এক_চিলতে_রোদ,Part_18,19

0
1210

#এক_চিলতে_রোদ,Part_18,19
#Writer_Nondini_Nila
#Part_18

রুমে এসে ঢকঢক করে পানি খেয়ে নিয়েছে। বাপরে কি রাগ ভাইয়ার কিন্তু এতো লাগলোই বা কেন?
কিছু আমার বোধগম্য হলো না।
এটা বুঝতে পেরেছি তার কারণ ছবি তোলা। এতে এতো রাগের কি আছে? সেটাই আমার মাথায় আসছে না।
তখন,
“ক-ক-কি হ-হয়েছে ভাইয়া আপনি এতো রেগে আছেন কেন?”
তোতলাতে তোতলাতে বললাম।
ভাইয়া অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আমার দিকে‌। আমি ঢোক গিলে তাকিয়ে আছি।
আমি ভাইয়ার থেকে ছুটার চেষ্টা করছি ছটফট করছি ভাইয়া আমাকে ছারছে না।
তুই রিহান এর সাথে এতো কি নিয়ে হাসাহাসি করছিলি।
আমি ভাইয়ার কথা শুনে থ মেরে গেলাম। হাসলাম ক‌ই। একটু হাসি হাসি মুখ করে তাকিয়ে ছিলাম ওইটা জাস্ট ভদ্রতা বলে।
আমি কিছু বলতে যাব তখনি ভাইয়ার ফোন বেজে উঠলো।ভাইয়ার ফোন বাজতেই ভাইয়া আমাকে ফট করে ছেড়ে দিলো।
ভাইয়ার চোখে মুখে অস্বস্থি দেখা যাচ্ছে।
ভাইয়া পকেট থেকে ফোন বের করে কানে দিলো আর বললো,
আমি বিজি আছি প্লিজ ইউ ডোন্ট ডিস্টার্ব মি।
বলেই ফোন কেটে দিল। আমি বিস্মিত হয়ে দাঁড়িয়ে আছি।
রিহান ছেলেটার সাথে বেশি মাখামাখি করিস না ছেলেটাকে ভালো লাগে নি।
বলেই আমার দিকে তাকালো।আমি তাকিয়ে ছিলাম। আমি কোথায় ওই ছেলের সাথে মাখামাখি করলাম। ভাইয়া কি সব বলছে,
আমি মাখামাখি করলাম কোথায়?
অবাক হয়ে চোখ ছোট ছোট করে বললাম।
ভাইয়া বলল,একটু আগে না কতো ছবি তুললি তারপর হাসাহাসি।
আমি হতভম্ব হয়ে বলল, ছবি তো আমি তুলতে চাইনি উনি ফট করে তুলে ফেলল আর হাসিটা শুধু ভদ্রতার জন্য দিয়েছি আমি কথাও নিজে থেকে বলি নি ওনিই এসেছিলো যেসে পরে।
ভাইয়া আমার দিকে তাকিয়ে ছিলো।এবার কপালে হাত রেখে আংগুল দিয়ে সাইফ করতে লাগলো চোখ বন্ধ করে। তারপর চোখ খুলে আমার হাত ধরে টেনে সবার কাছে চলে এলো আমি কিছু বুঝতে পারলাম না।
গাড়ি থেকে নেমে বাসায় এসে পরলাম সবাই রুমে চলে গেছে আমি পেছন পরেছে তখন কোথা থেকে ভাইয়া ছুটে এসে আমার সামনে দাড়ালো। আচমকা ভাইয়া কে এভাবে ছুটে আসতে দেখে চমকে উঠলাম। ব্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছি ভাইয়ার দিকে ভাইয়া আমার দিকে ঝুঁকে পরল,
আমি চমকে মাথা পেছনে নিয়ে গেলাম ভাইয়া আমার মাথা চেপে ধরে রাখলো। আমি মাথা পেছনে নিতে পারলাম না। ফ্রিজ হয়ে দাঁড়িয়ে র‌ইলাম ভাইয়া নিজের মুখটা একদম আমার কাছে নিয়ে এলো। আমি পাথর হয়ে গেলাম বোধদয় তবুও অস্পষ্ট সুরে বললাম,
কি করছেন ভাইয়া?
