#এক_তুমিতে_আসক্ত
#পার্টঃ৩০অন্তীম_পার্ট
#Writer:#মারশিয়া_জাহান_মেঘ
২০৩.
আভেশ মনে মনে ভাবছে, আসলেইতো মেয়েটা খেতে আসেনি কেনো? ওইসময় আমাকে দেখে পালিয়েছে। হয়তো আমার উপর ওর চাপা অভিমান কাজ করছে। কিন্তু আমার কি করার আছে? এইসব ভাবতেই আভেশ একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে।
‘মনিশা তুমি গিয়ে প্রিয়ন্তিকে ডেকো নিয়ে আসো। বিয়ে উপলক্ষেতো মেয়েটা সারাদিন খাইনি পর্যন্ত।
‘বাবা আভেশ তুই একটু ডেকে নিয়ে আসবি?
‘মামনি আমি!
‘হুম যা যা তাড়াতাড়ি।
কি আর? যেইখানে বাঘের ভয় সেইখানেই সন্ধ্যে হয়। আভেশ প্রিয়ন্তির সামনে যেতে চায়নি অথচ সেই তাকে এখন প্রিয়ন্তির সামনেই যেতে হবে।
আন্টি…
হঠাৎ কারো ডাকে সবাই পিছু ফিরে তাকায়। আভেশও চেয়ার ছেড়ে উঠতে যাবে সেও থেমে সদর দরজার দিকে তাকায়।
ফরহাদ চৌধুরী আর মনিশা চৌধুরী অবাক হয়ে একে অপরের দিকে তাকিয়ে তাইফার পাশের মানিষটিকে দেখছে। ফরহাদ চৌধুরী বাকরুদ্ধ হয়ে গেছে। মুখ হা করে তাকিয়ে আছেন তিনি।
তাইফার পাশে থাকা অনাকাঙ্ক্ষিত মহিলাটি দৌঁড়ে এসে ফরহাদ চৌধুরীকে জড়িয়ে ধরে৷ ভেজা কন্ঠে বলে,
‘ভাইজান কতো বছর তোমাকে দেখিনা।
ফরহাদ চৌধুরী মহিলাটিকে নিজের থেকে ছাড়িয়ে ছিটকে দূরে সরিয়ে দিয়েছে।
‘ফরহাদ..
“মনিশা ওকেতো আমি বলিনি আমার সামনে আসতে তাহলে এতো বছর পর আবার কোনো এসেছে? মা বাবা সবাইকেইতো খেয়েছে। আর তাইফা তুমি ওর সাথে কি করছো?
তাইফা চোখের পানি নিয়ে একটু হেসে বললো,
‘মামু আমি এই হতভাগা মায়ের মেয়ে।
এইটা শুনে মনিশা চৌধুরী আর ফরহাদ চৌধুরী অবাক। মনিশা চৌধুরী গিয়ে জড়িয়ে ধরে তাইফাকে আর বলে,
‘তুমি সাহেরার মেয়ে?
‘হুম মামী।
প্রান্তিক অর্ষা আভেশ এইসব কিছুই বুঝতেছেনা। প্রিয়ন্তি উপর থেকে সব দেখছে। সেও বুঝতে পারছেনা যে হচ্ছেটা কি এইসব।
‘ফরহাদ সাহেরা তোমার বোন তুমি ওর সাথে এমন করতে পারোনা। তুমিতো প্রতিদিন ওর ছবি দেখে কাঁদো তুমি কি ভেবেছো আমি জানিনা?
” মনিশা…
‘আম্মু এইগুলো কি হচ্ছে?
‘প্রান্তিক ওনি তোমার ফুপ্পি। তোমার বাবার একমাত্র বোন।
প্রান্তিক অবিশ্বাস্য চোখ নিয়ে তাকিয়ে আছে সাহেরার দিকে। সে কখনো জানতোইনা যে তার ফুপ্পি আছে। প্রিয়ন্তি উপর থেকে নেমে বলে মানে?
‘আজ থেকে অনেক বছর আগের কথা তোর ফুপ্পি তোর ফুফার সাথে প্রেম করে বিয়ে করে। তোদের দাদু এইগুলো মেনে নিতে পারেনি। তারপর বাড়ী থেকে বের করে দেয় সাহেরা আপাকে।
সাহেরা হোর হোর করে কেঁদে দেয়। রাই আর প্রিয়ন্তি গিয়ে তাকে থামানোর চেষ্টা করছে। তাইফার চোখ দিয়ে পানি পরছে। নীরব দর্শক সে।
‘মনিশা যেই মানুষটাকে এতো কিছু ঘিরে সেই মানুষটাইতো নেই।
‘মানে এইসব কি বলছেন আপা?
‘হুম তাইফার বাবা নেই পৃথিবীতে। আমার ছেলেটাও ওই হসপিটাল থেকে চুরি হয়ে গেছে। আমার প্রথম সন্তান।
তাইফা চোখের পানি মুছে অবাক হয়ে বললো,
‘প্রথম সন্তান মানে?
