#এক_চিলতে_রোদ,Part_4,5
#Writer_Nondini_Nila
#Part_4
সারা শরীর ব্যাথায় টান টান হয়ে আছে। কিন্তু এখন তার থেকেও বেশি ব্যথা পাইছি পায়ে। দুবার হোঁচট খেয়ে বুড়ো আঙ্গুল ছুলে গেছে।
ব্যাথায় পা নাড়াতে পারছি না ঠোঁট কামড়ে ধরে ব্যাথা সহ্য করছি। মাথা দপদপ করছে খিদে লেগেছে প্রচুর। সারাদিন না খাওয়া স্কুলে গিয়ে শুধু পানি খেয়েছিলাম। বাম হাতটা উঁচু করে ঘড়ির টাইম দেখে নিলাম দুটো বাজে। এত রোদ উঠেছে তার তীব্র আলোয় আমার ঘেমে একাকার। এখন বাসায় গিয়ে আগে খেয়ে নেব। চাচি এতে যতই বকাবকি করুক না কেন?
খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে বাসা পর্যন্ত পৌছালাম। আসছে আসতে তিনটে বেজে গেছে।ভেতরে এসে সোজা নিজের রুমে চলে গেলাম কাউকে দেখলাম না। ড্রেস চেঞ্জ করে চোখে মুখে পানি দিয়ে বের হতেই দেখা লতার। ও আমার কাছে এসে দাঁড়ালো।
“সবাই কই?
লতার দিকে তাকিয়ে বললাম। তারপর বিছানায় বসে পায়ের ব্যাথা পাওয়ার স্থান দেখতে লাগলাম।
“সবাই খেয়ে গেল। রুমে আছে চল খেয়ে নেয়। সকালেও তো খেলি না। এই তোর পায়ে কি হয়েছে?
বলতে বলতে এগিয়ে এলো।
এ ম্যা এই কি করে?
আমি মাথা উঁচু করে বললাম,, হোঁচট খাইছি আসার সময়।
লতা ব্যথিত মুখে বলল,, কি করে? হেঁটে এসেছিস?
আমি ছোট করে হুম বলেই উঠে দাঁড়ালাম।
লতা দুঃখ প্রকাশ করে বলল,, ইশ কি অবস্থা? উঠছিস কেন তোর আমি এখানেই দিয়ে যাবনি।বসে থাক।
“না দরকার নাই চাচি জানতে পারলে খবর আছে চলো।
লতা আর কিছু বলল না। দুজনে খেতে বসেছে ইলিশ মাছ রান্না করেছে কিন্তু মাছ আছে একটা কে খাবো লতা আমাকে খেতে বলল কারন আমার ইলিশ অনেক পছন্দের তাই। কিন্তু লতার দিকে তাকিয়ে খেতে পারলাম না ওকে দিয়ে দিলাম। গাল নিয়ে খেতে বসেছি একটু গুচ্ছত নিয়েছি বলতে এক পিছ তখন যন্ত্রনা করছে ওফ আংগুল যে কাটা আমার ঠোট কামড়ে ধরে ব্যাথা সহ্য করছি খেতে ও লেগেছে আবার এই ব্যাথা অনেক কষ্ট করে খাচ্ছি। তখন চাচী এসে উপস্থিত।
জ্বালাপোড়া হাত নিয়ে খাচ্ছিলাম তখন চাচি এসে বলল,,
এসেই গিলতে বসেছিস? সেটাই তো পারিস খালি গিলতে।
আমি চমকে উঠলাম।
“চাচি খুব খিদে পেয়েছিল সকালে তো কিছু খাই নি তাই।
চুপ গিলে আমাকে উদ্ধার করো।বিকেলে ইহানের বন্ধুরা আসবে সব কিছু রেডি করতে হবে।
আচ্ছা করছি।
চাচি বিরক্ত মুখ করে চলে গেল।
