#এক_তুমিতে_আসক্ত
#পার্টঃ২৮,২৯
#Writer:#মারশিয়া_জাহান_মেঘ
পার্টঃ২৮
১৮৮.
অর্ষার পায়ে পায়েসটা পড়ে যাওয়াতে পায়ে ফোসকা পড়ে গেছে অনেকটা। বিছানায় বসে পা টা নিচের দিকে রেখে এক পায়ের উপর আরেকটা পা রেখে জ্বলে যাওয়া জায়গাটায় হাত বুলাচ্ছে অর্ষা। প্রান্তিক ওয়াশরুম থেকে আসতেই দেখে অর্ষার চোখ বেয়ে শব্দহীন পানি পরছে। প্রান্তিক হাতের মুষ্টি আবদ্ধ করে কয়েক সেকেন্ড চোখ বন্ধ করে রাখে। ক্ষনিক পর চোখ খুলে একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে ওয়াড্রপের কাছে যায়। ড্রয়ার থেকে একটা মলম বের করে। ধীরে ধীরে অর্ষার পায়ের কাছে বসে যেই লাগাতে যাবে অর্ষা জেদ ধরে বলে,
‘আপনি আমাকে স্পর্শ করবেন না৷ আমারটা আমি নিজেই লাগাতে পারবো।
অর্ষা প্রান্তিকের হাত থেকে নিজে মলমটা নিয়ে আস্তে আস্তে লাগাতে শুরু করলো।
‘কান্নায় চোখ-মুখ লাল হয়ে যাচ্ছে তবুও তেজ যায়না?
‘আমার তেজ আমার সব আপনার কি যান এইখান থেকে।
‘কি দরকার ছিলো বউ? ইচ্ছে করে পায়েসটা ফেলে পা টা নষ্ট করতে?
অর্ষা কান্না থামিয়ে থতমত খেয়ে যায় প্রান্তিকের কথায়। অর্ষা তবুও রাগী লুক নিয়ে প্রান্তিকের দিকে তাকিয়ে বলে,
‘আমার কি খেয়ে দেয়ে কাজ নেই যে ইচ্ছে করে নিজের ক্ষতি করবো?
‘প্রান্তিক ডন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বসা থেকে বিছানায় সোজা হয়ে শুয়ে বললো,
‘সবিই জেলাস বউ সবই জেলাস’
‘আপনাকে দেখে জেলাস হওয়ার কি আছে? আজব।
‘ওমা আমাকে না বলো..রাই কে দেখে জেলাস হয়েছো।
‘এই….অর্ষা কিছু বলতে যাবে তার আগেই প্রান্তিকের একটা ফোন আসে। প্রান্তিক ফোনটা নিয়ে বেলকনিতে চলে যায়। অর্ষা এইদিকে ফোঁ দিয়ে দিয়ে ব্যথা কমানোর বৃথা চেষ্টা করছে। হঠাৎ অর্ষা দেখলো, প্রান্তিক বারান্দায় দাঁড়িয়ে নিচে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসছে। অর্ষা পা টা নামিয়ে আস্তে আস্তে প্রান্তিকের পিছনে গেলো। গিয়ে দেখে প্রান্তিকের দিকে রাই তাকিয়ে তাকিয়ে ফোনে কথা বলছে নিচে বাগানে দাঁড়িয়ে। অর্ষা দাঁতে দাঁত চেপে মনে মনে ভাবলো, ‘তাইতো বলি নিচে তাকিয়ে হাসছে কেনো আর ফোন নিয়ে বারান্দায় গেলো কেনো। এতো যেহেতু রাই রাই করে তাহলে আমাকে বিয়ে করলো কেনো? যত্তসব।
হঠাৎ প্রান্তিক ফোন কেটে পিছনে ফিরে অর্ষাকে দেখে চমকে যায়। বলে,
‘এই এই তুমি? এইখানে?
‘ওমা আমি এসেছি বলে কি শুভ কাজে বাঁধা পড়ে গেলো নাকি? এইটা বলেই অর্ষা চলে গেলো রুমে। আর প্রান্তিক হোহো করে হেসে লুটিয়ে পরে মনে মনে।
১৮৯.
তাইফা অনেক দিনতো হলো। আমি আজ বরং যায়রে।
‘রিমি আজকেই চলে যাবি? আজকে থেকে যা।
‘নারে তাফু। আজকে যেতেই হবে।
‘ঠিক আছে যা। সাবধানে যাস কেমন?
