#এক_শহর_প্রেম?,৩৯,৪০ শেষ
লেখনীতেঃ #নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_৩৯
মারসাদের বুক কেঁপে উঠল। একে তো মাহি কাঁদছে তারউপর বাবা বলে থেমে আছে। মারসাদ ভীত কন্ঠে সুধালো,
–কী হয়েছে বাবার?
মাহি ঢোক গিলে বলে,
–বাবার… বাবার হার্ট অ্যাটাক হয়েছে মনে হচ্ছে। আমি..আমি একটু আগে স্টাডিরুমে গিয়ে দেখি..
মারসাদ যা বুঝার বুঝে গেছে। গ্রীষ্মের গরমেও তার হাত-পা কেমন জমে যাচ্ছে। শরীর বেয়ে শীতল স্বেদধারা নেমে গেল। মারসাদ কোনোমতে হসপিটালের ঠিকানা নিয়ে দ্রুতবেগে বেড়িয়ে গেল। আহনাফ, মৃদুলরা ব্যাপারটা না বুঝে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। হঠাৎ কী এমন হলো যার জন্য এই ক্ষিপ্রতা! আহনাফরা হুট করে একে অপরের দিকে তাকিয়ে মারসাদের পেছোনে ছুটে হোস্টেলের দারোয়ানকে জিজ্ঞেসা করলে দারোয়ান মারসাদ কোন দিকে গিয়েছে জানিয়ে দেয়। কিন্তু কোথায় যাচ্ছে তা জানার জন্য আহনাফ আদিরাকে ফোন করল। আদিরা এতো রাতে আহনাফের ফোন দেখে অবাক হলো খানিকটা। সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতে ফোন রিসিভ করলে আহনাফ দ্রুত বলে,
–একটু আগে তুমি মারসাদকে ফোন করেছিলে? এই পাঁচ মিনিট আগে?
আদিরা বিচলিত স্বরে বলল,
–নাতো। কেনো কী হয়েছে ভাইয়া?
আহনাফ কথা কা*টানোর জন্য হাসার চেষ্টা করে বলল,
–আরে না। কিছু না। এমনিই। রাখি। আল্লাহ হাফেজ।
ফোন রেখে দিলে আদিরা ভাবনায় পরে গেল। হুট করে কী এমন হলো যে আহনাফ ভাইয়া তাকে ফোন করে জানতে চাইল? উনার কন্ঠও কেমন অগোছালো শোনাচ্ছিল।
আহনাফ এবার মাহিকে ফোন করলে রিং কয়েকবার বাজার পর শেষ সময়ে মাহি ফোন রিসিভ করলে আহনাফ মাহির কান্না জড়িত “হ্যালো” শুনে বিচলিত হলো প্রচণ্ড। আহনাফ উৎকণ্ঠিত হয়ে বলল,
–কী হয়েছে তোমার? কন্ঠ এমন শোনাচ্ছে কেনো? মারসাদকেও দেখলাম দৌঁড়ে চলে গেল। কী হয়েছে বলো?
মাহি ফুঁপিয়ে উঠল। আহনাফ ব্যতিব্যস্ত হয়ে জিজ্ঞাসা করল,
–কী হয়েছে বলবে তো? কান্না থামাও? কী হয়েছে? দাদীর কিছু হয়েছে? আঙ্কেলের কিছু নয়তো?
মাহি নিজেকে ধরে রাখতে পারল না। কান্নামাখা কন্ঠে বলল,
–বাবার হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। আমি হসপিটালে আছি। দাদীও কাঁদতে কাঁদতে অসুস্থ হয়ে গিয়েছিল তাই তাকে ঘুমের ইন*জে*কশন দেয়া হয়েছে।
আহনাফ বেশি কথা না বাড়িয়ে হসপিটালের ঠিকানা নিয়ে মৃদুলদের নিয়ে বেরিয়ে পরল।
_________
মারসাদ হসপিটালের রিসেপশনে উদ্ভ্রান্তের মতো ছুটে এসে জিজ্ঞাসা করে,
–আমার বাবা কোথায়? মানে মিস্টার আরসাদ খান কোথায়?
রিসিপশনিষ্ট তাকে আইসিউর দিক দেখিয়ে দিলে মারসাদ ছুটে যায়। আইসিউর বাহিরে কান্নারত মাহিকে দেখে। মাহি মারসাদকে দেখে দৌঁড়ে জড়িয়ে ধরে বলতে থাকে,
–দাভাই! দাভাই! বাবাও আমাকে ছেড়ে চলে যাবে? বল না?
