এক_শহর_প্রেম?,১২,১৩,১৪

0
686

#এক_শহর_প্রেম?,১২,১৩,১৪
লেখনীতেঃ #নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_১২

আদিরার মুখশ্রীর অভিব্যক্তি দেখে মাহি আলতো হাসে অতঃপর শান্ত কন্ঠে বলে,
–আমাদের মা এক না হলেও আপিলির, দাভাই ও আমার মধ্যে একে অপরের প্রতি ভালোবাসার কোনো পার্থক্য হয় নি। আচ্ছা, তোকে দাভাই পছন্দ করে এমন কিছু ডাইরেক্টলি বলেছে? যদি বলে থাকে তবে আমি অনেক অনেক খুশি। ফাইনালি দাভাই কাউকে নিজের মনে জায়গা দিয়েছে।

আদিরা মাহির উচ্ছাসিত মনোভাব দেখে হতাশ হলো। মাহিদের কাছে ব্যাপারটা যতোটা সহজ ও সাবলিল, আদিরার কাছে তা ততোটাই কঠিন ও চ্যালেঞ্জিং। আদিরা মারসাদের বলা কথা মতো মিনারের কাছে গেলো। আদিরা ভেবেছিল যাবে না কিন্তু মারসাদের ভীতিপ্রদর্শন মূলক কথার বিপরীতে কিছু করতে সাহস পেলো না। সেখানে যাওয়ার পর বুঝা যাবে। আদিরা মিনারের কাছে গেলে দেখতে পায় মারসাদ ও তার বন্ধুরা হাসি-তামাশা করে আড্ডা দিচ্ছে। আদিরা কী করবে বুঝতে পারছে না। মারসাদদের সাথে সুমি, মৌমি ও রাত্রীকে দেখে মনে সাহস পেলো। নাহলে চার-পাঁচটা সিনিয়র ছেলের সাথে একা একটা জুনিয়র মেয়ে গিয়ে কথা বলাটা আদিরার নিজের কাছেই দৃষ্টিকটু লাগছিল। আদিরা ওদের কাছে গেলে। মৌমি উৎফুল্লিত কন্ঠে বলল,

–আরে আদিরা যে। কেমন আছো?

আদিরা বিনিময়ে মুচকি হেসে সেও কুশল বিনিময় করে। মারসাদ ঠোঁট চোখা করে কুটিল মুখাবয়বে আদিরার দিকে দৃষ্টি স্থির রেখেছে। আহনাফ ও মৃদুলরা পাশ থেকে মারসাদের কাঁধে হাত রেখে মারসাদের দৃষ্টি অনুসরণ করে। রিহান ফিসফিসিয়ে বলল,

–মামা, এই মেয়েরে আবার ডাকছিস নাকি? সে এখানে কেন আসছে?

আহনাফ বলল,
–হ্যাঁ। মারসাদ ওকে আসতে বলছে। চুপ থাক। দেখি মারসাদ কী বলে।

মারসাদ ওদের কথাবার্তা পাত্তা না দিয়ে ওদের থেকে সরে গিয়ে আদিরার সামনে যায়। তারপর পকেটে দুই হাত গুঁজে ঠোঁট কা*মড়ে আদিরাকে পর্যবেক্ষণ করছে। মেয়েটার ভীত ও মায়াময় মুখশ্রী অনন্তকাল দেখতে ইচ্ছে করে। মারসাদ মৌমিদের ইশারায় আদিরার কাছ থেকে যেতে বলে। মারসাদ ঘার কাত করে আদিরাকে বলে,

–আই ওয়ান্না গিভ ইউ এ মিউচুয়াল প্রোপোজাল! এন্ড ইউ হ্যাভ টু এক্সেপ্ট ইট।

আদিরা ভড়কে যায়। আবার কিসের প্রোপোজাল দিবে? তাছাড়া প্রেমের প্রোপোজাল আদিরা এক্সেপ্ট করতে অপরাগ। মারসাদ আদিরাকে ভড়কে যেতে দেখে জোরালো হাসলো। তারপর রম্যস্বরে বলল,

–তোমাকে প্রেম করতে বলবো না। সো চিল। জাস্ট নাথিং বাট ফ্রেন্ডশিপ করতে হবে। তাও আমাদের সাথে। নিজেকে মডিফাই করতে হবে। মাহির সাথে ফ্রেন্ডশিপের পর তোমার কিছুটা পরিবর্তন হয়েছে লক্ষ্য করেছি। যেমন তোমার ভীত মুখশ্রীর আড়ালে প্রাণোচ্ছল হাসি। তুমি মেস ছেড়ে দিবে কয়েকমাস পর। মৌমিরা তোমাকে চারজনের রুম ম্যানেজ করে দিবে তুমি, মাহিসহ তোমাদের বাকি দুই ফ্রেন্ডকে। এতো জলদি চারজনের রুম পাওয়া যায় না তবে পেয়ে গেলে তোমরা থাকবে। তোমাকে গণরুমে উঠতে কখনওই বলবো না। এখন বলো? শর্ত মনজুর?

আদিরা ঠোঁট ভিজিয়ে কাঁপা স্বরে বলে,
–কেমন শর্ত?

