এক_চিলতে_রোদ- ২,৪০ শেষ

0
1081

#এক_চিলতে_রোদ- ২,৪০ শেষ
#Writer_Nondini_Nila

গেটের সামনে বড় বড় করে লেখা ইহান & ঊষা। বর কনের নাম জ্বলজ্বল করছে। বিয়ের আমেজে চৌধুরী ভিলা সেজে উঠেছে।বাড়ির একমাত্র ছেলের বিয়ে বলে কথা। ভাই বোন আত্নীয় স্বজন সবাই হ‌ইহুল্লায় মেতে আছে। এসব কিছুই আগুন দৃষ্টিতে দেখতেছে শুভ্র। ও গাড়ি থেকে নেমে বাসার ভেতরে যায়‌। আর ওর সাথে আরো চার পাঁচ জন যায়। সবাই গুন্ডা ও এসেছে ঊষা কে নিয়ে যেতে আর এই বিয়ে ভন্ড করতে।

এদিকে আমি বিয়ের সাজে নিজের রুমে বসে আছি। কাজি আসতেই কবুল বলতে বলা হয়। আমি কবুল বলতে সময় নেয় না।কারণ আমার তো আর বিদায় হবে না। আমি থাকবো নিজের দাদু বাসায়‌ই। বিয়ের একমাস আগেই চাচাজান আমাদের এই বাসায় নিয়ে এসেছে। সেইদিন আমি আর ইহান ভয়ে ভয়ে বাসার ভেতরে ঢুকতেই চমকে উঠি। ড্রয়িং রুমে চাচা চাচি , ইমা আপু রিফাত ভাইয়া , ইলা আপু, আম্মু আব্বু সবাই বসে আছে। আমরা ঢোট গিলে এগিয়ে যাচ্ছি ইহান তখন ও আমার হাত শক্ত করে ধরে রেখেছে আমি হাত মুচরাচ্ছি ছারাতে কিন্তু ইহান আরো শক্ত করে‌ ধরেছে। ইমা আপু উঠে এসে ইহানের কান টেনে ধরলো। আমি চমকে উঠলাম।

‘ কি হচ্ছে আপু ছারো।’ ইহান বলল।

‘ এসব কি? তোরা কোথায় ছিলি সারা রাত?’

‘ ওই আমি আর ঊষা একটু…

‘ প্রেম করতে গেছিলি তাই না।একটু ও তর সয় না তাই না। বাঁদর কোথাকার এক জায়গা থেকে এসেই রেস্ট না নিয়ে কারো সাথে দেখা না করেই গার্লফ্রেন্ড এর সাথে লং ড্রাইভে যাওয়া হচ্ছে তাইনা।’

আমি ইমা আপুর কথা শুনে ভয়ে ভয়ে আব্বুর দিকে তাকাচ্ছি তার চাহনী স্বাভাবিক।
আমার মাথায় কিছু ঢুকছে না সবাই এই সকাল বেলা আমাদের বাসায় কেন? আর এসব শুনে কারো রিয়েক্ট করতে দেখছি না সবাই স্বাভাবিক ভাবেই আছেন। আম্মু এগিয়ে এসে বলল,

‘ এই দুজন আমাকেও ভরসা করতে পারলো না। আমি তো ভাবছি দুজন বোধহয় কালের ঘটনার জন্য পালিয়ে গেছে।’

ইহান মাথা নিচু করে আছে। আমি অবাক হয়ে এদিক ওদিক তাকাচ্ছি শুধু। লজ্জা ও ভয় আমাকে আষ্টেপৃষ্টে ধরেছে।

আব্বু এগিয়ে এসে ইহানকে বলল,

‘ চাচু কে বিশ্বাস করে বলা যেতো না কথাটা‌ আমি কি এতোটাই খারাপ চাচু যে তোর ইচ্ছে পূরণ করতাম না। আমার মেয়ে আমার কলিজা আর তুই আমার জান। দুজনে আমার খুব কাছে। তোদের ভালোবাসা কি আমি মানতাম না নাকি‌। তুই আমার এই ছোট মেয়েটাকে ভালোবাসিস জানলে আমি কবেই নিশ্চিত হতে পারতাম। এর বিয়ে নিয়ে আমার অন্য জায়গায় যেতে হবে কেন? আমার ঘরের ছেলেই তো আছে। এবার আমি নিশ্চিত আমার ঘরের সন্তান ঘরেই থাকবে। আমার পরে আমার ঊষাকে তুই আগলে রাখতে পারবি আমি জানি। আগে এসব জানালে আমি ওই সব করতাম‌ই না।’

চাচাজান আমার কাছে এসে মাথায় হাত বুলিয়ে বলল, ‘ আমার তো আরেকটা মেয়ে হয়ে গেল। এটা আমার ছোট মা আমার ঘরের লক্ষি। আমার সোনা মা কে আমার ঘরের ব‌উমা করে তারা তারি নিয়ে যাব দেখিস। এই অপদার্থ টা একটা অন্তত সঠিক কাজ করেছে।’

