এক_চিলতে_রোদ,Part_39,40

0
1250

#এক_চিলতে_রোদ,Part_39,40
#Writer_Nondini_Nila
#Part_39

ইহান কাঁদায় পরে গম্ভীর মুখ করে সবার দিকে তাকিয়ে আছে। আর সবাই ওকে নিয়ে মজা করে হাসছে। ওর এতো রাগ হচ্ছে কি বলবো?

রাগে কটমট করে সবার থেকে চোখ সরিয়ে ঊষার দিকে তাকালো। ইডিয়েট আমাকে দেখে হাসা হচ্ছে। রাগ করে তাকালেও ইহান নিজের রাগ বেশি সময় ধরে রাখতে পারলো না। পারবে কি করে। পারাটা ওর জন্য কষ্ট কর। কারন এখন ঊষা মন খুলে হাসছে ওর হাসির প্রতিটা শব্দ প্রতিধ্বনি ইহানের কানে গিয়ে বাজছে। কি মিষ্টি সেই আওয়াজ? ওর সমস্ত রাগ ঊষার হাসির মাঝে বিলীন হয়ে গেল। মনের মাঝে একটু রাগ অবশিষ্ট রইল না। হাসলে ঊষার চোখ দুটো ছোট ছোট হয়ে যায় কি মিষ্টি লাগে দেখতে?এমন মনোমুগ্ধকর দৃশ্য দেখতে সব করতে রাজি ইহান। আমি পরার জন্য যদিও ঊষা এমন প্রাণ খুলে হাসে। তাহলে এভাবে কাঁদা আমি হাজার বার পড়তে রাজি আছি।
এই মুখের হাসির জন্য আমি সব করতে রাজি।

আশেপাশের সবার মজার ছলের কথা শুনে ঊষার থেকে ধ্যান ফিরে এলো ইহানের।আর ঊষার এই সিগ্ধ মিষ্টি হাসিটা থামাতে হলো ধমক দিয়ে ইহানকে।না হলে এই মেয়ে আজ আর থামবেনা‌।আমার সমস্যা নাই কিন্তু সবাই কি ভাববে?
আমি মেন্টাল এর মতো কাঁদা বসে হা করে প্রেয়সীর হাসি দেখছি।

আচমকা ভাইয়া গম্ভীর গলায় ধমক খেয়ে আমি হাসি থামিয়ে ফেললাম ভয়ে। ভয়ার্ত চোখে তাকালাম ভাইয়ার দিকে তিনি গম্ভীর মুখে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। তা দেখে ভয়ে শুকনো ঢোক গিললাম আমি।
এতোক্ষণ কি করছিলাম বুঝতে পেরে ভয়ে আমার গলা শুকিয়ে এলো।

“মেন্টাল এর মতো হাসার কি আছে? একজন পরে গেছে আর কেউ সাহায্য না করে মজা নিচ্ছে।”

আমি কেঁপে উঠলাম কথা শুনে। ভাইয়ার কথা শুনে রিফাত ভাই এগিয়ে এলো আর সরি বলে হাত বাড়ালো কিন্তু ভাইয়া তার হাত ধরলো না।
বললো, “আপনি যান আমাকে ঊষা হেল্প করবে।”

ভাইয়ার কথা শুনে রিফাত ভাইয়া হেসে চলে গেলো‌। আমি জরোসরো হয়ে ভয়ার্ত মুখ করে দাঁড়িয়ে আছি। রিফাত ভাই যেতেই ভাইয়া বললো,

‘হাত বাড়া!’

আমি চমকে উঠলাম,” কেন?”

ভাইয়া বললো, ” তোকে আমার সাথে গড়াগড়ি খাওয়াবো তাই। খুব হাসি পাচ্ছিল তাই না আমার এই অবস্থা দেখে। এবার তুই ও কাঁদায় গড়াগড়ি খেয়ে হাসবি।”

আমি আঁতকে উঠলাম। হায় আল্লাহ বলে কি ভাইয়া আমাকেও এখানে কাঁদায় ফেলবে নাকি ? তাহলে তো খুব বাজে হবে কাজটা কিন্তু সেটা ভাইয়া বুঝলে তো। এসব আমার বোকামির জন্য। কেন যে হাসতে গেলাম ওমন করে আমার বুঝা উচিত ছিলো এর ফল ভালো হবে না।
কিন্তু এখন কি করবো?
আমি কাঁদো কাঁদো মুখ করে বললাম,

” আমি ভেরি সরি। আমার হাসা উচিত হয়নি। তার জন্য সরি বলছি প্লিজ আমাকে এই কাঁদায় ফেলবেন না। ”

ইহান ভাই আমার কথা কানে নিলো না আমাকে গম্ভীর গলায় বললো, ‘আমি হাত দিতে বলেছি।”

