এক_চিলতে_রোদ,Part_34,35

0
1168

#এক_চিলতে_রোদ,Part_34,35
#Writer_Nondini_Nila
#Part_34

আমার মাথা ভনভন করছে। চোখের সামনে এতো সব স্তব্ধ কর ঘটনা দেখে আমি হতভম্ব। বিষ্ময়ে আমি হতবাক হয়ে গেছি।ভাইয়া এমন একটা কান্ড ঘটিয়ে ফেলবে আমার কল্পনায় বাইরে ছিলো।
কি থেকে কি হয়ে গেলো আমার হাতে ঝলমলে আংটির দিকে তাকালাম। এটা ভাইয়া আমাকে পরিয়ে দেয়েছে। ভাবতেই আমার সারা শরীর কাঁটা দিয়ে উঠলো। ভাইয়া এটা আমাকে পরিয়ে দিলো।
চাচির মুখটা দেখার মতো হয়েছিলো। যেন আমাকে চিবিয়ে খাবে। চাচা চাচি রাগী চোখে আমার দিকে তাকিয়ে ছিলো।

কাল হয়ে গেলো সব কিছু উল্টা পাল্টা। ভাইয়া সবার সামনে এতো সব কথা বললো।এর পরিণাম কি হবে মাথা খারাপ হচ্ছে আমি পাগল হয়ে যাচ্ছি এতো সব ভেবে।

আমার সমস্ত চিন্তাভাবনা নিমিষেই দূর হয়ে গেলো ভাইয়ার কন্ঠ শুনে। ভাইয়া বলছে,

“এমন করে বসে থাকার জন্য তোকে রুমে আনিনি‌।”

আমি বিস্মিত হয়ে মাথা তুলে তাকালাম। সাথে চোখের পলক পরলো আর চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে গাল বেয়ে পারলো।
ভাইয়ার কথা কানে আসছে না আমার শুধু ভাইয়ার বলা কথা মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে।
আমি অবাক চোখে তাকিয়ে আছি। ভাইয়া তার হাতে থেকে ব‌ই কলম তুলে কিন্তু দাগ দিলো আর আমার সামনে দিয়ে বললো,,

“এভাবে তাকিয়ে না থেকে পড়তে বস।পরীক্ষার আর ছয়দিন আছে।”

আমি চোখের পলক ফেলছি না। তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে আছি। ভাইয়া বিরক্ত হয়ে বিছানায় অপর প্রান্ত থেকে এগিয়ে আমার কাছে বসলো। আর নিজের হাত দুটো বাড়িয়ে আমার গাল মুছে দিলো।

আর নরম কন্ঠে বললো,” এভাবে বসে আছিস কেন তুই কি খুশি না। আমার ব‌উ হবি বলে। ”

আমি হকচকিয়ে তাকিয়ে আছি।

ভাইয়া কন্ঠটা একটু গম্ভীর করে বললো,

” খুশি না হলেও আমার ব‌উ ই তোকে হতে হবে।বিকজ আই লাভ ইউ। এখন আমি এসব নিয়ে কথা বলতে চাইছি না। পরতে হবে তোকে আর কাজ করবি না।”

আমি কিছু বলতে মুখ খুলতে যাব‌ ভাইয়া বলে উঠলো,

“আমি তোর মুখে এখন কিছু শুনতে চাইছি না।মন দিয়ে পরতে বস। যা বলার পরিক্ষার পর বলিস। এখন পড়া ছাড়া অন্য কিছুর প্রতি তোর খেয়াল আমি বরদাস্ত করবো না।”

আমি অসহায় মুখ করে তাকিয়ে আছি। ভাইয়া আগের জায়গায় গিয়ে ব‌ই নিয়ে বাংলা ব্যাকরণ লিখতে বলছে। শক্ত চোখে তাকিয়ে আছি আর কিছু বলার সাহস পেলাম না। কিন্তু পড়ায় মন দিতে পারছি না এতো কিছুর পর পড়া আমার হচ্ছে না।

