এক_পশলা_বৃষ্টি,১০,১১

0
515

#এক_পশলা_বৃষ্টি,১০,১১
#লেখনীতে: ইশরাত জাহান ফারিয়া
#পর্ব-১০

সেদিন ছিলো টিনা আর সাদের চতুর্থ বিবাহবার্ষিকী। তবে এসবে সাদের হেলদোল নেই। অফিস থেকে ফিরে এসে বাড়িতে কোথাও টিনাকে খুঁজে পেলোনা। সাদ মায়ের ঘরে যায়। রোমেলা বসে নামাজ পড়ছিলেন। সাদ জিজ্ঞেস করে, ‘টিনা কোথায়?’

রোমেলা চুপ করে থাকে।

‘ তুমি জানো? কোথাও তো ওকে পেলাম না?’

‘ বললে কী বিশ্বাস করবি?’

‘ কী?’

‘ ওই যে, টিনা কোথায়!’

‘ করবোনা কেন?’

‘ কারণ তোরা ভাবতেও পারবিনা ও এমন কাজ করতে পারে।’

‘ ভনিতা না করে বলে ফেলো!’

‘ টিনার যে অন্য ছেলের সাথে সম্পর্ক আছে, তুই জানিস?’

সাদ বড্ড অবাক হলো।

‘ মানে?’

‘ টিনা অন্য একটা ছেলেকে পছন্দ করে, তুই ভাবতেও পারবিনা ওই ছেলের সাথে ওর ফিজিক্যাল রিলেশন পর্যন্ত চলে।’

সাদ বড় একটা ধাক্কা খায়। টিনার সাথে অন্য লোকের সম্পর্ক আছে, তাও আবার ফিজিক্যাকি এটাচড? হোয়াট দ্যা? মা এসব কী বলছে? সাদ বিশ্বাস করতেই পারছেনা। কিন্তু মা যখন বলছে তখন বিশ্বাস করাটাই শ্রেয়।

‘ তুমি কী করে জানলে?’

‘ আমিতো আরও অনেক আগেই জেনেছি। তোদের বিয়ের পাঁচমাসের মাথায়ই।’

সাদ অবাক হয়ে বললো, ‘তাহলে এতোদিন বলোনি কেন?’

‘ তোর বাবার সামনে টিনাকে নিয়ে কিছু বলা যায়? তাছাড়া আমি নিজের কানে শুনেছি। ওরা কলেজে পড়াকালীন একপ্রকার কলগার্ল ছিলো, খুবই লুকিয়ে চুরিয়ে এই কান্ড ঘটাতো।’

‘ মা!’

‘ সত্যি বলছি। আমি এতোদিন বলিনি কারণ প্রমাণ ছিলোনা। কিন্তু আজ আছে। নিজের কানে শুনেছি ওরা “স্কাই হোটেলে” উঠবে আজ রাতে। টিনা হয়তো সেখানেই গিয়েছে।’

সাদিদ সাহেব দরজায় দাঁড়িয়ে শুনে ফেললেন। ঘরে ঢুকেই প্রচন্ড জোরে থাপ্পড় মারলেন স্ত্রীর গালে। পঁয়ত্রিশ বছরের সংসার জীবনে কখনো রোমেলার গায়ে হাত তুলেননি ওনি। রোমেলার চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়লো। সাদ কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে বাবার দিকে চেয়ে আছে।

সাদিদ সাহেব হুংকার ছেড়ে বললেন, ‘হচ্ছেটা কী এসব? তুমি টিনার নামে কীসব আজেবাজে কথা বলছো?’

‘ সত্যি বলছি।’

‘ তোমার এসব আজগুবি কথা বন্ধ করো। টিনা হতে পারে একটু অন্যটাইপ মেয়ে কিন্তু শরীর বিকিয়ে দেওয়ার মতো না।’

‘ হাসালে! যে বিয়ের আগেই তার ভার্জিনিটি খুইয়ে বসে আছে তাকে তুমি সাপোর্ট করছো?’

‘ আমি কাউকে সাপোর্ট করছিনা। তুমি জানো ওর বাবা কতটা ডেঞ্জেরাস মানুষ? যদি শুনে তার মেয়ের নামে কুৎসা রটিয়েছো তাহলে আমাদের জেলের ভাত খাওয়াবে।’

‘ ওনার ও তো জানা দরকার মেয়ে নষ্ট হয়ে গিয়েছে। একটা দূষিত, নোংরা মেয়েকে আমার ছেলের গলায় ঝুলিয়ে দিয়েছে। অবশ্য আমার ছেলেই তো এসবের যোগ্য, সে তো কবেই ক্যারেক্টারলেস হয়ে গিয়েছে।’

সাদ মায়ের তুচ্ছতাচ্ছিল্য মেনে নিতে পারলোনা। খুব কষ্ট পেলো। চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলো। কিন্তু টিনার বিষয়টাও দেখতে হচ্ছে ভেবে বাবার সাথে হোটেলে এলো। তখন রাত দশটা। কাউন্টার থেকে রুম নাম্বার খুঁজে খুঁজে পেয়েও গেলো। এবং দেখা গেলো রোমেলার কথাই ঠিক। দরজা খুলতেই দেখা গেলো টিনা আপত্তিকর অবস্থায় ইফতির সাথে। সাদিদ সাহেব বাক্যহারা হয়ে গেলেন। সাদ প্রচন্ড রেগে গেলো৷ এই ক্যারেক্টরলেস মেয়ের জন্য ওর মা বাবার হাতের থাপ্পড় খেলো? সে টেনে হিঁচড়ে হোটেল থেকে নিয়ে এলো টিনাকে।

বাড়ি এসে সাদ প্রচন্ড জোরে থাপ্পড় মারলো টিনাকে। চিৎকার করে বললো, ‘কী এসব? এতো নিচ তুমি? ছিহ!’