আমি আকুতি কন্ঠে বললাম,” প্লিজ এই কাজ করবেন না সাদা ড্রেস পরে এই কাঁদায় পরলে আমাকে একদম পাগল লাগবে।”

“তোকে আমি হাত দিতে বলেছি।”

আমি ভাইয়া কে মানাতে পারলাম না। ব্যথ চোখে তাকিয়ে আছি। কান্না পাচ্ছে আমার। সবাই এগিয়ে গেছে আমরা শুধু রয়েছি।ভাইয়ার কঠিন চোখ মুখ দেখে আমি নিজের কাঁপা হাত বারিয়ে দিলাম। দু’পা এগিয়ে। ভাইয়া তার ভেজা ঠান্ডা হাতে আমার হাত শক্ত করে ধরেই হালকা টান মারলো ভয়ে আমি শেষ পরতে পরতে বেঁচে গেলাম। জোরে না হালকা টান দিয়েছিলো। আমি বড় চোখ করে ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে বললাম,

“আমাকে ফেলবেন না প্লিজ। এর জন্য আপনি আমাকে যা খুশি শাস্তি দিন আমি সব মাথা পেতে নেবো। আপনার সব কথা রাখবো। কিন্তু এটা করবেন না প্লিজ।”

শেষ চেষ্টা করলাম। আমি মনে মনে আল্লাহকে ডাকছি যেন ভাইয়া আমার কথা মেনে নেয়। আর এদিকে ইহান তো সব মজা করছে। ঊষার কথা শুনে ওর একটা দুষ্টু বুদ্ধি খেলে যায় মাথায় আর ঠোটের কোনে দুষ্টু হাসি এনে বলে,

‘যা বলছিস ভেবে বলছিস তো? আমার সব কথা শুনবি তো।”

আমি কোন কিছু না ভেবে বললাম,‌” হুম শুনবো।”

ইহান ঠোঁটের হাসি চ‌ওড়া করে বলে,

“ওকে মনে থাকে যেন কথাটা।”

আমি বিস্মিত হলাম কি করাবে আল্লাহ জানে আমাকে দিয়ে। ভয়ে তো স্বীকার করে নিলাম।

ভাইয়া ক্ষেতের পানিতে থেকে উঠলো আমার হাত ধরে। রাস্তায় এসে শরীরের দিকে তাকিয়ে নাক ছিটকালো। আর আমার দিকে তাকিয়ে বলল,

“এইসব গ্ৰাম তোর পছন্দ। ছিঃ কি অবস্থা হলো আমার!”

আমি আর কিছু বললো না চুপ করে দাঁড়িয়ে আছি।ইহান ভাই এগিয়ে এসে আচমকা আমার সাদা কালো মিক্সড করা ওরনার কোনা ধরলো আমি চমকে উঠলাম।

“কি করছেন কি?”

ভাইয়া আমার কথার উত্তর না দিয়ে আমার পেছনে গিয়ে ওরনায় নিজের মুখ হাত মুছে নিলো। আমি বিস্মিত হয়ে তাকিয়ে আছে সামনে। একবার ঘাড় বাঁকিয়ে তার কান্ড কারখানা দেখেছি। পাশ দিয়ে একটা মহিলা তিনটা ছাগলের দরি ধরে হেঁটে যাচ্ছে আর আমাদের দিকে হা করে তাকিয়ে আছে। আমি কাচুমাচু মুখ করে তাকিয়ে আছি।

মহিলা চলে গেলো আমি তার সাথে পেছনে তাকিয়ে দেখি এখনো তাকিয়ে আছে।
ভাইয়া ওরনা ছেড়ে হাঁটতে লাগলো আমিও পেছনে আসছি। আমাদের থেকে অনেকটা দূরে সবাই হেঁটে যাচ্ছে।দেখা যাচ্ছে তাদের ও। সবার শেষে আমরা এলাম। বাড়ির সামনে রিফাত ভাই দাঁড়িয়ে ছিলো।