‘ঠিক আছে।
রিমি যেতেই তাইফা দেখতে পেলো প্রিয়ন্তি একা আনমনে ফ্লাটের শেষ কোনায় গ্রিল ধরে দাঁড়িয়ে আছে।
‘প্রিয়ন্তি মন খারাপ?
‘আরে তাফু আপি৷ রিমি আপু কোথায়?
‘এইতো একটু আগেই চলে গেছে গো।
‘ওমা সেকি আমার সাথে দেখা করে গেলোনা?
‘মন খারাপ করোনা ভার্সিটি গেলে দেখা হবে। এখন বলো একা একা এইখানে দাঁড়িয়ে কি ভাবছো?
‘নাগো আপু কিছুনা।
‘তোমাদের বাসায় কি মেহমান এসেছে?
‘ওহ হুম এসেছেতো। আমার একটা ফুপ্পি।
‘একটা মেয়েকে দেখলাম।
‘হুম ওইটা রাই আপিলা। ফুপ্পির মেয়ে।
‘ওহ। আচ্ছা পরে কথা হবে কেমন? আমি এখন যায় গো অনেক কাজ পড়ে আছে।
‘ঠিক আছে আপু।
তাইফা যেতেই প্রিয়ন্তির চোখে গড়গড়িয়ে পানি পরতে লাগলো। তাইফা মৃদু চিৎকার করে বলে,
‘কেনো আভেশ ভাই কেনো তুমি ওইদিন আমার মনের কথা জেনেও এইভাবে আমাকে ফেলে গেলে। কেনো?
১৯০.
খাবার টেবিলে বসে একসাথে সবাই খাবার খাচ্ছে। ফরহাদ চৌধুরী গলাটা একটু ঝেড়ে বললো,
‘সবাই শুনো..আমি এখন কিছু কথা বলবো তাই সবার মনোযোগ প্রয়োজন।
‘কি কথা আব্বু?
‘প্রান্তিক তোমার আর অর্ষার বিয়েটাতো হঠাৎ করে হয়ে গেছে। অর্ষাও এই বিয়েতে রাজী ছিলোনা। তাই আমরা সবাই ডিসাইড করেছি তোমার সাথে রাইয়ের বিয়ে দিবো। কি অর্ষা তুমি এইবার হ্যাপিতো?
আচমকা এমন কঠোর সিদ্ধান্তে সবাই খুব স্বাভাবিক থাকলেও অর্ষা চমকে উঠেছে। সে এক পলক ভাবে তাকিয়ে আছে প্রান্তিকের দিকে। প্রান্তিক খাবারের প্লেটে হাত নাড়াচ্ছো খাচ্ছেনা।
‘কি হলো অর্ষা বল তুই হ্যাপিতো?
অর্ষা সবার গোচরে চোখের একটু পানি মুছে বলল, হুম আমি হ্যাপি।
‘প্রান্তিক তোমার কোনো আপত্তি নেইতো এই বিয়েতে?
‘প্রান্তিক দৃঢ় কন্ঠে বলল, না রাই আমার কোনো আপত্তি নেই।
‘আর আপা আপনার?
‘আরে মনিশা আমার কি আপত্তি থাকবে? আমি খুবই খুশি।
‘আচ্ছা আমি রান্নাঘরে যায় অনেক কাজ আছে..এইটা বলে অর্ষা তাড়াতাড়ি এইখান থেকে চলে যায়।
‘আব্বু আমি আজকেই এনগেজমেন্ট করতে চায় রাইয়ের সাথে।
রান্নাঘর থেকে প্রান্তিকের এমন কথা শুনে অর্ষার বুকটা কেমন ধুক করে উঠে। অর্ষা মনে মনে বলছে,
‘আমার এতো কষ্ট হচ্ছে কেনো? কেনো হচ্ছে? ওনিতো নিজেই রাই আপিকে ভালোবাসে। আমার প্রতি হয়তো মোহ তাই এইরকম আবেগের বশে বিয়ে করেছে। আমিতো ওনাকে ভালোবাসি না আমার কেনো এতো কষ্ট হচ্ছে কেনো? অর্ষা…অর্ষা…রাইয়ের ডাকে অর্ষা চোখের পানি মুছে আবার বসার রুমে যায়। গিয়ে বলে,
‘হুম আপি বলুন।
‘অর্ষা তুই টেডিবিয়ার আপিলাকে সাজিয়ে দিবি আজকে। কারণ আজ ভাইয়ার সাথে আপিলার এনগেজমেন্ট।
‘তুই সাজিয়ে দিস প্রিয় আমি সাজাতে পারিনা।
‘কেনো অর্ষা? তুমি সাজাবেনা কেনো? তোমারইতো সাজানো উচিৎ আমার রাইকে।
প্রান্তিকের মুখে এমন কথা শুনে জানেনা অর্ষার ঠিক কি হলো তবে সে শুধু ভাবছে এইটাই বুঝি পৃথিবীর সবচেয়ে বড় নির্মমতা যেইখানে বর্তমান স্ত্রীকে বলা হয় তার হবু বউকে সাজাতে। অর্ষা আবার ভাবলো, আমি উনাকে ভালোবাসিনা তাই ওনার যা ইচ্ছে করুক।
‘ঠিক আছে প্রিয় আমিই সাজাবো রাই আপিকে।
১৯১ .