কানে গেল কিনা জানি ভাইয়ার নিঃশ্বাস আমার চোখে মুখে বাড়ি খাচ্ছে। হার্টবিট দ্রুত গতিতে লাফাচ্ছে। আমি চোখ খিচে বন্ধ করে ফেললাম তখন আমার কানে মৃদু আওয়াজ এলো,
ভাইয়া বলছে,
সরি তখন কার জন্য আমার কেন জানি রাগ হচ্ছিল খুব। কিন্তু রাগের কারনটা আমার অজানা। তুই কিছু মনে করিস না।
বলেই ভাইয়া আমাকে ছেড়ে দিয়ে চলে গেল। আমি পাথর হয়ে সেখানে দাঁড়িয়ে র‌ইলাম। কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে কথা বলার সময় ভাইয়ার স্পর্শ অনুভব করেছি। আমার শরীর কাঁটা দিয়ে উঠছে শিরায় শিরায়।
আমি দৌড়ে রুমে এসে ঢকঢক করে পানি খেলাম।
আপু এসে আমার দিকে অবাক তাকিয়ে বলল,
কিরে এমন হাঁপাচ্ছিস কেন?
আমি চমকে উঠলাম আপুর কথায়।
কিরে চমকালি কেন?
আমি কি বলবো বুঝতে পারছি না।আপু সন্দেহ চোখে তাকিয়ে আছে।
আমি ঢোক গিলে বললাম,
এমনি আপু আমার ক্লান্ত লাগছে ঘুমাবো‌।
আচ্ছা ফ্রেশ হয়ে আয়।
আমি ফ্রেশ হয়ে এসে শুয়ে পরলাম একটু আগের কথা খালি মনে পরছে।

পরদিন ভাইয়ার মুখোমুখি হতে লজ্জা লাগলো ওইভাবে সরি না বললেও হতো।
আমরা সবাই বাসায় চলে এলাম আসতে আসতে আমাদের সন্ধ্যা হয়েছে। বাসায় আসতেই লতা ছুটে এলো আমার আছে। ওর জন্য আমার খুব খারাপ লেগেছে আমরা সমবয়সী ও যদি যেতে পারতো কি তা সম্ভব না।
চাচির দিকে চোখ গেল সোফায় বসে পান খাচ্ছে আমার দিকে কটমট করে তাকালো। আমি সাথে সাথে মাথা নিচু করে ফেললাম। আমার কপালে যে কি আছে আল্লাহ মালুম জানে।
সবাই সামনে কিছু বললো না ইমা আপু বসে পরলো তার কাছে ইহান ভাই রুমে চলে গেল ইলা আপুও গেছে আমি ও চলে গেলাম।
সেদিন আর কিছু হলো না রাতে খেলাম ও না ঘুম দিয়েছি‌। সকালে ককর্শ আওয়াজ এ আমি ধরফরিয়ে উঠে বসলাম। বাইরে কেবল আলো হচ্ছে তারমানে ভোর সকাল।
সামনে তাকিয়ে আতকে উঠলাম, চাচি কঠিন মুখ করে তাকিয়ে আছে।
আমি কাঁপা কাঁপা গলায় বললাম,
চাচি তুমি এতো সকালে আমার রুমে কোন দরকার ছিলো কি লতা…
কথাটা শেষ হলো না তার আগেই চাচি এগিয়ে এসে আমার গালে ঠাস করে চড় বসিয়ে দিলো। চড় টা এতো জোরে ছিলো আমার মাথা ভনভন করে উঠলো। ব্যাথায় চোখ বন্ধ করে ফেললাম। এই ব্যাথা সহ্য করতে না করতেই আমার সবঙ্গ কেঁপে উঠলো, মাথার চুল শক্ত করে ধরেছে চাচি,
“বান্ধীরবাচ্চা তুই আমার নাকের ডগার উপর দিয়ে চলে গেল ধৈধৈ করে সিলেট। আমার এক মেয়ের মতো ছেলেটাকেও বস করে ফেলেছিস? সে তোর যাওয়া নিয়ে আমার কাছে আসে। ওই তুই না করলি না কেন কোন সাহসে গেলি। নিজেকে রাজকন্যা ভাবতে শুরু করেছিস।”