বিকেলে রান্নাঘরে ভাইয়ার বন্ধুবান্ধবীদের জন্য হালকা খাবার রান্না করছি আমি আর লতা।
চাচি দাড়ি এ দাড়িয়ে তার তদারকি করছে। সন্ধ্যার আজান দিতে আমি রুমে চলে এলাম নামাজ পড়তে হবে।
নামাজ পড়ে বাইরে আসতে চাচি আমাকে ডাকলো।
কাছে যেতেই বললো,,
যা ছাদে যা। একটু পরে নাকি ওপরে বসে আড্ডা গল্প করবে।
আমি একা।
তো কে যাবে তোর সাথে? উপরে গিয়ে মাদুর পাত। চা করে নিয়ে যা সাথে আর পপকন ভেজে নিয়ে যা।
কিন্তু চাচি একা ছাদে আমার তো ভয় লাগে অন্ধকার আমি একা।
তোকে একাই যেতে হবে লতা এখন যেতে পারবে না। ওকে আমি ইহানের রুমে পাঠিয়েছি।
বলে চাচা আমার সামনে থেকে চলে গেল।চাচির যাওয়ার দিকে আমি ভয়ে মুখ করে তাকিয়ে আছি। আমি একা ছাদে কি করে যাব আমি অন্ধকারে ভয় পায় আর ছাদে তো লাইটও নাই। থাকবে কী করে ইমা আপু তো ছাদে বসে হাওয়া খায় তারা নাকি অন্ধকারে ভালো লাগে। রান্নাঘরে এসে পপকন ভেজে।আর চা বানিয়ে ফ্লাক্সে ভরে নিলাম। সবকিছু নিয়ে হালকা খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে ছাদে যাচ্ছি ভয়ে আমার হাত পা কাপছে। উপরের ছাদের গেটের কাছে আসতেই আমার সারা শরীর থরথর করে কেপে উঠলো।
ছাদের দরজা খুলছ অন্ধকারে তাকাতে ভয়ে আমার হৃদপিণ্ড কেঁপে উঠল। বুকের ভেতর ধরফর করছে। আমার ভূতে ভয় বরাবরই। তবুও ছাদে পা রাখলাম ঠান্ডা বাতাস এসে আমার মাথার ওড়না ফেলে দিল। শুধুই আমার মনে হচ্ছে কেউ আমার আশেপাশে আছে।আমি এগিয়ে কাঁপা কাঁপা শরীর নিয়ে ছাদের মাঝামাঝিতে গিয়ে সবকিছু নিচে রাখলাম। এদিক-ওদিক শুধু তাকাতাকি করছি মন বলছে আমার পাশেই ভূত দাড়িয়ে আছে। এই বুঝি আমার ঘাড় মটকে দেবে।অসহায় মুখ করে চোখ ছোট ছোট করে কাচুমাচু হয়ে দাঁড়িয়ে আছি। তখনই একটা জোরে দমকা হাওয়া এসে আমার শরীর লাগলো। আমাকে আর পায় কে ভয়ের চোটে আমি এবার চিৎকার করে পেছন দিকে দৌড় দিলাম। কিন্তু বেশিদূর এগোতে পারলাম না পায়ে ব্যথা ছিল আমি তো ভালো মতো হাঁটতে পারিনা দৌড় দিয়ে হাঁটবো কিভাবে? পায়ের অসহ্য যন্ত্রণায় ধপ নিচে পড়তে নিলাম। তখনই কেউ আমাকে জাপ্টে ধরলো। আমি তার বুকে হুমরি খেয়ে পড়লাম। ভয়ে আমার সারা শরীর থরথর করে কাঁপছে বুকের ভেতর হাটবিলা ধড়াস ধড়াস করছে। আমি কিছু না ভেবেই। সামনের লোকটাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে কেদে উঠলাম। একবার ভাবলাম না আমার সামনে লোকটা কে দাঁড়িয়ে আছে?
