এক_চিলতে_রোদ,Part_8,9

0
1261

#এক_চিলতে_রোদ,Part_8,9
#Writer_Nondini_Nila
#Part_8

কিরে মুখটা এতো শুকনো লাগছে কেন তোর মনে হচ্ছে খাচ্ছনি কিছু আজ।আর চোখ গুলো কেমন ফুলে আছে যেন কান্না করেছিস? কাল হয়েছে রে আজকেও তোর ওই শয়তান চাচী তোকে বলেছে তাই না ঊষা?
কথাটা আমার দিকে তীক্ষ্ণ নজরে তাকিয়ে বলল নিশা। নিশা আমার একমাত্র ফ্রেন্ড। ওকে কিছু বলার আগেই বুঝে যায় সব। মেয়েটা খুব ভালোবাসে আমাকে।
ও জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আমার দিকে আমি শুকনো মুখেই হাসি টেনে বললাম,
কই নাতো, কিছু হয়নি আমার?পরীক্ষার জন্য চিন্তা করছি তাই আমার মন খারাপ।
ও পেছনে থেকে উঠে এবার আমাকে ঠেলে ব্রাঞ্চের কিনারে থেকে ভেতরে ঢুকিয়চ আমার পাশে বসে বলল,,
একদম আমার সাথে চালাকি করতে আসবি না। আমি খুব ভাল করেই জানি তোর ওই চাচী কিছু করেছে। সকালে খেয়ে ও আসিস নি তাইনা।
সত্যি আমি সকালে খেয়ে আসি নি খাব কিভাবে ওই সবের পরে কি খাওয়া যায়?
আমি তখন দৌড়ে নিজের রুমে এসে কান্না করেছিলাম। তারপর নিজেই নিজেকে সান্ত্বনা দিয়ে কান্না থামিয়ে ফেলি।আমার নিজেকেই নিজের সান্তনা দিতে হবে এটাই স্বাভাবিক আমার তো আর কেউ নাই। তারপর দেখি নয়টা বেজে গেছে। তাড়াতাড়ি কোনরকম রেডি হয়ে ব্যাগ নিয়ে বেরিয়ে আসি। আসার সময় একবার আমার নজর টেবিলে গিয়ে ছিল অদ্ভুত তখন দেখতে পেয়েছিলাম ভাইয়া টেবিলে নাই। আমি এত কিছু না ভেবে হেঁটেই কলেজে চলে আসি হেঁটে আসার জন্য আধা ঘন্টা উপরে লাগে আসতে।
আসার পর ক্লাসে বসে পরি পরিক্ষা শুরু হতে আরো পনেরো মিনিট আছে আর নিশা আসে নি মন খারাপ করে বসি ছিলাম তার একটু পরেই নিশা আসে আর আসার পর থেকেই আমাকে মনখারাপের কারণ খুঁজে যাচ্ছে।
নিশার কথার মাঝে বেল পর আমার পেছনে গিয়ে বসে পরে।
আমার পাশের জন এখনো আসেনি ব্রাঞ্চের দুই পাশে দুজন করে বসেছে। স্যার এসে সবার সিটে খাতা দিয়ে দিল। মন খারাপ যতই হোক সেইসব এক পাশে ফেলে রেখে পরীক্ষা দিতে মনোযোগী হলাম।
15 মিনিট পর দৌড়ে হাঁপাতে হাঁপাতে দরজার কাছে এসে দাড়ালো আমার পাশের জন্য। সে নাকি জ্যামে আটকে ছিল।
2 ঘন্টা পরীক্ষার পরে বুঝতে পারলাম পেটের ভেতর তীব্র ব্যথা অনুভব হচ্ছে। গলা শুকিয়ে আসছে সকালে না খাওয়ার জন্য মাথা ঘোরাচ্ছে। দুই মিনিট চোখ বন্ধ করে থেকে লিখতে বসলাম। কোনরকম তিন ঘন্টা পরীক্ষা দিয়ে বাইরে এসে পানি খেলাম অনেকখানি। যেন এই পানি দিয়ে আজকে পেট ভর্তি করার ইচ্ছা। কিন্তু পানি যতই খাও পেট তো ভরতি হবে না।

