এক_চিলতে_রোদ,Part_2,3

0
1397

#এক_চিলতে_রোদ,Part_2,3
#Writer_Nondini_Nila
#Part_2

কেবল‌ই ঘুমিয়েছিল ইলিনা বেগম( ইহানের মা) তখনই তার ঘুমের ব্যাঘাত ঘটায় কাছের মেয়ে লতা এসে ডেকে তুলে। রেগে লতাকে এক ধমক দিয়ে উঠে ইলিনা।ঘুমের মধ্যে ডিস্টাব একদম পছন্দ করেনা। রেগে বলে উঠে,
ওই কি হয়েছে তুই এই সময় আমার ঘুমের বারোটা বাজিয়ে ডাকছিস কেন?
ম্যাডাম ঊষার তো জ্বর এসেছে।ও জ্ঞান হারিয়েছে তারাতাড়ি চলেন।
জ্বর এসেছে তো আমি কি করবো? আমি কি ডাক্তার যতসব আপদ। একটু শান্তিতে থাকতে দেবে না জ্ঞান হারিয়েছে মরে তো যায় নাই। এতো হাক ডাক করছিস কেন। তুই যা করার কর আমাকে একদম বিরক্ত করবি না।
বিরক্তের সাথে কথা বলেই ইলিনা ভেতরে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালো। তখন লতা বলে উঠলো,
ইহান ভাইজান ঊষার কাছে আছে তিনি আপনাকে যেতে বলেছে।
ইহান ঊষার কাছে আসে শুনেই চমকে উঠে ইলিনা। ফিরে তাকিয়ে বলে,
কি বললি তুই?
হ ম্যাডাম আমি ঠিকই ক‌ইছি।
চমকে উঠে তারাতাড়ি ঊষার রুমে আসতে লাগলো।
এদিকে ইহান লতার দেখানো রুমে এনে ঊষাকে বিছানায় শুইয়ে দিল।‌ তারপর কপালে নিজের হাতটা রাখলো নিজের কাছে সংকোচ হচ্ছিল হাত দিতে তবুও রাখলো। হাত রাখতে রাখতেই সরিয়ে নিলো এতো তাপ যে রাখা যাচ্ছে না।ও হাত সরিয়ে গভীর ভাবে তাকালো ঊষার শুকনো মুখের দিকে।
ও খেয়াল করলো ঊষার চোখ খুলে আছে। কান্না করলে এমন হয়। ইহান কপালে ভাঁজ ফেলে ভাবছে মেয়েটা কি কেঁদেছে?
আশার পর তো একে একবার ও দেখি নি‌ তখন কোথায় ছিলো?
ভাবতে ভাবতে উঠে পানি আনলো জ্ঞান ফেরানো দরকার। হাত দিয়ে কিছু পানি ঊষার মুখে ছিটিয়ে দিলো।ঊষা নিজের চোখে মুখে ঠান্ডা পানির স্পর্শে পেয়ে পিটপিট করে চোখ মেলে তাকায়। আর তাকিয়ে নিজের মুখের কাছে একটা অপরিচিত ছেলেকে দেখতে পায় যে ওর দিকে ঝুঁকে তাকিয়ে আছে ওর দিকে। একটা অচেনা ছেলেকে নিজের দিকে ঝুঁকে থাকতে দেখে আমি চমকে উঠি। ছেলেটা আমার দিকে ভ্রু কুটি করে তাকিয়ে আছে আমি তাকাতেই সে বলে উঠে,,
আর ইউ অলরাইট।
আমি ভয়ার্ত দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে আছি।সে আমার ভয়ার্ত মুখ দেখে নিজের মুখে হাসি এনে সোজা হয়ে দাড়ালো।আমি তাকে দাঁড়াতে দেখেই ধরফরিয়ে উঠে বসলাম,,
আর কাঁপা কাঁপা গলায় বললাম,,
কেএএএএ আপনি?
