#এক_তুমিতে_আসক্ত
#পার্টঃ২৬,২৭
#Writer:#মারশিয়া_জাহান_মেঘ
পার্টঃ২৬
১৭৩.
বউ’ চলো আমরা ঘরতে যাই। প্রান্তিকের কথায় অর্ষার কোনো ভাবান্তর হলোনা৷ সে ঠাঁই বেলকনির গ্রিল ধরে বাইরে তাকিয়ে আছে। প্রান্তিক একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে রুমে গেলো। হাতের ফোনটা হাতে নিয়ে শৈবালকে কল দিলো।
‘শৈবাল…
‘কি হয়েছে প্রান্তিক কন্ঠ এমন শুনাচ্ছে কেনো? অর্ষা ঠিক আছেতো?
‘নারে কিছু ঠিক নেই। তুই কোনো ভালো ডক্টরের এপোইরমেন্ট নিয়ে রাখ আজকে বিকেলেই আমি অর্ষাকে নিয়ে ডক্টরের কাছে যাবো।
‘তুই কোনো চিন্তা করিসনা। আমি এক্ষুনি দেখছি।
১৭৪.
মনিশা আমরা যাই তোরা অর্ষাকে দেখে রাখিস’
‘চিন্তা করিওনা আপা আমরাতো আছি। মেয়েটা আসলে এতো বড় সত্যিটা মেনে নিতে পারছেনা।
‘হুম জানি। নিয়তি। আচ্ছা আমরা যাই কেমন?
‘ঠিক আছে দোলাভাই।
নাফিস সরদার আর রাহেলা বানু চলে যেতেই একটা নিশ্বাস ছাড়েন মনিশা চৌধুরী। মনে মনে নিজের কাছে তার নিজেকে অনেক অপরাধী মনে হচ্ছে। কথাগুলো ওইসময় তোলাই ঠিক হয়নি।
‘আম্মু আম্মু…
‘কি হয়েছে প্রিয়?
‘অর্ষাকে নিয়ে ভাইয়া ডক্টরের কাছে যাবে।
‘যেতে তো হতেই হবেরে মেয়েটা যে কথা বলতেই ভুলে গেছে।
‘আম্মু অর্ষার সাথে খুব খারাপ হয়েছে ওই নরপশুটার ফাঁসি হওয়ার দরকার ছিলো।
‘আমরা কেউ ছাড়বোনা সোহেলকে। এতো ছোট মেয়েটার সাথে আজ থেকে কয়েক বছর আগে কি বাজে জঘন্যতম কাজটাই না করেছে। তা ভাবলেই আমার দেহ কেঁপে উঠে।
‘কান্না করোনা আম্মু চলো তাড়াতাড়ি আমায় খেতে দাও ভার্সিটি যাবো। আজতো অর্ষা যেতেই পারবেনা।
‘না অর্ষা সুস্থ হোক তারপর যাবে।
১৭৫.
‘তাইফা অর্ষার সাথে খুব খারাপ হয়েছে তাইনারে?
‘খুব খুব খারাপ হয়েছে। আসলে কি বলতো রিমি আমাদের সমাজটাই এমন। পুরুষ নামের কিছু কাপুরুষ ধ্বংস করে দেয় মেয়েদের জীবনটাকে।
‘হুমরে। দীর্ঘশ্বাস ফেলা ছাড়া কিছুই করার নেই।
‘চল রেডি হয়ে নে ভার্সিটি যাবো।
‘হুম চল চল। অলরেডি লেইট।
১৭৬.
‘দেখুন মিস্টার চৌধুরী আপনার ওয়াইফের মানসিক চিন্তা ভাবনায় অনেকটা শকড এর জন্যই তিনি চুপচাপ হয়ে গেছেন কিন্তু কোনো প্রবলেম নেই কিছুদিন পর তিনি ঠিক হয়ে যাবেন।
“সত্যি ডক্টর কোনো প্রবলেম নেইতো?
