এক_চিলতে_সিঁদুর #পর্ব_১৫,১৬

0
890

#এক_চিলতে_সিঁদুর
#পর্ব_১৫,১৬
#অধির_রায়
পর্ব_১৫

“কেউ ভালোবাসে না সেজন্য বাহিরে ভালোবাসার মানুষ খুঁজতে যাচ্ছি৷ আমাকে আজ অনেক হ্যান্ডসাম লাগছে৷ আমি নিশ্চিত! আজ আমার প্রেমে দশটা মেয়ে হাবুডুবু খাবে।”
.
নির্বণের কথা শুনে নিয়তির খুব রাগ উঠে৷ নিয়তি ঝাড়ু নিয়ে নির্বণের সামনে দাঁড়ায়৷ অগ্নিমূর্তি ধারণ করে নির্বণের দিকে তাকিয়ে আছে। সাপের মতো ফুসফুস করছে৷ দেখে মনে হচ্ছে কোন হিংস্র ক্ষুধার্ত প্রাণী৷
.
নির্বণ ভয়ে ভয়ে বলে উঠে,
“আমার দিকে এভাবে ঝাড়ু তাক করে রেখেছো কেন? আমি এখন কিছু করিনি৷ আমার পথ থেকে সরে যাও৷”
.
নিয়তি ক্ষোভ নিয়ে বলে উঠে,
“আপনি এক পা বাহিরে রেখে দেখান৷ তারপর আমার নাম পাল্টে রাখবো৷”
.
শুকনো ঢুক গিলে,
“আমি বাহিরে পা রাখলে তুমি কি করবে? এভাবে আমায় থ্যাড দিচ্ছো কেন?”
.
“বাহিরে পা রাখলে আপনার পা পায়ের জায়গায় থাকবে না৷ কেটে হাতে ধরিয়ে দিব৷”
.
আটকে আটকে বলে উঠে,
“তুমি তো আমায় ভালোবাসো না৷ তাহলে আমার উপর কেন অধিকার দেখাচ্ছো? ভালোবাসার মানুষ খুঁজতে দিবে না৷”
.
নির্বণের মুখ চেপে ধরে,
“আপনার মুখে এই খোঁচা খোঁচা দাঁড়ি আর দেখবে না। আপনাকে দেখতে একদম হনুমান লাগবে৷ আমার কথার ছাড়া এক পা বাহিরে রেখে দেখান৷”
.
নির্বণ নিয়তির কোমর ধরে নিজের কাছে টেনে নিয়ে আসে। আচমকা নির্বণ নিয়তির কোমরে হাত রাখাতে নিয়তি ভয় পেয়ে কেঁপে উঠে৷ নিয়তি পরক্ষণেই বুঝতে পারে। নির্বণকে ধাক্কা দিয়ে দূরে সরিয়ে দিয়ে,
“আমাকে টার্চ করার চেষ্টা করবেন না৷ আপনার প্রতি আমার কোন ইন্টারেস্ট নেই৷ তাই আমাকে টার্চ করলে হাত ভেঙে রেখে দিব৷”
.
নিয়তি নির্বণকে হুমকি দিয়ে রুম থেকে চলে যায়৷ নির্বণ আনমনেই নিয়তির কথা ভেবে হেঁসে ফেলে৷ মিসেস নিয়তি তুমি নিজেও ভালোবাসবে না৷ আমাকেও ভালোবাসতে দিবে না৷ তবে আমি আমার ভালোবাসা আদায় করেই নিব৷ আমি জানি তুমি আমাকে আমার অন্যায়ের শাস্তি দিচ্ছো৷ আমি তোমার সব শাস্তি মাথা পেতে নিব৷
________

ছোঁয়া আবিরের মা বাবার সামনে লজ্জা লজ্জা ভাব নিয়ে বসে আছে৷ আবিরের দিকে তাকালেই আবির ছোঁয়াকে চোখ টিপল দেয়৷ এতে ছোঁয়া আরও লজ্জা পেয়ে যায়৷ ছোঁয়া আবিরের দিকে অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে মনে মনে,
“আজই প্রপোজ করলো৷ আর আজই আমার বাড়িতে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে এসেছে৷ কেন আমার প্রেম করতে ইচ্ছা করে না বুঝি? আমি বানের জলে ভেসে আসছি৷”
.
