এখানে বেলি ফুলের মালা-২০

0
208

এখানে বেলি ফুলের মালা-২০
———————

নিজেকে কাপুরুষ মনে হচ্ছে জাদিদের। এমন একজন পুরুষ যে প্রেমিকাকে রক্ষা করতে পারে না, যে ধরা খেয়ে মুখ লুকিয়ে রাখে। সকালে সালমা ইসলামকে দেখে ভয়েতে আর মুখোমুখি হওয়ার সাহস করতে পারেনি জাদিদ। সে জানে সালমা ইসলাম ওদের পরিবারের কাউকে পছন্দ করেন না কারণ ওরা যৌথ পরিবারে থাকে। আগেই তো আবিরের চাচাতো ভাই হওয়ায় পছন্দ করতেন না। এখন নিশ্চই সহ্যই করতে পারেন না ওকে।

জাদিদ বুঝতে পারছে না ওর কি করা উচিৎ। সালমা ইসলামের শীতল মুখখানা দেখে ওর প্রাণ উড়ে গেছিলো। অজানা এক কারণে সালমা ইসলামকে সে প্রথম দিন থেকে খানিকটা ভয় পায়। প্রথম দিন, যেদিন আবির আর বিনীর দিন ছিল। ঠিক এই কারণেই সে সালমা ইসলামের মুখোমুখি হতো না। অথচ শেষমেষ তার মেয়েকেই ভালোবেসে ফেললো।

জাদিদের এখন কি করা উচিৎ ? আসফিয়ার সঙ্গে কি কথা বলবে ? কিন্তু তার জন্য তো তাকে ওদের বাড়ির ল্যান্ডলাইনে ফোন করতে হবে। যদি ভাগ্য সুপ্রসন্ন নাহয় আর ফোনটা সালমা ইসলাম ধরেন তাহলে ? তাহলেও কিছু করার নেই। এক্ষেত্রে তাহলে সে সালমা ইসলামের সঙ্গেই আগে কথা বলবে।

জাদিদ ঠিক করে নিল একবার অন্তত সালমা ইসলামের সঙ্গে কথা বলবে সে। যদি পারে তাকে বোঝাতে তাহলে তাই করবে। এভাবে বিনা চেষ্টায় তো হার মানা যায় না। হার মেনে নেওয়া তার ধাঁচে নেই। জাদিদ ঠিক করলো সবাই যখন দুপুরের দিকে নিজেদের ঘরে থাকবে তখনই সে আসফিয়াদের বাড়ি ফোন করবে। হোক না ভাগ্যের পরীক্ষা। দেখা যাক কে জিতে।

—-

শশব্দে গালে চড় পড়ার শব্দে বসার ঘর মুখরিত হলো। সালমা ইসলাম রক্তচক্ষু নিয়ে তাকিয়ে আছেন আসফিয়ার দিকে। আসফিয়া ঠায় দাঁড়িয়ে আছে। তার গালে পাঁচ আঙ্গুলের দাগ। দেখেই বোঝা যাচ্ছে কেউ একজন তাকে ঠাসিয়ে মেরেছে। তবে আসফিয়ার সেদিকে খেয়াল নেই। তাকে দেখে মনে হচ্ছে মার খেয়ে তার মাঝে কোনো ভাবাবেগ ঘটেনি। সে যেন এই চড়ের জন্যই প্রস্তুত ছিল।

‘ তোর সাহস কি করে হলো ওই ছেলের সঙ্গে প্রেমে সম্পর্কে জড়ানোর ? তুই জানিস না ওই আবির আর ওর পরিবারের কাউকে আমি দু চোখে সহ্য করতে পারিনা। ‘

সালমা ইসলামের কথায় উত্তর দেওয়ার প্রয়োজন মনে করলো না আসফিয়া। সে শান্ত চোখে দেখছে সালমা ইসলামকে। তাকে নীরব দেখে আরও তেতে গেলেন সালমা। ওর চুলের মুঠি ধরে বললেন ‘ কি হলো উত্তর দিচ্ছিস না কেন ? আমাকে কি মানুষ মনে হয় না তোর ? এমন ভাব করছিস যেন আমাকে চোখেই পড়ে না তোর। সকালে ওই ছেলে আমাকে দেখে ঘাবড়ে গেল অথচ আমার মেয়ে হয়েও তুই শান্ত। আমাকে একটুও ভয় পাস না তাইনা ? ‘

