#এক_চিলতে_সিঁদুর
#পর্ব_০২
#অধির_রায়
নিয়তির বাবা রুমের ভিতরে পা রাখতেই নিয়তি দৌড়ে তার বাবাকে জড়িয়ে ধরে৷ নিয়তি তার বাবাকে জড়িয়ে ধরেই হাউমাউ করে কাঁদতে শুরু করে৷ বাবা মায়ের ভালোবাসাই কোন খুঁত নেই৷ নিয়তির বাবা নিয়তির মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে৷ এতে নিয়তির বিশ্বাস হয় তার বাবা নির্বণের বিষয়ে কিছু জানে না৷ নির্বণ তাকে সব মিথ্যা বলেছে৷ নিয়তির অটুট বিশ্বাস ভেঙে দিয়ে নিয়তির বাবা অভিনয়ের সাথে ন্যাকা কান্না করে বলে উঠেন,
“ভাগ্য আমরা নির্ণয় করতে পারি না৷ তোমার ভাগ্যে যা ছিল তাই হয়েছে৷ এমন বাজে ছেলের সাথে তোমাকে আর থাকতে হবে না৷ যে ছেলে বিয়ের দুই দিন পর ডিভোর্স দেয়৷ তার সাথে না থাকাই ভালো৷ তোমাকে আর আমি এখানে রেখে যাব না৷”
.
নিয়তি তার বাবার কথা শুনে বড় ধরনের একটা শকট খায়৷ নিয়তি বুঝতে পারছে না এই লোকটাই তার বাবা৷ শেষে কিনা নিজের বাবাই নিজের জীবনের সাথে এত বড় খেলা খেললো। নিয়তি তার বাবাকে ছেড়ে দিয়ে দুই কদম পিছিয়ে যায়৷
.
নিয়তির বাবা ডেভিল মার্কা মুচকি হাসি দিয়ে,
“নিয়তি আমি এই নির্বণকে কিছুতেই ছাড়বো না৷ আমি নির্বণকে জেলের ভাত খাইয়েই ছাড়বো৷ আমার মেয়ের জীবনের বারোটা বাজিয়ে সে কখনো শান্তিতে থাকতে পারবে না৷”
.
নিয়তি আরও জোরে চিৎকার করে হাউমাউ করে কেঁদে ফেলে৷ আর কষ্ট লুকিয়ে রাখতে পারলো না৷ হাত পা ছড়িয়ে ফ্লোরে বসে পড়ে। নিয়তি বুঝতে পারছে না সে এখন কি করবে? সে তার বাবার সাথে চলে যাবে নাকি নির্বণের সাথে থেকে যাবে৷ কিভাবেই নির্বণের সাথে থাকবে?তাদের তো বিয়েই হয়নি৷ আর তার বাবার সাথেই কিভাবে যাবে? তার বাবা আবার কোন বড়লোকের ছেলের কাছে বিক্রি করে দিবে না তো৷ নির্বণ এবং নিয়তির বাবা দুই জনেই নিয়তির কাঁধে হাত রাখে৷ নিয়তি নির্বণকে জড়িয়ে ধরে। এতে নির্বণ অনেক ভয় পেয়ে যায়৷ মিনিট পাঁচেক পর নিয়তি চোখের জল মুছে উঠে দাঁড়ায়।
.
নিয়তি নিজেকে স্বাভাবিক রেখে বলার চেষ্টা করে,
“বাবা আপনি আমার চোখের সামনে থেকে এখনই চলে যান৷ আমি কিছু করে বসি তার আগেই আপনি চলে যান।”
.
সোনা সব কিছু বিধাতার হাতে ছেড়ে দাও ৷ এমন করে না৷ আসো আমরা বাড়িতে চলে যায়৷
.
নিয়তি ক্ষোভ নিয়ে ঘৃনার সাথে তিক্ত স্বরে,
“ছি! বাবা। আপনি আপনার আদরের মেয়ের সাথে এমন ব্যবহার করতে পারলেন৷ আমি আপনাকে খুব বিশ্বাস করতাম৷ আপনার কথা অন্ধের মতো বিশ্বাস করতাম৷ কোনদিন ভালোবাসায় ত্রুটি রাখিনি। কিন্তু আজ আপনাকে ততটাই অবিশ্বাস ও ঘৃণা করি৷”
.
নিয়তির বাবা চোখ পাকিয়ে,
“আমি এই নির্বণকে ছাড়বো না৷ এর জন্য আজ আমার মেয়ে পাগল হয়ে গেছে।”
.
নিয়তির বাবা নির্বণের দিকে তেড়ে গেলে নিয়তি নির্বণের সামনে দাঁড়ায়৷ নিয়তি চোখ রাঙিয়ে বলে উঠে,
“আমার স্বামীর গায়ে ফুলের টোকাও দেওয়ার চেষ্টা করবে না৷”
.
