এক_শহর_প্রেম?,02,03

0
992

#এক_শহর_প্রেম?,02,03
লেখনীতেঃ #নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_২

রাগে অগ্নিশর্মা হয়ে সামনে থাকা বেঞ্চে সজোরে লা থি দিয়ে ফেলে দিলো মারসাদ। অডিটোরিয়ামের উপস্থিত সকলে ভয়ে ভীতসন্ত্রস্থ হয়ে নিজ নিজ স্থানে থেমে যায়। মারসাদ ইশরাকের রাগের পরিসীমা কতোটুকু এটা সকলেরই জানা। এক বছর আগেও এই অডিটোরিয়াম সাক্ষী ছিল তার রাগের। মারসাদ হুংকার ছেড়ে বলে,

–ওই মেয়েটাকে এই মূহুর্তে আমার সামনে দেখতে চাই। ওর এতো বড়ো সাহস যে মারসাদের কথা উপেক্ষা করে! সেলিম যা জুলোজি ডিপার্টমেন্টের ফার্স্ট ইয়ারের ক্লাস থেকে খুঁজে নিয়ে আয় ওই মেয়েকে।

মারসাদের চিৎকারে সেলিম বিনা প্রতিউত্তরে বেরিয়ে যায় আদিরাকে খুঁজতে। সেলিম মারসাদের এক ব্যাচ জুনিয়র। মারসাদকে অনেক সম্মান করে। তাছাড়া সেলিমের বাবার কিডনির অপারেশনের টাকা মারসাদ নিজে দিয়েছে। সেলিম অনেক কৃতজ্ঞ মারসাদের প্রতি।
সেলিম বেরিয়ে যাবার সাথে সাথে অডিটোরিয়ামে সামিরার আগমন ঘটে। সামিরা অট্টহাসি ও হাতে তালি দিতে দিতে অডিটোরিয়ামে প্রবেশ করে। মারসাদ সামিরাকে দেখে দাঁতে দাঁত চিপে হাত মুঠ করে দাঁড়িয়ে আছে। সামিরা মারসাদের সামনে দাঁড়িয়ে তাচ্ছিল্য হাসে তারপর বলে,

–দেখলে তো? মেয়েটা তোমাকে পাত্তাই দিলো না। এখনও সময় আছে মারসাদ বেবি। আমাকে ডান্স পার্টনার বানাও। ওসব সস্তা থা’র্ডক্লাশ মেয়েদের পেছোনে পরে থেকে নিজের পারফরমেন্স নষ্ট করো না। উই বোথ ক্যান বি এ গ্রেট কাপল লাইক বিফোর।

মারসাদ সামিরার দিকে এক কদম এগিয়ে গিয়ে হিঁসহিসিয়ে বলে,

–নেভার এভার এগেইন। জাস্ট স্টে এওয়ে ফর্ম মি। আমাকে রাগিও না। নিজের লেহাজে থাকো। ভুলে যেও না তোমাকে সহ্য করার কারণ কী!

মারসাদ আরেকটা বেঞ্চ ধা’ক্কা দিয়ে অডিটোরিয়াম থেকে বেরিয়ে যায়। পথিমধ্যে সেলিম ভয়ে ভয়ে জানায়,

–ভাই, পুরো জুলোজি ডিপার্টমেন্ট ফাঁকা। কেউ নেই। মনে হয় মেয়েটা চলে গেছে।

মারসাদ রাগে দেয়ালে ঘু’ষি মারে। মারসাদকে শান্ত করতে পারবে এখন তার বেষ্টফ্রেন্ড আহনাফ ও মারসাদের ছোট বোন মাহি। কিন্তু মাহি এখন চারুকলা ভবনে। সুযোগ পেলেই মাহিরা চারুকলা ভবনে চলে যায় ছবি আঁকতে এবং তখন নিজের ফোন বন্ধ করে রাখে। মাহিও এবার এই ভার্সিটিতে নতুন ভর্তি হয়েছে জুলোজি ডিপার্টমেন্টে। উপায় না পেয়ে আহনাফকে ডাকতে ফুটবল মাঠে দৌড়ে যায় একজন।

