এক_তুমিতে_আসক্ত #পর্বঃ০৬,০৭

0
3129

#এক_তুমিতে_আসক্ত
#পর্বঃ০৬,০৭
#Writer:#মারশিয়া_জাহান_মেঘ
পর্বঃ০৬

৪১.
অর্ষা আজ ভার্সিটি কেমন কাটালি?
“আর বলিসনা তোকে ছাড়া কি আর ভার্সিটি ভালো লাগে?
” মজা নিচ্ছিস! প্রিয়ন্তিক ভেঙে যাওয়া ফেইস দেখে ফিক করে হেসে ফেলে অর্ষা। অর্ষা প্রিয়ন্তিকে জড়িয়ে ধরে বললো,”ওহু মুটেও এইটা মজা না। সত্যি বলছি।
“তোর কি কিছু হয়েছে অর্ষা?
” না কই কিছু হয়নিতো।

প্রিয়ন্তি অর্ষার থুতনিতে ধরে নিজের দিকে মুখ ঘুরিয়ে বললো,”দেখ তুই হাসছিস ঠিক আছে। কিন্তু তোর এই হাসি একদম মন থেকে যে আসছেনা..তা আমি বেশ ভালোই বুঝতে পেরেছি৷ সত্যি করে বলতো কি হয়েছে? অর্ষা এইবার আনমনেই চোখের পানি ছেড়ে দিলো। তারপর প্রিয়ন্তিকে ভার্সিটির সব ঘটনা খুলে বলে। প্রিয়ন্তি রেগে বললো,”কি ওর এতো বড় সাহস তোকে মেরেছে? ওই ছারিন কেতো আমি….
অর্ষা প্রিয়ন্তিকে জড়িয়ে ধরে বললো,থাক বাদ দে প্রিয়।

৪২.

কিরে প্রান্তিক কেমন আছিস? আচমকা পরিচিত কন্ঠ পেয়ে ল্যাপ্টপের থেকে দৃষ্টি সরিয়ে দরজার দিকে তাকালো প্রান্তিক৷ বিষ্ময়ের সাথে মুখে বেরিয়ে এলো..”আভেশ!
প্রান্তিক ল্যাপটপটা বিছানায় রেখে গিয়ে জড়িয়ে ধরে আভেশকে। আভেশ চুল গুলে হাত দিয়ে ইন্সারসিং করতে করতে বললো,”বাহ চিনতে পেরেছিস তবে! আমিতো ভেবেছিলাম তুই আমাকে চিনবিইনা। প্রান্তিক আভেশের পিঠে হালকা এলটা স্লাইড করে বললো,”আভেশ মজা করার হেবিট টা তোর এখনো যায়নি দেখছিস। তুই সে আগের মতোই আছিস।
” কি করবো বল, কোনো রমণীতো আর আমার জীবনে আসেনি যে দেবদাস থেকে রোমিও করে তুলবে [ ঠোঁট উল্টিয়ে ]

আভেশের কথা শুনে হো হো করে হেসে দিলো প্রান্তিক।

৪৩.

মা অর্ষা প্রান্তিকের রুমে দু’কাপ কফি দিয়ে আসবি মা? আসলে রুপা [ কাজের মেয়ে ] আজ আসছেনাতো তাড়াতাড়ি তাই তাকে দিয়ে পাঠাতে পারছিনা এখন। আর প্রিয়ন্তিতো জ্বরে ঘুমে আছে।…মনিশা চৌধুরীর আকুতি স্বরে কথা বলা দেখে, অর্ষা মুখ ফুলিয়ে বললো,”হুম খালামনি আমিতো আর তোমার মেয়েনা বলো! মেয়ে হলে কি আর কেউ এইভাবে বলে!
“ওমা না না মা আমি ওমনভাবে বলতে…মনিশা চৌধুরীকে আর কোনো কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে অর্ষা হেসে বললো,” ওফ খালামনি আমিতো এমনি বলছিলাম। আচ্ছা দাও আমি দিয়ে আসি। আচ্ছা খালামনি…দু’কাপ কেনো? প্রান্তিক ভাইয়া কি দু’কাপ কফি খাবে?