তখন ভাইয়া বললো,

“আমি জানি এতো সব ঘটনায় তুই চমকেছিস। সব কিছু তোর মাথার উপর দিয়ে গেছে।এসব তুমি ভাবসনি। এসবের জন্য তোর মনে অনেকটা অস্বস্তি করছে। কিন্তু আমি চাইনা এসব ভেবে পড়ায় গাফিলতি করিস। জীবনে ঘুরে দাঁড়াতে হলে নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে। তার জন্য লেখাপড়া করাটা ইম্পর্টেন্ট। নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে সবাইকে তোর যোগ্যতা দেখাতে হবে এসব কি তুই চাস না। নিজেকে গড়ে তুলতে। আজকের ঘটনা নিয়ে তোর মনটা খারাপ জানি তুই আমাকে ভাই ভাবিস তাই হয়তো এমনটা কিন্তু আমি তোকে আমার মনের কথা আগেই জানিয়েছি। আমি জানি তুই একটু হলেও বুঝিস আর আমাকেও ভালোবাসিস কিন্তু বুঝতে পারছিস না। কিন্তু একসময় বুঝবি সমস্যা নাই। নিজের ভালো চাইলে পড়া শুরু কর।”

ভাইয়া দিকে তাকিয়ে ছিলাম কথা শেষ হতেই আমি ব‌ই হাতে নিলাম।
সত্যি আমাকে পড়তে হবে এসব ভেবে নিজের জীবন আমি অন্ধকারে এ ঠেলতে পারবোনা। আমাকে নিজেকে বড় করতে হবে।

আমি পড়ায় মনোযোগ হয়ে গেলাম ভাইয়া নিজে গার্ড করে পড়ায় কোচিং শেষ হয়ে গেছে। ভাইয়া সেদিনের পর আর এসব নিয়ে কথা বলেনি। শুধু শিক্ষক এর মতো আমার লেখা পড়ার খেয়াল রেখেছে সাথে আরেকটা জিনিস তাকে বাসায় ই দেখা যায় সব সময়। কলেজ এ ও যায় না‌।
বাসায় প্রতিদিন চেঁচামেচি লেগেই থাকে সবটা ইলা আপু আর চাচির করা কেউ আমার সাথে লাগতে আসতেই পারে না ভাইয়া ছায়ার মতো পাশে আছে। আমাকে কাজ ও করতে হয়না‌। পরদিন ই একজন কাজের লোক এনেছে ভাইয়া যে লতার সাথে কাজ করে।লতা কে কম করতে হয়। আমার খাবার রুমে নিয়ে আসে লতা সব সময়। এই নিয়ে ও চেঁচিয়ে বলে অনেক কথা।

আমি সারাদিন রুমে থাকি। পড়ার জন্য। এদিকে মন দিতে পারিনা পরিক্ষার আর এক দিন আছে পরশু থেকে পরিক্ষা প্রথম দিন বাংলা। তো আজকে এডমিট কার্ড আনতে স্কুল এ যাব ভাইয়ার সাথে। আমি একা যেতে চাইছিলাম কিন্তু ভাইয়া নিয়ে যাবে বললো। বললেও সে কথা শুনে না। তাই তার সাথেই যেতে হবে।
রুমে থেকে বের হতেই চাচির চিৎকার শুনলাম। সব সময় আমাকে নিয়ে চেঁচামেচি করে। আজ ভাইকে নিয়ে করছে তাকে বকছে।
ভাইয়া দাঁড়িয়ে ছিলো আমার জন্য। আর চাচির বকা খাচ্ছিল। আমাকে আসতে দেখেই আর কাছে চলে এলো চাচি তখন চেঁচিয়ে বললো,

