#এক_চিলতে_রোদ,Part_6,7
#Writer_Nondini_Nila
#Part_6
ইহান নিজের রুমে এসে মাথা চেপে ধরে বসলো। চব্বিশ বছর জীবনে প্রথম কোন নারীর প্রতি এমন অনূভুতি হচ্ছে কেন? নিজের উপর নিজের এতো রাগ হচ্ছে বলে বুঝাতে পারবে না।আমার দৃষ্টি এতো খারাপ কবে হলো আগে তো এমন ছিলো না। ঊষার কাছে গেলে কেন ওর বাকিদের মতো স্বাভাবিক থাকতে পারে না। কই ইমা ইলা ওদের কাছে গেলে তো ওর এমন হয়না। ঊষা ও তো আমার বোন। তাহলে ওকে কেন আমি বোনের নজরে দেখতে পারিনা। কেন ওর কাছে গেলে আমার অন্য কিছু মনে হয়। কেন ওকে বোন ভাবতে কষ্ট হয়।
ওর কাছে গেলে আমার অদ্ভুদ কিছু অনুভূতি জন্ম হতে থাকে। যা এর আগে কখনো কোন মেয়ের কাছে গেলে হয়নি।আমার মেয়েবন্ধু ছেলেবন্ধু আগে থেকেই অনেক মেয়ের সাথে আমার ওঠাবসা হয়েছে কিন্তু তখন আমার কাউকে এমন লাগেনি’ সবার সাথে আমি নরমাল বিহেভ করেছি। সব মেয়ের কথা বাদ ফারিয়ার কাছে গেল আমার এমন লাগে না সব মেয়েদের মতো ওকেও আমি স্বাভাবিক নিতে পারি। অদ্ভুত কিছু হচ্ছে আমার সাথে যা আগে কখনো হয়নি।
বাড়িতে আসলাম আসার পরে ফারিয়ার কথা মাথায় আমার আসেনা শুধু ঊষার কথা আসে।
মাথা চেপে ধরে চুপ করে বসে আছে হাত মুষ্টিবদ্ধ করে। কি হচ্ছে ওর সাথে ? ঊষার কাছে গেলে কেন নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারছেনা কেন?
ঊষা সম্পর্কে আমার বোন।
সেটা আমার মাথায় রাখতে হবে।
বিছানায় ফেলে রাখা ফোনটা বেজে উঠলো। ইহান জানে এখন কে ফোন করেছে।এক বছরে যতবারই ফারিয়া ওকে কল করেছে প্রতিবারই ইহানের বিরক্তিতে কপাল কুঁচকে এসেছে। এবারও তার ব্যতিক্রম কিছু হলো না।সে আগের মতই ফারিয়ার নামটা ফোনের স্ক্রিনে দেখে বিরক্ত লাগলো।ফারিয়ার প্রতি এই বিরক্তের কারণ ওর আজ ও বোধগম্য হলো না। মেয়েটা ওকে এতো ভালবাসে কিন্তু ও কিছুতেই মেয়েটাকে ভালবাসতে পারছো না। এখনো ওর সঙ্গ ইহানের বরাবরের মতোই বিরক্ত লাগে।
ফোন রিসিভ করল না ফোনটা বাঁজতে বাঁজতে কেটে গেল।সাথে সাথে আবার ফোন এলো এবার নিজেকে কিছুটা সংযুক্ত করে ফোনটা হাতে নিয়ে রিসিভ করে কানে নিল।
হ্যালো বলতেই ওপাশ থেকে ফারিয়া অভিমানী গলাতে বললো,,
“বাড়িতে যেতে যেতে আমাকে ভুলে গেছো ইহান। এইটা কি ঠিক করছো বলো? তোমার জন্য যে একজন সারাদিন ফোন হাতে বসে থাকছে তুমি কি একটু তাকে মিস করছ না।