______

আদিরা পায়ে হেঁটে ঠিকানা খুঁজতে খুঁজতে বহুকষ্টে ঠিকানা খুঁজে পেয়েছে। প্রায় চল্লিশ মিনিট সে এই গলি থেকে ওই গলি খুঁজে বেরিয়েছে। এতো বড়ো বড়ো অট্টালিকার ভীরে ছোট্ট চড়ুইপাখির মতো সে। আদিরা স্টুডেন্টের বাসার ড্রয়িংরুমে বসে আছে। পড়ানোর সময় বিকেল পাঁচটা। আদিরা স্টুডেন্টের মাকে আস্তে করে ডাক দিয়ে বলে,

–আন্টি কিছু মনে করবেন না। আমাকে নামাজের জন্য একটা জায়নামাজ দিবেন? আসলে আমি ভার্সিটি থেকে মেসে গিয়ে নামাজটা পড়ে আসতাম কিন্তু আজ প্রথমবার আসবো আর চিনিও না তাই আরকি..

স্টুডেন্টের মা খুশিমনে আদিরাকে ভেতরের রুমে নিয়ে যায় তারপর নামাজের জায়নামাজ দেয়। আদিরা সেখানে নামাজ আদায় করে নেয়। এরপর আদিরা তার ক্লাস থ্রি তে পড়ুয়া স্টুডেন্টকে পড়ায়। পড়ানো শেষে স্টুডেন্টের মা আদিরাকে বলে,

–তুমি যদি সপ্তাহে চারদিন একটু বেশি সময় নিয়ে পড়াও তবে আমি তোমাকে আরও দেড় হাজার টাকা বাড়িয়ে দিবো। যে তোমাকে ঠিক করে দিয়েছে সে সপ্তাহে তিন দিন ঘরি ধরে এক ঘন্টা পড়াবে বলেছিল। তাই আমি কম করে বেতন বলেছি। জানি একটু বেশিই কম হয়েছে তবে ক্লাস থ্রির বাচ্চার ছয়টা সাবজেক্ট এক ঘন্টায় কভার করা সম্ভব না। তারউপর মাত্র তিন দিন পড়াবে। তুমি যদি সপ্তাহে চার দিন কম করে হলেও দেড় ঘন্টা করে পড়াও তবে আমি তোমাকে চার হাজার টাকা করে দিবো। রাজী তুমি?

আদিরার মনে ইদের চাঁদ দেখার মতো খুশির ঝিলিক। তার জন্য তবে ভালোই হয়। আরেকটা টিউশন জোগাড় করতে পারলে সে বাড়িতেও কিছু টাকা পাঠাতে পারবে। যে মেসটাতে থাকে সেখানে এক রুমে ৬ জনের মতো থাকে তাই ভাড়া কম লাগে। আদিরা রাজী হয়ে যায়।

টিউশন শেষে আদিরা মেসে ফিরে ক্লাসের পড়া যেটুকু নোট করতে পেরেছে সেটুকু পড়ে নেয়। বই কেনার টাকা জোগাড় হয় নি এখনও। লাইব্রেরি থেকে এখন নিয়ে নিয়ে পড়তে হবে।

_____পরেরদিন,,
আদিরা ভার্সিটির গেট দিয়ে ঢোকার পর সামনে রাস্তায় কৃষ্ণচূড়া গাছের নিচ দিয়ে যাওয়ার সময় মাটিতে বিছিয়ে থাকা রক্তিম ফুলগুলো থেকে একটা কৃষ্ণচূড়া ফুল তুলে নিতে হাঁটু নুইয়ে বসেছে মাত্র তখনি একটা বলিষ্ঠ হাত সেই ফুলটা তুলে নেয়। আদিরা চমকে যায়। মাথা উঁচু করে সামনে গতকালকের ছেলেটাকে দেখে ভয় পেয়ে যায়। ছেলেটা মুখে বাঁকা হাসি ফুটিয়ে কৃষ্ণচূড়া ফুলটাকে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখছে। আদিরা উঠে দাঁড়িয়ে যায়। তার গতকালকের কথা মনে পরে যায়। ভয়ে ওড়না খিঁচে আছে সে। চলে যাওয়ার জন্য এক পা বাড়াবে তখনই মারসাদও উঠে দাঁড়ায়। তারপর বাঁকা হাসি দিয়ে বলে,

–পার্পল কুইন দেখছি আজ কৃষ্ণচূড়ার রঙে নিজেকে রাঙিয়েছ! এতো আনন্দ মনে? চলো। আনন্দ আরেকটু বাড়িয়ে তুলি নাচের মাধ্যমে। আনন্দে মানুষ যেমন নাচে তেমনি তুমিও নাচবে। চলো চলো।

আদিরা ঢোক গিলে এক কদম পিছিয়ে যায়। আশেপাশে আর কেউ নেই। আরেকটু দূরে মানুষজন আছে। এমনিতেও একটু জলদি এসেছে লাইব্রেরিতে যাওয়ার জন্য। আদিরাকে পিছিয়ে যেতে দেখে মারসাদ চমৎকার হাসে তারপর শান্ত স্বরে বলে,

–বাহ! এতো ভয় পাও? তাহলে কাল কেনো অডিটোরিয়ামে আসলে না? আমাকে ভয় পেলে তো আমার কথা মানার ছিল। তাই নয় কী?