সেদিন সব মিটে যায় এক মাস পর আমাদের বিয়ের ডেট ফিক্সড করে। সেইদিন সবাই আমাদের বাসায় থাকে পরদিন চাচাজান জোর করে আমাদের সাথে করে এই বাসায় ফিরে আসে। আমার জন্য একটা রুম খোলে দেওয়া হয় বিয়ের আগ পর্যন্ত থাকার জন্য। এক মাসে আমি আর ইহান চুটিয়ে প্রেম করেছি‌। বিয়ের প্লাণ করেছি শপিং সব কিছু। এর মাঝে ইলা আপুর এনগেজমেন্ট করে নিয়েছে। বিয়ের আগেই আমার নানু বাড়ির সবাই এসেছে এখানে এখন আমার পাশে বসে আছে লিনা।

আমার এখানের কাজ শেষ হতেই কাজি ইহানের কাছে চলে গেল। লিনা ও চলে গেল বিয়ে পরানো দেখবে বলে। আমার পরনে গোল্ডেন লেহেঙ্গা ও ফতুয়া পিন কালারের। দুপাট্টা গোল্ডেনের মধ্যে পিন। বিয়ে পরানো শেষ হতেই আমাকে ইহানের পাশে নিয়ে বসানো হলো। ইহান আমার লেহেঙ্গার সাথে ম্যাসিং করে গোল্ডেন শেরোয়ানি পরেছে।

আমি ইহানের পাশে বসে আছি। ইহান হুট করে আমার হাত ধরে টেনে স্টেজে থেকে নামালো আমি লেহেঙ্গার জন্য দৌড়াতে পারছি না ইহান আমাকে কোলে তুলে পিছন গেইট দিয়ে বেরিয়ে এলো আমি চমকে উঠলাম।

‘ আরে কোথায় যাচ্ছেন? আর এইভাবে দৌড়ে এলেন কেন?’

ইহান আমাকে নিয়ে গাড়িতে উঠে পরলো। আমার কথার উত্তর না দিয়ে। গাড়ির ভেতরে দেখলাম ল্যাকেজ রাখা আমি ভ্রু কুঁচকে সেদিকে তাকিয়ে আছি। গাড়ির সামনে তাকিয়ে দুটো প্যাকেজ চোখে পরলো কক্সবাজার এর। তিনদিনের টিপ‌।

‘ এসব কবে প্লান করেছেন?’

‘ আগেই এটা তোমার জন্য সারপ্রাইজ। আমাদের বাসর রাত হবে কক্সবাজার।’

‘তাই বলে কাউকে না জানিয়ে এইভাবে মাঝ অনুষ্ঠানে বেরিয়ে আসবেন?’

‘ মিসেস ইহান সবাই জানে এই টিপের কথা। শুধু আপনি জানতেন না। আর অনুষ্ঠান দিয়ে কি হবে তোমার জন্য আরো সারপ্রাইজ অপেক্ষা করছে। এখানের কাজ ছিল বিয়ে তোমাকে আমার অর্ধাঙ্গিনী করা তা সম্পূর্ণ তো কাজ খতম।’

‘ তাই নাকি!’

‘ হুম। তোমাকে আজ এতো সুন্দর লাগছে যে খালি আদর করতে ইচ্ছে করছে। মন চাইছে শক্ত করে একটা চুমু খাই ওই ওষ্ঠে।’

আমি লজ্জা রাঙ্গা হয়ে ঠোঁটে হাত চেপে অন্য দিকে ঘুরে গেলাম আর বললাম।

‘ ছিহ কি অশ্লীল কথা বার্তা?’

‘ এখন তো শুধু বলছি একটু অপেক্ষা করো জান সব প্র্যাটিকাল করে দেখাবো।’

” আমি কিছু দেখতে চাইনা‌। আমাকে নামিয়ে দিন আমি কোথাও যাব না। ‘

বলেই আমি দরজা খুলতে গেলে ইহান আমাকে টেনে সিট বেল লাগিয়ে বলে,

‘ চুপচাপ বসো নাহলে কিন্তু সময় নষ্ট না করে গাড়িতেই বাসরটা সেরে ফেলবো।’

‘ ধ্যাত।’

গাড়ি চলতে লাগলো। আমি লজ্জা অন্যদিকে তাকিয়ে থাকি। হঠাৎ আমার ফারিয়ার কথা মনে পড়ে। এক মাসে এক বার ও দেখি নাই‌। জিজ্ঞেস করলে ও ইহান বলে নি। আজ আবার জিজ্ঞেস করলাম,

‘ আচ্ছা ফারিয়া আপু কোথায় তাকে ইনভাইট করেন নি।’

‘ ও তো অস্ট্রেলিয়া। ইনভাইট করলেই আস্তে পারবে নাকি‌।’

‘ আপনি চলে এলেন উনি এলো না কেন?’