‘তোর আগে তোর একটা ভাই হয়েছিলো। যেই হসপিটালে আমার অপারেশন হয় সেইখান থেকে আমার ছেলেটা..এতটুকু বলেই কান্না করতে লাগলো সাহেরা বেগম।
বোনের এমন হাহাকার কথা শুনে ফরহাদ চৌধুরীর হৃদয় কেঁপে উঠলো। মনিশা চৌধুরী কিছু বলতে যাবে তার আগেই ফরহাদ চৌধুরী বললো,
‘বেরিয়ে যা তুই তোর মেয়ে নিয়ে।
‘দাঁড়াও ফরহাদ।
‘ওদেরকে তাড়াতে গেলেতো আরেকজনকে তোমার তাড়াতে হয়।
‘মনিশা…
‘আভেশ বাবা এদিকে আয়।
‘আম্মু হচ্ছেটা কি? আর আব্বু তুমি এইভাবে আমাদের থেকে আমাদের ফুপ্পিকে কেড়ে নিতে পারোনা।
‘প্রান্তিক…
‘চিৎকার করে লাভ নেই ফরহাদ। আজ সত্যিটা সবাইকে বলবো আমি।
‘কি সত্যি আম্মু।
‘আভেশ ওনিই তোর মা’
মনিশা চৌধুরীর মুখ থেকে এই কথা শুনে থমকে যায় আভেশ।
‘এইসব কি বলছো মামনি?
‘হ্যাঁ আম্মু এইসব কি বলছো।
‘আমি ঠিকি বলছি প্রান্তিক।
সাহেরা বেগম আর তাইফা পাথর হয়ে যায়। সাহেরা এতো বছর পর নিজের ছেলেকে দেখে হাসতে যেনো ভুলেই গেছে।
আভেশ অবাক হয়ে বলে,
‘আমি বিশ্বাস করিনা মামনি। তোমরা নিজেরাই বলেছো আমার মা বাবা মারা গেছে।
‘আভেশ ওই হসপিটাল থেকে তোর মামাই তোকে নিয়ে এসেছে। কারণ তোর দাদু তোর মায়ের কোনো সন্তান হোক তা কখনো চায়নি। তাই তোকে মেরে ফেলার প্ল্যান করে। তোর মামা সব শুনে ফেলেছিলো। এরপর তোকে ওই হসপিটাল থেকে পালিয়ে নিয়ে এসেছে আমাদের এইখানে।
পুরো ঘটনা শুনে বাড়ীর সবাই নিবার্ক।
আভেশ নিরবতা ভেঙে সাহেরা বেগম আর তাইফার কাছে যায়। আভেশ সাহেরা বেগমের হাত ধরে নিয়ে যায় ফরহাদ চৌধুরীর কাছে। ফরহাদ চৌধুরীর সামনে গিয়ে বলে,
‘বাবাই…আমার দিকে তাকাও।
‘কি হলো বাবাই তাকাও।
ফরহাদ চৌধুরী আভেশের দিকে তাকায়। একি! আভেশের চোখে পানি! আভেশ হয়তো ওনার নিজের সন্তান নয় তবে প্রান্তিকের মতোই ভালোবাসেন তিনি আভেশকে।
‘বাবাই আমার মুখের দিকে তাকিয়ে মাকে ক্ষমা করে দাও। দেখো যা কিছু হয়েছে তাতে মায়ের কোনো কিছুই করার ছিলোনা। একটা মা সবসময় চায় স্বামীর প্রিয় হতে, ভাই বোনের আদুরী হতে এবং সন্তানের আদর্শ মা হতে।
‘আভেশ..
‘বাবাই প্লিজ।
ফরহাদ চৌধুরী সাহেরার দিকে এক পলক তাকিয়ে চোখে পানি এনে সাহেরা বেগমকে জড়িয়ে ধরেন। তাইফার দিকে তাকিয়ে তাইফাকে ইশারায় কাছে আসতে বলেন। তাইফা দৌঁড়ে এসে জড়িয়ে ধরে তার মামুকে।
বাড়ীর সবার চোখে আনন্দ ও উচ্ছাস।
প্রান্তিক আভেশকে গম্ভীর কন্ঠে বলে,
‘আভেশ এদিকে আয়।
‘কি হয়েছে?
“তোর শাস্তি আছে।
‘কেনো!
‘আমার বোনটাকে কষ্ট দেওয়ার জন্য। প্রিয়ন্তি প্রান্তিকের এমন কথায় থতমত খেয়ে চলে যায় দৌঁড়ে নিজের রুমে।
‘কি বলছিস এইসব সবাই শুনছে [ ফিসফিস করে ]
‘বাবা আভেশ প্রান্তিক আমাকে সব বলেছে তুই প্রিয়ন্তিকে ভালোবাসিস।
আভেশ লজ্জা পেয়ে বলে,
না মানে বাবাই..
‘আচ্ছা থাক আর মানে মানে করতে হবেনা গিয়ে এইবার মগারাণীর রাগ ভাঙ্গা।
‘যার শেষ ভালো তার সব ভালো’
এই কথাটা শুনে সবাই সামনে তাকায়। তাইফা অবাক হয়ে বলে,
‘সাইফ ভাই!
