#এক_চিলতে_রোদ,Part_49
#Writer_Nondini_Nila
কতোক্ষণ ভাইয়ার বুকে ছিলাম জানিনা।দরজা ধাক্কা ধাক্কিতে সেটা ভঙ্গ হলো। লতার আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে ভাইয়া বিরক্ত হয়ে সরে বসলো। আমি উঠে দরজা খুলে দিলাম।
‘তারাতাড়ি নিচে আয়।’
আমি ভয় পেয়ে বললাম, ‘ কেন কি হয়েছে?’
লতা ভেতরে ঢুকে পরলো। ভাইয়ার সামনে এসে বললো,
‘ ভাইজান। আপনার খালা এসেছে।’
‘ খালা?’
লতা দাঁড়ালো না। যে ভাবে এসেছিলো সেভাবেই চলে গেছে।
আমিও লতার পেছনে পেছনে নিচে চলে এলাম। ড্রয়িং রুমে এক পাশে আমি আর লতা দাঁড়িয়ে আছি। সোফার একপাশে চাচি আর তার সাথে ইহান ভাইয়ের ছোট খালা বসে আছে। আর একটা ছেলে শ্যামলা বর্ণের। এটা ইহান ভাইয়ের ছোট খালার ছেলে।বিয়েতে আসে নি।আসবে কি করে তখন তো থানায় ছিলো। ছেলেটা একদম ভালো না শুনেছি। মেয়েদের ডিস্টার্ব করার জন্য আর মদ খেয়ে মাতাল হয়ে পরে থাকার জন্য পুলিশ নিয়ে গেছিলো ধরে। এখন হঠাৎ একে নিয়ে খালামনি এখানে হাজির কেন?
ছেলেটা মাথা নিচু করে বসে আছে। শুকনো ছেলেটা চোখের পার কালো। মাতাল দের অবস্থা এমনই হয় বুঝি।
ছেলেটা এমন ভাবে বসে আছে। কেউ অভদ্র বলতে পারবেনা। খুব ভদ্র ছেলেদের মতো বসে আছে।
চাচি আর খালার কথা শুনে বুঝতে পারলাম কেন এসেছেন!
উনার ছেলেকে ওনাদের পাড়া থেকে তারিয়ে দিয়েছে। সেখানে থাকলেই আবার পুলিশের কাছে দেবে বলেছে। কারণ জেল থেকে বেরিয়ে একটা মেয়ের সাথে বাজে আচরণ করেছে। তাই ছেলেকে নিয়ে এখানে এসেছে কিছু দিন রাখতে।
‘তোর এই বাজে ছেলেকে আমি কেমনে রাখি বলতো? এখানে ও যদি কোন আকাম করে তাহলে তো আমার মান সম্মান সব যাবে।’
খালা চাচির হাত ধরে বললো,’ আপা প্লিজ ওকে তোমার বাসায় রাখো। আমি খুব বিপদে পড়ে এসেছি। আমি তো তোমার বোন আমাকে সাহায্য করবে না।’
চাচি কে খুব মিনতি করতে লাগলো। চাচি কি করবে বুঝতে পারছে না। মনে মনে সে এই বোনকে খুব গালাগালি করছে।
কিন্তু মুখে তা বলতে পারছে না। যতই হোক এটা তার নিজের বোন।বোনের মুখের দিকে তাকিয়ে হলেও এই খারাপ বজ্জাত ছেলেকে নিজের কাছে রাখতে হবে। এখানে সে যদি কোনো গন্ডগোল করে না এটা কি চাচি পুলিশে দিয়ে দেবে ভাবলো।
চাচি শেষমেষ রাজি হলো। ইহান ভাই আবার ঝামেলা করলো। তিনি কিছুতেই ওনাকে এ বাড়ি রাখবে না।
‘আম্মু তুমি কিভাবে রাজি হতে পারলে? আমাদের বাড়িতে ও মেয়ে আছে ও যদি তাদের সাথে অসভ্যতামি করে।’
রেগে বলল। খালা এগিয়ে এসে ইহান ভাইয়াকে বললো,
‘আমি কথা দিচ্ছি। এখানে আর কোন ঝামেলা করবে না ও। তোরা শুধু কিছুদিন ওকে এখানে রাখ।’
‘ তুমি কথা দিলে কি হবে? তোমার ছেলেকে আমার এক দন্ড বিশ্বাস হয় না। এখানে থাকলে যদি কোন সমস্যা হয়?’