সবার চোখ ফাঁকি দিতে পারলেও নিয়তির চোখ ফাঁকি দিয়ে পারেনি আবির৷ আবিরের চোখ টিপল দেখে ফেলে নিয়তি৷ নিয়তি ধীরে ধীরে আবিরের কাছে আসে৷ সুযোগ বুঝে আবিরের পেটে বসিয়ে দেয় বিলাই চিমটি৷
.
আবির চিমটি সহ্য করতে না পেরে “আউচ” বলে চিৎকার দিয়ে উঠে। নিয়তি মুচকি হেঁসে,
“ছোঁয়া আবিরকে মেবি পিঁপড়া কামড় দিয়েছে৷ তাকে মেডিসিন লাগিয়ে দাও৷
আবিরের দিকে শয়তানি দৃষ্টিতে তাকিয়ে,
” প্রেম করার রাস্তা বানিয়ে দিলাম৷ যাও মন খোলে প্রেম করো৷”
.
আবির ইনোসেন্ট মুখ করে ছোঁয়ার সাথে ছোঁয়ার রুমে চলে আসে৷ আবির কিছু বলতে নিবে তার আগেই ছোঁয়া আবিরের মুখ ধরে,
“আপনি এতো আন রোমান্টিক কেন? আমরা আগে কিছু বছর প্রেম করবো৷ তারপর বিয়ে করবো৷ সকালে প্রপোজ করেই বিকেলেই বিয়ের প্রস্তাব।”
.
আবির চোখের ইশারায় মুখ থেকে হাত সরাতে বলে৷ কিন্তু ছোঁয়ার সেদিকে খেয়াল নেই৷ ছোঁয়া নিজের মতো করে বকবক করেই যাচ্ছে৷ আবির কোন উপায় না পেয়ে ছোঁয়ার কোমরে হাত দিয়ে নিজের কাছে নিয়ে আসে৷ আবিরের স্পর্শ পেয়ে ছোঁয়া কেঁপে উঠে। ছোঁয়া মুখে আর কোন কথা নেই৷ ছোঁয়া চোখ বড় বড় করে আবিরের দিকে তাকিয়ে আছে।
.
আবির দুষ্টু হাসি দিয়ে,
“আমি রোমান্টিক হলে আমায় সহ্য করতে পারবে তো৷”
.
আবিরকে ধাক্কা দিয়ে,
“আপনি দূরে সরে দাঁড়ান৷ রোমান্টিক হতে হবে না৷”
________

আবিরের বাবা বলে উঠেন,
“যেখানে ছেলেমেয়ে দুই জনই রাজি আছে৷ তাই আমরা আর দেরি করতে চাইনা৷”
.
নির্বণের মা নির্বণের দিকে তাকিয়ে,
“আসলে আমি কোন কথা দিতে পাচ্ছি না৷ আমি ছোঁয়ার মা হলেও আমার থেকে ছোঁয়ার উপর বেশি অধিকার নির্বণের৷ তার সাথে এসব নিয়ে কথা বলেন৷”
.
আবিরের মা নির্বণের পাশে বসে,
“কি বলো নির্বণ? তোমার বোনকে আমার বাড়ির বউ হতে দিবে না৷ ছোঁয়াকে তোমার মতো ভালোবাসতে পারবো না৷ কিন্তু ভালোবাসা দিয়ে ভরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করবো।”
.
নির্বণ টলমল নয়নে,
“আঙ্কেল যে সিদ্ধান্ত নিবে আমি তাতেই রাজি৷”
.
“আগামী মাসের এক তারিখে তাদের বিয়ে৷ মাত্র পনেরো দিন পর বিবাহের কাজটা সম্পুর্ন করতে চাই৷”
.
নির্বণ মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানায়৷ আবিরের মা বাবা আরও অনেক বিষয়ে কথা বলতে থাকেন৷ নির্বণ মন ভার করে নিজের রুমে চলে আসেন৷ খুব কষ্ট হচ্ছে ছোঁয়ার জন্য৷ আর মাত্র পনেরো দিন তার বাড়িতে থাকবে৷ তারপর তাকে আর নিজের চোখে দেখতে পাবে না৷ ভাবতেই চোখ থেকে দুই ফোঁটা জল বেরিয়ে আসে৷
.
নিয়তি নির্বণের পিছন পিছন অনুসরণ করে চলে আসে৷ নির্বণের কাঁধে হাত রাখতেই নির্বণ ভয় পেয়ে যায়৷ চকিত হয়ে বলে উঠে,
“কে!”