মনিশা চৌধুরী অর্ষার কথা শুনে হেসে বলে, আরে না না। আসলে আভেশ এসেছে। প্রান্তিকের ছোট বেলার বন্ধু। অনেকদিন পর আজ আভেশ দেশে ফিরেছে। ছোট সময় মা-বাবা একটা কার এক্সসিডেন্টে মারা যায়..এরপরে আমি আর তোর খালুজান এইখানে নিয়ে আসি আভেশকে। এরপর পড়াশোনার জন্য বাইরে পাঠায়। আভেশ আমাদের আরেকটা ছেলে বলতে পারিস। অর্ষা মুগ্ধ হয়ে শুনছে তার খালামনির কথা। কতোটা ভালো মানুষ ওনারা তা না দেখলে হয়তো অজানায় থাকতো।

৪৪.

প্রান্তিকের রুমের দরজার সামনে এসে অর্ষা হুড়মুড় খেয়ে পড়ে যেতেই কেউ একজন অর্ষার কোমড়ে ধরে তাকে সামলায়। অর্ষা ভয়ে চোখ বন্ধ করে কারো একজনের শার্টের বুকের জায়গাটায় খামচে আছে।

“অর্ষা….

হঠাৎ প্রান্তিকের ডাকে চোখ খুলে তাকায় অর্ষা। চোখ খুলে অর্ষা পুরাই ” থ” সাদা শার্ট এর উপর ব্লেজার পড়া..চুলগুলি সিম্পলিভাবে সুঠাম সুদর্শন এক যুবক তাকিয়ে আছে একমনে অর্ষার ভীত ফেইসে। হঠাৎ অর্ষার চোখ যায় ওয়াশরুমের দরজার সামনে চোয়াল শক্ত করে দাঁড়িয়ে আছে প্রান্তিক। অর্ষা তাড়াতাড়ি উঠে নিজের ওড়না সামলায়।

প্রান্তিক সামনে এসে বললো, “কি হয়েছে আভেশ?
” আসলে ওনি পড়ে যাচ্ছিলেন তাই…
“এই মেয়ে চোখ কি অন্ধ দেখে চলাফেরা করতে পারোনা? আর তোমাকে কে বলেছে কফি আনতে? রুপা কোথায়? অর্ষা মাথা নিচু করে চুপ হয়ে আছে। প্রান্তিক রেগে এক নিশ্বাসে কথা গুলো বলে অর্ষার দিকে অনল দৃষ্টি নিক্ষেপ করেছে। আভেশ অর্ষার দিকে এক পলক তাকিয়ে বললো,” আরে প্রান্তিক ছেড়ে দেনা। ওনারতো কোনো দোষ নেই। দরজার সামনে একটু পানি পরেছিলো তাইতো…
“থাম আভেশ” ভালোভাবে দেখে চলাফেরা করতে পারেনা? এই মেয়ে যাও এইখান থেকে। কফির বারোটাতো বাজিয়েইছো আবার কফি নিয়ে এসেছিলে?

“অর্ষা বরাবরের মতো চুপই আছে। সে চুপচাপ প্রান্তিকের রুমের বাইরে পা ফেললো।

” প্রান্তিক তুই শুধু শুধু মেয়েটাকে এতো কথা শুনালি। আসলেই কিন্তু ওর কোনো দোষ ছিলোনা।
“চল..ফ্রেশ হয়ে আয়। একসাথে খেতে নিচে যাবো।

আভেশ আর কিছুই বললোনা। কারণ সে জানে প্রান্তিক কে এখন এইসব বলা যেই কথা না বলা একই কথা।

৪৫.