‘তোরা যদি এখনো আমাকে সাহায্য না করিস। ওকে নিয়ে কোথায় যাবো ওর বাবা তো ওকে বাসাতেই ঢুকতে দেবেনা।’
ভাইয়া রেগে মেগে রুমে চলে গেল।চাচি শেষমেষ তার বোনের ছেলেকে রেখেই দিলো। সবাই খাবার খেয়ে নিয়েছে ভাইয়া নিচে আসে নাই। ফারিয়া গেছিলো ডাকতে দরজা আটকানো তাই চলে এসেছে।আমাকে বলেছিল আমি যাইনি। ব্যর্থ হয়ে ফারিয়া একাই খেয়ে নিল আজকের। সবার খাওয়া শেষ হলে আমি ভাইয়ার জন্য খাবার নিয়ে উপড়ে আসলাম। দরজা খোলা ছিল আমি ভেতরে ঢুকতেই ভাইয়া বললো,
‘খাবার রেখে আয়। আমি খাব না!’
আমি শুনলাম না। খাবার নিয়ে ভাইয়ার সামনে এসে দাড়িয়ে বললাম,
‘আমিও কিন্তু খাইনি!’
‘তোকেও খেতে হবে না।’
আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি। আমাকেও খেতে মানা করছে। আমার বিশ্বাস হচ্ছে না।
‘আমি কিন্তু খিদে সহ্য করতে পারিনা।’
‘আরে রেখে আয় না।’
আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে কপাট রাগ দেখিয়ে চলে এলাম। আমি না খেয়ে আমি শুনেও আমাকে খেতে বললো না। আমি খিদে সহ্য করতে পারিনা জেনেও। খুব কষ্ট পেলাম। আর ভাইয়ার কাছে গেলাম না। খাবার রেখে আমি আমি নিজের রুমে এসে শুয়ে পড়লাম। চোখ নিয়ে টপটপ করে পানি পরছে। আমি কাঁদছি। ভাইয়া এইভাবে বলতে পারলো।
ওইভাবে কখন ঘুমিয়ে পরেছি জানিনা।
বারোটার পনেরো মিনিট আগে ভাইয়া আমার রুমে এলো। দরজা আমি বন্ধ করে ঘুমায় না তাই নিঃশব্দে রুমে ঢুকে পরলো।
ইহান রুমে ঢুকে দেখে জানালা খোলা তাই রুমে আরো এসে পরছে। ইহান ওই আলোতেই ঊষার কাছে চলে এলো। বাচ্চাদের মতো করে ঘুমিয়ে আছে। ঊষার মায়াবী মুখের দিকে তাকিয়ে নিচু হয়ে ইহান ঊষার কপালে ভালোবাসার পরশ এঁকে দিলো।
ঊষাকে ওইভাবেই কোলে তুলে নিলো।
আমি ঘুমের অনুভব করেছি কেউ আমাকে ছুঁয়ে দিচ্ছে। আমাকে শূন্যে ভাসাচ্ছে। আমি চমকে চোখ মেলে তাকালাম। অন্ধকারে আমি দেখতে পেলাম এটা ভাইয়া। আমি স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললাম। কিন্তু সাথে ছুটাছুটি করতে লাগলাম। তখনকার কথা মনে পরতেই।
‘আরে এমন করছিস কেন?’
আমি বললাম,’ ছারুন আমাকে। কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন?’
‘ তুই চোখ বন্ধ করে থাক। একটু পর দেখতে পাবি কোথায় নিয়ে যাচ্ছি।’
‘ না আমি চোখ বন্ধ করবো না। আমাকে নামান। আমি কোথাও যাব না।’
‘কেন রাগ করেছিস?’
‘ বলবো না। আপনার তো কিছু আসে যায় না। আপনি আমার চিন্তা একটুও করেন না।’
‘ কোথায় করলাম না?’