আমাদের নিয়ে ভেতরে ঢুকলো। বাসা পুরোনো না একদম নতুন দুতালা বাসা। ইমা আপুর থেকে শুনেছি নতুন করেছে। মেয়ে বিয়ে দেবে তাই। যাতে কেউ বাড়ি অসুন্দর না বলতে পারে।
ওনার দুই মেয়ে এক ছেলে।ছোট মেয়ে আমার সমান এস এস সি পরীক্ষা দিয়েছে। তার সাথে আমার সখ্যতা হলো। মেয়েটার নাম দিনা।খুব ভালো আর মিশুক। আমার পেয়ে তো সে খুবই খুশি তার সমান একজন মানুষ পেয়েছে। ইহান ভাইয়া আর রিফাত ভাইয়ের বোনের দুই বাচ্চার অবস্থা দেখে সবাই হাসাহাসি করেছে। আবার দুঃখ প্রকাশ ও করেছে।বড়রা দুঃখ প্রকাশ করেছে ছোটরা হাসাহাসি। যাইহোক ভাইয়া জন্য আলাদা রুমের ব্যবস্থা করেছে। আমাকে দিনার সাথে থাকতে দেয়া হলো। ফ্রেশ হওয়ার পরে শুতে মন চাইলে কিন্তু আমাকে টেনে দিনা খাবার টেবিলে নিয়ে আসলো সেখানে সবাই আছে। অনেকটা পথ জার্নি করা হয়েছে সবারই কমবেশি খিদা লেগেছে। তাই সবাইকে খাবার দেয়া হলো ভাইয়া সেখানে ছিল। খাবার শেষে ভাই আমাকে ইশারায় তার রুমে যাওয়ার জন্য বুঝিয়ে নিজে নিজের রুমে চলে গেল।
দিনা আমাকে টেনে রুমে নিয়ে আসলো। বিছানায় বসিয়ে বকবক করতে লাগলো।

আমি বেড়াকলে পরে থমথমে মুখ করে ওর দিকে তাকিয়ে আছি। একেতে আমার ঘুম পাচ্ছে আবার এই দিনার বকর বকর। আবার ভাইয়ার রুমে যাওয়া কি যন্ত্রনা? এই মেয়েকে রেখে আমি যাবো কি করে?

আমি গোমড়া মুখে তাকিয়ে আছি দেখে দিনা বললো, ” কোন সমস্যা ঊষা?”

আমি হাসার চেষ্টা করে বললাম,’ না কিন্তু আমার একটু ইহান ভাইয়ের কাছে যাওয়ার ছিলো। আমি যাই।”

দিনা বললো, ” ইহান ভাইয়াটা আবার কে?”

আমি বললাম, ” আমার সাথে ছিলো ইমা আপুর ভাই তিনি।”

“ও মাই আল্লাহ। ওই হান্ডসাম ছেলেটা? কি সুন্দর দেখতে। ”

আমি চুপ করে ওর কথা শুনছি। ওর প্রশংসা করাটা আমার ভালো লাগছেনা। ও নিজে থেকে বললো,

‘আচ্ছা চলো আমিও যাই তোমার সাথে।”

আমি বললাম, ” তুমি গিয়ে কি করবে?”

“দরকার আছে। চলো না।”

বলেই আমাকে টেনে বেরিয়ে এলো।দিনার রুম নিচে আর ভাইয়া, ইমা আপুরা দুতালায়। আমরা সিঁড়ির কাছে আসতেই দিনার বড় বোন তিন্নি আপুর সাথে দেখা। যার বিয়ে খেতে এসেছি আমরা। আমাদের দেখেই ভ্রু কুঁচকালো আর আমার দিকে তাকিয়ে মিষ্টি করে হাসলো।
শ্যামবর্ণের হলেও চেহারাটা খুব মায়াবী তার।

“কোথায় যাচ্ছিস তোরা?”
দিনার দিকে তাকিয়ে বললো।

দিনা বললো, ‘ ঊষার নাকি ইহানের রুমে কি দরকার তাই যাচ্ছে। আর আমি ওকে নিয়ে যাচ্ছি।”

তিন্নি আপু বলল,” ইহান কি হ্যা ওনি না তোর ছোট আর না সমান। তাই ভাই বলবি। অভদ্রতা আমার একদম পছন্দ না।”

দিনা অপমানিত হয়ে আমার দিকে একবার তাকিয়ে মুখ ছোট করে বললো, আচ্ছা।

তিন্নি আপু আমাকে বললো,” ঊষা ওইযে ওইটা তোমার ইহান ভাইয়ের রুম। তুমি একা যেতে পারবা। আসলে দিনার সাথে আমার দরকার ছিলো।”

আমি সঙ্গে সঙ্গে বললাম, “সমস্যা নাই‌। আমি পারবো। আমি তো একাই আসতে চাইছিলাম। দিনা জোর করে এলো।”

আপু হাসি মুখে বললো,,” আচ্ছা যাও তাহলে।”

বলেই দিনার হাত ধরে নিয়ে গেলো দিনা বলছে কি দরকার? আমি ওর সাথে যাব তো ছারো।

আপু শুনলো না। আমি হাফ ছেড়ে বাঁচলাম। দিনা কে নিয়ে যাওয়ার ইচ্ছা একদম ছিলো না‌।

আমি ইহান ভাইয়ের রুমে যেতেই ভাইয়া দরজা আটকে দিলো আর বললো,

‘এতো লেট হলো কেন? কখন থেকে ওয়েট করছি?”