অর্ষা…অর্ষা…প্রান্তিকের উচ্চ স্বরে অর্ষা তাড়াতাড়ি রুম থেকে বের হয়ে আসে।
” ক কি ভাইয়া?
“তুমি নাকি খাবেনা?
” না আসলে ভাইয়া.
“শাট আপ..চলো টেবিলে….. প্রান্তিক অর্ষার হাত ধরে সিঁড়ি দিয়ে নামছে। আভেশ এক ধ্যানে তাকিয়ে মনে মনে কি একটা ভেবে যেনো হেসে ফেললো।

হালকা আকাশী রংয়ের টিশার্টে প্রান্তিক কে বেশ মানিয়েছে। অর্ষা একদম সাধারণ মেয়ে। সালোয়ারের সাথে কামিজ পড়েছে। নীল রংয়ের।

টেবিলে খেতে বসতেই প্রান্তিক আড়চোখে অর্ষাকে দেখে বললো, ” আভেশ মেয়েরা চোখে কাজল পরলে একটু বেশি মায়াবী হয়ে যায় তাইনা? প্রান্তিকের কথা শুনে অর্ষা চোখ নিচে নামিয়ে ফেলে৷ আভেশ অর্ষার দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে বললো,”হুম শুধু মায়াবী নয় বল মায়াবতী হয়ে যায়। হঠাৎ খাবার টেবিলে প্রিয়ন্তির এন্ট্রি।

“আভেশ ভাই তুমি আমার রুমে একটাবার গিয়ে আমাকে দেখে আসলেনা? [ মনটা খারাপ করে ]
আরে প্রিয় রাগ করছিস কেনো? তোর জ্বর ঘুমিয়ে ছিলি তাই আর ডাকা হয়নি। প্রিয়ন্তি একটু আভেশের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে রুটি ছিড়তে ছিড়তে বললো,” আভেশ ভাই বিয়ে টিয়ে করবেনা নাকি?
“আল্লাহ যখন চাইবে অবশ্যই করবো। প্রান্তিক বললো,” আল্লাহ চায় কিন্তু তুই চাসনা ওইটা বল।

প্রিয়ন্তিঃ আচ্ছা আভেশ ভাই তোমার কেমন মেয়ে পছন্দ? আভেশ অর্ষার দিকে তাকিয়ে বললো,”মায়াবী, হাসি-খুশি, তার ভীত চাহনিতেও যেনো একটা মায়া থাকে। তার মধ্যে ম্যাচিউরিটি থাকা চায়। প্রান্তিক আভেশকে অনুসরণ করে অর্ষার দিকে তাকালো। আর মনে মনে ভাবছে,”আভেশের কথার মধ্যে কিছুতো একটা ছিলোই।

৪৬.

এই প্রান্তিক কোথায় ছিলি? ইরফানের প্রশ্নে প্রান্তিক পাশে থাকা প্রিয়ন্তি আর অর্ষার দিকে তাকিয়ে বললো,”তোমরা যাও আমি আসছি।
ওরা যেতেই প্রান্তিক ভ্রু কুচকে বললো,”কেনো আমাকে খুঁজছিলি বোধহয়!
“হুম খুঁজবোইতো। আজ ছারিন নাকি কি করবে।
” কি করবে?
“তোর কপালে নাকি দুঃখ আছে।
” দুঃখ! প্রান্তিক চৌধুরীর কপালে? প্রান্তিক ফিক করে হেসে দেয়। শৈবাল বললো,ভাই বি সিরিয়াস। ছারিন নাকি ভার্সিটির ছাঁদ থেকে লাফ দিবে তুই ওর প্রপোস এক্সসেপ্ট না করলে। প্রান্তিক চোখে সানগ্লাসটা পরে একটা ডিবেল স্মাইল দিয়ে বললো, দিতে দে লাফ। আমিও দেখি ছারিন মাহাদীয়ার কতো বড় হৃদপিণ্ড।

চলবে….

#এক_তুমি_আসক্ত
#পার্টঃ০৭
#Writer:#মারশিয়া_জাহান_মেঘ

৪৭.

এই অর্ষা তাড়াতাড়ি বাইরে চল…প্রিয়ন্তির এমন তাড়াহুড়ো করা কথা শুনে অর্ষা ভ্রু কুচকে বললো, “কেনো কি হয়েছে? প্রিয়ন্তি বিরক্তি নিয়ে বললো,” আরে আগে চলইনা। তাড়াতাড়ি চল.. প্রিয়ন্তি অর্ষার হাত ধরে তাড়াতাড়ি ক্লাসরুমের বাইরে গেলো। অর্ষাদের সাথে পুরো ক্লাসের ছেলে-মেয়েরাও বের হলো।

৪৮.