চাচি ছার আমার খুব ব্যাথা করছে। কান্না গলায়। কথা বলতে কষ্ট হচ্ছে এতো জোরে চেপে ধরেছে
সবাইকে বস করে লাফাতে লাফাতে চলে গেলি। তোকে আজ এর মাসূল দিতে হবে। খুব ভার বেরেছিস তুই।
আমি ছাড়া পাওয়ার জন্য ছটফট করছি চোখ দিয়ে গলগল করে পানি পরছে।
আমি তো জানতাম এমন কিছু হবে তবুও তখন নিজের যাওয়ার লোভটা সামলাতে পারিনি তাই তো আমি রাজি ছিলাম।
কিন্তু এখন আমার যে খুব কষ্ট হচ্ছে কি করবো আমি।
চাচি ছার তেই আমি বড় দম নিলাম।
কাঁদতে কাঁদতে বললাম, আমাকে ক্ষমা করে দাও চাচি আমি আর তোমার কথার অবাধ্য হবো না। এবারের এর মতো মাফ করে দাও।
চাচি এক গাদা জামা কাপড় দিয়ে গেল সব কাচতে হবে তারপর সকালে খাবার রান্না করতে হবে।
চাচি যেতেই আমি হু হু করে কেঁদে উঠলাম। লতা এসে আমার পাশে দাঁড়ালো।ওর চোখেও জল আমি কাদতে কাদতে জামা কাপড় নিয়ে বাথরুমে চলে গেলাম। রান্না করতে গিয়ে আজ হাত পুরে ফেললাম। ওইভাবে খাবার টেবিলে সব এনে রাখলাম তখন লতা সাহায্য করলো। হাত পুরেছে কাউকে বললাম না আর না বলার মতো কেউ আছে আমার।
সবাই এসে টেবিল এ বসলো ইহান ভাই সবার পরে আসলো এসেই আমার দিকে তাকালো। আমি মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছি। ইলা আপু ডেকে উঠলো,
ঊষা পানি দে তো।
আমি মাথা উঁচু করে তাকিয়ে আচ্ছা বলে পানি ভড়ে দিলাম। ইমা আর ইহান ভাই মুখোমুখি ছিলো তাই পানি দিতে গিয়ে ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে দেখি ভাইয়া খাচ্ছে কম আমার দিকে তাকিয়ে আছে বেশি‌। আমি হকচকিয়ে পিছিয়ে দাঁড়িয়ে র‌ইলাম সবার খাওয়া শেষ হতেই সবাই চলে গেল।
ইহান ভাই যাওয়ার আগে কফি চেয়ে গেল।
লতা খেতে বসেছে আমাকে আজ খেতে মানা করেছে। চাচি বলছে রাতের আগে খেতে দেবে না। এটা আমার শাস্তি। তাই আমি কফি করে ভাইয়ার রূমে এলাম। ভাইয়া বিছানায় বসে ছিলো কপালে হাত দিয়ে আমি যেতেই উঠে দাঁড়ালো।
আমি কফি বারিয়ে বললাম,
আপনার কফি ভাইয়া।
ভাইয়া আমার কফি নিলো না। ভ্রু কুঁচকে আমার মুখের দিকে হা করে তাকিয়ে আছে। আমি ভাইয়ার তাকানো দেখে জরোসরো হয়ে দাঁড়ালাম।
কফি নিন।
এবার ও রেসপন্স নাই। এমন করে তাকিয়ে আছে কেন? হঠাৎ আমার হাত গালে চলে গেল। সকালে চাচির থাপ্পড় এর আঘাত কি বুঝা যাচ্ছে নাকি‌।
তোর গালে কি হয়েছে?
