#এক_চিলতে_রোদ,Part_44
#Writer_Nondini_Nila
বার কয়েক ডেকে উঠলো ভাইয়া। আমি উওর দিয়ে চুপ করে আছি। এবার অধৈর্য হয়ে ভেতরে চলে এলো ভাইয়া। আর এসেই আমাকে এমন কাপড় গায়ে পেঁচিয়ে বসে থাকতে দেখে কপাল কুঁচকালো।
‘ শাড়ি না পড়ে এভাবে বসে আছিস কেন?’
আমি অসহায় মুখে ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে বললাম,’ আমি পারছিনা কিছুতেই। এটা পড়া আমার সম্ভব না।’
‘কোন রকম ও পারছিস না?’
‘ না। ‘ মুখ নিচু করে বললাম।
ভাইয়া দীর্ঘশ্বাস ফেলে আমার দিকে তাকিয়ে থেকে চোখ সরিয়ে। চিন্তিত হয়ে ভাবছে কি করা যায়? হুট করেই ফোন বের করে। আর ফোনের শাড়ি পরার ভিডিও বের করে। আর আমার হাতে দিয়ে বলে,
‘ ভালো করে দেখ ওই মহিলারা কেমন করে পরেছে! তারপর ট্রাই করবি।’
‘ তাও এটা পরতেই হবে।’
ভাইয়া গম্ভীর মুখে বললো, ‘ হুম পরতেই হবে।’
আমি হতাশ হয়ে ভিডিও দেখতে লাগলাম। ভাইয়া আমার সামনে দাড়িয়ে আছে আমি ভিডিও দেখছি। শাড়ি পরার নিয়ম দেখে ফোন এগিয়ে দিয়ে বললাম।
‘ দেখেছি কিন্তু একা আমি পারবোনা। কুচির নিচে ধরতে হবে। আজকে এটা বাদ দিন প্লিজ।’
ভাইয়া বললো, ‘ আমি কুচি ধরবো তুই কর।’
বলেই নিচে বসে পরলো আমি বিষ্ময়ে হতভম্ব হয়ে সরে গেলাম।
‘না না আপনাকে করতে হবে না।
বসা থেকে আমার মুখের দিকে তাকিয়ে বললো ,,’আমি করলে সমস্যা কি?’
‘আপনি যান আমি একাই যা করার করবো।’
‘এই না বললি পারবি না।’
‘ আমি চেষ্টা করবো।’
‘ একবার তো চেষ্টা করতে গিয়ে এক ঘন্টা পার করছিস? বাসায় যাওয়ার টাইম হয়ে আসছে এদিকে তুই রেডি হতে পারছিস না।’
‘প্লিজ বাইরে যান। আমি এবার পারবো।’
ভাইয়া নরলো না। বললো আমার সামনে কুচি কর।
আমি থমকে শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে আছি। ভাইয়া আমাকে চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে উঠে দাঁড়ায়। আর বিছানায় থেকে ফোন নিয়ে নিজে দেখতে লাগে।
আমি কি করব বুঝতে পারছি না। ভাইয়া ফট করে ফোন রেখে আমার দিকে এগিয়ে আসতে লাগলো।
আমি হকচকিয়ে বললাম, ‘ কি হলো এদিকে আসছেন কেন?’
ভাইয়া আমার দিকে তাকিয়ে এগিয়ে আসছে কিন্তু কথা বলছে না। আমি পেছনে যেতে গেলে হাত ধরে আটকে বলে,,
‘ নরবি না একদম। সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে থাকবি। ‘
আমি বিস্মিত হয়ে বললাম, ‘ কেন? কি করবেন আপনি?’
‘শাড়ি পড়াবো।’
আমি বড় চোখে তাকিয়ে বললাম, ‘ কি সব বলছেন?’
‘ ঠিকই বলছি। তোর মতো অকর্মার ঢেঁকি তো পারবি না। তাই আমাকেই করতে হবে।’
‘ আপনি পারবেন কি করে ?আপনি পারেন নাকি? আর পারলেও দরকার নাই! আমি নিজেই যা পারবো করবো।’
‘ আমি বলেছি মানে আমিই পড়াবো। কথা বাড়িয়ে লাভ নাই!’
