এক_তুমিতে_আসক্ত #পার্টঃ০৪,০৫

0
2977

#এক_তুমিতে_আসক্ত
#পার্টঃ০৪,০৫
#Writer:#মারশিয়া_জাহান_মেঘ
পার্টঃ০৪

২০.
প্রান্তিক অর্ষা আর প্রিয়ন্তি গাড়ি থেকে নামতেই..প্রান্তিক কে দেখে..শৈবাল ইরফান অনিক আর ছারিন প্রান্তিকের কাছে যায়। প্রান্তিকের পাশে অর্ষাকে দেখে ভ্রু কুচকে প্রান্তিক কে ছারিন বললো, “প্রান্তিক তোমার সাথে এই মেয়েটা কেনো? প্রান্তিক অর্ষার দিকে এক পলক তাকিয়ে কিছু না বলে ছারিনকে বললো, ” আচ্ছা সবাই চল ক্যাম্প এ বসি। এর মধ্যে প্রিয়ন্তি আলতো হেসে বললো, “ছারিন আপু..ও আমার কাজিন অর্ষা। এইতো গতকালই আমাদের বাসায় উঠেছে। অর্ষা চুপসে আছে। ছারিন মেয়েটাকে দেখলেই অর্ষার কেমন একটা ভয় ভয় লাগে।

২১.

অর্ষা তুই ওইযে দেখলিনা একটা মেয়েকে? ওইটার নাম ছারিন মাহাদীয়া। আদারস নেইম লেডি ডন বলতে পারিস। অর্ষা প্রিয়ন্তির কথা শুনছে আর প্রিয়ন্তির খাতা থেকে নোটগুলো নিজের খাতায় তুলছে। আর এইদিকে প্রিয়ন্তি বকবক করেই যাচ্ছে। প্রিয়ন্তি বিরক্ত নিয়ে অর্ষার হাত থেকে কলমটা কেড়ে নিয়ে বলল,” ওফ অর্ষা আমি বকবক করেই যাচ্ছি আর তুই আমার কথা না শুনে লিখছিস? নোট তো আর উড়ে যাচ্ছেনা তাইনা? বাসায় গিয়ে লিখিস।
“আমিতো শুনছি৷ তুই বল আমি শুনি আর লিখি।

২২.

প্রান্তিক ওই মেয়েটা তোর কাজিন আর তুই ওকে যার্গ করলি? শৈবালের কথায় প্রান্তিক চুলগুলো পিছনে নিতে নিতে বাঁকা হাসলো। শৈবালের পাশ থেকে ইরফান বললো, ” হুম হুম ঠিক। তুই কিভাবে করলি এইটা? তুই যার্গ করেছিস এইটাতো আমি ভাবতেই পারিনা।
“দেখো প্রান্তিক তুমি ওই মেয়েটার সাথে একদম মিশবেনা বুঝলে?
” দেখ ছারিন তোকে আগেও বলেছি আবারো বলছি ভুলেও একদম গার্লফ্রন্ড হওয়ার ট্রাই করবিনা ( কথাটা বলে প্রান্তিক হাতের গিটারটা নিয়ে বাজাতে লাগলো। ইরফান সবসময় গিটার আনে শুধুমাত্র প্রান্তিকের জন্য)

২৩.

ক্লাস শেষে অর্ষা আর প্রিয়ন্তি একসাথে বের হতেই.. ব্লু শার্ট আর অফ হোয়াইট কালারের প্যান্ট পরা একটা ছেলে অর্ষার দিকে হাত বাড়িয়ে একটু হেসে বললো, “হাই আমি নেওয়াজ। তোমাদের সাথেই পড়ি। অর্ষা হাত বাড়াতে যাবে এমন সময়..” এই তোরা এইখানে কি করছিস হুম? এই কথাটা শুনতেই সামনে অর্ষা আর প্রিয়ন্তি প্রান্তিক কে দেখতে পায়৷ অর্ষাতো প্রান্তিক কে দেখেই ভয় পেয়ে গেছে। প্রান্তিক অর্ষার দিকে এমনভাবে রাগী লুক নিয়ে তাকিয়ে আছে,এই বুঝি অর্ষাকে চোখ দিয়েই ভশ্ম করে দিবে।