মারসাদ আদিরার দিকে ঝুঁকে ঘোর লাগা কন্ঠে বলে,
–মন হারানোর শর্ত! এমন ভাবে হারাবে যে সামনের মানুষটার ভিতর তোমার জন্য এক শহর প্রেম দেখতে পাবে।

লজ্জায় আরক্তিম হলো মুখশ্রী। মারসাদের আর কোনো কথার তোয়াক্কা না করে দৌঁড়ে চলে গেলো আদিরা। মারসাদ ঠোঁট কা*মড়ে মাথা চুলকে হাসলো। কিছুটা দূরে মারসাদদের আড়াল হয়ে একটা গাছের সাথে হেলান দিয়ে আদিরা বুকে হাত দিয়ে ঘন ঘন নিঃশ্বাস ছেড়ে হাঁপাতে লাগলো। আদিরা নিজে নিজেই বলতে থাকে,

–আপনাতে মন হারানো বারণ। এখন যাও নিঃশ্বাস নিতে পারি কিন্তু তখন আমি শ্বাসরুদ্ধ হয়ে ম*রেই যাবো!

তখনই পাশ থেকে মেয়েলি কন্ঠ ধ্বনিত হয়।
–কেনো? আমার দাভাই কী কার্বন ডাই অক্সাইড? যে ইনহেল করলে অক্সিজেন স্বল্পতায় প্রাণ হারাবি?

আদিরা চমকে পাশে তাকিয়ে দেখে মাহি দাঁত কে*লিয়ে হাসছে। মাহির সাথে সাবিহা ও রিন্তি। সাবিহা আদিরার পেছোনে গিয়ে কাঁধ জড়িয়ে বলে,

–ইশ! কেউ যদি আমাতেও মন হারাতো! তাহলে আমি এক লাফে তার প্রেমের সাগরে ডুব দিতাম। কিন্তু আফসোস! এই পো*ড়া কপালির ভাগ্য ফাঁকা শব্দে ঠনঠন করে।

রিন্তি সাবিহাকে পিঞ্চ করে বলে,
–তো আহিন কে? শুধু তোর মামাতো ভাই? যার সাথে তোর বিয়ে ঠিক!

সাবিহা মুখ ঘুরিয়ে বলে,
–হুহ! একটা খারুস। আমি ওই আহিন বেটাকে বিয়ে টিয়ে করবো না। ছোটো থেকে জীবনটা তেজপাতা করে রেখেছে। বেটা নাকি এখানে জব ট্রান্সফার করবে। ভাবা যায় এসব অ*ত্যা*চার!

ওরা হেসে ফেলে। রিন্তি আদিরার হাতে খোঁচা দিয়ে বলল,
–কুছ তো হ্যায়! তেরি দিল পে ভি! হা?

আদিরা কপট রাগ দেখিয়ে বলল,
–মোটেও না। আমি এখানে পড়তে এসেছি। এসবে জড়াতে না। আর আমার মতো পরিবারের মেয়ের জন্য এসব বি*ষ সমতূল্য।

আদিরার মন খারাপ হচ্ছে দেখে মাহি চতুরতার সাথে বিষয়টা সামলে নিয়ে বলে,
–যখন হবে তখন দেখা যাবে। সময়ের সাথে কতোকিছুই তো বদলায়। এখন আমরা আজ আদুর হোস্টেলে যাবো। আজ আর ক্লাস নেই। আজ আদু আমাদের রান্না করে খাওয়াবে। আনন্দ হবে অনেক আজ।

সাবিহা ও রিন্তি আনন্দ প্রকাশ করে। আদিরার মুখ ভাড় হলো। লজ্জায় মুখ ছোট করে বলে,

–মেসে বেশি কিছু বাজার নেই। তোরা খেতে পারবি? মাছ-মাংস তো আনা হয় না।

রিন্তু আদিরাকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে আদিরার গালে হাত দিয়ে বলে,
–আমি ও সাবিহা গণরুমে থাকি। সেখানে ক্যান্টিনের খাবার অতোটাও ভালো না। আর মাছ-মাংসের থেকে আমরা আজ অন্য কিছু খাবো। প্রতিদিন তেল মশলা কম দেওয়া মুরগির মাংস খেয়ে খেয়ে অতীষ্ঠ হয়ে গেছি।

মাহি বলল,
–আর আমি মাছ খাই না। চিংড়ি, ইলিশ ও কিছু সামুদ্রিক মাছ ছাড়া বাকি মাছ আমি খাই না। আর মাংস তো প্রায়ই খাওয়া হয়। তাই তোকে সেন্টি খেতে হবে না। চল এখন।

আদিরা স্বস্থি পায় কিছুটা। মাহিদেরকে নিয়ে মেসে গেলে আদিরা চারজনের জন্য ও তার রাতের জন্য ভাত বসিয়ে দিয়ে। পটল কাঠিতে ঢুকিয়ে হালকা তেল মাখিয়ে ভাতের পাতিলের নিচে চুলার উপর রেখে দেয়। মেসে আসার সময় আরও কিছু সবজি ও ডিম কিনে এনেছিল। পেয়াজ, রসুন, মরিচ, কহি/চিচিঙ্গা ও ঢেঁড়স কেটে নেয়। মাহি এসব কাজে একদমই অপটু। মাহি বসে বসে আদিরার কাজ দেখছে। সাবিহা ও রিন্তি সবজি কাটতে আদিরাকে টুকটাক হেল্প করছে। ভাত হয়ে এলে কড়াইতে গ্রাম থেকে আনা চিংড়ি শুঁটকি টেলে নেয় তারপর শুকনো মরিচ কয়েকটা ভেজে নেয়। শুকনো মরিচের সাথে ভর্তার জন্য কিছু পেঁয়াজ, রসুন ও ধনিয়াপাতা গরম তেলে দিয়ে সাথে সাথে তুলে নেয়। এরপর ঢেঁড়শ ভাজি বসিয়ে দিয়ে লোহার হামালদিস্তাতে পেঁয়াজ, রসুন, ধনিয়াপাতা ভালো করে ছেঁচে তাতে লবন, মরিচ ও সরিষার তেল দিয়ে রসুনের ভর্তা বানায়। এরপর চিংড়ি শুঁটকি গুলো ভালো করে পিষে নেয় পেঁয়াজ, রসুন ও মরিচ দিয়ে। পটল পোড়াগুলোকেও ভর্তা করে নেয়। ঢেঁড়স ভাজি হয়ে এলে ডিম দিয়ে কহি/চিচিঙ্গা ভাজি করে নেয়।