মাহি প্রশ্ন করে ফুঁপিয়ে কাঁদছে। মিসেস মনিকা মলিন দৃষ্টিতে বেঞ্চে বসে মাহি ও মারসাদকে দেখছে। মিস্টার আরসাদ বুকে প্রচণ্ড ব্যাথা নিয়েও গাড়িতে যতক্ষণ জ্ঞান ছিল তখন বলেছিল,
“আমার জীবনটাকে বিষাদময় করতে তুমি অন্যতম মনিকা। তোমার স্বার্থপরতা আমায় নরকতূল্য যন্ত্রনা দিয়েছে।”
মিসেস মনিকা তারপর থেকে একদম নিশ্চুপ হয়ে আছে। তার ২২ বছরে করা সবকিছু তার চোখে ভাসছে। মানুষটা তাকে সুস্থ অবস্থায় সারাদিন বাজে বললেও সে গায়ে মাখে না কিন্তু গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় বলা কথা গুলো তার ভাবান্তর করাচ্ছে। সে কী সত্যি স্বার্থপর হয়ে গেছে? নিজেকে নিজের কাছে খুব হীন লাগছে। এই লোকটাকে ভালোবাসেন তিনি। নয়তো বিয়ে করতেন কেনো! কিন্তু নিজের মধ্যে স্বার্থপরতার বিজ কবে গাছে পরিনত হয়েছে তা সে বুঝতেই পারেনি তখন। তার নিজের মেয়েও তাকে এই দুঃখের দিনে আশ্রয় ভাবে না। মিসেস মনিকা পাথরের মূর্তির মতো বসে আছে। তার দৃষ্টিতে কোনো ভাষা নেই।
ডাক্তার বের হলে মাহি ও মারসাদ তার কাছে যায়। ডাক্তার হতাশ স্বরে বলেন,
–দেখুন, মিস্টার আরসাদের হার্টে দুইটা ধমনিতে অনেকটা ব্লক ছিল। সে মেডিকেশন নিচ্ছিল। এখন ব্লক আরও বেড়ে গেছে। আমরা এনজিওপ্লাস্টি করব। কিছুটা রিস্ক আছে। আশকরি আল্লাহর রহমতে ঠিক হয়ে যাবে।
রাত বারোটার মতো বাজে। মারসাদ পকেট থেকে ফোন বের করে দেখে আদিরা ও আহনাফদের অনেকগুলো মিসডকল। সাইলেন্ট থাকার দরুন শুনতে পায়নি। ফোন কিভাবে সাইলেন্ট হলো সে নিজেও জানে না। আহনাফরাও এসে পৌঁছাল। ওরা এখন মাহি ও মারসাদের পাশে আছে। আদিরার অনবরত ফোন করা দেখে মারসাদ তাকে ফোন করে সবটা জানাল। আদিরা চাইছিল এখুনি আসতে কিন্তু মারসাদ মানা করল। রাতের বেলা আসার দরকার নেই। কাল সকালে মারসাদ আনতে যাবে।
মারসাদের বাবার খবর শুনে মারসাদের ফুপিরাও চলে এসেছে। মারসাদের দাদীকে তো ঘুম পারিয়ে রাখা হয়েছে।
সকাল বেলা আদিরা রাস্তায় জনমানবের সমাগম শুরু হতেই নিজেই হসপিটালের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পরে। ঠিকঠাক চিনে না বিধায় রিকশায় উঠে ঠিকানা বলে দিয়েছে। পথিমধ্যে ঘটে এক দুর্ঘটনা। এক মাইক্রো রিকশাটাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে চলে গেছে। আদিরা রিকশার ভেতরে থাকায় হুকে লেগে হাতে অনেকটা কে*টে গেছে আর মাথার বাম পাশে কিছুটা ব্যাথা ও পায়েও ছিলে গেছে কাত হয়ে পরাতে। রিকশাওয়ালা পায়ে ব্যাথা পেয়েছে। আশেপাশের লোকজন জড়ো হয়ে আগে আদিরাকে উঠায় তারপর রিকশাটাকে সোজা করে। সামনে কিছুটা দূরে হসপিটালে এক মহিলা আদিরাকে নিয়ে যায়। আদিরা রিকশাওয়ালাকে তার নায্য ভাড়ার সাথে অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে আসে। রিকশাওয়ালাকে বলেছিল সাথে আসতে কিন্তু তিনি আসলেন না।
হসপিটালে পৌঁছানোর পর আদিরাকে যিনি নিয়ে এসেছেন তিনি নার্স ডেকে আদিরার ড্রেসিং করিয়ে দিতে বলেন। মারসাদ তখন করিডরে হাঁটছিল হঠাৎ আদিরার মতো কাউকে দেখে এগিয়ে গিয়ে দেখে ওটা আদিরাই। আদিরার সামনে যেতেই তার রাগ উঠে গেল। এতোটা কেয়ারলেস কেনো এই মেয়ে! একটা কথাও শোনেনা। মারসাদ পেছোন থেকে রূঢ় শব্দে বলে,
–তোমাকে মানা করেছিলাম না? একা আসতে গেলে কেনো? আর অ্যাকসিডেন্ট কিভাবে করেছ? একটুও কেয়ার নেই নিজের প্রতি!