ইহান দুটো ক্লাস করিয়ে বেরিয়ে এসেছে ক্যান্টিনে বসে আছে। কফি অর্ডার দিয়ে কফি খাচ্ছে। আর ঊসার কথা ভাবছে আজকে ওর জন্য ঊষাকে এইভাবে কষ্ট পেতে হলো। ও যদি ওকে খেতে না বলতো তাহলে ওকে ঐ সব শুনতে হতো না। ঊষার চোখের জল পানি বেয়ে পড়ছিল ও কিছু তেই ওই চোখের জল সহ্য করতে পারছে না। ওর বুকের ভেতর রক্তক্ষরণ হচ্ছে।কফিতে একবার চুমুক দিয়ে চোখ বন্ধ করতেই ওর চোখে ঊষার কান্না মাখা মুখটা মনে পরলো মেয়েটার আজকে পরীক্ষা আর আজকেও এতটা কষ্ট পেল।
নিজেকে খুব অপরাধী লাগছে। চোখ খুলতেই সামনে তাকিয়ে দেখে কলেজের স্টুডেন্ট সেকেন্ড ইয়ার এর কিছু মেয়ে ওর সামনের সিটে বসে সিঙ্গাড়া খাচ্ছে আর অর দিকে কেমন করে যেন তাকিয়ে আছে ওর কিছুটা আনইজি ফিল হলো। এইখানে জয়েন হওয়ার পর থেকেই ঝামেলায় পড়েছি। যেখানে যায় মেয়েরা এমন ভাবে তাকিয়ে থাকে ওর যেন এলিয়ান আর মেয়েগুলো এমনভাবে চেপে ধরে।টিচারের সাথে কোন স্টুডেন্ট এরকম করতে পারে জানা ছিলনা মেয়েগুলো এত গায়ে পড়া বিরক্তে ওর কপাল কুচকে আছে সব সময়।কিন্তু সব মেয়ে এক রকম না বিশেষ করে ওর সামনে যে দল বসে আছে এই দলটা একটু বেশি বেয়াদব। প্রথম দিন থেকেই কেমন চিপকে থাকতে চাই। আমি তাকাতেই সবগুলো আমি হেসে উঠল তারপর ওদের মধ্যে মনে হয় লিডার সেই মেয়েটা হাসি হাসি মুখের সামনে দাঁড়িয়ে বলল আসসালামু আলাইকুম স্যার, কেমন আছেন?
মেয়েটার দিকে তাকিয়ে হাসার ইচ্ছে ছিলনা তবু হালকা হেসে সালামের উত্তর দিয়ে ভালো আছি বললাম।
আচমকা মেয়েটা প্রশ্ন করার ছিল স্যার আপনি কি বিয়ে করেছেন?
মেয়েটার হাবভাব একদমই ভালো লাগছে না আমি চমকিত হয়ে মেয়ে দিকে তাকিয়ে আছি। কত বড় বেয়াদব এসে সরাসরি বিয়ে করেছে কিনা জিজ্ঞেস করছে? এইদিকে ও ঊষার কথা ভেবে মাথা খারাপ হচ্ছে। তারপরে আবার এই মেয়ে যন্ত্রনা ইহান রেগে দাঁড়িয়ে পরল তারপর গটগট করে ক্যান্টিন থেকে বেরিয়ে এলো।
পরীক্ষা দিয়ে বাসায় এসেছি তিনটার সময়। আসার পর গোসল করে যা ছিল তাই খেয়ে নিয়েছি তারপরে রুমে এসে পড়তে বসলাম কারণ কালকে পরীক্ষা আছে। চাচি বাসায় নেয় আজকে সকালেই নাকি সে তার বোনের বাসায় গেছে আজকে নাকি সেখানেই থাকবে। কাল আসবে।
বাসায় এখন আমি একাই।
কলিং বেলের শব্দে রুমে থেকে বেরিয়ে দরজা খুললাম দরজার ভাইরে দাঁড়িয়ে আছে। ভাইয়া আমার দিকে একবার অপরাধীর মতো তাকিয়ে উপরে চলে গেল।
লতা গোসল করতে গিয়েছে এখন ভাইয়া খাবে কিনা জানার জন্য আমাকেই যেতে হবে তার তাই আমি ধীর পায়ে ভাইয়ার রুমে গিয়ে নক করলাম ভাইয়া ভেতরে আছে। আমাকে ভেতরে যেতে বলল আমি ভেতরে না গিয়ে দরজায় থেকে জিজ্ঞেস করলাম,
ভাই আপনার জন্য কি খাবার রেডি করব?