ফারিয়ার অভিমান গলায় কথা শুনে ও ইহানের কোন অনুভুতি হলো না। অনুভূতি শূন্য হয় এই ফোন কানে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে ওর মাথাতে এখনো ঊষার কথাই ভাবাচ্ছে।
ইহান তুমি কি আমার কথা শুনতে পাচ্ছ না।
ইহানের কোন সাড়াশব্দ না পেয়ে ফারিয়া আবার জিজ্ঞেস করল,,
ইরান সমস্ত চিন্তাভাবনা এক পাশে ফেলে ফারিয়াকে বলল,,
তেমন কিছু না ফারিয়া।আমি খুবই বিজি ছিলাম এতদিন পরে দেশে আসছি। সবাইকে নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম তাই তোমাকে আর কল করা হয় নাই সরি।
ফারিয়া মৃদু হেসে বললো,,,
ইটস ওকে বেবি আমি রাগ করিনি। কিন্তু তোমাকে খুব বেশী মিস করছি।তুমি কতো আমাকে এমনিতে মিস করো না তারওপর দেশে গেছো আমাকে আবার ভুলে যেওনা।
উত্তরেই ইহান কিছু বললোনা ফারিয়া নিজের মত বকবক করেই যাচ্ছে ইহান হু হাঃহাঃ বলে কথা শেষ করল।
ফারিয়া ইহানের গার্লফ্রেন্ড। এক বছর ধরে ওদের রিলেশন চলছে। ফারিয়ার বাড়ি ও বাংলাদেশে কিন্তু ওরা ফ্যামিলি সহ বিদেশে থাকে। ইহান ওইখানে যাওয়ার পর ফারিয়ার সাথে সাক্ষাৎ ফারিয়ার সাথে বন্ধুত্ব হয়।একদিন হুট করেই ফারিয়াকে প্রপোজ করে বসে সাথেসাথে না করে দেয় কারণ ফারিয়া প্রতি ওর কোন আকর্ষন ছিল না কখনই ওকে সেই হিসেবে দেখেনি সবসময় একজন ভালো বন্ধু হিসেবে দেখেছে।ফারিয়া মানতে নারাজ বাবা-মা একমাত্র মেয়ে হওয়ায় খুব আদরের হয়। এটা মানতে পারে না একদম ভেঙে পড়ে তবুও আমি মানতে পারিনা কারন ওর উপর আমার কোন অনুভূতি কাজ করে না।ও আমার হাতে-পায়ে ধরে বলে আমাকে ছাড়া বাঁচবে না কিন্তু আমি ওকে সাফ সাফ জানিয়ে দেয় দেখ ফারিয়া আমি তোমাকে শুধু একজন বন্ধু ভাবি এর থেকে বেশি কিছু আমি ভাবতে পারবোনা তোমাকে বন্ধু থেকে বেশি আমার কখনোই বেশি মনে হয় না।
ফারিয়া আমার হাত ধরে বলে,,,কিন্তু আমি যে তোমাকে অনেক বেশি কিছু ভাবি অন্তর থেকে ভালবাসি। প্রথম যেদিন তোমাকে দেখেছি সেদিনই হৃদয়ে স্থান পেয়েছো কিন্তু বলতে পারিনি ভেবেছি তোমার সাথে থেকে বন্ধু করে তোমার মনে জায়গা করে নেব। কিন্তু এতদিন আমি তোমার মনে একটু জায়গা করে নিতে পারিনি।এটা আমি মানতে পারছিনা তুমি আমাকে গ্রহণ করো প্লিজ আমি বাঁচতে পারব না তোমাকে ছাড়া।