“ওই রাক্ষসীর জন্য তুই চাকরি ছেড়ে দিলি সব শেষ করে দিবে রাক্ষসী। আমার ছেলেকে আমার থেকে কেড়ে নিয়েছে। এখন ওকে নিঃশ্ব করে দিবে।”

চাচির কথায় আমার চোখ দুটো ছলছল করে উঠলো। কান্না গলায় ধলা পাকিয়ে এলো।ভাইয়া রেগে একবার চাচির দিকে তাকিয়ে আমার হাত ধরে টেনে বাইরে চলে এলো,

গাড়ি বসে আছি। আমি ফুঁপিয়ে কাঁদছি।
ভাইয়া বিরক্ত হয়ে ধমক দিলো,

“সব সময় এমন কাঁদিস কেন বুঝিনা মুখের উপর কিছু বলে দিতে পারিসনা।এতো চোখের জল কোথায় থেকে আসে তোর আল্লাহ জানে।”

ভাইয়া রেগে গাড়ি থামিয়ে দিলো।
আমি চমকে তাকালাম, “আর একটু কাঁদলে থাপ্পড় দিয়ে গাল লাল করে দিবো।”

চরম রাগ নিয়ে বললো, আমি মাথা নিচু করে কান্না থামানোর চেষ্টা করতে করতে বললাম,

“আপনি চাকরি ছেড়ে কেন দিছেন?”

“আমার ইচ্ছা তাই।”

“কিন্তু চাচি তো ভাবছে আমার জন্য।”

“ভাবতেই পারে আর সবার ভাবনা ঠিক এটা তো না। আমি জানি আমি কেন এটা করেছি?”

আমি ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে র‌ইলাম। ভাইয়া বললো,

“কখনো আমার সামনে এনে নাক মুখ লাল করে কাদবি না।”

আমি চমকে উঠে বললাম, কেন ?

“আমার রাগ লাগে।”

আমি চমকে তাকিয়ে আছি। আমি কাঁদলে রাগ কেন লাগে?

‘তুই ওমন কিউট করে আর আমার সামনে কাদবি না। কাঁদলে তোর গাল লাল হয়ে যায় মন চায় গাল টেনে দেয়। ঠোঁট কামড়ে ধরে কাঁদিস আমার অনেক অনুচিত কাজ করে ফেলতে ইচ্ছে করে। নিজের কন্ট্রোল হারিয়ে ফেলতে বসি।”

আমি হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে আছি। ভাইয়ার কথা শুনে আমার কান্না থেমে গেছে। আমি অবাক চোখে তাকিয়ে আছি। ভাই নিজের হাতে আমার নাক টিপে ধরে বলে,

“নাক টিপে ধরতে ইচ্ছে করে কাঁদলে ওমন কিউট করে নাক টানিস একদম পিচ্চি মেয়ে লাগে দেখতে।”

কথা শেষ করেই গাড়ি স্টার্ট দিলো।আমি বড় চোখ করে তাকিয়ে আছি। ভাইয়া আর তাকায়নি।
স্কুলে এসে আমার একটা বান্ধবী ওর সাথে দেখা হলো। এতো দিন পর আমাকে দেখে নিজের সাথে মিশিয়ে জরিয়ে ধরলো‌।ভাইয়াকে দেখে জিজ্ঞেস করলো কে?
আমি বললাম ও কেমন করে জানি তাকালো। আমি ওর সাথে ক্লাস রুম এ চলে এলাম। ভাইয়া বাইরে থেকে অফিস রুমে চলে গেলো। আর সেখানে থেকে আমাদের পরিক্ষা দিতে যাওয়ার কথা শুনলো পরিক্ষা হবে অন্য স্কুল এ। আমাদের স্কুল থেকে একঘন্টার রাস্তা।
সবার যাওয়ার জন্য বাস ঠিক করেছে। নিয়ে যাবে নিয়ে আসবে। ভাইয়া সেটা ঠিক করে এলো টাকা দিয়ে এলো। আমি জানতে পারলাম। আমাকে পিয়ন মামা ডেকে নেওয়ার ভাইয়ার আসার কারণ বুঝতে পারলাম এখ‌ন অফিস থেকে আমার এডমিট কার্ড দিলো। তারপর চলে আসতে হলো।আর কি?