“না মানে ভাইয়া। নেওয়াজ আমাদের ক্লাসে পরে। তাই পরিচিত হচ্ছে।
” প্রিয়ন্তি তুই গাড়িতে গিয়ে বস। প্রিয়ন্তি প্রান্তিকের গম্ভীর কন্ঠ শুনে অর্ষাকে না নিয়েই দৌঁড়ে চলে গেলো। অর্ষা যেই যেতে যাবে তখনি প্রান্তিক অর্ষার হাত ধরে ফেলে। অর্ষার হাত ধরে অর্ষাকে প্রান্তিকের পাশে এনে দাড় করিয়ে নেওয়াজকে বললো, পরিচিত হতে চাচ্ছিলেনা? নেওয়াজ আমতা আমতা করে বললো,হুম ভাই। প্রান্তিক অর্ষার হাত মচকাতে মচকাতে বললো, “She is My Future.. So Don’t Look at him..Mind it? অর্ষা প্রান্তিকের মচকানোতে হাতে প্রচন্ড ব্যাথা পাচ্ছিলো কিন্তু তাও দাঁতে দাঁত চেপে দাঁড়িয়ে ছিলো। কিন্তু প্রান্তিকের এই কথাতে অর্ষা অবাক হয়ে প্রান্তিকের দিকে তাকালো৷ সে কি শুনলো? এই লোকটা কি পাগল টাগল হয়ে গেলো নাকি? নেওয়াজ অবাক হয়ে একবার অর্ষার দিকে আরেকবার প্রান্তিকের দিকে তাকাচ্ছে। প্রান্তিক একটু হেসে চোখে সানগ্লাসটা পড়ে অর্ষার হাত টানতে টানতে গাড়ির সামনে নিয়ে এসে রাগী কন্ঠে বললো,” সামনে বসো। অর্ষা ভয়ে আর কথা না বাড়িয়ে সামনে বসলো। পিছনে প্রিয়ন্তির দিকে তাকাতেই প্রিয়ন্তি চোখ টিপ মারলো। অর্ষার এখন ইচ্ছে করছে প্রিয়ন্তিকে কচু গাছে ফাঁসি লাগিয়ে মারতে। কিন্তু কি আর করা? মনের ইচ্ছে মনেই মেরে ফেললো।

২৪.

বাসায় আসতেই প্রান্তিকের রুম থেকে একটার পর একটা জিনিস ভাঙার আওয়াজ ভেসে আসছে নিচ তলায়। মিসেস মনিশা চৌধুরী বার বার প্রিয়ন্তিকে বলছে, কি হয়েছে? কিন্তু প্রিয়ন্তির একটাই কথা সে জানেনা। অর্ষা ভয়ে গুটিসুটি হয়ে প্রিয়ন্তির এক হাত খামচে ধরে আছে। প্রান্তিকের রুম থেকে আর কোনো আওয়াজ না আসাতে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে অর্ষা। মনিশা চৌধুরী অর্ষা আর প্রিয়ন্তিকে…ফ্রেশ হতে যাওয়ার কথা বলে ধীর পায়ে প্রান্তিকের রুমে যান।

২৫.

মনিশা বেগম রুমে উঁকি দিয়ে দেখলেন,প্রান্তিক চুলগুলো খামচে ধরে মাথা নিচু করে খাটে বসে আছেন। তিনি জানেন, প্রান্তিক অতিরিক্ত রেগে গেলে এমন করেন। এইটা নতুন নয় অনেক পুরনো অভ্যাস প্রান্তিকের।
“বাবা কি হয়েছে তোর?
” আম্মু আমার কিছু হয়নি”
“সত্যি করে বল”
“আম্মু আমার ভালো লাগছেনা” যাওতো রুম থেকে আমি ঘুমাবো” মনিশা চৌধুরী আর কোনো কথা না বাড়িয়ে চলে গেলেন প্রান্তিকের রুম থেকে। তিনি জানেন প্রান্তিক এর মন একদম ভালো নেই তাই সে এমন করছে।

২৬.