উনি আমার দিকে ঠোঁটে কোনে হাসি রেখে তাকিয়ে আছে।আমি ভীতু মুখ করে তাকিয়ে আছি।
ইহান ঊষার ভীতু মুখ দেখে না হেসে পারলো না মেয়েটা ওকে ভয় পেয়েছে দেখে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে।
আমি আবার বলে উঠলো,,, কে আপনি এখানে কি করছেন?
এবার ইহান বলে উঠলো, আমার বাসায় আমি কি করছি জিজ্ঞেস করছো? ভেরি ফানি, তুমি কে সেটা বলো?
আমি উনার কথা শুনে থতমত খেয়ে গেলাম।উনার বাড়ি মানে কি সব বলছে? আমি চিন্তা করছি কে উনি উনার বাড়ি কিভাবে হলো? তখন উনি একাই বলে উঠলো,
আমি ইহান। এই বাড়ির একমাত্র ছেলে।
ওনার কথা শুনে আমার চোখ দুটো রসগোল্লার মত বড় বড় হয়ে গেল। আমি ঢোক গিলে উনার দিকে ভীতু মুখ করে তাকিয়ে আছি। উনি তাহলে ইহান ভাইয়া। একদমই চিনতে পারিনাই চিনতে পারবো কিভাবে উনার চেহারা তো আমার মনেই নাই। আগেও খুব একটা দেখা হয় নাই দুই বারের মত দেখা হয়েছিল। কারণ আমরা তো এখানে থাকতাম না আমি আব্বু আম্মু আমরা তো চিটাগাংয়ে থাকতাম। আর ইহান ভাইয়া তো আমাকে চিনে বেশি আর আগে চিনলেও এখন আমার মতো হয়তো মনে নাই।
“এবার তোমার পরিচয় দাও তোমাকে তো ঠিক চিনলাম না।
আমি নিজের পরিচয় দিতে যাব তখনই চাচি এলো এক ছুটে। আর এসেই একবার আমার দিকে তো একবার ইহান ভাইয়ের দিকে তাকালো। আমি চাচীকে দেখে ভয়ে মাথা নিচু করে ফেললাম,,
ইহান নিজের মাকে দেখে বলে উঠল,
আম্মু তোমরা কি বলতো বাসায় একজন অসুস্থ তার খোঁজ না নিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছো?
ইলিনা ছেলের দিকে তাকিয়ে চোখ ঘুরিয়ে গরম চোখে ঊসার দিকে তাকালো তারপর মুখে হালকা হাসি টেনে বললো,
আমার মাথা থেকে একদম বেরিয়ে গিয়ে ছিল রে। ওর এতো শরীর খারাপ আমি তো জানতাম ই না। ও তো বিকেল ভর ঘুমিয়ে কাটিয়েছে রাতে খেতে ও এলো না কতো ডাকলাম সারাদিন এতো ধকল গেছে খেয়াল করিনি।
দাঁতে দাঁত খিচে গরম চোখে ঊষার দিকে তাকালো। চাচীর মিথ্যে কথা শুনে আমি অবাক হয়ে গেলাম।
ইহান মায়ের দিকে তাকিয়ে বলল,
হুম আমিও ওকে দেখি নি আসার পর আর।কে ও চিনলাম না তো?
ভ্রু কুঁচকে মায়ের দিকে তাকিয়ে বলল।
তখন পেছনে থেকে ইমা বলে উঠলো,
ভাইয়া ওকে চিনতে পারছিস নি। ও তো আমাদের বোন ঊষা। হুমায়ূন কাকার মেয়ে।
কথাটা বলতে বলতে ভেতরে এসে আমার কাছে এসে আমার কপালে হাত রাখলো।
ইশ কি জ্বর এসেছে রে ঊষা। দাঁড়া, আমি তোর জন্য ওষুধ নিয়ে আসছি। খেয়েছিস কিছু?