রাই আয়নায় নিজেকে বার বার দেখছে। তার পিছনে কানের দোল লাগিয়ে দিচ্ছে অর্ষা। হুম সেইতো সাজিয়েছে রাইকে। রায় নিজেকে আয়নায় দেখে নিয়ে বললো,
‘অর্ষা তুমি অনেক সুন্দরভাবে সাজাতে পারোতো। আমার বিয়েতোও তুমি আমাকে সাজিয়ে দিও।
‘আচ্ছা আপি।
‘অর্ষা এই প্রথম কেউ কোনো ভালোবাসাকে অন্য কাউকে দিচ্ছে।
‘আমি ভাইয়াকে ভালোবাসিনা আপি।
রাই আয়না থেকে মুখ সরিয়ে পিছনে তাকিয়ে অর্ষাকে বললো,
“সত্যিই?
‘হুম আপু সত্যি।
‘অর্ষা জানিনা সত্যি কিনা। তবে আমি বলবো তুমি নিজের মনকে বার বার প্রশ্ন করো হয়তো উত্তর পেয়ে যাবে। আর যদি কখনো মনে হয় যে তুমি প্রান্তিক কে ভালোবাসো একবার শুধু আমাকে বলিও আমি বিয়েটা ভেঙে দিবো। তবে হুম যা বলার বিয়ের আগে বলতে হবে আমাকে। কারণ বিয়ের পর আমার কিছু করার থাকবেনা।
‘অর্ষা ওইখান থেকে কোনো উত্তর না দিয়ে বেরিয়ে এলো।
অর্ষা রুমে যেতেই দেখলো প্রান্তিক কফি খাচ্ছে আর ল্যাপ্টপ টিপছে। অর্ষা গুটিগুটি পায়ে বারান্দায় গিয়ে বারান্দার বেতের সোফাটায় শুয়ে পড়ে। প্রান্তিক তা লক্ষ করে ল্যাপ্টপ রেখে রাগী ভঙ্গিতে অর্ষার কাছে গিয়ে শোয়া থেকে এক টান দিয়ে উঠিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলে,
‘জাস্ট রাতঃ১০ টা…জাস্ট রাত ১০টার মধ্যে এনগেজমেন্টের রিং রাইয়ের হাতে পরিয়ে দেওয়ার আগে যদি তুমি আমাকে ভালোবাসি না বলো..আই প্রমিস অর্ষা আমি বিয়েটা করে নিবো। কেউ আমাকে আটকাতে পারবেনা। প্রান্তিকের কথাগুলো এতোই রাগ আর গম্ভীর মিশ্রিত ছিলো যে অর্ষার দেহ কেঁপে উঠলো।
চলবে…
#এক_তুমিতে_আসক্ত
#পার্টঃ২৯
#Writer:#মারশিয়া_জাহান_মেঘ
১৯৩.
