এক_চিলতে_রোদ,Part_20,21

0
1270

#এক_চিলতে_রোদ,Part_20,21
#Writer_Nondini_Nila
#Part_20

হতভম্ব হয়ে ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে আছি তার রাগের কারনটা আমার বোধগম্য হচ্ছে না।
আমি বুঝার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হলাম। ভাইয়ার মুখের দিকে তাকিয়ে আছি। তার ফর্সা মুখ লাল হয়ে আছে। হুট করে আমাকে ছেড়ে দিলো আমি হেলে পরেও সামলে নিলাম নিজেকে।
ভাইয়া আমাকে ছেড়ে দিয়ে সোজা দরজার দিকে হাঁটা ধরলো। আমি পেছন ঘুরে ভাইয়ার যাওয়ার দিকে পলকহীন তাকিয়ে আছি। তখন ভাইয়া দাঁড়িয়ে পরলো আমি উঁচু কন্ঠে বলল, কফিটা দ্রুত চাই।
বলেই দ্রুত পা চালিয়ে বেরিয়ে গেল। একবার ও পেছনে ফিরে তাকালো না। ভাইয়াকে দেখা যাচ্ছে না তবুও আমি সেদিকে হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে র‌ইলাম।
বুকের ধুকপুক কমে এসেছে।‌ ভাইয়ার ওতো কাছে আসলে এই ধুকপুক এতো বেড়ে যায় কেন? বুকে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে র‌ইলাম কমে গেছে একদম স্বাভাবিক এখন। বিছানায় বসে ভাইয়ার কথা ভাবছি। ভাইয়া কি? আমি তার আশেপাশে না যাওয়াতে রেগে আছে। কিন্তু এতে এতো রাগের কি আছে? আমি তো ইচ্ছে করে করিনি। চাচি তো বলেছে এটা। আর তার কথা অমান্য করলে আমার খারাপ বলে ভালো হবে না। যা হবে খারাপ হবে।
ভাইয়ার কফির কথা মনে পরতেই ঝট করে উঠে দাঁড়ালাম।‌ যে রাগ দেখিয়ে গেল এখন যদি কফি না দেয় আমার খবর আছে। ছুটে রান্না ঘরে আসলাম। কফি করে ভাবছি চাচি জানতে পারলে যে কি হবে? সে তো আমাকে বলেছে ভাইয়ার আশেপাশে কম যেতে। কিন্তু এখন না গেলেও ভাইয়া বকবে আজকে যাই চাচি তো বাসায় নাই‌ এখন। চিন্তা ভাবনা করে ভাইয়ার রুমের দিকে এলাম সিঁড়ির কাছে লতার দেখা পেলাম ও কফি হাতে দেখে বলল,
‘তুই নিয়ে যাবি নাকি আমি নেব।’
ভাইয়ার গম্ভীর কন্ঠের কথা মনে পড়ে আমার আমি লতাকে বললাম,
‘ না আমি যাই‌। ‘
লতা আচ্ছা বলে চলে গেল।আমি ভাইয়ার রুমে সোজা ঢুকে গেলাম। আমি ভেবেছি রুমে ঢুকে ট্রি-টেবিলের উপর কফি রেখে চলে আসবো তাই। আমি ভেতরে ঢুকে কফি রেখে পেছনে ফিরতেই চোখ যায় ভাইয়ার উপর। ভাইয়া মনে হয় এখন গোসল করে এসেছে। ভাইয়ার ফর্সা জীম করা বডিতে লেগে আছে বিন্দু বিন্দু জল। মাথা ভেজা চুল বেয়ে পানি নাক মুখ ছুঁয়ে লোমহীন বুকে গিয়ে ঠেকছে। আমি সেদিকে তাকিয়ে ছিলাম। বুকের ভেতর টিপটিপ করছে। তারাতাড়ি চোখ সরিয়ে পেছনে ঘুরে গেলাম। লজ্জায় আমার কান গরম হয়ে আসছে। বুকে হাত চেপে জোরে জোরে শ্বাস নিয়ে দরজার দিকে পা বাড়ালাম।
তখনি ভাইয়ার মোটা কন্ঠে বলে উঠলো, স্টপ,
আওয়াজটা কানে আসতেই থমকে দাঁড়িয়ে পরলাম। বুকে হাত দিয়ে ওইভাবেই দাঁড়িয়ে আছি।
আবার দাঁড়াতে বলছে কেন?