অর্ষা ভার্সিটির মাঠে এতো ভীড় দেখে অবাক হয়ে বললো, “কিরে এতো ভীড় কেনো!
” ছাঁদের উপরে তাকা” প্রিয়ন্তির কথায় অর্ষা ছাঁদের দিকে তাকাতেই হচকিয়ে যায়। ছাঁদের রেলিংশে ছারিন দাঁড়িয়ে আছে।

“এই প্রান্তিক প্লিজ এক্সসেপ্ট করে নে প্লিজ” কারো কন্ঠে এই কথা শুনে অর্ষা সামনে বাইকে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা প্রান্তিক কে দেখলো। এতোক্ষণ সে প্রান্তিক কে খেয়াল করেনি এখন করেছে। তার মানে!.. অর্ষা এইসব ভাবতেই হোট করে যেনো অর্ষার কি হলো.. অর্ষা গিয়ে প্রান্তিকের হাত ধরে ফেলে তাড়াতাড়ি। প্রান্তিক ওইসময় ফোন টিপছিলো অর্ষা হুড়মুড় খেয়ে হাত ধরাতে ফোনটা পড়ে যায়। প্রান্তিক বিষ্ময় নিয়ে অর্ষার দিকে তাকিয়ে বললো,”কি হয়েছে অর্ষা?
“প্লিজ ওনি যা বলছেন…তা এক্সসেপ্ট করে নিন প্লিজ। অর্ষার কথা শুনে প্রান্তিকের গা জ্বলে উঠে। প্রান্তিক কঠোর চক্ষু নিয়ে অর্ষার দিকে তাকায়। কিন্তু অর্ষা তবুও দমে যায়নি। অর্ষার এই মুহূর্তে ভয় পেলে চলবেনা কারণ তার মনে হচ্ছে এইটা একটা মেয়ের জীবনের মরণ বাঁচার বিষয়।

এইদিকে প্রিয়ন্তি হাতের নখ মুখ দিয়ে কাটতে কাটতে ভাবছে,,” হয়ে গেলো। এখন ভাইয়া যে অর্ষা কে কি করে একমাত্র আল্লাহ এই জানে। প্রিয়ন্তি তাড়াতাড়ি ব্যাগ থেকে ফোন বের করে কাকে যেনো কল দিলো।

প্রিয়ন্তিঃ ভাই গন্ডগোল হয়ে গেছে। তাড়াতাড়ি ভার্সিটিতে আসো।
ওপাশ……
“তুমি আসলেই বুঝতে পারবা তাড়াতাড়ি আসো প্লিজ।
ওপাশ….
” ঠিক আছে”।

“আই লাভ ইউ প্রান্তিক ” আই লাভ ইউ… প্রান্তিক তুমি যদি আমাকে ভালোবাসি না বলো আমি এক্ষুনি এই মুহুর্তে সুইসাইড করবো”

ছারিন ছাঁদ থেকে চিৎকার করে বলছে। প্রান্তিকের কানে এই কথা পৌঁছাতেই প্রান্তিকের গাঁ জ্বলে উঠছে। অর্ষা প্রান্তিকের হাত এখনো ধরে আছে। প্রান্তিকের হাত ধরেই ছাঁদের দিকে তাকিয়ে আছে সে। আর প্রান্তিক তাকিয়ে আছে অর্ষার দিকে। ছারিনের এইসবে যেনো তার কোনো কিছু যায়ই আসেনা। অর্ষা..ছাঁদের দিকে তাকিয়ে ভীত কন্ঠে প্রান্তিকের হাত ঝাড়তে ঝাড়তে বললো,”প্লিজ..এক্সসেপ্ট করে নিন প্লিজ।
“অর্ষা আর একবার এই কথা বললে… অর্ষা এখন ছারিনের থেকে দৃষ্টি সরিয়ে প্রান্তিকের দিকে তাকালো। প্রান্তিকের চোখে যেনো আগুন জ্বলছে। অর্ষা কিছু বলতে যাবে তার আগেই ছারিন আবার চিৎকার করে বললো,” Say Love You too Prantik…Please Say.