‘না। সত্যি বলছি।
‘ওকে থেংকস ডক্টর। আজ তাহলে আসি। প্রান্তিক বাইরে আসতেই দেখে অর্ষা টেবিলে বসে আছে। ছোট বেঞ্চিতে। অর্ষাকে ডক্টর বলেছে বাইরে যেতে তাই সে বাইরে চলে আসে। আর প্রান্তিকের সাথে আলাদা কথা বলে। অর্ষাকে প্রান্তিক হাত ধরে উঠিয়ে হসপিটাল থেকে বাইরে বের হয়ে গাড়িতে উঠে। আজ সে অর্ষাকে নিয়ে ঘুরবে। গাড়িতে উঠতেই প্রান্তিক এক হাত দিয়ে ড্রাইভিং করছে আর অন্য হাত দিয়ে অর্ষার হাতে হাত রাখলো। অর্ষা জানালার বাইরে তাকিয়ে ছিলো হঠাৎ কারো হাতের স্পর্শ পেতেই ফিরে তাকালো। প্রান্তিকের হাতটা সরিয়ে আলতো করে নিজের হাতটা গুটিয়ে নিয়ে বললো,
‘আমাকে স্পর্শ করবেন না। আমার লাইফে নিজেকে জড়ানোর চেষ্টাও করবেন না।
হঠাৎ অর্ষার মুখে কথা ফোঁটাতে প্রান্তিক কিছুটা চমকে তাকালো। পরে বললো,
‘আমি একবার নয় হাজারবার তোমাকে স্পর্শ করবো। আর ভুলে যেওনা আমরা ছোট থেকেও বিবাহিত আর ওইদিনও বিবাহে পুনরায় আবদ্ধিত হয়েছি।
‘আমি নিজে দাঁড়িয়ে অন্য কোনো মেয়ের সাথে আপনার বিয়ে দিবো।
অর্ষার এই কথা শুনে প্রান্তিক রেগে গাড়ি স্পিডে চালাচ্ছে আর ঘন ঘন নিশ্বাস নিচ্ছে।
অর্ষা প্রান্তিকের এমন রেগে যাওয়াতে ভয় পেলেও চুপ থাকে। কারণ সে জানে এখন ওইসব কিছু বলে লাভ নেই।
গাড়ী থামে একটা পার্কের সামনে। প্রান্তিকের চোখ দুটো লাল হয়ে আছে। বুঝাই যায় কতোটা রেগে আছে অর্ষার কথায়। প্রান্তিক গাড়ি থেকে নামতেই অর্ষার জন্য না দাঁড়িয়েই কোথায় যেনো চলে যায়।
‘এই এই কোথায় যাচ্ছেন আমাকে ফেলে?
প্রান্তিক অর্ষার কোনো কথা কানে না নিয়ে আপনমনে হেঁটে চললো।
‘ইশশ ওনি কোথায় গেলেন।
রৌদ্রে ঘুরতে ঘুরতে অর্ষা চারিদিকে খুঁজছে প্রান্তিক কে কোথাও পাচ্ছেনা৷ হঠাৎ চোখ যায় পার্কের আনমনে এক কোণে। অনেকগুলো বাচ্চার সাথে খেলা করছে প্রান্তিক। কি স্নিগ্ধ তার হাসি। হঠাৎ প্রান্তিক ওই বাচ্চাগুলোর থেকে আলাদা হয়ে একটা বেঞ্চে বসে চুল টেনে মাথা নিচু করে বসে। বুঝাই যাচ্ছে তার ভীষণ মন খারাপ। অর্ষা এইসব ভাবতেই একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে। অর্ষা আনমনে হেঁটে প্রান্তিকের পাশে বসে অন্যদিকে চেয়ে বললো,
‘আমি বাসায় যাবো।
………
এই যে শুনছেন আমি বাসায় যাবো। আমার ভালো লাগছেনা এইখানে।