আমি মাথা উঁচু করে আপুর দিকে তাকালাম আপু আমার মুখের দিকে তাকিয়ে বলল,
মুখ দেখেই বুঝা যাচ্ছে কিছু খাচ্ছ নি‌।লতা ঊষার জন্য খাবার নিয়ে আয়।
বলে আপু চলে গেল।
আমি মাথা উঁচু করে চাচী’র দিকে তাকালাম চাচী আমার দিকে চোখ গরম করে তাকিয়ে আছে। চাচীর থেকে চোখ সরিয়ে ইহান ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে দেখি ভাই আমার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। আমি তাকাতেই দুজনের চোখাচোখি হয়ে গেল। আমি তাড়াতাড়ি চোখ সরিয়ে নিলাম।
তখনই ভাইয়া আমাকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো,
এই তুমি হুমায়ূন কাকার সেই পিচ্চি মেয়ে। ও মাই গড আমারতো বিলিভ হচ্ছে না। এত বড় কিভাবে হয়ে গেল? তখন তো একটা হাঁফ প্যান আর ফতোয়া পড়ে আমার সামনে ঘুরঘুর করত।
ইহান ভাইয়ার কথা শুনে আমি চমকে তাকালাম। ভাইয়া আমার দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। আমি লজ্জায় মাথা নীচু করে ফেললাম কি বলল হাফ প্যান আর ফতুয়া পরে আমি তার সামনে ঘুরঘুর করতাম। ছি ছি কি লজ্জা?
লজ্জায় আমার কান গরম হয়ে আসছে।
ভাই আমাকে উদ্দেশ্য করে বলল,
ইউ লজ্জা পাচ্ছ। দেখো তখন তুমি ছোট ছিলে কিন্তু এখন তো আর ছোট নাই সত্যি অনেক বড় হয়ে গেছো। এখন কোন ক্লাসে পড়ো?
আমি চমকিত হয়ে বললাম,,জি ক্লাস টেন।
আমার কথা শেষ হতেই চাচি ভাইয়ার কাঁধে হাত দিয়ে বলল,,
ইহান আব্বু যাও তুমি ঘুমিয়ে পড়ো। আমরা তো আছি।ইস কত রাত হয়ে গেল ক্লান্ত শরীর নিয়ে এখনো জেগে আছো যাও আব্বু বিশ্রাম নাও।
ইহান ভাইয়া যাওয়ার আগে আমার দিকে তাকিয়ে বলল,
ওকে টেক কেয়ার ফর ইউ।
বলে ভাইয়া চলে গেল। আমি ভাইয়ার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে ছিলাম। তখন চাচী আমার দিকে গরম চোখ করে এগিয়ে এলো। আমি ভয় পেয়ে বলে উঠলাম,,
চাচীঃ আমি ইচ্ছে করে ভাইয়ার সামনে যায়নি। আমি তো পানি খেতে গিয়েছিলাম। তখন ভাইয়া চলে এল আর আমি….