পুরো ভার্সিটিতে মানুষের ভীড়। একজন আরেকজনকে বলছে…মেয়েটা এই বুঝি পড়ে যাবে। এইসব অর্ষার কানে আসতেই অর্ষার প্রান যায় যায় অবস্থা। অর্ষা প্রান্তিক কে কিছু বলবে তার আগেই প্রান্তিক গম্ভীর কন্ঠে ডাকলো “প্রিয়”… প্রিয়ন্তি ভাইয়ের ডাকার মানে বুঝতে পেরে তাড়াতাড়ি ভয়ে ঘাবরে অর্ষার হাত টেনে নিজের পাশে দাঁড় করালো।

” প্রিয়ন্তি প্লিজ ছাড় আমায় প্লিজ”…প্রান্তিকের দিকে তাকাতে তাকাতে বললো অর্ষা।

৪৯.

“ইশশ এই প্রান্তিক কেনো আমাকে এক্সসেপ্ট করছেনা…বিরক্ত নিয়ে কথাটা মনে মনে বললো ছারিন। এখনতো পুরো ভার্সিটির মানুষ জমে গেছে। এখন সে কি করবে! সবাইতে পরে বলবে যে আমি নাটক করছিলাম। এইসব বিড়বিড় করে ভাবতে থাকলো ছারিন।

৫০.

এই প্রান্তিক প্লিজ ছারিনকে আটকা..প্লিজ..অনিকের কথা শুনেও প্রান্তিকের কোনো হেলদোল নেই। সে নিজের মন মতো ফোনে ফেইসবুকিং করছে। অর্ষা উত্তেজিত হয়ে একবার প্রান্তিক আরেকবার ছারিনের দিকে তাকাচ্ছে।

কি হয়েছে প্রান্তিক? আভেশের কন্ঠ পেয়ে প্রান্তিক ফোন থেকে দৃষ্টি সরিয়ে সামনে তাকিয়ে বললো,”আভেশ তুই এইখানে!
” প্রিয়ন্তি আসতে বললো কি হয়েছে এইখানে? প্রান্তিক বাঁকা হেসে ফোনটা পকেটে রেখে চোখে সানগ্লাসটা পরে একটা বড় নিশ্বাস ছেড়ে বললো, ” কি আর বিনা টিকিটে ড্রামা চলছে এইখানে।
“মানে!
” উপরে তাকা”

প্রান্তিকের কথামতো উপরে তাকাতেই আভেশ হা হয়ে প্রান্তিকের দিকে তাকিয়ে ফিক করে হেসে দিলো। হাতে হাত মিলালো দুই বন্ধু। আভেশ হাসতে হাসতে বললো,”ওফ ছারিন না? প্রান্তিক হাসতে হাসতে বললো,”হুম ড্রামা কুইন”।

৫০.

প্রিয়ন্তি আর অর্ষা এমন সিরিয়াস বিষয়ে দুই বন্ধুকে এমনভাবে হাসতে দেখে অবাক হয়ে যায়।
“প্রিয়ন্তি একটার ডন্ট কেয়ার ভাব না হয় মেনে নিলাম কিন্তু তোর ভাইয়ের বন্ধু আভেশ ভাইয়াও!
” আমিতো সেইটাই ভাবছি অর্ষা। এইটা কি হলো? আমি আভেশ ভাইকে কল দিলাম ব্যাপারটা সামলাতে কিন্তু এখনতো দেখি ওনি নিজেই পাগল হয়ে গেছে আমার ভাইয়ার মতো। অর্ষা আর এক মুহুর্তও ওইখানে না দাঁড়িয়ে সোজা সাপ্টা চলে গেলো প্রান্তিক আর আভেশের সামনে। প্রিয়ন্তি পেছন থেকে বার বার বলছে,,”অর্ষা যাসনা প্লিজ ভাইয়া রেগে যাবে..অর্ষা….