ইহানের ছোটকালে ফ্রেন্ড যাদের সাথে ইহান ছোটবেলায় স্কুলজীবন পড়েছে বেস্ট ফ্রেন্ড বলা যবলা। দীর্ঘদিন পর তাদের সাথে আবার আজ গল্পে জমে উঠেছে। নিজের রুমে সবাইকে নিয়ে চটিয়ে আড্ডা দিচ্ছে ইহান।তখনই ওর ফোনটা বেজে ওঠে আর ফোনের নাম্বার এ ক্লিক করে দেখে দেশের বাইরে থেকে কল এসেছে।কল টা দেখে সবার মাঝখান থেকে উঠে বেরিয়ে আসে কিন্তু নেটওয়ার্ক প্রবলেম করছে। কিন্তু কথা বলাটা খুবই দরকার খুব স্পেশাল একজন বিধান ইহান নেটওয়ার্কের জন্য একেবারে ছাদে এসে পা রেখে। তখনই কেউ একজন ছাদের মাঝখান থেকে চিৎকার করে ছুটে এসে ওকে জাপ্টে ধরে। ইহান বিশময় হতভম্ব হয়ে যায়।অন্ধকারে তার মুখটা স্পষ্ট দেখতে পারছে না বিশেষ করে সে একদম ইহানের বুকে মাথা রেখে জড়িয়ে ধরে ফুঁপিয়ে কাঁদছে। কে এমন করে জড়িয়ে ধরতে পারে আর ছাদে বসে কি করছে একা একা? কান্না কন্ঠে মেয়েটা ভূত ভূত বলছে এবার কন্ঠটা চেনা চেনা লাগছে ইহানের।
মৃদু স্বরে বলে ওঠে ঊষা।
ঊষা আগন্তকের কন্ঠ শুনে বুঝতে পারে এ আর কেউ না। তার ইহান ভাইয়া যাকে সে জড়িয়ে ধরেছে ভয়ের চোটে। নিজের ভয়ে কান্না আস্তে আস্তে কমিয়ে ইহানকে ছেড়ে দাঁড়ায়। ইহান আবছা আলোয় দেখতে পায় ঊষার কান্নামাখা ভয়ার্ত মুখ। চোখে মুখে পানি লেপ্টে আছে। ভয়ে মেয়েটা এখনো প্রফ আছে দেখেই বোঝা যাচ্ছে অন্ধকারে ভয় পায়
এবার ইহান রেগে উঠলো,,
ঊষা তুই একা ছাদে কি করছিস এখন?দেখে তো মনে হচ্ছে ছাদে এসেই ভয় পেয়েছিস তাহলে একা ছাদে কেন এসেছিস যেখানে ভয় পাস?
ইহান কপাল কুঁচকে তাকিয়ে আছে ঊষার দিকে।
আমি ভাইয়ার রাগী কন্ঠ শুনে ভয় পেয়ে গেলাম। ঠোঁট চেপে ধরে কান্না আটকানোর চেষ্টা করছি। পারছিনা ফুপিয়ে যাচ্ছি। এবার ভাইয়া ধমকে উঠল আমার কান্না সাথে সাথে থেমে গেল।
আমি বললাম,,আমাকে তো চাচি আসতে বলল আপনারা সব ফ্রেন্ডরা নাকি ছাদে বসে গল্প করবেন। তাই আমি আপনাদের বসার জায়গা ঠিক করার জন্য এসেছি।
ইহান ভাইয়া আমার কথা শুনে অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। তারপর আমাকে বলল,,
তাহলে কাউকে নিয়ে আসতি। তুই তো ভয় একদম জ্ঞান হারানোর অবস্থা হয়েছিস।
আমি বললাম, কাকে নিয়ে আসবে সবাই তো ব্যস্ত আমার একা আসতে হলো। কি করবো আমি অন্ধকারে খুব ভয় পাই তাই আপনাকে। আমি সরি।
ভয়ে মধ্যে লজ্জায় এসে জড়ো হলো আমার মধ্যে। ছিঃ ছিঃ ভাইয়া কি রকম ভাবে জড়িয়ে ধরেছিলাম
আমাকে কি ভাবছে আল্লাহ জানে?
ভাইয়া আচমকা ফোনের ফ্ল্যাশ জ্বালিয়ে আমার মুখে ধরলো। আচমকা চোখের উপর লাইটের আলো পরতে আমি চোখ বন্ধ করে ফেললাম।
ইহান ফ্ল্যাশ লাইট জ্বালিয়ে ফোন ঊষার মুখের দিকে ধরে আছে।উসা ঠোঁট কামড়ে ধরে চোখ বন্ধ করে আছে নাক মুখ লাল করে ফেলেছে চোখ ফুলে ফুলে উঠেছে। ঊষার গোলাপী ঠোট ফর্সা মুখ গোল মুখের আকৃতি ঘন কালো চোখের পাপড়ি যা কাঁপছে। ইহানের চোখ হুট করে ঊষার গলায় গিয়ে পড়ল।সেদিকে তাকে ভয়ঙ্কর রকমের শক খেলো।ঊষর মাথা থেকে ওড়না পড়ে গেছে তাই ওর নরম বুকের উপর নেই একপাশে রাখা তাই গলায় একটা ছোট্ট কালো তিল ইহানে চোখে পড়ল। ইহান তাড়াতাড়ি সেদিক থেকে চোখ সরিয়ে নিল সাথে নিজের ফোনের লাইট ও।
চোখের উপর থেকে আলো সরে যেতেই ঊষা পিটপিট করে তাকালো।
ইহান ভাইয়া এখন ওর দিকে তাকিয়ে নেই অন্যদিকে তাকিয়ে আছে।
অন্যদিকে তাকিয়ে থেকে ইহান ভাইয়া বলল,
“চল আমি লাইট ধরছি তুই সব ঠিক কর।
কথাটা বলে ভাইয়া ছাদের মাঝামাঝিতে চলে গেল। আমি হতভম্ব হয়ে ভাইয়ার পেছনে পেছনে আসলাম।
সবকিছুর মাঝে ইহান নিজের ফোনটা রিসিভ করতে ভুলে গেছে। আর ও সাশ থেকেও ফোন দেওয়া অফ হয়ে গেছে।
কি হলো দাঁড়িয়ে আছিস কেন? তাড়াতাড়ি কর আমাকে নিচে যেতে হবে!