দেড় ঘন্টার মধ্যে সকল রান্না শেষ। মাহি অবাক হয়ে পুরোটা দেখেই গেলো। ভর্তার ঘ্রাণে ওর জিভে জল চলে এসেছে (আমার তো লিখতে গিয়েই)। তারপর ভর্তা গুলোকে একটা বাটিতে নিয়ে নেয় আর ভাজি গুলোকে আরেকটা বাটিতে। এখন খাবার প্লেটের সংকটে আদিরা মেসের ক্যান্টিনে গিয়ে তিনটা প্লেট ধার করে নিয়ে আসে। মাহি সামনে সাঁজানো খাবারের ছবি তুলে ফেসবুকে পোস্ট করে দেয়। আদিরার রান্না সেটাও উল্লেখ করে। মাহি, রিন্তি ও সাবিহা খাচ্ছে আর আদিরা অধীর আগ্রহে বসে আছে ওদের রেজাল্ট বলার আশায়। তার ছোটোবেলা থেকে অভ্যাস এটা। কিছু রান্না করে সবার কেমন লেগেছে তা জানতে চায়।

মাহি প্রতিটা আইটেম টেস্ট করে বলল,
–দাদী মাঝে মাঝে ভর্তা বানাতে বলে। যেমনঃ চিংড়ি, শিম ও বেগুনের। বাবারও ভর্তা অনেক পছন্দের। আমারও ভালোই লাগে। তোর বানানো ভর্তাও অনেক মজা হয়েছে। তুই খাচ্ছিস না কেনো? খা। সবগুলা রান্নাই অসাধারণ।

মাহির সাথে রিন্তি ও সাবিহাও তাল মিলায়। আদিরা খুশি মনে খাওয়া শুরু করে।

……….

এদিকে মারসাদ মাহির পোস্ট দেখে ভ্রুঁ উঁচালো। তারও খাবার গুলো টেস্ট করতে মন চাচ্ছে। কিন্তু কিভাবে সেটা ভাবতে ভাবতে মারসাদের মুখে বাঁকা হাসি ফুটে উঠে।

চলবে ইন শা আল্লাহ্,

#এক_শহর_প্রেম?
লেখনীতেঃ #নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_১৩
সন্ধ্যার পর বাড়িতে প্রবেশ করার পর মাহির কর্ণকুহরে ভেসে এলো রূঢ়ভাষী কারও কন্ঠস্বর।

–তোমাকে বলা হয়েছিল সন্ধ্যার আগে ফিরবে। এখন সাতটার বেশি বাজে। কোথায় ছিলে?

মাহি বিরক্ত হলো। জবাব দেওয়ার প্রয়োজনবোধ করলো না। নিজের রুমের দিকে পা বাড়ালে আবারও সেই রূঢ় কন্ঠস্বর।

–তুমি কী আমাকে ইগনোর করছো? কথার জবাব না দিয়ে বে*য়াদবের মতো চলে যাচ্ছ কেনো?

মাহি থামলো। তাচ্ছিল্যতা ফুটে উঠে চোখে-মুখে। ব্যাগটা সোফাতে ফেলে নিজেও সেখানে গা এলিয়ে বসে। তারপর ফোন স্ক্রোল করতে করতে বলল,

–নেও গেলাম না! কী কী বলবে বলো। বসে আছি।

মহিলাটি ক্রুদ্ধ হলেন। ক্রুদ্ধ স্বরে বললেন,
–দিন দিন বেপরোয়া হয়ে যাচ্ছ। তোমার ওই বে*য়াদব ভাইয়ের সান্নিধ্যে আরও বিগড়ে যাচ্ছ। মায়ের সাথে কীভাবে কথা বলতে হয় সেটাও ভুলে যাচ্ছ।

মাহি ভাবলেশহীন ভাবে বলে,
–উঁহু। আমি কারও থেকে কোনো স্বভাব এডপ্ট করছি না বা করি নি। আমি এমনই। পরিবেশ আমায় বদলে দিয়েছে যেমনটা তুমি নিজেকে ক্লেইম করো। আর তোমার কোনো কাজে যেমন কারও কাছে কৈফিয়ত দেও না তেমনি আমিও বাধ্য না। থাকো না তুমি তোমার ফ্রেন্ডস নিয়ে। আমিও বেশ আছি।

মিসেস মনিকা অপ্রস্তুত ও বিরক্ত হলেন। বিরক্তি নিয়ে বললেন,
–তোমার সন্ধ্যায় আমার সাথে আমার ফ্রেন্ডের মেয়ের বার্থডে পার্টিতে যাওয়ার কথা ছিল কিন্তু তুমি এলেই এখন। বিকেলে এসে তোমাকে ফেসিয়াল, প্যানিকিউর, ম্যানিকিউর করতে হতো। যাও গিয়ে ফ্রেশ হয়ে রেডি হও।

মাহি ঠোঁট কামড়ে হাসলো। তারপর হাই তুলে বলল,
–আই এম টায়ার্ড এনাফ মম। আমি যাবো না।

মিসেস মনিকা সন্দেহের স্বরে বললেন,
–কী করেছ তুমি এতোক্ষণ?

