#এক_শহর_প্রেম?,২৮,২৯
লেখনীতেঃ #নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_২৮
সুখ চিরস্থায়ী না। দুঃখ ও সুখ একে অপরের পরিপূরক। আদিরার গ্রাম থেকে ওর মা অনেক লুকিয়ে-চুরিয়ে আদিরাকে জানিয়েছে যে আদিরার খোঁজে দেলোয়ার ঢাকা যাচ্ছে। এতোদিন দেলোয়ার জানত না আদিরা কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে। আদিরার গ্রামের শিক্ষকমন্ডলী ও আদিরার বাবা-মা গ্রামের আর কাউকে জানায়নি আদিরা ঠিক কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে। ইদের তিনদিন পর দেলোয়ারের কাছে উড়োচিঠির মাধ্যমে আদিরার ঠিকানা জানিয়েছে কেউ। যে চায়না আদিরার সুখ। দেলোয়ার খবর পাওয়া মাত্র আদিরাদের বাড়িতে এসে আদিরার বাবা-মাকে শাসিয়ে গিয়েছে। তাদের থেকে ফোনটাও কেড়ে নিয়েছে। আদিরার মা সন্ধ্যার সময় আদিরার স্কুলের শিক্ষকের বাড়িতে আদিরার ছোটো ভাই আহাদকে বাড়ির পেছোনের ক্ষেত পেরিয়ে পাঠিয়ে ফোন করিয়ে আদিরাকে জানায়।
খবরটা জানার পর আদিরা কী করবে ভেবে পাচ্ছে না। এখন রাতের বেলা। আজকে রাতের টিউশনটা নেই তাই মেসেই আছে। এখন কী করবে সে ভাবতে পারছে না। দেলোয়ার যদি এসে তাকে জোর করে তুলে নিয়ে যায়! আদিরা চিন্তায় রীতিমত নাজেহাল অবস্থা। ঘড়ির দিকে সময় দেখল। সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার বেশি বাজে। তার মানে মারসাদের টিউশন চলছে। টানা দুই ঘণ্টা দুইটা টিউশন আছে। দশটার আগ পর্যন্ত পড়াবে। আদিরা মারসাদকে এখন চিন্তায় ফেলতে চাইলো না। দশটার পর মারসাদ এমনেই ফোন করবে। তখন নাহয় বলবে।
_________
সাগর, সামিরা সহ সাগরের বন্ধুরা শ*য়*তা*নী হাসি হাসছে। সামিরা হাসতে হাসতে জিদ্দি স্বরে বলে,
–এবার মারসাদ ও আদিরা আলাদা হবেই। আদিরা তার নিজের জায়গা চিনতে পারবে। ওই মেয়ের জন্য আমাকে অনেকবার অপমানিত হতে হয়েছে। ওকে ওর যোগ্য শাস্তি না দিলে আমার শান্তি হতো না।
সাগর উচ্চস্বরে হেসে উঠে বলে,
–কতো কষ্ট করে বাবুলকে দিয়ে এডমিশন অফিস থেকে আদিরার ডকুমেন্টের ছবি আনিয়েছি। উফ! কাজে দিলো আমাদের পরিকল্পনা। তুমি সামিরা আমাদের এই পরিকল্পনাটা দিয়েছ। তোমার কিছু একটা পাওনা রইল। কী নিবে বলো?