আদিরা হাত দিয়ে নাকের উপর জমা বিন্দু বিন্দু স্বেদকণা মুছে নেয়। সে আরেক কদম পিছিয়ে যায়। এরপর মারসাদও সামনে এগোয়। এভাবে আর দুয়েক কদম পেছোনোর ফলশ্রুতিতে কৃষ্ণচূড়া গাছের সাথে পিঠ ঠেকে যায় আদিরার। মারসাদ আদিরার থেকে এক হাত দূরত্বে গাছের সাথে নিজের ডান হাত দিয়ে ভারসাম্য রক্ষা করে দাঁড়ায়। মারসাদ ঝুঁকে আসে আদিরার দিকে। তার উত্তপ্ত গরম নিঃশ্বাস আদিরার চোখে-মুখে পরছে। আদিরা জড়োসরো হয়ে নিজের ব্যাগ ধরে দাঁড়িয়ে আছে। পা তার যেন বরফের ন্যায় জমে গেছে। ছুটে পালানোর মতো সাহস ও শক্তি পাচ্ছে না। মারসাদ আদিরার মুখাবয়বে ভয়ের রেশ দেখে বাঁকা হেসে বলে,

–এতো ভয় পেয়ো না মেয়ে। যাও তোমাকে মাফ করতে পারি একটা শর্তে। যদি তুমি এই মূহুর্তে আমার সাথে চলো। এখন ভেবে নেও কী করবে? আমি তো তোমাকে অপশন দিলাম। হয় এখন আমার সাথে যাবে নয়তো কঠিনতম শাস্তির জন্য নিজেকে প্রস্তুত করো।

আদিরা ভয়ে জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে থেমে থেমে বলে,
–কাল আমার খুব গুরুত্বপূর্ণ কাজ ছিল ভাইয়া। আমি এমনিতেও নাচ জানি না। প্লিজ আমাকে মাফ করে দিন। ওই আপুটার সাথে নাহয় নাচুন বা অন্যকারো সাথে। আমাকে ছেড়ে দিন।

মারসাদ এবার আদিরার ডান হাতের কব্জি ধরে খপ করে। আদিরা হতভম্ব হয়ে যায়। আদিরা হাত ছাড়ানোর জন্য অনেক কসরত করছে। চিৎকার করতে ইচ্ছে করছে কিন্তু মারসাদের ক্রমশ লালাভ ধারণ করা নয়নযুগল দেখে তার কণ্ঠনালী রুদ্ধ হয়ে গেছে। মারসাদ আদিরাকে টেনে অডিটোরিয়ামের পেছোনের দরজার দিকে নিয়ে যাচ্ছে। পেছোন দিক দিয়ে মানুষ কম থাকে। আদিরা হঠাৎ ভয়ে জ্ঞান হারায়।
মারসাদ যখন টের পেলো আদিরার হাত শিথিল হয়ে আসছে, তৎক্ষণাৎ সে পেছোন মুড়ে যথাসম্ভব আদিরাকে আগলে নেয়।

চলবে ইন শা আল্লাহ্,
আদারা থেকে আদিরা করে দিয়েছি নায়িকার নাম।? মারসাদ নাম বদলাতে পারবো না দুঃখিত। ভুল ত্রুটি মার্জনীয়।

#এক_শহর_প্রেম?
লেখনীতেঃ #নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_৩
মৃদু জলের ছিঁটায় জ্ঞান ফিরলো আদিরার। আদিরার পাশে বসা দু’টো মেয়ে। দু’জনেই উৎকণ্ঠিত হয়ে আদিরার চোখ খোলার আশায় আছে। পিটপিট করে মুদিত আঁখিজোড়া মেলল আদিরা। আদিরাকে চোখ মেলতে দেখে মেয়ে দুটোর থেকে সুমি নামে একজন উচ্ছাসিত কন্ঠে বলে উঠে,