মাহি মিসেস মনিকাকে রাগাতে বলল,
–ফ্রেন্ডের মেসে গিয়েছিলাম তারপর ইয়াম্মি অনেক ডিশ দিয়ে দুপুরের খাবার খেলাম। বাঙালি খাবার। অসম্ভব মজা।

মিসেস মনিকা নাক ছিঁটকালেন। কিছু বলতে উদ্দ্যত হলে মাহি ব্যাগ নিয়ে নিজের রুমের দিকে চলে যায়। মিসেস মনিকা মিস্টার আরসাদের স্টাডি রুমে গিয়ে তাকে উদ্দেশ্য করে ক্রুদ্ধ কন্ঠে বললেন,

–তোমার ছেলের কারণে আমার মেয়েটা দিন দিন বেপরোয়া হয়ে যাচ্ছে। ছেলেকে তো সব স্বাধীনতা দিয়ে রেখেছ।

মিস্টার আরসাদ খুব মনোযোগ দিয়ে উইলিয়াম শেক্সপিয়ারের একটা নোবেল পড়ছেন। নোবেলের ভিতর উনি পুরো আসক্ত হয়ে গেছেন। মিসেস মনিকা স্বামীর মনোযোগ নিজের দিকে আকৃষ্ট করতে পারলেন না বিধায় সে আরও রেগে গেলেন। রেগে গিয়ে মিস্টার আরসাদের হাত থেকে বইটা নিয়ে টেবিলে ধপাস করে ফেলে বললেন,

–তোমরা আমার কথায় গুরুত্ব দিচ্ছো না কেনো? আমি তোমাকে কিছু বলছি আরসাদ।

মিস্টার আরসাদ তাচ্ছিল্য হেসে বললেন,
–আমাদের বেডরুম আলাদা। এখন কী বাড়িটাও আলাদা করতে চাচ্ছো? না করতে চাইলে আমাকে বিরক্ত করা বন্ধ করো। আর আমার ছেলে শুধুমাত্র তোমার জন্যই আজ বাড়ি ছাড়া। আমার জীবনে গ্রহণ হয়ে এসেছ তুমি। এখন আমার এই খানিক শান্তিটাও নষ্ট করতে উঠে পরে লেগেছ। কী চাও বলতে পারো? সবকিছুতে তোমার অভিযোগ! তাহলে বুঝে নেও, আমাদের অভিযোগটাই তুমি।

মিসেস মনিকা অপমানবোধ করে ধপাধপ পা ফেলে চলে গেলো। মিস্টার আরসাদ আবারও নোবেল পড়ায় মনোযোগ দিলেন। মনিকার রাগ ক্ষোভে তার কিছু যায় আসে না। নিজের বড়ো মেয়েকে তো একেবারের জন্য হারিয়েছেই এখন ছেলেও বাড়িছাড়া।

__________

পরেরদিন সন্ধ্যায় মারসাদ এসেছে আদিরাকে নিয়ে স্টুডেন্টের বাসায় যাবে বলে। আদিরা রাস্তায় এসে দেখে মারসাদ আজ একটা রিকশাও ঠিক করে নি। আর রাস্তাতে একটা রিকশাও নেই। আদিরা মারসাদের দিকে এগিয়ে গেলো। মারসাদ তখন সিগরেট ফুঁকছিল। আদিরাকে আসতে দেখে সিগরেটটা মাটিতে ফেলে দিয়ে পি*ষে ফেলল। আদিরা এসে আশেপাশে নজর বুলালো। মারসাদ সেটা লক্ষ্য করে বাঁকা হাসলো। তারপর কন্ঠস্বরে হতাশা এনে বলল,

–রিকশা দুইটা পেলাম না আজকে। একটা পেয়েছিলাম তাই ছেড়ে দিয়েছি। তুমি তো আর আমার সাথে এক রিকশায় যাবে না! চলো আজ হেঁটে হেঁটে যাই।

আদিরা রাজী হলো। তবে রাস্তা একটু শুনশান। রাতের বেলা ঝোঁপঝার থেকে কোনো শি*য়াল, কুকুর বেরিয়ে আসলে কী হবে সেটাই তাকে উদ্ধিগ্ন করে তুলছে। রিকশার সামনে দিয়ে প্রায়ই শি*য়াল দৌঁড়ে যায় এমন দেখা যায়।

আদিরা ও মারসাদ পাশাপাশি হেঁটে চলেছে। মারসাদ একটা ফাঁকা গলির ভিতর গিয়ে আদিরাকে বলল,

–ধরো, এখন তোমার সামনে ভূ*ত এসে হাজির হলো!

আদিরা মনোযোগ দিলো না। কারণ তার কাছে সবসময় ম্যাচ থাকে যা গ্রামে প্রচলিত। মারসাদ আদিরার অভিব্যক্তির পরিবর্তন না দেখে ভ্রুঁ কুঁচকালো। তারপর বলল,

–আচ্ছা। ভূ*ত বাদ দেও। কোনো শি*য়াল সামনে এসে হাজির হলো আর আশেপাশে আমাকে পেলে না। তখন?

