#এক_চিলতে_সিঁদুর
#পর্ব_১৭,১৮
#অধির_রায়
পর্ব_১৭
নিয়তি লজ্জা পেয়ে রুম থেকে চলে আসে৷ নির্বণ মুচকি অফিসের কাজ করতে থাকে৷ এখন নিজের কাজ নিজেকেই করতে হবে৷ ছোঁয়া এখন স্বামী সংসার নিয়ে ব্যস্ত৷ নিয়তি দৌড়ে নির্বণের মায়ের রুমে আসে৷ দেখতে আসে তিনি কি করছেন? নিয়তি দেখে তিনি নিজের কাছে ডেকে বসান৷ নিয়তির হাতে হাত রেখে,
“আমি তোমাকে কিছু বলতে চাই৷”
.
নিয়তি অবাক দৃষ্টি মেলে,
“কোন সংকোচ না নিয়ে বলে ফেলেন৷ আমি আপনার কথা মর্যাদা দেওয়ার চেষ্টা করবো।”
.
নির্বণের মা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে নিয়তির হাতে একটা চাবির গোছা তুলে দেন৷ শোভন কন্ঠে বলেন,
“আজ থেকে সংসারের দায়িত্ব তোমার হাতে৷ তুমি নিজ হাতে এই সংসার আগলে রাখবে৷”
.
নিয়তিকে হুট করেই এতো বড় দায়িত্ব দেওয়াতে নিয়তি ভয়ে কাচুমাচু করতে থাকে৷ শুকনো ঢুক গিলে বলে উঠে,
“আসলে মা.. আমি এসব দায়িত্ব বহন করতে পারবো তো৷”
.
নিয়তির হাত ধরে আশ্বাস দিয়ে ,
“তুমি সব পারবে৷ তোমার দ্বারা সব সম্ভব। কোন কিছু থেকে ভয় পেয়ে পিছিয়ে আসবে না৷”
.
“কিন্তু… ”
.
“কোন কিন্তু নয়৷ আমি যা বলছি তাই হবে৷ আজ থেকে এই বাড়ি সামলানোর দায়িত্ব তোমার৷”
.
নিয়তি ভয়ে ভয়ে মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বোধক সম্মতি দেয়৷ নিয়তি চলে যেতে নিলেই নির্বণের মা পিছন থেকে গুরুগম্ভীর কন্ঠে বলে উঠেন,
“আমি তোমাকে এখান থেকে যেতে বলেছি৷ তুমি যাচ্ছো কোথায়?”
.
নিয়তি হতভম্ব হয়ে ভয়ে ভয়ে বলে,
“আসলে মা অনেক কাজ আছে৷ সবার জন্য রান্না করতে হবে৷ এখনো রান্না বসানো হয়নি।”
.
গম্ভীর কণ্ঠে রাগী ভাব নিয়ে,
” যখন তোমাকে যেতে বলবো তখন তুমি যাবে৷ রান্না করার জন্য অনেক লোক আছে৷”
.
নিয়তি ভয়ে ভয়ে হতভম্ব হয়ে,
“ওকে মা৷ নিশ্চয় আপনার কিছু লাগবে? আপনার কি লাগবে? আমাকে বলেন, আমি সব করে দিচ্ছি৷”
.
“আমার কিছু লাগবে না৷ তবে তোমার কাছ থেকে আমি একটা জিনিস চেয়ে নিব৷ তুমি কি আমায় সেই জিনিস দিবে?”
.
“আপনি কি চান? একবার মুখ ফুটিয়ে বলেন৷ আপনার জন্য আমি সবকিছু করতে পারি৷”
.
“আমি আমার ঘরে নতুন সদস্য দেখতে চাই৷ যত তাড়াতাড়ি পারো আমাকে নাতি বা নাতনির মুখ দেখাও৷”
.
নিয়তি লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে ফেলে৷ নিয়তি এমন বিপাকে পড়বে কোনদিন ভাবতে পারেনি। নির্বণের মা নিয়তির মুখ উপরে তুলে,
“এভাবে আমার কাছে লজ্জা পেতে হবে না৷ আমি নতুন সদস্য দেখতে চাই৷”
.