ভাইয়া শাটের বুতাম খুলছিল আমি ভেতরে যাচ্ছি না দেখে ওইভাবেই ভাইয়া দরজার কাছে এসে আমাকে ভেতরে যেতে বলেছে। আমি ইতস্তবোধ করতে লাগলাম। বুঝতে পারছিনা ভাইয়া ভেতরে কেন যেতে বলছে।
কিন্তু ভাইয়ার কথা ফেলতে পারলাম না ভেতরে গিয়ে জড়োসড়ো হয়ে দাঁড়ালো।
ভাইয়া আমার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। আমি নিচের দিকে তাকিয়ে এদিক ওদিক তাকাতাকি করছি।আচমকা ভাইয়া আমার কাছে এসে মুখ ছোট করে সরি বললাম।
আমি চমকে মাথা তুলে ভাইয়ের মুখে তার দিকে তাকালাম। ভাইয়া অপরাধী মত আমার দিকে তাকিয়ে আছে যেন খুব বড় অন্যায় করেছে সে আমার উপর।
মানে। অবাক হয়ে।
সরি আমার জন্য তোকে সকালে এত কষ্ট পেতে হলো।
আমি বিশ্মিত হয়ে ভাইয়া দিকে তাকিয়ে আছি।
আমি সত্যি চাইনি তুই এভাবে মার কাছে অপমানিত হচ্ছ।
ভাইয়া মুখটা মলিন করে আমার তাকিয়ে আছে। ভাইয়া আমার জন্য কষ্ট পাচ্ছে। আমাকে সরি বলছে। এই সবকিছু জানো আমার জন্য স্বপ্ন আচমকা ভাইয়ের মুখে এই সরিটা শুনে আমার বুকের ভেতরে তোলপাড় শুরু হয়ে গেল। ভাইয়ের মুখে আমার জন্য কষ্টের ছায়া দেখতে পেয়ে বুকের ভেতর যেন সুখের অনুভূতি হতে লাগল। আমি মায়া ভরা চোখের দিকে তাকিয়ে আছি ভাইয়ের দিকে।
ভাইয়া ও আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি কিছু না বলেই দৌড় বেরিয়ে এলাম ভাইয়ার কাছে গেলেই আমার কেমন কেমন জানি লাগে। বুকের ভেতর ধড়াস ধড়াস করে অস্থির লাগে।ভাইয়ার গভীর ভাবে তাকানো দেখলে দম বন্ধ হয়ে আসে।
ভাইয়া আমাকে সরি বলল খুশি আমার মনটা নেচে উঠল।
নিচে গিয়ে ভাইয়ার জন্য খাবার রেডি করলাম। রেডি করতেই ভাইয়ার ট্রাউজার আর কালো গেঞ্জি পরে নেমে এলো চুল হালকা ভেজা গোসল করেছে বোধহয়।
ভাইয়ার দিকে তাকাতেই হার্টবিট বেড়ে গেল আমি নিচে দিকে তাকিয়ে আছি। ভাইয়া এসে বসে আমার দিকে তাকিয়ে বলল,
তুই খাইছিস?
আমি মাথা নেড়ে সায় দিলাম।ভাইয়ার খেতে লাগলো আমি রান্না ঘরে যাব তখন ভাইয়া ডেকে উঠলো আমি থম কে দাঁড়িয়ে পরলাম।
তোর পরিক্ষা কেমন হয়েছে?