টিনা চুপ করে আছে৷ কান্না করছে। ভাবেনি ধরা পড়ে যাবে। কিন্তু ধরা যখন পড়েই গেছে তখন আর লাভ কি মিথ্যা বলে!

‘ কয়দিন ধরে চলছে এসব?’

টিনা এবার মুখ খুললো।

‘ বিয়ের আগে থেকেই।’

সাদ ঠাস করে থাপ্পড় মারলো।

টিনার কোনো ভাবান্তর হলোনা। সে বললো, ‘তুমি যা করতে পারো, আমিও তাই পারি!’

‘ মানে?’

‘ বিয়ের আগে তুমিও তো এসব করেছো।’

‘ না। শোভা আমার লিগ্যাল ওয়াইফ ছিলো।’

‘ ওই একই হলো।’

‘ এক হয়নি।’

‘ কেন হয়নি? তুমি ওর সৌন্দর্য উপভোগ করবে বলেই তো বিয়ে করেছিলে, তাইনা? ভালোবেসে তো করোনি। শুধু বৈধতার দোহাই দিয়েছিলে। আর কিছু না। কিন্ত ইফতির সাথে আমার লিগ্যাল সম্পর্ক না থাকলেও আমি ওকে ভালোবাসি।’

সাদ রেগে চিৎকার করলো।

‘ টিনা! তুমি কিন্তু বাড়াবাড়ি করছো।’

‘ মোটেই না। এবার যখন সব জেনেই গেছো তবে আমাকে মুক্তি দিয়ে দাও।’

সাদ চমকে উঠলো। আবার! আবার সেই মুক্তির কথা? মানতে পারলোনা সাদ। টিনাকে থাপ্পড় মেরে বললো, ‘পতিতা একটা।’

সাদিদ সাহেবের মুখভঙ্গি দেখার মতো হলো। টিনার বাবা অনেক কড়া। তাঁর মেয়ে হয়ে টিনা এরকম হলো আর সেটা সাদের কপালেই জুটলো? কেন এমন হলো ওনার ছেলের সাথে? এর চেয়ে তো শোভাই ভালো ছিলো। না পূরণ হলো ছেলের বউয়ের শখ, না দেখাতে পারলো নাতি-নাতনিদের মুখ। মাঝখান থেকে সম্মান নিয়ে টানাটানি। এর উপর টিনাকে কিছু বলার অধিকার তাদের স্বামী-স্ত্রীর নেই। কারণ ঘরের সব কাজ রোমেলাকে দিয়ে করায় টিনা, পা পর্যন্ত টিপিয়েছে। কাপড়চোপড় ধোয়া, রান্না করা, ঘর গুছানো, এমনকি গ্লাসে পানিটা পর্যন্ত ঢেলে দেয় রোমেলা। সাদিদ সাহেবের রিটায়ার্ডের পর বাজার করা, ইলেকট্রিক বিল দেওয়াটাও নিজের কর‍তে হয়। যেটা আগে দারোয়ান করতো। অপমান করতেও ছাড়েনি। কয়েকদিন আগে তো ওদেরকে বৃদ্ধাশ্রমেই পাঠিয়ে দিতে চেয়েছিলো, ভাগ্যিস হয়নি। এককথায় বৌমা’র সুখ ওদের কপালে জুটেনি। এটা যে শোভার সাথে করা অন্যায়ের ফল, সেটাও এতদিনে বুঝে গিয়েছে। তাও সাদিদ সাহেব কিছু বলেননি টিনাকে। যেমন ইচ্ছা, তেমন চলতে দিয়েছেন। সাদ তো কবেই দেবদাসের রুপ ধারণ করেছে। কোনোমতে অফিসটা করে খালি। আর সারাদিন ভাবনায় মত্ত্ব। এই সুযোগেই টিনা বাড়াবাড়ি শুরু করেছে, যার মুখোশ আজ উন্মোচিত হলো।

শোভার অভিশাপটাই কাল হলো ওদের। চোখের পানিতে মুখ ধুয়েও কুল হচ্ছেনা। আচ্ছা, মেয়েটা কোথায়? একটিবার দেখা হলে ওর পায়ে ধরে ক্ষমা চেয়ে নেবে। ক্ষমা কী করবেনা শোভা? নউকে যে মরেও শান্তি পাবেনা। এসব ভাবাভাবির মাঝেই সাদ আর টিনার ঝগড়া শুরু হলো। সাদিদ সাহেব ভাবনার প্রহর কাটিয়ে ওদেরকে থামানোর চেষ্টা করতে লাগলেন। কিন্তু টিনা বেয়াদবের মতো সাদিদ সাহেবের গালে চড় মারলো। পুরো ঘর স্তব্ধ হয়ে গেলো। কত বড় স্পর্ধা টিনার!