নিয়তি মুচকি হেঁসে কিছু না বলে দৌড়ে চলে আসে৷ নিয়তি মাথায় শুধু তার শ্বাশুড়ির কথাগুলো ঘুরপাক খাচ্ছে৷
______
আজও নিয়তি নির্বণের ঘরে যায়নি৷ নিয়তি নিজের রুমে বসে বসে গান গেয়ে যাচ্ছে৷ নির্বণ ক্ষেপে নিয়তির রুমে পা বাড়াই৷ কিন্তু নিয়তি কন্ঠে কাকের গান শুনে হেঁসে ফেলে৷
“আমার আতা গাছে
গরু ছাগল বাসা বেঁধেছে
হুসস গরু, হুসস ছাগল।”
নিয়তি পিছনে ঘুরে নির্বণকে দেখতে পেয়ে তেলে বেগুনে জ্বলে উঠে। নিয়তি তেড়ে নির্বণের কাছে আসে৷ চোখ পাকিয়ে বলে উঠে,
“আপনি হাসেন কেন? আমি ভালো গান গাইতে পারিনা৷”
.
নির্বণ নিজের হাসি বন্ধ করে অবাক চোখে,
“তুমি গান গাইছিলে! তোমার কন্ঠের প্রেমে পড়ে গেলাম৷”
.
নিয়তি নিজেকে সুপারস্টার দাবী করে,
“আমার গান যে শুনেছে সেই আমার গানের প্রেমে পড়ে যায়৷ শ্রেয়া ঘোষাল আমার কাছ থেকে গান শিখে।”
.
নির্বণ আর নিজের হাসি থামিয়ে রাখতে পারলো না৷ নির্বণ অট্টহাসিতে মেতে উঠে। নির্বণ কোন রকম হাসি থামিয়ে,
“তোমার কাছ থেকে শ্রেয়া ঘোষাল গান শিখে। শ্রেয়া ঘোষালের কপাল এতো খারাপ হলো কবে৷ তোমার মতো শ্রেয়া ঘোষাল কাকের মতো কা কা করে গান বললে; মানুষ তার গানকে রানু মন্ডলের সাথে তুলনা করবে৷”
.
নিয়তি অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে,
“আপনি আমাকে ইনসাল্ট করছেন৷ আমি আপনাকে ছাড়বো না৷”
.
“আমি তোমার প্রশংসা করছি৷ তোমার সাথে আমার নয়, হিরো আলমের বিয়ে হলে ভালো হতো৷ দুই জনে মিলে মনের সুখে গান গাইতে পারতে৷”
.
নিয়তি তেড়ে নির্বণের কাছে আসে৷ নির্বণের পায়ে লাথি দিয়ে চলে যেতে নিলেই নির্বণ নিয়তির কোমর ধরে নিজের সাথে মিশিয়ে নেয়৷ আচমকা এমন ঘটনা গড়তে পারে নিয়তি বুঝতে পারেনি৷ নিয়তি ঠোঁট জোড়া না চাইতেও নির্বণের ঠোঁটের সাথে লেগে যায়৷ নিয়তি তাড়াতাড়ি করে নিজেকে সংযত করে নেয়৷ নির্বণ নিয়তিকে আরও কাছে টেনে নিয়ে আসে৷ নেশা ভরা কন্ঠে,
“তোমার গান আমার কাছে খুব ভালো লেগেছে৷ তোমার কন্ঠ রানু মন্ডলের থেকে কোন অংশে খারাপ নয়৷”
.
নিয়তি কর্কশ কন্ঠে,
“আমি কিন্তু এখন…”
.
নিয়তি কিছু বলতে নিবে তার আগেই নির্বণ নিয়তি ঘাড়ে একটা ডিপ কিস করে৷ নিয়তি কোন কিছু বলার ভাষা হারিয়ে ফেলে৷ নিয়তির সমস্ত শরীর কেঁপে উঠে৷ নিয়তিও নির্বণকে জড়িয়ে ধরে৷
.
নির্বণ দুষ্টু হাসি দিয়ে নিয়তিকে কোলে তুলে নেয়৷ নিয়তি ভয়ে পেয়ে বলে উঠে,
“এই কি করছেন? আপনি অসুস্থ। প্লিজ আমাকে নামিয়ে দেন৷”
.
নির্বণ ভেংচি কেটে,
“আমি এতোটাও দুর্বল নয়৷ তোমাকে বহন করার মতো যথেষ্ট শক্তি আছে৷”
.
“আপনার ভালো চাইলে আমাকে নিতে নামিয়ে দেন৷ আমার ভয় লাগছে৷”
.