আদিরা শি*য়াল খুব ভয় পায়। গ্রামে একবার তাকে শি*য়াল আক্রমন করেছিল কিন্তু কাম*ড় দেয় নি মানুষ চলে আসাতে। আদিরা ভয়ে ভয়ে বলল,

–কেনো আপনি কই যাবেন?

মারসাদের সামনে আদিরার মুখশ্রী আলোক স্বল্পতার কারণে দৃশ্যমান না হলেও কন্ঠস্বর শুনে বুঝতে পারলো। মারসাদ ডোন্টকেয়ার ভাবে বলল,

–চলে গেলাম কোথাও একটা। তখন তোমার কী হবে? আর আজ তো রিকশাও পাবে না।

আদিরার শরীর ভয়ে কেঁপে উঠলো। মারসাদ এবার নিজের উদ্দেশ্য জাহির করলো।

–তুমি যদি আমার কথা মানো তবেই আমি কোথাও যাবো না।

আদিরা জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালো কিন্তু তা মারসাদের দৃষ্টিগোচর হলো না। মারসাদ আদিরার নিরবতা দেখে মৌন সম্মতি বুঝে বলল,

–আমাকে তোমার হাতের রান্না খাওয়াতে হবে। ওইযে পেয়াজ, রসুন দিয়ে ভর্তা দেখলাম সেটা, আর ডিম ও চিচিঙ্গা দিয়ে ভাজি, ঢেঁড়স ভাজি। আর শোনো, আমার চিংড়িতে এলার্জি আর পটল আমি ডিসলাইক করি। তাই পটলের বদলে বেগুন দিতে পারো।

আদিরা হতবাক হয়ে গেলো। খাবারের জন্য লোকটা ওকে এখানে একা ফেলে চলে যাবে? আদিরা হড়বড়িয়ে বলল,

–কিন্তু ভাইয়া। এসব আমি কী করে বানাবো?

মারসাদ আদিরার চালাকিতে বাঁকা হাসলো অতঃপর ফোনের নেট অন করে মাহির পোস্টটা দেখালো। তারপর চতুরতার সাথে বলল,

–এভাবে। যেভাবে তুমি মাহিদের জন্য বানিয়েছ। দরকার পরলে আমি বাজার করে দিবো। তাও তোমাকে রান্না করে দিতে হবে। বলো রাজী?

আদিরা কিছুটা বিরক্ত হলো। লোকটা তার উদ্দেশ্য হাসিল করতে এমন এমন যুক্তি উপস্থাপন করে যে অপরপাশের মানুষ অবাকের চূড়ান্ত সীমায় পৌঁছে যায়।
আদিরাকে কিছু বলতে না শুনে উৎসুক মারসাদ বলে,

–কী হলো? কী ভাবছো? আমি কিন্তু সত্যি সত্যি এখান থেকে চলে যাবো। আর যাওয়ার আগে তোমাকে ধরে কয়েকটা চক্কর দেওয়াবো যাতে বুঝতে না পারো কোনদিকে যেতে হবে। আর ভাবো, শুনশান নিরিবিলি পথ। আশেপাশে ঘন ঝোপঝাড়। ঝিঝি পোকার শব্দ আবার ডোবা থেকে ব্যাঙের ডাক। মাঝে মাঝে শি*য়াল ও কু*কু*রের ডাক। ভাবতেই গা ছমছম করে উঠে না?

মারসাদের এমন ভাবে বলার ধরণে আদিরার গা আসলেই ছমছম করে উঠলো। আদিরা ঢোক গিলে আমতা আমতা করে বলল,
–ভাইয়া প্লিজ এমন করবেন না। আপনিই বলেন? রান্না করে আনাটা কী সম্ভব? বাজে দেখায় তো।

মারসাদ চোখ ঘুরিয়ে বলে,
–কী সমস্যা? টিউশন শেষ হওয়ার পর বক্সটা আমাকে দিবে। তাহলেই হয়। তোমাকে কী ক্যাম্পাসে সবার সামনে খাবার দিয়ে প্রপোজ করতে বলছি?

আদিরা হতাশ হয়। অগ্যতা রাজী হয়। তবে তার মনেও কিছু কুটিল বুদ্ধি ঘুরপাক খাচ্ছে। যা সে খাবারের সাথে করবে। লোকটা তখন নিশ্চয়ই আর এমন সব কথা বলবে না!

________

–রাদিব দুই মাস পর বাংলাদেশে আসবে। ওর বাবা-মা ওর বিয়ের জন্য মেয়ে দেখছে।

ফোনের বিপরীত পাশের ব্যাক্তির কথা শুনে মারসাদের হাত রাগে মুষ্টিবদ্ধ হয়ে গেলো। চোখের সাদা অংশ ক্রমশ লালাভ রঙ ধারণ করছে। অপরপাশ থেকে আবার বলে উঠে,

–তবে রাদিব সরাসরি ঢাকার এয়ারপোর্ট দিয়ে আসবে না এটা হান্ড্রেট পার্সেন্ট শিউর। আদৌ এয়ারপোর্ট দিয়ে আসবে কীনা তা নিয়ে যথেষ্ঠ সন্দেহ আছে। তবে কক্সবাজার যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। সিলেটও যেতে পারে। সিলেটে এমপি রুহুল আমিনের আত্মীয় স্বজন বেশি। আমি তোমাকে জেনে তারপর জানাবো।

মারসাদ “হুম” বলে ফোন ডিসকানেক্ট করে দেয়। আহনাফ, রিহান, মৃদুল ও রবিন মারসাদের পাশে ও সামনে দাঁড়িয়ে বিষয়ে জানার জন্য উৎসুক হয়ে আছে। মারসাদ দেয়ালে সজোরে একটা ঘু*ষি দিয়ে উগ্র কন্ঠে বলল,

–ওই জা*নো-য়া*র দেশে আসছে। আবার নাকি বিয়েও করবে। আবার কোন মেয়ের জীবনটা নষ্ট করার পরিকল্পনা করছে আল্লাহ ভালো জানেন। এবার ওর শেষ দেখে ছাড়বো আমি। ওকে খু ন করে জেলে গেলেও আমার শান্তি। আআআহ!

