এক_চিলতে_সিঁদুর #পর্ব_০৭,০৮

0
770

#এক_চিলতে_সিঁদুর
#পর্ব_০৭,০৮
#অধির_রায়
পর্ব_০৭

হুট করেই নির্বণ দেখতে পাই সামনে থেকে কেউ পাগলের মতো গাড়ি চালিয়ে আসছে৷ মনে হচ্ছে সে গাড়ির নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেছে৷ নির্বণ গাড়ি ঘুরিয়ে অন্য রাস্তায় নিয়ে যাবে তার কোন উপায় নেই৷ নির্বণ পাঁচ সাত না ভেবে নিয়তিকে গাড়ি থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়৷ নির্বণ নিজের জীবনের সাথে সাথে অন্য একটা জীবনকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিতে পারে না৷ সেজন্য নিয়তিকে গাড়ি থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়৷ এতে নিয়তি সামান্য ব্যথা পেলেও তার জীবন বেঁচে যাবে।
.
নির্বণের গাড়ির ব্রেক করে দাঁড়িয়ে যায়৷ নির্বণ ভেবেছিল সেও গাড়ি থেকে নেমে যাবে৷ কিন্তু নির্বণ নামার আগেই সামন থেকে আসা গাড়ি নির্বণের গাড়িকে ধাক্কা দেয়৷ দুই গাড়ির সংঘর্ষে সামান থেকে আসা গাড়িটি গতি বন্ধ হয়ে যায়৷ সেখাই স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে৷
.
নিয়তি চিৎকার করে কান্না করতে করতে বলে উঠে,
“নির্বণ। আপনি এটা কি করলেন? আমাকে বাঁচাতে গিয়ে আপনি নিজের জীবন উৎসর্গ করে দিলেন৷”
.
নিয়তি দৌড়ে গাড়ির কাছে আসে৷ নিয়তি আসার আগেই সবকিছু শেষ হয়ে যায়৷ গাড়ি থেকে রক্তের জোয়ার বয়ে চলছে৷ নিয়তি তাড়াতাড়ি করে গাড়ির দ্বার খোলে। নির্বণের মাথা ফেলে রক্ত বের হচ্ছে৷ নির্বণের রক্ত দিয়ে তার সারা দেহ লাল হয়ে গেছে৷ নিয়তি নির্বণকে জড়িয়ে ধরে চিৎকার করে বলে,
“আপনি আমাকে ছেড়ে যেতে পারেন না৷ আপনি আমার নিশ্বাসের সাথে মিশে আছেন৷ আপনি ছাড়া আমার সিঁথির সিঁদুরের কোন মূল্য নেই৷ হ্যাঁ আল্লাহ আপনি আমার নির্বণকে আমার কাছে ফিরিয়ে দেন৷ তাকে ছাড়া আমি বাঁচতে পারবো না৷”
.
অপর গাড়িতে থাকা ছেলেটার তেমন কোন আঘাত লাগেনি৷ ছেলেটার নাম আগুন চৌধুরী। আগুন গাড়ি থেকে নেমে নিয়তির কাছে আসেন৷ আগুন নিয়তির কাঁধে হাত রেখে বলে উঠে,
“প্লিজ ভেঙে পড়বে না৷ আমরা তাকে হসপিটালে নিয়ে যাবো৷ তার কিছু হতে দিব না৷ দেখবে তোমার নির্বণের কিছু হবে না৷”
.
নিয়তি নির্বণকে জড়িয়ে ধরে কান্না করেই যাচ্ছে। আগুন চৌধুরীর কোন কথা নিয়তির কান অব্দি পৌঁছাচ্ছে না৷ আগুন নিয়তির কাঁধে একটু ধাক্কা দিয়ে বলে উঠে,
“নির্বণকে হসপিটালে নিয়ে যেতে হবে৷ নির্বণ এভাবে চলে যেতে পারে না৷ প্লিজ তাড়াতাড়ি তাকে হসপিটালে নেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে৷”
.
নিয়তি আগুনের দিকে তাকিয়ে কিছু বলতে নিবে তার আগেই নিয়তি জ্ঞান হারিয়ে ফেলে৷ নিয়তি এতো বড় শকট নিতে পারিনি৷ আগুন এম্বুলেন্স ফোন করে নিয়তি আর নির্বণকে হসপিটালে নিয়ে আসে৷
.