বাসায় এসে ইমা আপু আর রিফাত ভাইকে দেখলাম। আপু আমাকে দেখে জরিয়ে ধরলো। আমি ভয়ে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছি‌ ভাইয়া যা সব করেছে তারপর আপুও কি সবার মতো? চাপা কষ্ট পেতে লাগলাম কিন্তু আপু অবাক করে দিয়ে ভাইয়াকে জড়িয়ে বললো,,

“তুই ঊষা কে ভালোবাসিস। বিয়ে করতে চাস ওর পাশে আছিস শুনে এতো খুশি হয়েছি কল্পনা করতে পারবি না‌। তোর এই সিদ্ধান্ত এ আর কেউ পাশে না থাকলেও আমি আছি। কিন্তু চাকরি কেন ছারলি?”

আপুর চোখে মুখে খুশির ঝিলিক কেন জানি এটা দেখে আমার মন থেকে বড় একটা নিঃশ্বাস বের হলো। প্রশান্তি হতে লাগলো।

“আমার ইন্জিনিয়ার এ জব হয়েছে।”

“সত্যি”
অবাক হয়ে বললো আপু।

ভাইয়া হাতের মিষ্টি দেখিয়ে বললো।

“এটা দেখে বুঝে নে।”

চাচি এখানেই ছিলো সেও খুশি হয়ে এগিয়ে এলো। আমি ছিলাম তাই আমাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে ভাইয়ার কাছে গেলো।

আমি পরতে পরতে বাঁচলাম।
আপু বিকেলে চলে গেলো।

প্রথম পরিক্ষার দিন ভাইয়া আমার সাথে বাসে এসেছে।ভাইয়া দুইসিটের টাকা দিয়েছে তাই সমস্যা হয়নি।সারা রাস্তা আমি চিন্তা ছটফট করেছি। ভাইয়া আমার একহাত ধরে বুঝিয়েছে।
ঠান্ডা মাথায় যেন পরিক্ষা দেয়। আমি ভাইয়ার হাত খামচে ধরে গাড়ি থেকে নেমেছি। ভাইয়া আমার কাঁপা হাতে চুমু খেয়ে সাহস দেয়। আমি ভেতরে চলে যায়। গেটের বাইরে ভাইয়া দাঁড়িয়ে ছিলো।

প্রথম পরিক্ষা ভালোই হলো আমি খুশি মনে বের হয়ে ভাইয়ার ক্লান্ত মুখ দেখলাম। ঘেমে একাকার হয়ে রোদ্রের তাপে দাঁড়িয়ে আছে একহাত কপালে দিয়ে আমি এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে তার দিকে এগিয়ে এলাম।
খুব মায়া হলো ভাইয়ার জন্য আমার। এতো কষ্ট করে এখনো দাঁড়িয়ে আছে আমার জন্য।আমার মুখটা ছোট হয়ে গেলো।
আমি কাছে আসতেই ভাইয়া তার ক্লান্ত মুখেও হাসি টেনে বলে,

“পরিক্ষা কেমন হলো? সব প্রশ্নের উওর দিয়েছিস তো?”

আমি না চাইতেও ভাইয়ার গাল স্পর্শ করলাম। তিন ঘন্টা দাঁড়িয়ে ছিলো ভাইয়া আমার জন্য এতো রোদ্রে ভাবতেই ভেতরটা কষ্টে ফেটে যাচ্ছে।
ভাইয়া হকচকিয়ে কথা অফ করে হাতের দিকে তাকালো। আমি মায়া ভরা চোখে তাকিয়ে বললাম,

“আপনি এতো সময় দাঁড়িয়ে ছিলেন কেন? চলে যেতেন। আপনার তো খুব কষ্ট হয়েছে এভাবে দাঁড়িয়ে কেন ছিলেন?”

