এক_চিলতে_রোদ,Part_27,বোনার্স পর্ব

0
1270

#এক_চিলতে_রোদ,Part_27,বোনার্স পর্ব
#Writer_Nondini_Nila
#Part_27

বিয়ে পরানোর সময় আপু খুব কাঁদলো। সাথে আমরা ও কাদলাম। চোখ থেকে একাই টপটপ করে পানি পরতে লাগলো।

আপু বিদায় এর সময় হলো। সন্ধ্যা সাতটায় আগে চলে যাবার তারা দিচ্ছে। সমস্ত আনন্দ নিমেষেই মাটি হয়ে কান্নার রোল পরলো। থমথমে অবস্থা বিরাজ করতে লাগলো। আপু কাঁদছে সবাই কাদছে আমি ঝাপসা চোখে আপুর দিকে তাকিয়ে আছি।এই মানুষটি আমাকে সব চেয়ে ভালোবাসতো আজ সে চলে যাচ্ছে ভাবতেই বুকটা ফেটে যাচ্ছে। তখন রিহান এলো আমি জল ভর্তি চোখে তাকিয়ে চোখ সরিয়ে নিলাম। লোকটার থেকে আমি সারাটা সময় দূরে থেকেছি খুব ডিসটাব করছে আজ‌। গায়ে পড়া স্বভাবের।

” ঊষা তোমার সাথে আমার কিছু ইমপর্টেন্ট কথা ছিলো। ”

আমি ফুপাতে ফুপাতে তাকালাম।
রিহান ঢোক গিলে ঠোঁট ভিজিয়ে বললো, ” কি ভাবে বলবো ভাবছি? তুমি মাইন্ড করবে না তো।”

আমি বললাম, ” আপনি এখানে থেকে যান তো। একেতে দেখছেন কষ্ট পাচ্ছি তখন এসে আজেবাজে বকে যাচ্ছেন।”

” না মানে আসলে। তোমার চুল গুলো খুব সুন্দর। আর আমি …..”

আমি রেগে তাকালাম উনার দিকে! উনার কথা শুনার ইচ্ছে নাই তাই অন্যদিকে যেতে নিলাম। বড় বেহায়া লোকটা। রিহান লজ্জা মুখ করে বলছে তখন ঊষা ওর সামনে থেকে চলে গেলো । ও হালকা রাগ নিয়ে সেদিক তাকিয়ে র‌ইলো। আমি অন্যমনষ্ক হয়ে পেছনে ঘুরে হাঁটছি তখন ঠাস করে কারো বুকের সাথে বাঁড়ি খেলাম। কপালে হাত দিয়ে ডলতে ডলতে সামনে তাকিয়ে থ ইহান ভাইয়া দাঁড়িয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।

আমি ঢোক চেপে পেছাতে গেলেই ভাইয়া আমার কোমর চেপে ধরে। আমি বড় বড় চোখ করে তাকায় ভাইয়ের চোখের দিকে। ইহান ভাই আমার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। আমি ভয়ে মিনমিন করছি।
ভাইয়ার ঠান্ডা হাত আমার পেট স্পর্শ করেছে। আমার সারা শরীর থরথর করে কাঁপছে। আমার লেহেঙ্গার ফতুয়া বড় অনেক তাই পেট বের হয়নি। ওরনা আমি শাড়ির মতো করে নিয়েছিলাম। যেটা পেছনে কোমরে গুজা হয়েছিলো ভাইয়ার হাত সেখানেই বিচরণ করছে। আমি বিস্মিত হয়ে তাকিয়ে বুঝার চেষ্টা করছি কি করছে উনি।
ফট করেই ভাইয়া আমার ওরনা টেনে নিয়ে এলো আমি হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে আছি। ভাইয়া এক হাতে ওরনা আমার মাথায় টেনে দিলো। আমি বিষ্ময় নিয়ে তাকিয়ে আছি ভাইয়ার দিকে কি করতে চাইছে ভাইয়া।

” ভাইয়….