.
হসপিটালের করিডরে পায়েচারী করেছে আগুন৷ তার জন্য দুই দুইটা জীবন আজ মৃতু্র মুখে। আগুন মনে মনে প্রার্থনা করে যাচ্ছে। যেন নিয়তি নির্বণ দুই জনেই ভালো হয়ে যায়৷


রাত দুইটা বাজতে চলেছে নির্বণ নিয়তির কোন খোঁজ নেই৷ নির্বণের মায়ের চোখে ঘুম নেই৷ নির্ঘুম চোখ দু’টো ছেলে মেয়েদের জন্য অপেক্ষা করছে। মায়ের মনে আগে সাড়া দেয় সন্তানের বিপদ আসলে৷ নির্বণের মা একের পর এক ফোন করে যাচ্ছে৷ রিং হচ্ছে কিন্তু রিসিভ করছে না৷ এতো রাতে ছেলে মেয়ে দু’টোর সাথে খারাপ কিছু হলো না তো৷ নির্বণের মা আর বসে থাকতে পারলো না৷ নির্বণের মা মন্দিরের সামনে এসে তাদের জন্য প্রার্থনা করতে থাকেন৷ নিয়তির মায়ের কান্নার শব্দ শুনে বাড়ির সবাই এসে পড়ে৷ ছোঁয়া বলে উঠে,
“মা এভাবে কান্না করছো কেন? আমাদের একটু শান্তিতে ঘুমাতে দাও৷”
.
ছোঁয়ার কথার কোন জবাব দিচ্ছে না তার মা৷ তিনি এক ধ্যানে কান্না করতে করতে সৃষ্টি কর্তার কাছে প্রার্থনা করে যাচ্ছেন৷ ছোঁয়া তার মায়ের কাঁধে হাত রাখে। ছোঁয়াকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে বলে উঠেন,
নির্বণ ফোন ধরছে না৷ নির্বণের অনেক বিপদ৷ প্লিজ তুমি সকল ড্রাইভারদের পাড়িয়ে দাও নির্বণকে খোঁজার জন্য।”
.
ছোঁয়া মাকে শান্তনা নিয়ে বলে উঠে,
“মা তুমি চিন্তা করো না৷ দাদার কিছু হবে না৷ আমি ওই নিয়তিকে কিছুতেই ছাড়বো না৷ নিয়তিই দাদাকে আসতে দিচ্ছে না৷”
.
“না ছোঁয়া নিয়তি নির্বণের সাথে কিছু করেনি৷ তুমি প্লিজ সকল ড্রাইভারদের তাদের খুঁজ করতে পাঠিয়ে দাও৷”
.
ছোঁয়া এক প্রকার বাধ্য হয়ে সে খুঁজতে বের হয় ড্রাইভার নিয়ে৷ ছোঁয়া এক জায়গায় মানুষের ভিড় দেখে গাড়ি থামাতে বলে৷ গাড়ি থেকে নেমে ছোঁয়া জানতে পারে তার দাদা এক্সিডেন করেছে৷ ছোঁয়া নিজেকে শক্ত করে তাড়াতাড়ি করে নিকটস্থ হসপিটালে চলে আসে৷
.
আগুন চৌধুরী এক মিনিটের জন্যও বসেনি৷ হসপিটালের করিডরে পায়েচারী করেই যাচ্ছে৷ ডাক্তার নির্বণের সাথে কি করছে জানা নেই? কেন এতো সময় নিচ্ছে৷ নিয়তির জ্ঞান ফেলার পর শুধু নির্বণ নির্বণ করে যাচ্ছে৷ ডাক্তাররা তাকে না আটকাতে পেরে নিয়তিকে ঘুমের ইনজেকশন দিয়ে দেন৷
.