দরজা আটকানার শব্দ শুনেই আমার বুক কেঁপে উঠেছে। আমাকে কি এখন শাস্তি দিবে‌। কি শাস্তি দিবে আল্লাহ জানে। রক্ষা করো আল্লাহ।

ভাইয়ার কথা শুনে বললাম, ” ওই দিনা আসতে চাইছিলো তাই লেট হলো।”

“দিনা কেন আসতে চেয়েছে?”

“আমি কি জানি? আমাকে ডেকেছেন কেন?”

ভাইয়া আর প্রশ্ন করলো না। আমার সামনে এসে দাড়ালো আর তীক্ষ্ণ চোখে আমার দিকে তাকালো।
আমি মাথা নিচু করে আছি।
ভাইয়া আমার সামনে দাড়িয়ে আমার দিকে তাকিয়ে থেকে বললো,,

” আমার দিকে তাকা।”

আমি বিস্মিত হয়ে মাথা তুলে তাকালাম। ভাইয়া তাকিয়ে ছিলো তাই চোখাচোখি হয়ে গেল।

“তো তখন কি বলেছিলি? আমি যা বলবো তাই করবি?”

আমি কাঁপা হাত আরেক হাতে ধরে আছি। ভাইয়ার কথা শুনে হৃৎপিণ্ড কেঁপে উঠলো। আল্লাহ কি করাবে আমাকে দিয়ে।

“তো কর।”

আমি ভাইয়া মুখের দিকে তাকিয়ে ভাবছি কি করবো? কিন্তু মুখে কিছু বলছি না।
ভাইয়া তখন একটা কথা বলে উঠলো আর তা শুনে আমার সারা শরীর কেঁপে উঠলো। বুকের ভেতর ধুকপুক বেড়ে গেলো। আমি হতভম্ব হয়ে ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে আছি।

ভাইয়া বলেছে, ” আই ওয়ান্ট এ কিস ফম ইউ।”

আমি মার্বেলের মতো গোল চোখে তাকিয়ে আছি। ভাইয়া শান্ত দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি লজ্জায় মাথা নুইয়ে নিলাম। ছিঃ কি সব বলছে ভাইয়া আমি তাকে কিস করবো অসম্ভব। ভাবতেই কেমন লাগছে গা কাঁপছে।

আমার শরীর কাঁপছে থরথর করে। ভাইয়া আমার কোমর জড়িয়ে নিজের সাথে মিশিয়ে নিয়েছে। এবার বললো,

” হ্যারি আপ, ঊষা।”

আমি কাঁপা কাঁপা গলায় বললাম, ” ছারুন প্লিজ। আর কি সব উল্টা পাল্টা বলছেন? এসব আমি অসম্ভব পারবো না।”

“তুই কিন্তু আমাকে কথা দিয়েছিলি। যা বলবো তাই করবি।”

“হুম কিন্তু এটা করতে পারবো না প্লিজ বুঝার চেষ্টা করেন।”

“কেন পারবি না? তোর কি আমাকে পছন্দ না? দেখ তুই কিন্তু আমার বউই হবি।”

আমি বিষ্ময় নিয়ে তাকালাম, “ছারুন, হবো হয়নি তো।’

“তার মানে, বলতে চাইছিস আমাদের বিয়ে হলে আমাকে নিজে থেকে কিস করবি?”

আমি বিস্মিত হয়ে তাকালাম।

“ওকে যা তাই হবে। এখন তাহলে আমার মাথা টিপে দে আমি ঘুমাই।”

বলেই ছেড়ে দিলো। আমি হতবুদ্ধি হয়ে দাঁড়িয়ে আছি। নিজে ঘুমাবে আর আমার কি ঘুম পায়না নাকি?
কিন্তু মনের রাগ প্রকাশ করা পসিবল না আমার পক্ষে তাই তো ভাইয়ার পাশে গিয়ে বসে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলাম। ভাইয়া চোখ বন্ধ করে নি হা করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি অস্বস্তি নিয়ে হাত বুলিয়ে দিচ্ছি এমন হা করে তাকিয়ে থাকলে কি কিছু করা যায়।

“আপনি না বলে ঘুম আসবেন তাহলে এমন তাকিয়ে আছেন কেন?”