চুপ আপদ একটা। তোর কোন কথা আমি শুনতে চাইনা। তোর জন্য আমার ঘুমের ব্যাঘাত ঘটলো। নিজের মা-বাবাকে তো খেয়েছিস এখন আমাদের জ্বালিয়ে পুড়িয়ে শেষ করবি।
চাচির কথা শুনে আমার চোখ ঝাপসা হয়ে এলো। বিরক্ত মুখ করে চাচি গটগট করে বেরিয়ে গেল। তখন লতা খাবার নিয়ে এলো। খাবার আর আমার পেটে গেলো না। আমার ইচ্ছে নাই আর খাওয়ার। খিদে ছিল কিন্তু ওই কথা শোনার পর আর খাওয়ার ইচ্ছে জাগলো না। তখনই ইমা আপু এসে ওষুধ দিল আর খাবার খায়নি দেখে খেতে বলল।
আপুকে বললাম আমি খাবারটা খাব না।
আপু বুঝতে পেরেছে চাচী আমাকে কিছু বলেছে তাই। বুঝিয়ে-শুনিয়ে খেতে রাজি করালো। আপুর কথা ফেলতে পারলামনা । এই বাড়িতে একজন মানুষ আমাকে ভালোবাসে সেই হল আপু। তাই আপুর কথা শুনে কিছুটা খাবার খেলাম ঔষধ খেয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম।
পরদিন শরীর হালকা জ্বর ছিল ওই ভাবেই সকাল সকাল উঠে গেলাম না হলে আবার চাচী বকাবকি করবে।ওঠে বাসা ঝাড়ু দিতে গিয়ে দেখি লতা ঝাড়ু দিয়ে দিয়েছে। নিচে লতা চা করছিল আমি রান্নাঘরে গিয়ে রান্নার কাজে হাত লাগাতে যাব তখনই লতা আমাকে ডেকে বলল,
ঊষা তুই একটু ইহান ভাইজানের কফিটা দিয়ে আয় না।
আমি বললাম, আমি কেন? তুই যা আমার কাজ আছে আবার স্কুলে যেতে হবে।
তুই যা না একটু আমার না ভাইজানকে দেখলে লজ্জা করে।
আমি অবাক হয়ে বললাম কেন?
আর কইস না ভাইজান কি সুন্দর একদম নায়কের মত আমার না খালি লজ্জা লাগে।
আমি লতার দিকে তাকিয়ে বোকা বনে গেলাম। বাবারে কি লজ্জা ওর কথাতেই কফিটা হাতে নিলাম । ভাইয়া আসলে অনেক সুন্দর একদম নায়কের মত।
তাকালে শুধু তাকিয়ে থাকতে মন চায়।
আমারও যে লজ্জা করেনা এমন না! কালকে আরো কি সব ঘটনা ঘটলো?কিন্তু কফিটা তো দিতে
হবে তাই সাহস যুগিয়ে কফি নিয়ে ভাইয়ার রুমে গেলাম।
#চলবে

#এক_চিলতে_রোদ
#Writer_Nondini_Nila
#Part_3

ইহান ভাই এর দরজার সামনে এসে কাচুমাচু করে দাঁড়িয়ে আছি ভেতরে ঢোকার সাহস পাচ্ছি না।ঠিক পাঁচ মিনিট ধরে এই ভাবে দাঁড়িয়ে আছে এক পা সামনে বাড়িয়ে পিছিয়ে নিচ্ছি ভয় লজ্জা দুটোই করছে। কালকে রাতের ইহান ভাইয়ার কথা মনে পড়ে আর লজ্জায় লাল হয়ে যাচ্ছি। ভাইয়ের সামনে যেতে খুব লজ্জা করছে। কিন্তু এভাবে আর কতক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকবো কফি তো ঠান্ডা হয়ে যাবে তখন তো খেতে পারবে না।
মনে মনে সাহস যোগাতে লাগলাম। তারপর ধীরে পায়ে দরজা হলে নিচের দিকে তাকিয়েই ভেতরে প্রবেশ করলাম।দরজা খোলে ভেতরে এক পা রাখতেই ঠাস করে কারো সাথে ধাক্কা খেলাম আর আমার হাত থেকে কফিটা একদম ফ্লোরে গড়াগড়ি খেলো পরে সাথে সামনের লোক ও চিৎকার করে উঠলো,,,,
আমি ভয়ে সামনে তাকিয়ে দেখি ইহান ভাইয়ার হাতে পড়েছে কফি সে হাত ধরে চিৎকার করে উঠেছে। ভয়ে আমি দুই কদম পিছিয়ে গেলাম আর ভয়ার্ত চোখে ইহান ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে আছি। ভাইয়ার হাত ঝারছে।
হাতের দিকে তাকিয়ে থেকে ভাইয়া বিরক্ত মুখ করে খানিকটা রাগ নিয়ে বলল,,
what do you do?You can’t see and work!