ছোঁয়া পাগলের মতো দৌড়ে হসপিটালে আসে৷ ছোঁয়া জানতে পারে তার দাদার অপারেশন চলছে৷ ছোঁয়া অপারেশন থিয়েটারের কাছে এসে হাঁটু গেড়ে বসে কান্না শুরু করে দেয়৷ আগুন চৌধুরী ছোঁয়াকে এভাবে কান্না করতে দেখে ছোঁয়ার কাঁধে হাত রাখে৷ ছোঁয়া পিছনে ঘুরতেই আগুন বলে উঠে,
“নির্বণ আপনার কি হয়? এভাবে কান্না করবেন না৷ নির্বণ একদম ঠিক হয়ে যাবে৷”
.
ছোঁয়া কোন কথা না বলে আগুনকে মারতে শুরু করে৷ তুই তুকারি করে বলতে শুরু করে,
“তুই আমার দাদাকে মেরে ফেলেছিস৷ আমি তোকে মেরে ফেলবো৷ আমার দাদার গায়ে থেকে যতটুকু রক্ত জড়িয়েছিস৷ তার দ্বিগুণ রক্ত আমি তোর দেহ থেকে জড়াবো।”

বাবা মারার যাওয়ার পর নির্বণ নিজের বোনকে কখনো বাবার অভাব বুঝতে দেয় নি৷ সব সময় সব কাজে ছোঁয়াকে সঙ্গ দিয়ে গেছে৷ ছোঁয়ার মা অসুস্থ হওয়াতে ছোঁয়াকে সময় দিতে পারেনি৷ দাদার অসামান্য ত্যাগ ছোঁয়াকে খুব মনে করিয়ে দিচ্ছে৷
.
নির্বণ ছোঁয়াকে বুঝানোর চেষ্টা করছে,
“দেখেন ম্যাম। আমি ইচ্ছা করে উনার সাথে এমন করিনি৷ আপনি ভুল ভাবছেন৷ একটা এক্সিডেন মাত্র।”
.
ছোঁয়া কর্কশ কন্ঠ উঁচু স্বরে,
“কুত্তা তোকে আমি ছাড়বো না৷ তোকে আজ আমি মেরেই ফেলবো৷ তোকে আমি পুলিশের হাতে ধরিয়ে দিব৷”
.
ছোঁয়ার ফোনে তার মা ফোন দেয়৷ ছোঁয়া চোখের জল মুছে নিজেকে শান্ত করে,
“মা দাদার কিছু হয়নি৷ দাদা একদম ঠিক আছে। আমি দাদাকে নিয়ে বাড়ি ফিরছি৷”
ছোঁয়া আর কিছু বলতে পারলো না৷ ছোঁয়ার কথা আটকে আসছে৷ তাই ছোঁয়া ফোন কেটে দেয়৷ ছোঁয়া তার অসুস্থ মাকে এক্সিডেনের খবর দিতে চায়না৷ সেজন্য তার মাকে মিথ্যা কথা বলে৷
.
অপারেশন থিয়েটার থেকে ডক্টর বের হওয়ার সাথে সাথে ছোঁয়া ডক্টরের কাছে যান৷ টলমল চোখে জল নিয়ে বলে উঠে,
“ডক্টর দাদা ঠিক আছে তো। দাদার কিছু হয়নি তো।”
.
ডক্টর ছোঁয়ার কোন কথার উত্তর না দিয়ে মুখ কালো করে চলে যেতে থাকে৷ ছোঁয়া ডক্টরের সামনে এসে আবার পুনরায় প্রশ্ন ছুঁড়ে মারে ডক্টরের দিকে,
“কি হলো ডক্টর? কোন কথা বলছেন না কেন? যত টাকা লাগে আমি দিব। তবুও আমার দাদাকে ঠিক করে দেন।”
.
ডক্টর মলিন কন্ঠে বলে উঠেন,
“ম্যাম আমার সাথে আমার কেবিনে আসেন৷ সেখান আপনাকে সবকিছু খুলে বলছি৷”
.
ছোঁয়া আর আগুন ডক্টরের পিছু পিছু ডক্টরের কেবিনে আসে৷ ছোঁয়ার চোখ থেকে অনবরত অশ্রু গড়িয়ে যাচ্ছে। ছোঁয়ার এর আগে কখনো কারো জন্য এতো কষ্ট হয়নি৷ নিজের বাবার জন্যও এতোটা কষ্ট হয়নি যতটা কষ্ট হচ্ছে দাদা নির্বণের জন্য৷
.