মারসাদের চিৎকারে আহনাফ মারসাদের হাত চেপে ধরে আছে। রবিন বলে,
–আমাদের এয়ারপোর্ট গুলোতে নজর রাখতে হবে।

রিহান বলে,
–কিন্তু রাদিব যা চতুর! সে কী সরাসরি আসবে? আমার তো মনে হয় না।

মৃদুল বলে,
–শফিক ভাইকে খবর দে মারসাদ। প্রতিটা এয়ারপোর্ট ও ইমিগ্রেশন ট্রান্সপোর্টে সিভিল লোক লাগিয়ে দিবে। এবার ওই বা*স্টা-র্ডের ছাড় নেই।

চলবে ইন শা আল্লাহ্,

#এক_শহর_প্রেম?
লেখনীতেঃ #নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_১৪
মারসাদ নিজেকে শান্ত করে কিছুক্ষণ ভেবে বলল,
–শফিক ভাইকে জানানো কী উচিত হবে? তাকে এসবে ইনভলভ করতে মন সায় দেয় না। তার মুভঅন করা উচিত। কিন্তু এসবে সে আদোও মুভঅন করতে পারবে কী?

আহনাফ মারসাদের পয়েন্টকে সমর্থন করলো না।
–শফিক ভাইয়ের প্রফেশনাল দিকটা দেখ। আপিলিকে সে পছন্দ করতো বা করে এটা তার পারসেনাল ইস্যু। উনার প্রফেশনাল স্ট্যাবেলিটি আমাদের কাজে লাগবে।

মারসাদ দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,
–দুই মাস সময় আছে। আগে রাদিব দেশে আসার প্রস্তুতি নিক। আমার আপিলির সাথে যা করেছে তার শাস্তি আমি চাইলেই ওর বোনের হাসবেন্ডকে বলে ওর বোনের সাথে করাতে পারি কিন্তু ওর বোনটাই একমাত্র আমার বোনের দুঃখ বুঝতো। তাই নিরপরাধ কেউ সাফার করুক চাই না।

………………

চার দিন পর আদিরা মারসাদের জন্য খাবার বাটিতে করে নিয়ে এসেছে। সে পটল, রসুনের ভর্তা ও ঢেঁড়শ ভাজি ও ডিম দিয়ে চিচিঙ্গা ভাজি করেছে। ভর্তা গুলোতে মরিচ দিয়েছে ইচ্ছে মতো। ভর্তার আইটেম গুলো আদিরা নিজে ট্রাই করে দেখেছে ঝাল বেশি। আদিরা নিজে নিজেই বলে,

–আরও খাবেন আমার হাতের রান্না? ইচ্ছামত খান। হুহ্।

টিউশন শেষে আদিরা মারসাদের হাতে বাটিটা দেয়। আদিরা কিছু বলে না দেওয়ার সময়। মারসাদ খুশি হয়ে ধন্যবাদ দেয়। হোস্টেলে গিয়ে খাবারগুলো টেস্ট করে রাহিন, মৃদুল, রবিনের অবস্থা ঝালে নাজেহাল। আহনাফ ও মারসাদ দম মেরে বসে আছে। মৃদুল হাঁপাতে হাঁপাতে বলল,

–আরও জ্বা*লা ওই মেয়েরে! ওই আদিরা তোকে সহ আমাদের মুখে আ*গুন দিয়ে দিবে। এই তোকে বলে দিচ্ছি, আদিরার পিছনে যাবি না। আল্লাহ্ গো! কী ঝাল!

রাহিন মৃদুলকে থা*প্পর দিয়ে বলে,
–আদিরা আপার কাছে আমি মাফ চামু মারসাদের হয়ে। ওর শোধ আমাদের উপর কেন ভাই!

মারসাদ গম্ভীর কন্ঠে বলল,
–তোদের খেতে বলি নি। এখন চুপ করে বসে থাক ঝাল কমে যাবে।

রবিন এতক্ষণ চুপই ছিল। এক প্রকার দম ধরে ছিল। এখন তার ঝাল কমেছে। এবার সে বলল,
–আদিরা হয়তো ঝাল অনেক পছন্দ করে। মেয়েরাতো এমনিতেই ঝালখোর হয়। আমাদেরই ভুল যে ভর্তা বেশি করে মেখেছিলাম। আর পটলের ভর্তাটা ঝাল হলেও খেতে ভালো লাগছিল।

মারসাদ রবিনের শেষোক্ত কথায় ভ্রুঁ কুঁচকালো অতঃপর সন্দিহান কন্ঠে সুধালো,

–পটল? ওটা পটলের ভর্তা ছিল? যেটা আমি বেশি করে নিয়েছি?