নাকের জল চোখের জলে এক করে কেঁদে ভালবাসি বলেছিলো। তবুও আমি ওকে ফিরিয়ে দেয়। শুধু বন্ধু হিসেবে সাপোর্ট করে চলে এসেছি ভালবাসতে পারিনি।কেন যেন ওর প্রতি আমার ভালোবাসা টা আসেনি একজন বন্ধু হিসেবে যতটুক ভালোবাসা দরকার ততটুকু এর বেশি আমি করতে পারিনি।
সেদিন ফিরিয়ে দেওয়ায় পর অতিরিক্ত ভেঙে পড়ে আর জেদের বশে ফারিয়া মারাত্মক ডিসিশন নেয় সেটা হল সুইসাইডের করার চেষ্টা করে। এইটা শুনে আমার বুকের ভেতর ধক করে উঠে আমি ছুটি ওর হসপিটালে গিয়েছিলাম।
সেখানে যাওয়ার পর আমাকে সম্মুখীন হতে হয় অপমানের। সাথে দোষারোপ করতে থাকে এই অবস্থার জন্য দায়ী আমি ফারিয়ার কিছু হলে উনি আমাকে ছাড়বেন না।
কি করবো বুঝতে পারিনা। ফারিয়া আল্লাহর রহমতে সুস্থ হয় আর তারপর এক প্রকার বাধ্য হয়ে আমি ফারিয়াকে গার্লফ্রেন্ড হিসেবে এক্সসেপ্ট করি।একপ্রকার বাধ্য হয়ে আমি ফারিয়ার প্রপোজ একসেপ্ট করি।কিন্তু ওর জন্য আমার মনের কোণে একটু ভালোবাসাও তৈরি হয় না। ফারিয়া জোর করে আমার হাত ধরে ঘুরে আমার কাঁধে মাথা রাখতো তবু আমার দিক থেকে অনুভূতি শূন্য। ওকে আমি বন্ধুর চেয়ে বেশি কিছু ভাবতেই পারি না।
আমি খুব একটা দেখা করতাম না লেখাপড়ার চাপে এসব বলে ওর সাথে দেখা করাটা কমিয়ে দিলাম। ওদের পাশে আমার বাসা ছিল আমি সেইটাও সরিয়ে নিলাম কারণ এখন ওর অবস্থিত আমার বিরক্ত লাগত।
বাসা সরিয়ে আনার তিন মাস পর ওর সাথে দেখা করি তাও আমাকে ব্ল্যাকমেল করে দেখা করায়। দেখা হলেই জড়িয়ে ধরার জন্য কিস করা সুযোগ খুজতো আমি অনেক কষ্টে এসব থেকে বাচতাম।বিয়ের আগে আমি এসব কিছুই করতে চাইনা।এইসব বলতাম। কিন্তু ফারিয়া অন্য ধরনের। ও চাইতো অনেক কিছু করতে সাথে অন্য গার্ল ফ্রেন্ড বয় ফ্রেন্ড কে আমাকে দেখা তো। তারা তাদের গার্লফ্রেন্ডের সাথে খুব ফ্রি রাস্তাঘাটে চুম্বন করছে জড়িয়ে ধরছে। বিদেশ অবশ্য এসব রাস্তাঘাটে চলে। বিয়ের আগেই তারা বেড পার্টনার হয়েছে অনেকবার। অনেকবার আমাকে দিয়ে করাতে চেয়েছে কিন্তু আমাকে ফারিয়া বাগে আনতে পারত না।
দেশ আসা দুই মাস আগে তো আমাকে বলে ফেললো ফারিয়া,,
তুমি এখন ও আমাকে মন থেকে ভালবাসতে পারো নাই তাই না ইহান।
আমি সাথে সাথেই মাথা নেড়ে হ্যা বলাই জানিয়ে দিতেই ফারিয়া যেন বিষ্ময়ে চমক সীমায় পৌঁছে গেল।
তুমি এত তাড়াতাড়ি স্বীকার করতে পারলে।
যেটা সত্যি সেটা বলতে আমি কখনোই সংকোচ করিনা।