ইহান ভাইয়ার কথা শুনে তাড়াতাড়ি আমি নিচে বসে পরলাম।থাদের কোনা থেকে ঝাড়ু এনে আগে ঝাড়ু দিয়ে নিলাম । মাদুর ভালো করে ছাদে মেললাম একটা পারছিলাম না বলে ইহান ভাইয়া আমাকে সাহায্য করল।
চল আমার সাথে নিচের চল আবার আমাদের সাথে আসিস।
কথাটা বলেই ভাই আগে আগে পা ফেলতে লাগলো আমি পেছনে আসছি।
সিড়ির নিচে গিয়ে ভাইয়া দাঁড়িয়ে লাইট ধরল। আর আমাকে ঘড়ি হাতে রেখে বলল পায়ে কি হয়েছে?
আমি চমকে মাথা তুলে ভাইয়া দিকে তাকালাম।
ভাই আমার পায়ের দিকে তাকিয়ে আছে।আমি কিছু বলছি না ওই ভাবেই একদম নিচে নেমে এলাম।তখনই হুট করে ভাইয়া লাইট আমার পায়ের দিকে ধরে দেখছিল কি যেন দেখে মাথা ঝুঁকিয়ে নিল ব্রু কুঁচকে।
আমি ভাইয়াকে মাথা ঝুঁকতে দেখে তাড়াতাড়ি সিড়ির উপরে উঠে দাঁড়ালাম হকচকিয়ে।
পায়ের এ অবস্থায় কিভাবে হল তোর?
আমি কি বলবো ভেবে পাচ্ছিনা আমতা আমতা করে বললাম, স্কুলে থেকে আসার সময় হোচট খেয়ে ব্যথা পেয়েছে।
ভাইয়া বলল,, হোঁচট খেলি কেন তুই কি হেঁটে আসিস নাকি? গাড়িতে আসলে হোঁচট খেলে কোথায় হাঁটার জায়গা তো শুধু বাসার গেট আর স্কুলের মাঠ!
আমি মাথা নিচু করে আছি আমি যে হেঁটে এসেছি সেটা বলতে পারছি না।
ভাইয়া কিছু না বলে আমাকে নিয়ে নিচে নেমে এলো। আমি নিচে আছি সবাই ছাদে চলে গেছে। তখনই ইমা আপু এসে আমাকে জোর করে ধরে ছাদে নিয়ে এলো।আমাকে খুরিয়ে হাঁটতে দেখেই বুঝতে পেরেছে আমি হেঁটে এসেছি স্কুল থেকে তার জন্য আমাকে বকলো
সাথে এটাও বলল টাকা না থাকলে আমার থেকে নিয়ে যেতি। আমি আপুর সাথে ছাদে এসে দাড়ালাম সবাই গোল হয়ে জড়ো হয়ে বসে আছে কি যেন বলে হাসাহাসি করছে ইহান ভাইয়া তাদের মাঝখানে আছে। অবসাদে আসতেই ইহান বয় ফ্রেন্ডের মধ্যে কে যেন আপুকে দেখতে আসলো তার উত্তরে হাসতে হাসতে তাদের পাশে গিয়ে বসল। আমি ছাদের দরজায় দাঁড়িয়ে তাদের দিকে তাকিয়ে আছি। খুশিতে আমার চোখ দুটো ঝলমল করছে। কত ফ্রেন্ড ভাইয়া আমারও যদি এতো ফ্রেন্ড থাকতো। আমার মনে আছে যখন আমি অনেক ছোট ছিলাম তখন আমার অনেক ফ্রেন্ড ছিল যখন আমি প্লে তে পড়তাম আম্মুর সাথে স্কুলে যেতাম। কত ফ্রেন্ড ছিল আমার সবাই কত ভালোবাসতো আমাকে। আর এখন আমার একটাও ফ্রেন্ড নেই
ক্লাসের কেউ আমাকে ফ্রেন্ড বানায় না। আজ আমার বাবা-মা বেঁচে থাকলে আমি এমন হাসিখুশি থাকতাম ইমা ইলা আপুর মত এতো কাজ করতে হয়তো না। অনেক ফ্রেন্ড থাকতো তাদের সাথে ঘুরতে যেতাম ্ফুচকা খেতাম তারপর আড্ডা দিতাম আব্বু আম্মুর সাথে টেবিলে বসে আমার ফেভারিট খাবার খেতাম। আম্মু আমাকে খাইয়ে দিত আমি আমার পছন্দের ড্রেস কেনার জন্য বড় বড় শপিং মলে যেতাম। বড় বড় রেস্টুরেন্টে আব্বু-আম্মুর সাথে খেতে যেতাম মাঝে মাঝে