প্রান্তিক এইবার মাথা তুলে বসলো। অর্ষা প্রান্তিকের দিকে তাকাতেই ভয় পেয়ে যায়। লাল চোখে পানি টলমল করছে। প্রান্তিক অর্ষাকে এক হাত হেচকি দিয়ে টেনে নিজের একদম কাছে এনে ছলছল চোখে বলে,
‘এই অর্ষা অর্ষা..তুই কেনো আমাকে বুঝিসনা কতোটা ভালোবাসি? আনসার মি ম্যান আনসার মি।
অর্ষা প্রান্তিকের এই অবস্থা দেখে ভয় পেয়ে যায়।
‘প্লিজ শান্ত হোন প্লিজ। আম আমি…আসলে প্লিজ শান্ত হোন।
প্রান্তিকের এই অবস্থা দেখে অর্ষার সব কথা তালগোল পাকিয়ে যায়।
‘আচ্ছা তোমাকে কি আমি বিয়ে করেছি অন্য কাউকে জীবনে আনার জন্য? তুই কি করে ভাবলি তোকে এই প্রান্তিক চৌধুরী এইভাবে ছেড়ে দিবে? নো ওয়ে। ছোটবেলা থেকে তুই আমার। আর আমার জিনিস আমি কিভাবে বুঝে নিতে হয় তা ভালো করে জানি।
‘প্লিজ এখন চলুন বাসায় চলুন প্লিজ৷ মানুষজন দেখবে।
১৭৭.
বাসায় ফিরতেই প্রান্তিক আর অর্ষা দেখলো বাড়ি ভর্তি মেহমান। হঠাৎ প্রান্তিক কে একটা মেয়ে জড়িয়ে ধরেছে। আচমকা এমন ঘটনায় চমকে উঠে অর্ষা। তার কেমন জানি লাগছে। কিন্তু কেনো লাগছে তার উত্তর অজানা। প্রান্তিক একটু আগে যতটুকু রেগেছিলো তা সামলে নিলো তাকে জড়িয়ে ধরে থাকা মেয়েটিকে দেখে। অবাক হয়ে বললে,
রাই!
‘কেমন আছো প্রান্তিক?
‘ভালোতো ছিলাম না তোমাকে দেখে ভালো হয়ে গেছি। অর্ষার দিকে আড়ঁচোখে তাকিয়ে কথাটা বললো প্রান্তিক। অর্ষা বুঝতে পারছে প্রান্তিকের চোখের রাগ।
‘মা অর্ষা এই হলো প্রান্তিকের দূরসম্পর্কের একজন ফুপ্পি আর এই হলো রাই প্রান্তিকের ফুপ্পির মেয়ে।
‘আসসালামু ওয়ালইকুম ফুপু মা।
‘ওয়ালাইকুম সালাম। এ বুঝি আমাদের প্রান্তিকের বউ?
‘হুম আপা।
‘মাশাল্লাহ।
প্রান্তিকের হাত এখনো ধরে আছে রাই। রাই প্রান্তিকের পাশ থেকে এসে বললো,
‘তুমি অর্ষা রাইট?
‘জ্বি।
‘আমি রাই। প্রান্তিকের কাজিন। তোমাদের বিয়ের কথা শুনেছি। হঠাৎ ই হয়ে গেলো।
‘রাই তুমি থাকো আমি ফ্রেইশ হয়ে আসছি। এইটা বলেই প্রান্তিক বড় বড় পা ফেলে উপরতলায় উঠলো। প্রান্তিক যেতেই মনিশা চৌধুরী বললো,
‘বুঝলি অর্ষা? রাই আর প্রান্তিক একে অপরের বেষ্ট ফ্রেন্ড। ছোট বেলায় একজন আরেকজনকে ছাড়া একটুও থাকতে পারতোনা।
হঠাৎ প্রিয়ন্তি রুমে ঢুকতে ঢুকতে বললো,
“শুধু তাই নয় একজনের কিছু হলে অন্যজন অস্থির হয়ে যেতো।
রাই গিয়ে দৌঁড়ে জড়িয়ে ধরে প্রিয়ন্তিকে।
‘কেমন আছিস বুড়ি?