“তোকে দেখছি।”

সরাসরি উত্তর পেয়ে থমকে গেলাম। মন চাইছে এখান থেকে ছুটে বেরিয়ে যায়। কিন্তু তা পারবো না। ইহান আচমকা মাথা উচু করে আমার গালে চুমু বসিয়ে দিলো। আমি বিষ্ময়ে হতভম্ব হয়ে গেলাম। হাত ভাইয়ের কপাল থেকে পড়ে গেছে আমি চাদর খামছে ধরে শক্ত হয়ে বসে আছি। মুহুর্তের মাঝে কি হয়ে গেল সেটা বোঝার চেষ্টা করছি। এমন হুট করে যে আমাকে চুমু দিয়ে বসবে আমি কল্পনাও করিনি।

ভাইয়া আবার তার মাথা বিছানায় রেখে বলল, “এমন পাথর হয়ে বসে না থেকে মাথা টিপে দে। তুই তো কাজটা করলি না তাই আমি করে দিলাম।”

আমার হাত নড়ছে না। আমি নরতে পারছিনা। আমি যেন পাথর হয়ে গেছি। ভাইয়া টেনে তার মাথায় আমার হাত দিয়ে চোখ বন্ধ করলো। আমি আস্তে আস্তে নিজের হাত নাড়াতে লাগলাম হতভম্ব হয়ে বসে থেকেই। অনেকক্ষণ ধরে এখানে বসে আছি ঘুমের জন্য বারবার হামি দিচ্ছি। ভাইয়া তো বেগুরে ঘুমাচ্ছে কিন্তু আমি উঠে চলে যেতে পারছি না যদি আবার বকা খাই।
খাটে হেলান দিয়ে আমিও ঘুমিয়ে পড়লাম।যখন চোখ মেললাম আমার চোখ ছানাবড়া হয়ে গেল।

#চলবে

#এক_চিলতে_রোদ
#Writer_Nondini_Nila
#Part_40

হাত ভর্তি মেহেদী দিয়ে বসে আছি চেয়ারে। আর আমার দৃষ্টি হাতের মধ্যে। যেখানে ইহান নাম লেখাটা জ্বলজ্বল করছে। আমার পাশে বসে দিনা যে আমার মেহেদীর প্রশংসা করতে ব্যস্ত।

দিনা বললো, “ঊষা তোমার মেহেদির ডিজাইন বেশি সুন্দর হয়েছে। আপুর টার থেকে ও। ইহান ভাইয়ার পছন্দ খুব সুন্দর তাইনা।”

আমি ওর দিকে থেকে চোখ সরিয়ে সামনে তাকালাম। ইহান ভাই দিনার ভাই তামিম এর সাথে কিছু নিয়ে কথা বলছে।
ইমা আপু হাতে মেহেদি লাগাচ্ছে। তিন্নি আপু তার বান্ধবী দের সাথে গল্পে ব্যস্ত। একটু আগের কথা ভাবতেই লজ্জায় মাটির সাথে মিশে যাচ্ছি।

আমি ভাইয়া থেকে চোখ সরিয়ে আবার হাতের দিকে তাকিয়ে র‌ইলাম।

বিকেলে ভাইয়ার রুমে আমি ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। তারপর যখন চোখ খুললাম আমার মুখের সামনে দিনাকে বসে থাকতে দেখি।ও আমার দিকে হা করে তাকিয়ে ছিল। আমি ওকে দেখে অবাক হয়ে যায় আর চোখ খুলে বুঝতে পারি আমি ভাইয়ার রুমে আছি। কিন্তু ভাইয়া রুমে নাই। দিনা বড় চোখ করে তাকিয়ে আছে আমার দিকে।

আমার চোখ খুলে তাকানো দেখে জিজ্ঞেস করে, “ঊষা তুমি এখানে ঘুমাচ্ছ কেন? এটা তো ইহানের রুম। তুমি সেই যে এলে আর গেলে না পরে আমি এসেও দরজা ভেতর থেকে আটকানো পেলাম। তোমরা দুজন ভেতরে কি করছিলে?”

আমি ওর কথায় চমকে উঠে বসলাম। এই মেয়েকে এখন আমি কি বলবো? দিনা আমাকে পুলিশের মতো জেড়া করছে। তখন ইমা আপু এলো আর আমাদের কাছে এসে দিনাকে বলল,

“সেসব জেনে তুমি কি করবে দিনা?”

দিনা বলে, ” ভাবি ঊষা ইহানের রুমে ছিলো জানো।এখানে ঘুমাচ্ছিলো।”

আমি লজ্জায় মাথা নিচু করে বসে আছি। ছিঃ আপুর সামনে এসব কি করে যে ঘুমিয়ে পরলাম আর ভাইয়া কোথায় গেছে?

আপু আমার দিকে একবার তাকিয়ে দিনার দিকে তাকিয়ে বললো,
” জানি।”

‘তুমি কি বলবা না? এসব কি ?”

“কি বলবো?”