নিলয় ওদের সাথে বসে সবটাই শুনছে। নিলয় কিছু না করলেও সে যে ওদের দলেরই একজন। তার কিছুই করার নেই। সাগর এসব করার আগে নিলয়কে এবার কোনো কারণবশত জানায়নি। নিলয়কে না জানিয়ে সবকিছু করে এখন জয় উৎসবে ডেকেছে। নিলয় ঠোঁটের কোণে কৃতিম হাসি ফুটিয়ে রেখেছে। সাগরদের আরেক বন্ধু পরশ বলে,
–দেলোয়ার মনে হয় রাতের বাসে উঠবে। দেলোয়ারের নাকি রাত ১০টায় কাঠবাহী ট্রাকের জন্য অপেক্ষা করতে হবে। আর আদিরার তো খবর জানার কথা না। ওর বাবা-মায়ের ফোন তো নিয়ে নিয়েছে। আর আদিরার বাবা-মা বাড়ি থেকে বের হতে পারবে না।
সামিরা বাঁকা হেসে বলে,
–জানতে জানতে ওর জীবন শেষ। আর বাঁচতে পারবে না। দেলোয়ার ওকে এবার নিজের বাড়িতে নিয়ে বন্ধি করে রাখবে। আর মারসাদ! ওর ব্যাবস্থাও হচ্ছে। ওর সুইট কিউট দাদী! ওর দাদীকে আমার কাকিমনি মানে মারসাদের ফুপিআম্মু, আমার ও মারসাদের বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছে কালরাতে। আজকে মারসাদের সন্ধ্যার পর ওই বাড়িতে যাবার কথা। কাকিমনি মারসাদকে অনেক রিকুয়েস্ট করে এক ঘণ্টার জন্য যেতে রাজি করিয়েছে। একটু পর কাকিমনিকে ফোন করব।
সাগর বলে,
–ইশ! বেচারা মারসাদ! একদিকে নিজের বিয়ে আরেকদিকে প্রেমিকার বিয়ে! উভয়সংকটে পরেছে যে! এই আনন্দে বি*য়া*র চ্যালেঞ্জ হয়ে যাক।
সাগর সহ সবাই বি*য়া*রের ক্যান নিয়ে সেলিব্রেট করছে। নিলয়ও বিয়ারের ক্যান নিল। নিলয় সাগরকে জিজ্ঞাসা করল,
–এগুলো করে কী তুই ভিপি হতে পারবি? আর এটা তো জানা যে মারসাদ সামিরাকে কখনোই বিয়ে করবে না। এক আদিরা মারসাদকে তার দায়িত্ব থেকে বিচ্যুত করতে পারবে না। মারসাদের সাথে আদিরার পরিচয় মাত্র ৬ মাসের কিছু বেশি সময়। আমার মনে হয় না আদিরা….
সামিরা নিলয়ের কথায় রেগে গিয়ে নিলয়কে থামিয়ে দিয়ে বলে,
–তোমার কথাতে মনে হচ্ছে তুমি মারসাদদের পক্ষে! কী হবে না হবে সেটা পরে। মারসাদের দাদী ও ফুপি মারসাদের জন্য অনেককিছু। তোমরা তা না জানলেও আমি জানি।
সাগর সামিরাকে থামাতে নিলয়কে বলে,
–শোন, তুই তো এখন বাড়িতে বাড়িতে থাকোস তাই তুই আসলে জানোসই না মারসাদ আদিরার জন্য কতোটা পজোসিভ। মনে আছে তোরা যে আদিরাকে লাইব্রেরি থেকে আনতে গেছিলি তখন মারসাদ ঝড়ের বেগে এসে আদিরাকে ছাড়িয়ে নেয়? আর পরশ দেখেছে, মারসাদ প্রতিদিন আদিরাকে টিউশনের জন্য নিয়ে যায় আর নিয়ে আসে।
নিলয় আর কিছু বলল না। নিলয় সবার আড়ালে রাত্রিকে ছোটো একটা টেক্সট করল,
“মারসাদক যেখানেই থাকুক ওকে জানাও আদিরার বিপদ।”
নিলয়ের এর বাইরে কিছু করার নাই। নিলয় এখন প্রকাশ্যে সাগরের বিরোধীতা করলে নিলয়ের পরিবার ও রাত্রির জীবনে ক্ষতিকর প্রভাব পরতে পারে। সাগরের স্বভাব নিলয়ের সবটাই জানা।