আমি না তাকিয়ে বললাম,
মোটামুটি।
ভাইয়া বলল, মোটামুটি কেন? ভালো হয়নি।
আমি কিছু বললাম না।
ভালো হবে কিভাবে না প্রাইভেট পড়ি না। আর পরার সময় ও পায়ন না রাত একটু পড়ি তাও ক্লান্তিতে বেশি পড়তে পারিনা ক্লান্তিতে ঘুম চলে আসে।
আজকে তো ইংরেজি গেল বুঝলাম না প্রথম দিন ইংরেজি কেন দিল? সবসময় সবার প্রথম পরীক্ষা হয় বাংলার আমাদের হয় ইংরেজি কপাল আমার।

#চলবে

#এক_চিলতে_রোদ
#Writer_Nondini_Nila
#Part_9

লতাকে দিয়ে অনেক জামা কাপড় ধুয়েছে চাচী। বোনের বাসায় যাওয়ার আগে দিয়ে গেছিলো সেই সব ধুয়ে শুকাতে দিয়ে ছাদে। ভাইয়া খেয়ে যাওয়ার পর আমি খাবার রেখে নিজের রুমে আসি অদ্ভুত আজ লতা আমার রুমে আসে না এমনিতে প্রতিদিন এসে বকবক করতেই থাকে তাই সন্ধ্যায় আগেই ওর কাছে গিয়ে দেখি মাইয়া কাঁথা গায়ে দিয়ে জড়িয়ে পড়ে আছে আমি গিয়েই বলি,
” এই লতা এই সময় শুয়ে আছিস কেন?”
লতা আদোআদো চোখ মেলে তাকায় আমার কেন জানি মনে হচ্ছে ঠিক নেই আমি ওর পাশে বসে ওর কপালে হাত রাখতেই আতকে উঠি জ্বরে গা পুড়ে যাচ্ছে।
“ঊষা রে একটু ছাদে গিয়ে জামা কাপড় নিয়ে আয় আমি উঠত পারছি না।”
“উঠবি কেমনে তোর গা তো জ্বরে পুড়ে যাচ্ছে রে।এতো জ্বর বাধালি কি করে?”
“ম্যাডাম আমারে এতো জামাকাপড় দিয়ে গেছিলো তোরে নিয়ে ধুইতে।তোর তো পরিক্ষা তাই আমি একাই করছি সব তাই এই অবস্থা।”
“তুই একা কেন করলি আমিও করতাম।”
“না রে ম্যাডাম ইচ্ছে করে দিছিলো যাতে তুই পরতে না পারিস। তোর মে পরিক্ষা।”
“তাই তুমি এইভাবে একা করলি এখন তোর যে গা পুড়ে যাচ্ছে জ্বর এ।”
“গরিবের আর জ্বর যার বাপ মায় খোঁজ নেয় না।তোর তো বাপ মা নাই কিন্তু আমার তো আছে। ক‌ই তারা তো আমার খোঁজ নেয়না‌। বাপে নিজের মতো মদ গাঁজা খাইয়া প‌ইরা থাকে। মায় অতিষ্ঠ হয়ে আমারে ম্যাডামের কাছে দিয়ে গেছে কাজ করিয়া তিনবেলা খাইতে দিতে সেই যে দিয়া গেল আর আইলো না রে। কতো কান্দি তাগো লিগা কিন্তু আর আইলো না।”
“কান্দিস না। আমি তোর জন্য নাপা নিয়ে আসি দাঁড়া।”
“তুই নাপা ক‌ই পাবি।”
“ইমা আপু তো নাই ইলা আপুর তো বললি মার সাথে গেছে। আমি ইহান ভাইয়ের কাছে থেকে আনি।”
“দরকার নাই তোরে যদি বকে।”
“বকবো না।”
আমি উঠে ছুটে ভাইয়ার রুমের কাছে এলাম ভেতরে গিয়ে দেখি কেউ নাই গেল কোথায়? আমি বারান্দায় যায় সেখানেও নাই কি মুশকিল গেল কোথায়? ছাদে যায় নি তো!