কিছু বলার জন্য মুখ খুলতেই ভাইয়া ফট করে আমাকে ছেড়ে দিলো। আমি হাঁ হয়ে আছি‌। মাথা ডেকে আছে ওরনা।

ভাইয়া আমাকে ছেড়ে রুদ্ধ গলায় বলল,, ” তোর চুল নষ্ট হয়ে গেছে দেখতে বাজে লাগছে তাই ডেকে দিলাম। ”

বলেই ভাইয়া সামনের দিকে গেলো ইমা আপু ইলা আপুকে ধরে কাঁদতে কাঁদতে আসছে।ভাই যেতে তাকে জরিয়ে ধরলো। আমি ভাইয়ার কাছে অবাক হয়ে থমকে ছিলাম কান্না দেখে আবার মনটা খারাপ হয়ে গেলো।
ইলা আপু আজ গোলাপি কালারের লেহেঙ্গা পরে ছিলো খুব সুন্দর দেখাচ্ছে তাকে। আপু ইমা আপুর থেকে সরে এসে নাক মুখ কুঁচকে ফেললো ওরনা ও চুল ঠিক করতে করতে বলল,

” Did you ruin my makeup? I don’t understand why they is so much mud. ”

বলেই অন্যদিকে চলে গেলো আমি তার কথা বুঝলাম না কিন্তু তার মুখ দেখে বুঝেছি সে বিরক্ত। আমি অবাক হলাম বোন চলে যাচ্ছে আর সে এমন করছে একটু কাঁদছে ও না।

আপুরা এগিয়ে এলো আমাকে দেখেই কাছে ডাকলো আমি আপুকে ধরে হু হু করে কেঁদে উঠলাম শব্দ করে। আপু আমাকে শান্তনা দিচ্ছে। আমি থামছি না। হঠাৎ বাহুতে কেউ শক্ত করে চেপে ধরে টেনে সরালো। হাতে ব্যাথা পেয়েছি। আমি ঘাড় বাঁকিয়ে চাচির মুখ দেখে চুপ করে গেলাম। চাচি আমাকে সবার থেকে টেনে দূরে নিয়ে এলো। আমি ভয়ে কাঁপছি।‌

আমার হাত ঝামটা দিয়ে ছারিয়ে বলল, ” ন্যাকামি হচ্ছে, আমার মেয়ে শশুর বাড়ি যাচ্ছে আর তুমি মাঝখানে গিয়ে নাটক শুরু করে দিলি। ”
লাগে গমগম করে বলল।

আমি কেঁপে উঠে বললাম,” আমি নাটক কেন করবো চাচি আমার তো খুব কষ্ট হচ্ছে আপুর জন্য। আমাদের ছেড়ে ….

” চুপপ ( চাচি চিৎকার করে বললো আমি ভয়ে কুঁকড়ে উঠলাম।) একদম নাটক করবি না নাটক করেই তো এসব নিয়েছিস? খুব পাখনা গজিয়েছে তোর। বিয়ে বাড়ি বলে কিছু বলছি না। না হলে তোর এই উড়া আমি ছুটিয়ে দিতাম। রাজকন্যা হয়ে ঘুরছিস তুই‌। এমনিতেই তো আমাদের ঘাড়ের উপর পাড়া দিয়ে খাচ্ছিস তার উপর এই দামী ড্রেস। ”

বলেই চাচি আমার গাল চেপে ধরলো। আমি ব্যাথায় কুঁকড়ে উঠলাম। চোখ মুখে আমার অসহায় ও তো ফুটে উঠেছে খুব কষ্ট হচ্ছে কি সামনের মানুষটার কিছু যায় আসে না তাতে।

“তোর এই উড়া আমি ছুটিয়ে ছারবো। সেজে গুজে বেরানো এই ড্রেস কিনার জন্য তুই বলেছিলি ইহানকে তাইনা। ওকেও বস করেছিস? তোকে আমি ওর আশেপাশে যেতে মানা করেছিলাম। তাও গিয়েছিস। আমার এতো বারন এই ড্রেস তোকে দিলো। রুপে ভুলাচ্ছিস। আমার খেয়ে আমার সবনার্শ করবি। সব আমার চোখে পরেছে তুই ইহানের রুমে কি করেছিলি কাল বল। আমি কিছু দেখিনি ভেবেছিস। ”