_________
মারসাদ রাত সাড়ে আটটার পরের টিউশনটা আসর নামাজের পরে পড়িয়ে ফেলেছে। আর এখন সোয়া আটটা বাজে। মারসাদ স্টুডেন্ট পড়িয়ে এখন তার পিতৃলয়ে যাচ্ছে। মারসাদের দাদী জানিয়েছে, মিসেস মনিকা নাকি আজ তার ভাইয়ের বাড়িতে গিয়েছে মাহিকে নিয়ে। মাহি যেতে চায়নি কিন্তু ওর নানুর আবদারে গিয়েছে। মারসাদের নানুও মাহিকে অনেক আদর করে কিন্তু মিসেস মনিকা মারসাদের নানুকে খুব একটা কর্ণপাত করেন না।
উল্লেখ্য যে, মাহি সামিরাকে পছন্দ করেনা বলে মাহিকে ওর ফুপি ও দাদী বিষয়টা অবগত করায়নি।
মারসাদ ওর পিতৃলয়ে গিয়ে ওর দাদীর কাছে গিয়ে দাদীকে জড়িয়ে ধরে বলে,
–কেমন আছো সুইট কুইন? তোমার শরীর ভালো?
মারসাদের দাদী অভিমানী কন্ঠে বলেন,
–তোর আমার কথা কী মনে পরে? জানি পরে না। পরলে তুই ঠিকই আসতি আমার সাথে দেখা করতে।
মারসাদ ওর দাদীর গাল টেনে বলে,
–তোমাকে আমার অনেক অনেক মনে পরে গো। কিন্তু তোমার বউমা আমাকে একটুও পছন্দ করেনা যে! কিভাবে আসি বলো? তা ফুপি কই? আমাকে দেখবে বলে আসতে বললো আর সে নিজেই লাপাত্তা।
মারসাদের ফুপি ট্রেতে করে মারসাদের জন্য পুডিং ও ক্ষীরের পিঠা নিয়ে এসে ওর সামনে রেখে বলেন,
–নে শুরু কর। আরও কিছু বানাতে চেয়েছিলাম কিন্তু পারলাম না। খেয়ে বলতো কেমন হয়েছে?
মারসাদ হেসে একটা ক্ষীরের পিঠা নিয়ে বলে,
–তোমার বিয়ের আগে নাকি তুমি সারাদিন এটা ওটা এক্সপেরিমেন্ট করে আপিলিকে আর মাকে খাওয়াতে। মাঝে মাঝে দুই বছরের আমাকেও ছাড় দিতে না। তবে তোমার রান্না বেস্ট।
মারসাদের ফুপির মন আনন্দে পুলকিত হলো কিন্তু পরক্ষণেই আষাঢ়ের ঘন কালো মেঘে আচ্ছাদিত মনের ভিতর। সে জানে মারসাদ সামিরাকে বিয়ে করতে রাজী হবে না কিন্তু ছোটো দেবর ও জায়ের অনুরোধে আর সামিরার ইমোশোনাল কান্ডে বলতে এসেছে।
মারসাদ ক্ষীরের পিঠা ও পুডিং কিছুটা খেয়ে বলে,
–অনেক অনেক মজা হয়েছে ফুপি। মাহিতো মিস করে গেলো। সে তো মিসেস মনিকা খানের সাথে গিয়েছে।
মারসাদের দাদী বলেন,
–হ্যাঁ রে। তোদের নানুরা আবদার করল। তুইও তো যেতে পারিস একটু। তোরও তো নানুবাড়ি ওটা।
মারসাদ দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে,
–বাদ দাও। যাবো নাহয় একদিন। তা আমাকে দেখা শেষ? আমি কী এবার হোস্টেলে যেতে পারি? দেখো থেকে যেতে বলবে না একদম।
মারসাদের দাদী মারসাদের ফুপির দিকে তাকায়। মারসাদের ফুপি আমতা আমতা করে বলেন,
–তোকে কিছু বলার ছিল।
মারসাদ ওর দাদীর বিছানায় গা এলিয়ে দিয়ে চোখ বন্ধ করে বলল,
–বলো।
মারসাদের ফুপি জড়তার সাথে বলেন,
–আমি তোর আর সামিরার বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে এসেছি।
মারসাদ কথাটা শোনামাত্র ফট করে ছোখ খুলে এক ঝটকায় উঠে বসে অতঃপর কালক্ষেপণ না করে সুধায়,
–কী বললে তুমি? আবার বলো? আমি ভুল শুনলাম নাতো!