আদিরা ভড়কে গেল। এক সপ্তাহ আগেও একটা অ্যাকসিডেন্ট হতে হতে বেঁচেছে সে। মারসাদ সেদিন দূর থেকে দেখে দৌঁড়ে এসেছিল আর আজ তো হয়েই গেল। আদিরা আমতা আমতা করে বলে,
–না মানে। মানে আমার কোনো দোষ ছিল না সত্যি। আমিতো রিকশায় ছিলাম। মাইক্রোটা ধা*ক্কা দিয়ে চলে গেল। আমি তো আর জানতাম না এটা হবে।
রাগে মারসাদের নাক লাল হয়ে গেছে। আদিরা ব্যান্ডেজ করা হাত উঠিয়ে কিছু বলতে নিবে তার আগেই মারসাদ বলে,
–একটু পর আমি গিয়ে তোমায় নিয়ে আসতাম তো। তাই না? কাল বলেছিলাম তো? কিন্তু না! তুমি তো নাছোড়বান্দা! আমার কথা কী তুমি শুনবে! নিজের মনে হয়েছে চলে এসেছ সাথে হাত-পায়ের বেহাল দশা করে বসেছ।
আদিরা মিনমিন করে বলে,
–সরি। আমি বুঝিনি। আর হবে না। সরি।
মারসাদ পাশের চেয়ারটাতে বসে হাত দিয়ে নিজের মুখমণ্ডল ঢেকে রেখেছে। আদিরা কিছুক্ষণ চুপ থেকে ভীরু কন্ঠে সুধায়,
–বাবা কেমন আছেন? ডাক্তার কী বলেছে?
মারসাদ প্রতিউত্তর করল না। গতকাল রাতে এনজিওপ্লাস্টির পর ঘুমের ইনজেকশন দেয়া হয়েছিল। মাহি মারসাদকে খুঁজতে খুঁজতে এখানে এসে আদিরার এঅবস্থা দেখে বিচলিত হয়ে তাড়াহুড়ো করে এসে বলে,
–কিভাবে হলো এসব? তুই অ্যাকসিডেন্ট করলি কী করে?
আদিরা শান্ত স্বরে সবটা বলে মাহিকে। মাহিও মারসাদের মতো আদিরাকে ব*কাঝ*কা করে। মাহি এবার ওদের বাবার ঘুম ভাঙার কথা বলে। মিস্টার আরসাদ প্রথমেই মারসাদের নাম বলেছে। মারসাদ এটা শুনে দৌঁড়ে চলে যায়। বাবার কেবিনের সামনে গিয়ে হাত দিয়ে ভালো করে চোখ মুছে ভিতরে ঢোকে। কেবিনে নাকে নল, হাতে ক্যানুলা লাগানো সাদা বেডে শোয়া অবস্থায় নিজের জন্মদাতাকে দেখে মন কেঁদে উঠছে বারবার। দুইটা বছর এই মানুষটা খবরও নেয়নি সে। মনে মনে অনুশোচনায় দগ্ধ হচ্ছে বারংবার। অভিমানের পাল্লাটা ভারীই ছিল। মারসাদকে দরজার কাছে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে মারসাদের বাবা ছেলেকে আস্তে ডাক দিলেন,
–মারসাদ!
মারসাদ লম্বা শ্বাস নিয়ে বাবার বেডের কাছে টুলে বসে। মিস্টার আরসাদ ছেলের হাত ধরার জন্য হাত উঠাচ্ছিলেন তৎক্ষণাৎ মারসাদ তার হাত ধরে ফেলল। তিনি আস্তে আস্তে বললেন,
–আর কতো শাস্তি দিবি বাবা? এবারও কী মাফ করা যায় না? আমিও হয়তো কিছুদিন পর তোর মা ও আপিলির কাছে চলে যাব।
মারসাদের বুক ধক করে উঠল। সে তৎক্ষণাৎ বলল,
–না। একদম না। তুমি কোথাও যাবা না। আমার সাথে থাকবে। আমাকে ক্ষমা করে দেও। তোমাকে এতোদিন অনেক কস্ট দিয়েছি বাবা। সরি ফর এভরিথিং।
মিস্টার আরসাদের নেত্র কোন বেয়ে নোনাজল গড়ালো। মারসাদ তার বাবাকে আলতে জড়িয়ে ধরল। দরজার বাহির থেকে আদিরা, মাহি, আহনাফ, মৃদুলরা ও মারসাদের ফুফি এই দৃশ্য দেখে নিজেদের চোখ মুছল। বাবা-ছেলের মনমালিন্য দূর হলো অবশেষে।
________
সামিরা নিজের ঘরের ভিতর উচ্চস্বরে পাগলের মতো হাসছে। অস্বাভাবিক সেই হাসি। ফোনের অপরপাশে থাকা সাগরও সামিরার হাসিতে খানিকটা ভড়কে গেল। সামিরা হুট করে হাসি থামিয়ে ভয়ংকর স্বরে হিসহিসিয়ে বলে,
–আজকেরটাও জাস্ট ট্রেইলার ছিল। পরেরবার আমি নিজে ওকে গাড়ি চাপা দিবো। আমার চোখের সামনে ওর মৃ*ত্যু দেখতে চাই আমি। হা হা হা!
চলবে ইনশাআল্লাহ,
#এক_শহর_প্রেম?