রাগ করে ফারিয়া এক সপ্তাহ আমার কথা বলিনি।ও ভেবেছিলাম হয়তো নিজে থেকে ফোন দিবো! কিন্তু আমার ওর সাথে দূরত্ব করতেই পছন্দ করি। আমি আর কথা বলার বা রাগ ভাঙ্গানোর জন্য ফোন বা দেখা করার চেষ্টাও করিনি। আমি আরো এক সপ্তাহ শান্তিতে ছিলাম। এক সপ্তাহ পরে সে নিজেই এসে সব মিটমাট করে চলে যায়। সাথে অভিমান করে বলে,,
তুমি আমাকে একটুও ভালোবাসো না ইহান। আমার কা কমতি বলো আমি যথেষ্ট সুন্দরী অনেক আমার জন্য পাগল তাহলে কেন বন্ধুর থেকে বেশি ভাবতে পারছো না।
আমি নির্বাক হয়ে ছিলাম কি বলবো।
তারপর আমাদের দেখা হয় না। শেষ দেখা এয়ারপোর্টে হুট করে এসে কেঁদে কেটে মুখ লাল করে ফেলে। আমি কেন বাংলাদেশে যাচ্ছি। বলে বলে মাথা খেয়ে ফেলে।
আমি একটা কথায় বলি। আমার তো যেতেই হবে এটা তো আমার দেশ নয় এখানের কিছুদিনের অতিথি মাত্র আমি।
তাহলে আমার কি হবে?
সেটা তুমি জানো।
আমার জন্য যদি আমাকে বাংলাদেশ যেতে হয় আমি তাই যাব। অপেক্ষা কর আমি খুব শিগ্রই দেশে আসব।
না আসলেও সমস্যা নাই।
কি বললে?
কিছু না বাসায় যাও।
আমি ওর সাথে আর কথা না বাড়িয়ে ভেতরে চলে যায়।
#চলবে
( আসসালামু আলাইকুম। কালকে একজন কমেন্ট করেছিলেন নায়ক-নায়িকার বয়সের ডিফারেন্স কত।
ইহানের বয়স ২৪। ঊষার বয়স ১৬। এবার আপনারাই ডিফারেন্স করে নেন। ধন্যবাদ সবাই আমার ভালোবাসা নিবেন।)
#এক_চিলতে_রোদ
#Writer_Nondini_Nila
#Part_7
পরীক্ষা অবশেষে এসেই পরল। রাতে খাবার শেষে বাসন ধুয়ে রেখে রুমে গিয়ে পড়তে বসলাম। ভালো মতো পড়তে পারি না সারাদিনে সময় হয়ে ওঠে না। একটার পর একটা কাজে লেগে থাকে বাড়িতে । নয়টায় পড়তে বসলাম কোথা দিয়ে একটা একটা বেজে গেলো বুঝতে পারি নাই। চোখ জ্বলে উঠছে আর বসে থাকলেই বোধহয় সকালে উঠতে পারবো না। বাধ্য বইখাতা বিছানার পাশে রেখেই শুয়ে পড়লাম ধপাস করে।
বিছানায় গা এলিয়ে দিতেই সারা রাজ্যের ঘুম এসে ভীড় করলো আমার চোখে।
রোদের ঝাপটা এসে চোখে উপর পরলো জানালার কাচ ভেদ করে। কাল জানালা অফ করতেই ভুলে গেছিলাম। কিন্তু মনে হচ্ছে এটা অফ না করেই ভালো হলো। কিন্তু তাও অনেক দেরি হয়ে গেছে যেখানে আমি ছয়টার আগেই উঠে পরি সেখানে আজ অনেক দেরি করে ফেলেছি আমার একটা ঘড়ি আছে সেটা হাতে নিয়ে আঁতকে উঠলাম। সাথে সাতটা বাজে। লাফিয়ে বিছানা থেকে নামলাম। এতো বেলা কখন হয়ে গেল আমার মনে হচ্ছে এই মাত্র তো ঘুমালাম। বাথরুমে গিয়ে কোন রকম চোখে পানি দিয়ে দৌড়ে বেরিয়ে এলাম তারাতাড়ি কাজ শেষ করতে হবে।
