এক_চিলতে_রোদ,Part_45,46

0
1140

#এক_চিলতে_রোদ,Part_45,46
#Writer_Nondini_Nila
#Part_45

ভাইয়া শুকনো মুখটার দিকে তাকিয়ে আছি। ভাইয়াকে ক্লান্ত লাগছে খুব। তার এক হাত জরিয়ে দাঁড়িয়ে আছে একটা মর্ডান মেয়ে। যার পরনে ছোট পোশাক। আর কোঁকড়ানো চুল গুলো কাঁধ পর্যন্ত খুলে রেখেছে। চুল কালারিং করা। ভাইয়া চাচির দিকে তাকিয়ে বললো,

‘ আম্মু ও হচ্ছে ফারিয়া। আর ফ্রেন্ড কিছুদিন এখানে থাকবে।’

ইলিনা বেগম ফারিয়ার দিকে হা করে তাকিয়ে আছে। পুতুল এর সুন্দর মেয়েটা‌। ওর দিকে চোখ ছোট করে তাকিয়ে আছে। ইহান কথা শেষ করতেই হাই বললো। ইলিনা বেগম বেগম ছেলের দিকে স্মিত হেসে বললো,

‘ এইটা কোন ফ্রেন্ড? আগে তো দেখি নি?’

‘আম্মু ও দেশের বাইরে থেকে এসেছে।’

‘ তুই যেখানে থাকতি সেখানে থেকে।’

ভাইয়া মাথা নাড়ায়। ফারিয়ার মেয়েটাকে বাহু থেকে ছাড়িয়ে নেয় ভাইয়া। আমি পাশেই দাঁড়িয়ে তাকিয়ে ছিলাম। ভাইয়া আমার দিকে এগিয়ে এসে বললো,

‘ ঊষা ফারিয়াকে গেস্ট রুমে নিয়ে যা।’

আমি মাথা নেড়ে সম্মতি দিলাম। ভাইয়া গটগট করে সিঁড়ি বেয়ে উপরে চলে গেল। আমি ফারিয়া মেয়েটাকে বলে গেস্ট রুমে নিয়ে গেলাম। তিনি ইংরেজিতে কথা বলছে। আমার নাম জিজ্ঞেস করলো কে আমি জিজ্ঞেস করলো। আমি নাম বললাম কে বলতে যাব তখন তিনি ইংরেজিতে বললো। আমি কাজের লোক নাকি। আমি চমকে তাকালাম কি বলবো মেয়েটা আমার কথার তোয়াক্কা না করে বললো আমি ফ্রেশ হয়ে ঘুমাবো কেউ ডিস্টার্ব করো না‌।

আমি নিঃশব্দে বেরিয়ে এলাম। মুখ কালো করে চাচির সামনে দিয়ে রান্নাঘরের দিকে যাচ্ছি। চাচি মুখে কেমন হাসি রেখে তাকিয়ে আছে। আমি তার ওমন হাসির কারণ বুঝতে পারলাম না। রান্নাঘরে গিয়ে কফি করে ভাইয়ার রুমে গেলাম। ভাইয়া শুধু ট্রাউজার পরে খালি গায়ে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। আমাকে দেখেই ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটিয়ে তুললো। আমি কফি নিয়ে ভাইয়াকে দিলাম ভাইয়া কফিতে চুমুক দিলো দাঁড়িয়েই। কফিতে চুমুক দিতে দিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি মুখ গোমড়া করে দাঁড়িয়ে আছি।

আজ ভাইকে কতো কিছু বলতে চাইছিলাম। কতো আশা ছিলো দেখা মাত্র জরিয়ে ধরবো। কিন্তু ওই ফারিয়ার জন্য সব গোলমাল হয়ে গেলো। ভাইয়ার হাত কেমন করে জরিয়ে ধরে ছিলো। আমার একটুও ভালো লাগে নি।

‘এমন গোমড়া মুখে দাঁড়িয়ে আছিস কেন?’