লেখনীতেঃ #নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_৪০
দুইদিন হসপিটালে থেকে মিস্টার আরসাদকে নিয়ে ওরা বাড়ি ফেরে। মারসাদ বলেছে সে অনার্সটা কম্পিলিট হলেই বাড়ি ফিরে আসবে তাছাড়া প্রায়দিন এসে দেখে যাবে এবং সাপ্তাহির ছুটির দিনে আদিরাকে নিয়ে এসে থাকবে। মাস্টার্সের ক্লাস তো রাতে হয় আর দিনে জব করবে। জবের অফারও এসেছে। সে যেহেতু ইঞ্জিনিয়ারিং লাইনে আছে।
আদিরার বাবা-মা এসে মারসাদের বাবা, দাদী সবার সাথে দেখা করে গেছে। মিসেস মনিকা প্রতিটা সময় নিজেকে তিলে তিলে অবহেলিত ভাবছে। কেউ তার খোঁজখবর নিতে আসে না। আদিরার বাবা-মা, আদিরা টুকটাক কুশল বিনিময় করেছে এই যা। মিসেস মনিকা সিদ্ধান্ত নিলেন তিনি চলে যাবেন। এখানে থেকে আর কারও জীবন দুর্বিষহ করবেন না।
গ্রামের দোকান বেঁচার টাকা দিয়ে শহরে এসে আদিরার বাবা একটা ছোটো দোকানঘর ভাড়া নিয়েছে। তাতে এখন নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র বিক্রি করে। মুদির দোকান ঠিক করতে আদিরাও তার জমানো টাকা দিয়েছে সাথে মারসাদ পরোক্ষভাবে দিয়েছে। মারসাদের কাছ থেকে আদিরার বাবা আর কোনো টাকা-পয়সা নিতে ইচ্ছুক নয় বলে মারসাদ আদিরাকে মাধ্যমে দিয়েছে। আদিরাও তাতে মানা করেছিল কিন্তু মারসাদতো শোনার পাত্র না!
_______
আদিরা ও মাহি জুলোজি ডিপার্টমেন্ট থেকে বের হচ্ছে। মারসাদরা ডিপার্টমেন্টের রাস্তায় দাঁড়িয়ে গল্প করছে। এখন গ্যাপ টাইম তাই ওরা সকলে ভার্সিটিতেই ঘুরবে। আজ বছর গড়ালো আদিরা ও মারসাদের প্রথম কথা হওয়ার। আদিরা আজও বেগুনী রঙের সেই থ্রিপিসটাই পড়েছে। আজও সে মারসাদের “পার্পল কুইন” সেঁজেছে। এখন সে সত্যি সত্যি মারসাদের কুইন। ডিপার্টমেন্টের করিডর থেকে সিঁড়িতে পা দিলো তখনি উপর থেকে একটা ভারী ফুলের টব আদিরার ডান কাঁধ ঘেষে পরল। আদিরা তাতে কাঁধে ব্যাথা পেয়েছে। “আহ্” করে আর্তনাদ করে উঠলে মারসাদরা দৌঁড়ে আসে। এমনিতে টব পরার শব্দে সব শোরগোল থেমে গিয়েছিল। মারসাদ এসে আদিরার গালে হাত দিয়ে অস্থীরতার সকথে বলল,
–তুমি ঠিক আছো? চিৎকার করলে কেনো?
কথাটা বলে সে আদিরাকে পরোখ করছো কোথাও চোট পেলে কীনা। আদিরা আস্তে আস্তে বলে,
–কাঁধে একটু লেগেছে। আর কিছু না। আপনি ব্যাস্ত হবেন না।
মারসাদ ভাঙা টবটার দিকে তাকিয়ে দোতালার দিকে তাকালো। মৃদুল পাশ থেকে এসে সন্দিহান কন্ঠে বলে,
–আদিরার সাথে ইদানীং খুব বেশিই দুর্ঘটনা ঘটছে বলে তোর মনে হচ্ছে না?
রবিন ও রাহিনও মৃদুলের সাথে সুর মেলালো। রবিন বলে,
–এই নিয়ে তিন বার। কেনো জানি আমার সাগরকে সন্দেহ হচ্ছে। সাগর এতো চুপচাপ তখনি থাকে যখন সে আড়ালে খিচুড়ি পাকায়।
মারসাদ চিন্তায় পরে গেল। মাহি মারসাদকে বলে,
–দাভাই তুই আদুকে চোখে চোখে রাখবি। ব্যাপারটা আমার ভালো ঠেকছে না। বাকি দুইটা এক্সিডেন্ট হলেও ফুলের টবটা কেনো উপর থেকে পরবে! উপরের করিডরে তো রেলিং আছে তাও ইট-সিমেন্টের।
আহনাফ শান্ত কন্ঠে বলে,
–আমার সামিরাকেও সন্দেহ হয়। সাগর হলে মারসাদের উপরও আক্রমণ করত। তাছাড়া সাগর শেষবার দেলোয়ারকে এনেছিল যাতে আদিরাকে নিয়ে দেলোয়ার ও মারসাদের দাঙ্গা বাড়ে। সে তো নিজে আক্রমণ করত না। যেহেতু এতো বেনামী আক্রমণ হচ্ছে তাও আদিরার উপর তাতে আমার সামিরাকে বেশি সন্দেহ হচ্ছে। ওইদিনের পর সামিরাকে দেখাই যায়নি। আমাদের সামনেও আসেনি।
সবাই চিন্তিত হয়ে পরল। আদিরা ভীত হরিণির মতো মারসাদের বাহুবন্ধনে আবদ্ধ।
…….