#চলবে

#এক_চিলতে_রোদ
#Writer_Nondini_Nila
#Part_35

দ্বিতীয় দিন আমাকে একাই আসতে হলো। আজ ভাইয়ার অফিস জয়েন করার ডেট। তাই ভাইয়া আমার সাথে যেতে পারবে না। শুধু আজ না এখন থেকে আমাকে একাই যেতে হবে। ভাইয়ার মনটা এতে খারাপ কিছুটা‌।কারন আমাকে একা ছারতে চায়না যে।আমি রেডি হয়ে বেরিয়ে এলাম।খাবার রুমেই খেয়েছি। ভাইয়া টেবিলে থেকে পানি খেয়ে উঠে দাঁড়ালো।
আমি দরজার কাছে দাঁড়িয়ে আছি। চাচি চাচা খাচ্ছে। চাচি আমাকে দেখেই অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো আমি তার দিকে তাকিয়ে ভয়ার্ত মুখ করে ফেললাম। চাচি তখন দাঁত চেপে বললো,

“রাক্ষসী আমার ছেলেটাকে নিজের চাকর বানিয়ে নিয়েছে।”

কথাটা আমার ও ভাইয়ার কানে এলো ভাইয়া আমার দিকে তাকিয়ে। চোখ সরিয়ে চাচি কে কিছু বলতে যাবে আমি বুঝতে পেরে তারাতাড়ি ভাইয়ার হাত ধরে নিলাম। ভাইয়া আমার কাছেই চলে এসেছিলো তাই ধরতে পেরেছি।

ইহান রাগে লাল হয়ে নিজের মায়ের দিকে তাকায়। আবার শুরু করেছে মা এই কয়দিনে এতো অশান্তি করেছে যে তার হিসেব নাই‌।আবার সকাল সকাল শুরু করছে। রেগে ইহান কিছু কথা বলতে যাবে তখন নিজের বাহু শক্ত করে খামচে আটকে ধরে ঊষা। ও চমকে উঠে তার দিকে তো ঊষার দিকে তাকায়। ওর দিকে তাকিয়ে দেখতে পায় ওর মলিন মুখটা তাতে আরো রাগ হয় পরিক্ষা দিতে যাবে তখনো মার ঝামেলা না করলে কি হতো না।

আমি আমতা আমতা করে বলে উঠে, ” ভাইয়া প্লিজ চলুন ।এখন ঝামেলা করবেন না প্লিজ। ”

ইহান ভ্রু জোড়া কুঁচকে রাগ নিয়ে বলে, ” কিছু বলবো না মানে কি? অবশ্যই বলবো।”

“না প্লিজ। চলুন। চাচির সাথে আপনার এমন আচরন আমার ভালো লাগে না।”

“তোর সাথে কথা আচরণ তাহলে তোর ভালো লাগে বলছিস?”

আমি মাথা নিচু করে বললাম, ” ভালো না লাগলেও আমি অভস্থ হয়ে গেছি চাচির এসব কথায়।আর আমার পরিক্ষার টাইম হয়ে গেছে প্রায়। এখানে দেরি না করে চলেন আমরা যাই। আর আপনার ও তো দেরি হচ্ছে। আপনি তো আমাকে স্কুল এ রেখে আবার নিজের অফিস যাবেন প্রথম দিন লেট করলে কি ভালো দেখায়?”