ডক্টর মুখ কালো করে মলিন কন্ঠে বলে উঠেন,
“আমি আপনাদের কাছ থেকে কিছু লুকাতে চাইনা৷ নির্বণের অবস্থা খুব খারাপ। আমরা কিছুই বলতে পারছি না৷”
.
আর কিছু না বলে ডক্টর দুই হাত মোঠু করে মাথা নিচু করে কথা বলা বন্ধ করে দেয়৷
ছোঁয়া ডক্টরের কথা শুনে জোরে জোরে কান্না করতে থাকে৷ আগুন ছোঁয়াকে অভয় দিয়ে ডক্টরের দিকে প্রশ্ন করে,
“প্লিজ ডক্টর এভাবে অর্ধেক বলে আমাদের দুশ্চিন্তায় ফেলবেন না৷ আমাদের সব খুলে বলেন৷”
.
“নির্বণের যদি চব্বিশ ঘণ্টার মাঝে জ্ঞান ফিরে না আসে তাহলে তাকে বাঁচানোর সম্ভব নয়৷”
.
আগুন ছোঁয়া হাতে রাখ রেখে ছোঁয়াকে ভরসা দেয়৷ আগুন আবারও বলে উঠে,
“নিয়তি ঠিক আছে তো? তার অবস্থা এখন কেমন?”
.
একটা নার্স এসে বলে,
“নিয়তি অবস্থাও ভালো নেই৷ তার জ্ঞান ফিরার পর শুধু নির্বণের খোঁজ করে৷ সেজন্য তাকে ঘুমের ইনজেকশন দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।”
.
দেখতে সকল হয়ে যায়৷ ছোঁয়া তার মার কাছে আর কিছু লুকাতে পারল না৷ ছোঁয়া তার মাকে সব কিছু বলে দেয়৷ ছোঁয়ার মায়ের অবস্থাও নাজেহাল। একমাত্র ছেলের এমন অবস্থা দেখে নিজের নিজের ভিপি বাড়িয়ে ফেলেছে। নিয়তি নির্বণের মায়ের পায়ের কাছে বসে কান্না করে চলছে৷ তাদের সাথে আগুন চৌধুরী রয়ে গেছে৷ তার গায়ে সেই রক্তমাখা শার্ট। সেও কোথায় যায়নি৷ সে নিজেকে দোষারোপ করে যাচ্ছে। তারপর আসে সেই মূমুষূ সময়৷ চব্বিশ ঘণ্টা হয়ে আর মাত্র এক মিনিট…..

চলবে….

#এক_চিলতে_সিঁদুর
#পর্ব_০৮
#অধির_রায়

চব্বিশ ঘন্টা হতে কিছু সময় বাকী রয়েছে৷ সকল ডাক্তার তাদের আশা ছেড়ে দিয়েছেন৷ সকলেই বলাবলি করছেন নির্বণ আর বেঁচে নেই৷ যেখানে মানুষের আশা ভরসা শেষ হয়ে যায়৷ সেখন থেকেই মহা দেবের আশীর্বাদের শুরু হয়। একটা নার্স নোটিশ করে নির্বণ হাতের আঙ্গুল নাড়ানোর চেষ্টা করছে৷ নার্স বলে উঠে,
“স্যার পেসেন্ট রেসপন্স করছে।”
.
নার্সের কথা শুনে সবাই নির্বণের দিকে তাকায়৷ নিয়তির ভেজা চোখ একটু আশার আলো দেখতে পাই৷ নির্বণের মায়ের চোখ এখনো ছলছল করছে। এটা কোন কষ্টের অশ্রু নয়৷ সুখেও মানুষের চোখে অশ্রু আসে৷”
.