অর্ষা আর কিছুই ভাবতে পারছেনা। তার বার বার মনে হচ্ছে ‘এইসব কি হচ্ছে আমার সাথে? পরক্ষণেই রাই’য়ের লাস্ট কথাটা মনে পড়ে গেছে। অর্ষা ধীর পায়ে বারান্দা থেকে আয়নার সামনে গেছে। আয়নাতে নিজেকে একবার গুটিয়ে দেখে মনে করছে রাই’য়ের কথাটা। রাই তাকে বলেছিলো তার নিজের মনকে প্রশ্ন করতে যে সে আসলে কি চায়। অর্ষা নিজের মনকে বার বার প্রশ্ন করছে,
‘প্রান্তিক কে অন্য কারো সাথে সে কেনো সহ্য করতে পারেনা? কেনো সে এতো জেলাস ফিল হয়? কেনো প্রান্তিকের মুখে সে অন্য কারো প্রশংসা সহ্য করতে পারেনা? তাহলে সে কি সত্যি প্রান্তিককে! অর্ষা এইটা ভাবতেই মুখ চেপে কান্না করতে থাকে। না সে এই বিয়ে কিছুতেই হতে দিবেনা। প্রান্তিক শুধু তার। একবার নয় ২ বার তাদের বিয়ে হয়েছে৷ অর্ষা চোখের পানি মুছে দৌঁড়ে নিচে গেলো। অর্ষা নিচে নামতেই আর কিছু বলতে পারলোনা। কারণ রাই কি হাসি-খুশি আর প্রান্তিক ও রাইকে মিষ্টি খাওয়াচ্ছে। অর্ষা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে ভাবল,
‘না আমার জন্য আমি চায়না রাই আপির আর ওনার সুন্দর সম্পর্কটা নষ্ট করি।
১৯৪.
প্রান্তিক দাঁতে দাঁত চেপে আংটি পড়িয়েছে রাই’কে। সবাই হাসি খুশিতে মেতে আছে। অর্ষা চোখের পানিটা আড়াল করে টেবিলে সবার জন্য খাবার সাজাচ্ছে।
‘রুপা আপা..রান্না ঘর থেকে মাছের বাটিটা নিয়ে আসোতো।
‘আইতাছি আফা।
‘অর্ষা তুই রাই আপিলাকে অনেক অনেক সুন্দর করে সাজিয়েছিসরে।
‘অর্ষা এই নাও মুখে নাও নাও আমার আর রাইয়ের এনগেজমেন্ট এর মিষ্টি খাও।
অর্ষার মুখে ঠেলে মিষ্টি ঢুকিয়ে দিয়েছে প্রান্তিক। অর্ষা সবটুকু নিতে না পেরে কাশতে শুরু করে। মনিশা চৌধুরী বললেন,
‘আহ প্রান্তিক কি করছিস এইটা মেয়েটাতো…
‘আম্মু আমার আর রাইয়ের এনগেজমেন্ট শেষ হয়েছে তাই এই খুশির দিনে অর্ষাকে একটু মিষ্টি মুখ না করালে কি হয়?
অর্ষা নিরব চোখের পানি ফেলে চলে যায় রুমে। তাকে একটাবার কেউ আটকানোরও চেষ্টা করেনি।
১৯৫.
প্রান্তিক রুমে ঢুকে শার্ট খুলতে খুলতে আয়নার পেছনে দেখলো অর্ষা চুপচাপ শুয়ে আছে। প্রান্তিক দেখেও না দেখার ভান করে ওয়ারড্রব থেকে একটা টাওজার আর টিশার্ট নিয়ে ওয়াশরুমে যায় ফ্রেশ হতে।
অর্ষা গভীরভাবে ভাবছে যে তার সামনেই তার ভালোবাসা আরেকজনের হয়ে যাবে!
প্রান্তিক ওয়াশরুম থেকে বেরুতেই প্রিয়ন্তি হাতে করে কিছু খাবার এনে প্রান্তিকের দিকে তাকালো। প্রান্তিক ইশারায় খাবার রেখে চলে যেতে বললো তাকে। প্রিয়ন্তি চুপি চুপি খাবার রেখে রুম থেকে বেরিয়ে পড়লো।
‘খাবারটা খেয়ে নাও।
‘খাবোনা।
‘আমি বলছি খাবারটা খেয়ে নাও”
‘বললামতো খাবোনা।
প্রান্তিক এইবার দুই গাল চেপে অর্ষার মুখে খাবার ঢুকিয়ে দিলো। অর্ষা এইবার নিজের রাগকে কিছুতেই কন্ট্রোল করতে পারেনি। সে বিছানা থেকে উঠে চিৎকার করে বললো,
‘কি পেয়েছেন কি আপনারা আমাকে? পুতুল পেয়েছেন পুতুল? যখন যা ইচ্ছে করছেন। যখন যা পারছেন করাচ্ছেন। আমিওতো মানুষ আমারোতো মন আছে। নেক্সট টাইম আমাকে টাচ করবেন না। অন্য কারো হক আমাকে ছোঁয়ে নষ্ট করুন তা আমি চাইনা।
প্রান্তিক কিছু না বলে চুপচাপ রুম থেকে বেরিয়ে যায়।
১৯৬.