মারসাদের ফুপি তার মায়ের দিকে তাকিয়ে লম্বাশ্বাস ফেলে বলেন,
–সামিরার সাথে তোর বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে এসেছি। তুই তো জানিস সামিরা…
মারসাদ ওর ফুপিকে হাতের ইশারায় থামিয়ে রেগে কাটকাট কন্ঠে বলে,
–আমার কিছু জানা নেই আর জানার আগ্রহও নেই। তোমার দেবরের মেয়েকে বলে দিবে, সে বোকার স্বর্গে বসবাস করছে। তার নিজের যদি কোনো আত্মসম্মান থাকতো তবে তোমাকে দিয়ে এই প্রস্তাব পাঠাতে পারতো না। বেহায়াপনা ও নিলজ্জতার একটা সীমা থাকে। ওর সেটা নেই। সে অনেক আগে থেকেই জানে আমি তাকে পছন্দ করিনা। তারপরেও সে এমন এমন কাজ করে যে তোমার লেহাজ না করলে ওকে আমি কয়েকটা চ*ড়-থা*প্প*ড় মিনিটে মিনিটে দিতাম। আর ফুপি তুমিও ভবিষ্যতে তোমার দেবরের মেয়ের পক্ষে একটা শব্দও আমাকে বলবে না।
মারসাদ তার ফুপিকে কথাগুলো বলে এক মিনিটও সেখানে দাঁড়ায় না। বাড়ি থেকে বের হয়ে চলে আসে। মারসাদের দাদী কয়েকবার ডেকেও সাড়া পেলো না। মারসাদের ফুপি তার মাকে বলেন,
–মা আমি জানতাম মারসাদ রাজী হবে না। সামিরার উগ্রতা আমারও পছন্দ না। নিজের মেয়ে হলে ঠিক সোজা করে ফেলতাম। কিন্তু সামিরার বাবা-মা যেনো মেয়ের এসব দেখেই না। একমাত্র মেয়ে তাদের। আমার দুই ছেলেকে আমি যতোটুকু পারি ঠিক রেখেছি।
মারসাদের দাদী ও ফুপি দীর্ঘশ্বাস ফেলল। এদিকে রাত্রি নিলয়ের মেসেজ দেখে মৌমি ও সুমির সাথে কথা বলে। তারপর সুমি মারসাদকে ফোন করে। মারসাদ তখন হাইওয়ের ধারে পথচারী হাঁটার স্থানে বসার জন্য বেঞ্চ আছে সেখানে একাকি বসে আছে। তার প্রচণ্ড রাগ হচ্ছে বলে নিরবতাতে রাগ কমানোতে প্রচেষ্টারত। দূরপাল্লার কিছু বাস-ট্রাক চলাচল দেখা যায়। সোডিয়াম লাইটের রশ্নিতে অন্ধকার অনেকটা কে*টে গেছে। মারসাদ সুমির ফোন রিসিভ করে আদিরার বিপদের কথা শোনে অস্থির হয়ে আদিরাকে ফোন করে।
চলবে ইনশাআল্লাহ,
#এক_শহর_প্রেম?