“ভয়ের কিছু নেই৷ আমার গলা জড়িয়ে ধরো৷ তাহলে সব ভয় কেটে যাবে৷”
.
“আপনি কিন্তু.. ”
.
নিয়তি কিছু বলার আগেই নির্বণ নিয়তিকে ফেলে দেওয়ার ভয় দেখায়৷ নিয়তি ভয় পেয়ে নির্বণের গলা জড়িয়ে ধরে৷ নির্বণ মুচকি হেঁসে নিয়তিকে নিয়ে হাঁটা শুরু করে৷ নিয়তি চোখ বন্ধ করে নির্বণের বুকে মাথা রেখেছে৷ নির্বণ নিয়তিকে ছাঁদে নিয়ে আসে৷ দোলনায় নিয়তিকে নামিয়ে দেয়৷
.
নিয়তি দীর্ঘ শ্বাস নিয়ে বলে উঠে,
“এতো রাতে ছাঁদে কি করবেন? আমার ভীষণ ঘুম পাচ্ছে৷ আমি চলে গেলাম৷ আপনি ছাঁদে বসে ভুতদের সাথে কথা বলেন৷”
.
নিয়তির কোলে মাথা রেখে,
“তোমার কোলে মাথা রেখে দূর আকাশের চাঁদ দেখতে চাই৷ চাঁদটা যদি পূর্নিমার চাঁদ হতো তাহলে একটা রোমান্টিক মুহুর্ত থাকতো৷ কিন্তু আফসোস পূর্নিমার চাঁদ নয়৷”
.
“আপনি বসে বসে পূর্নিমা রাতের জন্য অপেক্ষা করেন৷”
.
“আমি শুধু তোমার ভালোবাসার জন্য অপেক্ষা করবো৷ অন্য কারোর জন্য অপেক্ষা করবো না৷”
.
তামাশা শহিত বলে উঠে,
“কবি কবি ভাব৷ কিন্তু কোন ছন্দ মেলাতে পারে না৷”
.
নিয়তিকে কোমর আলতো করে জড়িয়ে ধরে,
“আমি শুধু তোমার জন্য কবি হবো৷ তোমার ভালোবাসার কবি হবো৷ সেখানে ছন্দ নয়, ভালোবাসা বুঝাতে পারলেই হলো৷”
.
“আমি জেগে থাকতে পারবো না৷ আমার কোল থেকে উঠে দোলনায় শুয়ে শুয়ে ঘুম আসেন৷ আর অর্ধেক পূর্নিমার চাঁদ দেখে যান৷”
.
অভিমানী স্বরে,
“না পারবো না৷ আমি তোমাকে জড়িয়ে ধরে এভাবে ঘুম আসবো৷”
.
নিয়তি নির্বণকে শুরশুরি দিতে থাকে৷ নির্বণ হেঁসে নিয়তির কোল থেকে মাথা উঠিয়ে নেয়৷ নিয়তি ছাড়া পেয়ে চলে আসতে নিলেই নির্বণ নিয়তির হাত ধরে ফেল৷ নিয়তি অগ্নিমূর্তি ধারণ করে,
“আমার কিন্তু ভালো লাগছে না৷ সকালে আমার অনেক কাজ আছে৷”
.
নির্বণ কিছু না বলে নিয়তিকে পাঁজা কোলায় তুলে নেয়৷ নিয়তির দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে৷ আর হেঁটে নিজের রুমের দিকে যাত্রা শুরু করেছে৷ নিয়তি লজ্জা পেয়ে নির্বণের বুকে মুখ লুকায়৷ নিয়তিকে বিছানায় শুয়ে দেয়৷ তাদের মাঝে সকল ভুল বুঝাবুঝি মিটিয়ে নেয়৷ তারা ভালোবাসার অসীম সাগরে নিমজ্জিত হয়ে যায়।
_________
আঁধার কেটে নতুন দিনের সূচনা হয়৷ ভোরের আলো ফুটে উঠতেই নিয়তির ঘুম ভেঙে যায়৷ নিয়তি নিজেকে আবিষ্কার করে নির্বণের লোমযুক্ত বুকের মাঝে৷ নির্বণ তাকে একদম বুকের সাথে মিশিশে রেখেছে৷ নিয়তি নির্বণের দিকে তাকিয়ে লজ্জা পেয়ে যায়৷ মনে পড়ে রাতের সেই মিলনের কথা৷ নিয়তি আজ সার্থক, নিজের ভালোবাসার মানুষকে নিজের করে পেয়েছে৷ নিয়তি অবুঝ মন আজ নির্বণকে ছাড়তে চাইছে না৷
.