সব সময় আনন্দে থাকতাম হই হুল্ল করতাম।আচমকা আমার চোখটা ঝাপসা হয়ে এলো পৃথিবীর সমস্ত দুঃখ আমাকে সে গ্রাস করল। পৃথিবীতে কেন বেঁচে আছি আমাকে তো কেউ ভালোবাসে না
কেউ আমার জন্য ভাবে না কেউ আমার একটু যত্ন করে না।কেউ আমার দুঃখে দুঃখ পায়না। কেউ আমার আঘাতেই চোখের জল ফেলে না। কেউ আমার আনন্দে আনন্দিত হয় না। কেউ আমাকে মন প্রাণ উজাড় করে ভালোবাসে না। যার আমাকে ভালবাসতে তারাই আমাকে ছেড়ে চলে গেছে তাহলে এই পৃথিবীতে আমি একা কেন আছি যার কেউ নেই ভালোবাসার মতো তার এই পৃথিবীতে থাকার ও বোধহয় অধিকার নেই। এমন কেউ কি আমার জীবনে আসবে না যে আমার মুখে হাসি ফোটানোর জন্য নিজের সর্বোচ্চ চেষ্টা করবে। যে আমার একটু চোখের জলে পাগলামো করবে। যে তার ভালোবাসা দিয়ে আমার জীবনের সমস্ত দুঃখ ভুলিয়ে সুখের সাম্রাজ্যে তৈরি করবে।
চোখ বেয়ে বৃষ্টির মত পানি পড়ছে এমন কেউ এমন কেউ কি কখনো আসবে না আমার জীবন কখনো না।
#চলবে
#এক_চিলতে_রোদ
#Writer_Nondini_Nila
#Part_5
চোখ বন্ধ করে এক দীর্ঘশ্বাস ফেললাম। তখনই ইমা আপু আমাকে ডেকে উঠলো,
আপুর ডাক শুনে চকিতে তাকালাম।
আপু ডেকে উঠলো আবার উঁচু গলায়,, এই ঊষা তুই ওইখানেই দাঁড়িয়ে আছিস কেন? আয় এখানে আয়।
আমি চোখের পানি আড়াল করে মুছে তাকালাম।আপুর ডাকটা জুড়েই হয়েছে তা সবার দিকে তাকিয়ে লজ্জা পেলাম। ভাইয়ার সব বন্ধুরা আমার দিকে তাকিয়ে আছে ঘাড় বাঁকিয়ে। আমি সবার এমন তাকানো দেখে লজ্জায় মাথা নীচু করে ফেললাম। আড়চোখে তাকিয়ে দেখিয়ে ইহান ভাইও আমার দিকে তাকিয়ে আছে ব্রু কুঁচকে।
আপু আমায় হাত বাড়িয়ে ডাকছে আমি সবার দিকে একবার লজ্জা মিশ্রিত ভাবে তাকিয়ে খোঁড়াতে খোঁড়াতে আপুর পাশে এসে দাঁড়ালাম। আপু আমাকে টেনে বসিয়ে দিল নিজের পাশে
তখন একটা মেয়ে ইমা আপুর উদ্দেশ্যে জিজ্ঞেস করলাম আমি।
আপু মুচকি হেসে বলল, আমি তার চাচাতো বোন কথাটা শুনে আমার চোখটা ছল ছল করে উঠলো।আপু তাও নিজে আমাকে বোন বলে পরিচয় দিলে কেউ তোমাকে বোন বলে পরিচয় দেয় না।
আপু বসেছে ভাইয়ের পাশেই তারপর আমি তো আমি সবার দিকে তাকিয়ে। ভাইয়ের দিকে তাকালাম দেখি ভাই আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি হকচকিয়ে চোখ সরিয়ে নিলাম।