থাপ্পড় মেরেই টিনা ক্ষান্ত হয়নি। রাস্তার কুকুরের সাথে সাদিদ সাহেবের তুলনা করেছেন এবং রেগে ওনার মুখে থু থু ছিটিয়েছেন। সাদ টিনার টুটি চেপে ধরলো। হাতাহাতির এক পর্যায়ে রোমেলার চিৎকারে ওরা থেমে গেলো। সাদিদ সাহেব রোমেলার উপর ঢলে পড়লেন।

অজ্ঞান অবস্থায় হসপিটালে নিয়ে যাওয়া হলো। ভর্তি করাও হলো কারণ অবস্থা ভালো নয় ওনার।করিডোরে সবাই অপেক্ষা করছে, টিনা আসেনি। ডাক্তার কিছুক্ষণ পর এসে সাদিদ সাহেবকে মৃত ঘোষণা করলেন! রোমেলার চিৎকারে হাসপাতালের পরিবেশ ভারী হয়ে উঠলো। কে দায়ী ওনার মৃত্যুর জন্য? সাদ? নাকি সাদিদ সাহেব নিজেই? শোভার প্রতি করা অন্যায়ের শাস্তিটা কী কম হয়ে গেলো সাদিদ সাহেবের! সৃষ্টিকর্তা একবেলা ছাড় দিয়েছেন কিন্তু ছেড়ে তো দেননি!

হার্ট-অ্যাটাকে মৃত্যু হয় ওনার। অবশ্য এমনি এমনি তো আর হয়নি। টিনার অত্যাচারে, ওর আসল চরিত্র বেরিয়ে পড়ায় সাদিদ সাহেব আর সইতে পারলেন না। পাপের শাস্তি এমনই হয় হয়তো।

সাদ’দের দোতলা বাড়িটা আজকাল বড়ই নির্জীব হয়ে গিয়েছে। রাতেরবেলা ভুতুড়ে পরিবেশ। নেই কোনো হৈ-হুল্লোড়, চেঁচামেচি। অথচ চারবছর আগেও বাড়িটা কী অন্যরকম ছিলো। সারক্ষণ হাসি-আনন্দে মেতে থাকতো। সাদের দম বন্ধ হয়ে আসে। তবুও মাটি কামড়ে মাকে ধরে পড়ে আছে এই বাড়িটাতে। এইতো ক’দিন আগে সাদিদ সাহেব পরপাড়ে পাড়ি জমালেন। একা করে রেখে গেলেন স্ত্রী আর একমাত্র পুত্রসন্তানকে। টিনা ক’দিন এ বাড়িতেই ছিলো। মেয়ের কুকীর্তি জেনে ওর বাবা এসে নিয়ে গিয়েছেন। ইফতি মানসম্মানের ভয়ে টিনাকে ছেড়ে দেয়। কারণ এই খবর রীতিমতো সবাই জেনে গিয়েছে। এখন টিনাকে যদি ইফতি বিয়ে করে তাহলে ওর বাবা ওজে ত্যাজ্যপুত্র করবে। সামান্য একটা মেয়ের জন্য ইফতি এরকম করতে পারবেনা,তাও আবার বিবাহিত। বেঁচে থাকলে অনেক সুন্দরীর দেখা পাবে। এসব ভেবেই টিনার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে এবং বিদেশে পাড়ি জমায়। অহংকারে জর্জরিত টিনা পরবর্তীতে সাদের সাথেই সংসার করতে চাইলো। সাদ মেনেও নিলোনা, আবার কিছু বললোও না। ক্ষমা করতে পারেনি টিনাকে। একসময় জানা গেলো টিনা কোনোদিন মা হতে পারবেনা। এরপরই টিনার বাবা এসে মেয়ের কান্ড শুনে রেগে যান, মেয়েকেও নিয়ে যান। এভাবেই পথের ধূলিকণার সাথে মিশে গেলো তিন তিনটি মানুষের অস্তিত্ব। বিত্ত-বৈভব, অবহেলা, অহংকার, চাহিদা, চরিত্রহীনতা, পরকীয়া একা করে দিলো মানুষগুলোকে। প্রকৃতির শোধ!

__________

শোভা সকাল সকাল বাচ্চাদের নিয়ে বেরুলো। এই বছরই স্কুলে ভর্তি করানো হয়েছে। কীভাবে যে এতগুলো বছর পার হয়ে গিয়েছে তা বুঝতেই পারেনি। তবে দিনদিন শোভা আরও সুন্দর হয়ে উঠছে। এখন সবসময় শাড়ি পড়ে, লম্বা চুলগুলো বিনুনি করে রাখে। দেখতে খুবই স্নিগ্ধ লাগে।

শোভার মা বাচ্চাদের টিফিন রেডি করে দিয়েছে। মিলির হাতে টিফিনের ব্যাগ। বাচ্চাদের স্কুলে পৌঁছে দিয়ে দুজন অফিস যাবে। একটা স্কুলে দুজনেরই চাকরি হয়েছে। পাশাপাশি অনলাইনে একটা বুকশপও চালায় মিলি আর শোভা। রাস্তা পার হতে গিয়েই ঘটলো বিপত্তি। তুতুলের সামনে এসে পড়ে একটা রিকশা, মিলি দ্রুত কোলে নিয়ে সরে পড়ে। রাফু বোনকে উদ্দেশ্য করে বললো, ‘তুই একনো ঠিকমতো চলতে পারিস না বোন। তো ছোটআম্মুর কোলে থাকলেই পারিস!’