নিয়তিকে বারং বার আকর্ষণ করছে নির্বণের ঠোঁট জোড়া। নিয়তি নিজের লোভ কিছুতেই সামলাতে পারছে না৷ নিয়তি ধীরে ধীরে নির্বণের ঠোঁটের কাছে চলে আসলেই নির্বণ আঁখি মেলে তাকায়। নিয়তি নির্বণের চাহনি দেখে লজ্জা পেয়ে যায়৷ নিজেকে সংযত করে দূরে সরে আসতেই নির্বণ নিয়তিকে ধরে ফেলে৷ নির্বণ ব্রু নাচিয়ে বলে উঠে,
“চুপি চুপি কি চলছে? তুমি আমাকে…”
.
নিয়তি লজ্জা মাখা মুখে অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে,
“কই কিছুনা তো৷ আপনি আমাকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরে আছেন কেন? আমার শ্বাস ফেলতে কষ্ট হচ্ছে৷”
.
নিয়তির নাকে নাক ঘেঁষে,
“সারা রাত যখন জড়িয়ে ধরে ছিলে তখন শ্বাস ফেলতে কষ্ট হয়নি৷ আমি জড়িয়ে ধরলে শ্বাস নিতে কষ্ট হয়৷”
.
নিয়তি চোখ বড় করে,
“আমি মোটেও এমন করিনি৷ ছাড়েন আমাকে, আমার অনেক কাজ রয়েছে৷”
.
“তোমাকে আমি ধরে রেখেছি৷ তুমি যেতে পারো৷”
.
নিয়তি অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে কর্কশ কন্ঠে উঁচু স্বরে বলে উঠে,
“এভাবে দুই বাহুর মাঝে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরে রেখেছে কে?”
.
নির্বণ চোখ টিপল দিয়ে,
“আমি তোমাকে একদম জড়িয়ে ধরিনি৷ আমি আমার ভালোবাসার মানুষকে জড়িয়ে ধরেছি৷ তোমাকে আমি চিনি না৷ কে তুমি?”
.
নিয়তি নির্বণের পেটে চিমটি কাটে৷ নির্বণ “আউচ” বলে নিয়তিকে ছেড়ে দেয়৷ নিয়তি সুযোগ কাজে লাগিয়ে ভেংচি কেটে চলে যায়৷
_______
অনেক দিন পর নির্বণ আজ নতুন করে অফিসে যাচ্ছে৷ অফিসের কোন কিছুই তার নখর দর্পনে থাকলেও কেন জানি আজ নিজেকে অসহায় মনে করছে৷ এতোদিন অফিস সামলিয়েছে ছোঁয়া, আবির৷ এখন ছোঁয়া আবিরের নিজস্ব একটা সংসার হয়ে গেছে৷ আবির নিজের বাবার অফিস সামলাতে ব্যস্ত।
.
নির্বণ নিয়তির দিকে হাঁ করে তাকিয়ে আছে৷ নিয়তি নির্বণের মুখ বন্ধ করে দিয়ে,
“এভাবে হাঁ করে তাকিয়ে থাকলে মুখে মশা ঢুকবে৷”
.
নিয়তি সোনালী পাড়ের লাল রঙের সিল্কের শাড়ি পড়েছে৷ নিয়তির সিঁথিতে সিঁদুর হাতে সোনার কাকন৷ নিয়তিকে খুব সুন্দর দেখাচ্ছে। নির্বণ অপলক দৃষ্টিতে নিয়তির দিকে তাকিয়ে আছে৷ নিয়তি নির্বণের ট্রাই বাঁধতে বাঁধতে,
“আমার দিকে না তাকিয়ে থেকে কাজে মন দেন৷ আমাকে দেখার কোন মানেই নেই৷”
.
নিয়তির কানে ফিসফিস করে নেশা ভরা কন্ঠে,
“তোমাকে অনেক সুন্দর লাগছে৷ লাল শাড়িতে তোমাকে লাল পরী লাগছে৷”
.
“এখন কথা না বাড়িয়ে অফিসে যান। আপনার জন্য মঙ্গল হবে৷ নাহলে আপনাকে মিঠুন দাদার শ্মশানে পাঠাবো।”
.