” কি আর করবো? আন্টিকে বলে আসতেই হয়েছে তোর জন্য।
সবাই বুঝতে পেরেছে যে সাইফ তাইফার ভালোবাসা তাই সবাই ফিক করে হেসে ফেলে।
‘আচ্ছা মাম আমরা তাহলে আসি?
‘সেকিরে রাই আজকেই চলে যাবি?
‘মাম আজ আমার আর রাইকে যেতেই হবে বাবা মা ওয়েট করছে আমাদের জন্য।
‘কিন্তু শখ.
‘মাম আর কথা বাড়িওনাতো। আর তাছাড়া আমি যেই কাজে এসেছিলাম তাতো সফল হয়েইছে।
২০৪.
‘একদম কথা বলবেনা’
‘আরে প্রিয় শুনতো.
‘না আভেশ ভাই তোমার সাথে আমার কোনো কথা থাকতেই পারেনা তো শুনবে কি!
‘আরে তোর প্রতি আমি দূর্বল হয়ে যাচ্ছিলাম তাইতো বিদেশ যেতে হয়েছে।
‘ওহ ভালো। তো আসলে কেনো?
‘তোর জন্য।
‘যাওতো আভেশ ভাই।
‘এতো অভিমান।
এইবার প্রিয়ন্তি কান্না করতে করতে বললো,
‘অভিমান! না কার সাথে অভিমান করবো? যে আমাকে বুঝেইনা? যে আমাকে ফেলে চলে গিয়েছিলো?
‘আরে কি করবো বল? আমি ভেবেছিলাম বাবাই মামনি কি ভাববে তা। ওনারা কষ্ট পাবে ভেবে…
‘তো এখন কষ্ট পাবেনা? যাও এইখান থেকে।
আভেশ এইবার প্রিয়ন্তিকে বুকে চেপে ধরে। মেয়েটা কান্না করতে করতে হেঁচকি তুলে ফেলেছে। আভেশ হেসে বললো,
‘আমারো অনেক কষ্ট হয়েছে প্রিয় তোর জন্য। এই কয়েকটা মাস আমি কতোটা কষ্টে কাটিয়েছি তা শুধু প্রান্তিকই জানতো। কারণ আমি প্রান্তিক কে সব বলেছিলাম।
‘কি!
‘হুম বলেছিলাম। তাইতো ইজিলি সবাই জেনেছে আমাদের ব্যাপারটা। অনেক ভালোবাসিরে তোকে।
‘আম..আমিও আভেশ ভাই।
২০৫.
বাসর ঘরে বসে আছে অর্ষা। প্রান্তিক রুমে এসে ঘুমটা খুলতেই অর্ষা হামলা চালায় প্রান্তিকের উপর। প্রান্তিকের উপরে চেপে বসে পান্জাবীর কলার চেপে বলে, আমার সাথে এক্টিং তাইনা? আমাকে কষ্ট দিতে খুব ভালো লাগছিলো তাইনা? আহা রাই..তোমার হাতের পায়েস অসাধারণ। প্রান্তিক এইবার উত্তেজিত হয়ে বলে,
‘এই বউ বউ আমার..উঠো আমার পেট থেকে..আল্লাহগো কি আটার বস্তা মেয়েগো..কি ওজন আল্লাহ। এই তুমি কি খাও বলোতো?
‘তবে রে…এইটা বলে অর্ষা প্রান্তিকের বুকে আলতো কিল বসায়। অর্ষা উঠে বিছানায় বসতেই প্রান্তিক পান্জাবীর পকেট থেকে একটা বেলীফুলের গাজড়া অর্ষার চুলে লাগিয়ে দিয়ে নিজের বুকে অর্ষার মাথাটা নিয়ে বলে,
‘মাঝেমাঝে কাছের মানুষ গুলোর কাছে নিজের গুরুত্ব বুঝাতে হলেও দূরে যেতে হয় বউ। নয়তো তারা বুঝেই পায়না যে তারা মানুষটাকে কতোটা ভালোবাসে।
অর্ষা চুপসে প্রান্তিকের বুকে মাথা রেখে স্বস্তির নিশ্বাস নিচ্ছে।
প্রান্তিক অর্ষাকে শুইয়ে দিয়ে বললো,
এইবার তাহলে শুরু করি?
অর্ষা চোখ বড় বড় করে বলে,
‘কি?
‘প্রান্তিক অর্ষার পাশে শুয়ে অর্ষার কানের কাছে গিয়ে ফিসফিস করে বলে,
‘আমার ছোট্ট একটা ঊষাকে আনার ব্যবস্থা।
অর্ষা লাজুকতা নিয়ে বিষ্ময়কর হয়ে বললো,
‘ঊষা কে?
‘ওমা আমার আর তোমার ছোট্ট সোনা। এইটা বলেই প্রান্তিক একটা দুষ্টু হাসি দেয়।
________সমাপ্ত_________