আমি কি করে বুঝাবো। ভাইয়ার কাছে পরতে আমাকে লজ্জায় পরতে হবে।
ইহান ভাই এগিয়ে এসে আগে আমার আঁচল ধরে যা আমি বুকে চেপে ধরে আছি। আমি আঁতকে উঠি।
‘একি আঁচল ধরছেন কেন?’
ভাইয়া আমার ভীতু মুখের দিকে তাকিয়ে বিরক্ত হয়ে বললো,
‘ কথা বলতে মানা করছি। আমি যা করছি করতে দে।’
আমি আঁচল ছারছি না। ভাইয়া ছাড়ালো ও না। ওই ভাবেই পেছনে নিয়ে পিন আপ করে দিলো কাঁধে। আমার শরীর ঢেকে আছে ভালো করেই! এখন বুকে হাত না দিলেও আঁচল পরবে না। আমি বিস্মিত হয়ে বললাম,
‘ একি এইভাবে আটকে দিলেন?’
ভাইয়া তার হাত বাড়িয়ে আমার ঠোঁটে আঙুল দিলো আর মুখে চুপ করে দেখতে বললো। আমি ভাইয়ার ঠান্ডা হাতের স্পর্শ নিজের ঠোঁটের উপর পেয়ে থমকে গেছি। আমার ধুক ধুক বেড়ে গেছে।
আমি থমকে দাঁড়িয়ে আছি আর অবাক চোখে আমার দৃষ্টি রেখেছি ভাইয়ার মুখের দিকে।তিনি হাত সরিয়ে নিয়েছে।তার দৃষ্টি আমার মুখে না আমার কুচির কাছে শাড়ি নিচে পরে আছে তার দিকে। তাকিয়ে গভীর ভাবে কিছু ভাবছে কপালে সূক্ষ্ম চিন্তার ভাঁজ ফেলে।
কেউ চিন্তা করলেও এতো সুন্দর লাগতে পারে ভাইয়াকে না দেখলে জানতাম না। আমি হাঁ করে তার চিন্তায় বিভোর হওয়া মুখের দিকে তাকিয়ে আছি। ভাইয়া হুট করেই এগিয়ে আমার কুচির শাড়ি নিজের হাতে নিয়ে নিলো। আর খুব চেষ্টা করতে লাগলো কুচি তোলার। আমি এমন মনোযোগ দেওয়ার দিকে হা করে তাকিয়ে আছি। অনেক চেষ্টার পর ভাইয়া কুচি করতে সফল হলো আর খুশি হয়ে আমার দিকে তাকালো। আমি তাকিয়ে ছিলাম তাই চোখাচোখি হয়ে গেল।
‘ধর।’
বলেই আমার হাতে কুচি করা শাড়ি দিলো।আর নিজে নিচে বসে পরলো।
আমি কুচির দিকে তাকিয়ে আছি। ভাইয়ার ডাকে সম্মতি পেলাম।
‘ঊষা কুচি উপরে তোল।’
আমি চমকে উঠে হাত উপরে ওঠালাম। ভাইয়া বললো,
‘ এবার গুঁজে নে সাবধানে হয়ে গেছে।’
আমি তারাতাড়ি গুঁজে নিলাম। ভাইয়া উঠে দাঁড়িয়ে আমার কাঁধে কাছে চলে এলো আবার।
আর পিন খুলে নিলো আমি শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে আছি। ভাইয়া আঁচল ঠিক করে আবার পিন আপ করে দিলো।শেষ! ফাইনালি শাড়ি পড়া হয়েছে।আমি মাথা উপর নিচ করে দেখলাম। ভাইয়া ভালোই পরিয়েছে।খুব ভালো না হলে ও খুব খারাপ হয়নি। ছেলে হয়ে ও একবার ভালোই পরিয়েছে।আর আমি পারলাম না।
ভাইয়া আমার সামনে দাড়িয়ে মাথা থেকে পা পর্যন্ত খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে লাগলো।
‘কেমন হয়েছে ঊষা?’
আমি বললাম, ‘ ভালো।’
‘এমন মন খারাপ করে বলছিস কেন?’
‘আপনি পরিয়ে দিলেন কেন?’