নির্বণ নিয়তির কপালে আলতো করে ভালোবাসার পরশ একে দেয়৷ মায়ের পায়ে হাত রেখে প্রণাম করে অফিসের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে৷
চলবে…..
#এক_চিলতে_সিঁদুর
#পর্ব_১৮
#অধির_রায়
নিয়তি নির্বণের ভালোবাসার দিনগুলো কেটে যাচ্ছে ধীরে ধীরে ভালোভাবে। ধীরে ধীরে চলে যায় চার চারটি মাস৷ এর মাঝে নিয়তি নিজেকে সংসারের সাথে খাপ খাইয়ে নিয়েছে৷ প্রতিদিনের মতো নিয়তি সকলের জন্য খাবার রান্না করে৷ আজও কোন ব্যতিক্রম হয়নি৷ সকলে টেবিলে বসে ব্রেক ফাস্ট করছে৷ হঠাৎ করেই নিয়তি মাথা ঘুরে পড়ে যায়৷ নিয়তি ফ্লোরে পড়ে যাওয়ার আগেই অন্য সার্ভেন্ট নিয়তিকে ধরে ফেলে৷ নির্বণ যত দ্রুত পারে নিয়তিকে হসপিটালের নিয়ে আসে৷
.
নির্বণ কেবিনের বাহিরে পায়েচারী করছে৷ ডক্টর নির্বণকে রুমে যেতে মানা করেছেন৷ দুশ্চিন্তায় বারং বার কপালের ঘাম মুছে যাচ্ছে। ডক্টর পিছন থেকে বলে উঠেন,
“কংগ্রেস মি. নির্বণ রায়৷ আপনি বাবা হতে যাচ্ছেন৷”
.
নির্বণ আলতো করে ডক্টরকে জড়িয়ে ধরে,
“আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। আমি আজ অনেক খুশি।”
.
ডক্টর চোখ বড় বড় করে,
“আপনি পাগল হলেন নাকি৷ আমাকে এভাবে জড়িয়ে ধরেছেন কেন? আপনি একজন মহিলা! ভুলে গেছেন আপনি?”
.
নির্বণ ডক্টরকে ছেড়ে দেয়৷ মাথা নিচু করে,
“আমি এতটাই এক্সাইটেড ছিলাম যে, উপস্থিত বুদ্ধি হারিয়ে ফেলেছিলাম৷’ দুঃখিত৷”
.
ডক্টর মুচকি হেঁসে,
“ইট’স ওকে। এমন ভুল যেন দ্বিতীয় বার না হয়।”
.
নির্বণ আনন্দের সাথে বলে উঠে,
“ডক্টর আমি নিয়তির সাথে দেখা করতে পারবো কি! আমি নিয়তির সাথে দেখা করতে চাই৷”
.
“হুম আপনি আপনার স্ত্রীর সাথে দেখা করতে পারবেন৷ কিন্তু উনাকে কোন বিরক্ত করা যাবে না৷ দুই ঘন্টা পর উনার জ্ঞান ফিরে আসবে৷”
.
“আমি নিয়তিকে কোন প্রকার বিরক্ত করবো না৷ ”
.
ডক্টর মুচকি হেঁসে চলে যায়৷ নির্বণ ধীর পায়ে নিয়তির দিকে অগ্রসর হতে থাকে৷ নিয়তির যত কাছে আসছে বুকের হার্ট এতো সাড়া ফেলছে৷ দেহের রক্ত সঞ্চালন দ্রুত গতিতে হচ্ছে৷ কাঁপা কাঁপা হাত রাতে নিয়তির হাতের উপর৷ চোখ থেকে টুপ করে দুই ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়ে৷ এটা কোন কষ্টের কান্না নয়৷ আনন্দ মোহিত হয়ে চোখ থেকে জল এসে পড়েছে৷ নিয়তির হাত ধরে তাদের রোমান্টিক মুহুর্তগুলো অনুভব করে যাচ্ছে৷
.
মাঝে মাঝে নার্স এসে নিয়তিকে দেখে যাচ্ছেন৷ নিয়তির হাতে ভালোভাবে স্যালাইন পুষ্ট হচ্ছে কিনা৷ অনেক সময় পর নিয়তি চোখ মেলে তাকায়। এক হাতে ক্যানোলা লাগানো৷ অন্য হাত ধরে রেখেছে নির্বণ। নিয়তি নির্বণের দিকে তাকিয়ে,
“আমার কি হয়েছে? আমি হসপিটালে কেন?”