ডক্টর সবাইকে বাহিরে চলে যেতে বলেন৷ সবাই ডক্টরের কথামতো বাহিরে চলে আসে৷ সবার মুখে হাসি৷ হাতে যেন চাঁদ পেয়ে গেছে৷ সব থেকে বেশি খুশি হয়েছে ছোঁয়া। নিয়তি আগুনকে হসপিটাল থেকে চলে যেতে বলে। কিন্তু আগুন চলে যাওয়ার পাত্র নয়৷ আগুন নিজের পোশাক পরিবর্তন করে হসপিটালে থেকে যায়। ছোঁয়াকে শক্তি জুগানোর জন্য আবির চলে আসে হসপিটালে। বিপদের সময় চেনা যায় কাছের মানুষ কে? নিয়তি নির্বণের মাকে বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়৷ তিনি হসপিটালে থাকলে অসুস্থ হয়ে পড়বেন৷ নিয়তি চাইনা আর কেউ অসুস্থ হয়ে পড়ুক৷
.
দুপুরের দিকে আবির ছোঁয়ার কাঁধে হাত রেখে,
“চল ছোঁয়া, মুখে কিছু দিবে৷ কাল থেকে তুমি মুখে কিছু দাওনি৷”
.
ছোঁয়া এক বুক কষ্ট নিয়ে,
“আমার খেতে ইচ্ছে করছে না৷ প্লিজ আমাকে খাওয়ার জন্য জোর করবেন না৷”
.
আবির ছোঁয়ার সামনে হাঁটু গেড়ে বসে,
“ছোঁয়া তুমি না খেলে অসুস্থ হয়ে পড়বে৷ প্লিজ অল্প কিছু পরিমান খেয়ে নাও৷”
.
ছোঁয়া কাঁদু কাঁদু স্বরে,
“প্লিজ আমাকে খাওয়ার জন্য জোর করবেন না৷ আমার একটুও ক্ষুধা নেই৷”
.
পৃথিবীতে ভাই বোনের ভালোবাসা কোন তুলনা হয়না৷ বোন ভাইকে ছাড়া থাকতে পারে না৷ ভাই বোনকে ছাড়া থাকতে পারে না৷ ভাইয়ের অভাব বুঝতে পারে সেই বোন যার কোন ভাই নেই৷ তেমনি বোনের অভাব বুঝতে পারে বোনহীন ভাইগুলো৷ ভাইয়ের শোকে পাথর হয়ে গেছে ছোঁয়া। দূর থেকে সবকিছু দেখছিল নিয়তি৷ নিয়তি ছোঁয়ার কাছে এসে,
“ছোঁয়া জিৎ করো না৷ তুমি কিছু খেয়ে নাও৷”
.
“প্লিজ দিদি আমাকে বিরক্ত করো না৷ আমার গলা দিয়ে কিছু নামবে না।”
.
নিয়তি ছোঁয়ার কথা শুনে চকিত হয়ে যায়৷ ছোঁয়া কখনোই নিয়তিকে পাত্তা দিত না৷ সব সময় নিয়তিকে ইগনোর করে চলতো৷ অপমান করতে দুই বার ভাবতো না৷ নিয়তি ছোঁয়ার কাছে বসে৷ নিয়তি ছোঁয়ার হাতে হাত রেখে,
“তুমি কি তোমার দাদাকে ভালোবাসাে না?”
.
নিয়তির দিকে চোখ করে তাকিয়ে,
“আমি আমার দাদার জন্য সবকিছু করতে পারি৷ আমার জীবনের থেকে বেশি আমি আমার দাদাকে ভালোবাসি৷”
.
“তুমি কি জানো? তোমার জন্য তোমার দাদা কষ্ট পাচ্ছে৷ তোমার দাদা সব সময় তোমার মুখে হাসি দেখতে চাইতো৷”
.
ছোঁয়া মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানায়৷ নিয়তির ছোঁয়ার হাত ধরে বলে উঠে,
“তোমাকে তোমার দাদার জন্য শক্ত হতে হবে৷ তুমি তোমার দাদার সাহস হবে। প্লিজ মন খারাপ করো না৷ খাবার খেয়ে নাও৷”
.
নিয়তির কথামতো ছোঁয়া খাবার খেতে রাজি হয়ে যায়। আবির ছোঁয়ার হাত ধরে নিয়ে যেতে নিলেই ছোঁয়া থেমে যায়৷ আবির চকিত হয়ে,
“আবার কি হলো ছোঁয়া? তুমি দাঁড়িয়ে পড়লে কেন?”
.
ছোঁয়া নিয়তির হাত ধরে,
“নিয়তি চলো আমাদের সাথে। তুমিও কাল থেকে কিছুই খাওনি৷”
.