আমি কথাগুলো বলে ভয় ভয় চোখে তাকিয়ে আছি। ভাইয়া কী বলবে কে জানি আমি এতো কথা বললাম,

ভাইয়া কিছু বললো না আমার হাত ধরে টেনে বাইরে চলে এলো।তা দেখে আমি স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললাম। পরিবারের সাথে ভাইয়ার এই দ্বন্দ্ব আমার ভালো লাগেনা।

ভাইয়া বাসার গাড়ি নিয়ে এসেছে আমাকে স্কুল এ নামানোর আগে আমার কপালে একটা গভীর চুমু খেলো। তারপর গালে হাত রেখে বললো সাবধানে থাকতে ও ভালো করে পরিক্ষা দিতে।আমি গাড়ি থেকে নামলেও ভাইয়া গেলো না আমি দাঁড়িয়ে ছিলাম তার যাওয়ার জন্য কিন্তু জোরে হাঁক ছেড়ে বললো,

“গাড়িতে না গিয়ে এভাবে দাঁড়িয়ে আছিস কেন? ”

আমি হকচকিয়ে বললাম,

” আপনি যান তারপর যাবো আমি। আরো দশমিনিট আছে তো!”

ভাইয়া চেঁচিয়ে বললো,

” আমার জন্য আমি তোকে দাঁড়িয়ে থাকতে বলেছি কি? আমার লেট হচ্ছে কিন্তু তারাতাড়ি গাড়িতে গিয়ে বস তারপর যাবো আমি।”

আমি বিস্মিত হয়ে তাকিয়ে চলে গেলাম। গাড়িতে আমার আমার পাশ খালি। এটা ভাইয়ার সিট ছিলো। আজ ভাইয়া নাই তাই নিশা আমার পাশে এসে বসলো।ও সব জেনে গেছে ভাইয়ার ব্যাপার এ। আসলে আমি বলেছে এখন মনে হচ্ছে বলে ভুল করেছি। শয়তানি মাইয়া খালি আমারে লজ্জা দেয় এই এখন দিচ্ছে।

“ঊষারে তোর ভাইয়া তোর সাথে এনগেজমেন্ট করে নিছে আর তোর এতো খেয়াল রাখে আমার যে কি ভালো লেগেছে শুনে। তোর চাচি তো খুব কষ্ট এ আছে তাইনা। ”

“এসব কথা বাদ দে‌!”

“তুই ও ইহান ভাইকে ভালোবাসিস তাইনা ‌।”

“আমি চুপ করে গেলাম। সত্যি কি আমি ভাইয়াকে ভালোবাসি নাকি বাসিনা‌?”

নিশা আমার উওর না পেয়ে বললো,

‘তোরা তো এক বাড়ি থাকিস তোদের মধ্যে কিছু হয়েছে?”

আমি ভ্রু কুঁচকে বললাম, “কি হবে?”

“ধুর, তোরে তোর হবু জামাই চুমু খাইছে?”

আমি হকচকিয়ে গেলাম।

“হবু জামাই কে? আর কি সব বাজে কথা বলছিস?”

নিশা এবার ক্ষেপে গিয়ে বললো, “হবু জামাই চিনো না তো এই আংটি হাতে রাখছিস কেন?”

আমি আংটির দিকে তাকালাম এটার কথা মনেই ছিলোনা। আমি গভীর ভাবে আংটির দিকে তাকিয়ে আছি।

“ওই এটার দিকে তাকিয়ে না থেকে বলনা তোরে কিস করেছে তাইনা‌। ”

লজ্জায় লাল হয়ে মাথা নেড়ে হুম বললাম।

এবার ও জিজ্ঞেস করলো কোথা করেছে,” ঠোঁটে তাইনা।”

আমি চমকে উঠলাম। কি অসভ্য আমাকে তো ভাইয়া কপালে আর গালে চুমু দিয়েছে আর ও এটা কি বলছে? আমি রেগে ওকে একটা ধমক দিলাম।
সারা রাস্তা এইসব নিয়ে জিজ্ঞেস করে মাথা খারাপ করেছে তাই আসার সময় ওকে রেখে আমাদের ক্লাস এর মিঠু কে জোর করে বসালাম আমার পাশেও সব চেয়ে মোটা মেয়ে। কিন্তু ও ছাড়া আর কেউ নাই তাই ওকেই বসালাম।ওর জন্য অবশ্য আমার আসতে কষ্ট হলো কারণ ওর অনেক জায়গা লাগে।নিশা এটা দেখে রাগ করলো। আমি পাত্তা দিলাম না‌।