.
নিয়তি কন্ঠ শুনে নির্বণ নিয়তির দিকে তাকায়৷ নিয়তির মুখে হাত রেখে,
“কোন কথা নয়৷ তুমি আগে সুস্থ হও৷ তারপর তোমাকে সবকিছু বলবো৷”
.
নিয়তি অসহায় দৃষ্টিতে নির্বণের দিকে তাকিয়ে,
“আপনাকে এমন উসকো খুসকো লাগছে কেন? আমার হাতে ক্যানোলা লাগানো কেন? আমার কি হয়েছে?”
.
নির্বণ মুচকি হেঁসে,
“তুমি মা হতে চলছো৷ তোমার গর্ভে বেড়ে উঠছে আমাদের ভালোবাসা।”
.
নিয়তি মুচকি হেঁসে লজ্জা পেয়ে যায়৷ তখনই ডক্টর এসে হাজির৷ নির্বণ ডক্টরকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠে,
“নিয়তিকে আজই বাড়িতে নিয়ে যেতে পারবো৷”
.
ডক্টর মুচকি হেঁসে,
“আমাদের মিষ্টি খাওয়ান৷ আমাদের মিষ্টি খাওয়ালে আজই নিয়ে যেতে পারেন৷ আর আমাদের মিষ্টি না খাওয়ালে আমি বলতে পারবো না৷”
.
নির্বণ কোন কিছু না বলে দ্রুত গতিতে কেবিন থেকে বেরিয়ে যায়৷ নির্বণের এমন কান্ড দেখে উপস্থিত সবাই অবাক হয়ে যায়৷ কিছু বললো না কেন? নিয়তির হাত পা নিমিষেই ঠান্ডা হতে শুরু করলো৷ নিয়তি ডক্টরকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠে,
“প্লিজ ডক্টর কিছু মনে করবেন না৷ মেবি উনার জরুরি কোন কাজ পড়ে গেছে৷ নির্বণ এখনই ফিরে আসবে৷”
.
“ইট’স ওকে। নার্স ক্যানোলা খুলে দেন৷ উনার রিপোর্টগুলো কাল পেয়ে যাবেন৷ আজ কিছু বলতে পারবো না৷”
.
ডক্টর কেবিন থেকে বের হতে নিবে ঠিক তখনই নির্বণ দৌড়ে কেবিনে প্রবেশ করে৷ দৌড়ে আসাতে নির্বণ হাঁফাতে থাকে৷ হাতে মিষ্টির বক্স৷ দেখে বুঝা যাচ্ছে নির্বণ হসপিটালের ক্যান্টিন থেকে কিনে এনেছে। ডক্টরের হাতে মিষ্টির বক্স ধরিয়ে দিয়ে,
” ইচ্ছামতো মিষ্টি খান৷ আমাদের ভালোবাসার জন্য আশীর্বাদ করবেন৷”
.
ডক্টর মুচকি হেঁসে মিষ্টির বক্স হাতে নিয়ে চলে যান৷ নির্বণ নিয়তিকে অতি সাবধানে বাড়িতে নিয়ে আসেন৷ বাড়িতে নতুন অতিথি আসছে৷ সকলের মুখে হাসি৷ নির্বণ সার্ভেন্টদের বলে দেয় তাদের রুম নিজে গুছিয়ে দিতে৷ সিঁড়ি বাইতে যেন নিয়তির কোন কষ্ট না হয়৷
_________
নির্বণ নিয়তিকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে আছে৷ নিয়তির চোখে ঘুম নেই৷ অজানা আশঙ্কা কাজ করতেছে। কাল সব রিপোর্ট ঠিক ঠাক আসবে তো৷ নিয়তির কিছুই ভালো লাগছে না৷ নিয়তি নির্বণের হাত সরিয়ে বিছানা থেকে উঠে পড়ে৷ সারা রুমে পায়েচারী করছে৷ ঘেঁমে একাকার হয়ে যাচ্ছে৷ ব্যালকনিতে এসে র্যাকিং চেয়ারে শুয়ে আছে৷ বাহিরের ঠান্ডা হাওয়া নিয়তির গায়ে লাগছে না৷ ঠান্ডা হাওয়ার মাঝেও নিয়তির একঘেয়েমিতা লেগে আছে৷
.