‘ভালো আছি টেডিবিয়ার আপু। তুমি কেমন আছো?
‘হুম আমিও অনেক ভালে আছি।
অর্ষার এইসব কিছুই ভালো লাগছেনা। তাই কাউকে কিছু না বলে উপরে চলে গেলো। অর্ষা যেতেই সবাই খিলখিল করে হেসে ফেললো।
১৭৮.
‘হ্যালো..হ্যাঁ আজকের মিটিং ক্যান্সেল করে দাও আমার বেষ্টফ্রেন্ড রাই এসেছে।
……..
‘নো প্রবলেম একটা ডিল গেলে আরেকটা আসবে। প্রান্তিক ফোনে কারো সাথে এমন কথা বলছে শুনে অর্ষা কাপড় ভাজঁ করতে থাকে আর মনে মনে বিড়বিড় করতে থাকে,
‘আজব বেষ্ট ফ্রেন্ড কি আর কারো নেই নাকি যে বেষ্ট ফ্রেন্ডের জন্য মিটিং ক্যান্সেল করতে হবে।
প্রান্তিক ফোনটা রেখে এক পলক অর্ষার দিকে তাকিয়ে দেখলো অর্ষা কি যেনে বিড়বিড় করছে। হঠাৎ কেউ একজন বললো,
‘আসতে পারি?
অর্ষা আর প্রান্তিক দরজার সামনে তাকায়। প্রান্তিক হেসে বলে,
‘আরে রাই আসো আসো ভেতরে আসো।
চলবে….
#এক_তুমিতে_আসক্ত
#পার্টঃ২৭
#Writer:#মারশিয়া_জাহান_মেঘ
১৭৯.
রাই রুমে ঢুকতে ঢুকতে প্রান্তিক কে বললো,
‘কি করছো প্রান্তিক? বিরক্ত করলাম নাতো?
‘আরে রাই কি যে বলোনা তুমি। তোমাতে আমি কখনো বিরক্ত হয়না। আর অফিসের কিছু ডকুমেন্টস রেডি করছিলাম এই আর কি।
‘প্রান্তিক তোমার মনে আছে? যখন তুমি আর আমি কলেজে উঠি তখন অল টিম আমাদেরকে বি এফ জি এফ ভাবতো।
প্রান্তিক অর্ষাকে আঁড়চোখে একবার দেখো নিলো। সে আগের মতোই শাড়ির আচঁলটা মাথায় দিয়ে একটার পর একটা কাপড় গুচাচ্ছে। অর্ষা প্রান্তিকের দিকে তাকাতেই প্রান্তিক রাই’য়ের সাথে হেসে হেসে বললো,
‘সে আর বলতে? মনে থাকবেনা আবার? আসলে আমাদের চলাচলটায় এমন ছিলো রাই।
এইদিকে অর্ষা মনে মনে বলছে,
‘ওরা আজবতো। আড্ডা দিবি ভালো কথা অন্য জায়গায় গিয়ে দে। এই রুমে কেনো? এইখানে কি ওরা দুজন একাই? আমি নেই নাকি। যত্তসব। ( বেশ বিরক্ত নিয়ে কথাগুলো বিড়বিড় করলো অর্ষা)
‘হুম হুম ঠিক। ওহ আমিতো ভুলেই গেছি তোমার ওয়াইফ এই রুমে আছে। এই যে অর্ষা আমাদের দুজনের জন্য ২ কাপ কফি নিয়ে আসবে গো? আসলে মাথাটা বেশ ঘুরছে।
অর্ষা রাই’য়ের দিকে বিরক্ত ফিল করলেও তা প্রকাশ না করে মুচকি হেসে বললো, আপনারা বসুন আপু আমি এক্ষুনি নিয়ে আসছি।
অর্ষা যেই যেতে যাবে হঠাৎ প্রান্তিকের কন্ঠে
‘রাই এই রাই তোমার মাথা পেইন করছে? আসো আমি টিপে দেয়..