ওরা চারজন মারসাদের কথা শুনে ভ্যাবলার মতো মাথা নাড়ালো। মারসাদ চোখ মুখ কুঁচকে বলল,

–আমি ওকে মানা করেছিলাম। তাও সে পটল দিয়েছে।

আহনাফ পানি দিয়ে কুলি করে একটু দম নিয়ে বলল,
–আমরা না বললে তো তুই বুঝতিও না। কারণ তুই পটল লাস্ট কবে খেয়েছিস তোর নিজেরই হয়তো মনে নেই। মেয়ের দম আছে বলতে হবে! নাহলে তোকে পটল খাইয়েই ছাড়লো!

মারসাদ হেসে উঠে। তার নিজের কাছেই মনে হচ্ছে আদিরা তার অনেক অভ্যাস ভবিষ্যতে বদলে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে। মারসাদ হাত ধোয়ার জন্য উঠে তারপর হোস্টেলের ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে আকাশপানে নজর রেখে স্বগোতক্তি করলো,

“মায়াবতী তার মায়ার জালে আমায় জড়িয়ে নিয়েছে যে রাগ হয় না তার দুষ্টুমিতে। এক বুক ভালোবাসার উপস্থিতি জানান দেয়। ভালোবাসি আমি তাকে। অজান্তেই হৃদকুটিরে সে নিজের জন্য ঘর বানিয়ে বসেছে।”

আচমকা আহনাফ এসে পেছোন থেকে মারসাদের কাঁধে হাত রেখে বলে,
–হলো তো সত্যি? তুই পারবিও না কিছু আমার থেকে লুকাতে। হাহ্।

দুই বেষ্টফ্রেন্ড হেসে উঠে। দূর আকাশে দুটি তারা হঠাৎ জ্বলজ্বল করে উঠে।

____
আদিরা সকাল থেকে ফুরফুরে মেজাজে আছে। মাহিদের সাথেও খুব উৎফুল্লতার সাথে কথা বলছে। সকাল থেকে রিন্তির মন খারাপ কারণ পরীক্ষার রেজাল্ট তার খারাপ হয়েছে। রিন্তিকে হাসাতে আদিরা বলে,

–একটা ঘটনা শুনবি? বেশি হাসবি না কিন্তু হ্যাঁ?

রিন্তি সম্মতিসূচক ইঙ্গিত করলে আদিরা বলে,
–আমার পড়ালেখা নিয়ে আমার মায়ে আগ্রহ বেশি ছোটো থেকে। মা নবম শ্রেণীর পর আর পড়তে পারেন নি বিয়ে হয়ে যাওয়াতে তাই তিনি আমাকে পড়াতে চান। আমি যখন ক্লাস থ্রিতে পড়ি, তখন গণিতে আমি প্রথম সাময়িক পরীক্ষায় ১০০ তে ২৯ পেয়েছিলাম। আমি মাকে জানাই নি তখন রেজাল্টের কথা। এর এক সপ্তাহ পর মায়ের সাথে রাস্তায় নাকি গনিতের স্যারের দেখা হয়েছিল। তখন স্যার আমার রেজাল্টটা মাকে বলে দিয়েছিল। ওই গণিতের স্যার আমার মায়েরও স্যার ছিলেন। এরপর বাড়িতে এসে আমার মা তো আমাকে চিৎকার করে ডাকে তারপর গণিতের নাম্বারের কথা জিজ্ঞেস করার পর আমি জবাব দেওয়ার আগেই সে ঝা*ড়ু নিয়ে আমাকে দৌঁড়ানি দিয়েছিল। এবাড়ি ওবাড়ি দৌঁড়ে আমি বাজারের কাছে ডেউয়া গাছটার কাছে লুকিয়েছিলাম। সন্ধ্যার আগ পর্যন্ত বাড়িতে যেতেই সেদিন ভয় করতেছিল। পরে বাবার সাথে বাড়িতে ফিরেছিলাম। মা তখন চোখ গরম করে আমার দিকে রক্তচক্ষু নিয়ে তাকিয়ে ছিল। দুপুরের খাবারটাও খাইনি সেদিন জানো।

আদিরা বলার পর ওদের তিনজনের রিয়াকশন দেখতে তাকালো। দেখলো ওরা তিনজন হাসছে না বরং ভ্যাবলার মতো তাকিয়ে আছে। সাবিহা বলল,

–এটুকুই? আমার মা তো আমাকে বলেছিল বিয়ে দিয়ে দিবে ওটুকুন বয়সে। এসব কমন বিষয়। তাই হাসি পেলো না।

মাহি বলল,
–আমাকে আপিলি সবসময় সেভ করতো। আর আমি ফেল করি নি তবে প্লেস ছুটে গেলে ব-কা খেতে হতো।

আদিরা মনঃক্ষুণ্ণ হয়ে বলল,
–রিন্তিকে হাসাতে বলেছিলাম কিন্তু রিন্তি তো সেই মুখ ভাড় করে বসে আছে।

আচমকা রিন্তি বলে,
–চল! কড়া বোম্বাই দিয়ে পানিপুরি খাই। সব ডিপ্রেশন বের হয়ে যাবে। আজ আমার তরফ থেকে ট্রিট। চল চল।

রিন্তি ওদের টেনে নিয়ে গেছে তারপর ঝাল ঝাল পানিপুরি খেয়ে চারজনেই নাকের জল, চোখের জল এক করছে। তাও ওরা খেয়েই চলেছে। মাহির ফর্সা মুখশ্রী পুরো লাল হয়ে গেছে। মাহি অর্ধেকে এসে আর খেতে পারছে না। মাহি একদম দম ধরে বসে আছে। আদিরারা নিজেদেরটা শেষ করে মাহির কাছে আসে। সাবিহা চোখ মুছতে মুছতে বলে,

–কীরে? তুই ঝাল খেতে পারিস না?