–যাক আলহামদুলিল্লাহ চোখ মেলেছে। মারসাদকে ডাক দে তো মৌমি।

মৌমি মারসাদকে ডাক দিতে যায়। সুমি আদিরার ওড়না ঠিক করে দেয়। আদিরা কোথায় আছে সেটা বোঝার চেষ্টা করছে তারপর উঠে বসে। মৌমির থেকে খবর জানতে পেরে মারসাদ অডিটোরিয়ামের ভিতরে যেতে নিলে আহনাফ মারসাদের হাত ধরে আটকিয়ে বলে,

–ভিতরে গিয়ে শান্ত হয়ে কথা বলবি। মেয়েটা তোর কারণেই অসুস্থ হয়েছে মনে রাখবি। চল।

মারসাদ মৌন সম্মতি দেয়। ভেতরে গিয়ে মারসাদ সহ আহনাফরা আদিরার সামনে দাঁড়ায়। মারসাদ পকেটে হাত গুঁজে নম্র কন্ঠে বলে,

–এখন ঠিক আছো?

আদিরা মাথা নিচু করে আছে। মারসাদের কথার প্রতিউত্তর সে ঘার এলিয়ে দেয়। মারসাদ কন্ঠের স্বাভাবিকতা রক্ষা করে সুধায়,

–আমার সাথে ডান্সে পার্টিসিপেট করলে সমস্যা কী?

আদিরা জড়োসরো হয়ে বসে আছে। নতমস্তকে আড়চোখে একবার মারসাদকে দেখে নিলো অতঃপর মৌন রইল। কিন্তু মারসাদের অতীব উৎসুক ও অধৈর্য মনভাব কি আর মৌন থাকতে দেয়? আদিরা ভীত স্বরে বলল,

–আমি গ্রাম থেকে এসেছি পড়াশোনার জন্য। আমি নাচ জানি না। জীবনে ভেজাল নামক পরগাছাকে আর যুক্ত করতে চাই না।

মারসাদ ধাতস্থ হলো। একটা বেঞ্চ টেনে বসে খুব শান্ত স্বরে বলে,
–ঝামেলাহীন জীবন হয় না আদিরা। প্রতিটা মানুষের জীবনে বহু চড়াই উৎরাই পার করতে হয়। এরপর সফল হলে সেই সফলতাতে অন্যরকম এক জয়ের আভাস পাওয়া যায়। কারও জীবন ভেজালহীন হয় না। তুমি জড়াতে না চাইলেও সেটা নিজ থেকে জড়িয়ে যাবে।

আদিরা চুপ করে মাথা নিচু করে বসে আছে। আদিরার পাশে সুমি চুপচাপ আদিরার মনোভাব বুঝার চেষ্টা করছে। মারসাদ উঠে দাঁড়িয়ে কপালে পরে থাকা চুল গুলো নাড়তে নাড়তে বলে,

–তোমাকে আমার সাথে দুই মিনিটের জন্য হলেও ডান্স করতেই হবে। তোমার জন্য আমি সবচেয়ে সহজ ডান্স স্টেপ চুজ করবো। আর এতে হার-জিতের কোনো প্রশ্ন নেই। সো বি রেডি। তোমার ক্লাস সকাল দশটায় তাই না? এখন বাজে নয়টার মতো। আধঘণ্টা প্র্যাকটিস করে তারপর ক্লাসের জন্য বের হবে। দশ মিনিট রেস্ট করো। এরপর বিকেলে আবার কিছুক্ষণ প্র্যাকটিস করবে।

সুমি, মৌমিকে ও রাত্রীকে আদিরার কাছে রেখে মারসাদরা বেরিয়ে যায়। আহনাফ বাহিরে গিয়ে পিলারের সাথে হেলান দিয়ে মারসাদের মুখোমুখি হয়ে বলে,

–যাক তোর রাগে কন্ট্রোল ছিল। নাছোড়বান্দা তুই যে ওই মেয়ের সাথেই ডান্স করবি সেটা তোর জেদ দেখেই বোঝা যাচ্ছে। আজ যেমন সুন্দর করে বলেছিস তেমনি সুন্দর ব্যাবহার করবি। তাহলে কেউ তোকে ভয় পাবে না আর আমিও একটু শান্তিতে প্রেম করতে পারবো!