রুমে থেকে বেরিয়ে দৌড়ে দিলাম ছাদের দিকে দ্রুত গতিতে সিঁড়ি বেয়ে উপরে যাচ্ছি তখন‌ই উপর থেকে ইহান ভাই নিচে নামছিলো আমার সেদিকে নজর নেই আমি তারাতাড়ি উঠছি তখন সামনে কারো সাথে জোরে ধাক্কা খেলাম। সামনের লোকটার বুকের সাথে ধাক্কা খেয়ে আমি পা ছিলিপ করে নিচে পরে যেতে নেই। আমি চিৎকার করে ভয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলি কিন্তু আল্লাহ বাঁচিয়েছে কেউ একজন আমার কোমর জড়িয়ে ধরে নিজের সাথে মিশিয়ে নিয়েছে তারাতাড়ি। যার জন্য আমি ওই উপর থেকে সিড়ির নিচে পড়া থেকে বাঁচালাম। ভয়ে আমার হাত পা থরথরিয়ে কাঁপছে। আমি দুহাতে সামনের লোকটার বুকের উপর রেখে শার্ট খামচে ধরে আমি।
সামনের লোকটা আমার দিকে হা করে তাকিয়ে আছে।আমি ভয় সংযত করার চেষ্টা করে আস্তে আস্তে চোখ পিটপিট করে তাকালাম। চোখ মেলেই সামনেই ইহান ভাইয়ার মুখটা চোখে পরলো ভাইয়া আমাকে নিজের সাথে চেপে ধরে আছে।সাথে গভীর দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।আমি সেই চোখে তাকিয়ে যেন হারিয়ে গেলাম। ভয় এখন লজ্জা হয়ে ধরা দিলো আমি লজ্জামাখা মুখ করে ভাইয়ার চোখের গভীর দৃষ্টির দিকে তাকিয়ে আছি‌।
আমি আমতা আমতা করে বললাম,, ” ভাইয়া ছারুন আমি ঠিক আছি।”
কথাটা ভাইয়ার কানে যেতেই ভাইয়া হকচকিয়ে ছেড়ে দিলো কিন্তু ভুল হয়ে গেল। আমি এখনো কিনারায় যার জন্য ভাইয়া ছাড়তেই আবার পড়ে যেতে নেয় এবার আমি ভাইয়ার গলা জড়িয়ে ধরি। হয়ে আমি শেষ।
ভাইয়া ব্যাপারটা বুঝতে পেরে আমার কোমর শক্ত করে ধরে ঘুরিয়ে পাশে দাঁড় করায় আর নিজের ধরা হাত ছেড়ে দেয়।
আমি অবাক হয়ে ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে আছি কিন্তু এখনো ভাইয়ের গলা ছাড়িনি। আসলে আমার ছারার কথা মনেই নেয়।
“ছার এবার পরবি না।”
ভাইয়ার কথা শুনে ভালৈ করে তাকিয়ে ফট করে হাত সরিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়ায় ইশ কি লজ্জা আমি পা উঁচু করে ভাইয়ার গলা ধরে তার এতো কাছে ছিলাম। লজ্জায় আমার কান গরম হয়ে আসছে। মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে লজ্জা কাচুমাচু করে বললাম আছি।
“এভাবে ছুটছিলি কেন ?এখনি তো অঘটন ঘটতো একটা?”
আমি হকচকিয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে আছি।
তারপর আমতা আমতা করে বললাম,
” আসলে আমি….
“আসলে কি?”
ভাইয়ার গম্ভীর কন্ঠ শুনে আমি ভয় পেয়ে গেলাম।
ভাইয়া নিজের কন্ট্রোল করে বলল,,
“এখান থেকে পরে গেলে কি হতো ভাবতে পারছিস?”
“সরি আমি বুঝতে পারিনি। আসলে লতার চিন্তায়?”
ইহান ভ্রু কুঁচকে বলে, “কেন? লতার কি হয়েছে?”