ভয় আমি থর থর করে কাঁপছি এটা কি করে ফেললাম? আমার জন্য ভাইয়ার হাত পুড়ে গেল। ছিঃ একটা কাজ আমি ঠিকমত করতে পারি না চাচী তো ঠিকই বলে দেখা যায়। হাতের লাল হয়ে গেছে । ফর্সা হাত ভাইয়ার লাল হয়ে উঠেছে গরম কফি পড়ায়। আমি কি করব ভেবে পাচ্ছি না। তাড়াতাড়ি দৌড়ে নিচে আসলাম আর ফ্রিজ থেকে বরফ বের করে আবার একছুটে ভাইয়া রুমে গেলাম। ভাইয়া বিছানায় বসে হাতে ফু দিচ্ছিল।
আমি তাড়াতাড়ি ভাইয়ের কাছে গিয়ে হাতে টেনে নিলাম আর বরফ দিতে লাগলাম।
হাতে একদম লাল হয়ে গেছে আমার দেখে কষ্টে বুকটা ফেটে যাচ্ছে। আমার কান্না চলে এল আমি কাঁদছি আর বরফ দিচ্ছি আর ফু দিচ্ছি।

ইহানের মেজাজটাই খারাপ হয়ে গেছে সকাল বেলা উঠে কফি খাওয়ার অভ্যাস ওর। তাই নিচে কফির জন্য যাচ্ছিল। যদি কারো মনে না থাকে এজন্য। কিন্তু তখনই কারো সাথে ধাক্কা খেয়ে গরম কিছু ওর হতে পরে। হাত জ্বলে ওঠে। রাগে ওর চোখ মুখ শক্ত হয়ে যায়। সামনে তাকিয়ে দেখে কেউ নাই শুধু ভাঙা কফির কাপ আর কফি পরে আছে‌। বিছানায় বসে হু দিচ্ছিলো তখন কেউ ছুটে এসে ওর হাত টেনে নেয় আর বরফ দিতে লাগে‌। ওর রেগে তার দিকে তাকায় কারন ও বুঝতে পেরেছি এই ওর হাতে কফি ফেলেছে । রেগে একটা ধমক দিতে যাবে কিন্তু তাকিয়ে আর ধমকটা দিতে পারল না। মেয়েটার কেউনা ঊষা।আর ধমক দিবে কি করে এই মেয়েতো ধমক দেওয়া লাগে নাকের জল চোখের জল এক করে কাঁদছে। ইহান ভ্রু কুঁচকে ঊষার দিকে তাকিয়ে আছে। ঊষা ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদছে আর একদৃষ্টিতে আমার হাতের দিকে তাকিয়ে আছে। বরফটা খুব যত্নসহকারে হাতে দিচ্ছে আর ফু দিচ্ছে।কখনো কারো কান্না ইহানের পছন্দ নাকেউ এমন ফ্যাসফ্যাস করে কাঁদলে ওর প্রচন্ড রাগ হয়। কিন্তু ঊষার কান্না মাখা মুখ দেখে কিছুক্ষণের জন্য থমকে গেল। ওর বিরক্ত লাগছে না। বাচ্চা মেয়েটা চোখ মুখ লাল করে কাঁদছে। দেখতে ভালই লাগছে কেন জানি না খুব ভালো লাগছে কান্নাটা কেন যেন উপভোগ করছে ইহান।
ঊষা তুই কাঁদছিস কেন ? হাতটা পুরেছে আমার কাঁদবো আমি তা না তুই কাঁদছিস?
ঊষার কান্না মাখা মুখের দিকে তাকিয়ে ইহান বলল।
ইহান ভাইয়ের কথা শুনে আমি চোখভর্তি জল নিয়ে ভাইয়া দেখে অসহায় মুখ করে তাকলাম,,,
ভাইয়া আমার দিকে ভ্রুকুটি করে তাকিয়ে আছে।
“আমি খুব সরি ভাইয়া আমি ইচ্ছে করে এটা করিনি। ইশ কতো খানি লাল হয়ে গেছে।
“তেমন কিছু না সামান্য লেগেছে ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু তোর না জ্বর! তুই এত সকালে উঠে এইসব করছিস কেন?