আমি বিষ্ময় নিয়ে তাকিয়ে আছি চাচির দিকে চাচি দাঁতে দাঁত চেপে কথা বলছে। আর আস্তে আস্তে আমার গাল আরো চাপ দিচ্ছে মনে হচ্ছে চাপা ভেঙে দেবে।
আমি ব্যাথায় চোখ বন্ধ করে আছি। টপটপ করে পানি পরছে। আপুরা বোধহয় গাড়িতে উঠছে আমরা স্টেজের দিকে আছি চাচি আমার গাল ছেড়ে দিয়ে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলো তারপর গটগট করে চলে গেলো।
আমি ধাক্কা সামলাতে না পেরে ধপ করে মাটিতে পড়ে যায়। উঠার ইচ্ছে নাই। তাই ওইখানেই লেহেঙ্গা গুটিয়ে হাটু উঁচু করে তাতে মাথা দিয়ে কাঁদতে লাগি। আমি জানতাম এমন কিছু হবে বিয়ে শেষ হতেই। কিন্তু চাচি ভাইয়াকে নিয়ে আমাকে এমন কথা বলবে আমি ভাবিনি। আমি নাকি ভাইয়াকে নিজের রুপ দেখিয়ে বস করেছি। ছিঃ ছিঃ এমন কথা কি করে বললো চাচি। তাকে তো আমি ভাই ভাবি শুধুই ভাই। আর চাচি এসব।

গাড়ির আওয়াজ এলো তারমানে আপুরা চলে গেছে।আমি মাথা নিচু করে বসে আছি। ওইভাবেই বসে আছি নরতেও ইচ্ছে করছে না। চোখ দিয়ে অনবরত পানি পরছে। তখন মনে হলো কেউ আমার সামনে দাড়িয়ে আছে। আমি মাথা তুলে কান্না মুখেই সামনেই তাকিয়ে তার পা দেখতে পেলাম। এটা তো পরিচিত পা ভাইয়া মনে বাজতেই মাথা তুললাম। ঠিক ভাইয়া আমার সামনে দাড়িয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। তার চোখে মুখে বিষ্ময়। আমি তাকিয়ে আতকে উঠলাম। ভাইয়া আমাকে এভাবে কেন বসে থাকতে দেখে তো জিজ্ঞেস করবে কি হয়েছে? কি বলবো চাচির ওইসব কথা কি করেই বা বলবো।

মাথা ভনভন করছে আমার। তার মাঝেই ভাইয়ার আওয়াজ আমার কানে এলো,,

” কি হয়েছে তোর এইভাবে এখানে বসে আছিস কেন?”

আমি চমকে উঠলাম। তারাতাড়ি উঠে চলে যাব ভাবছিলাম তার আগেই ভাইয়া আমার সামনে বসে পরলো আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি। ভাইয়া বসে আমার গালে হাত এগিয়ে দিলো আমি মাথা সরিয়ে উঠতে গেলে বেজে গেলাম। লেহেঙ্গার জন্য আমার লেহেঙ্গার অংশ ভাইয়ার তলে। আমি উঠতে গিয়ে পারলাম না উল্টো ঠাস করে পরে গেলাম ভাইয়ার উপর।আমি তার হাঁটুতে পরে আছি। মাথা বেকে যেত ভাইয়া আমার পিঠে নিজের হাত দিয়ে জাপটে ধরে আটকে দিয়েছে।

আমি শিউরে উঠলাম তার হাত নিজের শরীরে পেয়ে। আমার হৃদস্পন্দন বেড়ে গেছে। হাত পা কাঁপছে। মুখ ঠোঁট কাঁপছে আমি কাঁপা থামানোর জন্যে নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরলাম। লজ্জায় মাটির সাথে মিশে যেতে ইচ্ছে করছে। ভাইয়া আমার গান গালে নিজের বাম হাত ডুবিয়ে দিভে পানি মুছে বললো,,

“কাঁদছিলি কেন?”

আমি থমকে নিচের দিকে তাকিয়ে ভাইয়ার কোলে থেকে সরে আসতে চাইছি। কিন্তু ভাইয়া এক হাতে আমাকে শক্ত করে নিজের কোলের মধ্যে চেপে ধরেছে নরতে বা সরতে কিছু করতে পারছি না।তার উপর এক হাতে আমার গাল স্পর্শ করে আছে আমার বুকের ভেতরে ধড়াস ধড়াস করছে।