শেষের লাইনটা আহনাফ বিড়বিড় করে বলে। আহনাফ কাউকে ভালোবাসে অনেকগুলো বছর ধরে। সেই মেয়েটির সকল বেখেয়ালি মনোভাব সে ভালোবাসে। সকল দুষ্টুমি সে ভালোবাসে। এলোকেশী মেয়েটি তার অর্ধ যুগের প্রেম।

মারসাদের আরেক বন্ধু মৃদুল চিন্তিত স্বরে বলে,
–কিন্তু দোস্ত ওই সামিরা? তোদের ডান্স পার্টিসিপেট নষ্ট করতে আদিরাকে কিছু করবে নাতো? মেয়েটা অনেক সরল। সামিরা আবার কী করবে কে জানে!

রিহান হাই তুলতে তুলতে বলে,
–কী আর করবে! একটু পর মারসাদ বেবি! মারসাদ বেবি! করতে করতে এখানে এসে ঝুলে পরবে। শা*লি চিপকু কাহিকা।

মারসাদ সহ সকলে হেসে উঠে কিন্তু একজন বাদে। বেচারা মুখ দিয়ে নখ কাটছে খুব অস্থিরতার সাথে। মৃদুল ওকে ধা’ক্কা দিলে সে হকচকিয়ে উঠে। মৃদুল মুখ লটকিয়ে বলে,

–কি-রে ভাবুক ভদ্র ছেলে রবিন? এতো সুন্দর করে মুখকে নেইলকাটার বানাতে কে বলছে? নখ গুলোকেও কী সুন্দর ক্যাটরিনা কাইফ শেইপ দিচ্ছিস। তা বলি আপনি কী এই গ্রহে আছেন না-কি চলিয়া গিয়াছেন?

রবিন ভয়ে ভয়ে বলে,
–সাগরর! সামিরা যদি সাগরকে দিয়ে কিছু করায়? মারসাদ তো সেচ্ছায় ভিপির জন্য দাঁড়াবে না। সাগর কিন্তু দাঁড়াবে। আর আশিক ভাইয়ের সাথে সাগরের ভালোই সখ্যতা।

রবিনের ভাবনা অহেতুক নয়। ভিপি আশিকের সাথে সাগর ভালোই ভাব জমাচ্ছে তা পরিলক্ষিত হচ্ছে (ভার্সিটির থেকে বেরিয়ে গেলে ভিপির পদ অন্যকাউকে দিতে হয় এটাই জানি)। আর সাগর সামিরাকে পছন্দও করে। আহনাফ ডোন্টকেয়ার মুডে বলে,

–মারসাদের বদলে আমি দাঁড়াবো। মারসাদ একেবারে দাঁড়াবে না এটা বলে নি। মারসাদ শুধু ভিপি হতে চায় না। কিন্তু আমি দাঁড়াবো। সাগর যদি ভিপি হয় তবে মেয়েদের জীবন শেষ করে দিবে। সাইন্সের সকল বিভাগ থেকে আমি দাঁড়াবো। বাকিগুলো থেকে কে দাঁড়াবে জানি না। মারসাদকে সাইন্স গ্রুপ থেকে নির্বাচিত করা হয়েছিল। এরপরই সে জানায় দেয় সে হবে না। তবে ব্যাপারটা সাগর পর্যন্ত কে নিলো বুঝলাম না। সামিরা নয়তো?

মারসাদ সামনের ছোট দেয়ালের উপর উঠে বসে মুক বাঁকিয়ে বলে,
–উহু। সামিরা এই ব্যাপারে জানে না। আর আশিক ও রাসেল ভাইয়ের বলার কথা না। যেই বলুক আর সাগর জানলেও আমাদের সমস্যা নেই। আশিক ও রাসেল ভাই রাজি হয়েছেন তোকে আমার জায়গায় দিতে। সো চিল। কাল তো আর্টস ডিপার্টমেন্ট থেকে দ্বিতীয় বর্ষের কয়েকজন ছেলে মেয়ে এসে সাগরের নামে বিচার দিলো। ওরা এখনও জানে না আমি তোকে আমার জায়গা দিবো। তবে ব্যাপার না। আমার বেস্টফ্রেন্ড আমার চেতনার প্রতিচ্ছবি।