.
মিয়তি চোখ ছোট করে,
“এভাবে চমকে উঠলেন কেন? কি হয়েছে আপনার? আপনার চোখে জল কেন?”
.
চোখের জল মুছে,
“কই চোখে জল৷ আমার চোখে কোন জল নেই৷”
.
“কান্না করছিলেন কেন?”
.
মলিন হাসি দিয়ে,
“কান্না করবো কেন? মনে হয় চোখে কোন কিছু পড়ে ছিল৷ তাই চোখে জল এসে পড়েছে৷”
.
“নির্বণকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে,
“কোনটা চোখের জল আর কোনটা নিজ থেকে বেরিয়ে আসা জল আমি ভালো করেই জানি৷ কার কথা ভেবে খারাপ লাগছে৷”
.
নির্বণ নরম স্বরে ভেজা কন্ঠে,
“আমি কি আর ছোঁয়াকে দেখতে পাবো না৷ সে কি আমাদের ছেঁড়ে একেবারে চলে যাবে?”
.
নিয়তি বুঝতে পারে ছোঁয়া হলো নির্বণের একমাত্র দুর্বলতা। খুব বেশি ভালোবাসে ছোঁয়াকে৷ ছোঁয়াকে যেন চোখে হারায়৷ নিয়তি আভয় বানী দিয়ে,
“মন খারাপ করছেন কেন? যখন ইচ্ছা তখন ছোঁয়ার সাথে দেখা করবেন৷ আবির তো আপনার বন্ধু৷ ছোঁয়াকে খুব ভালো রাখবে। ছোঁয়াকে খুব ভালোবাসে।”
.
“তুমি সত্যি বলছো তো, ছোঁয়া আবিরের সাথে ভালো থাকবে! ছোঁয়ার কোন কষ্ট হবে না।”
.
“ছোঁয়ার কোন কষ্ট হবে না৷ অনেক রাত হয়েছে৷ আপনি ঘুমিয়ে পড়েন৷ কাল তো সারারাত ঘুম আসেননি৷”
.
“তুমি ঘুম আসবে না৷ তুমি কখন ঘুমের দেশে পাড়ি জমাবে?”
.
নিয়তি চোখ অন্যদিকে সরিয়ে,
“আমায় নিয়ে চিন্তা করতে হবে না৷ আমি সময় মতো ঘুমিয়ে যাবো৷”
.
নিয়তি কথা না বাড়িয়ে নির্বণের রুম থেকে চলে আসে৷ নির্বণ বিছানা থেকে উঠে বেলকনিতে আসে৷ নির্বণের মনের মতো আজ প্রকৃতিও রুপ ধারণ করেছে৷ প্রকৃতিতে বুকে আজ অন্ধকার ঘনিয়ে এসেছে৷ আকাশ ভরা তারা থাকলেও রাতের সৌন্দর্য চাঁদ নেই৷ চাঁদও অভিমান করে মুখ লুকিয়ে আছে৷ নির্বণ অন্ধকার বেলকনিতে কিছুক্ষণ বসে থেকে বিছানায় এসে শুয়ে পড়ে৷ গতকাল রাতে ঘুম না আসার জন্য খুব তাড়াতাড়ি ঘুমের দেশে পাড়ি জমায়।
_________

নির্বণ প্রতিদিন নিয়তির কাছ থেকে অপমান হয়ে ফিরে আসে৷ নিয়তি কিছুতেই নির্বণকে ক্ষমা করছে না৷ নির্বণ না পারছে নিয়তির ভালোবাসার বন্ধন থেকে বেরিয়ে৷ না পারছে অবহেলা সহ্য করতে৷ কিছুই বুঝতে পারছে না৷
.
নির্বণ যখনই নিয়তির সামনে আসে তখনই ভেসে উঠে নির্বণের সেই জানোয়ার রুপজনিত চেহারা৷ না পারছে দূরে ঠেলো দিতে না পারছে কাছে টেনে নিতে৷ দূরে সরে গেলেই কষ্টে বুক ফেটে যায়৷ কাছে আসলে ভয়ংকর রুপ ফুটে উঠে৷ মান অভিমানের উপর ভিত্তি করে চলে যাচ্ছে নির্বণ নিয়তির দিনগুলো৷
.