তুতুল পিটপিট করে ভাইয়ের দিকে তাকালো। ‘স্যরি দাদাভাই। তুমি আমাকে কোলে নিয়ে পার করে দেবে এরপর থেকে, ওখে?’

‘ না। আমিও তোর মতোই ছোট বাচ্চা।’

তুতুল মিলিকে বললো, ‘ছোটআম্মু! দাদাভাই কী এতোই ছোট যে আমাকে কোলে নিতে পারবেনা?’

মিলি মুখটা গম্ভীর করার চেষ্টা করে বললো, ‘হুম। ভাই তো খুব ছোট। তুমি আমার কোলে উঠেই রাস্তা পার হবে, ঠিক আছে?’

‘ আচ্ছা।’

শোভা ছেলেমেয়েদের কান্ডকারখানা দেখে হেসে ফেললো। মিলি চোখ পাকিয়ে বললো, ‘হাসছিস কেন?’

‘ আমার মনে হচ্ছে তুইই ওদের আসল মা। দেখিস না, ওরা আমার দিকে ফিরেও তাকালো না।’

মিলি হেসে বললো, ‘বাচ্চা তো।’

‘ যা-ই বলিস, তুই ওদের জন্য যা করিস, আমি তা কখনোই করতে পারতাম না।’

কথা বলতে বলতে ওরা স্কুলে এসে গেলো। দুজনকে ক্লাসে বসিয়ে দিয়ে মিলি একগাদা নোটিস দিতে লাগলো। কি খাবে, কিভাবে লিখবে, ব্যাগের কোন পকেটে কি আছে, কার সাথে খেলবে, বাথরুম পেলে কোথায় যাবে, সবার ভদ্রভাবে কথা বলতে, দুজন যাতে দুষ্টুমি না করে সব বুঝিয়ে দিলো। শোভা সেদিকে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে রইলো। মিলিটা এতো ভালো কেন? এতো বছর হয়ে গেলো অথচ নিজের জীবন নিয়ে কোনো ভাবনা নেই। জীবনটা তো গোছাতে হবে। এভাবে শোভার জন্য সেক্রিফাইস করতে থাকলে শোভা যে অনেক বেশি ঋণী হয়ে পড়বে।

স্কুলে যাবার পথে শোভা মিলিকে জিজ্ঞেস করলো, ‘সাইফের সাথে কথা হয়েছে?’

‘ হুম। ওনি পরশু আসবেন চট্টগ্রামে।’

‘ কোনো দরকারে?’

‘ জানিনা। ওই হাঁদাটা বলেছে বিশেষ দরকার আছে।’

‘ এখনো হাঁদা ডাকাটা গেলোনা তোর।’

‘ তাহলে কী বলবো? জানু? প্রাণু?’

‘ জামাই ডাকবি।’

মিলি অবাক হয়ে বললো,’মানে?’

‘ আমার মনে হয় সাইফ ভাই তোকে পছন্দ করে!’

‘ তোকে বলছে?’

‘ না। কিন্তু আচরণেই বোঝা যায়। সবসময় কেমন খোঁজখবর নেয় দেখিস না!’

মিলি মুখ বাঁকিয়ে তাচ্ছিল্যের সুরে বললো, ‘খোঁজখবর নিলেই কী বোঝা যায় একজন আমাকে পছন্দ করে? তাছাড়া আমি এসবে বিশ্বাসই করিনা। আমার এসবে ইন্টারেস্ট নাই। যেমন আছি তেমনি ভালো আছি!’

‘ তার মানে তুই চিরকুমারী থাকবি? বিয়ে করবিনা?’

‘ হুম।’

‘ মিলি!’

‘ বল!’

‘ সাইফ ভাই যদি তোর সামনে এসে দাঁড়ায়, তাহলে তুই তাঁকে ফিরিয়ে দিবি?’

‘ ফিরিয়ে দেবো কেন? বাসায় নিয়ে নাস্তা খাওয়াবো। আফটার অল আমাদের পারিবারিক ডাক্তার বলে কথা!’

‘ আমি সেটার কথা বলছিনা। যদি ভালোবাসার দাবি নিয়ে আসে, তখন?’