ভাইয়া আবার বলে উঠলো,
‘তোর সাথে আমার কথা আছে?’
আমি হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে আছি। আমার সাথে কি কথা আছে ভাইয়ার।
‘ কথা কানে যাচ্ছে না কথা আছে বললাম তো।’
আমি মাথা নিচু করে ভাইয়ার দিকে ফিরলাম হাত কচলাতে কচলাতে।
‘কি কথা ভাইয়া?’
‘এদিকে আয়। আর কফি আমার কাছে দে। ‘
বলতে বলতে ভাইয়া বিছানায় গিয়ে বসলো।
আমি তুলে দেখি উনি কালো টাউজার পরে আছেন। আর নীল গেঞ্জি। আমি স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে ট্রি টেবিলের উপর থেকে কফি নিয়ে ভাইয়াকে দিলাম।
‘জি কি কথা বলুন?’
তারাতারি জানতে হবে। আবার চাচি কখন চলে আসে। আমার তারাতাড়ি আছে।
ভাইয়া আয়েশ করে বসে কফিতে চুমুক দিয়ে শান্ত চোখে আমার দিকে তাকিয়ে বলল,
‘তুই আমার সাথে কথা বলিস না কেন?’
আমি ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে ছিলাম ভাইয়ার কথা শুনে হকচকিয়ে গেলাম। আমি তো ভাইয়ার আশেপাশেই যাইনা কথা কখন বলবো।
‘দুইদিন ধরে দেখছি আমার কফি নিয়ে আসিস না। এই রুমেই আসিস না।আমি যেখানে থাকি তার ধারের কাছেও যাস না।’
আমি বিস্মিত হয়ে ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে আছি। ভাইয়া এসব খেয়াল ও করেছে আমি তো বিশ্বাস করতে পারছি না।
‘কি হলো হ্যাবলার মতো তাকিয়ে আছিস কেন? উওর না দিয়ে।’
আমি সাথে সাথে চোখ সরিয়ে নিলাম আমি নাকি হ্যাবলার মতো তাকিয়ে আছি‌। কিন্তু ভাইয়াকে কি বলবো?
ভাইয়া উওরের আশায় তাকিয়ে আছে ভ্রু কুঁচকে।
আমি বললাম,
‘এমনটা না আসলে আমি ব্যস্ত থাকি অন্য কাজে তাই আর একজন দিলেই হলো কফি তাইনা। আর কথা কি বলতাম? কথা বলার দরকার ও হয়নি তাই বলিনি।’
ভাইয়া কপাল কুঁচকে তাকিয়ে র‌ইলো। তারপর কি যেন ভেবে বলল,
‘তুই সারাদিন বাসায় থাকিস যে কোচিং করিস না।’
কোচিং এর কথা শুনে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললাম, নাহ।
‘কেন? তোর না এস এস সি পরীক্ষা এবার তাহলে পড়া বাদ দিয়ে সারাদিন এসব করিস কেন? কখনো তো পরতের দেখি না।’
‘রাতে পরি একটু একটু।’
আমাকে পরা সময় দিলে তো পরবো। রাতে ক্লান্তিতে আর পরতেই মন চায়না।
‘একটু একটু পরলে হবে।’ খানিক রাগ নিয়ে।
‘না হলে না হবে। সেটা আপনাকে ভাবতেই হবে না।কাজ করে আর পড়ার সময় পেলে তো পরবো।’
‘এতো কাজ করার কি দরকার?’
‘আছে দরকার। না করলে করবে কেন?’
‘কেন লতা?’
‘ও একা এতো কিছু করতে পারবে না।’
‘তাহলে কাজের লোক রাখলেই হয়।’
‘আমি থাকতে তার কি‌ দরকার ?’
‘তুই নিজেকে কাজের লোক ভাবিস?’
অবাক হয়ে।
‘আমি কি তার থেকে বেশি কিছু এই বাড়িতে আমার তো মনে হয়না?’