ভাইয়ার কথা শুনে থতমত খেয়ে গেলাম।
আমার মুখ দেখে ভাইয়া ভ্রু কুঁচকালো সেটা দেখেই আমি বললাম,
আমি তো সুস্থ হয়ে গেছি জ্বর এখন একটুও নাই। বলে হালকা হাসলাম।
ইহান ভাইয়া আমার কথাটা বিশ্বাস করছে না আমি এখনো তার হাত ধরেছিলাম ভাইয়া আমাকে নিজের পাশে বসতে বললো ইতস্তবোধ করে দাঁড়িয়ে রইলাম।
ভাইয়া নিজে বিছানা থেকে উঠে ডান হাত দিয়ে আমার কপাল ছুঁয়ে দিল।হুট করে ভাইয়ার স্পর্শানুভূতির কপালে পেয়ে আমি স্তব্ধ হয়ে গেলাম আমার সারা শরীর শিরশির করে উঠল।
আমি চমকে এক পা পিছিয়ে গেলাম।
ভাইয়ার ডান হাত পড়েছে। ভাইয়া ডান হাত বাড়িয়ে আমার হাতের বাহু ধরে টেনে আবার আগের জায়গায় আনলো। আমি বিস্মিত হয়ে ভাইয়া দেখে বড় বড় চোখ করে তাকালাম,
ভাআয়া আমার কপালে আর গালে স্পর্শ করল আবার। আমি ভাইয়ের স্পর্শ পেয়ে চোখ বন্ধ করে ফেললাম হাত মুঠো করে দাঁড়িয়ে আছি।
আমাকে মিথ্যে বললি কেন? তোর শরীরে তো এখনো জ্বর আছে।
কথাটা বলে হাত সরিয়ে নিল।আমি চোখ মেলে তাকালাম ভাইয়া আমায় দিকে প্রশ্ন দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।কি বলবো এখন ভাইয়া কে ? সে তো আর জানে না আমি এখন যদি অসুস্থতার জন্য শুয়ে থাকি আমার কপালে অনেক খারাপি আছে।
আমি তো সুস্থই একটু একটু জ্বর থাকলে কিছুই হবে না।
আমার উত্তর পেয়ে ভাইয়া চঙ্কিত হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
ভাইয়া কিছু বলার আগেই চাচি হাঁকডাক করতে করতে ভাইয়ের রুমে এসে উপস্থিত।
এসেই ফ্লোরে ভাঙ্গা কাপ আর কফি পড়ে থাকতে দেখে চমকে উঠলো। সাথে আমার দিকে তাকিয়ে দেখে চিৎকার করে বলল,
অলক্ষ্মীর ,অপয়া, কালনাগিনী,কি করলি তুই এটা? আমার এত সাধের কাপটা ভেঙ্গে ফেললি? এইটা আমি কক্সবাজারে গিয়ে এনেছিলাম। আমার সবকিছু ধ্বংস করে ফেললি কুলক্ষণা। বিনা পয়সায় খাওয়াচ্ছি পড়াচ্ছি থাকতে দিচ্ছি তার মূল্য এইভাবে দিচ্ছিস। ইচ্ছে করে ভেঙেছিস তাই না বলেই চাচী আমার দিকে গমগম করে এগিয়ে এলো।
আমি ভয়ে পিছিয়ে গেলাম।ভয়ে আমার হাত পা কাপছে চাচি এসে আমার গালে থাপ্পড় মারার জন্য হাত উচু করে ধরল। ভয়ে আমি চোখ বন্ধ করে মাথা কাত করে ফেলেছি।
ইহান নিজের মায়ের ডাক শুনে ঊষার হাত ছেড়ে দেয় ঊসা নিজের হাত ছাড়া পেয়ে কিছুটা পিছিয়ে যায়। তখনই মা রুমে প্রবেশ করে ভাঙ্গার কাপ দেখে ঊষাকে সামনে দেখে যা ইচ্ছা তাই বলে ওঠে। নিজের মায়ের মুখে এসব কথা শুনে ও বিশ্ময় হতভম্ব হয়ে যায়। মা এসব কথা বলবে ও কল্পনাতে ভাবি নি।নিজের মায়ের এইসব কথা শুনেও স্তব্ধ হয়ে গেছে।
এইগুলো বলেই ক্ষান্ত হয় না এগিয়ে গিয়ে ঊষাকে মারার জন্য হাত তুলে। এবার নিজেকে শান্ত রাখতে পারেনা ইহান ছুটে গিয়ে মায়ের হাত ধরে ফেলে।
আর চিৎকার করে বলে ওঠে,
এসব কি হচ্ছে আম্মু তুমি ঊষাকে মারতে চাইছ কেন? ও যে অসুস্থ সেইটা কি তুমি জানো না?