এদিকে সামিরা রাগে টেবিল ঠেলে ফেলে দিয়ে চিৎকার করে বলল,
–আরেকটুর জন্য টবটা আদিরার মাথায় পরল না। ইশ! মিস হয়ে গেলো। তোমাদের দিয়ে কোনো কাজই হবে না। আমিই যাবো এরপর। আমার রাতের ঘুম হয়না ওই মেয়েটার মারসাদের সাথে হাসিখুশি চেহারা মনে পরলে। আমার! আমার! এখন কী করব! না না। ওকে আমি মে*রে*ই ফে*ল*ব।
কথাগুলো বলছে আর নিজের চুল টানছে সামিরা। সাগর সামিরাকে এতোটা উত্তেজিত হতে দেখে ঘাবড়ে গেল। সামিরার চোখ র*ক্তবর্ণের হয়ে গেছে। সাগর ওকে শান্ত করতে জড়িয়ে ধরল। সামিরা তাও শান্ত হচ্ছে না। আস্তে আস্তে সামিরার দেহ ভর ছেড়ে দিয়ে নিস্তেজ হয়ে পরল। সাগর চিল্লিয়ে পানি আনতে বলে সামিরাকে কোলে তুলে বেঞ্চে শুইয়ে দিল।
________
কৃষ্ণচূড়া বিছানো রাস্তায় মারসাদ ও আদিরা হাত ধরে হাঁটছে। আজ আবারও সেই কৃষ্ণচূড়া আবার ওরা। মাহি, আহনাফরা অন্যদিকে গেছে। মাহির আজ ছবি আঁকতে ইচ্ছে করছে বলে আহনাফকে নিয়ে পুকুরপাড়ে বসেছে। রাহিন রিন্তির সাথে হাঁটছে আর হাসাহাসি করছে। বেচারা রবিন ও মৃদুল অসহায় চোখে কাপলদের দেখে নিজেরা ক্যান্টিনে চলে গেছে। সুমির উডবির সাথে আজ দেখা করার কথা। লোকটা খুব চেষ্টা করে এই সময় টাইম মেনেজ করেছে। সাবিহার বিয়ে হয়েছে তারপর থেকে সে হোস্টেলে থাকে না। গ্যাপ যেহেতু অনেক্ষণ তাই সে বাসায় গিয়েছে রান্না করতে।
হুট করে মারসাদ আদিরার সামনে হাঁটু গেড়ে বসে একটা কৃষ্ণচূড়া ফুল হাতে বলে,
–হেই মিসেস পার্পল কুইন! ডু ইউ ওয়ান্না বি উইথ মি ফর লাইফ টাইম?
আদিরা ঠোঁট প্রসারিত করে হাসল। সামনে পরে থাকা চুলগুলো কানের পিঠে রেখে প্রতিউত্তর করল,
–ইয়েস! অ্যাই উইল।
আদিরা মারসাদের হাতে হাত রাখলে মারসাদ হেসে উঠে দাঁড়িয়ে তার রানীর কানের পিঠে কৃষ্ণচূড়া গুঁজে দেয়।
——মাহি ছবি আঁকা বাদ দিয়ে আহনাফের হাত ধরে ঘুরছে। অর্ধের অসম্পূর্ণ চিত্রটায় একটা মেয়ে ও একটা ছেলে হাত ধরে হাঁটছে সেটার পেছোন সাইড দেখা যাচ্ছে। আশেপাশের কারুকাজ বাকি। নিরবতার মাঝে আহনাফ বলে,
–মাহিপাখি! চলো বিয়ে করে ফেলি।
মাহি তীক্ষ্ম দৃষ্টিতে আহনাফের দিকে তাকায়। তারপর বলে,
–আপনার যে চট্টগ্রাম থেকে ভালো জব অফার এসেছে আমি ভাবির কাছ থেকে শুনেছি। আপনাদের রেজাল্ট ভালো তাই গ্রাজুয়েশনের আগেই সিভি চায়। আর এখন আমায় বিয়ে করে দূরে যাবেন? নো নো। সেখান থেকে ট্রান্সফার হয়ে ঢাকায় আসবেন তারপর বিয়ে।
আহনাফ চুপ করে শুনলো। তার পরিবারও বলছে চট্টগ্রামের জবটা করতে। এক বছর মতো জব করে এক্সপিরিয়ান্স নিয়ে ঢাকায় সেটার শাখা আছে সেখানে আসতে। তাছাড়া চট্টগ্রাম ভার্সিটি থেকে মাস্টার্সও করবে। এতো দূরে যাবে তার ভয় হচ্ছে। মারসাদও বলেছে রাজি হতে। আহনাফ আর কিছু বলল না।
_______
পড়ন্ত বিকেল। কৃষ্ণচূড়া ও কনকচূড়া সজ্জিত রাস্তায় আদিরা ও মারসাদ হাঁটছিল। সামনে আইসক্রিমের বড়ো গাড়ি দেখে আদিরার আইসক্রিম খেতে মন চাইলে মারসাদ আইসক্রিম কিনছে আর আদিরা পথচারী চলার স্থান থেকে রাস্তায় নেমে দাঁড়িয়েছে কারণ আইসক্রিম ওরা এখানে বসে খাবে। এই রাস্তাতে রিকশা চলে মাঝেমাঝে প্রাইভেটকার চললেও ধীর গতিতে কারণ রাস্তায় গাছ আছে। উচ্চগতিতে চালালে নিয়ন্ত্রণ না আনলে সমস্যা হবে। দূর থেকে সামিরা গাড়ির গতি সর্বোচ্চ করে গাড়ি স্টার্ট দিলো। গাড়ি আদিরার কাছে আসার এক সেকেন্ড আগেই মারসাদ আদিরাকে টেনে তুলে ফেলল। সামিরা লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে উচ্চগতি নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে গাছের সাথে গাড়ি লাগিয়ে দিয়েছে। গাড়ি রাস্তার সাইড দিয়ে যাচ্ছিল বলেই গাছের সাথে সংঘর্ষ হয়েছে। সামিরা গাড়ির ভেতরেই মাথা ঠেকিয়ে সেন্স হারিয়েছে। আশেপাশের যে কয়জন পথচারী ছিল তারা দৌঁড়ে গেছে। মারসাদ তৎক্ষণাৎ পুলিশে খবর দিয়েছে। আধঘণ্টার মধ্যে পুলিশ আসলে সামিরাকে হসপিটালে নেয় আর গাড়ি পুলিশ কাস্টাডিতে রাখে। মারসাদ থানায় সামিরার নামে অভিযোগ লেখায়। অভিযোগ লেখানোর পরপরই পুলিশ অফিসারের ফোনে হসপিটাল থেকে ফোন আসলে হসপিটাল থেকে জানায়, সামিরা পাগলামি করছে আর বারবার “মে*রে ফে*ল*ব!” বলছে।
মারসাদ আহনাফদের সকলকে হসপিটালে আসতে বলে। সে তার ফুপিকেও ব্যাপারটা জানায়। পুলিশের সাথে মারসাদ ও আদিরা হসপিটালে গেলে সামিরা আদিরাকে দেখা মাত্র উত্তেজিত হয়ে উঠে। আদিরাকে আ*ঘা*ত করতে হাতের কাছে থাকা স্ট্রিচের ট্রেটা ছুড়েও মে*রে*ছে।
ডাক্তার সামিরার এরূপ লক্ষণ দেখে বলে দিয়েছে সামিরা মানসিক ভাবে অসুস্থ এখন। তার কাছে কেউ এই মূহুর্তে নিরাপদ নয়। সামিরার বাবা-মা, একমাত্র মেয়ের অবস্থা দেখে কান্নায় ভেঙে পরেন। মারসাদরা সবাই কিছুক্ষণ সেখানে থেকে চলে আসে। মারসাদ আদিরাকে পৌঁছে দিয়ে যায় সাগরের সাথে দেখা করতে।
সাগর ও মারসাদ মুখোমুখি বসে আছে। সাগর এখনও সামিরার ব্যাপারে জানেনা কারণ সামিরা আজকে এই স্টেপ নেওয়ার আগে ওদের জানায়নি। সাগরের মুখাবয়ব দেখে বুঝা যাচ্ছে যে সাগর বিরক্ত। মারসাদ ভাবলেশহীন ভাবে বলে,
–সত্যি করে বল তো, তোর সাথে আমার এই ভিপি পদ ছাড়া কোনো শত্রুতা আছে বা ছিল? এই ভিপি হওয়ার জন্য এতোকিছু! আর আমি তো এই পদ ছেড়েই দিচ্ছিলাম। আজ শুধু এটুকু ভাব যে সামিরাকে ডাক্তার হিপনোটাইজ করে যদি তোর নাম জানে তবে তোর স্থান হবে জেলে আর সামিরার তো পাগলাগারদে ৬ মাসের ট্রিটমেন্টের জন্য পাঠাবেই তারপর তাকে বিদেশ পাঠাবে। তখন তোকে কে বাঁচাবে? রুহুল আমিন? সে তো নিজেই পলাতক! তাকে খুঁজে পেলেই জেলে ভরা হবে নয়তো ক্র*সফা*য়ার করা হবে। তাহলে কেনো?
সাগর মারসাদের থেকে সামিরার ব্যাপারে শুনেই হতবাক হয়ে গেছে। অবাকচিত্তে বলে,
–মানে! সামিরার কী হয়েছে?
মারসাদ হাসল অতঃপর বলল,
–তোদের প্ল্যান ফ্লপ। আর তোকে জেলেও যেতে হবে। বাকিটা নিজেই জেনে নে।
মারসাদ চলে গেল। সাগর কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে বসে রইল। তার মাথায় কিছুই ঢুকছে না। সাগর আজ রাতেই চট্টগ্রাম চলে যেতে নিলে বাস কাউন্টার থেকে তাকে পুলিশ কাস্টাডিতে নেওয়া হয়। মারসাদের নির্দেশে সামিরাকে আজকেই হিপনোটাইজ করা হয়েছিল। সামিরা সবই বলেছে।
_________
তিন বছর পর,,
আজ আহনাফ ও মাহির বিয়ে। মাহি গতকাল রাতে দেরিতে ঘুমানোর কারণে বেলা ৯টা পর্যন্ত ঘুমোচ্ছে। আদিরা কয়েকবার ডেকে গেছে তাও মেয়ে উঠছে না। আদিরা এবার মাহিকে ঠেলে টেনে উঠিয়ে বসায়। তারপর বলে,
–এই তুই সাঁজগোঁজ করবি না? নাস্তাও খেতে হবে। তোর বর অলরেডি আমাকে ফোন করেই যাচ্ছে।
মাহি হাই তুলতে তুলতে বলে,
–ওহ আমার ফোনে চার্জ নেই। তাই তোমাকে ফোন করছে। যাই ফ্রেশ হয়ে আসি।
মাহি উঠে ওয়াশরুমের কাছে গেলে আদিরা বলে,
–তোর মায়ের সাথে কী আজও দেখা করবি না?