আজকে আমার পরীক্ষা আছে দশটা থেকে পরীক্ষা তাড়াতাড়ি কাজ শেষ করতে হবে। আমি জানি যে এগুলো আমার কাজ এগুলো কেউ ছুবেও না সেগুলো সেই ভাবে পড়ে থাকবে। বাইরে এসে ঝাড়ু নিয়ে দোতালায় চলে গেলাম। উপরে প্রত্যেকটা রুম ঝাড়ু দিয়ে এখন ইহান ভাইয়ের রুমের সামনে দাঁড়িয়ে আছি। সেই দিন রাতের পর আর ভাইয়ার সাথে আমার কথা হয় নি ভাইয়া কে দেখতে শুধু খাওয়ার টাইমে দেখিয়েছি। এছাড়া ভাইয়া বাসার বাইরে থেকেছে সব সময়। কালকে ইমা আপুর থেকে জানতে পারলাম ভাইয়া নাকি একটা কলেজে জব নিয়েছে তারা নাকি ভাইয়া অফার করেছিলো। তো ভাইয়া সেখানে জয়েন হয়েছে।
এজন্য আরো বাসায় থাকা হয়না। এটা অবশ্য আমার ভালোই হয়েছে।ওই দিনের পর আরো ভাইয়ের সামনে যেতে আমরা আরো বেশি লজ্জা লাগে। ভাইয়াকে দেখলে আমার হার্টবিট ফাস্ট হয়ে যায়। কেন এমন হয় বুঝি না সেতো আমার ভাই তাকে দেখলে আমার এত লজ্জা কেন পায়?লজ্জায় কুঁকড়ে থাকি কিন্তু অদ্ভুত ভাই আমার ভুল করেও তাকায় না!এই যেমন খাবার যখন টেবিলে রাখি। ভাইয়া খাবার টেবিলে একদম রেডি হয়ে বসে থাকে। কি সুন্দর লাগে দেখতে। ভাইয়ের দিকে তাকালে আমার বুকের ভেতরটা কেমন তোলপাড় শুরু হয়ে যায়। আমি লজ্জায় কুকড়ে ভাইয়ের দিকে আড়চোখে তাকায় কিন্তু অদ্ভুত ভাইয়া আমার দিকে তাকায় ও না কথাও বলে না।আগে যেমন ভাইয়া দেখা হলেই হাসত একটা দুটো কথা বলতো কিন্তু এখন ভাই আমার মুখের দিকেও তাকায় না। ব্যাপারটা আমার বোধগম্য হয় না আর আমি এতো পাত্তাও দিইনা।
ওদিকে আমার পরীক্ষার সময় হয়ে যাচ্ছে।এক সপ্তাহ ভাইয়ের রুমে আসেনি। ঝাড়ু দেয়নি। কোন ভাবে কাটিয়ে লতাকে দিয়ে ঝড়ু দিয়েছি। কালকে ও আমাকে বলে দিয়েছে ও আর আমার হয়ে ঝাড়ু দিতে পারবে না। ওকে নাকি আরো অনেক কাজ করায়। অবশ্য আমার চাচি কাউকে বসে খাওয়ায় না।একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে দিয়ে দরজা খুলে ভেতরে ঢুকলাম। অদ্ভুত ভেতরে ঢুকে ভাইয়াকে দেখতে পেলাম না।