দিনা অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। বলছে না কেন কিছু ও ভাবছে।

ইমা আপু দিনাকে গড়গড় করে বলে দিলো আমার আর ইহান ভাইয়ের বিয়ে হবে। বিয়ে ঠিক হয়ে আছে ছোট থেকে। আমাদের এনগেজমেন্ট হয়েছে আমার হাত টেনে আংটি দেখালো। দিনা সব শুনে থ মেরে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি অবাক হয়ে আপুর দিকে তাকিয়ে আছি। সত্য মিথ্যা কি সুন্দর বলে দিলো আপু।

দিনা চোখে মুখে চরম বিষ্ময় নিয়ে তাকিয়ে আছে। সব ওর মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে।

আপু আমাকে বললো, ” উঠ আর কতো ঘুমাবি। একটু পর মেহেদি দেওয়া হবে যা রেডি হয়ে ওইপাশে যা। সবাই নাচবে গাইবে দিনার সাথে রেডি হয়ে আয়।”

দিনা আমাকে নিয়ে ওর রুমে এলো। আর আমার দিকে কোমরে দিয়ে তাকালো। তারপর গালে ফুলিয়ে বললো,

“তাই তো বলি আমি ইহানকে নিয়ে সরি, ইহান ভাইকে নিয়ে কথা বলায় মুখটা ওমন করে কেন রাখছিলি।”

আমি চুপ করে তাকিয়ে আছি।

“আগে বলবি না এই কাহিনী। তাহলে কি তোর বরের দিকে নজর দিতাম নাকি‌ আমি ওতো খারাপ না হু।”

আমি আমতা আমতা করে বললাম, “আমি খারাপ বলেছি নাকি!”

“বলো নি মনে মনে ঠিক বলেছো জানি। ইহান ভাইয়ের সাথে তোমার বিয়ে এসব শুনে তো আমি অবাক। যাই হোক তোমাদের কিন্তু খুব মানাবে।”

আমি লজ্জায় মাথা নিচু করলাম।

“আচ্ছা তোমরা এক রুমে কি করছিলে?”

আমি থমকে গেলাম।

“ও এগিয়ে এসে বললো। আহারে ক্রাশ খেতে খেতে ছ্যাকাও খেলাম।”

বলে মনে খারাপ করে তাকালো। আমি কি বলবো বুঝতে পারছি না। ও এগিয়ে এসে বললো,

“ইহান ভাই তোমাকে খুব ভালোবাসে তাইনা।”

আমি মাথা নেড়ে সম্মতি দিলাম।

“ওয়াও কী লাকি তুমি!”

আর কিছু বললো না আমাকে রেডি হতে বললো। আমাকে একটা ড্রেস দিলো ওর ড্রেসের মতো। নীল রঙের লেহেঙ্গা। সবাই এই এক কালারের ড্রেস পরবে। আমার আনা ড্রেস পড়া হলো না‌। আমি সাজতে পারিনা তাই দিনা আমাকে সাজিয়ে দিলো। চুল মাঝে সিথি কেটে দুই পাশে ফুলিয়ে ছেড়ে দিলো ও নিজেও আমার মতো করেই সাজলো। আমি চুড়ি এনেছিলাম তাই নীল চুড়ি পরলাম। দিনা ব্যাসলেট পরলো। তারপর আমরা ছাদে চলে এলাম সাতটার দিকে।কতো মানুষ এসেছে অনুষ্ঠান নাচ গান হবে যে। দেখার জন্য আশেপাশের আর আত্মীয় স্বজন সবাই আছে। ইমা আপু চাচি কে একটা চেয়ার টেনে বসিয়ে দিলো। আমি তিন্নি আপুকে দেখলাম। তিনি রানী গোলাপি রঙের ড্রেস পরেছে। তারটা ভিন্ন ব‌উ বলে কথা। তার দুই হাত ধরে বসে দুজন অপরিচিত মুখের অধিকারী মানুষ মেহেদী লাগিয়ে দিচ্ছে।

ইহান ভাইকে নীল রঙের জিন্স আর শার্ট পড়া দেখলাম। তিনি পাঞ্জাবি পরে নি দিনা বললো সবাইকে দিয়েছে সে নাকি পরবে না তাই ম্যাসিং করে শার্ট পরে এসেছে।
ভাইয়া রিফাত ভাইয়া আর কয়েকজনের সাথে দাড়িয়ে আছে। দিনা আমাকে রেখে ওর একটা ফ্রেন্ড এসেছে তার কাছে চলে গেলো।

আমি হাঁটতে হাঁটতে চাচির কাছে গিয়ে পরলাম।চাচির সাথে আরো কয়েকটা মহিলা বসা ছিলো তারা আমাকে দেখেই ডাকলো। আমি চাচির দিকে তাকিয়ে মুখ কাচুমাচু করে এগিয়ে যেতেই তারা চাচিকে উদ্দেশ্য করে বললো,