রাতে বিছানায় এসে রাই শুয়েছে দেখে অবাক হয় অর্ষা। এইখানে রাই আপি কেনো!
‘রাই আপি তুমি এইখানে কেনো?
‘আরে অর্ষা তুমি এসেছো? আসলে প্রান্তিক এর সাথে আমার এনগেজমেন্ট হয়ে গেছেতো। তাই প্রান্তিক বললো, আমি তোমার সাথে থাকতে আর প্রান্তিক পাশের রুমে থাকবে।
রাইয়ের কথা শুনে অর্ষার ভেতরটা হাহাকার করে উঠলো৷ বিয়ে না হতেই এতে বড় বিচ্ছেদ? লোকটা কি আমার বিহেভে কষ্ট পেয়েছে? আমার ঠিক হয়নি ওভাবে কথা বলা।
‘অর্ষা শুয়ে পড়ো।
‘হুম আপি।
১৯৭.
রাত ১ টা ছোঁই ছোঁই অর্ষার ঘুম আসছেনা। হঠাৎ ফোনের রিংটোন শুনে পাশ তাকালো অর্ষা। রাই ফোনের রিংটোন শুনে আড়মোড় করে উঠে কলটা ধরলো। অর্ষা ঘুমের ভান করে শুয়ে আছে।
‘হুম ঘুমিয়ে আছে।
ওপাশ….
‘তাই? এতে ভালোবাসো প্রান্তিক?
অর্ষা প্রান্তিক নামটা শুনতেই নিরবে কাঁদতে লাগলো। বাহ এতো ভালোবাসে রাই আপিকে!
১৯৮.
আজ নাফিস সরদার রাহেলা বানু আফ্রা এসেছে। সারা বাড়ী হৈচৈ। কারণ আজ প্রান্তিক আর রাইয়ের বিয়ে। অর্ষা এই ৪টা দিন যতটা স্বাভাবিক থাকার থেকেছে। কিন্তু এখন মা বাবাকে দেখে কান্নায় ভেঙে পড়ে সে।
‘আম্মা তুমি কান্তাছো ক্যান? তুমিতো মুক্তি চাইছিলা এই সম্পর্ক থেইকা।
‘আব্বা আমি কই কাঁদছি আপনাদেরকে অনেকদিন পর দেখছিতো তাই।
‘আরে খালুজান খালামনি কেমন আছেন?
‘বাবা প্রান্তিক আমরা ভালো আছি। তুমি কেমন আছো?
‘আলহামদুলিল্লাহ খালুজান ভালো। ভেতরে গিয়ে বসুন আমি আসছি।
অর্ষা এই ৪টা দিন ভালোভাবে দেখেনি প্রান্তিক কে। নাহ এমনিতেই নয়। ইচ্ছে করে সে প্রান্তিকের সামনে যায়নি। প্রান্তিক অর্ষার দিকে না তাকিয়ে চলে গেলো ভেতরে।
প্রান্তিক তার দিকে একটুও তাকায়নি? তা ভাবতেই বুক ফেটে কান্না আসছে অর্ষার। আজকের পর প্রান্তিক আর তার থাকবেনা এইটা ভাবতেই তার মন আকাশ ছোঁয়া কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে।
১৯৯.
অর্ষা..
‘আরে প্রিয় আয় আয় কিছু বলবি?
‘রাই আপিলাকে সাজানো শেষ?
‘হুমরে। কিন্তু রাই আপি বিয়ের একটা দিনে এমন নরমাল লেহেঙ্গা কেনো পড়েছেরে?
‘হয়তো আপিলার মন চেয়েছে। আসলে ভাইয়া পছন্দ করেছে।
‘ওহ।
‘একটা কথা বলবো অর্ষা?