ভাইয়ার কথায় আমি মাথা তুলে তাকালাম।
ভাইয়া ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। আমি কিছু বলছি না।
ভাইয়া আরেক চুমুক দিয়ে কাপে জিজ্ঞেস করলো,,

‘ আমাকে দেখে কোথায় ভেবেছিলাম খুশি হবি তা না মুখ গোমড়া করে রেখেছিস? আচ্ছা আমাকে দেখে কি তুই খুশি হসনি? তার মানে বাসার বাইরেই থাকলেই তোর ভালো লাগে।’

আমি স্তম্ভিত হয়ে তাকিয়ে আছি বোকা চোখে। আমার মন খারাপ কি জন্য আর উনি কি ভাবছে? হায় আল্লাহ।

ভাইয়া আমার তাকিয়ে থাকা দেখে কাপ ড্রেসিংটেবিলের উপর রেখে আমাকে কাছে টেনে কোমড় জড়িয়ে ধরলো আমি নির্বিকার ভাবে দাড়িয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে আছি। আমার কষ্ট কেন হচ্ছে ভাইয়া কেন বুঝছে না?

ভাইয়া আমার মুখ উঁচু করে তুলে ধরে। আর বলে,

‘ ফারিয়ার জন্য মন খারাপ করেছিস?’

আমি চমকে উঠলাম। অবাক হয়ে ভাইয়ার চোখের দিকে তাকালাম। ভাইয়া আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
আমি তো শুধু একটা কারণ এ মন খারাপ করিনি।অনেক কারনে করেছি কাল আসার কথা ছিলো আজ এলো কেন?

আমি এবার মুখ ছোট করে বললাম,,

‘ আপনার তো কাল আসার কথা ছিলো। আর ওই মেয়ে আপনাকে ওমন করে ধরে ছিলো কেন?’

‘কাল আসতে পারিনি ওর জন্য ই ও কাল এসেছে রাতে ও কে নিয়ে আসতে হয়েছে ইয়ারফোর্ট থেকে। আর ও আমাকে ভালোবাসে তাই ধরে ছিলো।’

আমি বিস্মিত হয়ে তাকালাম। কি বলছে ওই মেয়ে ভাইয়াকে ভালোবাসে? আমি বড় চোখ করে তাকিয়ে বললাম,

‘ কিহ!’

‘আচ্ছা সব পরে বলবো। এখন আমি খুব ক্লান্ত রে ঊষা। আমি একটু ঘুমাবো। আমার ঊষাকে জরিয়ে না করবি না প্লিজ।’

আমি কিছু বলার ভাষা পেলাম না। খালি কানে বাজছে ও আমাকে ভালোবাসে। এটাই বাজছে।ভাইয়া আমার নাকের ডগায় চুমু খেয়ে বসলো আমি চমকে উঠলাম। ভাইয়া ঠোঁটের কোণে হাসি ঝুলিয়ে টেনে বিছানার নিয়ে এলো।

আমি বাধা দিয়ে বললাম,
‘ আমি ঘুমাবো না।’

‘ তোর ঘুমাতে হবে না আমি ঘুমাবো।’

আমি বললাম, ‘ ওই মেয়ে আপনাকে ভালোবাসে?’

ভাইয়া বললো, ‘ হুম।’

‘ আপনিও কি …

‘ পরে সব বলবো বললাম তো। এখন মাথা ব্যাথা এতো কথা বলিস না।’

বলেই ভাইয়া খাটে শুয়ে আমাকে নিজের বাহুবন্ধনে আবদ্ধ করে জরিয়ে চোখ বন্ধ করে ফেললো।

আমি ঘুমাতে পারছি না। ওই মেয়ে ভাইয়াকে ভালোবাসে তাকে ভাইয়া বাসায় নিয়ে এলো কেন ? আবার চাচি কে বললো ফ্রেন্ড‌।ভাইয়া তো আমাকে ভালোবাসি বলে তাহলে ওই ফারিয়াকে… এই ফারিয়া নামটা আগেও শুনেছি কোথায় শুনেছি মনে পরছে না কেন? মনে করার জন্য ছটফট করছি তখন ভাইয়া চোখ মেললো আর আমাকে বুকে থেকে উঠিয়ে গালে হাত দিয়ে বললো,

‘ এতো টেনশন করিস না। আমি শুধু তোকেই ভালোবাসি। আর তোকেই ভালোবাসবো।’

বলেই একটা কাজ করে বসলো ভাইয়া যা এর আগে কখনো করেনি। আমি বিস্মিত হয়ে গেলাম। ভাইয়া আমার ঠোঁটে কিস করলো। আর জরিয়ে চোখ বন্ধ করে ফেললো। আমি মূহুর্তে কি হয়ে গেলো ভেবে থমকে গেলাম। অনেকটা সময় লাগলো আমার চমকানো কাটাতে। আমি ভাইয়ার বুকের সাথে লেপ্টে আছি। ভাইয়া বোধহয় ঘুমিয়ে গেছে তার নিশ্বাস ঘন হয়েছে। আমি এটা ভেবে শান্তি পাচ্ছি ভাইয়া শুধু আমাকেই ভালোবাসে।