লেখনীতেঃ #নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_২৯
ফোনের অপরপাশ থেকে আদিরার কাছ থেকে সকল কিছু শুনে মারসাদ স্থিরচিত্তে বলল,
–পনেরো মিনিটের মধ্যে মেসের বাহিরে আসবে। এখন রাত সোয়া নয়টার কাছাকাছি বাজে। সাড়ে নয়টার মধ্যে নিচে নামবে।
মারসাদকে প্রতিউত্তরে আদিরা কিছু বলবে তার আগেই মারসাদ কল ডিসকানেক্ট করে দিয়েছে। আদিরা হতাশ হয়ে নিজে নিজেই বলে,
–এই লোকটা কখন কী বলে কী করে কিছু বোঝা যায় না। এই রাতের বেলা দেখা করে সে কী করবে? এখন তার ইচ্ছে হয়েছে দেখা করবে নয়তো সে আবার রেগে যাবে। আচ্ছা সে এই বিষয়ে জানলো কিভাবে? মা কী আহাদকে দিয়ে তাকেও ফোন করিয়েছে? ধ্যাত সে না বললে আমি জানবো কী করে! এখন দেলোয়ারের সাথে কী সে দা*ঙ্গা করবে! দেলোয়ার যদি তার খারাপ কিছু করে বসে! স্টপ আদিরা। এতক্ষণ টেনশনে থাকলেও পড়ার কারণে চিন্তা কিছুটা কম ছিল। কিন্তু এখন এই পনেরো মিনিট আমার কাছে অনেক দীর্ঘ একটা ধৈর্য পরীক্ষা।
পনেরো মিনিট পর আদিরা মেসের সামনের রাস্তা থেকে একটু দূরে একা দাঁড়িয়ে আছে। প্রথমে একটা রিকশা এসে থামল যেটাতে আহনাফ, রবিন, রাহিন ও মৃদুল। আদিরা ওদের আসার কারণ বুঝতে না পেরে কনফিউজড হয়ে তাকিয়ে আছে। আহনাফ এসে আদিরাকে জিজ্ঞাসা করে,
–মারসাদ কই?
আদিরা অবাক হয়ে হড়বড়িয়ে জবাব দেয়,
–আমি কিভাবে জানব আপনার বন্ধু কই! আপনাদেরই না জানার কথা। সে আমাকে এখানে আসতে বলেছে আমি এসেছি। আপনাদেরও কী আসতে বলেছে? কী মুশকিল! নিজে সবাইকে আসতে বলে নিজেই লাপাত্তা। আচ্ছা সে সবাইকে আসতে কেনো বলল? আপনারা কী সবাই মিলে ফা*ইটিং ট্রেনিং করবেন? দেলোয়ারের সাথে তো মনে হয় তার লোকজনও আসবে। আপনারা মাত্র পাঁচজন। কীভাবে কী করবেন? আমার মনে হয় কী….
আহনাফ, মৃদুল, রাহিন ও রবিন হা করে আদিরার দিকে তাকিয়ে আছে। আর আদিরা অনবরত দাঁত দিয়ে নখ কাটছে আর কথাগুলো বলে চলেছে। আহনাফ আদিরাকে থামিয়ে বলে,
–রিল্যাক্স! কী হয়েছে তোমার? এতো তাড়াহুড়া করে নিজের মতো কতোকিছু বলে যাচ্ছ। আমরা শুধু এটুকু জানি দেলোয়ার তোমার খোঁজ পেয়ে গেছে আর সে আসছে। মারসাদ এইজন্য আমাদের আসতে বলেছে। আর তুমি কীনা অনেককিছু ভেবে বসে আছো!
আদিরা অস্থীরচিত্তে বলে,
–জানিনা আমি কিসব ভাবছি। আপনার বন্ধু ফোন করে বলল, আমার কী হয়েছে? কীসের বিপদ? এসব। উনি জানলো কী করে? আমি ভেবেছিলাম উনি হোস্টেলে ফেরার পর ফোন করলে আমি তাকে সবটা জানাবো। কিন্তু সে তো নিজেই অনেকটা জেনে বসে আছে।
মারসাদ এসে হাজির হয়। এরপর মারসাদই বলে,
–বলেছে কেউ একজন। উৎস শুরুর স্থান থেকেই। এখন চলো বিয়ে করবো!