‘হুম বল।
‘এখনো সময় আছে তুই ভাইয়াকে বল যে তুই ভাইয়াকে অন্য কারো হাতে তুলে দিতে পারবিনা। রাই আপিলা সত্যি কোনো কষ্ট ছাড়াই তোর হাতে ভাইয়াকে দিয়ে দিবে..এইটা বলেই প্রিয়ন্তি চলে যায় রুম থেকে।
প্রিয়ন্তি রুম থেকে যেতেই অর্ষা বিছানায় শুয়ে কান্না করতে থাকে। কি করবে সে? না না আমি ওনাকে ছাড়া বাঁচাবো না। অর্ষা কান্না থামিয়ে দৌঁড়ে যায় রাইয়ের কাছে। গিয়ে চিৎকার করে বলে,
রাই আপি…
রাই আচমকা অর্ষার ডাক শুনে দরজার দিকে তাকায়। অর্ষা হাঁপাচ্ছে! তা দেখে রাই তাড়াতাড়ি তাকে ধরে রুমে এনে বসিয়ে পানি দেয়। অর্ষা এক ঢুকেই সবটুকু পানি খেয়ে নেয়।
‘কি হয়েছে অর্ষা?
‘আ.. আপ আপি আমি ওনাকে ছাড়া থাকতে পারবোনা আপি। আমি ওনাকে অনেক ভালোবাসি।
‘অর্ষার কথা শুনে রাই বলে,
‘আর ইউ সিরিয়াস অর্ষা?
‘হুম আপি আমি সত্যি বলছি।
ইতিমধ্যেই বাড়ির সবাই এসে পড়েছে রাইয়ের রুমে। এসে দেখে অর্ষা কাদঁছে।
‘কি হয়েছে রাই অর্ষা কাঁদছে কেনো?
‘প্রান্তিক..
‘কি হলো বলো?
‘প্রান্তিক ইয়ে মানে..অর্ষা তোমাকে ভালোবাসে।
রাইয়ের মুখে এমন কথা শুনে বাড়ীর সবাই গম্ভীর মুখ নিয়ে কিছুক্ষণ চুপ করে থাকে৷ অর্ষা তা দেখে আরও বেশি কাঁদতে থাকে। হঠাৎ বাড়ীর সবাই হো হো করে হেসে ফেলে। রাই প্রান্তিক সহ।
অর্ষা হাত দিয়ে চোখের পানিটা মুছে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে সবার দিকে। সবাই হাসছে কেনো!
‘অর্ষা…আসলে কি বলতো..এই সব কিছুই আমাদের সাজানো প্ল্যান।
অর্ষা অবাক হয়ে বলে মানে? প্রিয়ন্তি অর্ষার কাঁধে থুতনি রেখে বললো,
‘আসলে তোর মুখে ভাইয়াকে ভালোবাসিস কথাটা শুনাতেই এইসব প্ল্যান। আর আজ ভাইয়ার সাথে রাই আপিলার না তোর বিয়ে। তাইতো আপিলা একদম নরমাল সেজেছে। আর তোর রুমে গর্জিয়াস বিয়ের শাড়ী।
অর্ষা রাগে কটমট করে প্রান্তিকের দিকে তাকায়। প্রান্তিক চুলে হাত রেখে অন্য দিকে তাকায় আর আঁড়চোখে অর্ষাকে দেখে।
‘রাই পাখি’
হঠাৎ কারো কন্ঠ পেয়ে পিছনে তাকায় সবাই। একটা ছেলে কালো কোট পড়া হাতে গিফট আর গোলাপের তোড়া। রাই ছেলেটাকে দেখে অবাক হয়ে দৌঁড়ে গিয়ে ছেলেটাকে জড়িয়ে ধরে বলে, ‘শখ!
রাইয়ের মা হেসে বলে,
‘বাবা শখ কেমন আছো?
‘ভালো আছি মা। আপনারা সবাই কেমন আছেন?
‘ভালো আছি বাবা।
রাই শখ কে নিয়ে অর্ষা আর প্রান্তিকের সামনে যায়। শখ প্রান্তিক কে দেখেই জড়িয়ে ধরে। প্রান্তিকও হাসি-মুখে জড়িয়ে ধরে বলে,
‘শখ কেমন আছো?
‘ভালো আছি তুমি?
‘আমিও।
রাই বললো, তোমাদের জড়াজড়ি শেষ হলে এইবার অর্ষার সাথে আলাপ করিয়ে দেয়?
‘অর্ষা ওহ হচ্ছে শখ আমার ফ্রিয়েন্সি।
আর শখ ওহ হচ্ছে অর্ষা যার জন্য প্রান্তিক আমাকে আমেরিকা থেকে আনিয়েছে।
অর্ষা অবাক হয়ে বললো,
‘আপু তোমার ফ্রিয়েন্সি?