হাসলো আসফিয়া। বিকট শব্দে হাসছে সে। মেয়েকে হাসতে দেখে সালমা ভ্রু কুঁচকে ফেলেন। আসফিয়া হাসি থামিয়ে বললো ‘ তোমার মেয়ে বলেই তোমাকে ভয় পাইনা। তুমি যেই ভয়ের কথা বলছো তাকে আক্ষরিক অর্থে ভয় বললেও এই ভয় সন্তানদের চোখে তাদের মা বাবাকে সম্মানিত করে তুলে। কিন্তু তুমি যা শুরু করেছ তাতে তুমি আমার জীবন নষ্ট করেই ছাড়বে। আপার জীবন নষ্ট করতে পারোনি তাই এখন আমারটা নষ্ট করতে চাইছ। এরপরও কি তুমি তুমি স্বীকার করো যে তুমি মানুষ ? ‘

সালমা ইসলামের হাতের মুঠি আলগা হলো। তিনি আসফিয়ার চুল ছেড়ে দিলেন। খানিকটা পিছিয়ে গিয়ে বিস্মিত গলায় বললেন ‘ তুই আমাকে ঠিক কি প্রমাণ করতে চাইছিস ? পরিষ্কার করে বল। ‘

‘ পরিষ্কার করে বলার কিছু নেই মা। তুমি কি সেটা তুমি নিজেও জানো। আমার শুধু বাবার কথা ভেবে খারাপ লাগে। এত বছর ধরে শুধু তোমাকে ভালোবাসে বলে তোমার মতো মানসিক ভারসাম্যহীন মানুষের সঙ্গে সংসার করে যাচ্ছে। তোমাকে ভালোবাসে বলেই নিজের সন্তানদের এত কষ্টে দেখেও কিছু বলতে পারে না। বাহিরের মানুষ বাবাকে কাপুরুষ বলে। কিন্তু তার এরকম হওয়ার পিছনে তোমার প্রতি তার ভালোবাসাই দায়ী। ‘

মেয়ে আর স্ত্রীয়ের এই বাকবিতণ্ডা দেখে দীর্ঘশ্বাস ফেললেন জহির সাহেব। এমনটা যে হবারই ছিল। সবকিছুরই এক সহ্য সীমা আছে। জহির সাহেব জানেন তার মেয়েরা তার মতো নয়। তিনি সালমা ইসলামকে যতটা ভালোবাসেন ততটা তার মেয়েরা নিজের মাকে ভালবাসেনা বলেই একদিন তারা প্রতিবাদ করতোই। কিংবা তাদের ভালোবাসাই এরকম যে মায়ের ভুল ধরিয়ে তাকে সঠিক পথে আনবে।

সালমা ইসলাম তার সংসার জীবনে শাশুড়ি আর ননদ, ননাসের সঙ্গে বিরূপ অভিজ্ঞতার কারণে প্রায়শই নিজের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেন। তাকে দেখে মনে হয়না তার মানসিক সমস্যা আছে কারণ তিনি কিছু ক্ষেত্রে বিরূপ আচরণ করেন যেটা সবসময় লক্ষণীয় নয়।

সালমা তার সাংসারিক অভিজ্ঞতার কারণেই এমন। মেয়েদের কখনও বাহিরের কারোর সঙ্গে মিশতে দেননি আর না নিজে তাদের সঙ্গে মিশেছেন। বিনী,আসফিয়া ওদের জীবনই ছিল স্কুল থেকে বাড়ি, বাড়ি থেকে স্কুল অব্দি। এর বাহিরে তাদের কোনো বান্ধবী ছিল না। বিনীর ক্ষেত্রে এই জিনিসটা একটু বাড়াবাড়ি পর্যায়ে ছিল। সালমা ইসলামের কঠোর নিষেধ ছিল সে যেন কোনো প্রেম নামক সম্পর্কে না জড়ায়। সেটা মেনেই বিনী কখনও এসবে জড়ায়নি।

তবে আসফিয়ার বেলায় ব্যাপারটা একটু শিথিলযোগ্য ছিল। আসফিয়াকে বান্ধবী নিয়ে স্কুল,কলেজ থেকে বাড়ি আসা পর্যন্ত অনুমতি দিয়েছিলেন সালমা ইসলাম। কিন্তু শর্ত একটাই, আসফিয়া কখনও তার বান্ধবীদের বাড়ি যেতে পারবে না আর তাদেরও নিজের বাড়ি আনতে পারবে না। সেসব মেনেই জীবন স্বাভাবিক গতিতে চলছিল। কিন্তু মাঝ থেকে জাদিদ এসে তাদের জীবনের মোড় বদলে দিল।