‘ তুই পারতি না আমি জানি। দেখ তো পরিয়ে দিলাম। অনেক ভালো না হলেও খারাপ বলবে না কেউ।’
আমি কিছু বললাম না।ভাইয়া আমাকে কাছে টেনে বললো,
‘ তোকে আমি শাড়ি পড়া শিখতেই দেবো না। পারিস না ভালোই হয়েছে। আমার বউকে আমি নিজে হাতে সাজাবো শাড়ি পাড়াবো।ভালো না।’
বলেই আয়নার সামনে নিয়ে বসালো আর শাড়ির সাথে ম্যাচিং করে। সাদা নীল রঙের চুড়ি পরালো, কানের সাদা পাথরের ঝুমকা, সাথে সাদা রঙের গলার সিম্পুল একটা হার, কাজল আমি পরেছি, ঠোঁটে হালকা লিপস্টিক, আর মুখে ফেস পাউডার।আর চুল খোলা রাখলো।
হঠাৎ ভাইয়া নিচু হয়ে আমার পায়ে হাত দিলো।আমি তড়াৎ করে ছিটকে দূর সরে দাঁড়ালাম।
‘ আপনি পাগল হলেন নাকি? আমার পা ধরছেন কেন?’
‘তুই সরে গেলি কেন? আর আমার ইচ্ছা হয়েছে ধরেছি তোর সমস্যা কি?’
‘ আপনার ইচ্ছে হলেই আমার পা ধরবেন না। উঠুন।’
‘এদিকে আয়।’
‘ না।’
‘তোর জন্য সারপ্রাইজ আছে।’
‘ পায়ে আবার কিসের সারপ্রাইজ?’
ভাইয়া বিরক্ত হয়ে আমাকে টেনে আবার বসিয়ে দিলো আর নিজের হাঁটুর উপর পা রাখলো। আমি ছটফট করছি পা সরাতে ভাইয়া একটা কঠিন ধমক দিলো আমি থেমে গেলাম।
ভাইয়া আমার বাম পায়ে পায়েল পরিয়ে দিলো।এতো সুন্দর পায়েলটা আমি হাঁ করে তাকিয়ে আছি। ভাইয়া পরিয়ে উঠে দাঁড়ালো। আমি এখনো পায়ের দিকে তাকিয়ে আছি।এটা আমার সারপ্রাইজ। আমার অনেক আগে একবার পায়েল কিনতে ইচ্ছে হয়েছিলো কিন্তু অনেক দাম তাই কেনা হয়নি।আজ সেই অপূর্ণ চাওয়া পূর্ন হলো। খুশিতে আমার চোখে জল এসে গেছে।
ভাইয়া এগিয়ে এসে বললো,
‘ কি হলো কাঁদছিস কেন? পছন্দ হয়নি।’
বলতে বলতে ভাইয়া এগিয়ে এসে আমার চোখের পানি মুছে দিলো। আমার দিকে প্রশ্নত্তুক চোখে তাকিয়ে আছে।
আমি কান্নার মাঝে মুখে হাসি ফুটিয়ে বললাম,
‘ হয়নি মানে খুব হয়েছে। আপনি জানেন আমি একবার পায়েল কেনার জন্য অনেক কষ্ট পেয়েছিলাম। কিন্তু টাকার জন্য কিনতে পারিনি। আমার কাছে তো দশ, বিশ টাকার উপর থাকে না। ‘
‘তাই! এখন আমি আছি না। তোর যা যা ইচ্ছে সব আমাকে বলবি। আমি তোর সব ইচ্ছা পূরণ করার চেষ্টা করবো।’
আমি উজ্জ্বল চোখে ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে রইলাম।
ভাইয়া আমাকে আয়নার দিকে ঘুরিয়ে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরলো। ভাইয়ার হাত আমার পেটের উপর। আর তার থুতনি আমার কাঁধে।
আমি ঘন ঘন শ্বাস ফেলছি। বুকের ভেতর ধুকপুক করছে। ভাইয়া আয়নার দিকে আমার মুখের দিকে তাকিয়ে মৃদু কন্ঠে বলল,
‘ আমাদের কেমন মানিয়েছে দেখ তো ঊষা।’
আমি চোখ নামিয়ে ছিলাম ভাইয়ার কথায় মাথা তুলে তাকালাম। ভাইয়া আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমার বুকে ভেতর ধুকধুক বেড়ে গেল। কি ভয়ংকর চাহনী আমি তাকিয়ে থাকতে পারলাম না। চোখ নামিয়ে নিলাম।
ভাইয়া ফট করেই ছেড়ে দিলো আমাকে আর আমার হাত ধরে বললো,
‘ না আর না। চল এবার ঘুরে আসি।’
বলেই আমার হাত ধরে বেরিয়ে এলো।
আমি নিঃশব্দে তার সাথে হেঁটে যাচ্ছি। গাড়িতে উঠার পর ও ভাইয়া একটু পর পর আমার দিকে তাকালো আমি একবার বলেই ফেললাম,
‘ বার বার এদিকে তাকান কেন? এক্সিডেন্ট করবেন তো?’