আচমকা বিয়ের কথা শুনে উপস্থিত সকলে হতভম্ব হয়ে যায়। মারসাদ সকলকে চুপ করে তার দিকে নির্নিমিখ তাকিয়ে থাকতে দেখে ভ্রুঁ কুঁচকে বলে,
–কী? আমাকে কী ভূ*তের মতো লাগছে? এমন করে সবাই চেয়ে আছিস কেনো?
রাহিন মারসাদের কাছে এগিয়ে এসে বলে,
–কী বললি আবার বল।
মারসাদ রাহিনের কানের কাছে একটা চা*টা মে*রে বলল,
–আমি এখন আদিরাকে বিয়ে করবো। শুনেছিস? নাকি আরেকটা দিলে শুনবি?
আদিরা আচমকা বলে উঠে,
–বিয়ে! বিয়ে কেনো?
মারসাদ তীক্ষ্ম নজরে তাকিয়ে বলে,
–আমার ইচ্ছে হয়েছে তাই। কোনো সমস্যা?
আদিরা থতমত খেয়ে যায় অতঃপর বলে,
–সমস্যা! হ্যাঁ সমস্যা তো। আমি এখন বিয়ে করতে পারব না। বাবা-মাকে না জানিয়ে বিয়ে করবো না।
মারসাদ দাঁতে দাঁত চিপে বলে,
–তো দেলোয়ারকে বিয়ে করার ইচ্ছে হয়েছে? তাহলে আগেরবারই বিয়ে করতে। তখন কান্নাকাটি করে চলে এসেছ কেনো?
আদিরা বলে,
–আমি কখন বললাম আমি দেলোয়ারকে বিয়ে করবো? দেখেন, বিয়ের জন্যও একটা মানসিক প্রস্তুতি আছে তো। আর আমার বাবা-মা যদি রাজি না থাকে?
মারসাদ ভাবলেশহীন ভাবে বলে,
–তোমার বাবা-মায়ের অনুমতি নেওয়া আমার। তাই চুপচাপ আমার সাথে চলো।
আদিরা অবাক হয়ে বলে,
–কখন? আর তারা আমাকে তো বলে নাই।
মারসাদ ইতোমধ্যে আদিরার হাত ধরে রিকশার কাছে নিয়ে গেলো। আহনাফদেরও সাথে আসতে বলে রিকশা কাজী অফিসের দিকে যাচ্ছে। আদিরা রিকশায় উঠে কিছু বলতে নিবে তার আগেই মারসাদ বলে,
–একদম চুপ করে থাকবে। তোমার বাবা-মায়ের কাছ থেকে তোমাকে নিয়ে আসার সময়ই অনুমতি নিয়ে এসেছি। এখন একটা কথাও বলবে না। সব পরে তোমাকে বুঝানো যাবে।
কাজী অফিসে গিয়ে কিছুক্ষণের মধ্যে মারসাদ ও আদিরা পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ হয়। আদিরার এখনও ঘোর কা*টছে না। কবুল বলার সময়ও যখন চুপ করে ছিল তখন মারসাদের ধা*ক্কানোতে হড়বড়িয়ে বলে ফেলেছিল। মারসাদ আহনাফদের সাথে কথা বলছে। আগামীকাল যখন দেলোয়ার আসবে তখন কী করবে? আর খবরটা যেহেতু রাত্রি জানিয়েছে তারমানে সাগরদের দলের হাত আছে।
মারসাদ আদিরার কাছে এসে বলে,