“প্রান্তিক আসেনি?
” না..তোমার ছেলে দুপুরেও খাইনি৷ কি জানি আমার ছেলেটার কি হয়েছে” চিন্তিত মুখে বললেন মনিশা চৌধুরী। অর্ষা টেবিলে বসতেই দেখলো আসলেই প্রান্তিক নেই। সেই দুপুরে যে রুমে ঢুকেছে তার পরতো একবারো নিচে নামেননি তিনি। এইটা ভাবতেই অর্ষা নরম কন্ঠে বললো,খালামনি আমি গিয়ে ডেকে আনি ভাইয়াকে?
“তুই পারবি আনতি? ও শুনবে তোর কথা?
” আমি গিয়ে দেখিইনা খালামনি। আমি যাই তোমরা খেতে বসো। এইটা বলেই অর্ষা পা বাড়ালো সিঁড়ির দিকে। অর্ষা প্রান্তিকের রুমে উঁকি দিয়ে দেখে প্রান্তিক কোথাও নেই৷ অর্ষা রুমে গিয়ে ওয়াশরুমে দেখলো ওয়াশরুমেও নেই। হঠাৎ চোখ পড়লো বেলকনিতে। গ্রিল ধরে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে প্রান্তিক।

২৭.

ভাইয়া খালামনি ডাকছে আপনাকে খেতে” অর্ষার কথা শুনতেই প্রান্তিকের সকালের রাগটা জেগে উঠলো। প্রান্তিক অর্ষার দিকে রক্ত চক্ষু নিয়ে তাকিয়ে..হোট করে অর্ষার দুই হাত একমুঠো করে ধরে দেয়ালে অর্ষাকে ঠেকিয়ে..দাঁতে দাঁত চেপে বললো, “অনেক শখ না? ছেলেদের সাথে কথা বলতে? এতো শখ না? তোর শখ আমি মিটিয়ে দিচ্ছি..সকালটা হতে দে। অর্ষা হাতের ব্যাথায় কুকড়িয়ে উঠে বার বার বলছে, ভাইয়া ছাড়ুন আমার লাগছে…প্লিজ ছাড়ুন। অর্ষার চোখে পানি দেখতেই প্রান্তিক অর্ষার হাত দুটো ঝেড়ে ফেলে দিয়ে বললো,” নেক্সট টাইম..জাস্ট নেক্সট টাইম তোমাকে কোনো ছেলের সামনে যেতে দেখলে,, “Trust me I will Kill You..also With me. Remember this. এইটা বলেই গটগট করে বেলকনি থেকে রুমে গিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে পড়লো প্রান্তিক। অর্ষার চোখে পানি। অর্ষা বুজতে পারছেনা কেনো প্রান্তিক তার সাথে এতো রোড বিহেভিয়ার করছে। এমন কি তুই তুকারি করতে পর্যন্ত ছাড়েনি! অর্ষা হাতটা বুলচ্ছে। লাল হয়ে গেছে হাতটা প্রান্তিকের মুচরানোতে। রক্ত জমাট হয়ে গেছে। অর্ষা চোখের পানি মুছে খাবার খেতে নিচে চলে গেলো।

২৮.

গভীর রাতে হাতে কারো স্পর্শ পেতেই লাফিয়ে উঠে অর্ষা। ঘুমের রেশে প্রান্তিক কে দেখে চিৎকার করেও করতে পারলোনা। প্রান্তিক অর্ষার দুই ঠোঁটে আঙুল চেপে উচ্চারণ করলো..শিশশশশ..চুপ হয়ে শুয়ে থাকো। এরপর অর্ষার আর কিছু মনে নেই। ঘুম দেশের রাণী আধো ঘুম থেকে ঘুমন্ত দেশে পাড়ি জমিয়েছে।

২৯.