দেখতে দেখতে এগিয়ে আসছে আবির ছোঁয়ার বিয়ে। বিয়ের কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ে নির্বণ নিয়তি।

চলবে…..

#এক_চিলতে_সিঁদুর
#পর্ব_১৬
#অধির_রায়

ছোঁয়া আবিরের বিয়ে হয়ে যায়৷ ছোঁয়া আবিরের সাথে নিজের শ্বশুরবাড়িতে পাড়ি জমায়। নির্বণকে সারাবাড়ি খুঁজে যায়৷ এতো লোকের ভীড়ে নির্বণকে কোথায় খুঁজে পাচ্ছে না নিয়তি৷ বিয়ে বাড়িতে লোকজন কমে আসছে৷ অনেক আত্নীয় স্বজন চলে গেছে৷ ধরতে গেলে আগের মতোন হয়ে গেছে৷ এতোকিছু হয়ে গেলে নির্বণ কোথায় চলে গেল৷ নিয়তি হতাশা নিয়ে নির্বণের বেলকনিতে আসে৷ বেলকনিতে এসেই নিয়তির চোখ ছানাপড়া হয়ে যায়৷ নির্বণ ফ্লোরে গুটিশুটি মেরে মেয়ে মানুষের মতো কান্না করে যাচ্ছে৷ নির্বণের কাঁধে হাত রাখতেই নির্বণ অবাক দৃষ্টিতে নিয়তির দিকে তাকায়৷
.
নিয়তি কিছু বলার আগেই নির্বণ নিয়তিকে জড়িয়ে ধরে কান্না শুরু করে৷ নিয়তি কোন উপায় না পেয়ে নির্বণকে জড়িয়ে ধরে সান্ত্বনা দিতে থাকে৷ নিয়তি কোমল স্বরে মায়াভরা কন্ঠে বলে উঠে,
“প্লিজ এভাবে ভেঙে পড়বেন না৷ আপনি ভেঙে পড়লে ছোঁয়া নিজের উপর সাহস হারিয়ে ফেলবে৷”
.
অবুঝ শিশুদের মতো করুণ স্বরে,
“ছোঁয়া বাড়িতে আর আসবে না৷ আমি ছোঁয়াকে খুব ভালোবাসি। আমার একমাত্র বোন। তাকে ছাড়া এই বাড়ি শূন্য শূন্য লাগছে৷”
.
নির্বণের চোখের জল মুছে দিয়ে,
“আপনি এসব নিয়ে একদম মন খারাপ করবেন না৷ ছোঁয়া এই বাড়িতেই থাকবে৷ ছোঁয়া কোথায় যাবে না৷”
.
চোখে মুখে আনন্দের উচ্ছাস নিয়ে,
“তুমি সত্যি বলছো! ছোঁয়া আমাদের বাড়িতে ফিরে আসবে৷”
.
নির্বণের হাতে হাত রেখে,
“হুম ছোঁয়া এই বাড়িতেই চলে আসবে৷ রুমে চলেন ঘুম আসবেন৷”
.
নির্বণ নিয়তিকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে পড়ে৷ নিয়তি আজও নিজের রুমে চলে আসতে চেয়েছিল৷ কিন্তু নির্বণের একাকীত্ব দেখে নিয়তি বাধ্য মেয়ের মতো থেকে যায়৷
______

আঁধার কেটে আসে দিনের আলো৷ মুছে যায় গ্লানি ঝড়ে যায় ঝড়া৷ সূর্যদেব নিজের কিরণ ছড়িয়ে নতুন দিনের সূচনা করলেন৷ নিয়তি চোখ মেলে নিজেকে নির্বণের বুকে আবিষ্কার করে৷ অন্য দিন নির্বণ নিয়তির কাছে আসলে তার সাথে গড়ে যাওয়ার কাহিনি মনে যায়৷ কিন্তু আজ কেন জানি খুব ভালো লাগছে? নির্বণকে ছেড়ে যেতে মন চাইছে না৷ একপ্রকার বাধ্য হয়ে নিয়তি চলে আসে৷ সবার জন্য চা করে নির্বণের জন্য চা নিয়ে রুমে আসে৷
.