এই কথাটা শুনে অর্ষা পিছনে তাকালো। তাকিয়ে দেখছে প্রান্তিক রাই’য়ের মাথা টিপে দিচ্ছে। অর্ষা আর এক মুহুর্তও এইখানে না দাঁড়িয়ে থেকে পা বাড়ালো নিচ তলায়।
আজব মানুষ বউয়ের সামনে অন্য একটা মেয়েকে কেউ এমনভাবে মাথা টিপে দেয়? দুর ওনি যা ইচ্ছে তা করুক আমার কি..এইসব বলতে বলতে অর্ষা রান্নাঘরের দিকে যায়।
১৮০.
‘আইজকা এতো দিন ধইরা অর্ষারে খুঁজতাছিনা পাইতাছি ক্যান। না এইবার এই ঢাকা শহরের সব কলেজ দেহুন লাগনবো..এইসব বলে সোহেল ফুটপাতের সাইড দিয়ে হাঁটতে থাকে।
১৮১.
‘মামনি আর কয়েকটা দিন পরই তোমাকে আমার কাছে নিয়ে আসবো চিন্তা করোনা’
তাইফার কথা শুনে ফোনে শব্দ করে একটু হাসে সাহেরা বেগম। তারপর বলে,
‘এই সংসার ছেড়ে কোথায় যাবোরে মা? তুই এইখানে চলে আয় আমার একা একদম ভালো লাগেনা।
‘আমি একেবারের জন্য ছেড়ে আসার কথা বলিনি মামনি। এইখানে তুমি আসলে পরীক্ষাটা দিয়ে আবার চলে যাবো গ্রামে।
‘ওমা সে কিরে? শহরে ভালো লাগেনা?
‘না মামনি তোমাকে ছাড়া একা লাগে।
“আচ্ছা বাবা যেইসময় নিয়ে যাবি তখন দেখা যাবে।
কল কেটে দিয়ে তাইফা তাড়াতাড়ি তার মা ব্যাগে রাখা গুপ্ত জিনিস গুলো হাতে নিয়ে বের হয়ে গেলো।
১৮১.
‘আজকে রাত বারোটার পর…
‘দেখো মনিশা ভুলেও ওই কথাটদ মুখে আনবেনা।
‘ফরহাদ তুমি আর কতো এইরকম রাগ নিয়ে থাকবে? একটাবার খোঁজার চেষ্টাও করোনি মানুষটাকে।
‘মনিশা….
‘ফরহাদ এতোদিন আমি কিচ্ছু বলিনি। কিছু চায়’ওনি। আজকে চাইছি।
‘কি বলতে চাও মনিশা?
‘একটাবার খুঁজ নিলে হয়না?
ফরহাদ চৌধুরী আর কিছু না বলে রুম থেকে বেরিয়ে পরে। সবার আড়ালেই চোখের আলতো পানিটুকু মুছে নেন তিনি।
১৮২.
ফরহাদ চৌধুরী মাটিতে পরে থাকা ছবিটা দেখেই চমকে উঠেন। আশেপাশে একবার চোখ বুলিয়ে তাড়াতাড়ি ছবিটা নিয়ে পান্জাবীর পকেটে রেখে দেন।
‘এই ছবি! এই ছবি কোথথেকে আসলো। তাও বাগানে? এইসব মনে মনে ভাবতেই ফরহাদ চৌধুরীর চোখে মুখে চিন্তার ছাপ ভেসে উঠে।
১৮৩.