‘ সে অনেক কাহিনী। এতো বলতে পারব না। শুধু জেনে রাখো আমার আরেক ফ্রেন্ড ছিল না এরিক।’

আমি বললাম, ‘ হুম।’

‘ ওরা দুজন বিয়ে করেছে।’

‘ কিহ ওই ছেলেটা না খ্রিস্টান।’

‘ হুম।’

‘ তাহলে বিয়ে আর উনি না আপনাকে ভালোবাসে।’

‘ বললাম তো অনেক কাহিনী বলা যাবে না।’

‘ ধুর’

ফারিয়াকে নি ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পরি। ইহান আমার মাথা ধরে কাঁধে রেখে ড্রাইভ করতে লাগে।

এদিকে শুভ্র রা ভেতরে গিয়ে ঊষাকে নিয়ে হাঙ্গামা করবে ভেবেছে কিন্তু একি ঊষা ইহান কোথায়? ওরা কেউ তো নাই। স্টেজে বর কনে বসবে স্থানে ছোট কয়েকটা বাচ্চারা ছবি তুলছে লাফালাফি করছে। সারা বাড়ি খুঁজে ওদের না পেয়ে পাগলের মতো ব্যর্থ হয়ে চলে গেল‌। ওরা আত্নীয় দের মতো সেজে গিয়েছিল তাই কেউ চিনতে পারিনি। আত্নীয় ভেবেছে।

ইহানের ডাকে জেগে উঠলাম।‌ আমাকে টেনে প্লেনে উঠলো। সাতটায় কক্সবাজার এসে পৌঁছেছি আমরা।
কটেজে উঠলাম। খুব সুন্দর সাজ সজ্জা সেখানের। আমার ফ্রেশ হতে এক ঘন্টা লাগলো সুতি সেলোয়ার কামিজ পরে নিলাম। তারপর দুজনে খাবার খেয়ে একটা ঘুম দিলাম।
এগারোটার দিকে ইহান আমাকে উঠিয়ে একটা সাদা সিল্কের শাড়ি পরতে দিল। নিজে হাতে সাজিয়ে চোখ বেধে কোথায় জানি নিয়ে এলো কোলে করে।

ঠান্ডা বাতাস বইছে আমার ঠান্ডা লাগছে তাই ইহানের সাথে চিপকে আছি।

ইহান আমাকে নামিয়ে চোখের বাঁধন খুলে দিল। গোলাপের পাপড়ি দিয়ে রাস্তা করা। দূরে একটা মোমবাতি জ্বালিয়ে রাখা চারপাশে ফুল দিয়ে সাজানো। আর লাল নীল বাতি জ্বলছে নিভছে‌। আমি ইহানের হাত ধরে এগিয়ে গেলাম সামনে। তখন উপর থেকে ফুলের বৃষ্টি হতে লাগলো। ঝরঝর করে ফুল আমার শরীরে পরছে আমি দু হাত মেলে এগিয়ে যাচ্ছি। এটাই আমার সারপ্রাইজ বুঝি‌। ইহান আমাকে টেনে ছোট টেবিলের সামনে নিয়ে এলো। একটা চকলেট কেক রাখা তার উপর আমার আর ইহানের নাম লেখা। সাথে সাথে সামনে লাইটিং এর মতো করে জ্বলে উঠলো একটা কথা। আমি লাভ ইউ মাই লাভ‌। আমার বাচ্চা ব‌উ।
আমি খিলখিলিয়ে হেসে উঠলাম। ইহান আমার হাত ধরে কেকটা কেটে এক টুকরো আমাকে খাইয়ে দিল আমিও খাইয়ে দিলাম।

ইহান পেছনে থেকে আমাকে জরিয়ে কাঁধে থুতনি ঠেকিয়ে কানের কাছে ফিসফিস করে বলল,

‘ নতুন জীবনের জন্য স্বাগতম বাচ্চা ব‌উ। এই আমাকে সারাজীবন সহ্য করতে পারবে তো! আমার ভালোবাসার অত্যাচার সারাজীবন তোমাকে সহ্য করতে হবে কিন্তু বাচ্চা ব‌উ।’

আমি ইহানের দিকে ঘুরে ইহানের কপালে চুমু খেলাম উঁচু হয়ে। তারপর বললাম, ‘ আপনাকে জীবনে পেয়ে আমি ধন্য। আপনি আমার জীবনের এক চিলতে রোদ। যা আমি সারাজীবন ধরে রাখতে চাই। আপনার বুকে মাথা রেখে প্রশান্তির নিঃশ্বাস নিতে চাই।’

ইহান আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বলল, ‘ ভালোবাসি প্রিয়তমা। আমার সুখের চাবিকাঠি।’

‘ আমিও ভালোবাসি খুব বেশি।’

সারপ্রাইজ টা কেমন হলো। শেষ করে দিলাম তো। সবাইকে ধন্যবাদ পাশে থেকে আমাকে উৎসাহ দেওয়ার জন্য। লাভ ইউ অল। সবাই ভালোবাসা নিবেন আমার।ধন্যবাদ ❤️

❤️সমাপ্ত ❤️

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here