সকাল হতেই অর্ষা চমকে উঠলো নিজের হাত দেখে। হাতে মলম লাগানো। শুকিয়ে গেছে। কিন্তু সেতো মলম লাগায়নি লাগিয়ে দিয়েছে কে? হঠাৎ কাল রাতের কথা মনে পড়তেই বুক ধুক করে উঠে অর্ষার। প্রান্তিক তার হাতে মলম লাগিয়েছে! এইটা ভাবতেই এক হাত মুখে দিয়ে অবাক হয়ে থাকে অর্ষা।

চলবে….

#এক_তুমিতে_আসক্ত
#পার্টঃ০৫
#Writer:#মারশিয়া_জাহান_মেঘ

৩০.

অর্ষা হুড়মুড় খেয়ে শোয়া থেকে উঠে পড়ে। উঠে আয়নার সামনে যায়। নিজেকে গুটিয়ে দেখে বললো,”না সব ঠিকি আছে। কিন্তু রাতে তো আমার স্পষ্ট মনে আছে দরজা লাগিয়ে ঘুমিয়ে ছিলাম। হঠাৎ একটা কথা ভাবতেই অবাক হয়ে যায় অর্ষা। “তার মানে বারান্দা দিয়ে এসেছে! হাউ???? আর ওনি কেনো এমন করছে?

৩১.

প্রিয়ন্তির রাত থেকে জ্বর এসেছে। তাই ভার্সিটিতে অর্ষা একাই যেতে হবে..এই বলে মনিশা চৌধুরী পা বাড়ালেন রান্না ঘরের দিকে।
“খালামনি খেতে দাও ভার্সিটি যেতে হবে”
” তুই বস মা আমি এক্ষুনি আসছি”।
অর্ষা খাবার টেবিলে বসে খাবারের জন্য ওয়েট করছিলো,,এমন সময় দেখে সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে প্রান্তিক শার্টের হাতা ফোল্ড করছে৷ “অফ ব্লু কালারের শার্টের সাথে হোয়াইট প্যান্ট। হাতে একটা স্কিন কালারের ফিতার ঘড়ি পড়েছে৷ চুলগুলো কিছুটা ভেজা। দেখেই বুঝা যাচ্ছে হয়তো সদ্য গোসল সেড়ে এসেছে। হঠাৎ কানের কাছে ” ফিসফিসিয়ে… “এমনভাবে কি দেখছো? প্রেমে পড়ে যাবেতো” কথাটা শুনতেই চমকে উঠে অর্ষা। সামনে তাকিয়ে দেখে প্রান্তিক চেয়ার টেনে বসছে। অর্ষা মনে মনে নিজেকে হাজারটা বকা দিচ্ছে। ইশশ কি একটা লজ্জার বিষয়ই না ঘটলো। “হাতের ব্যথা ঠিক হয়েছে মিস ভীতুর রাণী?
” ইয়ে মানে জ্বি। ভাইয়া..আপনি হাতে মলম লাগিয়েছিলেন?
“আমার ঠেকা পড়ছে?[ ডন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে ]

“আজকে আটা একটু বেশি মাখা হয়ে যায়নি বলে মনে হয়না তোমার?..প্রান্তিক এর গম্ভীর্য কথা শুনে অর্ষা একবার নিজেকে গুটিয়ে নিয়ে বললো, ” ম..মা মানে?
“জাস্ট ওয়েট” এইটা বলেই প্রান্তিক মনিশা চৌধুরীকে ডাক ছাড়লো..আম্মু খেতে দাও।

৩১.