ভাইয়া আমার দিকে থেকে চোখ সরিয়ে বললো,
‘ আমি ওতো বাজে ড্রাইভ করিনা যে এক্সিডেন্ট করবো। ‘
‘যত ভালোই করুন না কেন এমন করে তাকিয়ে থাকলে সবাই করবে।’
‘ এতে তোর দোষ!’
‘ আমার দোষ কিভাবে?’
‘ তুই এতো সুন্দর হতে গেলি কেন? আমার তো মন চাইছে! শুধু আমার এই মিষ্টি ঊষারানীর দিকে মুগ্ধ চোখে হাজার বছর চেয়ে থাকি।’
ভাইয়ার কথা শুনে আমি চমকে উঠলাম। হকচকিয়ে চোখ সরিয়ে নিলাম লজ্জায়। ভাইয়া বললো,
‘ একদম গাল লাল করে লজ্জা পাবিনা। তাহলে কিন্তু চুমু খেয়ে বসবো। আর আমি গাড়ি থেকে চোখ সরিয়ে তোর দিকে হা করে তাকিয়ে থাকবো। তখন এক্সিডেন্ট হবেই হবে।’
আমি লজ্জায় মুখ লুকিয়ে জানালার বাইরে তাকালাম। কি অসভ্যের মতো কথা বলছে? আমার যে লজ্জা মরে যেতে ইচ্ছে করছে। তা কি বুঝছে না।
বিকেলটা এতো সুন্দর কাটলো যে আমার মনটা আনন্দে ভরে গেলো। আনন্দিত মুখে ভাইয়ার একহাত জরিয়ে বাসায় এলাম। ভাইয়া একহাতে আমাকে ধরে ছিলো। ড্রাইভার কাকাকে বলে মিষ্টির প্যাকেট নিয়ে এলো। দরজা খুলতেই আমি ভাইয়ার হাত ছেড়ে দিলাম। ভাইয়া তা দেখে আমার হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে শক্ত করে ধরলো।
চাচি সোফায় বসা ছিলো। এতো মিষ্টির প্যাকেট দেখে বললো,
‘এসব কেন? এতো মিষ্টি এনেছিস কেন?’
‘ ঊষার ভালো রেজাল্ট এর জন্য।’
আমার দিকে তাকিয়ে বলল।
চাচি ফুঁসে উঠলো। আর গমগম গলায় বললো,,
‘A+ পাইছে তো কি হয়েছে? তার জন্য এতো টাকা খরচ করে মিষ্টি আনার কি দরকার? এমন আদিক্ষ্যেতা করছিস যেন জীবনে এসব কেউ পায় নাই। তুই পাইছিস, আমার ইমা পাইছে, ইলাটা পায় নাই তো কি হয়েছে রেজাল্ট ভালো ছিলো একটুর জন্য পায় নাই।’
‘ আম্মু তোমাকে গুষ্টির হিস্টুরি শুনাতে বলা হয়নি। আর আমার বউ এতো ভালো করেছে তার জন্য তো মিষ্টি আনতেই হবে। সবাইকে জানাতে হবে না!’
আমি একটা দুঃসাহসী কাজ করে বসলাম। ভাইয়ার হাত ছাড়িয়ে মিষ্টির প্যাকেট খুললাম একটা। আর একটা বড় মিষ্টি বের করে ফট করেই চাচির হা করা মুখে ঢুকিয়ে দিলাম। চাচি মিষ্টি খুব পছন্দ করে এখন ঝামেলা করলেও মিষ্টি সে ফেলবে না খাবেই।
আমার এমন কান্ডে লতা, ভাইয়া হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে আছে। চাচি তো চোখ দুটো রসগোল্লার মত বড় করে তাকিয়েছে আমার দিকে। কিছু বিচ্ছিরি কথা বলতে চাইছে কিন্তু পারছে না আগে খাবার শেষ করতে হবে। উমমম করে মিষ্টি খেয়ে বলতে লাগলো,
‘ তোর এতো বড় সাহস আমাকে এইভাবে মিষ্টি খাওয়ালি?’
আমি ভয়ার্ত মুখ করে পিছিয়ে ভাইয়ার বাহু খামচে ধরলাম। আর মিনমিন করে বললাম,
‘ আমার খুশিতে আমি মনে মনে ভেবেছিলাম। তোমাকে সবার আগে নিজের হাতে মিষ্টি খাওয়াবো তাই….
চাচি কিছু বলতেছে আমাকে বকছে ভাইয়া আমার দিকে তাকিয়ে কিছু বলছে তখন বাস্তবেও ভাইয়ার কথার আওয়াজ পেয়ে ভাবনা থেকে বেরিয়ে এলাম।
‘আমার দিকে ওমন কি ভাবিস?’
আমি কিছু বলবো ভাইয়া আবার বলে ,,
‘এসব করিস আমার ঘুমে তুই।’
আমি বুঝতে না পেরে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছি। ভাইয়া তার গালে আমার হাতের উপর হাত রাখতেই চমকে উঠলাম। হাত তো সরিয়ে ছিলাম। আবার দিলাম কখন বোধহয় ভাবনার মাঝে।
আমি তারাতাড়ি হাত সরিয়ে উঠে বসলাম। ভাইয়া আমার হাত টেনে বললো,
‘ কি হলো বল?’
আমি ঢোক গিলে আমতা আমতা করতে লাগলাম। ভাইয়া আমার দিকে তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে আছে। আমি বললাম,
‘ আপনার না ব্যাগ গুচ্ছাতে হবে দেন গুচ্ছিয়ে দেয়।’
‘এখন না পড়ে। তুই আমার সামনে বসে থাক আমি তোকে দেখি মন ভরে। তিনদিন দেখতে পাবো না। আচ্ছা তুই আমাকে মিস করবি না।’
আমি চমকে উঠলাম আচ্ছা আমি কি মিস করবো ভাইয়াকে? আমার জানা নেই আমি চুপ করে আছি।
ভাইয়া তার হাত আমার গালে ডুবিয়ে দিলো, আমি কেঁপে উঠলাম। ভাইয়া মায়া জড়ানো কন্ঠে বললো,
‘আমি যদি আর না ফিরে আসি তুই কষ্ট পাবি।’
জানিনা কি হলো আমার বুক ধক করে উঠলো। আসবে না কে কি সব বলছে? আমি অসহায় মুখ করে চেয়ে আছি। ভাইয়া ফট করেই হেসে উঠলো তার মুখের সুন্দর সেই হাসি।গালে পরলো আমার অত্যন্ত প্রিয় সেই টোল আমি মুগ্ধ হয়ে সেই হাসি দেখছি। কিন্তু বোকাও লাগছে নিজেকে ভাইয়া হাসছে কেন? আমি বোকা চোখে তাকিয়ে আছি।
‘ভয় পাইছিস? আমি তোকে ছাড়া এক সেকেন্ড ও থাকতে পারবো না। আর আসবো না ভাবছিস? ‘
‘আপনি খুব ফাজিল লোক খুব খুব খুব।’
আমি ভাইয়াকে মারতে লাগলাম। যেটা আমার করা প্রথম কাজ ছিলো এমন কাজ কি করে করলাম কে জানে। ভাইয়া আমাকে দুহাতে থামিয়ে বুকে চেপে ধরলো। আমি তার বুকের উপর। ভাইয়া ঠোঁটের কোণে হাসি রেখে বললো,
‘ তুই আমাকে মারছিস ? এতো সাহস কি করে হলো?’
ভ্রু কুঁচকে বললো। আমি নিজের কাজে হতবাক।
‘ তোর ওই মলিন মুখ আমাকে কতোটা আনন্দ দিয়েছে জানিস ঊষা। আমি তোর চোখে আমার জন্য ভালোবাসা দেখছি।’
আমি বিস্মিত হয়ে কপাল কুঁচকে তাকিয়ে আছি। আমার চোখে ভালোবাসা। কিভাবে আমি কি ভালো বাসি ভাইয়াকে। নিজের মনে প্রশ্ন করছি?
‘তুই আমাকে ভালোবেসে ফেলেছিল ঊষা। আচ্ছা একবার ভালোবাসি বল না।’
আমি থমকানো চোখে তাকিয়ে আছি।
ভাইয়া বললো, ‘ ওই বল না।’
বলতে বলতে আমার এলোমেলো চুল গুলো কপালে থেকে সরিয়ে দিলো আমি চোখ বন্ধ করে শ্বাস ফেললাম।
‘ছারুন আমাকে ।’
ভাইয়া আরো শক্ত করে ধরে বলে ,’ আগে ভালোবাসি বল!’
‘ ভালোবাসি না তো কি বলবো?’
‘ বাসিস কিন্তু বুঝতে পারছিস না। নো টেনশন খুব তারাতাড়ি বুঝতে পারবি।’
বলেই আমার গালে চুমু খেয়ে বসলো। আমি হঠাৎ কাজে স্তম্ভিত হয়ে গেলাম। ভাইয়া আমাকে ঠেলে উঠিয়ে দিলো নিজেও বসে বললো,
‘যা ব্যাগ গুছা।’
বলেই ওয়াশ রুমে চলে গেল। আমি চুপিচুপি নিজের রুমে এসে ফ্রেশ হয়ে সবার সামনে ভাইয়ার জন্য কফি করে এলাম ভাইয়ের রমে।
ভাইয়া চলে গেলো যাওয়ার আগে আমার কপালে গভীর চুম্বন করে গেছে। তার চলে যাওয়ার তিনদিন আজ এই তিন আমার কতোটা কষ্ট কেটেছে আমি জানি। প্রতিটা মুহূর্তে আমি তাকে মারাত্মক মিস করেছি। আমি একদমি এমন মিস করতে চাইনি। কিন্তু আমার মিস করা থামেনি। তিনদিন আমার তিন বছর মনে হয়েছে। তাকে যে আমি মারাত্মক ভাবে ভালোবাসি এই তিনদিন এ বুঝতে পারলাম। ভাইয়া তিনদিনে আসবে বলেও এলো চতুর্থ দিন সন্ধ্যায়। আমি ছটফট করছি অসম্ভব ছটফট কখন আসবে আমার অপেক্ষায় অবসান করে। আমি তার বুকের ঝাঁপিয়ে পরে ভালোবাসি বলবো যে।
অপেক্ষা এতো খারাপ আমি এই তিনদিন হারে হারে টের পেলাম। আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে আর আগমন না হওয়ায়। চিন্তায় মাথা ব্যাথা হয়ে আছে। একদিন পরে কেন এলো।দরজা খুলে আমি তার বুকে ঝাঁপিয়ে পড়ার জন্য দাঁড়িয়ে আছি। বাসার কাউকে তোয়াক্কা করবো না আমি ভেবেই রেখেছি।
চাচি আমাকে দিয়ে কাজ করিয়েই নেই। আমি সব করবো কিন্তু আমি ভাইয়ার একজন হবো।সে আমাকে চায় আমিও চায়। তাহলে কেন তাকে আমি দূরে ঠেলবো। আমার একাকিত্ব, ভালোবাসা হীন এই অন্ধকারে ঘেরা এই ছোট জীবনে সে এসেছে এক চিলতে রোদ হয়ে। আমার ছোট জীবনটাকে আলোকিত করতে। ভালোবাসায় ভরপুর করতে। আমার সমস্ত আবদার পূরণ করে ছায়া হয়ে থাকতে। তাকে আমি কি করে ফিরিয়ে দেবো। পারবো না কিছু তেই তাকে আমি আর অবহেলা করতে পারবো না।
#চলবে