মনে একটা আনন্দের ঢেউ বয়ে গেলো আমার। ফারিয়া নাম আমি ভাইয়ার মুখে শুনেছিলাম। ভাইয়া তো ফোনে কথা বলতো এই নামে। হুম আমি যাকে ভাইয়ার গার্লফ্রেন্ড ভাবতাম। এই সেই মেয়ে। ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পরলাম। ঘুম ভাঙল যখন আমি ভাইয়ার সাথেই মিশেই আছি। ভাইয়াকে ডেকে নিজে উঠে পরলাম। ভাইয়া আমাকে ছেড়েই ঘুম। আমি এক নজর তাকিয়ে বাইরে চলে এলাম। বাইরে এসে ওই ফারিয়াকে খাবার টেবিলে দেখলাম। খাচ্ছে আমি গিয়ে পাশে দাঁড়ালাম। আমার দিকে লতা তাকিয়ে বললো,

‘ এইটারে কতো খাবার দিলাম কিন্তু উনি ইহান ভাইজান রে ছাড়া খাবে না। তিনবার আমাকে ডাকতে পাঠিয়েছে। কিন্তু ভাইজান তো দরজা আটকে আছে কি করি? ‘

আমি হকচকিয়ে গেলাম। দরজা আটকানো না থাকলে লতা আমাকে ভাইয়ের সাথে দেখে নিতো সর্বনাশ।

আমি বললাম,
‘খাবে না কেন?’

‘একা খাবেনা।’

আমার দিকে ফারিয়া তাকিয়ে বললো, হেই ঊষা ইহান কে ডেকে আনো প্লিজ। আর না হলে ওর রুম আমাকে দেখাও আমি ডেকে আনছি।’

আমার একটু এই মেয়ের কথা বার্তা ভালো লাগছে না। আসলে একেই আমার ভালোয় লাগছে না। লাগবে কি করে এ যে আমার ইহান ভাইকে ভালোবাসে এটা জানার পর কি করে একে আমি সহ্য করতে পারবো কিন্তু কি বলার সাহস আমার নাই। মনে মনে হাজার টা গালি দিয়ে বললাম,

‘ ভাইয়া এখন ঘুমাবে। আপনি খেয়ে নিন ভাই পরে খাবে।’

ফারিয়া বললো, ‘ ভাই বলছো কেন? মালিককে স্যার বলবা। আর ইহান আমার সাথে আগে খাবে পরে ঘুম।’

বলেই উঠে দাঁড়ালো। আর বললো,

‘নিয়ে চলো ওর কাছে আমাকে।’

ভাইয়া বিছানায় খালি গায়ে শুয়ে আছে আমি সেখানে কি করে এটাকে নিয়ে যাবো।
কিন্তু এ তো নাছোড় বান্দা। তখন চাচির আগমন ঘটলো।

তিনি সুন্দর হাসি দিয়ে বললো,,
‘ ঊষা নিয়ে যা ইহানের রুমে। ‘

‘কিন্তু এখন তো ভাইয়া ঘুমাচ্ছে!’

‘ তো কি ওর ফ্রেন্ড ওকে ডাকছে ও কি না আসবে নাকি‌‌। আর ওকে নিয়ে যা বলছি‌!’

চাচির কথার প্রেক্ষিতে কিছু বলতে পারলাম না। আমি ফারিয়া মেয়েটাকে নিয়ে ভাইয়ার রুমে এলাম। ভাইয়া এখন বুকে ভড় করে ঘুমিয়ে আছে। তার উন্মুক্ত ফর্সা পিঠ দেখা যাচ্ছে। আমি সেদিকে থেকে চোখ সরিয়ে। ফারিয়া মেয়ের দিকে তাকিয়ে দেখি হা করে তাকিয়ে আছে। আর গটগট করে ভেতরে চলে গেলো।
আমি যেতে গেলে বলে,

‘তুমি চলে যাও।ওকে নিয়ে আমি আসছি।’

আমি থমকে দাঁড়িয়ে পরলাম। আমি দরজার আড়ালে লুকিয়ে উঁকি দিচ্ছে ফারিয়া শয়তান মেয়ে ভাইয়া পাশে বসে হা করে মাথা বাকিয়ে ভাইয়ার মুখের দিকে পিঠের দিকে তাকিয়ে আছে।