নিয়তি মলিন হাসি দিয়ে,
“আমার কিছু হবে না৷ তুমি বরং খেয়ে আসো৷ এখানে তো একজনকে থাকতে হবে৷”
.
ছোঁয়া অভিমানী স্বরে বলে উঠে,
“এখানে কাউকে থাকতে হবে না৷ দাদার কিছু হবে না৷ আর আমরা দূরে কোথাও যাচ্ছি না৷”
.
নিয়তির এক প্রকার অনিচ্ছা থাকার সত্ত্বেও তাদের সাথে খাবার খেতে চলে আসে৷ লোক দেখার মতো কিছু খাবার দুই জনে খেয়ে নেয়৷ আবার পুনরায় চলে আসে নির্বণের কাছে৷
.
.
দেখতে দেখতে হসপিটালে কেটে যায় বারো দিন৷ ছোঁয়া আবিরের সাথে মিলে ব্যবসার কাছে যোগ দেয়৷ যেন নির্বণ সুস্থ হয়ে সবকিছু ফিরে পায়৷ নিয়তিকে সঙ্গ দিয়ে গেছে আগুন চৌধুরী। আগুন নিয়তি প্রেমে পড়ে যায়৷ আগুন জানে না যে ‘নিয়তি নির্বণের ওয়াইফ৷’ আগুন ভালোবাসার টানে হলেও একবার নিয়তিকে দেখতে আসে৷ নিয়তি নিজের সবকিছু দিয়ে নির্বণকে সেবাযত্ন করে যাচ্ছে৷ আজ নির্বণকে বাড়ি নিয়ে যাওয়ার জন্য সবাই এসেছে৷ নির্বণ এখনো বিছানা বাসী৷ কথা বলতে পারলেও কোম কাজ করতে পারে না৷ হাঁটা চলা করার জন্য অন্যকে ভর করতে হয়৷
.
নির্বণকে বাড়িতে নিয়ে আসে৷ রাতের বেলা সবাই যখন নির্বণের রুম থেকে চলে যায় তখন নির্বণ নিয়তিকে বলে উঠে,
“তুমি কেন আমার জন্য এতো কষ্ট করছো? আমি তোমার সাথে অনেক খারাপ ব্যবহার করেছি৷”
.
নিয়তি ছলছল চোখে,
“প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য সুস্থ করতেছি৷ অসুস্থ মানুষের সাথে তো আর প্রতিশোধ নেওয়া যায়না৷ সুস্থ হবার পর আমি আমার প্রতিশোধ নিব৷”
.
নির্বণ অতি কষ্টে বলে উঠে,
“তুমি কিসের প্রতিশোধ নিতে চাও৷ তুমি তো এখন সহজেই প্রতিশোধ নিতে পারো।”
.
নিয়তি চকিত হয়ে,
“এখন আমি কিভাবে প্রতিশোধ নিব৷ শত্রু পক্ষ যখন দুর্বল থাকে তখন আমি প্রতিশোধ নেয় না৷”
.
“এখন তুমি ইচ্ছা করলেই আমাকে ছাঁদ থেকে ফেলে মেরে ফেলতে পারবে৷ তা না করতে পারলে কলা টিপেও তো প্রতিশোধ নিতে পারো। তোমাকে আর বিরক্ত করবো না৷ আমি মরে গেলে তো সব শেষ।”
.
নিয়তি নির্বণের মুখ ধরে ফেলে৷ অশ্রু ভরা চোখ নিয়ে,
“এমন কথা কোনদিন বলবেন না৷ আমি আপনার মুখ থেকে এমন কথা শুনতে চাইনা৷”
চোখ পাকিয়ে বলে উঠে,
“আপনাকে রেস্ট নিতে বলেছে। এসব নিয়ে আপনাকে চিন্তা করতে বলেনি। এখন ঘুমিয়ে নেন৷”
.
নির্বণ ঘুমানোর পর নিয়তি নির্বণের রুমে সোফায় শুয়ে পড়ে৷ ছোঁয়া নির্বণকে ছেড়ে কোথায় যেতে চাইনা৷ কখন নির্বণের কি দরকার পড়ে জানা নেই৷
.