ইলিনা নিজের ছেলেকে দেখে চমকে ওঠে তার খেয়ালী ছিল না এই রুমে ছেলে আছে।
কিন্তু আজকে উনি থামলেন না ওনার এত সখের কাপ টা ভেঙে ফেলেছে আর উনি ছেড়ে দেবে এটা তো হতে পারে না।ছেলেটা এখন এখানে থাকবে অযথা ছেলের সামনে এত ভালো সাজার দরকার নেই আমাদের বাসার আশ্রিতা কাজের লোক।এটা তো তুলে ধরতে হবে। আমার ছেলে বুঝতে পারবে এতদিন বিদেশে থেকে এসেছে চাচাতো বোন বলে একে ক্ষমা করবে না আমার মত এই ঊষাকে নিজের জায়গা বুঝিয়ে দেবে। ইমা টা হয়েছে সবার থেকে আলাদা বোন বোন বলে মাথা খেয়ে ফেলে।

না জানার কি আছে সব ঢং। দিনভর শুয়ে-বসে থেকেছে জ্বর চলে এসেছে।যত্তসব কামচোর একটা সারাদিন শুধু বসিয়ে বসিয়ে খাওয়া একে। বাবা-মা দুজন তো মরে বেঁচেছে আবার এই আপদ আমাদের ঘাড়ে বোঝা করে রেখে গেছে।সারাটা দিন শুধু বসে থাকবে একটা কাজ করতে গেলে এমন আকাম করবে যাতে আর কাজ না দেই।কতটা সাহস বল আমাদের খাচ্ছে আবার আমাদের জিনিস নষ্ট করছে একে মারবো না তো কি করবো?

চাচির কথা শুনে আমি হতভম্ব হয়ে গেলাম।
চাচা যা বলছে তার একটা কথা ওসত্যি না।
সবগুলো কথা চাচি মিথ্যা বলছে। সারা দিনই আমাকে দিয়ে কাজ করার সব কাজ আমি করি। কিন্তু এখন কি সব বলছে।
চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পরছে এসব আর শুনতে ভালো লাগছে না। মাথা নিচু করে চুপ করে দাঁড়িয়ে আছি। ইহান ভাই নিজের মায়ের দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। তখনি চাচী ভাইয়ের হাত দেখে বলে উঠল তার হাতে কি হয়েছে?