আজ একা অর্ষাকে প্রান্তিকের সাথে যেতে হবে ভাবতেই অর্ষার হার্টবিট থমকে যাচ্ছে।

“এদিকে এসো”
“ক কেনো ভাইয়া?
” আসতে বললামতো..আসো।

অর্ষা প্রান্তিকের কাছে যেতেই প্রান্তিক প্যান্টের পকেট থেকে টিস্যু বের করে এক মুছনে অর্ষার ঠোঁটের লিপস্টিক মুছে ফেলে বললো,
“নেক্সট টাইম লিপে এইসব ফালতু জিনিস ইউজ করলে….এইটুকু বলেই চোখের সানগ্লাসটা পড়ে বাইকে বসে প্রান্তিক।
হঠাৎ প্রান্তিক এমন করাতে আৎকে উঠে অর্ষা। কয়েক সেকেন্ডের জন্য যেনো সে থমকে গিয়েছিলো। অর্ষা মনে মনে ভাবছে,” কি এমন দিয়েছিলো সে? একটু গোলাপি লিপস্টিকইতো তাও এতো গাঢ় নয় একদম হালকা।

“কি হলো বাইকে উঠো..প্রান্তিক এর ডাকে ধ্যান ভাঙ্গে অর্ষার। অর্ষা আমতা আমতা করে প্রান্তিকের পেছনে বসে। প্রান্তিক বাইকের আয়নায় অর্ষার ভীত চেহারা একটু দেখে আনমনে হেসে উঠে বললো,” ভালো করে ধরে বসো।
“ধরেছি”
“আমাকে ধরে বসো। রাস্তা ভালোনা। পড়ে যাবে” প্রান্তিকের কথায়…অর্ষা প্রান্তিকের কাঁধে হাত রাখলো। প্রান্তিক গাড়ির স্পিড এমন ভাবে বাড়িয়েছে যে অর্ষা নিজেকে সামলাতে না পেরে ঝাপটে ধরে প্রান্তিক কে। প্রান্তিক একবার বাইকের গ্লাসে অর্ষাকে দেখে ডেবিল স্মাইল দিয়ে মনে মনে বললো,”প্রিয়শিনী তুমি যতোই দূরে যেতে চাইবে আমার থেকে, আমি ততো বাধ্য করবো তোমাকে আমার নিকটে আসতে”।

৩২.

“এই এই ভাইয়া কোথায় যাচ্ছেন? এইটাতো আমাদের ভার্সিটির রাস্তা নয়। অর্ষা একটার পর একটা প্রশ্ন করেই যাচ্ছে প্রান্তিক এইসব পাত্তা না দিয়ে নিজের মতো করে বাইক চালিয়ে যাচ্ছে। একটা নদীর পাশে এনে বাইক থামায় প্রান্তিক।
” বাইক থেকে নামো।
“কেনো ভাইয়া?

প্রান্তিক বাইক থেকে নেমে সানগ্লাসটা খুলে হাতে নিয়ে অর্ষার হাত ধরে বললো, নামো। অর্ষা চুপচাপ নেমে বললো,,”এইখানে কেনো এসেছি আমরা?
” কেনো আবার ঘুরতে।
অর্ষা চারপাশটা একবার দেখে বললো,”এইখানেতো নদী ছাড়া তেমন কিছুই নেই তাহলে এইখানে কেনো ঘুরতে এসেছি আমরা?
“ইশশ অর্ষা এতো প্রশ্ন কেনো করছো? চলো নদীর সামনে গিয়ে বসি।
” না আমি ভার্সিটি যাবো সরুন” এইটা বলে অর্ষা চলে আসার জন্য যেই পা বাড়াবে তখনি পেছন থেকে হাত ধরে ফেলে প্রান্তিক৷ আর রাগী কন্ঠে বললো,”তোমাকে বলেছি যেতে? এইখানে এসেছি কি চলে যেতে? চলো আমার সাথে ওইখানে বসবো। এইটা বলেই প্রান্তিক অর্ষার হাত ধরে টেনে নিয়ে যায় নদীর ধারে৷

৩৩.