‘ এতো দিন এতো এতো ভালোবাসা দেখিয়েছেন। কেয়ার করেছেন। আর আজ যখন আমি বললাম ভালোবাসি তখন থেকে আমাকে হেলা করছেন! কথায় আছে ছেলেদের ভালোবাসি বলতে হয়না। তাহলে তাদের রং পাল্টে যায়।’
‘ তোর মনে হচ্ছে আমার ভালোবাসা কমে গেছে।’
আমি মন খারাপ করে বললাম, ‘ মনে হওয়ায় কি আসে যায়। করেই তো গেছে না হলে আমি খিদে সহ্য করতে পারিনা জেনে ও আপনি না খাইয়ে শান্ত হয়ে থাকতে পারতেন।’
অন্ধকারে ভাইয়া আমার গালে চুমু খেলো। আমি আরো রেগে গেলাম।
‘ আচ্ছা রাগ করেই চোখ অফ কর।’
‘ আমি কিছু করবো না নামান।’
ভাইয়া নামিয়ে দিলো ফট করেই। আমার নেমে আরো রাগ হলো। বললাম তাই নামিয়ে দিতে হবে। ভালোবাসা সত্যি কমে গেছে। আমার আরো কষ্ট হতে লাগলো। আমি চুপ করে দাঁড়িয়ে আছি। ভাইয়া তার পকেট থেকে রুমাল বের করে ফট করেই আমার পেছনে গিয়ে আমার চোখ বেঁধে দিলো। আমি চমকে উঠে বললাম,
‘ কি করছেন কি? ‘
ভাইয়া বললো,’ চুপ কোন কথা না। তাহলে মুখ ও বেঁধে দেবো।’
আমি চুপ করে গেলাম। ভাইয়া আবার আমাকে পাঁজ কোলে তুলে নিলো। আমি কি হচ্ছে বুঝতে পারছি না।ইহান ছাদে এসে থামলো।
আমাকে ভাইয়া কোথায় নামালো জানিনা। চোখ মেলে আমি বিস্মিত হয়ে গেলাম।
আমার চোখের সামনে চকলেট কেক। আর সেখানে লেখা Happy Brithday My Love ইংরেজি। আজকে আমার জন্ম দিন। আর আমার মনে ছিলো না। আমি অবাক হয়ে ভাইয়ার দিকে তাকালাম। ভাইয়া আমার পেছনে থেকে জরিয়ে ধরলো।
‘ আমার জন্মদিন আমি ভুলে গেছিলাম।’
‘তোর সব আমার মনে থাকলেই হবে।এবার কেক কাট তারাতাড়ি।এই যে দেখ বারোটা বেজে গেছে কথা পরে বলিস।’
আমি হাত নাড়াতে পারছি না। জীবন কখনো আমি কেক কাটিনি।কেক খেয়েছি কিন্তু নিজের জন্মদিন কেকের সৌভাগ্য আমার হয়নি। ইলা ইমা আপুর জন্মদিনে করা হয়েছে বড় করে। তখন কেক খেয়েছি। নিজের জন্মদিনে কোন ভাবে উদযাপন করা হয়নি কখনো। শুধু ইমা আপু আমাকে কিছু না কিছু গিফট দিয়েছে এই যা। আমার ভাবনার মধ্যে ইহান ভাইয়া আমার কোমর থেকে নিজের হাত উঠিয়ে আমার ডান হাত ধরে চাকু হাতে নিলো আর বললো ফূ দে। আমার চোখ ছলছল করছে আমার সপ্নের মতো লাগছে আমি নিচু হয়ে ফূ দিলাম কিন্তু নিভছে না। আমি উত্তেজনায় ভালো করে দিতে পারছি না। কাঁপছি ভাইয়া ও আমাকে সাহায্য করলো। আর মুখে বলতে লাগলো হ্যাপি বার্থডে টু ইউ ঊষা রানী।আমাকে ধরেই কেক কেটে আমার মুখে ঢুকিয়ে দিল। আমি কেকের দিকে তাকিয়ে আছি।
ভাইয়া আমার সামনে চলে এসেছে আর নিজের মুখ পেতে বলে,
‘ আমাকে খাওয়াবি না।’
আমি কিছু বললাম না। ভাইয়া বললো,
‘ তোর জন্মদিন বলে কি শুধু তুই খাবি নাকি?’
আমি বললাম, ‘ হ্যা আমি খাবো শুধু।’
বলেই আরো উঠিয়ে মুখে দিতে যাব ভাইয়া টেনে আমার হাত নিজের মুখে ঢুকিয়ে চুষতে লাগলো।আমি থমকে গেলাম। সারা শরীর কেঁপে উঠলো। টেনে হাত সরিয়ে নিলাম।
‘আমার টা আমি জোর করে নিতে জানি।’
আমার কাছে এসে বললো,
‘ কাল পার্টি আছে। আর আজ বেশি সাজাতে পারিনি আসলে সবার মাঝে। তুই কি মন খারাপ করেছিস?’
আমি ভাইয়া জরিয়ে ধরলাম। আর বললাম,
‘ আমি কতো খুশি হয়েছি আপনাকে বুঝতে পারবো না।’
ভাইয়া আমাকে টেনে ছাদের বাম কর্নারে নিয়ে গেলো। এখানে এসে আমি হতভম্ব। অবাক চোখে দেখছি ভাইয়া ফুলের দোলনা পেতেছে আর তার পাশে একটা টেবিল মাঝে একটা প্লেট এ কিছু ডাকা। দুটো চেয়ার আমাকে নিয়ে সেখানে বসালো। ভাইয়া ঢাকনা তুললো গরম বিরিয়ানি রাখা কি সুন্দর সুগন্ধ। আমি হতবাক হয়ে তাকিয়ে আছি। আমার বিরিয়ানি খুব পছন্দ। ভাইয়া বলল,
‘ আমি নিজের হাতে এতোক্ষণ তোর জন্য এটা রান্না করেছি। এবার খেয়ে বল কেমন হয়েছে?’
আমি আরেক দফা অবাক হয়ে ভাইয়ার দিকে তাকালাম।
‘ আপনি রান্না করেছেন?’
ভাইয়া বললো, ‘ হুম।’
‘ আপনি আমার জন্য এতো কষ্ট করে রান্না করলেন?’
‘ কষ্ট করে করবে কেন? আমি তো খুব আনন্দের সাথে করলাম আমার ঊষা রানীর জন্য। তার জন্মদিন এটাই আমার করতেই হতো।’
আমি এতোটা আনন্দ হলাম। আমি ভাইয়াকে জরিয়ে ধরে কান্না করে দিলাম।ভাইয়া আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।
আমি কান্না গলায় বললাম,
‘ আমি এমন একজনকে সব সময় চাইতাম। যে আমার থেকেও আমাকে বেশি ভালোবাসবে। আমাকে নানা ভাবে চমকে সারপ্রাইজ দিবে। আমার কষ্টে কষ্ট পাবে। আমার আনন্দ তার মুখে হাসি থাকবে। আজ আমি তা পেয়েছি এই জন্মদিন আমি আল্লাহর কাছে চাই আপনি সারা জীবন আমার থাকেন। আমাকে খুব ভালোবাসেন।এটাই আমার একমাত্র চাওয়া।’
‘বোকা আমি তো তোরই শুধু। তোকে আমি কতোটা ভালোবাসি তুই কল্পনা ও করতে পারবি না। কিন্তু এখন আর কান্নাকাটি না। এটা খেয়ে পেট ভর।’
আমি সোজা হয়ে বললাম, ‘ আমাকে খাইয়ে দিন।’
ভাইয়া নিঃশব্দে খাইয়ে দিতে লাগলো। আমিও হাত বাড়িয়ে খাইয়ে দিতে লাগলাম ভাইয়াকে।
ভাইয়া রান্না খুব ভালো হয়েছে। তিনি এতো ভালো রান্না শিখলো কিভাবে? আমি ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বললাম,
‘ আপনি রান্না করলেন কি করে? আপনি কি আগেও রান্না করেছেন?’
‘হুম।লন্ডনে তো আমাকে নিজেই রান্না করে খেতে হতো।’
‘ আপনি রান্না করে খেতেন।’
‘ হুম।’
‘ এজন্য তো এতো ভালো পারেন।’
‘হুম বউকে রান্না করে সারপ্রাইজ দেবো এজন্য শিখে রেখেছি। আজ আমার হাতে রান্না খাবার খাওয়াবো বলে তখন খেতে দেয়নি।’
‘আমি যদি নিচে এসে একাই খেয়ে নিতাম।’
‘ আমি না খেয়ে আছি জেনেও আমার ঊষা আমাকে রেখে খেতেই পারবে না।’
‘ এতো বিশ্বাস।’
‘ অনেক।’
আমি মুগ্ধ হয়ে ভাইয়ার হাসি মুখের দিকে তাকিয়ে আছি। ভাইয়া আমাকে টেনে তুলে সাদা দোলনায় বসিয়ে দিলো।এটা সাদা গোলাপ,বেলি, রজনীগন্ধা সব সাদা ফুল দিয়ে বানিয়েছে ইশ কতো সুন্দর। ফুলের সুবাস চারপাশে ছড়িয়ে গেছে। আমাকে ভাইয়া সেই দোলনায় বসিয়ে দিলো।আর একটা ফুলের তোড়া মাথায় পরিয়ে দিলো। আমি মুখে হাসি নিয়ে পা দুলিয়ে বসে আছি। খুব খুশি লাগছে আমার। ভাইয়া আমার পেছনে গিয়ে দোলনা দোলাতে লাগলো।