নির্বণ হাত সারাতেই শূন্যতা অনুভব করে৷ চোখ মেলে তাকিয়ে দেখে নিয়তি বিছানায় নেই৷ নির্বণ তাড়াতাড়ি করে বিছানা থেকে উঠে পড়ে৷ ঘরের লাইট অন করে দেখে নিয়তি ঘরে নেই৷ ব্যালকনির দরজা খোলা দেখে নির্বণ ব্যালকনিতে আসে৷ নিয়তি র্যাকিং চেয়ারে চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে৷ নিয়তির কাঁধে হাত রাখতেই নিয়তি চমকে উঠে।
.
“নির্বণ আভয় বানী দিয়ে,
“এভাবে চমকে উঠলে কেন? কি হয়েছে?”
.
নিয়তি চকিত হয়ে,
“আপনি কি করছেন এখানে!”
.
“আমারও একি প্রশ্ন! এতো রাতে তুমি ব্যালকনিতে কি করছো?”
.
“আমার ঘুম আসছিল না৷ তাই ব্যালকনিতে র্যাকিং চেয়ারে গা এলিয়ে দিয়েছিলাম৷”
.
“হুম সব বুঝলাম৷ কিন্তু এতো রাতে ঠান্ডার মাঝে শুয়ে থাকতে কে বলেছে?”
.
নিয়তি মনে মনে বলে উঠে,
“নির্বণকে কিছুই বুঝতে দেওয়া যাবে না৷ বেচারা এমনি আমার জন্য খুব চিন্তা করে৷”
.
নিয়তির সামনে চুটকি বাজিয়ে,
“কি হলো নিয়তি? কোথায় হারিয়ে গেলে?”
.
“আসলে আমি ভাবছিলাম একটা শাল গায়ে দিতে৷ কিন্তু যাওয়ার আলসেমির জন্য শাল গায়ে জড়াতে পারিনি৷”
.
নিয়তির পেটে আলতো করে ভালোবাসার পরশ একে দিয়ে,
“তোমার গর্ভে আমাদের ভালোবাসা বেড়ে উঠছে৷ এখন কোন অবহেলা করলে চলবে না৷ ঠান্ডা হাওয়ার মাঝে বসে আছো, যদি তোমার ঠান্ডা লেগে যায়।”
.
নিয়তি মুচকি হেঁসে,
“আমি আমাদের ভালোবাসার চিহ্নের কিছু হতে দিব না৷ এসব নিয়ে আপনাকে চিন্তা করতে হবে না৷”
.
“আমি আর কোন চিন্তা করবো না৷ কাল তোমার রিপোর্ট আসবে৷ চল ঘুম আসবে৷ কাল তাড়াতাড়ি উঠতে হবে৷”
.
নিয়তি মাথা ঝাঁকিয়ে হ্যাঁ বোধক সম্মতি জানায়৷ নির্বণ নিয়তিকে পাজা কোলা করে রুমে নিয়ে আসে৷ নিয়তির কপালে আলতো করে ভালোবাসার পরশ একে দিয়ে জড়িয়ে ধরে শুয়ে পড়ে।
________
টান টান উত্তেজনা নিয়ে ডক্টরের সামনে বসে আছে নির্বণ নিয়তি। ভয়ে দুই জনের হাত পা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে৷ নিয়তির মনে যত খারাপ চিন্তা আছে সব মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে৷ ডক্টর মুখ গম্ভীর করে বলে উঠেন,
“মিসেস নিয়তি আমি আপনাকে আবার পরীক্ষা করতে চাই৷”
.
নিয়তি চকিত হয়ে চোখ বড় করে,
“ডক্টর আমার কি হয়েছে? আপনি এভাবে ভয় পেয়ে আছেন কেন?”
.
ডক্টর মুচকি হেঁসে বলে উঠে,
“আসলে কাল অনেক জন একসাথে আসছিল৷ আমি সব রিপোর্ট গুলিয়ে ফেলেছি। তাই আবার আপনাকে চেক আপ করাতে চাই৷”
.
নির্বণ নিয়তির হাতে হাত রেখে,
“ভয়ের কিছু নেই৷ আমি তোমার সাথে আছি৷ আমি থাকতে তোমাদের কোন ক্ষতি হতে দিব না৷”
.