আসফিয়ার কথায় সালমা ইসলাম বোধ করে আরও রেগে গেলেন। রেগে গিয়ে আবারও আঘাত আনলেন মেয়ের উপর। এবার মারের দাপটে আসফিয়া মেঝেতে আছড়ে পড়লো। সেন্টার টেবিলের লেগে তার কপালে আঘাত লাগলো, গড়িয়ে পড়ল রক্ত। জহির সাহেব মেয়েকে দেখে ছুটে গেলেন। স্ত্রীয়ের উপর চেঁচিয়ে বললেন ‘ মাথা কি খারাপ হয়ে গেছে তোমার ? কি পাগলামো শুরু করেছ তুমি ? ‘

‘ হ্যাঁ, আমার মাথা খারাপ। করছি আমি পাগলামি। এখন এই পাগলামির শেষও দেখবে তোমরা। ‘ বলে আসফিয়াকে জহির সাহেবের কাছ থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যেতে লাগলেন আসফিয়ার ঘরের দিকে।

সালমা ইসলামের এই পাগলামিতে এখন অতিষ্ট জহির সাহেব। সবকিছুরই এক সীমা আছে। সালমা ইসলাম এখন সেই সীমা পার করছেন। তিনি সালমা ইসলামের হাত ধরে বললেন ‘ কোথায় নিচ্ছ তুমি আফিকে ? ‘
‘ আমার হাত ছাড় জহির। না ছাড়লে… ‘

সালমা ইসলাম রাগের মুখে হুমকি দিলেন জহির সাহেবকে। জহির সাহেব আরও রেগে গেলেন। দাতে দাত চেপে বললেন ‘ নাহলে কি ? ‘
‘ আমার মরা মুখ দেখবে তুমি ‘

জহির সাহেব থমকালেন। আলগা হলো তার হাতের বাধন। সালমা ইসলাম হাত ছাড়িয়ে নিলেন তার কাছ থেকে। আসফিয়াকে আবারও টেনে হিঁচড়ে এগিয়ে নিলেন সামনের দিকে। আটকে দিলেন ওকে ওর নিজের ঘরেই। বাহির থেকে দরজায় তালা দিয়ে বললেন ‘ বলেছিলি আমি আমার মাথার ঠিক নেই। এখন একজন মানসিক ভারসাম্যহীন মানুষ কি করতে পারে সেটাও দেখবি তুই। ‘

সালমা ইসলাম বেরিয়ে গেলেন। বেরোনোর পূর্বে জহির সাহেবকে বলে গেলেন ‘ আজ এই দরজায় তালা দিলাম। আমার অনুমতি ব্যতীত এই দরজা এভাবেই থাকবে। আমার অনুপস্থিতিতে দরজা খোলা হলে ধরে নিবো কেউ আমাকে মৃত হিসেবে দেখতে চায়। ‘

সালমা ইসলাম প্রস্থান করতেই দীর্ঘশ্বাস ফেললেন জহির সাহেব। বুঝতে পারছেন না তিনি কি হিসেবে ব্যর্থ। বাবা হিসেবে না স্বামী হিসেবে ? ভালোবেসে স্ত্রীকে সামলাতে পারছেন না আবার ভালোবাসার জন্যই স্ত্রীয়ের হাত থেকে মেয়েকে বাঁচাতে পারছেন না। অথচ তিনি দুজনকেই ভালোবাসেন। কি হবে তার নিয়তি ? প্রিয়তমা না সন্তান ? কাকে বেছে নিবেন তিনি ?

জানালার ধারে বসে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাদঁছে আসফিয়া। সালমা ইসলামের কানে যাবে এই ভয়ে সে জোরে কাদতেও পারছে না। সে কিছুতেই তার দূর্বলতা সালমা ইসলামের সামনে প্রকাশ করবে না। আসফিয়া কখনোই শক্ত মনের মানুষ ছিল না। সে বিনীর মতো নয়। বিনী পেরেছিল সালমা ইসলামের কথার ভুল ধরে তাকে ভুল প্রমাণিত করতে কিন্তু সে কখনো তা করেনি। তার বরাবরই মায়া হতো সালমা ইসলামের জন্য।