হুট করেই নিজের মুখ এগিয়ে নিয়ে যেতে লাগলো ভাইয়ার মুখের দিকে আমি বড় চোখ করে তাকিয়ে আছি। আর সহ্য করতে না পেরে দরজা শব্দ করে খুলে ভেতরে গিয়ে বললাম,

‘ তারাতাড়ি আসুন খাবার ঠান্ডা হয়ে গেল তো।’

আমি চেঁচিয়ে বললাম। যাতে ভাইয়া জেগে উঠে। তাই হলো সাথে ফারিয়া ভয়ে দাঁড়িয়ে পরেছি।ভাইয়া আড়মোর ভেঙে উঠে বসেছে। এখন চোখ কচলাতে কচলাতে বললো,

‘ঊষা তোকে বললাম তো আমি ঘুমাবো। তাহলে এমন চেঁচিয়ে আমাকে ডাকার মানে কি?’

আমি ফারিয়ার দিকে তাকিয়ে বললাম,’ আমি বাকি না তো। আপনার ফ্রেন্ড আপনাকে ছাড়া খাবে না তাই উনি এসেছে ডাকতে।’

ভাইয়া ফারিয়ার দিকে তাকিয়ে বললো,

‘ তুমি একাই খেতে পারতে আমি পরে খাবো ঠিক করে ছিলাম। ক্লান্ত লাগছে আমার।’

‘ ইহান আমার একা ভালো লাগছে না। তুমি আসো আমার সাথে!’

#চলবে

#এক_চিলতে_রোদ
#Writer_Nondini_Nila
#Part_46

‘ ফারিয়া তুমি হঠাৎ এখানে এসে হাজির কেন হলে?’
ইহান ফারিয়ার দিকে তাকিয়ে বলল।

ফারিয়া বললো, ‘ কেন আসতে পারিনা? এটা তো আমার ও দেশ। হুম আমার জন্য বিদেশে হয়েছে কিন্তু আমার বাবার জন্ম তো এই বাংলাদেশেই হয়েছে। ‘

‘ আসতে পারবে না কখন বললাম! কিন্তু তুমি যে বাংলাদেশ পছন্দ করো না সেটা আমি জানি‌। কখনো এখানে আসতেই চাওনা সেটা তুমি নিজেই বলেছিলে।’

‘ হ্যা বলেছিলাম। কারণ তখন এই বাংলাদেশে আমার প্রিয় কেউ ছিলো না। তাই এখানে আসার কোন রকম ইচ্ছা ও ছিলো না। কিন্তু এখন আমার অত্যন্ত প্রিয় মানুষ এইখানে বসবাস করে তার জন্য তো চলে এলাম।’

ফারিয়ার কথা ইহানে পছন্দ হলো না। ও বিরক্ত হয়ে বলল,,’ তোমার আসা ঠিক হয়নি। আমি তোমাকে ফোনে সব বলেছিলাম। সব শুনে ও কেন এলে। জোর করে ভালোবাসা হয় না আমি তোমাকে বলেছি।’

‘ আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি ইহান।’

‘ তুমি ভালোবাসলেই তো হবে না‌। আমার তোমার প্রতি কোন ফিলিংস আসে‌। তোমাকে শুধু একজন বন্ধু হিসেবে ভালোবাসি এর থেকে বেশি না।’

ফারিয়া ছলছল চোখে আমার চোখের দিকে বললো,

‘ আমি কি দেখতে এতোই খারাপ? আচ্ছা তুমি যাকে ভালোবাসো সে কি অনেক বেশি সুন্দর? আমি তাকে দেখতে চাই।’

‘ এখানে সুন্দর এর প্রশ্ন হচ্ছে না ফারিয়া। ভালোবাসা সুন্দর দেখে হয় না‌!’

‘ তুমি বলো কে বেশি সুন্দর? আচ্ছা না বললে মেয়ে টাকে আমাকে দেখাও আমি দেখবো তাকে। আমার এতো দিনের এতো ভালোবাসা ও তোমার মনে জায়গা করতে পারলো না।আর এইখানে এসে কিছুদিনে সে তোমার মনের রানী হয়ে গেলো।’

‘ তুমি তাকে উল্টা পাল্টা কিছু বলবে না তো?’