মাহি কোনো জবাব দিলো না শুধু থমকে দাঁড়িয়ে রইল। আদিরা হতাশ স্বরে বলল,
–ভাবি ফোন দিয়ে জানালো উনি নাকি আসবেন না। তুই বললে আসতে পারে। আর কতো মাহি? তোর মা হয় উনি। তিন বছর ধরে সে তোর মামার বাড়িতে থাকে। এবার তো নিয়ে আয়। উনি নাকি প্রতিদিন কান্না করেন। মারসাদ তার ছেলে না হলেও তুই তো তার নিজের মেয়ে।
মাহি প্রতিউত্তর করল,
–আমি উনাকে যেতে বলিনি। সে নিজের ইচ্ছায় গিয়েছে।
মাহি ওয়াশরুমে চলে গেল। আদিরা মলিন দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। মিসেস মনিকার খবর আদিরাকে কোনো ভাবি জানায়নি! আদিরা নিজে সবার থেকে লুকিয়ে মাঝে মাঝে যায়। তিন বছরের পাঁচ থেকে ছয়বার গিয়েছে। প্রতিবার মিসেস মনিকা আদিরা হাত ধরে ক্ষমা চায় আর কাঁদে। আদিরার কিইবা বলার আছে!
_____
বরযাত্রী চলে এসেছে। সাবিহা তার ছোটো ছেলেকে মাহির কোলে বসিয়ে দিয়ে দৌঁড় দিয়েছে। বেচারি মাহি বাচ্চা সামলাতে পারে না। সে পিচ্চিটার দিকে করুন দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। এক বছরের বাচ্চাটা নিজের হাত এমন ভাবে চুষছে যেনো হাতে মধু লেগে আছে। মেয়ে পক্ষে মারসাদের বন্ধুদের মধ্যে শুধু মৃদুল আছে। বাকিরা আহনাফের পক্ষে। নিলয়ও রাত্রীকে নিয়ে এসেছে সাথে ওদের দুই বছরের মেয়ে। মৌমি ও আশিক মেয়ে পক্ষে এসেছে। মৌমির আড়াই বছরের ছেলেটা বারবার রাত্রির মেয়ের চুল টানছে আর বাচ্চাটা কেঁদে একাকার।
গেটে মৃদুল, আশিক, মৌমি, সাবিহা, রিন্তি, আদিরা সবাই দাঁড়িয়েছে। ওদের দাবি পঞ্চাশ হাজার না দিলে গেট ছাড়বে না। অর্ণি, আহনাফের ভাবি, সুমি, রাহিন ও রবিন আহনাফের পক্ষ থেকে তর্কে লেগে গেছে। সুমি দুই বছরের মেয়েটাও তার বাবার কোল থেকে তর্কে শামিল! তর্কের মাঝে হুট করে মৃদুলের অর্ণির দিকে ভালো করে নজর গেলে মৃদুল পলকহীন দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। অর্ণি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে রসায়ন নিয়ে পড়াশোনা করে। হোস্টেলেই থাকে সে। মৃদুল অর্ণিকে কখনও ওইরকম নজরে দেখেনি কিন্তু আজ তার নজরে প্রেম প্রেম ভাব পরিলক্ষিত।
কোনোমতে কিছু এমাউন্ট কমিয়ে আহনাফরা প্রবেশ করল। মারসাদকে কোথাও দেখা যাচ্ছে না। আদিরা বিয়ে বাড়ির কয়েক জায়গায় চক্কর দিয়েও খুঁজে পাচ্ছে না। কল করেও পাচ্ছে না। আদিরা কাউকে বলতেও পারছে না। মৃদুল কয়েবার বলে গেছে। আহনাফও মারসাদকে খুঁজছে। এখন কাজি বিয়ে পড়াবে কিন্তু মারসাদ নেই। মাহিও তার দাভাইকে খুঁজছে। মিস্টার আরসাদ বলল,
–আদিরা মা, ছেলেটাকে একটু ফোন করো না। কই গেলো এই সময়ে?