সারা রুমে চোখ ঘুরিয়ে ভাইয়াকে না পেয়েও কোথায় আছে জানার প্রয়োজন বোধ করলাম না। তাড়াতাড়ি ঝাড়ু দিতে লাগলাম তখনই বাথরুমের দরজা খুলে। ভাইয়া বাথরুম থেকে শুধু প্যান্ট পরে বেরিয়ে এলো। আমি আচমকা ভাইয়াকে খালি গায়ে দেখে আমার শরীর কাঁটা দিয়ে উঠলো। ভাইয়ার ফর্সা শরীরে বিন্দু বিন্দু পানি জমে আছে মাথা থেকে ফোঁটা ফোঁটা পানির নিচে পড়ছে। ভাই এর গালে খোঁচা খোঁচা দাড়ি তেও পানি লেগে আছে। আমি বিস্মিত হয়ে ভাইয়া দিকে তাকিয়ে আছি। ভাইয়া আমাকে দেখে চরম অবাক হয়তো আমাকে আশা করিনি। আমি লজ্জায় তাড়াতাড়ি মাথা নিচু করে ফেললাম। আর তাড়াতাড়ি ঝাড়ু দিতে লাগলাম।ভাইয়া তাড়াতাড়ি বিছানা থেকে নিজের শার্ট নিয়ে ভেজা শরীরেই পড়তে লাগলো। ভাইয়া হয়তো এভাবে আমার সামনে এসে লজ্জা পেয়েছে। আমি তাড়াতাড়ি কাজ শেষ করে দরজা খুলে বের হতে যাবে তখন ভাই আমাকে পেছন থেকে ডেকে উঠলো। ভাইয়ের কণ্ঠ শুনে আমি ওখানেই জমে দাঁড়িয়ে পরলাম।
পেছনে ঘুরার সাহস করলাম না।
ঊষার দিকে তাকা।
ভাইয়ার কথা শুনে চমকে উঠলাম। কিন্তু ভাইয়ার কথা অগ্রাহ্য করতে পারলাম না আমি আস্তে আস্তে ঘুরে দাঁড়ালাম মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছি। নিজের পায়ের বুড়ো আঙ্গুল ফ্লোরে শক্ত করে চেপে ধরে সেদিক তাকিয়ে আছি।
“জি ভাইয়া।
ভাইয়া আমার দিকে এগিয়ে এলো আমি বুঝতে পারছি নিচের দিকে তাকিয়ে থেকে ভাইয়ার ফর্সা পা দেখতে পেলাম। যা আমার দিকে অগ্রসর হচ্ছে আমার থেকে দুই পা পেছনে থেমে গেল।
ভাইয়া মৃদু সরে আমার দিকে গভীর ভাবে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল,,
আজকে না তোর পরীক্ষা আছে।
আমি মাথা নেড়ে হ্যাঁ বললাম।
তাহলে পড়া বাদ দিয়ে কাজ করছিস কেন?
আমি কি বলবো বুঝতে পারছিনা।
কি হল কথা বলছিস না কেন?
আমতা আমতা করে বললাম, জি আমার তো পড়া সব শেষ তাই আর এই সব তো আমিই করি না হলে আমার চাচি বকবে।
ভাইয়া আমার কথা শুনে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল বোধ হয়।
তোর উপর অনেক অত্যাচার করে আম্মু তাই না।
ভাইয়ার কথা শুনে আমি চমকে ভাইয়ের মুখের দিকে তাকালাম ভাই আমার দিকে অসহায় মুখ করে তাকিয়ে আছে।
চাচী আমাকে অত্যাচার নির্যাতন যাই করুক না কেন? তার আশ্রয় এই তো আমি বেঁচে আছি থাকতে পারছি খেতে পারছি। তার উপর আমার কোন রাগ নেই।
আমি মুখে হাসি ফুটিয়ে বললাম,, কই আমাকে তো খুব ভালোবাসে চাচী। অত্যাচার কেন করবে?
ইহান অবাক হয়ে বললো,
ভালোবাসে?