আপা এটা আপনার ছেলের হবু বউ তাইনা। মাশাআল্লাহ কি সুন্দর দেখতে। মেয়ে তো আপনার দেওর এর মেয়ে তাইনা‌। দেওর মারা গেছে শুনলাম আহারে মেয়েটা ছোট বয়সেই এতিম হয়েছে। আপনারা খুব ভালো মানুষ এই অনাথ মেয়ের দায়িত্ব নিয়েছেন আবার ছেলের বউ করবেন সত্যি এমন ভালো মানুষ। এমন আমি খুব কম দেখেছি।

বলেই আমাকে কাছে টেনে মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো। আমি বিস্মিত হয়ে দাঁড়িয়ে আছি। চাচি কটমট চোখে তাকিয়ে আছে। চোখ দিয়ে গিলে খাবে যেন। আমি কিছু বুঝতে পারছি না। এর এসব কি বলছে?

একটু পর ঘটনা ক্লিয়ার হলো,

“আপনার মেয়ে মানে আমাদের রিফাতের ব‌উ আমাদের সব বললো। না হলে জানতেই পারতাম না।”

আপু সবাইকে এসব বলেছে। অবাক হয়ে সেখানে থেকে চলে এলাম। দিনারা নাচবে এখন তাই গান ঠিক করছে। আমি একপাশে গিয়ে দাঁড়ালাম তখন ভাইয়া এসে আমার পাশে দাঁড়ালো।

আমি মুখ নিচু করে দাঁড়িয়ে র‌ইলাম। ভাইয়া বললো,

“কি হয়েছে?”

আমি বললাম, “আপু সবাইকে কি সব বলছে জানেন?”

“কি বলেছে?”

“আমার আর আপনার নাকি বিয়ে ঠিক। আরো অনেক কথা। চাচি তো খুব রেগে আছে।”

“ভালোই তো করেছে। আপুকে আমার থ্যাক্স দিতে ইচ্ছে করছে।”

“কেন?”

“এসব বলার জন্য।এখন সবাই জানে তুই আমার হবু বউ। তাই কেউ আমার সাথে তোকে দেখলে খারাপ ভাববে না।”

আমি চোখ বড় তাকালাম।

ভাইয়া চোখ ছোট করে তাকিয়ে বললো, ” তোকে নীল কালারের মানায় না রে ঊষা।”

আমি বললাম, “মানে।”

“মানে তোকে দেখতে ভালো লাগছেনা। ”

আমি মন খারাপ করে দাঁড়িয়ে আছি। আজ মনে হয় সত্যি ভালো লাগছে না কেউ তো আমার প্রশংসা করে নি।

আমি নিচের দিকে মুখ কালো করে দাঁড়িয়ে আছি‌
ওইদিকে দিনা নাচছে দেখতেও ইচ্ছে করছে না। ভাইয়া আমাকে টেনে স্টেজ এর পেছনে নিয়ে এলো। আর আমাকে দেয়ালে হেলান দিয়ে দাড় করিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে রইল।

আমি হতভম্ব হয়ে বললাম, “কি হলো এখানে আনলেন কেন?”

‘আচ্ছা তোর কি মনে খারাপ হয়েছে? সুন্দর লাগছে না বলে?”

আমি বিস্মিত হয়ে তাকালাম। আমার তো মন খারাপ হয়েছে কিন্তু আমি বলবো না।

“কি হলো আমার মুখে প্রশংসা শুনতে চাস?”

আমি ঢোক গিলে মাথা নিচু করে ফেললাম কি সর্বনাশ আমার ভাইয়ার মুখ থেকে নিজের প্রশংসা শুনতে ইচ্ছে করছে। আমি নিজের এমন নির্লজ্জ ইচ্ছে কি করে বলবো। পারবো না আমি নিচের দিকে তাকিয়ে আছি। ঠোঁট শুকিয়ে আসছে আমি বার বার ভিজিয়ে নিচ্ছি জিভ্বা দিয়ে ঠোঁট। ভাইয়া আমার থুতনি ধরে মুখটা তুলে বললো” কি হলো এমন হাঁসফাঁস করছিস কেন?”

আমি বললাম, ” সবাই নাচছে চলুন দেখি?”

ভাইয়া ছারলো না।

আমি বললাম, ” আমাকে তো ভালো লাগছে না দেখতে তাহলে এমন করে তাকিয়ে আছেন কেন?”

ভাইয়া ঠোঁটের কোনে বাঁকা হাসি টেনে বললো, “আমার জিনিস সুন্দর লাগলেও আমি তাকায় থাকবো। না লাগলেও তাকায় থাকবো তোর কি?”