মাহি চুপ করে আছে। মুখ খুলছে না। রিন্তি আবারও একই প্রশ্ন করে মাহিকে আলতো ধা*ক্কা দিয়ে। মাহি এবার বলে,

–পরিমান মতো ঝাল খেতে পারি। আমি ও দাভাই পরিমানের বেশি ঝাল খেতেই পারি না। এজন্য আপিলি সবসময় ঝাল খাওয়ার কোনো চ্যালেঞ্জে জিতে যেতো।

আদিরার হঠাৎ টনক নড়ে। সে যে ভর্তার আইটেম গুলোতে বোম্বাই মরিচ দিয়েছে সাথে শুকনো মরিচও। আদিরার এবার অনুশোচনা হচ্ছে। আরেকটু কম ঝাল দিলেও পারতো। রিন্তিরা কথা বলে যাচ্ছে তাতে আদিরার মনোযোগ নেই। তার এখন খারাপ লাগছে নিজের কর্মের জন্য।

________

–আচ্ছা রাতপাখি? তোমার বন্ধু মারসাদ কী প্রেম-টেম করছে নাকি? ইদানীং কেমন চেঞ্জ দেখা যায় তার মধ্যে।

রাত্রি ফোনের অপরপাশের ব্যাক্তির কথা শুনে কিয়ৎক্ষণ ভাবলো। ভেবেও কোনো উত্তর না পেয়ে বলল,

–কই নাতো। মারসাদ কারও সাথে রিলেশনে নেই। কেনো তোমার মনে হলো?

–না ওই ফার্স্ট ইয়ারের একটা মেয়ের সাথে ঘনঘন দেখা যায়। আবার পোগ্রামে সামিরাকে ছাড়া ওই মেয়ের সাথে ডান্স করলো।

রাত্রি কথাটা শুনে হাসতে হাসতে বলল,
–আরেহ না। মেয়েটা মাহির ফ্রেন্ড। মারসাদ মেয়েটাকে সহজ-সরল দেখে ভাবলো সামিরার বদলে ওর সাথে ডান্স করবে। এক প্রকার র‍্যাগ বলতে পারো আরকি।

ফোনের অপরপাশের ব্যাক্তিটি সন্তুষ্ট হতে পারলো না। আবারও জিজ্ঞাসা করে,
–শুধু এটুকুই? তুমি শিউর কোনো রিলেশন নেই? হতেও পারে তুমি বাদে সবাই জানে।

রাত্রি হাসতে হাসতে বলল,
–তুমি বিশ্বাস করছো না আমাকে? ওয়ে আমি সুমি ও মৌমিকে জিজ্ঞাস করছি। তখন শুনে নিও।

রাত্রি ব্যালকনি থেকে রুমে গিয়ে সুমি ও মৌমিকে উদ্দেশ্য করে বলে,
–এই মারসাদ নাকি আদিরার সাথে রিলেশনে আছে? তোরা জানিস কিছু?

সুমি ও মৌমি অবাক হয়। সুমি রাত্রির হাতে ফোন দেখে তার কাছে ব্যাপারটা খটকা লাগে। মৌমি কিছু বলতে নিচ্ছিলো তার আগেই সুমি হড়বড়িয়ে বলে,

–আরে না তো। ডান্স ওসব তো পোগ্রামের জন্য। মারসাদ কারও সাথে প্রেমের সম্পর্কে নেই। কেনো? হঠাৎ জানতে চাইলি? তুই তো সবই জানিস।

রাত্রি হাত নাড়িয়ে হেসে বলে,
–আরে না। এমনেই। বাদ দে।

এই বলে রাত্রি আবার ব্যালকনিতে চলে যায়। রাত্রি চলে গেলে মৌমি গিয়ে সুমিকে ধরে বলে,

–কী হলো? তুই কথাটা চেপে গেলি কেনো? আমরা তো ধারণা করছি যে মারসাদ আদিরাকে পছন্দ করে। তো রাত্রিকে বললি না কেনো?

সুমি মৌমির মাথায় ঠো*কা মে*রে বলে,
–আরে ব*লদি! আমরা যা ধারণা করছি তাতো রাত্রিরও ধারণা করার কথা। কিন্তু ও আমাদের সাথে থাকলেও ওর মন আমাদের সাথে থাকে না। ব্যাপারটা আমি অনেকদিন ধরে লক্ষ্য করছি। আর এখানে এসে জিজ্ঞেস করার সময়ও ওর হাতে ফোন ছিল। ফোনটা কিন্তু বিছানায় রাখে নি। আবার দেখলি চলে গেলো। তারমানে ফোনের অপরপাশে কেউ তো আছে যে মারসাদ সম্পর্কে খোঁজখবর নিচ্ছে।

মৌমি হতবাক হয়ে বলল,
–কী সাংঘাতিক ভাবা যায়! মারসাদ সম্পর্কে খোঁজখবর নিতে আমাদের সার্কেলের একজনকেই কাজে লাগাচ্ছে। কে হবে ওটা? আমাদের কাল সকালেই মারসাদকে আস্তে করে জানাতে হবে।

চলবে ইন শা আল্লাহ্,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here