জিজ্ঞাসু চোখে তাকিয়ে।
ইহান কিছু বলতে পারলো না। চুপ করে ঊষার দিকে তাকিয়ে আছে ওর চোখ ছলছল।
ও তীক্ষ্ণ নজরে তাকিয়ে আছে সেই মায়াবী কষ্টে ভড়া চোখের দিকে। ইহানের বুকের ভেতর ধুক করে উঠে এই পানি দেখলে।ঊষা সাথে সাথে আসি বলেই ছুটে চলে যায়।
রাতে খাবার টেবিলে রেখে রান্না ঘরের দরজায় দাঁড়িয়ে তাকিয়ে আছি।সবাই খাচ্ছে সবাই আছে ইহান ভাই নাই।কেন নাই জানি না সেই বিকেলে কথা হয়েছিল আর তাকে দেখি নি।
আমার উৎসুক চোখ তাকে খুঁজছে। সবাই খেয়ে চলে গেল লতা ও খেতে বসে পরলো আমিও আর দেরি না করে খেতে বসলাম। রুমে এসে ভাবলাম।
ভাইয়া খেতে এলো না কেন?
কিন্তু ফলাফল শূন্য আমি কি করে জানবো।
পরদিন খাবার টেবিলে ভাইয়ার দেখা মিললো চোখ লাল হয়ে আছে যেন রাতে ঘুম হয়নি।
খাওয়ার মাঝে ভাইয়া আমাকে বললো,
‘ঊষা রেডি হয়ে খাবার খেয়ে নে তারাতাড়ি।’
আমি সহ খাবার টেবিলের সবাই অবাক হয়ে তাকালো ভাইয়ার দিকে।
ভাইয়া খাবার মুখে দিয়ে সবার দিকে তাকিয়ে বলল,
কি হয়েছে এভাবে তাকিয়ে আছো কেন সবাই?
চাচি বলল, ঊষাকে রেডি হতে কেন বলছিস? ও কোথায় যাবে?
ভাইয়া খেতে খেতে শান্ত ভঙ্গিতে বলল, ওকে কোচিং এ ভর্তি করাতে যাব‌। কয়েকদিন পর ই তো এক্সাম।
সাথে সাথে চাচি হুংকার দিয়ে উঠলো,
‘কি বললি তুই? কোচিং এ ভর্তি করার কি দরকার? ওকে কোচিং এ ভর্তি করলে বাসায় কিছু কে করবে শুনি। ও কোথাও ভর্তি হবে না‌।’
‘হবে আম্মু। আমি করাবো। আর কাজ করার জন্য অবশ্যই ওকে রাখা হয়নি বাসায়। তোমার কাজের যদি অবহেলা হয় আমি একজন ভালো কাজের লোক এনে দেবো। ডোন্ট ওয়ারি।’
‘কাজের জন্য রাখা না হলেও আমি ওকে বসিয়ে খাওয়াতে পারবো না।’
তীব্র রাগ নিয়ে বলল।
‘আম্মু তুমি ওকে খাওয়ানোর খোটা দিচ্ছো।’
‘হুম দিচ্ছি। আর কোচিং করার কি দরকার ভারতি টাকা খরচ। বাড়িতে পরে যা পারবে তাই পরিক্ষা দেবে।’
‘বাড়িতে ওকে পরার সময় কি দাও?’
‘কি বলতে চাইছিস? আমি ওকে সারাদিন খাটায়?’
‘আমার বলার দরকার নাই। তুমি নিজেই জানো কি করো?’
‘তুই আমার সাথে এইভাবে কথা বলছিস?’
‘তুমি বাধ্য করেছো? কাকার তো কম টাকা ছিলো না সেগুলো দিয়ে তো ঊষা পায়ের উপর পা তুলে খেতে পারতো কি হয়েছে সেগুলো?’