আদিরা ইতস্তত করে বলল,
–বাবা আমি তাকে ফোন করেও পাচ্ছি না।
সবাই চিন্তিত তখন মারসাদ বলে উঠল,
–কাজী সাহেব বিয়ে পড়ান। মেয়ের মা, ভাই দুইজনেই হাজির।
সবাই চমকিত হয়ে চাইলো। মারসাদ মিসেস মনিকাকে ধরে ধরে আনছেন। মিসেস মনিকা লজ্জিত মুখে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে। আদিরা অবাক হয়ে মারসাদের কাছে গেলে মারসাদ আদিরার গালে হাত দিয়ে বলে,
–তোমার সকালের সব কথা আমি শুনেছি। তিন বছর তো উনি শাস্তি পেলেনই। আমি আর রাগ ধরে রাখতে পারলাম না। তিনি আমাদের অবহেলা করেছে ঠিক কিন্তু ট*র্চা*র করেনি। ভালোবাসেনি। আপিলিকে পর ভেবে আপিলির মৃ*ত্যুর ভাগিদার হয়েছে ঠিক কিন্তু নিজে মা*র*তে চাননি। তিনি যদি আপিলির মনের খবর রাখতেন তবে আজ আপিলি আমাদের মাঝে থাকত। আমি তাও তাকে আজ আমার ছোটোবোনের জন্য ফিরিয়ে আনলাম।
মাহি স্টেজ থেকে নেমে দৌঁড়ে এসে মারসাদকে জড়িয়ে ধরল। মাহি কাঁদছে। মারসাদ ওকে শান্তনা দিচ্ছে আর নিজের অশ্রু লুকাচ্ছে। মারসাদ এবার মাহিকে সোজা করে দাঁড়া করিয়ে মিসেস মনিকার দিকে ইশারা করল। মাহি তার মাকেও জড়িয়ে ধরল। মিসেস মনিকা মারসাদ ও মিস্টার আরসাদের কাছে হাতজোড় করে ক্ষমা চাইল।
আহনাফও আজ অনেক খুশি। সকল প্রতিবন্ধকতা আজ শেষ। মাহি এসে আবার নিজের জায়গায় বসে। কাজী বিয়ে পড়ানোর পর সামনের ফুলের পর্দা সরিয়ে আহনাফ মাহির ললাটে নিজের অধর স্পর্শ করালো। আহনাফ এবার উঠে দাঁড়িয়ে বলল,
–এটেনশন প্লিজ। এখানে আরো একটা বিয়ে হবে।
সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে আহনাফের দিকে। আহনাফ হেসে বলল,
–মারসাদ ও আদিরার আবার বিয়ে হবে।
সবাই উচ্ছাস প্রকাশ করল আরে আদিরা ও মারসাদ অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। আহনাফ ও মাহি গিয়ে ওদের টেনে আনল। কাজি ওদের আবার বিয়ে পড়াচ্ছে। আদিরা লাজুকলতার ন্যায় নুইয়ে গেছে। মাহি আদিরাকে বারবার পিঞ্চ করছে আর হাসছে।
মাহিকে বিদায় দেবার সময় অনেক আবেগময় পরিবেশ তৈরি হলো। মিস্টার আরসাদ মেয়েকে বুকে জড়িয়ে নিয়ে এরপর নিজের রুমে চলে গেছেন একটু একা থাকতে। মাহি যাবার সময় অনেক কেঁদেছে। মারসাদ আহনাফকে জড়িয়ে ধরে তার বোনকে ওর হাতে তুলে দিয়েছে। এখনও বিদায় পর্ব চলছে।
মৃদুল এর ফাঁকে অর্ণির হাত ধরে টেনে এনে বলে,
–উইল ইউ ম্যারি মি?
অর্ণি ভ্রুঁ কুঁচকে তাকিয়ে থেকে মুচকি হেসে চলে গেছে। মৃদুল মাথা চুলকে সেও চলে গেছে।
……….
চাঁদের আলোয় মারসাদ ও আদিরা বসে আছে। পূর্ণ চাঁদ আজ তার স্নিগ্ধ জোৎসনা নিয়ে এসেছে। আঁধারিয়া অম্বর আজ আলোকিত চন্দ্রমার জোৎসনায়। আদিরা মারসাদের কাঁধে মাথা রেখে বলে,
–আজকে বাচ্চাগুলো দেখেছেন? কী কিউট ওরা। আপনার শুধু ভয় আমাকে নিয়ে। এবার আমি বেবি নিবোই। প্লিজ প্লিজ। রাত্রি আপুর বাবুটা, সুমি আপুরটা, সাবিহারটা। ইশ!
মারসাদ হতাশ স্বরে বলে,
–আমার সত্যি ভয় করে। আমার মায়ের, আপিলির মতো যদি তুমিও! আমি সহ্য করতে পারব না।
আদিরা আহত হলো। মিনমিন স্বরে বলল,
–আপনি শুধু রাজি হোন। আর আমি চেকআপ করিয়েছি। আমার শরীর প্রেগনেন্সির জন্য ফিট। আর তাছাড়া….
মারসাদ ভ্রুঁ কুঁচকালো। আদিরা আমতা আমতা করে বলল,
–অ্যাই এম প্রেগনেন্ট। প্লিজ প্লিজ রাগ করবেন না। ডাক্তার বলেছে কোনো কম্পিলিকেশন নেই।
মারসাদ কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে আদিরাকে জড়িয়ে ধরে তারপর ভাঙা কন্ঠে বলে,
–আমার এক শহর প্রেম তোমার নামে। সেই শহরে তুমিহীনা আমি অসহায়। তাই আমি চাইনি কিন্তু আমি রাগ করব এমনও না।
আদিরা নিঃশব্দে হাসল। ওদের প্রেমের শহরে ভালোবাসায় পূর্ণ। জোৎসনা যেনো আরও প্রখর হলো। এক শহর প্রেম আরও রঙিন হলো।
সমাপ্ত