নিয়তির বাবা চকিত হয়ে,
“তোমার স্বামী মানে? তোমাদের তো ডিভোর্স হয়ে গেছে।”
.
নিয়তি মুচকি হেঁসে,
“বাবা আপনি মনে হয় পাগল হয়ে গেছেন৷ বাংলাদেশে এমন কোন কোর্ট নেই যেখানে বিয়ের দুই দিন পর ডিভোর্স পেপার তৈরি করা যায়৷ আর হ্যাঁ আমার স্বামী আমাকে কোন ডিভোর্স দেয়নি।”
.
নিয়তির কথা শুনে নির্বণ, নিয়তির বাবা দুই জনই অবাক৷ নির্বণ বুঝতে পারছে না নিয়তি কেন এমন কথা বলছে৷ নিয়তির বাবার মুখটা দেখার মতো হয়েছে৷ বাংলার পাঁচের মতো মুখ কালো করে অদূরে দাঁড়িয়ে আছে৷ মেয়ের সামনে নিজের মুখোশ খুলে পড়ে যায়৷
নিয়তি ঘৃণার সাথে বলে উঠে,
“আপনি আমার জন্মদাতা পিতা হয়ে আমার সাথে এমন করতে পারলেন৷ আপনাদের জন্যই পৃথিবীর অনেক মেয়ে তাদের আত্নীয় স্বজনদের বিশ্বাস করতে পারে না৷ আপনাকে আমি এক মিনিট সময় দিচ্ছি এর মাঝেই এখান থেকে বের হয়ে যান৷”
.
নিয়তির বাবার মুখ নিচু হয়ে যায়৷ নিয়তি বাবা নির্বণের দিকে আঙ্গুল তুলে চলে যান৷ নিয়তি কান্নায় ভেঙে পড়ে৷ নির্বণ নিয়তির কথা শুনে একটা ঘোরে চলে যায়৷ নির্বণ বুঝতে পারছে না সে কি করবে? নির্বণ কাঁপা কাঁপা হাতে নিয়তির কাঁধে হাত রাখে৷ নিয়তি নির্বণের হাতের স্পর্শ পেয়ে নির্বণকে জড়িয়ে ধরে। নিয়তি হাউমাউ করে কান্না করে দেয়৷ নির্বণ কি বলবে বুঝতে পারছে না৷
.
নিয়তি কান্না জড়িত কন্ঠে বলে উঠে,
“প্লিজ আমাকে তাড়িয়ে দিবেন না৷ আমি জানি আমাদের বিয়ে হয়নি৷ কিন্তু আমাদের মাঝে সব হয়ে গেছে। আমি আমার জীবনের সবটুকু অংশ আপনাকে দিয়ে দিছি৷”
.
নির্বণ কোমল কন্ঠ বলে উঠে,
“প্লিজ নিয়তি আমি তোমার সাথে যা করেছি আমার চাহিদা মেটানোর জন্য করেছি৷ আমি চাহিদা মেটানোর জন্য সব করতে পারি৷ আমি জানি তোমার সাথে অন্যায় করেছি৷ কিন্তু তোমাকে আমার সাথে রাখা সম্ভব নয়৷”
.
প্লিজ আমাকে তাড়িয়ে দিবেন না৷ আমাকে তাড়িয়ে দিয়ে আমি কোথায় যাবো? এখান থেকে বের হলে আমার মারা যাওয়া ছাড়া কোন উপায় থাকবে না৷
.
নির্বণ উপরের দিকে তাকিয়ে আছে। নিয়তির ইনোসেন্ট মুখ দেখে মায়া হচ্ছে৷ আবার নিয়তির প্রতি বিরক্ত চলে আসছে৷ আজ নিয়তির যা হয়েছে সব নির্বণের জন্য হয়েছে৷ নির্বণ একবার নিজেকে অপরাধী ভাবছে৷ এটাও মাথায় আসছে, ‘যা করেছে সব নিজের টাকা দিয়ে করেছে৷’ আবার এটাও মাথায় আসছে৷ চরিত্র সবকিছুর ঊর্ধ্বে। চরিত্রের সামনে বাড়ি গাড়ি টাকা পয়সা সব অচল৷ নির্বণ দুই নৌকায় পা রেখে চলছে৷
.
নিয়তি কান্না জড়িত মায়াভরা কন্ঠে বলে উঠে,
“আপনি কিছু বলছেন না কেন? আপনার কাছে আপনার টাকাই বেশি হলো৷ আমাকে না’হয় আপনার বাসার কাজের লোক বানিয়ে রেখে দিবেন৷”
.