মিলি কিছু বললোনা। গভীর চিন্তায় মগ্ন! আচ্ছা, পুরুষ মানুষ এমন হয় কেন? মিলির খুব ইচ্ছে করে ওদের বিশ্বাস করতে, কিন্তু কই? যতবার কাউকে বিশ্বাস বা ভরসা করেছে সবাই তাঁকে ঠকিয়েছে। সাদের মতো মানুষটাও৷ কি রহস্যের বেড়াজালে নিজেকে ঢেকে রেখেছিলো, চিন্তা করে কুল পাওয়া যায়না। সাদ হয়তো সুখেই আছে। যদি সে ভালোই হতো, তাহলে এতোদিনে নিশ্চয়ই শুধরে যেতো। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে মিলি শোভাকে নিয়ে স্কুলে পা রাখে। বিশাল বড় গার্লস স্কুল। সরকারি চাকরি। দিন তো ভালোই কাটছে, সবচেয়ে বড় কথা রাফু আর তুতুলকে ছেড়ে যাওয়ার কথা মিলি ভাবতেও পারেনা। ছোট্ট পুচ্চুগুলো মিলির জীবনের খুব গুরুত্বপূর্ণ অংশ দখল করে আছে। যখন ছোটআম্মু বলে ডেকে ওঠে তখন নিজেকে মাতৃরুপে সম্পূর্ণ আবিষ্কার করে। এমন বাচ্চাদের ছেড়ে মিলি কী ঘর বাঁধতে পারবে নাকি! কখনোই না।

চলবে…..ইনশাআল্লাহ! ভুল-ত্রুটি মাফ করবেন।

#এক_পশলা_বৃষ্টি
#লেখনীতে-ইশরাত জাহান ফারিয়া
#পর্ব-১১

চৌধুরী বাড়িতে মানুষের সাড়াশব্দ পাওয়া যায়না বললেই চলে। রোমেলা সারদিন চুপচাপ বসে থাকেন, মাঝেমাঝে কেঁদে উঠেন। কি থেকে কি হয়ে গেলো। আচ্ছা, ওনার তো কোনো দোষ ছিলোনা। স্বামী সন্তানের পাপের ফল কেন ওনি পাচ্ছেন? শেষ বয়সে এসে এসব দেখে ওনার বাঁচার আর ইচ্ছা হয়না। শোভা! মেয়েটা কোথায়? একবার ক্ষমা চাওয়ার সুযোগ কি দিবেনা? কতই না কষ্ট পেয়েছে মেয়েটা! এমন কুলাঙ্গার ছেলে জন্ম না দিলেই ভালো হতো।

‘ আসবো মা?’

সাদের কথায় রোমেলা তাকালো।

‘ আয়।’

সাদ মায়ের বিছানায় এসে বসে। খুব ক্লান্ত দেখাচ্ছে ওকে।

‘ কী হয়েছে? শোভার কোনো খবর জানিস?’

‘ এখনো পাইনি ঠিকঠাক।’

‘ তুই কি মরার আগে আমাকে ক্ষমা চাওয়ার সুযোগ দিবিনা?’

‘ এমন করে বলছো কেন মা? অবশ্যই পাবো।’

‘ তোর মতো ছেলে যাতে আর কোনো মা জন্ম না দেয়। আমার জীবনটা তুই শেষ করে দিয়েছিস। কত আশা করেছিলাম, তোর থেকে। একটা ভালো মানুষ হবি, ভালো একটা মেয়ের সঙ্গে বিয়ে দেবো।’

‘ এসব কথা থাকনা মা।’

‘ না। আমাকে বলতে দে। তুই সবকিছুর জন্য দায়ী। ভালোর সঙ্গে সবসময় ভালো হয়, আর খারাপের সঙ্গে খারাপ। সেজন্য টিনার মতো মেয়ে তোর কপালে ছিলো। আমাদের পরিবারটাকে ধ্বংস করে দিয়ে গেলো।’

বলতে বলতে রোমেলা কেঁদে ফেললো। বিশ্বাসঘাতকতার কোনো ক্ষমা নেই। রোমেলা জানে, সাদ যদি শোভার পায়ে ধরে ক্ষমা চায় তাহলে ওকে ক্ষমা করে দিলেও কখনো ওর কাছে ফিরবেনা শোভা। আর ইসলাম ও তাই বলে। কারণ ওদের ছাড়াছাড়ি হয়ে গিয়েছে। তবুও শোভা আর নাতিদের দেখে কিছুটা হলেও রোমেলার দুঃখ ঘুচবে। মনটা বড্ড অস্থির হয়ে আছে।

সাদ মাথা নিচু করে বসে ছিলো। ওর বুকের ভেতরটা জ্বলেপুড়ে যাচ্ছে। ভেতরটা ছাই হয়ে গিয়েছে। অহংকার, হিংসা, বিদ্বেষ, শত্রুতা, বিশ্বাসঘাতকতা কখনোই মানুষকে ভালো থাকতে দেয়না। সেও ভালো নেই। পাঁচ পাঁচটা বছর পর সাদ বুঝতে পারলো ওর ভুলগুলো। যার জন্য ও শেষ হয়ে গিয়েছে। ক্ষণিকের সুখের জন্য ও শোভাকে না যতোটা কষ্ট দিয়েছে, সৃষ্টিকর্তা দ্বিগুণ কষ্ট সাদকে ফিরিয়ে দিচ্ছেন। সন্তান থেকেও নেই, বাবা ডাক শোনা দূরের কথা। ছেলে না মেয়ে হয়েছে তাও জানেনা। ক্রোধগুলো নিমিষেই পরিণত হলো মায়ার চাদরে। একবার খুঁজে পাক, শোভার পা ধরে বসে থাকবে, গোলামী করবে। তাও যদি শোভার মনে একটু জায়গা করে নিতে পারে!