ভাইয়া কিছু বলার আগে চাচি বলে উঠলো,,
পুড়েছে হাত।চাচি বুঝতে বাকি রইল না আমার দিকে তাকিয়ে আরো বাজে বাজে কথা বলে ভাইয়া কে নিয়ে আদিখ্যেতা করতে লাগলো।
আমার দিকে কড়া চোখে তাকিয়ে বলল,
আজকে তোর খাওয়া বন্ধ। আমার ছেলের হাত পুরিয়েছিস রাক্ষসী।
ইহান ভাইয়া তখন বলে উঠলো,
আম্মু প্লিজ ওকে এত বকো না এতে ওর একা দোষ নাই আমার দোষই ছিল বেশি।
তুই চুপ কর ওকে আমি চিনি ওই করেছে।
ইহান ভাই অসহায় মুখ করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। চাচি রেগে আমার দিকে ঘুরে বললো,
খাম্বার মত দাড়িয়ে না থেকে ফ্লোর পরিষ্কার কর তাড়াতাড়ি।
আমি ধীর পায়ে এগিয়ে ফ্লোরে বসে পড়লাম। ভাঙ্গা কাচের টুকরো হাত দিয়ে ওঠানোর সময় নিজের হাত কেটে ফেললাম। থামলাম না ওইভাবেই ঠোঁট কামড়ে ব্যথা সহ্য করে ফ্লোর পরিষ্কার করে রুম থেকে বেরিয়ে এলাম।
বাইরে এসে আঙুল চেপে ধরে কান্না করতে লাগলাম আর কত ব্যথা আমাকে সহ্য করতে হবে আল্লাহ।কাটা হাত নিয়ে রান্না ঘরে লতাকে সাহায্য করলাম। তারপর রুমে এসে বসে আছি।হাতে রক্ত জমাট বেঁধে আছে ওই ভাবে মুখ ধুয়ে তাড়াতাড়ি স্কুল ড্রেস পড়ে নিলাম।
টেস্ট পরীক্ষার রুটিন দিয়ে দিয়েছে।কিন্তু চাচী আমাকে বাসা থেকে বের হতে দিচ্ছে না। আজকে কলেজে যেতে হবে।
রুম থেকে বের হয়ে দেখি সবাই খাবার টেবিলে বসে খাবার খাচ্ছে। সবাই খাওয়া দেখে খেতে হলো কিন্তু চোখ সরিয়ে নিলাম রান্নাঘরে গিয়ে ভাত আর ডাল খেতে হবে। কিন্তু আজকে সেটাও চলবে কিনা জানিনা চাচি তো আমাকে খেতে মানা করে দিয়েছে। আজকে খাব‌ই না বলে বাসা থেকে বের হতে যাব তখন ইহান ভাইয়ের আওয়াজ কানে এলো ইহান ভাইয়া বলছে,,
ঊসা খাবার না খেয়ে কোথায় যাচ্ছিস?
আমি তার কথা শুনে দাঁড়িয়ে পরলাম। তখন চাচি রা সবাই আমার দিকে তাকালো আর চাচী ফুসে উঠে বলল,,
ওই তুই কোথায় যাচ্ছিস?
আমি মাথা নিচু করে বললাম,
চাচি আছে যেতে হবে আমার পরীক্ষা দুদিন পর প্রবেশপত্র আনতে হবে।
চাচি কিছু বলতে যাবে তখন পাশ থেকে ইলা বলে উঠলো, নিজের মাকে ফিসফিস করে, মা ওকে যেতে দাও আপদ বাসা থেকে গেলে কিছুক্ষণ শান্তিতে থাকতে পারি। নয় ওর মুখ আমার দেখতে মন চায় না।
চাচি কিছু একটা ভেবে চিৎকার করে আমাকে বলল আচ্ছা যা।
চাচির এত তাড়াতাড়ি রাজি হ‌ওয়া দেখে আমি খুশি হয়ে গেলাম।
ইহান ভাই এখন আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আবার জিজ্ঞেস করে উঠলো,,, না খেয়ে স্কুলে যাচ্ছিস কেন?
ওই আমার খিদে পায়নি। এখনই লেট হয়ে গেছে আমার তাড়াতাড়ি যেতে হবে।
বলে তারাতারি কারো কথা না শুনে ছুটে তাড়াতাড়ি বেরিয়ে এলাম।

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here