পনেরো মিনিট পর মারসাদ অডিটোরিয়ামের ভিতরে যায়। আদিরাকে প্রথমে ডান্স স্টেপ সুমি ও মৌমি দেখায়। খুব সহজ স্টেপ। আদিরাকে এতক্ষণ ওরা বুঝিয়ে সুজিয়ে রাজি করিয়েছে। ডান্স স্টেপের জন্য মারসাদ আদিরার হাত ধরলে আদিরা কেঁপে উঠে যা দেখে মারসাদ বাঁকা হাসে। এরপর খুব কম ছুঁয়ে প্র্যাকটিস করে। আদিরা ততোক্ষণ দম আটকে ছিল। প্রতিটা স্টেপে সে চোখ মুখ খিঁচে ছিল। স্টেপ শেষ হওয়ার সাথে সাথে আদিরা অডিটোরিয়াম থেকে ব্যাগ নিয়ে দৌড়ে বেরিয়ে যায়। মারসাদ বাঁকা হেসে জোড়ালো স্বরে আদিরাকে উদ্দেশ্য করে বলে,

–বিকেলে যদি তোমাকে এখানে না পাই তবে তোমার মেস থেকে তোমাকে তুলে আনবো মেয়ে। মনে রেখো। ভদ্র মেয়ের মতো চলে আসবা।

আদিরা কথাটা শুনলো। তার হৃৎপিন্ড দ্রুত গতিতে চলছে। অডিটোরিয়ামের বাহিরে এসে হাঁফ ছেড়ে বাঁচে। দশটা বাজতে আর দশ মিনিট বাকি। আদিরা ক্লাসেই যায়। লাইব্রেরীতে আর যাওয়া হলো না। ক্লাসে গিয়ে মাঝামাঝি সিটে বসে। হাতে গোনা দশ-বারো জন বাদে সবাই ক্লাসের বাহিরে। ক্লাসের আগে দিয়ে আসবে। আদিরা জানালা দিয়ে অদূরে কড়ই গাছটার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। কড়ই গাছে সাদা গোলাপির মিশ্রণে ফুলগুলো তার বরাবর ভালো লাগে। ছোটোবেলার বহু স্মৃতি আছে এগুলো নিয়ে। এসব ভাবতে ভাবতেই ক্লাসের সময় ঘনিয়ে এসেছে। কেউ একজন তার পাশে এসে হড়বড়িয়ে বসে তাকে স্পর্শ করে ডাক দিয়ে বলে,

–হেই তুমি আদিরা? কেমন আছো আদিরা?

আদিরা চমকে তাকালো। ভাবনার ব্যাঘাত ঘটায় চমকে গিয়েছিল। নিজেকে আত্মস্থ করে হাসি মুখে জবাব দেয়,

–আসসালামু আলাইকুম আমি আদিরা। আপনি কে?

মেয়েটা তার স্বভাবসুলভ হাসলো। তারপর আদিরার গাল টেনে বলল,
–তুমি তোমার নামের মতোই কিউট। একদম পিচ্চি পিচ্চি মায়াবি। ফর্সা না হলেও তোমাকে পুতুলের মতো লাগে। উজ্জ্বল বর্ণে চিকচিক করে। তোমাকে আমি আমার ক্যানভাসে আঁকবো। তোমাকে দেখাবো। সোনালি আভা তোমার মুখশ্রীতে।

আদিরা অবাক হয়। এভাবে তার প্রশংসা কেউ করে নি। তার মা বলতো, আদিরাকে নাকি রোদ ও বৃষ্টিতে পরীর মতো লাগে। কিন্তু মায়েদের কাছে তো নিজের সন্তান সবসময় সুন্দর। আদিরা মেয়েটিকে মুচকি হাসি উপহার দেয়। পাশ থেকে আরেকটি মেয়ে বলে উঠে,

–মাহি, আমাকে একটা এঁকে দিবে? আমার তোমার ছবি গুলো খুব ভালো লাগে।

মাহি খুশি মনে বলে,
–অবশ্যই কেন নয়। তবে আমি কিন্তু আমার ফ্রেন্ড ও ক্লোজ ছাড়া কারওটা আঁকি না। আর সবাইকে ফ্রেন্ড বানাইও না। তবে তোমাদের আমার খুব খুব ভালো লেগেছে। লেটস ফ্রেন্ডস।

ওরা ফ্রেন্ডশিপ করে নেয়। ক্লাসে টিচার আসলে ওরা ক্লাসে মনোযোগ দেয়।

চলবে ইন শা আল্লাহ্,
ভিপি বিষয়ে আমি ভুলও হতে পারি। ভুল ত্রুটি মার্জনীয়।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here