এমন সময় সাদের মোবাইল বেজে উঠলো। নিয়নের ফোন। সাদ রিসিভ করলো।

‘ হ্যালো।’

‘ সাদ বলছিস?’

‘ হুম।’

‘ তোকে একটা খবর দিতে ফোন করলাম!’

‘ কী খবর?’

‘ আমি চট্টগ্রামে আসছিলাম অফিসের কাজে।’

‘ কিছু দরকার?’

‘ না। আসলে আমি শোভাকে দেখেছি!’

সাদ বিস্মিত গলায় চিৎকার করে বললো, ‘সত্যি? কোথায়? কোথায় দেখেছিস? এক্ষুনি বল!’

নিয়ন বললো, ‘জানিনা।’

‘ মানে?’

‘ আমি আসলে অফিসের কাজে এসেছিলাম। গাড়িতে ছিলাম। হঠাৎ দেখলাম একটা মেয়ে। প্রথমে চিনতে পারিনি, তারপরে মনে পড়লো এটা শোভা। দোকান থেকে কিসব যেন কিনছিলো। পরে গাড়ি ছেড়ে দিয়েছিলো ড্রাইভার, আমি আর ওকে দেখিনি। আমি শিওর ওরা চট্টগ্রামেই আছে।’

সাদ খুশি হয়ে বললো, ‘ধন্যবাদ বন্ধু। তোর এই উপকার কোনোদিন ভুলবোনা।’

‘ তুই আসবি?’

‘ আমি একটু পরই রওয়ানা দিচ্ছি!’

‘ এতরাতে আসার দরকার নাই। কাল আসিস, এখন এসে তো কোনো লাভ হবেনা।’

‘ না আমি এক্ষুণি যাবো। কত কষ্টে ওদের খুঁজে পেয়েছি। এবার আর হারাবোনা।’

নিয়ন দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো, ‘মনে হয়না লাভ হবে। আর যদি শোভা বিয়ে করে ফেলে? তাহলে? দেখেতো বিবাহিত বলেই মনে হলো?’

সাদ ফোন কেটে দিলো। ওর কোনোকিছু ভালো লাগছেনা। নিয়ন কি বললো এটা?

রোমেলা জিজ্ঞেস করলো, ‘কী হয়েছে?’

‘ শোভার খোঁজ পাওয়া গিয়েছে।’

‘ কোথায়?’

‘ চট্টগ্রামে। আমি যাবো।’

রোমেলা আনন্দিত গলায় বললো, ‘আমাকেও নিয়ে যাস। মেয়েটার কাছে ক্ষমা চেয়ে যদি পাপের প্রায়শ্চিত্ত কিছুটা কর‍্তে পারি।’

‘ তুমি তো কিছু করোনি।’

‘ তোদের পাপই যে আমার পাপ। আমিই তোদের আটকাতে পারিনি। আসল পাপ তো আমি করেছি, তাইতো আমার সংসারটা শেষ হয়ে গিয়েছে।’

সাদ কিছু না বলে ঘরে চলে গেলো। সুটকেস গুছিয়ে দারুণ একটা শাওয়ার নিলো। আজ মনটা বেশ ফুরফুরে লাগছে। ভালো লাগছে। তবুও বুকের ভেতরে কেমন খচখচ করছে। সাদ পাত্তা না দিয়ে সাউন্ড বক্সে গান লাগালো। “বধূ কোন আলো লাগলো চোখে!”

গানটা সুন্দর! শোভার মতোই। আচ্ছা, শোভা কি সত্যি আরেকটা বিয়ে করে ফেলেছে? এমন হয়? না কিছুতেই হতে পারেনা। সাদ যদি একবার ওর সামনে যেয়ে দাঁড়ায় ভালোবাসার দাবি নিয়ে তাহলে শোভা কখনোই ওকে ফেরাতে পারবেনা। গুনগুনী মন নিয়ে মোবাইল স্ক্রল করে শোভা আর ওর পুরাতন ছবিগুলো দেখতে লাগলো। কত ছোট ছিলো তখন শোভা। তারপর আগামীকালের ট্রেনের টিকিট বুকিং করলো। সারারাত অস্থিরতায়
ঘুমাতে পারলোনা। আর টিনা? ওর সাথে সাদের ডিভোর্স হয়ে গিয়েছে চারমাস হলো। কারো সংসার ভেঙ্গে কেউ কখনো সুখী হতে পারেনা সেটা আবারও প্রমাণিত হলো।

________

রমজান সাহেব মেয়ে ভবিষ্যৎ নিয়ে খুবই চিন্তা করেন আজকাল। দু’দুটো বাচ্চা নিয়ে সারাজীবন একলা কাটানো খুবই কষ্টের। সারাজীবন তো আর মেয়ের কাছে থাকতে পারবেন না। ইদানীং শরীরটাও ভালো যাচ্ছেনা। শোভা এমনিতেই খুব কষ্ট করে আজকের জায়গায় নিজেকে পৌঁছাতে পেরেছে। আর কষ্ট সইতে পারবেনা। কিন্তু একা একা জীবন কাটানো খুবই কঠিন। একটা গতি করতে পারলে চিন্তাটা কমবে। শাফিন তো বিয়ে করে নিয়েছে বাবামায়ের কথায়। বউ সায়মা’কে নিয়ে আছে বিদেশে! সায়মা খুব ভালো একটা মেয়ে। এমন পুত্রবধূ পাওয়া সৌভাগ্যের ব্যাপার। কাজের চাপে পড়ে দেশেও আসতে পারছেনা। কিন্তু তাও রোজ তিনবার ফোন দিয়ে বাড়ির সবার সাথে কথা বলবেই৷ রাফু আর তুতুলকে নিজের সন্তানের মতো দেখে। যাবতীয় খরচ শাফিনই দেয়। সায়মা তো পারলে কলিজাটাই কেটে দেয়। রাফু, তুতুল শাফিনকে ছোটআব্বু, আর সায়মাকে বড়মা বলে ডাকে।