‘আমি কি জানি?’ ভয় পেয়ে বললো।
‘তাই তো তুমি কিছু জানো না? আব্বু তুমি এমন চুপ করে আছো কেন? নিজের ভাইয়ের মেয়েকে কি একটু ভালো করে মানুষ করতে পারতে না। এইভাবে কাজের লোক না বানিয়ে।’
তিনি মাথা নিচু করে আছে সে তার স্ত্রীর সাথে পেরে উঠে না তাই তো ঊষার জন্য কিছু করতে পারেনি। চোখের সামনে ওর কষ্ট ও দেখতে পারেনা তাই তো বাসায় ও থাকে না বেশি সময়।
আমি হতভম্ব হয়ে সব কান্ড কারখানা দেখছি। কি সব হচ্ছে? আমার জন্য সবার সাথে এইভাবে কথা বলছে ভাইয়া! চাচি একটু পর পর রাগী চোখে তাকাচ্ছে আমার দিকে। যেন চোখ দিয়েই গিলে খাবে।
চাচি আর ভাইয়ার তর্ক বিতর্ক সৃষ্টি হলো আমি তাদের ঝগড়া দেখছি চাচি কিছুতেই আমাকে কোচিং এ ভর্তি হতে দেবে না। আর ভাইয়া ভর্তি করেই ছাড়বে।
চাচি রেগে গমগম করে চলে গেল চিল্লাচিল্লি করতে করতে নিজের রুমে।
আমি হতবুদ্ধি হয়ে দাঁড়িয়ে আছি।
আচমকা ভাইয়া এসে আমার সামনে দাড়ালো। আমি বড়সড় চোখ করে তাকিয়ে আছি।
ভাইয়া শক্ত গলায় বলল,
এভাবে দাঁড়িয়ে আছিস কেন? তোকে রেডি হতে বললাম না।
আমি বিস্মিত হয়ে তাকিয়ে আমতা আমতা করে বললাম, আমি কোচিং এ ভর্তি হবো না।
তোকে আমি জিজ্ঞেস করেছি কি না তো ? তাহলে নিজের মতামত প্রকাশ করছিস কেন? রেডি হতে বলেছি চুপচাপ রেডি হয়ে আয়।
গম্ভীর গলায় কঠিন চোখ মুখ করে উঁচু কন্ঠে বলল ভাইয়া। তার কথায় আমি ভয়ে চোখ বন্ধ করে ফেললাম। ভয়ে আমার বুক ধুক করে উঠলো যেন।
ভাইয়া কিছু বলতে পারছি না।ইমা আপু এগিয়ে এসে বলল,
যা তারাতাড়ি রেডি হয়ে আয়।
তার চোখ মুখ উজ্জ্বল।
আমি মৃদু কন্ঠে বললাম, কিন্তু চাচি ..
সেসব নিয়ে চিন্তা না করে নিজেকে নিয়ে ভাব এই সুযোগ আর নাও পেতে পারিস।
জানিনা আমার কি হলো আমি রেডি হতে চলে গেলাম। আসলে ভাইয়া রাগ দেখে আমি প্রচন্ড ভয় পেয়ে গেছি। রেডি হয়ে বাইরে এসে দেখি ভাইয়া গাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে আছে। আমি‌ গুটিশুটি পায়ে এগিয়ে এলাম।

#চলবে

#এক_চিলতে_রোদ
#Writer_Nondini_Nila
#Part_21

আমি মাথা নিচু করে ভাইয়ার সামনে আসতেই দরজা খুলে ভেতরে বসতে বললো।
আমি মাথা তুলে তাকালাম, ভাইয়াকে কিছু বলতে চাই।
ভাইয়া কপাল কুঁচকে তাকিয়ে আছে। আমার দাঁড়িয়ে থাকা তার রাগ বাড়ছে।
আমি আমতা আমতা করে বললাম,
‘ভাইয়া এভাবে চাচির বিরুদ্ধে না গেলে হতো না।এটা নিয়ে চাচি রাগারাগী করবেন!’