পাখির কিচির মিচির শব্দে ঘুম ভেঙে যায় নিয়তির। আঁধার কাটিয়ে নতুন দিনের সূচনা করলেন সূর্যদেব। নিয়তি সকলের জন্য সকালের ব্রেক ফাস্ট বানায়৷ নির্বণকে নিয়ে ছাঁদে আসে৷
.হালকা শীতের আমেজে সোনালী রোদ্দুরের আলো গায়ে মাখাতে কে না চাই৷ সকালের আলো মানুষের মন ভরিয়ে দেয়৷ ছোঁয়ার কাঁধে হাত রেখে হেঁটে যাচ্ছে নির্বণ। নিয়তি ক্লান্ত হয়ে নির্বণকে ছাঁদের দোলনায় বসিয়ে দেয়৷
.
নিয়তিকে দুষ্টামি করে বলে উঠে,
“আপনাকে একদম পাগল লাগছে৷ আপনাকে দেখে মনে হচ্ছে আপনি আজই পাগলা গারদ থেকে পালিয়ে এসেছেন৷”
.
নির্বণ চোখ ছোট করে,
“আমাকে দেখে তোমার পাগল মনে হয়৷ আমাকে কোন দিক থেকে তোমার পাগল মনে হয়৷”
.
নিয়তি ফিক রে হেঁসে দিয়ে,
“আপনার গাল ভর্তি দাঁড়ি দেখে আপনাকে পাগল লাগছে৷ আপনি তো এতোদিন মুখ শেফস করতে পারেননি৷ একদম হনুমানের মতো লাগছে।”
.
নির্বণ মুখটা ছোট করে,
“আমাকে দেখে না হেঁসে পারলে আমার মুখ ক্লিন করে দাও৷”
.
নিয়তি নির্বণের দাঁড়িতে হাত দিয়ে,
“আপনাকে পাগল দেখালেও সুন্দর লাগছে৷ তবে চিন্তা করতে হবে না৷ আমি আপনার দাঁড়ি ক্লিন করে দিচ্ছি৷”
.
নিয়তি বাড়িতে একজন নর সুন্দরকে ডেকে আনে।তিনি অতি যত্ন সহকারে নির্বণের চুল দাঁড়ি ছোট করে দেয়৷ নির্বণ এক প্রকার হাফ ছেড়ে বাঁচে।
.
এভাবে আরও কেটে যায় এক মাস৷ নির্বণ এখন অনেকটা সুস্থ৷ নিজে থেকে হাঁটতে পারে। তবে বেশিক্ষণ হাঁটতে পারে না৷ নির্বণের শরীর এখনো অনেক ক্লান্ত৷ নির্বণের হাঁটা চলার একমাত্র সঙ্গী হলো নিয়তি। নিয়তিকে ছাড়া নির্বণ এক পাও এগিয়ে যেতে পারে না৷
অফিসের সকল কাজ ছোঁয়া নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছে৷ রাতে বাড়ি ফিরলে নিয়তিকে সাহায্য করে। নিয়তির কষ্ট কম করার জন্য নিয়তির কাজ ছোঁয়া করে দেয়৷ যে ছোঁয়া এক গ্লাস জল ভরে খেতে পারতো না। আজ সেই ছোঁয়া নিজের কাঁধে ব্যবসা ভর তুলে নিয়েছে৷ বুদ্ধির সাথে সকলের সাথে কাজ করে যাচ্ছে।
.
ছোঁয়া ধীরে ধীরে আবিরকে ভালোবাসতে শুরু করে। ছোঁয়া বুঝতে পারে মা, দাদার পরই আবির তাকে সুখে রাখতে পারবে৷ কিন্তু আবিরের ভালোবাসা সে প্রকাশ করে না৷ আবিরের প্রতি ছোঁয়ার দুর্বলতা ছোঁয়া আবিরকে বুঝতে দেয় না৷
.
রাতের বেলা নির্বণ ঘুমানোর পর ছোঁয়া নিজের রুমে চলে আসে৷ নির্বণের গায়ে কম্বল দিয়ে নিয়তি চলে আসতে নিলেই…

চলবে…..

ভুল ত্রুটিগুলো ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here