রমজান সাহেব শাফিনের সাথে শোভার বিষয়ে আলোচনাও করেছেন। কিন্তু শাফিন সাফ মানা করে দিয়েছে শোভাকে যাতে বিয়ের কথা বলা না হয়। যদি কখনো নিজের ইচ্ছায় ও বিয়ে করতে চায়, তাহলেই যেন আগায়। শাফিন জানে, শোভা কখনোই বিয়ে করবেনা এবং এই কথা শুনলে খুব কষ্ট পাবে আর নিজেকে বোঝা মনে করবে। যা শাফিন চায়না। বোনকে খুব ভালোবাসে ও।

মা-বাবা, মিলি, সন্তানদের নিয়ে ছিমছাম পরিবার শোভার। ঝামেলাহীন জীবন পার করছে। স্কুলের চাকরিটা খুবই ভালো। বেতনও বেশ ভালো। চলে যাচ্ছে জীবন এভাবেই! বেডরুমের বিছানায়
বসে শোভা এক্সামের খাতা দেখছিলো। এমন সময় রাফু এসে বললো, ‘আম্মু!’

‘ বলো বাবা।’

‘ তোমাকে খুব সুন্দর দেখাচ্ছে।’

শোভা চোখ তুলে মিষ্টি করে হাসলো। বললো, ‘তাই?’

‘ হুম।’

‘ হঠাৎ আমাকে তোমার কাছে এমন লাগছে কেন?’

‘ জানিনা।’

‘ তোমার ছোটআম্মু কোথায়?’

‘ বোনকে ঘুম পাড়ায়।’

‘ আচ্ছা। ডিস্টার্ব করোনা।’

‘ হুম।’

বলে রাফু মায়ের শিয়রে দাঁড়িয়েই রইলো। রাফু শোভার চোখের চশমাটা খুলে হাতে নিলো। শোভা কিছু বললোনা। মনোযোগ খাতার দিকেই। রাফু হঠাৎ শোভাকে অবাক করে দিয়ে জিজ্ঞেস করলো, ‘আম্মু, আমাদের কী আব্বু নেই?’

শোভা চমকে তাকালো। রাফুর নিষ্পাপ চাহনি ওর গায়ে কাঁটা ফুটালো। চুপ করে রইলো। রাফু আবারও বললো, ‘বলোনা আম্মু। আমাদের কী আব্বু নেই?’

শোভা ছেলেকে কাছে টেনে নিলো। শান্ত কন্ঠে বললো, ‘আছে তো। তোমার ছোটআব্বুই তো আব্বু।’

রাফই জেদ করে বললো, ‘ছোটআব্বু আমার মামা হয়। কীভাবে আমার আব্বু লাগবে?’

শোভা রেগে বললো, ‘ওটাই তোমাদের আব্বু।’

‘ তুমি মিথ্যে বলছো। আমাদের স্কুলের সবার আব্বু আছে। আমাদের কেন নেই? আমি ছোটআব্বু চাইনা, আব্বু চাই।’

‘ কেন? ছোটআব্বু তোমার পছন্দ নয়?’

‘ পছন্দ। কিন্তু আসল আব্বু ও চাই আমার।’

‘ দরকার নেই!’

‘ আছে৷ আমি আমার বন্ধুদের বলেছি যে আমাদের আব্বু আছে, একদিন ঠিক আসবে।’

‘ কখনোই আসবেনা।’

‘ আসবে। আসলে আমি আব্বুর সাথে চলে যাবো।’

শোভা ছেলের কথায় বাক্যহারা হয়ে গেলো। চোখ ভিজে এলো। বলে কি এই ছেলে? শোভা ছেলেকে জড়িয়ে ধরে বললো, ‘কিছুতেই যেতে দেবোনা।’

রাফু স্বভাবতই খুব মাতৃভক্ত, শান্ত ছেলে। কিন্তু আজ কী এমন হলো যে ও নিজের আব্বুকে চাচ্ছে? আবার চলে যাবে তাও বলছে? রাফু গাল ফুলিয়ে বললো, ‘যাবো আমি।’

‘ রাফু!’

রাফু মাথা নিচু করে বসে আছে। শোভা বললো, ‘তুমি আমাকে ছাড়া থাকতে পারবে? ছোটআম্মুকে ছাড়া থাকতে পারবে?’

রাফু মাথা নাড়িয়ে না জানালো। শোভা বললো, ‘রাফু! তোমারও আব্বু আছে। কিন্তু সে আমাদের চায়না।’

‘ কেন?’