“ভাইয়া ছারুন আমাকে প্লিজ।” কাঁপা কাঁপা গলায় বললাম।

ভাইয়া ছারলো না উল্টা আরো নিজের দিকে টেনে নিলো এক হাত আমার মাথার পিছনে রেখে আমার মুখ তার মুখের কাছে নিয়ে গেলো। আমি বিস্মিত হয়ে বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে আছি।কি করছে কি ভাইয়া? ভয় লজ্জায় আমি চোখ খিচে বন্ধ করে ফেললাম। ভাইয়া নিজের কপালের সাথে আমার কপাল ঠেকিয়েছে। আমি চমকে চোখ মেললাম। কি‌সব করছে ভাইয়া ভাইয়ার চোখ লাল হয়ে আছে।

আমি কাঁপা গলায় বললাম,, ” কি করছেন এসব?”

ভাইয়া নেশা জড়ানো কণ্ঠে বলে উঠলো,,, জানি না আমি। আমি কি সব করছি ঊষা। নিজেকে পাগল পাগল লাগছে আমার। সব কিছু ধ্বংস করে ফেলতে ইচ্ছে করে যখন তোকে আমি রিহানের সাথে কথা বলতে দেখি হাসতে দেখি। বিলিভ মি আমার এমন কেন হচ্ছে বুঝতে পারছি না। আজকেও মা তোকে বকেছে তাইনা আমার জন্য, তুই আমার কাছে আসি বলে।

বলেই ভাইয়া থামলো। চোখ বন্ধ করে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো আমি অবাক হয়ে ভাইয়ার কথা শুনছি। এক থেমে আবার বললো,,

” কিন্তু মা তো জানে না তুই না উল্টো আমি তোরে কাছে আসি। কেন আসি? জানি না তোকে নিয়ে অন্য রকম ফিলিংস আসে কিন্তু এটা তো ঠিক না বল তুই তো আমার বোন সম্পর্কে কে? বোন তুই আমার হুমায়ূন কাকার মেয়ে তাহলে তোর প্রতি আমার বোন ফিলিংস না এসে এমন অদ্ভুত অনুভূতি হয় কেন? তুই আমাকে ইগনোর করলে কথা না বললে খারাপ কেন লাগে? এসব কেন হয় জানিস তুই ঊষা। ”

বলেই কপালে থেকে নিজের মাথা সরিয়ে আমার গালে হাত রেখে জিজ্ঞেস করলো। আমি হতভম্ব হয়ে তার কথা শুনছি কিছু মাথায় ঢুকছে না আমার আমি হতবাক। ভাইয়ার জিজ্ঞেস করতেই আমি কাচুমাচু মুখ করে বোকা চাহনি দিলাম কি বললো আমি তো কিছু বুঝি নি। ভাইয়া জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আমি ঢোক গিলে মাথা নাড়িয়ে না বুঝালাম।

ভাইয়া আবার দীর্ঘশ্বাস ফেলল। আর বললো,,
“তোর কাছে থাকাটা বিপদ জনক তুই মানুষটাই বিপদ জনক আমার জন্য। তোকে দেখার পর থেকে বুকের ভেতরটা কেমন কের। ব্যাথা করে শ্বাস নিতে কষ্ট হয়। নিজেকে হারিয়ে ফেলি তুই আমাকে এলোমেলো করে দিয়েছিস ঊষা।আমি তোকে এর জন্য একটুও ক্ষমা করবো না। তুই কঠিন শাস্তি পাবি।”

আমি ভয়ার্ত মুখ করে তাকিয়ে আছি‌। ভাইয়া কি সব বলছে কি করেছি আমি। আমি তো কিছু করিনি তাহলে শাস্তি কেন দিবে?
আমার ভয়ার্ত মুখ দেখে ভাইয়া এগিয়ে এসে ফট করে আমার গালে চুমু খেলো। আমি চমকে উঠলাম ভাইয়ার কাছে। সারা শরীর শিউরে উঠলো। ভাইয়া মাথা উঁচু করে দুই গালে চুমু খেল।আমি থমকে পাথর হয়ে বসে আছি আমার মুখ দিয়ে কথা বের হচ্ছে না।

#চলবে

#এক_চিলতে_রোদ
#Writer_Nondini_Nila
#বোনার্স_পর্ব

গাড়িতে বসে ইমা কেঁদেই যাচ্ছে। চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পরছে রিফাত থামাতেই পারছে না। তাই উপায় না পেয়ে ওর মাথা টেনে নিজের বুকের মাঝে চেপে ধরে মাথা হাত বুলিয়ে দিতে লাগে।

“এমন করে কান্না করলে কিন্তু শশুর বাড়ি নিয়ে যাব না। গাড়ি ঘুরিয়ে তোমাদের বাসায় রেখে আসি কি বলো?”