সালমা ইসলাম তার সাংসারিক অভিজ্ঞতার জন্য যেই অমানসিক দ্বন্দ্বে ভুগতেন তার জন্যই মায়া হতো আসফিয়া। তাই সে কোনওদিন তার মায়ের বিপরীতে কিছু বলেনি। কিন্তু আজ যে চুপ করে থাকা গেলো না। প্রশ্নটা তার জীবনের,তার ভালোবাসার মানুষটার। এখন চুপ করে গেলে যে ভালোবাসার মানুষটাকে হারিয়ে ফেলবে সে।

মা হলো এই নিঃসঙ্গ পৃথিবীর একমাত্র কাছের মানুষ যে আমাদের দশ মাস দশ দিন হাজার যন্ত্রণা, হাজার মানসিক অশান্তি, হাজার মুড সুইং সহ্য করেও জন্ম দেন। মাই একমাত্র মানুষ যে আমাদের মনের কথা মুখে আসার আগেই মাঝ পথে ধরে ফেলেন। অথচ এই মা নামক মানুষটাই যখন ভুল করে তখন মনে হয় পৃথিবীটাই বুঝি লন্ডভন্ড হয়ে গেছে।

সৃষ্টিকর্তার সেরা সৃষ্টি হলো মানুষ। মানুষ রূপে, গুনে,বিবেকে সবদিক দিয়ে সবার উপরে। কিন্তু এতকিছু থাকা সত্বেও তারা নিখুঁত নয়। একমাত্র সৃষ্টিকর্তা ছাড়া কেউই নিখুঁত নয়। নিখুঁত হওয়াটা মানুষের ধাচে নেই। কথায় আছে ‘ Nobody is perfect rather than almighty God ‘। কথাটা ভুল নয়। মানুষ যদি নিখুঁতই হতো তাহলে সে আর মানুষ থাকতো না,হয়ে যেত ফেরেশতা।

আমরা যখন কাউকে ভালোবাসি তখন আমরা তার ভালো,খারাপ দুটোকেই ভালোবাসি। এতকাল এটাই জেনে এসেছে আসফিয়া। এটা মেনেই সে এতকাল সালমা ইসলাম যে তার জন্মদাত্রী, তার করা ভুল থেকে শুরু করে তার ভালো কাজ সবকিছুকেই ভালোবেসেছে। কিন্তু আজ মনে হচ্ছে সে পারছে না। সে পারছে না সালমা ইসলামকে ভালোবাসতে।

মানুষ নিজ স্বার্থে অনেক কিছু করতে পারে। স্বার্থের প্রয়োজনে সে ভালোও বাসতে পারে আবার প্রয়োজনে ঘৃণাও করতে পারে। আসফিয়া এতকাল সালমা ইসলামকে ভালোবেসেছে স্বার্থের প্রয়োজনে কারণ তার ভালোবাসার মানুষ বলতে কেউ ছিলনা যার সঙ্গে মিল হওয়ার পথে সালমা ইসলাম বাধা হয়ে দাঁড়াবেন। কিন্তু এখন আসফিয়ার এক নিজস্ব মানুষ আছে যাকে সে প্রাণাধিক ভালোবাসে এবং সেই মানুষটাও তাকে ভালোবাসে।

মানুষটা একক পরিবারের হলে হয়তো সালমা ইসলাম কোনো ঝামেলাই করতেন না। কিন্তু বেছে বেছে সে যৌথ এক পরিবারেরই মানুষ যাকে সালমা ইসলাম ঘৃনা করেন। এখানেই লেগেছে আসফিয়ার স্বার্থে আঘাত। আর সেই আঘাতে জর্জরিত হয়ে সে হয়ে উঠলো আত্মকেন্দ্রিক যে শুধুই নিজের কথা ভাবে। নিজের কথা ভেবেই সে এখন আর পারছে না মা নামক মানুষটাকে ভালোবাসতে। এখানে দোষটা কার ? তার নাকি সালমা ইসলামের ? নাকি জাদিদের যাকে আসফিয়া তার সবটা দিয়ে ভালোবেসেছে ?

—-

বসার ঘরে টেলিফোন বাজছে ক্রিং ক্রিং শব্দে। সালমা ইসলাম ঘরে ছিলেন। ফোনের শব্দে তিনি নিচে নেমে এলেন। ফোন কয়েকবার বেজে বন্ধ হয়ে গেলো। ফোনের কাছে এসে দাড়িয়ে ফোনের দিকে কিয়ৎক্ষণ তাকিয়ে রইলেন সালমা ইসলাম। টেলিফোন আবারও বেজে উঠতে এবার কানে ধরে বললেন ‘ কে বলছেন ? ‘