নিয়তি চোখ ভয়ে ছলছল করছে৷ না চাইতেও চোখ থেকে দুই ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়ল। নিয়তি নিজেকে শক্ত করে,
“ওকে ডক্টর। আমি প্রস্তুত৷ আমি কোন কিছুতেই পিছপা হবো না৷”
.
নির্বণকে কেবিনে বসিয়ে রেখে ডক্টর নিজেই নিয়তিকে চেক আপ করতে নিয়ে যান৷ নির্বণ এতোক্ষণ শক্ত থাকলেও এখন ভেঙে পড়ছে৷ প্রায় দুই ঘন্টা হয়ে গেল কেউ আসছে না৷ নির্বণ অনেক বার ডক্টরের কাছে যাওয়ার চেষ্টা করেছে৷ কিন্তু নার্স যেতে মানা করেছে৷
.
সারা রুমে পায়েচারী করে যাচ্ছে নির্বণ। কিছুই বুঝতে পারছে না কি হচ্ছে? নিয়তির সাথে কিছু খারাপ হবে না তো! মনে মনে সৃষ্টি কর্তাকে ডেকে যাচ্ছে৷ তিন ঘন্টা পর নিয়তি আর ডক্টর কেবিনে আসে৷ নিয়তি চোখ মুখ ভয়ে শুকিয়ে গেছে৷ দেখে একদম পাগল লাগছে৷ ডক্টরের হাতে রিপোর্ট।
.
নির্বণ মিয়তিকে জড়িয়ে ধরে,
“আমি তোমার কিছু হতে দিব না৷ তুমি একদম ঠিক হয়ে যাবে৷”
.
নিয়তি ভয়ে ভয়ে বলে উঠে,
“পাগল হলেন নাকি৷ আমার কিছু হয়নি৷ আমি একদম ঠিক আছি৷”
.
গম্ভীর কণ্ঠে ডক্টর বলে উঠে,
“প্লিজ আপনারা বসেন৷ আপনাদের রিপোর্ট আমার হাতে৷”
.
নির্বণ নিয়তিকে ধরে চেয়ারে বসিয়ে দেয়৷ নির্বণ ভয়ে ভয়ে বলে উঠে,
“ডক্টর রিপোর্ট সব নরমাল তো।”
.
ডক্টর নির্বণ নিয়তির দিকে একবার তাকিয়ে মাথা নিচু করে ফেলেন৷ ডক্টর কিভাবে কথাটা বলবে বুঝে উঠতে পারছে না?
.
নির্বণ রাগী দৃষ্টি নিক্ষেপ করে,
“কি হলো ডক্টর? আপনি কিছু বলছেন না কেন?”
.
ডক্টর বারং বার রিপোর্টে চোখ বুলাচ্ছেন৷ আর নিয়তির দিকে তাকাচ্ছেন৷ ডক্টরের চাহনি দেখে নিয়তির যায় যায় অবস্থা। নিয়তি ভয়ে কাচুমাচু হয়ে গেছে।
.
নির্বণের চোখ লাল হয়ে গেছে রাগে৷ ক্ষোভ নিয়ে বলে উঠে,
“আপনি ডক্টর হয়ে তামাশা শুরু করছেন কেন? কি হয়েছে নিয়তির? কিছু বলছেন না কেন?”
.
ডক্টর নির্বণের দিকে রিপোর্ট এগিয়ে দিয়ে,
“নিয়তি দেহে হিমোগ্লোবিন উৎপাদনের পরিমাণ খুব কম৷ নিজ থেকে খুব পরিমাণ হিমোগ্লোবিন উৎপন্ন হয়৷”
.
নির্বণ চকিত হয়ে ভয়ে ভয়ে বলে,
“এখন কি করতে হবে? নিয়তিকে হসপিটালের এডমিট করতে হলে আমি নিয়তিকে হসপিটালে এডমিট করবো৷”
.
ডক্টর গম্ভীর কণ্ঠে,
“আমার কথা এখনো শেষ হয়নি৷ আমার কথা শেষ না হলে কথা বলবেন না৷”
.
নির্বণ মাথা নিচু করে,
“ওকে আর কোন কথা বলবো না৷ আপনি আপনার কথাগুলো শেষ করেন৷”
.
ডক্টরের মুখ থেকে যা শুনতে পাই, তার জন্যে তারা দুই জনের মাঝে একজনও মোটেও প্রস্তুত ছিল না৷ নিয়তি কান্না করতে করতে কেবিন থেকে দৌড়ে বেরিয়ে আসে।
চলবে…..