৫১.

এই যে ভাইয়া আপনাকে প্রিয়ন্তি কি এইখানে ডেকে পাঠিয়েছে হাসার জন্য? নাকি পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার জন্য? অর্ষার নির্ভয়ে এক নিশ্বাসের কথা শুনে আভেশ কিছুটা নড়েচড়ে বসলো। আভেশ প্রান্তিকের দিকে অসহায় ফেইস নিয়ে তাকালো। প্রান্তিক বুঝতে পেরে অর্ষাকে রাগী কন্ঠ নিয়ে বলল,”অর্ষা তোমাকে না বলেছি প্রিয়ন্তির কাছে যেতে? যাও বলছি…প্রান্তিকের ধমক শুনে অর্ষা চুপসে যায় প্রিয়ন্তির কাছে। প্রিয়ন্তি ফোঁড়ন কেটে বললো,”বললামতো এতো করে যাসনা যাসনা..কিন্তু পেত্নীর কানে কি আর ভালো মেয়ের কথা হজম হয়? অর্ষা ক্ষিপ্ত চোখে প্রিয়ন্তির দিকে তাকাতেই প্রিয়ন্তি চুপসে গিয়ে বললো,”আরে রাগ করছিস কেনো আমিতো ভালোর জন্যই বললাম।

“প্রান্তিক ছারিনের ড্রামা কি দেখবিই নাকি যাবও এখন?
” প্রান্তিক বাঁকা হেসে বললো,দাঁড়া একটু… এইটা বলেই প্রান্তিক উপরের দিকে তাকিয়ে ছারিনকে চিৎকার করে বললো,”Hey Sarin….Hurry Up do it” প্রান্তিকের কথায় পুরো ভার্সিটির মানুষ অবাক সাথে অর্ষাতো এই সেন্সলেস হবে বলে…অর্ষা প্রিয়ন্তির কাঁধে খোচা মেরে ফিসফিস করে বললো,”এই প্রিয়ন্তি তোর ভাই কি জেলে যেতে চাইছে নাকি?
“ওফ অর্ষা দেখনা কি হয়..।

প্রান্তিক অনেক্ষন তাকিয়ে আছে ছাঁদের দিকে। এরপর দেখলো ছারিন রেলিং থেকে নেমে পড়লো। এইটা দেখে আভেশ আর প্রান্তিক হাসে আর অর্ষা স্বস্তির নিশ্বাস ফেললো। প্রান্তিকের একদম কাছাকাছি এসে ছারিন বললো,” আজকে মরেই যেতাম কিন্তু আমি মরলে তোমাকে নিয়েই মরবো..এইটা বলে ছারিন কোনোরকম মএখ টুখ ডেকে ভার্সিটি থেকে পালালো। আর এইদিকে শৈবাল অনিক, ইরফান আভেশ অট্টহাসিতে লুটিয়ে পড়ে। আর প্রান্তিক অর্ষার দিকে তাকিয়ে মিনমিনেয়ে হাসলো।

৫২.

ভার্সিটি থেকে ফিরতেই প্রান্তিক শার্টের দুইটা বোতাম খুলে কলারটা একটু পিছু ঝুঁকে সোফায় হাত পা ছেড়ে বসে পড়লো। পাশে বসলো আভেশ। প্রিয়ন্তি সিড়ি দিয়ে উপরে উঠছে। অর্ষা যেই যেতে যাবে…এমন সময় প্রান্তিক তাকে থামিয়ে দেয়।