চা রেখে চলে আসতে নিলেই নিয়তির চোখ রসে গোল্লার মতো হয়ে যায়৷ নির্বণ স্নান করে খালি গায়ে ওয়াসরুম থেকে বের হয়৷ চুল থেকে ফোঁটায় ফোঁটায় জল পড়ে যাচ্ছে৷ হালকা লোম যুক্ত বুকটা জলের ছিঁড়ায় বুকের সাথে ল্যাপ্টে আছে৷ নিয়তি অপলক দৃষ্টিতে নির্বণের দিকে তাকিয়ে আছে৷ নির্বণ টুপ করে নিয়তিকে কিস করে৷ নিয়তি হা হয়ে যায়৷ নির্বণ দুষ্টু হাসি দিয়ে,
“এভাবে তাকিয়ে থাকার কোন মানে নেই৷ আমার সমস্ত জোড়েই তুমি রয়েছে।”
.
নির্বণ কথা শুনে নিয়তি লজ্জা পেয়ে যায়৷ লজ্জা মাখা মুখে বলে উঠে,
“আপনার লজ্জা করে না মেয়েদের সামনে খালি গায়ে আসতে।”
.
নিয়তির দিকে একটু ঝুঁকে চুল ঝাঁকি দেয় নির্বণ৷ চোখ টিপল দিয়ে,
“আমি অন্য কোন মেয়ের সামনে যায়নি৷ ইভেন আমি কোন মেয়ের সামনে যায়নি৷”
.
নিয়তি অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে,
“আমি তাহলে কি! আপনার সামনে একটা মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে৷”
.
নিয়তির কানে ফিসফিস করে,
“তুমি আমার বিয়ে করা বউ৷ তোমার সামনে এমনভাবে না আসলে কার সামনে যাবো? তোমাকে ইমপ্রেস করার জন্যই তো এমন ভাবে আসি৷”
.
নির্বণ নিয়তির কানে এতটায় ফিসফিস করে বলে যে নিয়তি স্টেচু হয়ে যায়৷ নিয়তি এক ধ্যানে তাকিয়ে আছে৷ নিয়তির কানে শুধু ভেজে যাচ্ছে কথাগুলো৷ নির্বণ পোশাক পড়ে নিয়তির সামনে তুরি বাজায়৷ নিয়তি দুনিয়ায় ফিরে আসে৷
.
“কি হলো এভাবে তাকিয়ে কাকে আবিষ্কার করছো?”
.
“আপনি শার্ট পড়ে নিয়েছেন তো৷”
.
“একবার আমার তাকিয়ে দেখো। আমি অনেক আগেই শার্ট পড়ে বসে আছি৷ আমার খুব ক্ষুধা লাগছে৷”
_____

খাবার টেবিলে নির্বণের সামনে বসে খাবার খাচ্ছে নিয়তি৷ নির্বণ পা দিয়ে নিয়তিকে বিরক্ত করে যাচ্ছে৷ নির্বণ মুচকি মুচকি হেঁসে যাচ্ছে৷ নিয়তি অগ্নি দৃষ্টি মিলে তাকাচ্ছে নির্বনের দিকে৷ খাওয়া শেষ করে নির্বণ মনের সুখে নিজের রুমে চলে যায়৷ নিয়তি কাজ শেষ করে নির্বণের মায়ের রুমে আসে৷ নির্বণের মা মুচকি হেঁসে,
“নিয়তি দূরে দাঁড়িয়ে আছো কেন? কাছে এসে বসো৷”
.
নিয়তির নির্বণের মায়ের একদম কাছে এসে বসে৷ নিয়তির হাতে এক জোড়া কাঁকন পড়িয়ে দেন তিনি৷ নিয়তি অবাক দৃষ্টিতে নির্বণের মায়ের দিকে তাকায়। তিনি মুচকি হেঁসে বলে উঠেন,
“এভাবে তাকিয়ে থাকতে হবে না৷ আমি সবকিছু জানি৷”
.
নিয়তি চকিত হয়ে,
“আপনি সবকিছু জানেন মানে! আমি কিছুই বুঝতে পারছিনা৷”
.
নিয়তি কান মলে নিয়ে,
“আমার কাছ থেকে লুকানো হয়েছে কেন? আমাকে পর মনে হয়৷ আমি অন্যদের মতোন৷”
.
নিয়তি কোতুহল নিয়ে,
“মা আমি কিছুই বুঝতে পারছিনা৷ আপনার কাছ থেকে কি লুকাতে যাবো৷ আমি আপনার কাছ থেকে কিছুই লুকায়নি৷”
.