‘হ্যালো মিস্টার চৌধুরী আমি ইন্সপেক্টর অনিমেষ বলছি..।
‘হুম ইন্সপেক্টর বলুন।
‘সোহেল নামক আসামী ধরা পরেছে।
এই কথা শুনতেই বসা থেকে উঠে দাঁড়ায় প্রান্তিক। তার চোখে মুখে উচ্ছাস। তাড়াতাড়ি পা ফেলে বসার রুমের দিকে।
‘আরে প্রান্তিক কোথায় যাচ্ছো?
১৮৪.
আম্মু… প্রিয়..
‘কি হয়েছে ভাইয়া?
‘আম্মু আব্বুকে ডাক.
‘কি হয়েছে প্রান্তিক?
‘আব্বু.. সোহেল ধরা পরেছে পুলিশের হাতে৷ সে নাকি আরেকটা মেয়েকে ধর্ষন করতে চেয়েছিলো।
‘কতোটা..নিকৃষ্ট হলে মানুষ এমনটা করতে পারে।
‘হুম আব্বু।
‘ওর বাবা মা ভাইও গ্রাম ছেড়ে পালিয়েছে পুলিশের ভয়ে।
‘কি বলো আম্মু!
‘হুমরে। কতো খালামনি কল দিয়ে বললো।
রাই বার বার বলছে তবে কর্ণপাত হয়নি।
অর্ষা রান্না ঘর থেকে বের হতেই সবাই চুপ হয়ে গেলো। অর্ষাকে এইসব বলে আর অতীতে নিয়ে যেতে চায়না সবাই।
‘বাহ আপা তোমার বউমাতো দেখছি কাজও পারে।
রাই’য়ের মায়ের কথা শুনে অর্ষা লজ্জা পেয়ে বললো,
‘আপনি কিছু খাবেন ফুপু মা?
‘না মা আমি কিছু খাবোনা।
অর্ষা রাইয়ের হাতে এক কাও কফি আর প্রান্তিকের হাতে এক কাপ কফি দিতেই প্রিয়ন্তি বললো,
‘টেডি বিয়ার আপিলা ‘ও’ অনেক অনেক ভালো রান্না পারে। ইভেন্ট প্রান্তিক ভাইয়াতো আপিলার হাতে রান্না বলতেই পাগল।
প্রিয়ন্তির কথাটা অর্ষার ভালো না লাগলেও মুখে বললো,
‘বাহ ভালোতো। আপু একদিন রান্না করে খাওয়াবেন কিন্তু..।
‘হুম অর্ষা অবশ্যই।
‘রাই আজকে আমার জন্য একটু গুড়ের পায়ের করিওতো।
‘ঠিক আছে প্রান্তিক আজকেই রাধঁবো।
অর্ষা হাতের মুষ্টি আবদ্ধ করে ভাবছে,
‘আজব আমাকে বললেওতো হতো। আমি কি পারিনা নাকি।
প্রান্তিক আড়ঁচোখে অর্ষার দিকে তাকিয়ে কোনোরকম মুখ টিপে হাসার চেষ্টা করলো।
১৮৫.
দুপুরে খাবার দাবার শেষে সবাই যার যার রুমে গিয়ে শুয়ে পড়লো। অর্ষা রুমে ঢুকতেই প্রান্তিক বললো,
‘বউ…আমার মাথাটা একটু টিপে দাওতো।
অর্ষা সাথে সাথেই উত্তর দিলো,
‘রাই আপুকে বলেন।
অর্ষা নিজের মুখ দিয়ে এমন কথা বের করে নিজেই নিজের কথা শুনে বোকা বনে যায়। কি থেকে কি বলে ফেললো সে!
অর্ষার এমন উত্তরে অবাক হয় প্রান্তিক আর বলে,
‘রাই আমার বউ না তুমি আমার বউ?
‘উপর দিয়ে বউ ভেতর দিয়ে কচু পাতা।
‘আজব ধরনের এমন কথা বাড়থা কোথা থেকে পাও ‘বউ?