নির্বণ হাফ ছেড়ে বেঁচে যায় নিয়তির কথা শুনে৷ নির্বণ নিয়তিকে তুলে দাঁড় করায়৷ নিয়তি ধন্যবাদ দিয়ে বলে উঠে,
“আমি তোমাকে একটা শর্তে আমার বাড়িতে রাখতে পারি!”
.
নিয়তি উজ্জ্বলতার সাথে হাসি মুখে বলে উঠে,
“আমি আপনার সব শর্তে রাজি আছি৷ আপনি যা বলবেন আমি তাই করবো৷”
.
তোমাকে কিছু করতে হবে না৷ তুমি আমার বাসায় আমার কাছের লোক হয়ে থাকবে৷ আমার সব কাজ আজ থেকে তুমি করে দিবে৷ কোনদিন বিয়ের দাবী নিয়ে সামনে দাঁড়াতে পারবে না৷
.
নিয়তি মলিন মুখ নিয়ে বলে উঠে,
“আমি কোন দিন বিয়ের দাবী নিয়ে আপনার সামনে দাঁড়াবো না৷ আপনার কথা আমি অক্ষরে অক্ষরে পালন করবো৷”
.
নির্বণ আর কিছু না ভেবে নিয়তির সিঁদুর দিয়ে আঁকা সীঁথি মুছে দেয়৷ নিয়তি মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে৷ নিয়তি চেয়েছিল সেই সীঁথির দাবী নিয়ে হলেও সে তার পাশে থাকবে৷ কিন্তু নির্বণ তার কোন সুযোগ রাখলো না৷ নির্বণ সিঁদুর মুছিয়ে দিয়ে ডাইনিং রুম থেকে চলে যায়৷ সিঁড়ির কাছে যাওয়ার পর বলে উঠে,
“তোমাকে দশ মিনিট সময় দেওয়া হলো তার মাঝে প্রস্তুত হয়ে নাও৷ তুমি আমার সাথে আমার বাড়িতে যাবে৷ আর হ্যাঁ তোমার সীঁথিতে যেন কোন সিঁদুর থাকে না৷”
.
নিয়তি ছলছল চোখে নির্বণের দিকে তাকিয়ে মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দেয়৷ নিয়তি চোখ থেকে অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে৷ দুই দিন আগে তার জীবন এমন ছিল না৷ কিছু সময়ের মাঝে নিয়তি হয়ে গেল চাকরানি। ভাগ্যের কি পরিহাস? প্রচুর অর্থবিত্ত না থাকলেও আদর্শ পরিবারের মেয়ে হয়ে আজ হয়ে গেল একটা চাকরানি৷ নিজেকে দেখে আজ নিজেরই করুনা হচ্ছে৷
.
নির্বণ ডাইনিং রুমে এসে দেখে নিয়তি সেই একইভাবে এক ধ্যানে দাঁড়িয়ে আছে৷ নির্বণ জানতো, নিয়তি এই ধাক্কা থেকে উঠে দাঁড়াতে একটু সময় লাগবে। নিয়তি নিজের ব্যাগ গুছাতে যাবে না৷ তাই নির্বণ নিজের ব্যাগসহ নিয়তির ব্যাগ গুছিয়ে নিচে ডাইনিং রুমে আসে৷ নিয়তির কাঁধে হাত রাখতেই নিয়তি চমকে উঠে।
.
নির্বণ অভয় বানী দিয়ে বলে,
“ভয় পাওয়ার কোন কারণ নেই৷ এভাবে কি ভাবছো? আমাকে বাড়ি ফিরতে হবে৷”
.
নিয়তি কষ্ট ভরা কন্ঠে ছলছল নয়নে বলে উঠে,
“আমি এখনই রেডি হয়ে আসতেছি ৷ আমাকে দুই মিনিট সময় দেন৷”
.
তোমাকে কিছু করতে হবে না৷ আমি তোমার ব্যাগ গুছিয়ে নিয়ে এসেছি৷ তোমার যা ছিল সবকিছু নিয়ে এসেছি৷
.
নিয়তি নির্বণের কথা শুনে একটা প্রাণবন্ত উৎসবমুখর হাসি দিল৷ যদিও বুকের মাঝে হাজারো কষ্টের পাহাড় জমে আছে৷
_______
নিয়তি হতভম্ব হয়ে নির্বণের বাড়ি দেখে যাচ্ছে৷ তিনতলা বিশিষ্ট বাড়ি অনেক সুন্দর করে সাজানো৷ দেখলে মন ভরে যায়৷ নিয়তি মুগ্ধ নয়নে বাড়ি দেখে যাচ্ছে। হুট করেই…
চলবে….