‘ না বলবো না।’

আমি অনেক ক্ষন ধরে ইহান ভাইয়ের দরজার আড়ালে লুকিয়ে দাঁড়িয়ে আছি। কান খাড়া করে আছি কিন্তু ভেতরে কি কথা হচ্ছে আমার কান আবদ্ধি পৌঁছাচ্ছে না। ইহান ভাই আর ফারিয়া মেয়েটাকে দুপুরের খাবার খেয়েই রুমে ঢুকে কি যেন গুজুরফুজুর করেই যাচ্ছে। আর আমি সেই থেকে এই ভাবে দাড়িয়ে আছি। ভেতরে কি কথা হচ্ছে জানার জন্য। ভাইয়া যদি তখন না বলতো এই ফারিয়া আমার ইহান ভাইকে ভালোবাসে তাহলে হয়তো এটা আমি করতাম না। কিন্তু ভালোবাসে এটা জানার পর থেকে তাদের এক সাথে দেখলেই আমার গাঁ জ্বলে উঠে। মনে হয় এই বুঝি ফারিয়া আমার কাজ থেকে ভাইয়া কে কেড়ে নিলো।

আমি চিন্তা ভাবনা বাদ দিয়ে আবার দরজার কান পাতলাম। কথা স্পষ্ট না কিন্তু বুঝা যাচ্ছে এরা কথা বলছে।

‘ঊষা ভেতরে আয় তো।’

আচমকা ভাইয়া ডাক শুনে আমি চমকে উঠলাম। মেরুদণ্ড সোজা করে দাঁড়ালাম। ভয়ে আমার হাত পা কাঁপতে লাগলো। ভাইয়া ডাকছে কেন? তিনি কী বুঝে গেছে আমি তার ঘরে আড়ি পাতছিলাম। হায় আল্লাহ এখন আমার কি হবে?
ভাইয়া আবার ডাকতেই আমি কাঁপা হাতে দরজা খুললাম।

আর চোখ মেলে সামনে তাকালাম। বিছানায় বসে আছে ফারিয়া আর ভাইয়া সোফায়। দু’জনে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি ভয়ার্ত চোখে এক নজর ফারিয়ার দিকে তাকিয়ে ভাইয়ার দিকে তাকালাম। তিনি শান্ত চোখে তাকিয়ে আছে। আমি ধীর পায়ে মাথা নিচু করে ভেতরে গেলাম।

ভাই এগিয়ে এসে আমার হাত ধরে টেনে ফারিয়ার সামনে এনে দাড় করালো। আমি কিছু বুঝতে পারছি না। মনে মনে ভাবছি ভাইয়া কি আমাকে বকবে? এসবের জন্য। ফারিয়া ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছে। ভাইয়া এক হাতে আমাকে জড়িয়ে ধরে বললো,,

‘এই হলো আমার ভালোবাসা। আমার জীবন। সব কিছু।’

ভাইয়ার কথা শুনে আমি স্তম্ভিত হয়ে গেলাম। আমি নিজের পায়ের দিকে তাকিয়ে ছিলাম মাথা নিচু করে। এখন বিস্মিত হয়ে মাথা তুলে ভাইয়ার চোখের দিকে তাকালাম।

ভাইয়া আমার দিকে তাকিয়ে আছে গভীর ভাবে। আমি অবাক হয়ে সামনে ফারিয়ার দিকে তাকালাম। তিনি হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে আছে চোখ বড়বড় করে। তার কথা বিশ্বাস হচ্ছে না মুখ দেখে স্পষ্ট। আমি ঢোক গিলে তাকিয়ে আছি।

এবার চরম বিষ্ময় নিয়ে ফারিয়া মুখ খুললো, ‘ হোয়াট? তুই বাড়ির কাজের মেয়ে কে ভালোবাসিস?’

আমি শুকনো ঢোক গিলে ভাইয়ার দিকে তা কি তাকালাম। তিনি অবাক হয়ে আমার দিকে তাকালো,

‘মানে! কি বলছো কে কাজের লোক?’

ফারিয়া আমার দিকে আঙ্গুল তুলে বললো,’ কেন? ওই তো কাজের মেয়ে? ‘

কাজের মেয়ে শুনে রাগে ভাইয়ার কপালের রগ ফুলে উঠে। দাঁত চেপে বললো,

‘ কে বলেছে ঊষা কাজের লোক।’

‘ ও নিজেই তো বলেছে?’

‘ কিহ ও নিজের মুখে বলেছে?’

আমি বোকা চোখে তাকিয়ে আছি। এসব কথা বলছি আমি নিজেকে কখন কাজের মেয়ে বললাম। মিথ্যা কেন বলছে?