কথাটা বলেই ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে দেখলাম সে চুপ করেই আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
আমি তাকাতেই বলল,
‘ বলা শেষ হলে তারাতারি কর। আমাকে কলেজ যেতে হবে। ‘
‘আমার কথাটা…
‘ভেতরে যা।’
ভাইয়ার রাগী কন্ঠে আমি কেঁপে উঠলাম আর কিছু না বলে ভেতরে গিয়ে বসলাম।
ভাইয়া ড্রাইভিং সিটে বসে বললো,
সিট বেল বাঁধ।
আমি জানালা দিয়ে তাকিয়ে ছিলাম ভাইয়ার কথায় চমকে ফিরে তাকালাম।
হুম।
বলেই সিট বেল বাঁধতে লাগলাম। কিন্তু লাগাতে পারছি না। চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি হচ্ছে না কি মুশকিল। তখন একটা ঠান্ডা হাত আমার দিকে এগ এগিয়ে এলো আমি মাথা তুলে নিজের খুব নিকটে ভাইয়ার অস্তিত্ব পেলাম। হতভম্ব হয়ে হাত আলগা করে সরে গেলাম। ভাইয়া বিরক্ত মুখ করে বলল,
এটাও বাঁধতে পারিস না।
আমি কাচুমাচু মুখ করে তাকিয়ে আছি ভাইয়ার কুঁচকানো কপালের দিকে। ভাইয়া সিট বেল লাগিয়ে নিজের জায়গায় বসে ড্রাইভিং করতে লাগলো আমি ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে রইলাম। আমার জন্য এতো কথা শুনালো চাচিকে তার বিরুদ্ধে গিয়ে কোচিং এ ভর্তি করতে নিয়ে যাচ্ছে।
হঠাৎ মনের ভেতর সুখের আবাস খুঁজে পেলাম। সুখ সুখ অনূভুতি হচ্ছে খুব চাচির ভয় এক পাশে ফেলে নিজের সুখ অনুভব করতে লাগলো।
ভাইয়ার দিকে মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে আছি। তখন হঠাৎ ভাইয়া আমার দিকে তাকালো আমি তারাতাড়ি চোখ সরিয়ে জানালার বাইরে তাকালাম।
গাড়ি থেকে নেমে ভাইয়ার পেছনে পেছনে যেতে লাগলাম। ভাইয়া আমার হাত ধরে লিফটে উঠে গেল। পাশাপাশি দাঁড়িয়ে আছি দুজন ভাইয়া ফোন টিপতে ব্যস্ত আমি চুপ করে দাঁড়িয়ে একবার ভাইয়ার দিকে তাকাচ্ছি তো একবার নিচের দিকে।

আর একমাস আছে পরিক্ষার এখন কি কোচিং এ ভর্তি হ‌ওয়া যাবে।
নিচু কন্ঠে বললাম ভাইয়াকে।
ভাইয়া আমার কথায় ভ্রু কুটি করে ফোন থেকে চোখ সরিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বলল,
সেটা আমি দেখে নেব।তোকে ভাবতে হবে। তুই মন দিয়ে শুধু পড়ালেখা করিস।
আমি মাথা নাড়লাম।
আমাকে নিয়ে একটা কক্ষে গেল। যেখানে টিচার ছিলো। তার সাথে কথা বললো আমার ভর্তি নিয়ে তারা বললো এতো লেট কেন?
ভাইয়া নিজের মতো বলে ম্যানেজ করে নিলো। তারা দ্বিমত করলেও পরে মেনে নিলো।আমি পুরোটা সময় মাথা নিচু করে ছিলাম।

ক্লাস টাইম বিকেল এ। তাই কাজ শেষ করে আমরা চলে এলাম।
মুখ এমন করে রেখেছিস কেন? কি হয়েছে?
লিফটে ঢুকে দাড়াতেই ভাইয়া এই কথা বললো।
আমি মলিন মুখেই ভাইয়ার দিকে তাকালাম তিনি কপাল কুঁচকে তাকিয়ে আছে।
লিফটে আরো লোক আছে আমি তাদের দিকে এক নজর তাকিয়ে চোখ সরিয়ে নিলাম।
কিছু হয়নি।
ভাইয়া আর কিছু বললো না। আসার সময় একটা রেস্টুরেন্টে নিয়ে ভাইয়া থামালো।
এখানে কেন?
ভাইয়া তার উওর এ কিছু না বলে আমাকে তার সাথে যেতে বললো।
খাবারটা খা।
এখানে খাবার এর কি দরকার ছিলো।
তুই না খেয়ে এসেছিস ভুলে গেলি নাকি‌।
আমার খিদে পায়নি।
তোর সব কিছু তেই না করতেই হবে তাইনা।এখন না খেলে এগুলো নষ্ট হয়ে যাবে। তারাতাড়ি খা।
কিন্তু…
ভাইয়ার চাহনি দেখে আর না করতে পারলাম না খেতে লাগলাম। বিরিয়ানি অডার‌ করেছিলো আমি খেতে না চাইলেও এখন তৃপ্তি করে খাচ্ছি খুব খিদে পেয়েছিল।তার উপর বিরিয়ানি আমি হাত দিয়ে খেলাম। আশেপাশে তাকিয়ে খাওয়া অফ হয়ে গেল অনেকে তাকিয়ে আছে।
সবাই চামচ দিয়ে খাচ্ছে আমি একা হাত দিয়ে খাচ্ছি। খানিক লজ্জা পেলাম খেতে ইচ্ছে করছে না এখন আমার।
কি হলো খাচ্ছিস না কেন?