ভাইয়ের একটা বন্ধু বলে উঠলো,, ইহান ভাইয়া কি গান বলতে বলল। ভাই নাকি অনেক সুন্দর গান গাইতে পারে। বিদেশে থাকতে নাকি তাদের গান রেকর্ড করে অনেকবার পাঠিয়েছে। তো এখন নাকি গান গেয়ে শোনাতে হবে কিন্তু এখন ভাই রাজি হচ্ছে না। সবাই অনেক বলার পর জরা জড়িতে ভাইয়া রাজি হয়ে গেল।
ভাই একটা হিন্দি গান গাইলো।আমি আগে কখনো ভাইয়ের গান শুনি নি আজকে ফাস্ট শুনলাম। কি অপূর্ব কন্ঠ ভাইয়ার। মুগ্ধ হয়ে ভাইয়ের গান শুনছিলাম। গালে হাত দিয়ে ঘাড় বাঁকিয়ে ভাইয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে ছিলাম পুরোটা সময় খুব সুন্দর করে গান গায় ভাইয়া। এতক্ষণের খারাপ লাগাটা নিমিষেই দূর হয়ে গেল। ভাইয়ার কন্ঠে গান শুনে। কিন্তু হিন্দি গানের আগামাথা কিছুই বুঝলাম না। বাংলা হলে ভালো হতো। সেটা তো আর বলতে পারিনা কিন্তু হিন্দি গান ও শুনতে ভালো লেগেছে।
গান গাওয়া শেষ করে ভাইয়া আমার দিকে তাকাল আমি গাল হাতে দিয়ে তাকিয়ে ছিলাম সেটা দেখে ভাইয়া ঠোঁট বাঁকা হাসি ফুটিয়ে তুললো।ইমাপুর ফোন বাজতেই ফোন নিয়ে আমাদের মাঝখান থেকে উঠে গেল।
আমি আর ভাইয়ার মাঝে এখন আপুর জায়গা ফাঁকা। আমি চুপ করে বসে আছি আর সবার দিকে তাকাচ্ছি।সবাই কতো শত কথা বলছে ভাইয়ার গানের প্রশংসা করছে।ভাইয়ার সবার সাথে কথা বলছে অনেক। আপু কথা বলতে বলতে আবার এলো আর উল্টো কাজ করলো আমাকে তার জায়গায় ঠেলে আমার জায়গায় বসে পরলো ফোনে কথা বলছে এখন ও।
আপুর ধাক্কায় আমি ইহান ভাইয়ার ডান হাতের বাহুর সাথে ধাক্কা খেলাম সাথে আমার বাম হাত গিয়ে পরলো ভাইয়ার কুলের উপর।
ইহান ছোটবেলার একটা কথা বলে হাসছিল সেটা হলো ওর ফ্রেন্ড নাহিদ ছোটবেলায় একটা মেয়ের উপর ক্রাশ খেয়ে ছিল।আর দুর্ভাগ্যবশত সেই মেয়েটা এসে ইহান কে প্রপোজ করেছিল। সেই কথা বলছে আর সবাই হাসছে আর নাহিদ মুখ গোমড়া করে বসে আছে। তখনই কারো সাথে ধাক্কা খায় আর কারো হাতে কোলের উপর পড়ে। আবছা অন্ধকার আলো ছাদে নিচের দিকে তাকিয়ে একটা হাত আবিষ্কার করে এইটা যে মেয়েদের হাত নরম তুলতুলে হাত। হাতটা অসম্ভব রকমের কাঁপছে ইহান নিজের হাত নিচে থেকে উঠিয়ে হাত দিয়ে স্পর্শ করে পাশে তাকায় ব্রু কুঁচকে। ওর পাশে তো ইমা ছিলো এটা কি ইমার হাত। পাশে তাকিয়ে ঝটকা খায়। তাড়াতাড়ি হাত ছেড়ে দেয়। ঊষা বসে ওর পাশে।
আমি হাত ছাড়া পেয়ে তারাতাড়ি হাত গুটিয়ে একটু সরে বসি। ইহান ভাই আমার দিকে কেমন করে যেন তাকিয়ে আছে। আমি মৃদু সরে আসতে করে ভাইয়াকে বলি,,,
সরি ভাইয়া আসলে ইমাপু এমনভাবে ধাক্কা দিছিলো আমি তাল সামলাতে পারিনি।