“আসলেই এই জায়গাটাতে আলাদা এক প্রশান্তি আছে একদম আমাদের গ্রামের মতো” অর্ষার কথা শুনে প্রান্তিক অর্ষার দিকে একটু হেসে তাকিয়ে হাতে থাকা একটা ইটের কণা নদীতে ফেলে আনমনে বললো,”জানো অর্ষা? আমার যখন ভীষণ মন খারাপ থাকে তখন আমি এইখানে এসে বসে থাকি।
“আজ ওকি আপনার মন খারাপ ভাইয়া?
” না।
“তাহলে?
“এতোদিন যে ভীষন্নতা আমি এই জায়গাটাকে দিয়েছি তা আজ তোমাকে নিয়ে এসে ভালো করে দিলাম। অর্ষা প্রান্তিকের কথার আগা মাথা কিছুই বুঝতে না পেরে বললো, মানে?
” কিছুনা” চলো…ভার্সিটিতে যাবে।
“হুম চলেন”

৩৪.

প্রান্তিক তুমি এই মেয়েটার সাথে কেনো এতো মিশছো? কেনো? আনসার মি..ছারিনের এইসব কথায় প্রান্তিক বাইকে বসে ফোনের দিকে তাকিয়েই বললো, “তাতে তোর কি ছারিন? তুই ফ্রেন্ড ফ্রেন্ডের মতোই থাকনা।
” হেই প্রান্তিক আর ইউ মেড? আই এম নট অনলি ইউর ফ্রেন্ড..আই এম ইউর গার্লফ্রেন্ড।
প্রান্তিক বাঁকা হেসে চলে যায় শৈবাল,অনিক আর ইরফানের কাছে।
প্রান্তিক শুনো….প্রান্তিক…
ছারিন এতো করে ডাকার পরও সাড়া দেয়নি প্রান্তিক।

৩৫.

“এই দেখ..এই মেয়েটা প্রান্তিক ভাইয়ার বাইক থেকে নেমেছে ওইসময় দেখেছিলাম”
“কি বলছিস? আমার চকলেট বয় এর বাইক থেকে এই মেয়েটা নেমেছে? [ অবাক হয়ে ]
” এই শোন তোর চকলেট বয় চকলেট বয় করছিস কেনো? প্রান্তিক ভাই শুধু তোর না পুরো ভার্সিটির ক্রাশ বয় বুঝলি? শুধু ক্রাশ বয় নয় টপারো ছিলো”

পেছনের বেঞ্চ থেকে দুইটা মেয়ের এইসব কথা শুনে অর্ষার কিছুটা গায়ে লাগলো। তাই অর্ষা…ওদের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললো, “প্রান্তিক ভাইয়া আমার কাজিন। আশা করি পরবর্তী সময়ে আর আমাকে নিয়ে কানঘুষা করবেনা…অর্ষার এমন কথায় মেয়েগুলো অবাক হয়ে চুপসে যায়।

৩৬.

ঠাসসস..এই মেয়ে তোর সাহস কি করে হয় আমার বোনদেরকে থ্রেট করার? ছারিনের থাপ্পড়ে গালে হাত দিয়ে মাঠে দাঁড়িয়ে আছে অর্ষা। চোখে পানি ছলছল করছে। এই বুঝি পড়ে যাবে চোখের পানি।

৩৭.

ঠাসসস…প্রান্তিকের থাপ্পড়ে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে ছারিন। প্রান্তিক কে দেখেই সে ভয় পেয়ে যায়। চোখ লাল হয়ে গেছে। শরীর কাঁপছে রাগে।

” প্রান্তিক তুমি আমাকে মারলে!
” তোর সাহস কি করে হয়? অর্ষাকে থাপ্পড় দেওয়ার?
“প্রান্তিক…..
” সাট আপ। জাস্ট সাট আপ…
“প্রান্তিক প্লিজ শান্ত হো প্লিজ…
” শৈবাল ওকে স্পষ্ট জানিয়ে দে, নেক্সট টাইম যদি.. আমি ওকে…অর্ষার পাশে একবারো ঘুরঘুর করতে দেখি…তাহলে ভুলে যাবো যে ও আমার কে। এইটা বলেই প্রান্তিক অর্ষার হাত ধরে নিয়ে বাইকে বসায়। চোখে সানগ্লাসটা পরে বাইক স্টার্ট দেয়। রাগে শরীর বার বার কেঁপে উঠছে প্রান্তিকের। অর্ষা চুপ হয়ে আছে। চোখে গড়গড়িয়ে পানি পড়ছে। গালটায় ৫ আঙুলের ঝোক উঠে গেছে।

৩৮.