কিন্তু পরদিন ঠিকিই দুজনে দুজনকে জড়িয়ে ধরে আবার একসাথে বসলাম। রাগের কথা আমাদের মনেই নাই।
পর পর আমার পরিক্ষা শেষ হতে লাগলো ভাইয়া আর যায় নি আমার সাথে। কিন্তু এর মাঝে আমি রিহান কে দেখেছি সে আমার দিকে তীক্ষ্ণ নজরে তাকিয়ে ছিলো। কিন্তু কাছে আসেনি।না কথা বলেছে।

আমি আসায় ছিলাম কাছে আসার তাহলে উনার মিথ্যা বলা নিয়ে কিছু শুনিয়ে দিতাম। উনার মিথ্যা বলার জন্য ভাইয়া কতো কষ্ট পেয়েছিলো আর আমাকেও কতো কিছু বলেছিলো।

পরিক্ষার মাঝে একবার চাচি আমায় ইচ্ছে মতো ঝাড়ি দেয়।ভাইয়া অফিস এ ছিলো তাই জানে না।গায়ে অবশ্য হাত দেয়না। কিন্তু আমার হাতে থেকে কেড়ে নিলো আংটি। আমি আঁতকে উঠে আংটির দিকে ছলছল করে তাকিয়ে ছিলাম।চাচি শাসিয়ে বললো,

“ইহানের কানে যেন কোন কথা না যায়!”
বলেই আমার গাল টিপে ধরলো।আমি ব্যাথা চোখ বন্ধ করে কুঁকড়ে উঠছি।চাচি ধাক্কা দিয়ে আমাকে সরিয়ে চলে গেলো।

আর তিনটা পরিক্ষা আছে। রাতে ভাইয়া আমার মলিন মুখ দেখে কিছু আঁচ করে বললো কি হয়েছে?

আমি চমকে মুখে মেকি হাসি এনে বললাম, ক‌ই কিছু না তো!

ভাইয়া আমার কাছে এসে মুখোমুখি বসলো আমি হকচকিয়ে এদিক ওদিক তাকাতে লাগলাম। ভাইয়া প্রশ্ন ছুড়লো,

” তোর পরিক্ষা খারাপ হয়েছে নাকি?”

আমি বললাম, ওই একটু!

মিথ্যা বললাম যাতে ভাবে পরিক্ষার জন্য মন খারাপ।ভাইয়া বিশ্বাস করলো কিন্তু আবার বললো,

“গালে কি হলো ওমন লাল কেন?”

আমি ভয় পেয়ে বললাম, “ক‌ই কিছু না তো। আসলে আমার গরম লাগছে তাই বোধহয় লাল হয়েছে।”

ভাইয়া সন্দেহ হলেও কিছু বললো না।আমি হাত আড়াল করে রেখেছি যাতে দেখতে না পায়। আমার বুকের ভেতরে হাহাকার করছে আংটির জন্য। কিন্তু কিছুই বলতে পারছিনা।

দুইটা পরিক্ষাও শেষ হয়ে গেলো আজ আমার শেষ পরিক্ষার দিন ভাইয়া এলো আমার সাথে।
পরিক্ষা শেষে ভাইয়ার কাছে গেলাম। আমাদের যেখানে পরিক্ষা সেখানকার কাজেই একটা মেলা হচ্ছে। সব স্টুডেন্ট রা যাবার জন্য জোর করছে।সবাই যাবেই যাবে। স্যার রা বাধ্য হয়ে রাজি হলো।
কারন কাউকে থামাতে পারছে না।

দশমিনিট রাস্তায় গিয়ে মেলায় ঢুকা হলো আমার হাত ধরে রেখেছে ভাইয়া। আর আমার পাশে নিশা আছে।
মেলায় মানুষ গিজগিজ। অনেক মানুষ উপস্থিত এখানে। সবাই মজা করছে। ভাইয়া আমার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো,, কি খাবি?

