিয়ে পরছি। শব্দ বিহীন তাই আম্মু কয়েকবার উঁকি মেরে গেছে। আবার যদি না পরে থাকি তাই। এজন্য আম্মু আমাকে শব্দ করে পরতে বলে কিছু আমি পারিনা। গুনগুনিয়ে পরা আমার অভ্যাস।
ডিনার করে একটু টিভির সামনে বসলাম। ভাল্লাগে না তাই রুমে এসে শুয়ে পরতে ফোন বেজে উঠল। আমি ছিটকে উঠে বসলাম। ভয় পেয়ে গেছি। সারাদিন আজ আমাকে ওই শাহিন ছেলেটাকে নিয়ে ভাবতে হয়েছে। ফোনের শব্দ পাওয়া মাত্র মনে হচ্ছে ওই শাহিন আমাকে কল করেছে। তারপর নিজের মাথায় গাট্টি মেরে বললাম,
‘ ধুর আমার নাম্বার কই থেকে পাবে ওই ছেলে। আমি একটু বেশিই ভয় পায়।’
ভেবে ফোন হাতে নিয়ে দেখি স্ক্রিনের উপর জ্বল জ্বল করছে ‘ ইহান ‘ নামটা। আমি ভ্রু কুঁচকে ফোন কানে নিলাম। এই লোকটা আবার কল করেছে কেন?
‘ হ্যালো, আসসালামু আলাইকুম!’
‘ ওয়ালাইকুম আসসালাম।
‘ আপনি হঠাৎ করে ফোন করেছেন কেন?’ অবাক হয়ে জানতে চাইলাম।
ইহান একটা কথা বলেই কল কেটে দিলো আমি হাঁ করে ফোনের দিকে তাকিয়ে রইলাম।সাথে সাথে নিজের পায়ের দিকে তাকালাম। এক পায়ে নূপুর আছে অন্য পা খালি। এতো দিন হয়ে গেছে আর আমি এটা লক্ষ্য ও করিনি। আসলেই আমি…
সাথে সাথে কল করলাম আবার ইহানকে কিন্তু বিজি দেখাচ্ছে।
নূপুর জোরা আমার খুব প্রিয়। সেটা হারিয়ে ফেললাম আর নিজে টের ও পেলাম না। এতো টা অন্য মনস্ক আমি। আম্মু দেখলে আমাকে কি যে করবে। আল্লাহ জানে।
ইহানের নাম্বারে আরো অনেক বার কল করলাম কিন্তু শুধু বিজি দেখাচ্ছে। এতো কার সাথে কথা বলছে? নিশ্চয়ই গার্লফ্রেন্ড। ধুর বিরক্ত হয়ে ঘুমিয়ে গেলাম। বারোটার দিকে ফোনের রিংটোন এ জেগে উঠলাম আর ঘুম ঘুম চোখে দেখলাম বারোটা বাজে এই সময় আবার কে কল দিলো। ফোন কানে দিতেই ওপাশ থেকেই ইহান এর কন্ঠ শুনে ধপ করে বিছানায় উঠে বসলাম।
‘এত তাড়াতাড়ি অধৈর্য হয়ে ঘুমিয়ে পড়লে?’
‘আপনি এত রাতে আবার কল করেছেন কেন? তখনতো মুখের উপর কল কেটে দিলেন!’
‘তুমি এত বার কল দিয়ে আমাকে ডিস্টার্ব করলে আর আমি কল দিতে পারব না!’
‘ডিস্টার্ব কোথায় করলাম আপনার ফোনে তো। ঢুকেই নি ফোন!’
‘এই শুনো মাঝরাতে ফোন দিয়ে তোমার সাথে আমি প্রেম করবো না ওকে। তোমার জিনিস টা কি চাও নাকি না।’
‘ চাইবো না কেন আমার জিনিস আমাকে দিয়ে দিন। কাল কখন দিবেন বলুন।’
‘ কাল দিবো বলেছি কি?’
‘ বলেন নি বলুন এখন!’
‘সরি তা সম্ভব না।’
‘ কেন কেন আমার জিনিস আমাকে দেবেন না কেন? এটা কেমন ফাজলামি?’
‘ তোমাকে আমার একটা হেল্প করতে হবে তবেই পাবে!’
‘ মানে কিসের হেল্প? কি সব বলছেন আমি আপনাকে কিভাবে হেল্প করবো?’
‘ তুমি পারবে বলেই বলেছি না হলে তো বলতাম না!’
‘ আমি কোন হেল্প করতে পারবো না। আমার জিনিস চুপচাপ কাল দিয়ে দিবেন।’
‘ তাহলে আর এটা কখনো পাচ্ছ না। বাই গুড নাইট
‘ আরে পাগল নাকি শুনুন আপনি কিন্তু….
কল কেটে গেলো। রাগে আমার শরীর কাঁপছে। এইভাবে আমাকে ঝামেলায় ফেলছে লোকটা। লাগবে না আমার এই নূপুর থাকগা।
আম্মুর ডাকে চোখ কচলে তাকালাম। উঠে বসে আড়মোড় ভাঙলাম। বাথরুমে থেকে ফ্রেশ হয়ে বাইরে এসে দাঁড়ালাম। আম্মুর রান্না শেষ তিনি আমাকে রেডি হয়ে খেতে আসতে বললো। আমি আবার রুমে আসতে যাব তখন আম্মু আমার হাত টেনে সেলোয়ার উপরে তুলে পায়ের দিকে তাকিয়ে বলল,
‘এই তোর আরেক পা খালি কেন?’