–তুমি আজ রাতে আহনাফের বাড়িতে থাকবে। আহনাফের বাড়িতে আহনাফের মা-বাবা, ভাই-ভাবি, ভাতিজি ও একটা ছোটো বোন আছে। ওদের বাড়িতে যেতে ঘণ্টাখানেক লাগবে কিন্তু ওখানে তুমি সেফ থাকবে। যে বা যারা তোমার খোঁজ দেলোয়ারকে দিয়েছে, তারা তোমার মেসের ঠিকানাও নিশ্চয়ই জানে। তাই আগামী দুইদিন আহনাফদের বাড়িতেই থাকবে। আহনাফ ওর মায়ের সাথে কথা বলছে এই ব্যাপারে। কাল সকালে মাহিকে বলব, তোমার দরকারি জিনিসপত্র যেনো আহনাফদের বাড়িতে পৌঁছে দেয় মেস থেকে।
আদিরা আর দ্বিমত করে না। দ্বিমত করবেই বা কী করে! ওর এখনও বিশ্বাস হচ্ছে না মারসাদ নামক জেদী লোকটা এখন তার স্বামী! এতোক্ষণ মনের মধ্যে একটা ভয় কাজ করছিল দেলোয়ারকে নিয়ে। দেলোয়ার যদি তুলে নিয়ে যায়? এখন কিছুটা হলেও সেই ভয় দূর হয়েছে। মনের ভিতর অদ্ভুত আড়ষ্টতা কাজ করছে। মারসাদকে দেখলেই তার লাজুক মনে আবারও নতুন করে উথালপাতাল ঝড়ের আবির্ভাব হচ্ছে। এমনিতেও প্রতিদিন মারসাদের সাথে কথা বলতে তার কিছুটা লজ্জা লাগতো।
আদিরাকে অন্যমনা দেখে মারসাদ রম্যাত্নক কন্ঠে বলে,
–হিসেব মতে আজ আমাদের বাসর রাত। তুমি কী সেই ভাবনায় মশগুল? তাহলে বলতে পারো। আজ তাহলে বউয়ের সাথে ফার্স্ট নাইট কা*টিয়ে নেই!
আদিরা চোখ বড়ো বড়ো তাকিয়ে তাড়াহুড়ো করে হড়বড়িয়ে বলে,
–না না। আমি এসব একদম ভাবছিলাম না। আমি তো ভাবছিলাম, কী থেকে কী হয়ে গেল! আমার সব স্বপ্ন মনে হচ্ছে।
মারসাদ এগিয়ে এসে আদিরার গালের দুইপাশে নিজের হাত দিয়ে আদিরার মুখমণ্ডল আগলিয়ে নিলো। তারপর আদিরার কপালে প্রথমবারের মতো বৈধভাবে গাড়ো চুম্বনে সিক্ত করল। অন্যরকম আবেশের প্রশান্তি এতে। আদিরা গভীরভাবে নিজের আঁখিযুগল মুদিত করে রেখেছে। মারসাদ এবার নিজের কপালের সাথে আদিরার কপাল ঠেকিয়ে ধীর কন্ঠে বলে,
–আমার প্রথম বৈধ স্পর্শ। তোমার আমার প্রণয় আজ বৈধতা পেয়েছে। হোক সেটা পরিস্থিতির কারণে। কিন্তু যারা আমাদের খারাপ চায় তারাই আজ আমাদের পরিণয়ের কারণ। সব ঝামেলা মিটে যাওয়ার পর ওদের খুব সুন্দর করে একটা ধন্যবাদ দিবো। তারপর তোমার গ্রামে গিয়ে তোমার বাবা-মায়ের দোয়া নিয়ে আসব। ভালোবাসি আমার মনোহারিণী। এই শহরে আমাদের প্রণয়ের প্রেম আজ পরিণয় পেয়েছে।
আদিরা লজ্জায় আরক্তিম হলো। মিশে গেলো তার প্রিয়তমের প্রশস্ত বাহুযুগলের আলিঙ্গনে।
চলবে ইনশাআল্লাহ,
ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন।