#এক_চিলতে_রোদ- ২,৩৪.(১ম অংশ),৩৪.(২য় অংশ)
#Writer_Nondini_Nila
৩৪.(১ম অংশ)
দুইদিন থেকেই ইহান চলে গেল। আমরা এক সপ্তাহ পরেই ঢাকা এলাম। এর মধ্যে লুকিয়ে চুরিয়ে কথা হয়েছে আমার ইহানের সাথে। মাঝে মাঝে লিনার সামনে পরে গেছি কিন্তু অদ্ভুত ও তেমন কিছুই বলেনি। স্বাভাবিক ভাবেই নিয়েছে। বুঝলাম না ও কি ভাই শুনেছে বলেই এমন করছে!
ঢাকা আসার পরই কলেজ ভর্তির প্রস্তুতি নিতে হলো। সময় ভালোই যাচ্ছিল। ইহানের সাথে কথা বলা মাঝে মাঝে ফোন না ধরার জন্য আমার রাগ করা, রাগ ভাঙাতে ইহানকে আমাদের বাড়ি আসতেই হতো কারণ আমি তো ফোন অফ করে রাখতাম।
এবার ও তাই হয়েছে কাল ইহানকে আমি অনেক কল করছি কিন্তু রিসিভ করেনি। তাই আমি রাগ করে ফোন অফ করে রেখেছি। আমার কথা তুই যতই বিজি থাক না কেন রিসিভ করে আমাকে বললে কি ক্ষতি। না কারণ সারাদিন আমার একটা কল ও রিসিভ করে নি। কি এত ব্যস্ততা তার যে এক একটা দিন কল রিসিভ করলো না। সব সময় এক দুই ঘন্টা রিসিভ করে না কিন্তু কাল তো।
শুধু কি তাই ফোনটা অফ করে রেখেছে একদম কল তো ঢুকেই নি। আমি সিউর আমার কল না ঢুকতে পারে যেন এমনটা ভেবেই এমন করেছে।
আমি তাই আরো রেগে আছি। সকাল থেকে আমি মেইন দরজার দিকে তাকিয়ে আছি। এই বুঝি ইহান এলো। দিন গরিয়ে বিকেল হয়েছে এখনও আসিনি। আমি মনখারাপ করে বসে আছি। আজ কি তাহলে আসবে না। আমার রাগ ভাঙাতে। কি হলো উনার! দুশ্চিন্তা হতে লাগলো। আমি ফোন বের করে অন করলাম। এখনো ইহানের নাম্বার অফ আমি ফোন হাত নিয়ে পাঁচ ভাবতে ভাবতে বাড়ির নাম্বারে কল করলাম। বাসার নাম্বারে কল রিসিভ করলো কাজের ছেলে। আমি ওর থেকে যা শুনলাম তা শুনে আমি থমকে দাঁড়িয়ে পড়লাম। ইহান এক্সিডেন্ট করেছে বাইকে। বাইক এক্সিডেন্ট খুব খারাপ। বাইক এক্সিডেন্ট এ অহরহ মানুষ প্রাণ হারাচ্ছে। আর বেঁচে থাকলেও পঙ্গু হয়ে যায়। ইহান কেমন আঘাত পেয়েছে জিগ্গেস করলে বলে,
‘ইহান বাবাজি হাসপাতালে আছেন। বাড়ির সবাই সেইখানে গেছে। কিরম ধুক্কু পাইছে জানি না। মেডাম যে মন কইরা কাদতাছিল। তাতে মনে হইতাছে ভালোই লাগছে।’
তার কথা শুনে আমার কলিজা কেঁপে উঠলো। আমি ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলাম।
আমি ফুপানির আওয়াজ শুনে আম্মু দৌড়ে এলো।
‘ কি হয়েছে কাঁদছিস কেন?’
অবাক গলাতেই জিগ্গেস করলো। আমি কাঁদতে কাঁদতে সব খুলে বললাম। আম্মু ইহান কথা শুনে ইমোশনাল হয়ে গেলো। কয়েকদিন এ অনেক ভালো সম্পর্ক তৈরি হয়ে গেছে। সাথে আমাকে এভাবে কান্না করতে দেখে বিস্মিত হয়েছে।
‘ আম্মু আমি ইহান ভাইকে দেখতে যাব প্লিজ।’
‘ সে তো আমি যাব কোন হসপিটালে জানিস?”
‘ না তো। দাঁড়াও জেনে নেই।”
বলেই আমি আবার কল করলাম। এবার রিসিভ করে বললো, ‘ হাসপাতালে যাইবা ক্যা বাসায় আহ। ইহান বাবাজি কে নিয়ে তো সবাই বাড়ি আসছে।’
‘ ব্যাথা কেমন পাইছে!’
‘ খুড়াতে খুড়াতে হাঁটছে। মাথায় ব্যান্ডেজ ।’
আম্মু কে সব বললাম। বাসায় তো আম্মু যেতে পারবে না। তাই কি করবে ভাবছে আব্বুকে ও কল করে জানিয়ে দিয়েছে।
‘তোমরা যেতে না পারলেও আমি তো পারবো। আমাকে যেতে দাও।’
‘ তুই যাবি! রাত হয়ে এসেছে।’
‘ হ্যা আম্মু প্লিজ। আমি গিয়ে ভালো করে দেখে খবর নিয়ে আসি। আব্বুকে তুমি বলে দিও আমি রেডি হয়ে আসছি।’
বলেই রুমে চলে এলাম। আম্মু আমার এমন ছটফটানি দেখে অবাক হতেই আছে। কিন্তু এই মুহূর্তে কিছু বলবে না তিনি। আমমু কিছু একটা সন্দেহ করলো। আর চুপ করেই সম্মতি দিলো। সন্ধ্যা বিধায় আমাকে বাসার ড্রাইভার কাকাই দিয়ে এলো। সারা রাস্তা আমার কেমন লেগেছে বুঝাতে পারবো না। ইহান এক্সিডেন্ট করে বসে আছে আর আমি কিনা রাগ করে গাল ফুলিয়ে ছিলাম ছিহ।
এই সন্ধ্যায় আমাকে দেখে বাসার সবাই হলো এ বাসায়। আমি ইহানের জন্য কোন কিছু না ভেবে যে চলে এসেছি এবার কি বলবো? কিন্তু ইমা আপুকে এ বাসায় দেখে যেন কিছুটা হলেও স্বস্তি পেলাম।
আপুই আমাকে সব প্রশ্ন থেকে বাঁচিয়ে দিলো। কেউ আর কোন প্রশ্ন করলো না। আপু সাথে আসতেই আপু ফিসফিস করে জিজ্ঞেস করলো,
‘ তুই ইহানের খবর পেলি কি করে? আর খবর পেয়েই এইভাবে ছুটে এলি এখন যে রাত সেটা দেখেছিস! এতো ভালোবাসিস আমার এই ভাইটাকে।’
আমি বড় বড় চোখ করে আপুর দিকে তাকালাম। লজ্জা আমার কান গরম হয়ে উঠলো। আপু জানালো কি করে আমি ইহানকে ভালোবাসি। আমাকে এইভাবে আস্তে দেখেই মনে হয় সন্দেহ করেছে। আমি ঢোক গিলে বললাম,
‘ কি যাতা বলতো আপু? এমন কিছু না। আববু আম্মু শুনেই পাগল হয়ে উঠেছে তারা তো আসতে পারবে না তাই আমাকে পাঠিয়েছে। আর উনি আমার ভাই হন ভালো তো বাসবোই।’
‘ শুধু কি সেই ভালোবাসা নাকি আরো কিছু আমি জানি সব। আমাকে গল্প বানিয়ে বলার দরকার নাই। ইহান যে প্রেমে দেওয়ানা হয়ে একদম মামা শ্বশুর এর বাড়ি চলে গেছিলো আমি কিন্তু সব জেনে গেছি।’
আমি বিষ্ময়ের চরম সীমায় পৌছে গেলাম। আপুর কথা শুনে। ইহান কি তাহলে সব আপুকে জানিয়ে দিয়েছেন ইশ কি লজ্জা এই ভাবেই আমাকে লজ্জা দিলো। আপু আর লজ্জা রাঙ্গা মুখ দেখে হো হো করে হেসে উঠে গাল টেনে দিলো। তারপর ইহানের রুমের সামনে এসে বললো,
‘ যা ভেতরে আছে ইহান দেখা করে আয়।’
বলেই আপু চলে গেলো।আমি হতবিহ্বল হয়ে দাঁড়িয়ে আছি। ইহানের কথা মাথায় এতেই সব ভুলে ভেতরে চলে গেলাম। ইহান চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে। পায়ে ব্যান্ডেজ মাথায় ব্যান্ডেজ। মুখটা শুকিয়ে গেছে। আমি আস্তে আস্তে শব্দহীন পায়ে এগিয়ে এসে দাঁড়ালাম একদম কাছে। ইহান মনে হচ্ছে ঘুমিয়ে আছে। ঘনঘন নিশ্বাস ফেলছে। এদিক ওদিক তাকিয়ে একটু করে হাত ছুঁয়ে দিলাম। ইহানের বড় কোন ক্ষতি হয়নি দুইদিন রেস্ট নিলেই সেড়ে উঠবে আপু বলেছে। আমি সরে এসে চলে আসার কথা ভাবলাম। আপীল রুমে দিয়ে গেছে এখন বেশি সময় একা থাকলে কিছু মনে করে যদি আমি চলে যাই দেখা তো হলই। আর ইহানকে ডাকতেও ইচ্ছে করছে না উনি রেস্ট নিক। আমার তো দেখা হলোই।
আমার ভাবনা ভেবে আর সিদ্ধান্ত নিয়ে চলে আসতে গেলে হাতে টান পরে। ইহান হাত ধরে তাকিয়ে আছে। আমি চমকে পেছনে ফিরে তাকিয়েছি।
‘ আপনি উঠে গেছেন?’
‘ তুমি রাতে এখানে এলে কি করে?’
‘ বাসার গাড়ি নিয়ে এসেছি। চলে যাব এখন।’
‘ তোমার এভাবে আসা উচিত হয়নি। চাচি কি ভাবছেন কে জানে।’
‘ আমি এক্সিডেন্ট এর খবর শুনে খুব বিচলিত হয়ে পরে ছিলাম। আপনার জন্য খুব কষ্ট হচ্ছিল এক নজর না দেখে থাকতে পারতাম না তাই…
‘ সবাই কি ভাববে এই ভাবে কেউ আসে আমাকে কল করতে পারতে!’
‘ আমি কল করেছিলাম অনেকবার কিন্তু নাম্বার অফ কাল থেকে।’
‘ ওহ শিট চার্জ নাই তাই তো বন্ধ হয়ে গেছিলো ফোন পরে বাসায় এসে চার্জ দিয়ে কল দিবো ভেবেছিলাম কিন্তু রাস্তা ওই এক্সিডেন্ট তারপর তো আমি রাতে ওইখানেই ছিলাম। সারাদিন তো সব আত্নীয় রা দেখতে এসে ভীর করেছে হাসপাতালে তাই আমি আর ফোনের খোঁজ নিতে পারিনি।’
‘ ওহ আমি খুব রাগ করেছিলাম আপনার উপর পরে যখন উসমান আলীর থেকে জানতে পারলাম আপনি এক্সিডেন্ট করেছেন খবরটা শুনে আমার তো দম বের হয়ে আসছিলো। আমার এক মুহূর্তে জন্য মনে হচ্ছিল আমি আপনাকে হারিয়ে ফেলেছি।’
ইহান টেনে আমাকে নিজের পাশে বসতে ইশারা করলো। আমি নিঃশব্দে বসে পরলাম। ইহান হাত বাড়িয়ে আমার চোখের পানি মুছে দিয়ে বলল,
‘তুমি এতো ছিদকাদুনি হলে কবে থেকে? আরে আমি তো মরে যাই নি। সামান্য আঘাত। এজন্য কেউ এমন পাগলামী করে।’
আমি নাক টানতে টানতে বললাম, ‘ আপনি আমাকে ছিদকাদুনি বললেন??’
‘ তো কি বলবো। এই টুকু তে একদম নাকের জল চোখের জল এক করে ফেলেছো। আমি যদি সত্যি মরে যেতাম তো কি করতে?’
আমি চেঁচিয়ে উঠলাম।
‘ আপনি আসলে খুব খারাপ। এই কথা বলতে আপনার কলিজা কাপলো না। একেতে এমন অবস্থা করে সবার কাছ আমাকে নির্লজ্জ করে তুলেছেন। ইমা আপুকে সব কেন বলেছেন হ্যাঁ। ইশ কি লজ্জাটাই না পেলাম। আপনি এটা কেন করলেন। আর বললেন তো বললেন আমাকে জানালেন ও না। আমি আপুকে মুখ দেখাবো কি করে।’
‘ হোয়াট ইমা আপুকে এসব কে বলেছে? আমি তো কিছু বলিনি। কি সব বলছো?’
‘ফাজলামি পেয়েছেন আপনি না বললে কে বলেছে শুনি!’
‘ আমি কি জানি? কিন্তু আমি কিছু বলিনি। পাগল নাকি বড় বোনকে প্রেমের হিস্টুরি বলতে যাব।’
এবার আমি টেনশনে পরে গেলাম ইহান না জানালে এসব কে বললো। আপু ই বা জানলো কি করে?
টেনশন মাথায় নিয়ে বেরিয়ে এলাম। নিচে আসতেই চাচির মুখোমুখি হলাম। কেমন চোরা চোখে তাকিয়ে আছে। আমি ঢোক গিলে ইমা আপুকে খুঁজছি।
‘ তোমার বাবা মা আসতে দিলো এই রাতের বেলা ইমার সাথে দেখা করতে!’
আমি বিস্মিত হয়ে তার দিকে তাকিয়ে বললাম, ‘ মানে।’
‘ আরে তোমার বাবা মা তো দেখি বেশি চিন্তা ভাবনা করে না মাইয়া নিয়া। না হলে কি আর আসতে দেয়। ইমা তো এই কয়দিন আছেই এই রাতে না আইসা
কাল ও তো ওর সাথে দেখা করতে পারতা ।’
আমি এবার বুঝতে পারলাম ইমা আপু বোধহয় বলেছে আমি তার সাথে দেখা করতে এসেছি। আমি স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে বললাম,
‘ সমস্যা নাই। গাড়ি নিয়ে এসেছি বাসা তো বেশি দূরে না যেতে সমস্যা হবে না। আসি ভালো থাকবেন।’
#চলবে…..
#এক_চিলতে_রোদ- ২
#Writer_Nondini_Nila
৩৪.(২য় অংশ)
ইহানের পরিক্ষা চলে আসায় ও লেখাপড়া নিয়ে বিজি হয়ে গেছে আজ আমি ও কলেজে ভর্তি হওয়া নিয়ে ব্যস্ত। ইহানের কলেজে ভর্তি পরিক্ষা দিয়েও আমি চান্স পেলাম না। তাই মন খারাপ করে ছিলাম। কিন্তু ইহান ফোনে সেদিন বললো,
‘ তুমি আমার ভার্সিটিতে ভর্তি হতে পারো নি বলে এতো মন খারাপ কেন করছো! আমি তো মাস্টার্সে এখানে পারবো না। তাহলে এখানে চান্স পেলে তোমার কি লাভ হতো শুনি? এতো গাধা কেন তুমি!!’
আমি নিজের বোকামি বুঝতে পেরে লজ্জায় পেয়েছিলাম। ইহানের তো অনার্স পড়া শেষ। এখন পরিক্ষা দিলেই আর ওই কলেজে যাবে না। আমি তাই জিজ্ঞেস করলাম আপনি কোন ভার্সিটিতে পরবেন আমি সেখানের কলেজে পরব।
তখন ইহান বললো, ‘ আমি যেখানে পারবো সেখানে কলেজ নাই।’
‘ তাহলে আপনার সাথে আমার এক কলেজে পরা হবে না।’ মন খারাপ করে বললাম।
ইহান তখন বললো, ‘ তুমি এতো ছোট কেন বলো তো। আর একটু বড় হতে পারলে না। আমি এতো পিচ্চি বউ বুঝাতে বুঝাতেই বুড়ো হয়ে যাব। আরে এক কলেজে পড়ার কি দরকার? তুমি যখন চাইবে আমি তখনি তোমার কাছে চলে যাব। এক কলেজে থাকার প্রয়োজন নাই।’
কলেজে ভর্তি হয়ে গেলাম। তুলি রা কেউ আমার সাথে ভর্তি হতে পারিনি। একেক জন একেক কলেজে ভর্তি হয়েছে। সবার ই এজন্য মনটা খারাপ। পাঁচবছর এক সাথে পরেছি এখন আলাদা হয়ে গেলাম। কিন্তু কিছু করার নাই। আমাদের বাসা থেকে একটু দূরেই আমার কলেজ। এজন্য আব্বু বাসা চেঞ্জ করতে চাইছে। কিন্তু কেনার মতো ফ্লাট পাচ্ছে না। কলেজ হোস্টেলে থাকতে চাইছি আমি এজন্য। কিন্তু আব্বু তা থাকতে দিবে না। বাসা একটা ভাড়া করেই চলে এলাম কলেজের কাছে এখন আব্বুর অফিস দূরে হয়ে গেছে। আমাদের বাসা চেঞ্জ করা শুনে ইহানের জন্য অসুবিধা হয়ে গেছে। কারণ এখন আমাদের বাসার দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে অনেক। কিন্তু আমি কি করবো ওই বাসা থেকে কলেজে যাওয়া আসা করা দূরে হয়ে যেতো। এক ঘন্টা আগে বাসা থেকে বের হতে হতো।
নতুন বাসায় আসার পর আর ইহান আসেনি। আসার সুযোগ ই পায়নি। তিনি তো পরিক্ষা নিয়ে বিজি। কথাও এখন খুব কম হয়। আমিও এতে রাগ করিনা। আমার জন্য তার ক্ষতি হোক এমনটা আমি চাইনা।
ইহানের পরিক্ষা চললো এক মাস। আমাদের দেখা হয়না স হলো। আমার সময় এখন নতুন জায়গায় সবার সাথে পরিচয় সম্পর্ক গড়ে তুলে যাচ্ছে। নতুন কলেজে নতুন ফ্রেন্ড হয়েছে। তনিমা, কনা।
নতুন কলেজ আর ফ্রেন্ডদের নিয়ে আমার সময় ভালোই কাটছে। আমরা এখন ছয়তলা বিল্ডিং এর চার তলায় থাকি। আব্বু জায়গা কিনে বাসা করার চেষ্টা করে যাচ্ছে। আমি আর আম্মু তাকে থামানোর চেষ্টা করছি। কারণ দুই বছর পর যখন আমি ভার্সিটিতে ভর্তি হবো তখন তো আবার জায়গা চেঞ্জ করতে হবে। এতো জায়গায় বাড়ি করে কি হবে অযথা টাকা অপচয়।
নতুন বাসায় আসার আজ একুশ দিন হলো। আজ ছাদে এসে আমি ঝটকা খেলাম। ছাদে এসে যে আমার শুভ্রর সাথে দেখা হবে কল্পনাতেও ভাবিনি। শুভ্র আমাকে দেখে আমার থেকে ও বেশি শক খেয়েছে। হা করে ছেলেটা আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি হতবাক হয়ে ভাবছি এই ছেলে এখানে কি করছে?