ভাই আমার দিকে তাকিয়ে ছিল ইটস ওকে বলে আমার গল্পে মেতে উঠল। আর আধা ঘন্টার মত গল্প চললো সাড়ে এগারোটায় দিকে সবাই গল্পটা মাস্তি শেষ করে নিচে নেমে গেল। সবাই চলে গেছে আমি যাইনি কারণ চাচী বলেছে। সব আমার ঠিক করে নিয়ে যেতে হবে।ইমা আপু 5 মিনিটের জন্য আমার পাশে এসে বসেছিল আবার ফোন নিয়ে নিচে নেমে গেছে। ইহান ভাইয়া বন্ধুদের সাথে চলে গেছে।
ইহান নিচে এসে বন্ধুদের থেকে বিদায় নেয়। তারপর নিজের রুমে এসে ঠাস করে শুয়ে পড়ে।ক্লান্ত লাগছে ওর চোখ বন্ধ করতেই। চোখের সামনে ঊনার মুখটা ভেসে ওঠে তাড়াতাড়ি চোখ খুলে উঠে বসে।
ঊষার মুখ ভেসে উঠল কেন তাও আবার মলিন মুখ।
হঠাৎ করে মনে হলো উষার তো পায়ে ব্যথা ও তৈ আমাদের সাথে ছাদে বসে ছিল। নেমে এসেছে কি? নিচে দেখলাম না তো।ইহানের অবচেতন মন কেন যেন ঊষার জন্য চিন্তা করতে লাগল ও বিছানা থেকে নেমে টাউজার আর গেঞ্জি পড়ে রুমে থেকে বেরিয়ে এলো। তারপর সোজা ছাদে চলে গেল । দেখতে পেলে ঠিকি ঊষা নিচে বিছানো চাদর ভাঁজ করছে আর খুরিয়ে হাটসে।
ইহান এবার ফোন আনিনি ফোনটা বিছানায় রেখে এসেছে তাই লাইট ধরতে পারল না। অন্ধকারে ওর পাশে গিয়ে দাঁড়ালো।
আর মৃদু স্বরে বলল ঊষা।
আচমকা কারো কন্ঠ শুনে চমকে পেছনে তাকালাম অন্ধকারেই বুঝতে পারলাম ইহান ভাই। বুকে হাত দিয়ে উপরে নিচে থুথু দিয়ে ভাঁজ করে হাতে নিলাম চাদর।
ভাইয়া আপনি এখানে?
তুই একা কেন ইমা কোথায়?
আপু তো অনেক আগেই চলে গেছে।
অন্ধকারে না ভয় পাস তাহলে একা কেমনে রইলি।
ভাইয়ার কথা আমি মৃদু হেসে বললাম,
একা ভয় পাই কিন্তু আমার দেখায় থাকতে হবে। আমার তার সঙ্গী নাই। ভয় কে জয় করছি দেখেনা আগেরবারের মতো ভয় পাচ্ছি না। সব জায়গায় তো আমাকে একাই থাকতে হবে যার বাবা-মা একা করে তাকে ফেলে পরপারে চলে গেছে তার জীবন তো একাই কাটাতে হবে।
ঊষার কথা শুনে ইহান থমকে গেল। অন্ধকারের ঊষার দিকে তাকিয়ে আছে এটুকুই বয়সে মেয়েটার কতোই না কষ্ট হচ্ছে। ঊষা কেমন করে যেন কথাটা বলল যা ইহানের বুকে গিয়ে লাগলো কথাগুলো। ওর চোখের সামনে ঊষা নিচু হয়ে ফ্লাক্স হাতে নিয়ে খুরাতে খুরাতে সামনে দিকে যেতে লাগলো
ইহান একদৃষ্টিতে ঊষার যাওয়া দেখছে।ওর সামনেই ঊষা সিঁড়ি দিয়ে নেমে গেল ও সেই দিকে ছাদের মাঝামাঝিতে দাঁড়িয়ে তাকিয়ে রইল।ইহান ঊষার থেকে চোখ সরিয়ে ছাদের কর্নারে রেলিং এ হাত রেখে অন্ধকারের দিকে তাকালো।