ভাইয়া তীক্ষ্ণ চোখে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আমার দিকে।
আমি মাথা নিচু করে বললাম,
আমি আর খাব না।
ভাইয়া অবাক হয়ে বলল, কেন?
আমার পেট ভরে গেছে।
ইহান ঊষার দিকে থেকে চোখ সরিয়ে সবার দিকে তাকিয়ে বলল,
বাঙালিরা হাত দিয়ে খেয়েই অবস্থ। তাই এই হাত দিয়ে খাওয়ার জন্য লজ্জিত হয়ে খাওয়া অফ করিস না।
আমি চমকে মাথা তুলে তাকালাম ভাইয়ার দিকে।

বাসায় আসার পর থেকে আমি ভয়ে ভীতু মুখ করে বসে আছি।এটা ওটা করছি। চাচি গম্ভীর মুখ দেখেছি কিন্তু আমাকে কিছু বলেনি রেগে তাকিয়েছে শুধু।
আমি চাচির সামনে এলেই ভয়ে কাঁপা কাঁপি করেছি। তাকে সাহস করে সরি বলতে চেয়েছিলাম। কিন্তু সাহস হয়নি কথা বলার।
সন্ধ্যায় ভাইয়া আমার রুমে দুইটা ব‌ই নিয়ে এলো।
আমি তখন নামাজ থেকে উঠে বসেছিলাম তখন ভাইয়াকে আসতে দেখে চমকে দাঁড়িয়ে পরলাম।
এই ধর ব‌ই।
এগুলি আবার কিসের ব‌ই?
অবাক হয়ে বললাম।
এই ব‌ই থেকে পরতে হবে। বোর্ড প্রশ্ন আছে।
ব‌ই আমার হাতে দিয়ে চলে যেতে গিয়ে আবার ফিরে এসে বলল,
আম্মু তোকে কিছু বলবে না ভয় পাস না।
কথাটা বলেই ভাইয়া গটগট করে চলে গেল আমি বিষ্ময়ে হতভম্ব হয়ে ভাইয়ার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে র‌ইলাম।
পরদিন কোচিং এ গেলাম একা। ভাইয়া আস্তে চেয়েছিলো আমি মানা করেছি একাই পারবো বলে। বাসায় অনেক কাজ এখন দুইদিন পর গায়ে হলুদ আপুর।
আজ সবাই মার্কেটে যাবে। আমি কোচিং এ এসে চুপচাপ একটা সিটে বসে আছি আগেই চলে এসেছি।একে একে সবাই আসলো আমাকে নতুন দেখে জিজ্ঞেস করলো আগে কেন ভর্তি হয়নি। আমি সমস্যা বললাম পারিবারিক। সবাই টিটকারি মারা কথা বলে চলে গেল।
আমি একাই এক সিটে বসে র‌ইলাম।
কোচিং শেষে বের হয়ে গাড়ির জন্য দাঁড়িয়ে আছি তখন একজনকে দেখে চমকে উঠলাম,
রিহান এখানে কি করে?
সেও আমাকে দেখে অবাক হয়েছে তারপর মুখে হাসি টেনে আমার কাছে এসে বলল,
হাই ঊষা, তুমি এখানে?
আমি ভদ্রতা দেখিয়ে হেসে বললাম,
হুম। আমি এখানে কোচিং করি।
ওহ আচ্ছা।কতোদিন পর দেখা হলো। তোমাকে দেখে খুব চমকিয়েছি খেয়েছি। আচ্ছা বলো কেমন আছো?
আলহামদুলিল্লাহ ভালো, আপনি?