আমি ভাইয়ার কথা শুনে চমকে উঠলাম। যা ভেবেছিলাম তাই হলো।
আমি কাচুমাচু করে দাঁড়িয়ে আছি।
কি হলো কথা বল? তোর গালে কি হয়েছে?
আমি হকচকিয়ে এদিক ওদিক তাকাতে লাগলাম,
এতো লাল হয়ে আছে কেন? মনে হচ্ছে…
ভাইয়ার কথার মাঝে বললাম, কিছু হয়নি। রাতে এক কাত হয়ে শুয়ে ছিলাম।তাই হয়তো লাল হয়ে আছে।
ভাইয়া এগিয়ে এসে তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে বলল,
এটা তো থাপ্পড় এর দাগ লাগছে। পাঁচ আঙুলের ছাপ স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। কে মেরেছে তোকে সত্যি করে বল মিথ্যা না বলে।
ভাইয়ার কথা শুনে থমকে গেলাম। ভাইয়া বুঝে গেছে এখন যদি চাচির কথা বলি আর ভাই যদি চাচি কে কিছু বলে তাহলে চাচি যে আমার কি অবস্থা করবে। না বলবো না।কফি ট্রি টেবিলের উপর রেখে দৌড়ে বাইরে আসতে গেলাম। এখান থেকে যেতে হবে।
দরজার বাইরে পা রাখতে যাব ভাই আমার হাত ধরে আটকে ধরলো। আমি থমকে দাঁড়িয়ে পরলাম। ভাইয়া টেনে আমাকে ভেতরে নিয়ে দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে আটকে ধরে বলল,
পালাচ্ছিস কেন না বলে‌।

#চলবে

#এক_চিলতে_রোদ
#Writer_Nondini_Nila
#Part_19

‘পালাচ্ছিস কেন না বলে?’
ভাইয়ার কথা শুনে আমি চমকে উঠলাম। ভাইয়ার নিঃশ্বাস আমার চোখে মুখে আছড়ে পড়ছে। ভাইয়া দেয়াল এক হাত রেখে আমাকে আটকে দাঁড়িয়ে আছে।আরেক হাত আমার কোমর ধরে আছে। আমি চোখ খিচে বন্ধ করে দাঁড়িয়ে আছি।ঘনঘন শ্বাস নিচ্ছি হার্টবিট দ্রুত গতিতে লাফাচ্ছে। ভাইয়ার এতো কাছে আসাতে আমি থরথর করে কাঁপছি।
কথা বলতে পারছি না। চোখ বন্ধ করেই বুঝতে পারছি ভাইয়া আমার দিকে তাকিয়ে আছে। তাও চোখ খুলতে পারছি না। শক্ত করে দাঁড়িয়ে চোখ বন্ধ করে আছি। দুহাতে শক্ত করে ওরনার কোণা ধরে আছি। আচমকা ভাইয়ার ঠান্ডা হাতের স্পর্শ আমার গালে পেলাম। ভাইয়ার স্পর্শ পেতেই আমি কেঁপে উঠলাম। সারা শরীরের লোম খাড়া হয়ে গেল। আমি খিচে বন্ধ করা চোখ খুলে ফেললাম।
চোখ পিটপিট করে তাকালাম। ভাইয়া আমার থাপ্পড় দেওয়া গালে নিজের এক হাত ডুবিয়ে রেখেছে। আলতো হাতের স্পর্শ দিচ্ছে। তার দৃষ্টি ও আমার গালে সীমাবদ্ধ। আমি বিস্মিত হয়ে তাকিয়ে আছি। কি করছে কি? ভাইয়া! বিষ্ময়ে হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে আছি। আমি কাঁপা কাঁপা গলায় বললাম,
‘কি করছেন ভাইয়া আপনি?’