“তুমি তাহলে নিজ মুখে স্বীকার করবে না৷ ছোঁয়া আমায় সব বলে দিয়েছে মিসেস নির্বণ।”
.
নিয়তি নির্বণের মায়ের কথা শুনে শকট৷ নিয়তি ভেবে নিয়েছিল তিনি কিছুই জানেন না৷ কিন্তু তিনি সবকিছু জেনে বসে আছে৷ নিয়তির হাতে হাত রেখে,
“বিবাহিত মেয়েদের শাখা সিঁদুরে ভালো লাগে৷ আধুনিক যুগকে নিজের মনে পোষণ করে সিঁদুর পড়া বন্ধ করো না৷ সিঁদুর পড়লে মেয়েদের সব থেকে সুন্দর লাগে৷ আর স্বামীর মঙ্গল কামানায় মেয়েরা সিঁদুর পড়ে৷”
.
নিয়তি মাথা নাড়িয়ে সম্মতিতে জানিয়ে কেটে পড়ে সেখান থেকে৷ রুমে এসে দেখে নির্বণ বিছানায় হাত পা ছড়িয়ে শুয়ে আছে৷ নিয়তিকে দেখেও না দেখার ভান করে শুয়ে থাকে৷ এতে নিয়তির অভিমান হয় আরও৷ নিয়তি নির্বণের দিকে অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলে উঠে,
“আপনার সাহস কি করে হলো?”
.
“নিয়তিকে দেখে নির্বণ অন্য দিকে ঘুরে শুয়ে পড়ে৷ এতে নিয়তির রাগ আরও বেড়ে যায়৷ নিয়তি বিছানায় উঠে নির্বণের উপর চেপে বসে৷ নিয়তি কর্কশ কন্ঠে,
” আপনি আমাকে এভয়েড করছেন৷ আমি আপনার সাথে কথা বলতে এসেছি৷”
.
নির্বণ মনে মনে বলে উঠে,
“ক্ষেপে গেছে মনে হচ্ছে৷ নির্বণ এখন পালাবি কিভাবে? তোকে আজ নিয়তি টুকরো টুকরো করে ফেলবে৷”
.
নিয়তি আরও রেগে বলে উঠে,
“কথা কানে যাচ্ছে না৷ আমি আপনার সাথে কথা বলছি৷”
.
নির্বণ চোখ ছোট করে,
“নিয়তি তুমি৷ কখন আসলে? তুমি আমার উপর বসে আছো কেন?”
.
নির্বণের কথা শুনে নিয়তি আরও রেগে যায়৷ নিয়তি ক্ষেপে বলে উঠে,
“ওই আপনাকে আমি এতোক্ষণ দশ টাকা দামের নোট বললাম৷”
.
নির্বণ শুকনো ঢুক গিলে,
“তুমি এভাবে অগ্নিমূর্তি ধারণ করে আছো কেন?”
.
নিয়তি হাত এগিয়ে সামনে এগিয়ে দিয়ে,
“মা আমার হাতে কাঁকন পড়িয়ে দিয়েছেন৷”
.
নির্বণ মুচকি হেঁসে,
“তোমাকে খুব সুন্দর মানিয়েছে। কাঁকন জোড়া তোমার হাতেই শোভা পেয়েছে৷”
.
“আপনি কি জানেন? কাঁকন পড়িয়ে দিয়েছেন এই বাড়ির বউ হিসেবে৷ আমি এই বাড়ির বউ হতে চাইনা৷”
.
নির্বণ নিয়তিকে নিচে ফেলে,
“তুমি আমার বিয়ে করা বউ৷ তুমি কেন আমাকে অবহেলা করো৷”
.
“আমি আপনাকে স্বামী হিসেবে মেনে নিতে পারবো না৷ আমাকে বিছানার সাথে চেপে ধরে আছেন কেন?”
.
নির্বণ মলিন কন্ঠে,
“তুমি কি চাও? তুমি চাও আমি অন্য কাউকে বিয়ে করি৷ অন্য কাউকে স্ত্রীর মর্যাদা দেয়৷”
.
নির্বণের কথাগুলো নিয়তির বুকে তীরের মতো লাগল৷ না চাইতেও নিয়তির কপোল বেয়ে জল দুই ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়ল৷ নিয়তি নির্বণের মুখে হাত দিয়ে,
“আপনি অন্য মেয়ের কাছে যান একবার৷ যে পা দিয়ে অন্য মেয়ের কাছে যাবেন সেই পা ভেঙে হাতে ধরিয়ে দিব৷”
.