‘জানিনা।
প্রান্তিক সোফা থেকে উঠে, অর্ষার একদম সামনে গিয়ে অর্ষার কানের কাছে গিয়ে বললো,
‘জেলাস ফিল করছো বউ?
অর্ষা চোখ বন্ধ করে ফেলেছে। প্রান্তিকের গরম নিশ্বাস তার কানের নিচে কাঁধে বার বার পরছে।
‘সরুন সরুন..অর্ষা তাড়াতাড়ি বলে উঠলো।
‘না সরলে?
‘ওফ সরনতো। অর্ষা আলতো ধাক্কা দিয়ে দূরে ঠেলে দিলো প্রান্তিক কে।
‘বুঝেছি বউ আমার জেলাস ফিল করছে।
‘জেলাস ফিল করতে আমার বয়েই গেছে।
‘এখনো সময় আছে একবার বলো ভালোবাসি’।
‘বলবোনা
‘কেনো বুঝোনা বউ? #এক_তুমিতে_আসক্ত আমি।
‘অর্ষা মনে মনে বললো, ‘হে তার জন্যইতো রাই রাই করেন।
১৮৬.
বিকেলে….
অর্ষা নিচে নামতেই দেখলো প্রিয়ন্তি রান্না ঘরে রাই’য়ের সাথে কথা বলছে। প্রিয়ন্তি অর্ষাকে দেখতেই ডেকে বললো,
‘এই অর্ষা এইখানে আয়।
‘কি করছিস প্রিয়?
‘দেখনা আপিলা কি সুন্দর করে পায়েস রান্না করছে ভাইয়ার জন্য।
অর্ষা আনমনে বললো,
‘ওহ ভালো। আচ্ছা প্রিয় ছাঁদে যাবি?
“নারে আপিলার কাছে থাকবো তুই বরং যা।
অর্ষা রান্না ঘর থেকে বেরিয়ে এলো। মনে মনে ভীষণ রাগ হচ্ছে প্রিয়র প্রতি। রাই আসার পর থেকে প্রিয় যেনো কেমন আচরন করছে তার সাথে। প্রায়োরিটিই দিচ্ছেনা।
১৮৭.
বসার ঘরের সবাইকে পায়েস দিয়ে রাই বললো,
‘আমি যায় প্রান্তিক কে রুমে পায়েস দিয়ে আসি।
এইটা বলে রাই যেতেই অর্ষা হাতে রাখা পায়েসটা নিয়ে সাথে সাথে বললো,
‘ইশ আমারতো মনেই নেই আমার নোট বাকি। আমি যায় নোট করবো আর পায়েস খাবো।
‘এই অর্ষা আগে খেয়ে নে। পরে করিস।
‘না না এখনি করবোরে।
এইটা বলেই অর্ষা ইপর তলায় গেলো। উপরে গিয়ে রুমের দরজাশ দাঁড়িয়ে দেখে প্রান্তিক এক কামচ পায়েস মুখে নিয়ে হাত দিয়ে চমৎকার ভঙ্গি দেখাতে দেখাতে বলে,
‘ওফ রাই জাস্ট অসাধারণ হয়েছে খেতে।
‘আহ.
‘কি হয়েছে রাই?
‘চোখে কি যেনো পরেছে।
‘কই দেখি..
প্রান্তুিক পায়েসের বাটিটা টি-টেবিলের উপর রেখে রাইয়ের চোখ ধরে দেখার চেষ্টা করছে কি ঢুকেছে।
অর্ষা অবস্থা বেগতিক বলে হাতে থাকা পায়েসটা তার পায়ে ফেলে দেয়। সাথে সাথে আহহ করে উঠে।
প্রান্তিক আর রাই দরজার দিকে একবার তাকিয়ে পুনরায় আগের মতো দাঁড়ালো। অর্ষা ভেবেছিলো প্রান্তিক এগিয়ে আসবে। কিন্তু না প্রান্তিক তার ভাবনায় এক বালতি সমবেদনা ঢেলে দিলো।
চলবে…..