ভাইয়া আমার কথা শুনে গালে থেকে হাত সরিয়ে নিলো। আমার থেকে সরে দাঁড়ালো। আমি বিস্মিত হয়ে দাঁড়িয়ে আছি। আমার সারা শরীর এখনো কাঁপছে ভাইয়া আমার এতো কাছে ছিলো। ভাইয়া হকচকিয়ে দূরে দাঁড়িয়ে আছে। তারপর বলল,
‘ যা এখানে থেকে।’
ভাইয়ার আওয়াজ পেয়ে চমকে মাথা উঁচু করে তাকালাম। ভাইয়া অন্য দিকে তাকিয়ে আছে।আমি দৌড়ে বেরিয়ে এলাম। বুকের ভেতর টিপটিপ করছে।
নিজের রুমে চলে এলাম। হাপাচ্ছি আমি। বিছানায় শক্ত হয়ে বসে পরলাম।
চাদর খামচে ধরে।‌ইহান ভাইয়া আমার এতো কাছে কেন এলো? আর এলেই আমার এমন লাগে কেন?
তখন চাচি এলো থমথমে মুখ করে।
আমি চাচিকে দেখে চমকে দাঁড়িয়ে পরলাম।
চাচি এসে রেগে তাকিয়ে অনেক কিছু বলল।আমি নাকি ইহান ভাই এর কাছে বিচার দিয়েছে মার এর কথা বলে।তাই নিয়ে অনেক বকে গেল আমি মাথা নিচু করে চাচির বকা শুনছি আর আমার চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পরছে।
‘ এই পানি দেখিয়েই তো আমার ছেলেকে নিজের দলে নিয়েছিস। সে তোর জন্য আমাকে কথা শুনায়। একদম ওর কাছে ঘেষবি না নাহলে আমার থেকে খারাপ আর কেউ হবে না। ‘
বলেই চাচি গটগট করে চলে গেল।
আমি ঝাপসা চোখে তাকিয়ে র‌ইলাম তার যাওয়ার দিকে। আমি কখন ইহান ভাইকে বললাম। আমি তো কিছু বলিনি। না বলেও কথা শুনতে হলো।
চোখ বন্ধ করে কাঁদতে লাগলাম লতা এসে আমার পাশে বসলো।
নিজেকে স্বাভাবিক করে ওকে নিয়ে বাগানে চলে এলাম। বাইরে এসে পানি দিতে লাগলাম গাছে। ফুল আমার খুব প্রিয়। পানি দিচ্ছি আর চোখ বন্ধ করে তার গন্ধ শুকছি। তখন মনে হলো কেউ আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি বাসায় দিকে তাকালাম। বাগান দেখা যায় ইহান ভাই এর রুম থেকে আমি ভাইয়ার রুমের দিকে তাকালাম। ভাইয়া দাঁড়িয়ে আছে তার দৃষ্টি আমার উপর। আমি ও ভাইয়ার দিকে তাকালাম তখন মনে পরলো চাচির কথা। আমি চোখ সরিয়ে ফুল গাছের পানি দিলাম। লতা ঘাস পরিষ্কার করছে।
পানি দিয়ে বাসায় চলে এলাম রান্নাঘরে গিয়ে থালা বাসন ধুয়ে নিলাম। চাচি তারপর আমাকে ডেকে রুমে মুছালো। তার নামাজ আদায় করতে হয় ঘর নাকি অপরিষ্কার। মুছে দিলাম।ইলা আপু ডাকলো তার জামা কাপড় ধুতে হবে। না খাওয়ার জন্য খারাপ লাগছিলো কি না শুনে উপায় নাই।

সারাদিন এভাবেই গেল রাতের আগে খেতে পেলাম না। যা আমি লতা ছাড়া আর চাচি ছাড়া কেউ জানে না। রাতে বেশি খেতে পারলাম না সারাদিন না খেলে একসাথে এতো খাওয়া যায় না। সারদিনের ক্লান্তিতে শুতেই ঘুমিয়ে পরলাম।