নিয়তির চুলে মুখ লুকিয়ে নেশা ভরা কন্ঠে,
“তুমি তো আমায় ভালোবাসাে না৷ আমাকে সব সময় ইগনোর করে চলো৷ ভালোবাসা মানুষকে কাছে নিয়ে আসে৷ কিন্তু আমার ভালোবাসা আমাকে দূরে ঠেলে দেয়৷”
.
কথাগুলো নিয়তির কানে ফিসফিস করে বলায় নিয়তি কেঁপে উঠে। নির্বণকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয়৷ কিন্তু নির্বণ ঘাড় ত্যাড়া লোক৷ পিছন থেকে নিয়তিকে জড়িয়ে ধরে৷ নেশা ভরা কন্ঠে,
“আমার প্রশ্নের কোন উত্তর দিলে না তো৷ আমি আমার প্রশ্নের উত্তর জানতে চাই৷”
.
নির্বণের ভারী শ্বাস নিয়তির ঘাড়ে পড়ছে৷ নিয়তি নেশায় হারিয়ে যাচ্ছে৷ নির্বণ এতো কাছে এসেছে যে নিয়তি একটু পর পর কেঁপে উঠছে৷ নিয়তি নির্বণের হাত চেপে ধরে,
“আমার থেকে দূরে সরে যান৷ আমার কেমন জানি লাগতেছে৷ আমি কোন প্রশ্নের উত্তর দিতে রাজি নয়৷”
.
নিয়তির ঘাড়ে ডিপ কিস করে,
“আমি আমার প্রশ্নের উত্তর না পাওয়া অব্দি আমি কোথাও যাবো না৷”
.
ঘাড়ে নির্বণের স্পর্শ পেয়ে নিয়তি চোখ বন্ধ করে নির্বণের হাত আরও চেপে ধরে৷ নিয়তি দেহে রক্ত চলাচলের গতি বেড়ে গেছে৷ শ্বাস ঘন হয়ে যাচ্ছে৷ কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেলছে৷ এমন রোমান্টিক অত্যাচারের সাথে নিয়তি মোকাবেলা করতে পারছে না৷ পারছে না নির্বণকে দূরে ঠেলে দিতে৷ নিয়তি চোখ বুঝে নির্বণের অত্যাচার সহ্য করে যাচ্ছে৷
.
নিয়তি কাঁপা কাঁপা গলায়,
“আমি আপনাকে ভালোবাসি না৷ আপনার প্রতি আমার কোন ইন্টারেস্ট নেই।”
.
নিয়তিকে আরও নিজের সাথে চেপে ধরে,
“তোমার ভালোবাসা আমার লাগবে না৷ আমি আমার ভালোবাসা দিয়ে তোমাকে রাঙিয়ে দিব৷ তুমি আমায় ভালোবাসো কিনা সেদিকে আমার কোন খেয়াল নেই৷ আমি তোমায় ভালোবাসি এটাই আমার কাছে বড়৷”
.
কাঁপা কাঁপা ঠোঁটে নরম স্বরে,
“প্লিজ আমায় যেতে দেন৷ আমার অনেক কাজ আছে৷ এভাবে এখানে শুয়ে থাকলে আমার কোন কাজ হবে না৷”
.
নিয়তির ঘাড়ে নির্বণ নিজের ঠোঁট জোড়া আবারও আলতো করে স্পর্শ করে৷ এই বার নিয়তি নিজেকে আর কন্টোল করতে পারলো না৷ নিয়তিও নির্বণের নেশায় পা দেয়৷ নেশার ঘোরে বলে উঠে,
“আমিও আপনাকে খুব ভালোবাসি। আপনাকে ভালোবাসি বলেই আপনার প্রতি আমার অধিকার বেশি৷”
.
নিয়তি কথা শুনে নির্বণ খুব খুশি হয়ে যায়৷ নির্বণ উঁচু স্বরে আনন্দের সাথে বলে উঠে, আমিও তোমায় খুব ভালোবাসি নিয়তি৷ তোমাকে কখনো আর ঠকাবো না৷ আমি তোমার সব সময় পাশে থাকবো৷”
.
নিয়তি কি বলেছে পরক্ষণেই বুঝতে পেরে লজ্জা পেয়ে দৌড়ে রুম থেকে চলে যায়৷

চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here