আমি চারপাশে তাকিয়ে দেখছি। কেউ খাচ্ছে তো কেউ পছন্দের জিনিস কিনছে। আমি সব কিছু হা করে দেখছি।
আমি ভাইয়ার কথা শুনে তাকালাম কিন্তু কি খাবো বুঝতে পারছিনা। আমি বললাম,

“আমি খাবো না কিছু।”

বুঝতে না পেরে না করে দিলাম। বলেই আমার গান হাতে চিমটি খেলাম আমি মৃদু চেঁচিয়ে উঠলাম। নিশা দিয়েছে আমি রেগে তাকালাম,

ভাইয়া আমাকে চেঁচাতে দেখে জিজ্ঞেস করলো কি হয়েছে?

আমি কিছু বলার আগেই নিশা বললো, ” ভাইয়া ও ফুসকা খাবে বলতে লজ্জা পাচ্ছে!”

আমি হতভম্ব হয়ে গেলাম কি মিথ্যুক রে বাবা।

ভাইয়া আমাদের ফুসকার কাছে নিয়ে এলো এতোক্ষন আমার ভিড়ের কাছে ছিলাম না।এবার ভিড় ঠেলে যেতে হবে‌। ভাইয়া আচমকা আমার জরিয়ে ধরলো তারপর অপরপাশে ফুসকা হোটেল এ আসলাম।

খাওয়া শেষে ভাইয়ার কল এলো আমাদের দাড় করিয়ে ফোন কানে নিয়ে সরে দাঁড়ালো।আমি আর নিশা দাঁড়িয়ে আছি নিশা আমাকে টেনে দোকানে নিয়ে গেলো আর গলায় নেকলেস দেখতে লাগল। আমি তাকিয়ে আছি দোকানের দিকে অনেক জিনিস আছে আমার সব কিছুর মাঝে কাচের চুড়ির দিকে নজর পরলো আমি ধুম করেই চুড়ি হাতে নিলাম কি সুন্দর আমি সাদা চুড়ি হাতে পড়ে দেখছি। দাম জিজ্ঞেস করে চল্লিশ টাকা। কিন্তু আমার কাছে আছে বিশ টাকা মাত্র। এদিকে নিশা নেকলেস টা কিনে নিয়েছে। ওর আর টাকা নাই।আমি মহিলাটা কে জিজ্ঞেস করলাম বিশ টাকায় দেবে কিনা কিন্তু সে বললো সম্ভব না ত্রিশ টাকা হলেও দিতো।আমি মন খারাপ করে চলে এলাম। নিশা ভাইয়াকে বলতে চাইলো আমি মানা করে দিলাম।

একটু পর ভাই এসে আমার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো,

‘কি হলো আবার মুখটা এমন পেঁচার মতো করে তাকিয়ে আছিস কেন?”

নিশা বললো,, ভাইয়া ঊষা…

আমি ওর হাত চেপে ধরে চোখ রাঙানি দিলাম ও চুপসে কথা অফ করে দিলো।

ভাইয়া সন্দেহ চোখে তাকিয়ে র‌ইলো।
ভাইয়াকে পুরো জায়গা ঘুরালো আর কিছু কিনবো কিনা জিজ্ঞেস করলো আমি মানা করে দিলাম গাড়িতে উঠার আগে ভাইয়া আমাদের গাড়ির সামনে রেখে আইসক্রিম আনতে গেলো। এটা আমার খুব পছন্দ তাই। একটু পর আইসক্রিম এনে আমাদের হাতে দিলো কিন্তু দুইটা একটা আমার ও একটা নিশার।

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here