মাঝরাতে ঘুমের মধ্যে মনে হলো কেউ আমার ঘরে এলো। এসেই সে আমার পাশে বসলো। তারপর আমার মুখের দিকে গভীর ভাবে তাকিয়ে র‌ইলো। সে আমার কষ্ট টা উপলদ্ধি করতে পারলো। আমার থাপ্পড় দেওয়া গালে সে মাথা ঝুকে ঠোঁটের পরশ বুলিয়ে দিলো। আমি ঘুমের মাঝে কেঁপে উঠলাম যা দেখে যে মৃদু হাসলো। একটা মলম বের করে খুব আলতো ভাবে আমার ব্যাথা গালে লাগিয়ে দিলো। তারপর আমার দিকে তাকিয়ে থেকে কপালে কিস করে বেরিয়ে এলো।

ইমা রাত জেগে রিফাত এর সাথে কথা বলে আজ ও বলছে। পানি পিপাসা পায় কিন্তু আজ পানি আনতেই ভুলে গেছে আর ঊষা ও পানি দিয়ে যায়নি‌। ঊষা আজ ক্লান্ত বলে পানি দেয়নি রুমে গিয়ে ঘুমিয়ে পরেছে।
ইমা ফোন টেবিলের উপর রেখে পানির বোতল নিয়ে বের হয়ে সিঁড়ি দিয়ে নামতে সময় কারো সাথে ধাক্কা খায়।
চমকে উঠে বলে,
‘ কে কে ? ‘
ভয়ে ভয়ে। ইমার ভয়ার্ত কন্ঠ শুনে ইহান কেশে বলে,
‘ আমি ইহান। ‘
ইমা ইহানের কথা শুনে বুকে ফূ দিয়ে বলে,
‘ তুই এতো রাতে নিচে কি করছিস? ‘
ইহান আমতা আমতা করে বলে, ‘ ওই আমার পানি প্রয়োজন পরে তাই। ‘
‘ পানি কেন ঘরে পানি নেই।’
ইহান না বলে।
‘ ওহ আচ্ছা যা।’
ইহান তারাতাড়ি চলে আসে।
পরদিন সকালে ধরফরিয়ে উঠে বসি। কাল রাতে মনে হয়েছিলো কেউ এসেছিলো কিন্তু কে? অতিরিক্ত ঘুমে ছিলাম তবুও তার স্পর্শ আমার মনে আছে।কে ছিলো নাকি আমার মনে ভুল সব কি সপ্ন ছিলো।
খাবার টেবিলের সব রাখলাম আমি আর লতা তারপর দাঁড়িয়ে র‌ইলাম। একটু দেরি করে ভাইয়া এলো। ভাইয়া আজ খয়েরি রঙের শার্ট পরেছে খুব লাগছে। আমি একনজর তাকিয়ে চোখ সরিয়ে নিলাম। ভাইয়াকে দেখলেই আমার বুক টিপটিপ করে। খাওয়ার মাঝে যত বার তাকালাম ভাইয়া আমার দিকে তাকিয়ে আছে দেখলাম। আমি ভাইয়ার তাকানো দেখে সাথে সাথে চোখ সরিয়ে নিলাম।
ভাইয়া বেশি খেল না হালকা খেয়ে চলে গেল কলেজে যেখানে জব নিয়েছে সেখানে। দুপুরের পর ভাইয়া এলো আমি রান্না ঘরের দরজায় থেকে দেখলাম লতাকে দিয়ে কফি পাঠিয়ে দিলাম।চাচি ভাইয়ার কাছে যেতে মানা করেছে তাই।
দুইদিন চলে গেল আমি ভাইয়ার রুমে যাইনা। আশেপাশে ও যাইনা চাচির কড়া নিষেধ। আমি আড়াল থেকে ভাইয়াকে দেখি।
আপুর বিয়ের আর তিনদিন আছে।তাই এখন বিয়ের তোরজোর হচ্ছে।
দুপুরে খেয়ে চাচি আর ইলা আপু মার্কেট এ চলে গেল।
লতা আর আমি খাবার খেয়ে নিলাম গোসল করে। রুমে এসে ভেজা চুল ছেড়ে দিয়ে ছোট একটা আয়না আছে আমি তার সামনে বসে পরলাম। নিজের মুখের দিকে তাকিয়ে আছি। চুল থেকে টপটপ করে পানি পরছে আমি হাত দিয়ে ঝাড়া দিলাম চুল এজন্য আমার বড় চুল ভালো লাগে না। সামলানো কষ্ট। ব্লো কামিজ ভিজে কালো হয়ে গেছে। ওরনা একপাশে ফেলে চুল সামনে এনে হাত দিয়ে পানি ফেলছি। তখন আমার মনে হলো কেউ আমার সামনে দাড়িয়ে আছে তার ফর্সা পা আমি দেখতে পাচ্ছি।