ফারিয়া বললো, ‘ না ও নিজের মুখে বলেনি কিন্তু আমি ওকে জিজ্ঞেস করেছিলাম। ও তো স্বীকার করেছে?’

ভাইয়া আমার দিকে গরম চোখে তাকিয়ে বললো,

‘ তুই নিজেকে কাজের মেয়ে বলে স্বীকার করেছি ?’

আমি ঢোক গিলে বললাম, ‘ ক‌‌ই না তো। আমি তো কিছু বলিনি উনি জিগ্গেস করেছে আমি চুপ ছিলাম।’

ফারিয়া বললো, ‘ হুম তোমার চুপ থাকা আমি সম্মতি ভেবেছিলাম। ইহান তুই এই মেয়েকে ভালোবাসিস?’

ভাইয়া আমার দিকে কঠিন দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বললো, ‘ হুম। ‘

ফারিয়া কিছু বললো না শান্ত চোখে তাকিয়ে থেকে বললো, ‘ গুড। আমার ঘুম পাচ্ছে। আমি গেলাম।’

বলেই বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো আর সোজা হেঁটে বেরিয়ে গেলো। আমি ঘাড় বাঁকিয়ে তার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে র‌ইলাম। ফারিয়া দরজার কাছে গিয়ে ফিরে তাকালো আমি তাকিয়ে ছিলাম বিধায় চোখে চোখ পরলো তার দৃষ্টি গভীর ছিলো। আমি চোখ সরিয়ে নিলাম উনি আড়াল হতেই।

ভাইয়া ফারিয়া যেতেই আমার দিকে রক্ত চোখে তাকিয়ে বললো,

‘ তুই নিজেকে কাজের মেয়ে বলে স্বীকার করেছিস?’

আমি আঁতকে উঠে ছুটাছুটির চেষ্টা করছি। ভাইয়া শক্ত করে আমার কোমর চেপে ধরেছে ব্যাথা পাচ্ছি। আমি হাত দিয়ে ছুটানোর চেষ্টা করলে ভাইয়া আরেক হাতে আমার হাত ধরে বলে,

‘ এ্যান্সার মি।’

আমি ব্যাথা কুঁকড়ে ওঠে বললাম, ‘ আমি স্বীকার করিনি সত্যি বিশ্বাস করেন। উনি জিগ্গেস করেছিলো আমি কিছুই বলিনি।’

‘ কেন কিছু বলিস নি?’

‘আমি কি বলতাম?’

‘ তুই এই বাড়ির বউ এটা বলতি?’

আমি অবাক চোখে তাকালাম। ভাইয়া আবার বললো,

‘ তোকে কেউ কাজের মেয়ে বললো আর তুই সুন্দর মেনে নিলি।মুখের উপর কিছু বলতে পারলি না!’

আমি চুপ করে আমি আমার চোখে জল চলে এসেছে। আমি ব্যাথা পাচ্ছি খুব ভাইয়া আমার চোখে জল দেখে ফট করেই ছেড়ে দিলো।

রেগে বিছানায় বসলো।
আমি ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে চুপ করে দাঁড়িয়ে আছি।

‘আমার সামনে থেকে যা। রাগে কি করতে মন চাইছে তোকে বুঝাতে চাইছি না।’

আমি ঢোক গিলে ভয়ার্ত কন্ঠে বললাম, ‘ সরি।’

ভাইয়া আমাকে টেনে নিজের কোলের উপর বসিয়ে দিলো। আমি আঁতকে উঠে যেতে চাইলাম ভাইয়া শক্ত করে চেপে ধরে আছে। হুট করেই আমার ঘাড়ে কামড়ে ধরলো আমি চোখ খিচে মৃদু চিৎকার করে উঠলাম।

ভাইয়া বললো, ‘ আমি কতোটা লজ্জিত হলাম তুমি বুঝতে পারবি না। যাকে আমি এতো ভালোবাসি মনের মধ্যে জায়গা দিয়েছে তাকে কেউ এমন কাজের লোক বলে গেলো। আর তুই সেট বলার সাহস দিয়েছিস। নেক্সট এমন করলে আমি তোর সাথে কি করবো কল্পনাও করতে পারবি না। নিজের সম্মান রক্ষা করতে শেখ না হলে সবাই এইভাবে তুচ্ছ করবে তোকে।’

বলেই আমাকে টেনে দরজার বাইরে বের করে নিজে দরজা আটকে বসে র‌ইলো।

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here