আমি আঁতকে উঠলাম। ঢোক গিললাম। এখন কি হবে! সেই ধরা পরে গেলাম।
‘ কিরে কথা বলছিস না কেন?’
‘ আম্মু ওই আসলে..
‘ এটাও আবার হারিয়ে ফেলেছি তাইনা জানতাম এমন হবে। একটু নিজের জিনিস আগলে রাখতে পারিস না।
আম্মু অনেক কথা বলছে আমি ভয়ে বলে বসলাম,
‘ আমি এটা হারায়নি। এটার আরেকটা তো তুলির কাছে দুজনে মজা করে এক রকম নূপুর পায়ে দিয়েছিলাম কাল স্কুলে। আসার আগে নিয়ে নেবো ভেবেছিলাম কিন্তু মনে নাই।’
আম্মু দম নিলো।
‘ সত্যি?’
‘ হুম বিশ্বাস না হলে ওকে কল করে জেনে নাও।’
বলেই জ্বিভা দিয়ে ঠোট ভিজিয়ে নিলাম। ঠ্যাহা মিথ্যা কথা বললাম কাল তো তুলি স্কুল এই আসে নাই।
আম্মু কল করলেও ধরা পরে যাব। মনে মনে আল্লাহকে স্মরণ করছি যেন এ যাত্রায় বেঁচে যাই। ইহানের কথায় রাজি হয়ে নূপুর ফিরিয়ে আনতে হবে।
আম্মু সন্দেহ চোখে তাকিয়ে দেখে কি যেন ভাবলো তারপর চলেগেলো আমি হাফ ছেড়ে বাঁচলাম যেন তাঁরা তারি রুমে এসে তুলিকে কল করে সব জানালাম। আম্মু কল করলে যেন স্বীকার করে সেটা ও বলে দিলাম। ও অনেকে কথা জিজ্ঞেস করছে আমি এসে জানাবো বললাম।
স্কুলে আসতেই তুলি আমার দিকে প্রশ্ন ছুড়ে মারল, ‘এই সকালে এসব কি বললি রে! তোর নুপুর আমার কাছে! কি সব বললি আবার আন্টি আমাকে সত্যিই ফোন করেছিল।’
‘জানতাম ফোন করবে! আমি তো মিথ্যে গুছিয়ে বলতে পারিনা। আমাকে সন্দেহ করেছে তার চোখমুখ দেখে বুঝেছি। সময় মতো তোকে ফোন করে না জানালে আমি আজ ধরা পড়তাম।প্রথমেই সত্যিটা বললে অবশ্য আম্মু বেশি বকা দিতো না
কিন্তু মিথ্যা বললাম কেন তার জন্য আমাকে অনেক কথা জিজ্ঞেস করত। ‘
‘মিথ্যে কেন বলবি তো নূপুর কি হয়েছে?’
‘ আমার নুপুর রিমা বাড়িদের হারিয়ে ফেলেছি!’
‘কি বললি নাতো আর তোর সেটা এতদিন পর মনে হলো?’
‘আর বলিস না আমি নিজেই তো জানিনা! আমি নিজেই নিজের পা খেয়াল করিনি।এর আগেও একবার এক মাস পর জানতে পেরেছিলাম আমার পায়েল হারিয়ে গেছে অথচ আমি বুঝতেই পারিনাই আমার পায়ে একমাস যাবত পায়েল নাই।’
‘তুই যে কি না?একটা জিনিস হারিয়ে গেল শরীর থেকে আর তুই সেটা ধরতেও পারিস না মাথামোটা একটা।’
‘ধুর বকিস না!’
‘আচ্ছা এখন আন্টিকে তো মিথ্যা বললি তুই নুপুর টা খুঁজে পাবি কোথায়?’
‘খুজে পেয়েছি!’
‘কই সেটা?’
‘আমার কাছে নাই সেটা ওই ইহান ছেলেটার কাছে!’
‘ইহান ওইযে রিমার খালাতো ভাই?’
‘হ্যাঁ ওনার কাছে!’
‘ঐটা ওনার কাছে গেল কিভাবে?’
‘আমি কিভাবে জানবো উনি কালকে ফোন করে জানালেন। নুপুর টা তার কাছে আছে! আরো কত কথা যে বলে সে জানিস না তো।
‘আর কি বলেছে? আর ওনার কাছে আছে যেহেতু ওনাকে ফোন করে ডেকে ফেরত নিয়ে নে। তাহলেই তো ঝামেলা চুকে যায়।’
‘সেটাইতো করেছিলাম। কিন্তু উনি আবার আমাকে শর্ত দিয়েছেন উনাকে হেল্প না করলে নাকি আমাকে নুপুর ফেরত দেবে না। কি ঝামেলা বলতো ? আমি কিভাবে কীসের হেল্প করব উনাকে?
আরেকটা ঝামেলা হয়েছে আম্মুকে কেন যে বললাম ওটা তোর কাছে দিয়েছি! সত্যিটা বলে দিলে ভালো হতো। এখন সত্যি বললে তো আমাকে চেপে ধরবে আমি মিথ্যা কেন বললাম তখন?
এবার নিজের জালেই নিজে ফেঁসে গেছি। আর আমার জিনিস ওনার কাছে রাখবোই বা কেন? নিজের জিনিস নিতেও তার শর্ত মানতে হবে কতো খচ্চর ভাব একবার!’
‘ আচ্ছা শুন তুই ফোন করে জিজ্ঞেস কর কি হেল্প করতে হবে। আমার মনে হয় না কঠিন কিছু হবে তোকে দিয়ে আর কি কাজি বা করাবে। হেল্প করে নিজের জিনিস নিজের কাছে নিয়ে নে।’
‘ হুম। ‘
#চলবে……