‘ ও মাই গড! আমি টি স্বপ্ন দেখছি নাকি বাস্তব? আমার সামনে ঊষা তুমি দাঁড়িয়ে আছো? আমার তো বিশ্বাস ই হচ্ছে না।’
বলেই হাত এগিয়ে এনে আমার হাতে ফট করেই চিমটি কেটে দিলো। আমি বিরক্তে মুখে ‘চ’ উচ্চারণ করে সরে হাত ঠলতে ঠলতে বললাম,
‘ এসব কি ধরনের ভদ্রতা আপনি আমার হাতে চিমটি দিলেন কেন?’
শুভ্র সরি সরি বলতে লাগলো। আমি কপাট রাগ নিয়ে চলে আসতে চাইলাম। শুভ্র বললো,
‘ কিছু মনে করো না। আসলে হঠাৎ তোমাকে দেখে চমকে গেছিলাম। তাই এক্সসাইটেজ হয়ে কাজটা করে ফেলছি। ভেরি সরি। তা তুমি এখানে কি করে আমাদের বাসায় কিছুই তো বুঝতে পারছি না।’
‘ এটা আপনার বাসা?’
শুভ্র বললো, ‘ আমার মানে আমার বাবার।’
‘ ওহ। আমরা এখানে ভাড়া উঠেছি।’
‘ হোয়াট? কবে কয় তলায়?’
‘ আজ একুশ দিন হলো। তার তলায়। আমি আসি।’
বলেই আমি আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে নিচে চলে এলাম। মেজাজ টাই খারাপ হয়ে গেছে। একটু ছাদের হাওয়া নিতে গেলাম তাও ওই শুভ্র টার জন্য বানচাল হয়ে গেলো।
আর এদিকে শুভ্র আমার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে খুশিতে বাকবাকুম করছে।
রাতে আমি বই নিয়ে বসে আছি। আম্মু রান্না করছে। আমি বই দেখছি আর ফোনের দিকে লক্ষ্য রাখছি। ইহানের কলের অপেক্ষা করছি।
হঠাৎ ইহানের একটা মেসেজ এলো।’ বাইরে আসো’
আমি ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছি। বাইরে আসবো মানে কি কোন বাইরে আসবো? হঠাৎ আম্মুর ডাক কানে এলো।
‘ ঊষা দেখ কে এসেছে। কতোদিন পর ইহান এলো। এখানে আসার পর তো আর আসেই নি। বসো আমি আসছি।’
বলেই আম্মু রান্না ঘরে চলে গেল।আমি ছুটে চলে এলাম। ইহান ড্রয়িংরুমে সোফায় বসে আছে। আমি দেখেই রুমে চলে আয়না নিজেকে দেখে চুল আঁচড়াতে লাগলাম। ওরনা সুন্দর করে গায়ে জরিয়ে বেরিয়ে এলাম। আমাকে দেখেই ইহান নজর কাড়া হাসিটা দিলো। আমি এগিয়ে এসে পাশে দাড়াতেই ইহান বললো,
‘ কেমন আছো?’
আমি বললাম, ‘ আলহামদুলিল্লাহ ভালো। আপনি আমাকে না জানিয়ে এভাবে চলে এলেন।”
‘ চমকে দিতে পেরেছি কি?’
‘ অন্নেক’
‘ বসো। চাচু বাসায় আছেন?’
‘ না আজকে আসতে অনেক রাত হবে। আপনি ডিনার করে যাবেন?’