আমি সবকিছু নিচে রেখে নিজের রুমে চলে এলাম দরজা চাপিয়ে বিছানায় এসে বসলাম গ্লাস পানি ভড়ে ঢকঢক করে পানি খেয়ে। পায়ে দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলাম রক্ত বের হচ্ছে আবার অনেকক্ষণ হাটা হয়েছে যে। হাতের আঙ্গুল দিয়ে পায়ের আঙুল চেপে ধরে রইলাম। যাদের রক্ত বের হতে না পারে সিঁড়ি দিয়ে আসার সময় আবার উস্টা খেয়ে ছিলাম।
বিছানায় হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে আছে হাত দিয়ে আঙুল চেপে ধরে। হুট করে মনে হল কেউ আমার হাতটা আঙ্গুল থেকে ছাড়িয়ে নিয়েছে। তাড়াতাড়ি চোখ মেলে তাকিয়ে দেখে আমার সামনে ইহান ভাইয়া বসে আছে। ভাইয়া আমার হাত সরিয়ে দিয়ে নিজের ডান হাত আমার পায়ের দিকে এগিয়ে আনলো। তা দেখে তাড়াতাড়ি আমি পা সরিয়ে নিলাম। আর বিশ্মিত হয়ে জিজ্ঞেস করলাম,,
কি করছেন কে ভাই আপনি এখানে কেন?
ভাইয়া কিছু না বলে আমার পা টেনে নিয়েছে হাতের উপর নিল। আঙুল এর দিকে তাকিয়ে থেকে বলল,,, ইস কি অবস্থা হয়েছে পায়ের এ অবস্থা নিয়ে এত হাঁটাহাঁটি করলি।
আমি সেসব কিছু না বলে বললাম ভাইয়া পা ছারুন আপনি আমার পা ধরেছেন কেন ?
এবার ভাইয়া রেগে আমার দিকে তাকালো চোখ গরম করে বলল,,,
চুপ একটা কথা শুনতে চায় না আমাকে আমার কাজ করতে দে।
ভাইয়ার ধমক শুনে আমি কথা অফ করে দিলাম।ভাইয়া আমাকে চুপ করতে দেখে আমার দিকে তাকিয়ে বাঁকা হেসে বলল গুড।
আমি ভীতু চোখের দিকে তাকিয়ে আছি।
ভাইয়া একটা মলম নিজের পকেট থেকে বের করে আমার পা নিজের হাঁটুর উপর রেখে খুব যত্ন সহকারে মলম লাগিয়ে দিল। আমি হাঁ করে ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে আছি।
ইহান ঊষার পায়ে মলম লাগিয়ে দিচ্ছিলো। ঊষা পা দেখেও থমকে যায় কত সুন্দর পা। মলম লাগানো শেষ করে ঊষার দিকে তাকানোর সময় হুট করে ঊষার পায়ের উপরের দিকে চোখ যায় অনেকটা ওপরে উঠে গেছে ছেলোয়ার।
ঊসার ফর্শা পা দেখা যাচ্ছে। ঊষার মুখের থেকেও ওর পা বেশি সুন্দর।
আমি ভাইয়ার তাকানো দেখে সোজা নিজে পা টেনে নেয়।
ভাইয়া সেটা দেখে তাড়াতাড়ি উঠে রুম থেকে বেরিয়ে গেল।
#চলবে
(ভুল ত্রুটি হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন!ইহান আর ঊষা কে কেমন লাগছে গল্পটা কেমন লাগছে অবশ্যই যথার্থ মন্তব্য দিবেন।আপনাদের ভালো ভালো কমেন্ট দেখে যেন আমি আরো ভালো করে লেখার অনুপ্রেরণা পায়। ভুল হলে অবশ্যই ধরিয়ে দেবেনভালো না লাগলে অবশ্যই বলেন আপনাদের ভালো লাগানোর জন্যই তো লেখা তো আপনারা এসব বললে আমি কিছুই মনে করব না। উল্টো নিজেকে শোধরানোর চেষ্টা করব ধন্যবাদ সবাই আমার ভালোবাসা নিবেন।