ভাইয়ার কথা শুনে থমকে চুপ করে গেলাম। ভাইয়া আমাকে ছেড়ে দিলো।

“দেখা শেষ হবে না আমার। তাই চল যাই‌।”

বলে হাত ধরে টেনে অনুষ্ঠানে এলো। তখন দিনা দৌড়ে এলো আর আমাকে আর ইহান ভাইকে টেনে নিয়ে বললো নাচতে। কিন্তু ভাইয়া নাচবে না না করছে। আমি জরোসরো হয়ে দাঁড়িয়ে আছি। নাচতে হলে লজ্জায় পারবো। এতো মানুষের সামনে আমি নাচতেই পারবো না। কিন্তু ভাইয়া রাজি হলে আমি না করতে পারবোনা।
আল্লাহ কে ডাকছি যেন রাজি না হয়। কিন্তু রাজি হলো তাও একা না ভাইয়া আর আমি আর ইমা আপু আর রিফাত ভাই‌ তাই ইহান ভাই রাজি হয়েছে।

একটা হিন্দি গান ছারলো আর শুরু হলো নাচ।আমি নাচতে পারিনা বলে চুপ করে কোনায় সরে দাঁড়িয়ে আছি।
রিফাত ভাই আর ইমা আপু নাচছে। আমাকে না পেয়ে ভাইয়া চলে এলো আমার কাছে।

‘চল। ”

“আমি নাচবো না। আমি নাচতে পারিনা।”

“তোর নাচতে হবে না। আমার সাথে খালি তাল মিলাবি”

“তাও পারবো না। এতো মানুষের মধ্যে আমি কিছু করতে পারবোনা।”

“চল।”

“না।”

ভাইয়া বিরক্ত হয়ে রেগে আমাকে টেনে নিয়ে গেলো। আমি আঁতকে হাত ছারানোর চেষ্টা করছি পারছিনা।

ভাইয়া আমাকে কোমর জড়িয়ে ধরলো। আমি আশেপাশে তাকাচ্ছি। সবাই খুব ইনজয় করছে। কিন্তু কিছু মহিলা কেমন করে যেন তাকিয়ে আছে। গ্ৰামে এটা স্বাভাবিক।

চাচি আগুন চোখে তাকিয়ে আছে। আমি ভয়ার্ত চোখে তাকিয়ে আছি সবার দিকে।

নাচ শেষ হতেই আমি রেগে মেগে চলে গেলাম। ভাইয়া আমার পেছনে এলো।

“আপনি আমার আশেপাশে আসবেন না ছিঃ সবার সামনে আমাকে নাচিয়ে ছারলেন?”

“আমরা একা নাকি আপুরা ও ছিলো।”

‘তো কী তারা হাজবেন্ড ওয়াইফ আর আমরা?”

“আমরা ও হবো তো।”

আমি এই প্রথম ভয় চোখে না রাগী চোখে তাকালাম। তা দেখে ভাইয়া বললো,

“ও মাই গড তুই আমাকে ভয় পাচ্ছিস না উল্টা রাগ দেখাচ্ছিস?”

আমি রাগী চোখে তাকিয়ে আছি খুব রাগ লাগছে আমার।

ভাইয়া বললো,

“আমি তো এমন ঊষাকেই চাই। যে আমাকে ভয় পাবে না। যার চোখে থাকবে অফুরান্ত ভালোবাসা, যে আমাকে রাগ দেখাবে, রেগে গাল ফুলিয়ে রাখবে। আমি তার রাগ ভাঙাবো। তার ছোট ছোট আবদার পূরণ করবো। তাকে খুব ভালোবাসবো।

আমি রাগ ভুলে মুগ্ধ নয়নে ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে আছি। এসব তো আমার কল্পনা। আমি এমন একজন চাইতাম। ভাইয়া জানলো কি করে?

“কি ভাবছিস?”

হকচকিয়ে বললাম, কিছু না।

ভাইয়া আমাকে বললো, মেহেদী দিবি।

আমি অবাক হয়ে বললাম, আমি?

‘হুম। মাথা নাড়িয়ে বললো।

“আমি কেন?

“আয় দিবি আর আমার নাম লিখবি।”

“কিন্তু?”

“কোন কিন্তু না চল।”

বলেই মেহেদী আর্টিস্টদের ডেকে নিজে আমার পাশে বসে পরলো আমাকেও চেয়ার টেনে বসিয়ে। তারপর তার ইচ্ছা মতো ডিজাইন বলে মেহেদী দেওয়া লো আমি নিরবে সব দেখলাম। আমার হাতের মাঝে ভাইয়ার নাম লেখালো।

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here