‘হুম অর্ষা আমি রাইয়ের ফ্রিয়েন্সি। আসলে তোমার কথা প্রান্তিক আমাকে ফোনে বলেছে। তোমাদেরকে মিল করানোর জন্যই রাইকে পাঠিয়েছি আমি।
অর্ষা লাজুকভাবে হাসে।
‘প্রিয় চল চল অর্ষাকে আমরা সাজায়..
‘হুম আপু চলো।
২০০.
অর্ষাকে বউ সাজে সাজিয়েছে প্রিয়ন্তি আর রাই। অর্ষা মনে মনে ঠিক করে রেখেছে বাসর রাতে প্রান্তিকের কি হাল করবে।
‘আমার ভাইটা এইবার না জানি সেন্স হারায় তোকে দেখে।
‘ইশ প্রিয়ন্তি এইভাবে বলিসনারে দেখছিসনা? অর্ষা লজ্জায় শেষ হয়ে যাচ্ছে।
‘ওফ রাই আপি তোমরা কি যে বলোনা।
ভাই প্রান্তিক তুইতো নিজের ভালোবাসাকে পাচ্ছিস আমরা তো সারাজীবন সিঙ্গেলই থাকবো। আফসোস তোর একটা শালী নাই না না আছে তবে পিচ্চি
‘শৈবাল সমস্যা নেই বড় হলে তোর কাছে বিয়ে দিবোনি।
এইটা শুনে ইরফান অনিক হাহা করে হেসে দেয়।
২০০১.
অর্ষা আর প্রান্তিক এর বিয়ে সম্পূর্ণ হয়েছে। অর্ষা লাজুকভাবে মাথা নিচু করে আছে আর প্রান্তিক এক ধ্যানে তার বউয়ের দিকে তাকিয়ে আছে।
‘হায় হায়..অর্ষা তুইতো লজ্জায় লাল হয়ে গেছিস।
‘ইশ প্রিয়ন্তি এইভাবে বলিসনা দেখছিসনা? প্রান্তিক অর্ষার এই লাজুক চেহারায় আসক্ত হয়ে গেছে।
‘ঠিক বলেছো গো আপিলা। এইটা বলেই দুজন মুখ টিপে হেসে ফেলে।
‘কিরে প্রান্তিক আমাকে ফেলেই বিয়ে করে নিলি?
হঠাৎ পরিচিত কন্ঠ পেয়ে সবাই একসাথে সামনে তাকায়। প্রিয়ন্তি সেই মানুষটাকে অবাক চোখে একবার দেখেই দৌঁড়ে নিজের রুমে গিয়ে দরজা লাগিয়ে দেয়।
‘আরে আভেশ বাবা তুই কেমন আছিস?
‘ভালো আছি মামনি তুমি?
‘তোকে ছাড়া ভালো থাকতে পারি?
‘আহা কান্না করছো কেনো? চলে যাবো কিন্তু আবার।
‘গিয়ে দেখোইনা একবার একদম মেরে মাটি চাপা দিয়ে দিবো।
‘ওফ বাবাই তুমিও কাঁদছো? চলে যাবো কিন্তু সত্যি সত্যি।
‘আভেশ কেমন আছিস ভাই? ভুলেইতো গিয়েছিলি। আসতে এতো লেইট হলো যে?
‘আরে বলিসনা এয়ারপোর্টে ল্যান্ড লেইট করে হয়েছে। যাক গে বাদ দে..অর্ষা কোথায়?
আভেশ গিয়ে অর্ষার সামনে বসে অর্ষার হাতে একটা বক্স দিয়ে বললো,
‘এইটা আমার ভাইয়ের বউয়ের গিফট।
‘অর্ষা লাজুকভাবে বলে, Thank You ভাইয়া।
২০২.
খাবার টেবিলে সবাই খেতে বসতেই মনিশা চৌধুরী বললো,
‘আচ্ছা অর্ষা তাইফাকে অনেকবার ডাকতে গেলাম দরজা তালা দেওয়া কোথায় গিয়েছে জানিস?
‘নাতো খালামনি।
প্রিয়ন্তি কোথায়?
আভেশ প্রিয়ন্তিক কথা শুনতেই থমকে যায়।
চলবে…..