ইমা ফুঁপিয়ে কাঁদছে তার মাঝে এসব করায় ও লজ্জা ও পাচ্ছে গাড়িতে আরো লোক আছে সামনে তাদের সামনে এভাবে। সরে আসতে চাইলে রিফাত শক্ত করে ধরে তাই আস্তে পারে না। ও কটাপ রাগ নিয়ে বলে,,

“ছারো কি করছো এমন চেপে ধরেছো কেন?সবাই দেখছে ?”

“দেখুক আমি আমার ব‌উকে ধরেছি কার বাপের কি?”

“তুমি এই ভাবে কথা বলছো?”

“হুম বলছি কেন?”

“না এমনি তোমার তো আবার মান সম্মান আগে ছিলো আমার হাত ধরো নাই কখনো কোন মানুষ থাকলে। আর এখন!”

“সে সময় ইচ্ছে করেই ধরিনি।”

“মানে?”

“তখন তুমি আমার ব‌উ ছিলে নাকি তাই। আর এখন তো ব‌উ সব কিছু করতে পারি অধিকার নিয়ে।”

‘তারমানে?”

রিফাত ইমাকে ছেড়ে দিলো।ইমা ভ্রু কুঁচকে বলল,

“ছারলে কেন?”

যার জন্য ধরেছিলাম তা এখন নাই তাই প্রয়োজন নাই ।

কি জন্য ধরেছিলে?

ইমার কান্না থেমে গেছে তাই রিফাত ওকে ছেড়ে দিয়েছে। কিন্তু ইমা সেটা বুঝতে পারেনি। তখন সামনে থেকে রিহান কথা বলে আর ওরা ওদের ধ্যান ভেঙে ফেলে।
দের ঘন্টা পর বাসায় এসে পৌছে ওরা। সবাই ব‌উ বরন করে ভেতরে নেয়।

???

ঊষা বিছানায় বসে থরথরিয়ে কাঁপছে। কি হলো তখন সব ওর মাথার উপর দিয়ে গেছে। ভাইয়ার কাছে গেলে আমার বরাবরই এমন হয় কিন্তু আজকে ভাইয়ার আচরণ আর কথা সব কিছু আমার মাথায় উপর দিয়ে গেলো।

চোখ বন্ধ করতেই ভাইয়ার লাল চোখে ভয়ঃকর দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকা ভেসে উঠলো। ভাইয়া তখন আচমকা আমার ঠোঁটের দিকে এগিয়ে আসে আমি ভাইয়াকে আটকাতে পারছিলাম না। সে আমার খুব কাছে ছিলো ও হাত দিয়ে আমাকে জাপটে ছিলো আমি সরতে পারছিলাম না। এতো কাছে আসতে দেখে বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে ছিলাম। তার ঠোঁট আমার ঠোঁটে স্পর্শ করবে এমন সময় ভাইয়া ফট করেই আমাকে কোলের উপর থেকে ঠেলে উঠিয়ে দিলো। আর নিজেও উঠে অন্যদিকে তাকালো। আমি বিস্মিত হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলাম। ভাইয়া আমার দিকে আর তাকালো না। সোজা ভেতরে চলে গেলো আমি থমকে সেদিকে তাকিয়ে ছিলাম।

এদিকে ইহান নিজের রুমে এসে মাথার চুল খামচে ধরে।পাগল লাগছে নিজেকে কি সব করছিলো ও। এলোমেলো পায়ে বেলকনিতে যায় সিগারেট বের করে খেতে লাগে। ওইখানেই বসে পরে। নিজের অনুভূতি কন্ট্রোল করতে পারলাম না আমি। এইভাবে সব বলে দিলাম ঊষাকে। ও আমাকে খারাপ ভাবছে আমি জানি। কিন্তু আমি কা করতাম আমার এই অনূভুতি আমি লুকাতে পারছিলাম না।বুকের ভেতর ব্যাথা অনুভব করেছি আমি ভালোবাসার জন্য। এসব মায়ের কানে গেলে কি হবে? কখনো ঊষাকে মানবে না সে। এসব না জেনেই মা আমার কাছে ঊষাকে আস্তে বারন করেছে আর জানতে পারলে আরো আসতে দেবে না।