উপর থেকে ফুলের পাপড়ি পরতে লাগলো আমি চোখ বন্ধ করে আছি কি সুন্দর সেই মুহূর্ত ছিল। ভাইয়া আমার পাশে দোলনায় বসেছিলো। আমি ভাইয়া কাঁধে মাথা রেখে চোখ বন্ধ করে ছিলাম। আমার চুল খোলা ছিলো। ভাইয়া একহাতে আমাকে জরিয়ে আরেক হাতে হাত ধরে রেখে গল্প করেছিলো।
ভোরে রুমে চলে আসি।এসব কখন করেছে জানতে চাইলে ভাইয়া বললো বিরিয়ানি রান্না করে এটা নিজে হাতে তৈরি করেছে। বাগানে থেকে ফুল আর কিছু দোকানে থেকে এনেছিল।
দুইঘন্টা এসব করেছে। আমি খুব খুশি হয়ে শুনলাম আমার জন্য এসব করার জন্য ভাইয়ার কষ্ট হয়েছে কিন্তু আমি তাতে নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করতে লাগলাম এতো ভালোবাসে আমাকে ভাইয়া।
রাতের কথা কেউ জানতে না পারলেও সকালেই সব সবাই জেনে গেলো। বাসায় পার্টির আয়োজন করেছে ভাইয়া। সন্ধ্যা পার্টি হবে আমার জন্মদিন নিয়ে। আমি ভয়ে আটষাট হয়ে আছি। সকালে কয়েকজন চলে এলো বাসা সাজাতে তা নিয়ে শুরু হলো চাচির চেঁচামেচি। তিনি আমার জন্মদিন নিয়ে এসব শুনেই চেঁচিয়ে বাসা মাথায় তুললো। বাকিরা রাগ করলেও কিছু বললো না কারণ সব করা শেষ এখন বলেও লাভ নাই। ভাইয়া সবাইকে ইনভাইট করে ফেলেছে।
চাচি না খেয়ে রুমে দরজা আটকে বসে আছে। আমি যেতে চেয়েও পারলাম না ভাইয়া আমাকে যেতে দেয়নি।
সন্ধ্যা আমাকে পরীর মতো সাজানো হলো। রানী গোলাপি রঙের একটা গ্ৰাউন পা পর্যন্ত যা ভাইয়া আমাকে দিয়েছে। এতো সুন্দর আমি প্রথমে কতো সময় হা করে তাকিয়ে ছিলাম জানিনা। এটাই পরার পর আমি নিজেই নিজেকে চিনতে পারিনি। ইমা আপু ফুপিরা সবাই বিকেলে চলে এসেছে চাচি বাংলার পাঁচের মতো মুখ করেই এসেছে সবার সামনে।
ফারিয়া আমার সামনে এসে চিবিয়ে চিবিয়ে বললো,
‘হ্যাপি বার্থডে ঊষা।’
আমি ধন্যবাদ দিলাম। আজকে আমাকে কতো লোক যে উইস করলো উফফ। আমার সতেরো বছরের মধ্যে আমি এতো উইশ পাইনি সব আজকে পেলাম। কতো পরিচিত অপরিচিত মানুষের সাথে কথা হলো। ভাইয়ার এক দল ফ্রেন্ড আমার সাথে পরিচিত হলো। ভাইয়া আমার হাত ধরে রেখেছিলো পুরোটা সময়। আমি আর ভাইয়া দাঁড়িয়ে ছিলাম সবাই ক্যাপেল ডান্স করছে তখন ফারিয়া এসে আমাদের সামনে দাঁড়িয়ে ভাইয়াকে বলে,
‘হি ওয়েল ডান্স ওয়েত মি,প্লিজ! ইহান।’
আমি বড় চোখ করে তাকিয়ে আছি। ভাইয়া কি রাজি হবে আমি মন থেকে চাইছি রাজি যেন না হয়।
‘ আমি কিন্তু..
‘ ইহান এখানে সবাই আমার অপরিচিত। আমার তো ডান্স করতে ইচ্ছে হয় প্লিজ প্রেমিকা হিসেবে না করলে ফ্রেন্ড হিসেবে তো করতেই পারো!’
আমি ভাইয়ার হাত শক্ত করে ধরে আছি। ভাইয়া আমার হাত ছারিয়ে নিলো। ফারিয়া সাথে ডান্স ফ্লোরে গেলে আমি কাঁদো কাঁদো মুখ করে তাকিয়ে আছি।
#চলবে