‘ শশুর বাড়ি খাবো বলেই আজ দুপুরে ও খাইনি!’
আমি কিছু বলতে যাব আম্মু চলে এলো। ইহান কে জিজ্ঞেস করলো চা কফি খাবে নাকি ইহান সরাসরি বলে বসলো,
‘ আগে পেট ফুল করা দরকার পরে চা কফি খাবো।’
আম্মু বুঝে গেলো আর বললো টেবিলে বসতে। রান্না হয়েই গেছে শুধু নামাবে। আম্মু হাসতে হাসতে চলে গেলো। আমিও মৃদু হাসলাম,
‘ সত্যি আপনার এতো খিদে পেয়েছে।’
‘ হুম। দুপুরে পরিক্ষা শেষ করে ঝামেলায় ছিলাম নাদিমের জন্য। খাওয়ার টাইম পাইনি। বাসায় গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আর দেরি করিনি শশুর বাড়ি চলে এসেছি।আমমু খেতে জোর করেছিলো কিন্তু আমি খাইনি।’
‘ কেন আর কি ঝামেলা হয়েছিলো যে খেতেই পারেননি?’
‘ গার্লফ্রেন্ড নিয়ে। ‘
‘ কি ঝামেলা?’
‘ আগে পেট ফুল করতে দাও। আমি এখন কথা বলতে পারবো না এতো। আরেকটা কথা কফি কিন্তু তুমি করবে। শাশুড়ি মায়ের হাতে অনেক কফি খেয়েছে এবার বউয়ের হাতে টেস্ট করবো।’
‘ আমি?’ ঢোক গিলে বললাম। জীবন তো রান্না ঘরের গন্ডি ও পেরায় নি কফি করবো কি করে?
‘ ইয়েস।’
বলেই ইহান ড্রায়নিং টেবিলে চলে গেল। আমমু বসলো না আমাকে বসতে বলল। আমি বসতে চাইলাম না কিন্তু ইহান হাত ধরে টেনে বসিয়ে দিয়েছে আম্মু তখন রান্না ঘরে থেকে কি যেন আনতে গেছিলো দেখে নি আমি চমকে তাড়াতাড়ি বসে পরেছি।
খাবার শেষে ইহান আমাদের গেস্ট রুমে চলে গেল। আজ ইহান থাকবে বলেছে। বাসায় নাকি ফ্রেন্ডের বাসায় আছে জানিয়েছেন।
আম্মু এদিকের কাজ শেষ করে রুমে চলে গেছে। আমি আমার রুমে ইহান যাওয়ার আগে কফি দিতে বলেছে। আমি রুমে পায়চারি করছি আম্মুর সামনে কি করে কফি করবো। জিজ্ঞেস করলে কি বলবো?
এদিকে ইহান মেসেজ করেই যাচ্ছে। ধুর ফোন রেখে রান্না ঘরে চলে এলাম কফি করতে দেখেছি আগে করিনি। তাই সেই মোতাবেক করতেছি। হঠাৎ আম্মুর ডাক শুনে ছিটকে উঠলাম,
‘ কিরে তুই কিচেনে করিস?
আমি ঢোক গিলে আমতা আমতা করতে লাগলাম।
‘কি হলো চুপ করে আসিস কেন? কফি কার জন্য করছিস ইহান কি কফি চেয়েছে? আর আমাকে না ডেকে তুই করছিস কেন?’
‘ আম্মু আসলে আমি নিজে থেকেই চেষ্টা করছি। আগে তো কখনো করিনি তাই আজ দেখছি পারি কিনা।’
‘ তোকে এখন এসব শিখতে হবে কেন? বিয়ে করার ইচ্ছে হয়েছি নাকি যে রান্না বান্না শিখে প্রস্তুতি নিচ্ছিস?’