“এইখানে এসো”
“ক কেনো ভাইয়া?
” আমি বলছি তাই” প্রান্তিকের তেজি কথায় অর্ষা চুপচাপ তার সামনে মাথা নিচু করে দাঁড়ায়। প্রান্তিক অর্ষার দিকে তাকিয়ে বললো,”বসো। প্রান্তিক এইবার আভেশের দিকে তাকিয়ে বললো,” আভেশ বল এখন কলেজ লাইফের কাহিনীটা। অর্ষা এইবার মাথা তুলে দুইজনের দিকে তাকালো। আভেশ অর্ষার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললো,” প্রান্তিক আর আমি যখন কলেজে পড়তাম তখন আমাদের সাথে ছারিনও পড়তো। ওইসময় থেকে প্রান্তিক কে পছন্দ করে ছারিন। আজকের মতো ড্রামা একবার নয় অনেকবার করেছে সে। আভেশের কথা শুনে অর্ষা অবাক। একটা মেয়ে এইসব আলগা ঢং কিভাবে করে!আল্লাহ। অর্ষা…আভেশের ডাকে হুশ ফিরে অর্ষার। অর্ষা প্রান্তিকের দিকে তাকিয়ে দেখলো,”প্রান্তিক অর্ষার দিকে চেয়ে আছে। চোখাচোখি হতেই অর্ষা চোখ নামিয়ে নেই। অর্ষা সেইখান থেকে কোনো লিছু না বলে পা বাড়িয়ে চলে যায় উপরে।

৫৩.

“তোর ভাই যেই রকম ভাবে ডন্ট কেয়ার ভাব নিয়েছিলো আমিতো ভেবেছি ছারিন নামের মেয়েটা সত্যি সত্যি লাফ মারবে। বুঝলাম মেয়েটা তেমন ভালোনা। কিন্তু কাউকে ভালোবাসাতো অপরাধ নয়”… প্রান্তিক নিচ থেকে উপরে উঠে নিজের রুমে যাচ্ছিলো..প্রিয়ন্তির রুম পের হয়ে যেতে হয় প্রান্তিকে রুমে। প্রান্তিক নিজের রুমে যাচ্ছিলো হঠাৎ এই কথাগুলো শুনে পা থমকে দাঁড়ালো। উঁকি দিয়ে দেখলো অর্ষা প্রিয়ন্তিকে এইসব বলছে। অর্ষা একটার পর একটা বলেই যাচ্ছে। প্রিয়ন্তি হঠাৎ চুপসে যায়। অর্ষাকে চোখ দিয়ে ইশারা করছে পিছু তাকাতে কিন্তু বেচারি অর্ষা সেকি আর জানে চোখ লাল করে রেগে তার দিকে তাকিয়ে কথাগুলো শান্ত মাথায় হজম করছে প্রান্তিক। হঠাৎ অর্ষা পিছু তাকাতেই দুই পা পিছে চলে যায় ভয়ে। প্রান্তিক অর্ষার দিকে তাকিয়ে প্রিয়ন্তিকে বললো,” আম্মু তোকে ডাকছে নিচে যা। এই কথা শুনতেই প্রিয়ন্তি দৌঁড়ে চলে যায় তাকে আর পাই কে! প্রান্তিক..অর্ষার হাত হেচকি দিয়ে নিজের কাছে এনে ফেলে। একজন আরেকজনের হৃদপিণ্ডের ধুক ধুক শব্দ কর্ণপাত করতে পারছে। অর্ষা ঘাবড়ে বললো,ভ ভা ভাইয়া..কি করছেন ছাড়ুন…প্রান্তিক অর্ষার কোমড় আরো শক্ত করে ধরে বললো,”কতটুকু জানো তুমি ছারিন সম্পর্কে? আর ভালোবাসা অপরাধ নয়? তাহলে কেনো প্রতি মুহুর্তে ভালোবাসার অনলে পুড়ে আমি ছাড়খার হচ্ছি কেনো বলো? Ans me… এইটা বলেই প্রান্তিক রেগে চলে যায়। আর অর্ষা ঠাই তার জায়গায়ই দাঁড়িয়ে আছে। স্টেচু হয়ে।

“ওই মেয়েটাকে দেখার পর কি হয়েছে আমার? শান্তিতে কোথাও স্থির হয়ে থাকতে পারছিনা৷ বার বার ওর মুখের প্রতিচ্ছবি আমাকে অশান্ত করে তুলছে। এর আগেতো কখনে এমন হয়নি” এইসব ভেবে দেয়ালে ডিপ হাত দিয়ে একটা পাঞ্চ মারে আভেশ।

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here