চিন্তা ভাবনা করতে করতে সিগারেট খাচ্ছে কি করবে কিছু বুঝতে পারছে না। তখন ওর ফোনটা বেজে উঠলো,,

বিরক্ত হয়ে ফোনের দিকে তাকিয়ে মেজাজ গরম হয়ে গেলো। ফারিয়া কল করেছে। কয়েকদিন ধরে পাগল করছে ওকে বিদেশে যাওয়ার জন্য। বিয়ে করার জন্য। এখন এমনিতেই টেনশন তার উপর ওর কল রেগে ফোন রিসিভ করে কয়েক দফা ঝাড়ি দিলো ফারিয়াকে তারপর ফোন অফ করে দিলো।

ঊষা নিজের রুমে থেকে রাতে আর বের হলো না। পরদিন চাচির থমথমে মুখ দেখেছে ঊষা। ওর দিকে রেগে ও তাকায়নি বকেও নি। ও অবাক হয়ে সকালের খাবার খেয়েছে কিন্তু ইহান ভাইকে আশেপাশে কোথাও দেখেনি।

সবাই মিলে রেডি হয়ে এলো ইমা আপুর বাসায় যাবে বলে। তিনটার দিকে বের হলো সবাই আজকে লতাও যাবে আমার কাছে লতা বসেছে। আমি আজ আসতে চেয়েছিলাম না।আমাকে অবাক করে দিয়ে চাচি নিজে আমার কাছে এসে বলেছে,

” ঊষা তারাতাড়ি রেডি হয়ে যা। এখনো দাঁড়িয়ে আছিস কেন সবাই তো রেডি হয়ে গেছে। ”

আমি যাব না বলে বেড়ি হয়েছিলাম না। কিন্তু চাচির কথা শুনে অবাক হয়ে রেডি হয়ে এসেছি। তার ব্যবহার আমাকে চরম মাত্রায় অবাক করেছে।

এই বাসায় আসার পর আমার পেছনে ঘুরঘুর করছে রিহান। আমি ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছি। লতার হাত ধরে। লতা আমাকে দাড় করিয়ে বললো,,,

“কি হয়েছে এমন করছিস কেন?”

“আরে ওই ছেলেটা আমাকে জ্বালাতন করে খুব খালি বকবক করে এসে।”

“কোন ছেলে?”

দেখালাম। লতা দেখে বললো।

“তোরে পছন্দ করে মনে হয় প্রেম করতে চায় নাকি?”

আমি বোকা চোখে তাকিয়ে বললাম,, ” তা জানি না। কিন্তু ইহান ভাই ওর সাথে কথা বলতে মানা করছে।”

“কেন মানা করছে?

“তা জানি নাকি? কথা বললেই রেগে আসে আর ধমক দেয়। আচ্ছা লতা আজ ইহান ভাইকে দেখেছিস?”

বলেই ওর দিকে তাকালাম। কাল রাত ভর ভাইয়ার কথা ভেবেছি ওমন করার কারণ বুঝি নি‌। সকালে জিজ্ঞেস করবো ভেবেছিলাম কিন্তু আর তার দেখা নাই।

লতা বললো, ” সকালে দেখেছিলাম আর দেখি নাই।”

“সকালে দেখেছিলি?”

“হুম।”

” কোথায় আমি দেখলাম না তো। আর আজ এখানেও আসে নি নাকি।”

“আসবে কি করে? সে তো কোথায় জানি গেছে সকালে ব্যাগ একটা নিয়ে।‌আমি সকালে তাকে ম্যাডামের ঘরে কিছু নিয়ে রাগারাগী করতে দেখেছি। তারপর ব্যাগ নিয়ে বেরিয়ে গেছে। যাওয়ার আগে তোর রুমে উঁকি দিয়েছে।”

“কোথায় গেছে?” উত্তেজিত হয়ে বললাম।

“আমি কি জানি? কিন্তু তোর সাথে আমার ইম্পর্টেন্ট কথা আছে?”

“কি কথা? অবাক হয়ে বললাম।

“পরে বললো?”