ভালো না থাকলেও এখন তোমাকে দেখে ভালো হয়ে গেছি‌।
আমি বিস্মিত হয়ে তাকালাম।
মানে,
কিছু না তোমাকে খুব মিস করছিলাম।
আমি বিস্মিত হয়ে বললাম, কেন?
ওই এমনি।তোমার ফোন নাম্বার টা দেওয়া যাবে‌। আসলে একটু আধটু কথা বলতাম।
ছেলেটাকে একটুও সুবিধার লাগে না, তবুও কিছু বলতে পারছি না,,
আমার ফোন নেই।
কথাটা বোধহয় বিশ্বাস হলো না অবাক হয়ে হালকা কেশে বললো,
আরে আমি ওতো ডিস্টাব করবো না। মিথ্যা কেন বলছো দাওনা।
মিথ্যা কেন বলবো সত্যি আমার ফোন নেই।
খানিক রেগে বললাম।
ও আচ্ছা। কিছু মনে করো না কেমন তুমি কি এখন বাসায় যাবে।
হুম।
তাহলে চলো তোমাকে পৌঁছে দেয়।
না না তার দরকার নেই আমি একাই যেতে পারবো।
আরে চলো তো। ওই যে গাড়ি দাঁড়াও থামাচ্ছি‌‌।

আমার কথা শুনলোই না গাড়ি থামিয়ে নিজে উঠে বসলো আমাকেও বসার জন্য ডাকতে লাগলো। আমি যাব না মন স্থির করেছি। কিন্তু এখন না গিয়ে ও উপায় নাই অটো থেকে ড্রাইভার ও আরেকজন লোক তারাতাড়ি উঠতে বসছে।
উফফ বিরক্ত হয়ে উঠে বসলাম। এনার সাথে দেখা যে কেন হলো যতসব।
সারা রাস্তা পাগল করে ফেলেছি কথা বলতে বলতে আমি হু হা করেছি।গাড়ি বাসায় সামনে আসতেই আমার আগে রিহান বেরিয়ে এলো। আমি বিরক্তিকর চাহনি দিয়ে নামলাম। রিহান হুট করেই আমার দিকে ঝুঁকে পড়ল আমি চমকে পিছিয়ে গেলাম।
রিহান বলল,
তোমার সাথে দেখা হয়ে আমার মনটা ফুরফুরে হয়ে গেছে। কালদিন পর তো দেখা হবে।
আমি ভ্রু কুঁচকে বললাম, কিভাবে?
আরে বিয়েতে আমি ছেলে পক্ষ আর তুমি মেয়ে পক্ষ।
উফ এটা তো ভুলেই গেছিলাম। এতো জ্বালাতন করতে পারে জাস্ট অসহ্য।
আমি সরে গেটের ভেতরে চলে গেলাম।
রাগ লাগছে লোকটা কে একটুও ভালো লাগেনা। গায়ে পড়া টাইপের।
এসব ভাবতে ভাবতে ভেতরে ঢুকে পরলাম। বাসার সবাই সোফায় বসে ছিলো ডয়িং রুমে।আমি সেদিকে তাকিয়ে নিজের রুমে যাবে তখন চোখ পরলো ইহান ভাইয়ের দিকে সে সিঁড়ির কাছে দাঁড়িয়ে আছে চেয়াল শক্ত করে। চোখ মুখ লাল টকটকে হয়ে আছে। রাগী চোখ আমার দিকে তাকিয়ে আছে‌। আমি সেদিকে তাকিয়ে আছি ভীতু মুখ করে।
ভাইয়া ঠোঁট নাড়িয়ে মৃদু আওয়াজ করে বললো,
ঊষা আমার কফিটা নিয়ে আয়।
বলেই গমগম করে উপরে চলে গেল।আমি হাঁ করে তাকিয়ে র‌ইলাম।
এমন রাগ দেখালো কেন?
আমি রুমে গিয়ে ব্যাগ রেখে রান্না ঘরে থেকে কফি করে নিয়ে যেতে লাগলাম তখন চাচি এসে ছিনিয়ে নিলো কফি, আমি চমকে উঠলাম,
লতা ক‌ইরে কফিটা দিয়ে আয় তো ইহান কে!যা।
আমি থমকে দাঁড়িয়ে র‌ইলাম।

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here