‘ কারণ আমাদের ওর ভালো লাগেনা।’

‘ কিন্তু আমরা খুব ভালো।’

‘ জানি তোমরা ভালো। কিন্তু সে বুঝতে চায়নি। এজন্য আমি তোমাদের নিয়ে চলে এসেছি। আমাদেরকে খুব কষ্ট দিয়েছে তোমার আব্বু। তুমিই বলো কোনো বাবা কী তার সন্তানদের কষ্ট দেয়?’

‘ কখনোই না।’

‘ এখন বলো তার কাছে কি আমাদেত ফিরে যাওয়া উচিৎ?’

‘ না।’

‘ আমরা সবাই তো তোমাকে কত ভালোবাসি। এখন তোমার বাবা এসে যদি তোমাকে নিয়ে যেতে চায়, তাহলে আমাদের ছেড়ে চলে যাবে তুমি?’

রাফু গালে হাত দিয়ে ভাবছে। কি করবে ঠিক বুঝে উঠতে পারছেনা। আচ্ছা, ওর বাবা কেন ওদের চায়না? সবাই বলে ওরা কত মিষ্টিবাচ্চা, ভালোবাচ্চা। তাহলে ওর বাবা কেন ভালোবাচ্চা চায়না? রাফু শুনেছে যারা ভালোদের ভালোবাসেনা, তাদের সাথে খারাপ হয় সবসময়। ভাবছে কি করবে, সত্যিই যদি বাবা আসে তাহলে কি বাবার সাথে চলে যাবে? নাকি মায়ের কাছেই থাকবে! ভাবনা নিয়েই রুম থেকে বেরিয়ে যায় গুটিগুটি পা ফেলে।

শোভা মনে মনে ভয় পায়। জানে সাদ যদি একবার খুঁজে পায় তাহলে বাচ্চাদেরকে ইম্প্রেস করবে কোনো না কোনোভাবে। কারণ সাদ বাচ্চাদের সাথে খুব সহজেই মিশতে পারে। একেবারে জাদুকরের মতো! এমন সময় মোবাইল বেজে উঠে। সাইফের ফোন।

‘ আসসালামু আলাইকুম।’

‘ ওয়ালাইকুম সালাম। শোভা বলছেন?’

‘ জি ভাইয়া। কোনো দরকার?’

‘ হুম। আসলে আমি চট্টগ্রামে বাসায় এসেছি।’

‘ ওহহ। আমাদের বাসায় অবশ্যই আসবেন কিন্তু।’

‘ আসবো। কিন্তু একটা কথা বলতে চেয়েছিলাম।’

‘ কী কথা?’

‘ আসলে আম্মু আমাকে এখন বিয়ে দিতে চায়। অনেক তো বয়স হলো। কিন্তু!’

শোভা হেসে বললো, ‘কিন্তু আপনি কাউকে পছন্দ করেন। আর সেটা আমার পাগল বান্ধবী মিলি।’

সাইফ লজ্জ্বা পেলো। তারপর বললো, ‘কিন্তু ওনাকে তো আমি সেই কথাটা বলতে বা বোঝাতেই পারছিনা। যা রাগী।’

‘ মিলি বিয়ে করবেনা।’

‘ কেন?’

‘ ও ছেলেদের ঠিক বিশ্বাস করতে পারেনা। কতকিছুই তো ঘটে গেলো ওর বোনের সাথে, আমার সাথে। সেজন্যই আরকি।’

‘ সব পুরুষ তো একরকম হয়না।’

‘ জানি। আপনি খুব ভালো, নইলে এতোবছর অপেক্ষা করতেন না। আচ্ছা, আপনি আপনার আম্মুকে নিয়ে আমাদের বাসায় আসুন। মিলিকে সোজা করার দায়িত্ব আমার।’

‘ আসবো?’

‘ হুম। ঘাড়ত্যাড়ামি করা মেয়েকে ভালোবেসে সোজা করে নিবেন। পারবেন না?’

‘ ওনাকে দেখলেই ভয় লাগে!’

‘ ভয়কে জয় করে নিবেন। আমি আছিতো, ওকে ঠিক রাজি করাবো।’

সাইফ কিছুক্ষণ থেমে বললো, ‘আপনার জীবনটা গুছাবেন না! বাচ্চারা তো বড় হচ্ছে, ওদের তো একটা বাবা চাই!’

শোভা ফোন রেখে দিলো। বুঝতে পারছে না আজ সবাই ওকে পুরোনো কথাগুলো কেন মনে করিয়ে দিচ্ছে। একটা মেয়ে কি এতোই দুর্বল যে নিজে একা বাচ্চাদের নিয়ে বাঁচতে পারবেনা? কে তৈরি করেছে এই নিয়ম? এই নিয়মের বাইরে কেন যাওয়া যাবেনা? বাবা ছাড়া কি সন্তান একা বড় করা যায়না? রাস্তাঘাটে কতশত এতিম বাচ্চারা পড়ে থাকে, কই! প্রকৃতির নিয়মে ওরা তো ঠিকই বেঁচে আছে। শোভা তো আছেই, পারবে সন্তানদের সামলাতে। কেন মানুষ এটা বুঝতে পারছে না?

চলবে….ইনশাআল্লাহ!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here