আমরা চলে আসবো তখন রিহান এসে আমার হাত ধরে একটা ফাঁকা জায়গায় নিয়ে এলো আমি হাত ছারানো জন্য ছুটাছুটি করেছি। কিন্তু পারিনি।

“এসব কি আমাকে এখানে টেনে আনলেন কেন?”
রেগে বললাম।

“সরি এভাবে টেনে আনার জন্য। কিন্তু তুমি তো আমাকে পাত্তাই দিচ্ছো না আজ। তাই এটা করতে বাধ্য হলাম রাগ করো না প্লিজ।”

বিনীত সুরে বলল। আমি রাগ নিয়ে তাকিয়ে বলল,,

” রাগের কাজ করে বলছেন রাগ করবো না”

” সরি বললাম তো।”

” আচ্ছা বলুন কি বলবেন?”

রিহান ফট করেই আমার সামনে হাঁটু গেড়ে বসে পরলো। আমি বড় চোখ করে তা দেখছি। পাগল হলো নাকি বসে আছে কেন?

আমাকে অবাক করে দিয়ে একটা ফুলের তোড়া এনে আমার সামনে ধরলো আর বললো,,

“আই লাভ ইউ ঊষা। আমি তোমাকে ভালোবাসি। সেই প্রথম দিন তোমাকে আমি পছন্দ করেছিলাম আস্তে আস্তে তা ভালোবাসায় পরিনিত হয়েছে। তোমাকে আমি বিয়ে করতে চাই।”

আমি বিস্মিত হয়ে তাকিয়ে আছি। রিহান একের পর এক কথা বলেই যাচ্ছে সে আমাকে খুব ভালো বাসে হ্যানত্যান। আমি কথা বলছি না দেখে রিহান জোর করেই আমার হাতে ফুলের তোড়া দিয়ে উঠে দাঁড়ালো।

আমি চমকে উঠে ফুল ফেলে দৌড়ে গাড়ির কাছে চলে এলাম।
লতা আমাকে দেখে বললো,,

“কোথায় গেছিলি? আর এমন দৌড়ে এলি কেন?”

আমি কিছু না বলে গাড়িতে উঠে বসলাম। লতা সারা রাস্তা অনেক জিজ্ঞেস করলো আমি আস্তে আস্তে সব বললাম ও কিছু ক্ষন হা করে তাকিয়ে বলল,,

“আমি উনার হাবভাব দেখেই বুঝেছিলাম। এমন কিছু বলবে?”

” তুই বুঝেছিলি। ”

” হুম তোর মতো গাধা নাকি!”

“আমি গাধা?”

“তুই কি রাজি হয়েছিস?”

“কিসে?”

“প্রপোজ এ?”

“না কিছু বলিনি দৌড়ে চলে এসেছি আমি শক খেয়েছি খুব রে।”

“রাজি হবি।”

” না না।”

“কেন দেখতে কিন্তু ভালোই। রাজি হয়ে বিয়ে করে নে। চাচির বাসা থেকে চলে যা। শান্তিতে থাকতে পারবি। উনি আর তোকে কষ্ট দিতে পারবে না। না কথা শুনাতে পারবে।”

“কি সব বলছিস? ”

“ঠিক‌ই তো বললাম। ভেবে দেখিস?”

সারা রাস্তা আর কথা বললাম না। রাতে বাসায় এলাম। আসার পর ইমা আপু কথায় থেমে গেলাম। আপু চাচি কে বলছে?

” ইহান কোথায় মা?”

চাচি বলল, ” আমি জানি না রে কোথায় গেলো যে? ফোন করেছিলো কিন্তু কোথায় তা বলেনি।”

“এইভাবে আমার বিয়ের অর্ধেক সময় কোথায় গেল ফাজিল টা। ”

আমি ধীরপায়ে রুমে চলে এলাম। মাথায় একটা কথাই ঘুরপাক খাচ্ছে। ভাইয়া গেলো কোথায়?
কাল ওমন করলো আমাকে শাস্তি দেবে এসব বললো আর আজ সকাল থেকে লাপাত্তা হয়ে গেলো। ভাইয়া লাপাত্তা সাথে চাচি আমাকে একদম বকা ঝকা করছে না কেমন গুটিয়ে আছে। ভালো করেই কথা বলতে সব মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে আমার।

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here