ক্যাফে অর্ষার ঠিক সামনাসামনি চেয়াটটায় বসে আছে প্রান্তিক। এক মনে তাকিয়ে দেখছে অর্ষাকে। কান্না স্বরূপ নাক মুখ লাল হয়ে গেছে। ফরসা চেহারাটা।

“স্টপ ক্রাই অর্ষা।
” অর্ষা কেঁদেই যাচ্ছে”
“বললাম না কান্না থামাতে?
….
স্টপ ক্রাই অর্ষা..জাস্ট স্টপ..প্রান্তিক শেষ কথাটা চিৎকার দিয়ে বলে টেবিলে রাখা গ্লাসটা ছুড়ে ফেলে দিলো রেগে। প্রান্তিকের রাগ দেখে অর্ষার কান্না এক নিমিষেই বন্ধ হয়ে যায়। ভয়ে ভয়ে প্রান্তিকের হাতটা ধরে সে। রক্ত হাতে৷ ক্যাফের উয়েটার আসতে নিলে প্রান্তিক চোখের ইশারায় থেমে যেতে বলে। অর্ষা তাড়াতাড়ি করে…ব্যাগ থেকে রোমালটা বের করে প্রান্তিকের হাতে বেঁধে দেয়। প্রান্তিক এক মনে অর্ষার দিকে তাকিয়ে আছে।

৩৯.

” তোর হাতে কি হয়েছে বাবা?
“কিছু হয়নি আম্মু ।
” বলনা বাবা কি হয়েছে?
“আহা..বললামতো আম্মু কিছু হয়নি আমার” এইটা বলেই প্রান্তিক লাফিয়ে সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠে যায়। মিসেস মনিশা চৌধুরী অর্ষার দিকে তাকিয়ে আৎকে উঠে বললো, “মা..তোর কি হয়েছে গালে?
” ক কই খালামনি কিছু হয়নিতো” আমি যাই ফ্রেশ হয়ে আসি..এইটা বলেই অর্ষা মনিশা চৌধুরীকে আর কোনো কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে তড়িঘড়ি করে উপরে উঠে গেলো।

৪০.

“তোমার ছেলে ভাবনা চিন্তা করে ডিসাইড নিয়েছেতো মনিশা? মিস্টার ফরহাদ চৌধুরী চা খেতে খেতে খবরের কাগজে তাকিয়ে কথাটা বললো।
” প্রান্তিক কেতো তোমার জানারই কথা। ওতো বরাবরই সব ভাবনা চিন্তা করে ডিসাইড নেয়”
“মনিশা এই সিদ্ধান্তটা সব সিদ্ধান্ত থেকে সম্পূর্ণ আলাদা”
“অর্ষা এখনো অনেক ছোট। প্রান্তিক তো এর জন্য সময় নিচ্ছে তাইনা?
” তাও…ফরহাদ চৌধুরী কথা সম্পূর্ণ শেষ না করতেই রুমে ডুকতে ডুকতে প্রান্তিক বললো,”আব্বু.. আমি চাইনা এইটা নিয়ে আর কোনো দ্বিমুখী সিদ্ধান্ত হোক।
“প্রান্তিক এইটা সাড়া জীবনের ব্যাপার”
“আব্বু আমি জানি”
“তোমার খালামনিকে?
” আমার উপর ছেড়ে দাও…এইটা বলতেই প্রান্তিক তার আম্মু-আব্বুকে জড়িয়ে ধরে। আর মনে মনে ভাবে,”যেমন ভাবে সব ভেবে রেখেছি..তেমনভাবে সব হলেই হবে..প্রিয়শিনী “Just have to wait some more time’

চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here