আমি বললাম,, হুম দেখেন না ভালো না বাসলে কি
আমি এই বাসায় থাকতে পারতাম। পারতাম না। খাচ্ছি পরছি সব তো তাদের জন্য তাই না।
কিন্তু আম্মু তো তোকে দিয়ে অনেক কাজ করায় তা তোর জন্য কষ্টকর।
হুম করায় তাতে কি এসব করে আমার খারাপ লাগেনা। আর লাগলেই বা কি এসব ধরতে নেই। অন্যের বাসায় থাকছি, খাচ্ছি, পরছি তাদের তাকায়, সব তো তাদের দয়া এসবের জন্য হলেও এইটুকু করা দরকার।
ভাইয়া আমার মুখের দিকে হা করে তাকিয়ে আছে।আমি চলে এলাম। যাদের খাচ্ছে যাদের দয়ায় আমি আছি বেঁচে তাদের বদনাম আমি করতে পারব না ভাইয়া। চাচা আমাকে যতই দূরে ছাই করুক তবুও তো তার কাছে থাকতে পারছি। তারা আমাকে লাথি-ঝাটা দিলেও বাসায়তো আশ্রয় দিয়েছে। না হলে কোথায় পড়ে থাকত না আমি।
নিচে আসতে চাচির মুখোমুখি হলাম চাচি আবার যা আসে তাই বলে বকাবাজি করতে লাগলো। আমি সেসব গায়ে মাখলাম না। রান্নাঘরে গিয়ে দেখলাম আজকে রান্না সব শেষ। বাসন মেজে নিয়ে টেবিলে খাবার দিলাম।
সবাই এসে বসেছে ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে আমার নজর আটকে গেল ভাইয়া সাদা শার্ট পরেছে হাতে ঘড়ি। কি যে সুন্দর লাগছে দেখতে আমি হাঁ করে তাকিয়ে আছি তখনই ভাইয়া আমার দিকে তাকিয়ে হাসলো আমি অবাক হলাম কতোদিন পর ভাইয়া আমার দিকে তাকিয়ে হাসলো ইশ কি মিষ্টি হাসি। ভাইয়া হাসলেই গালে টোল পরে যা আজকে বুঝা যায় হালকা দাড়ির জন্য হালকা কি সুন্দর হাসি।
ঊষা তুই ও আমাদের সাথে খেতে বস।
ভাইয়ার কথা শুনে থমকে গেলাম। চাচির দিকে তাকিয়ে দেখি রেগে ভাইয়ার দিকে তাকালো।
ও কেন আমাদের সাথে বসবে।ও রান্না ঘরে পথে লতার সাথে খাবে আমাদের পর।
ভাই বলল,, আমাদের সাথে বসলো সমস্যায় কি? আর আজকে ওর পরীক্ষা আগেই খেয়ে কিছুক্ষণ পরে না হয় পরীক্ষা দিতে যাবে পরে খেলে তো অনেকটা সময় চলে যাবে।
চাচি গম্ভীর গলায় বলল, সেসব আমার দেখার বিষয় না। ও আমাদের সাথে খেতে পারবে না ব্যস।
ভাইয়া কিছু বলতে যাবে তখন ইমা বলল,,
মা এমন করছ কেন বলতো খেতে দাও না। আজকে একটু আজকে থেকে পরীক্ষা শুরু হচ্ছে আজকে অন্তত ঝামেলা করো না আমার পাশে বসতো ঊষা আয়।
আমি সাথে সাথে মাথা নেড়ে বললাম,, আপু আমার কোন দেরি হচ্ছে না তোমরা খাও। আমি পরে খেয়ে নেব লতার সাথে।
আপু আমার কথা শুনল না উঠে এসে আমাকে জোর করে টেনে খাবার টেবিলে বসালো। আমি চমকে হতদম্ব হয়ে বসলাম ভয়ে ভয়ে সবার দিকে তাকাচ্ছি। তখনি চাচী চিৎকার করে বলে উঠলো,
এই অলক্ষণের বাচ্চা এখানে বসলে আমি এই খাবার টেবিল ছেড়ে উঠে যাব।
চাচির কথা শুনে আমার আত্মা কেঁপে উঠল। থমকে আমি টেবিল ছেড়ে উঠে দাড়ালাম।চোখ ঝাপসা হয়ে গেল আমি আর কারো দিকে না তাকিয়ে দৌড়ে নিজের রুমে চলে এলাম।
#চলবে