ব্রাউন রঙের প্যান্ট পড়া এটা তো ভাইয়া পরেছিলো। আমি চুল ছেড়ে দিয়ে চমকে মাথা তুলে তাকালাম।
ভাইয়া ব্লো রঙের শার্ট পড়ে আছে। সে তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। আমি হকচকিয়ে উঠে দাঁড়ালাম।
কাঁপা গলায় বললাম।
‘ ভাইয়া আপনি আপনার কিছু লাগবে? ‘
ভাইয়া কিছু বললো না সেখানেই দাঁড়িয়ে র‌ইলো শক্ত হয়ে। আমার দিকে কেমন করে যেন তাকিয়ে আছে।আমি ওরনা ভালো করে গায়ে জরিয়ে সামনের দিকে পা বাড়ালাম আর করলাম ভুল।আমি তো ভুলেই গেছিলাম আমার চুলের পানি পরে ফ্লোর পিছিল হয়ে আছে।
আমি পা পিছলে পড়ে যাচ্ছি ভয়ে আমি চোখ বন্ধ করে চিৎকার করে উঠলাম।
আমি পরলাম না আমাকে ঝড়ের গতিতে ছুটে এসে ভাইয়া কোমর পেঁচিয়ে দুহাতে আগলে ধরলো। নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে।আমি ভাইয়ার শার্ট খামচে ধরে চোখ বন্ধ করে আছি।
ভয়ে আমার হাত পা কাঁপছে।
কপালে ভাইয়ার হাতের স্পর্শ পেয়ে চোখ মেলে তাকালাম। ভাইয়া আমার চুল সরিয়ে দিচ্ছে মুখে থেকে। আমার চুল মুখে এসেছিলো তা সরিয়ে দিয়েছে।
আমি কেঁপে উঠলাম।
ভীতু মুখ করে তাকিয়ে আছি ভাইয়ার দিকে।
ভাইয়া হা করে তাকিয়ে আছে আমার দিকে।
আমি নড়াচড়া করতেই ছেড়ে দিলো।
কিন্তু হাত ছারলো না। আমি হাতের দিকে তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে আছি। ছুটানোর চেষ্টা করছি পারছিনা শক্ত করে ধরে আছে।
ভাইয়া তার ভ্রুক্ষেপ না করে বলল,
‘ আমার কফি লাগবে! ‘
আমি বিস্মিত হয়ে তাকালাম এটা বলতে এসেছে নাকি।
আমি বিস্মিত, আচ্ছা লতাকে পাঠাচ্ছি।
আমার কথা বলতে দেরি হলো ভাইয়ার রেগে তাকাতে সময় লাগলো না।
আগুন চোখে আমার দিকে তাকালো শুধু তাকালো না নিজের সাথে মিশিয়ে নিলো। আমার হাত টেনে নিলো আমি আচমকা টানে ভাইয়ের বুকে গিয়ে পরলাম।
ভাইয়া হাত বাড়িয়ে আমার থুতনিতে ধরে উঁচু করে বলল,
‘ একদম আমাকে ইগনোর করার চেষ্টা করবি না।আমি তোকে বলেছি মানে তুই দিবি আমার কফি।’
বলেই ভাইয়া আমার দিকে তাকিয়ে র‌ইলো। আমি হতভম্ব হয়ে ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে আছি।ভাইয়া রেগে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। এতো রাগ কেন?
#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here