আমি কি বলবো এখন আম্মুকে। পেছনে থেকে ইহানের কন্ঠ পেলাম এগিয়ে এসে বলছে।
‘ করতে দাও চাচি। তোমার মেয়ে যে অর্কমার ঠেকি। আজ নিজে থেকে করতে এসেছে করতে দাও দেখি কেমন কফি বানাতে পারে।’
‘ কিন্তু ও তো আগে এসব করে নি। যদি কিছু হয়ে যায়।’
‘ একটু আধটু কিছু হলে সমস্যা কি? এর থেকে কাজে পারদর্শী হবে। কিছুই না পারলে তো ওর ভবিষ্যৎ জামাইয়ের খুব পেরেশানিতে ভুগতে হবে। যে বউ একটু কফিও বানাতে পারেনা।’
আম্মু ইহানের সাথে কথা বলতে বলতে চলে গেল। আমি কফি করলাম দাঁত কিড়মিড় করে। এই ভাবে আমাকে অর্কমার ঠেকি বলল। আজ এমন ভালো কফি বানাবো সারা জীবন মনে থাকবে উনার। এর জন্য আমি কষ্ট করে রান্না ঘরে এলাম আর তিনি কিনা আমাকে অপমান করল খাটাশ একটা। এখন আমার বয়ফ্রেন্ড হয়েও আগের মতোই অপমান করে যায় লোকটা এতো বদমাইশ কেন?!!
কফি করে নিয়ে এসে দেখলাম আম্মু আর ইহান সোফায় বসে আছে।আমি কটমট চোখে তাকিয়ে কফি ইহান কে দিলাম। কফি চুমুক দিয়েই ইহানের হাসি হাসি মুখটা হারিয়ে গেলো আমি শয়তানি হাসি দিয়ে তাকিয়ে আছি। আম্মু চলে গেল। আম্মু চলে যেতেই ইহান উঠে দাঁড়ালো। আমি নিজের রুমে যাওয়ার জন্য ছুট লাগাবো তার আগেই ইহান আমার হাত ধরে টেনে আমার রুমে চলে এলো। আর কফিটা গাল চেপে ধরে আমার মুখে দিয়ে দিলো। আমি খক খক করে বাথরুমে ঢুকে গেলাম। ছিহ কি নুনটা। লবণ দিয়ে বিষ বানিয়ে ফেলেছি। ইহানের মুখে হাসি আমি গাল ফুলিয়ে বাইরে এলাম। ইহান চলে গেল।
আমি এখন চিৎকার করে ইহানকে কিছু বলতে ও পারছি না কারণ আম্মু শুনে ফেলবে তাহলে। তাই একাই একাই নিজের রাগ দমন করার চেষ্টা করতে লাগলো।
‘ পিচ্চিদের এতো রাগ করতে নাই। তাই রাগ না করে পড়ায় মনোযোগ দাও। আর তোমার হাতে এই লবণাক্ত কফিও আমার কাছে অমৃত! আর এই অমৃত আমি একা প্রাণ করবো নাকি তাই তোমাকে টেস্ট করালাম।’
ইহানের মেসেজ দেখে আমার রাগ আরো বেড়ে গেল। মন চাইছে ওনার চুল টেনে ছিঁড়ে ফেলতে।
আব্বু এসেছে সারে এগারোটায়। ইহান বেরিয়ে আব্বুর সাথেও গল্প করলো আমি ইহান বাসায় আছে ভেবেই আর ঘুমাতে পারলাম না। রাগ নিয়ে বই খোলে বসে ছিলাম। ঘুমাতে ঘুমাতে একটা বেজে গেল। সকালে তাই তো জাগতে পারিনি। শুক্রবার ছিল তাই আম্মু ও ডাকে নি। আর আমিও উঠিনি। দশটায় উঠে জানতে পারলাম ইহান চলে গেছে। মনটাই খারাপ হয়ে গেল যাওয়ার আগে আমাকে ডাকল ও না।
ফোন হাতে নিয়ে দেখলাম কল করেছিল আধা ঘন্টা আগে।
#চলবে……