“লতার খুব জ্বর ওষুধ লাগবে তাই।”
“আচ্ছা চল।”
বলেই ভাইয়া নিচে নেমে গেল।আমি কি মনে করে ছাদে গেলাম তারপর জামা কাপড় তুলে নিচে আসলাম।
ভাইয়া ড্রয়িং রুমে বসে আছে আমি যেতেই বললো “চল।”
আমি আগে যাচ্ছি ভাইয়া পেছনে।ভেতরে এসে ভাইয়া আমার হাতে একটা সিরিজ এর মতো কিছু দিলো এটা দিয়ে জ্বর মাপে তা জানি কিন্তু নামটা কি? বাবার মাঝে ভাইয়া বলল,,
“থার্মোমিটার দিয়ে দেখ তো কতো জ্বর।”
আমি শুনেই ওইটা লতার মুখে দিলাম ভাইয়া দাঁড়িয়ে আছে।লতা ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে।ভাইয়া দেখে ট্যাবলেট দিয়ে চলে গেল।
“এই তুই এখনো।”
“আমার না ইহান ভাইজান রে দেখলেই লজ্জা লাগে।”
লতার কথা শুনে বিরক্ত হয়ে ওর দিকে তাকালাম তারপর ওকে ওষুধ খাইয়ে চলে এলাম চাচা চলে এসে। ইমা আপু ও এসেছে।
কাল বাংলা তাই অতো না পরলেও চলবে। রুমে এসে পরে আবার সবার খাবার রেডি করলাম দশটায়।‌ লতার খাবার রুমে দিয়েছি।
সবাই নিজেদের মতো খেয়ে চলে গেলে আমি রান্না ঘরে গিয়ে খেতে লাগি তখন হঠাৎ কারো আওয়াজ শুনে চমকে মাথা তুলে দেখি ইহান ভাইয়া রান্না ঘরের দরজায় দাঁড়িয়ে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। ভাইয়া এখানে কি করছে ভেবে পাচ্ছি না আমি জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি।ভাইয়া আমার তাকানো দেখেই সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে বলে আমার জন্য এক কাপ কফি করে দিস রুমে।
বলে আমার উত্তর এর অপেক্ষা না করে হনহন করে চলে যায়।ভাইয়ার মুখটা কেমন রাগি লাগছিল কিন্তু কেন?
ধুর ছাই থাক গা আমি খাওয়া শেষ করে কফি করে ভাইয়ার রুমে আসি। ভাইয়া রুমে নেই গেল ক‌‌ই।
তখন ভাইয়া বারান্দায় দেখে আমাকে ডেকে উঠে,
আমি ধীর পায়ে বারান্দায় আসি।
ভাইয়া কফি নিয়ে চুমুক দেয় আমি চলে আসতে গেলে ভাইয়া ডেকে উঠে,
চমকে উঠে বলি কি? আমার হার্টবিট দ্রুত গতিতে লাফাচ্ছে। আমি দাঁড়িয়ে থাকতে পারছিনা ভাইয়ার কাছে এলেই এমন হয় কেন? ভাইয়া আমাকে কেন ডাকলো?
” কিছু বলবেন?”
ভাইয়া কফি পাশে রেখে উঠে দাঁড়ালো আর আমার মুখোমুখি হয়ে দাঁড়িয়ে বলল,
” তুই শুধু ডাল দিয়ে ভাত খাচ্ছিলি কেন?”
হকচকিয়ে ভাইয়ার মুখের দিকে তাকালাম।এটা জিজ্ঞেস করার জন্য কি ডাকছে ভাইয়া।
“কেন কি হয়েছে?”
“কি হবে মাছ, মাংস থাকতে শুধু ডাল কেন খেলি।”
“এমনি!”
“তোকে কি মা খেতে মানা করেছে?”
আমি ছলছল চোখে ভাইয়ার দিকে তাকালাম। চাচী মানা করেনি কিন্তু খেতেও দেয়নি যেমন আমার আর লতার জন্য কখনো মাছ বেশি দেওয়া হয় না। বাসার সবার মধ্যে যদি কেউ না খায় তখন ওইটা বাঁচে আর আমি আর লতা তখন একজন খাই। আজকে চাচী তিন টুকরা মাছ রেখে গেছিলো। রাতে সবাই একটা করে শেষ আমরা কি খাব?
আর মাংস খেয়েছি কিন্তু গোছত ছিলো না জুল আর ডাল খেয়েছি।
ইহান তাকিয়ে আছে ঊষার দিকে। ও বারান্দা অন্ধকার করে বসে ছিলো তবুও হালকা আলোয় দেখতে পাচ্ছে ঊষার চোখের জল তা দেখেই ওর বুকের ভেতরটা ধক করে উঠে।এই জল কিছু তেই ও সহ্য করতে পারে না। কিছু বলার আগেই ঊষা দৌড়ে বেরিয়ে এলো।ইহান ঊষার যাওয়ার পানে তাকিয়ে আছে।

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here