ফোনের ওপারে থাকা জাদিদ বুঝলো গলা সালমা ইসলামের। সে সালাম দিয়ে বললো ‘ আসসালামু আলাইকুম আন্টি,আমি জাদিদ। ‘
জাদিদের কথা শুনে সালমা ইসলামের মুখ থমথমে হয়ে উঠলো। তিনি রাশভারী কণ্ঠে বললেন ‘ ওয়ালাইকুম আসসালাম। কিছু বলবে ? ‘
‘ জি আন্টি, আমার আসফিয়ার ব্যাপারে কিছু বলার ছিল। আমি আর আসফি…. ‘

জাদিদ তার কথার সমাপ্তি দেওয়ার সুযোগ পেলো না। সালমা ইসলাম গম্ভীর গলায় বলল ‘ তার আগে আমি কিছু কথা বলি। তুমি সেগুলো মন দিয়ে শোনো। ‘
সালমার কথা শুনে জাদিদ চুপসে গেল। সে জানে না সালমা ইসলাম কি বলবেন কিন্তু মন বলছে যা বলবেন তার কিছুই তার ভালো করবে না। বরং হয়তো তার আর আসফিয়ার সম্পর্ক ভাঙ্গা নিয়েই কিছু বলবেন। তবুও সে বললো ‘ জি আন্টি ‘।

‘ তুমি ছেলে মানুষ, বয়স অল্প তাই ভুল করেছ মেনে নিয়েছি। কিন্তু আমার বিশ্বাস নিজের বিবেক বুদ্ধি দিয়ে চিন্তা ভাবনা করলে তুমিও বিচক্ষণ মানুষ। আসফিয়া বাচ্চা মানুষ। ওসব প্রেম ভালোবাসা সে বুঝে না তাই ওর মায়ায় জড়িয়ে লাভ নেই। তোমাদের সম্পর্ক আমি কখনো মেনে নিবো না তাই আজকের পর থেকে আর কখনও ওর সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করো না। এই শুক্রবারে ওর বিয়ে… ‘

—-

টুট টুট টুট…. শব্দে টেলিফোন কেটে গেলো সালমা ইসলামের। তিনি ফোন কান থেকে নামিয়ে একবার ফোনের দিকে তাকালেন। অতঃপর ফোন রেখে এগিয়ে গেলেন ঘরের দিকে। বান্ধবী সায়লার সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি। সায়লার ছেলে সাহেল পেশায় ম্যাজিস্ট্রেট। একে বান্ধবী পরিচিত তার উপরে শুধুমাত্র এক ছেলে আর স্বামীর সংসার তার। কাজেই এই পাত্র হাতছাড়া করা যায়না।

আজ বিকেলেই আসফিয়াকে দেখতে আসছেন সায়লা সুলতানা স্বামী,পুত্র সমেত। দেখেটেখে আংটি পরিয়ে রেখে যাবেন। তারপর এক সপ্তাহ পরে শুক্রবারে একবারে কবুল পড়িয়ে উঠিয়ে নিবেন।

সালমা ইসলাম ভাবলেন বড় মেয়ের বেলায় তো জাকজমোক করেই বিয়ে দিলেন কিন্তু কাজের কাজ কিছু হলো না। মেয়ে সেই যৌথ পরিবারে গিয়েই পড়লো। কাজেই এবার আর রাখঢাক করে বিয়ে দিবেন না ছোট মেয়ের। তাছাড়া অত মানুষ খাইয়ে বিয়ে দেওয়ার প্রয়োজন কি। বিয়ের পর নাহয় নিজেরা একদিন সবাই মিলে একসাথে খাওয়া দাওয়া করবেন। বরং সেটা হলে একসঙ্গে বসে আড্ডা দেওয়া হবে।

—-

দরজা খোলার শব্দে চোখ মুখ মুছে স্বাভাবিক হয়ে বসলো আসফিয়া। দরজা খুলে ঢুকেছেন সালমা ইসলাম। হাতে তার গোলাপি তাঁতের শাড়ি। শাড়িটা মেয়ের দিকে এগিয়ে দিয়ে সালমা বললেন ‘ দ্রুত শাড়ি পড়ে তৈরি হয়ে নে। তোকে সাহেল দেখতে আসছে। ‘

অপরিচিত এক যুবকের নাম সালমা ইসলামের মুখে শুনে ভ্রু কুঁচকে ফেললো আসফিয়া। ওকে এমন করতে দেখে সালমা বললেন ‘ আমার বান্ধবীর ছেলে। ও ম্যাজিস্ট্রেট। ওর সঙ্গেই তোর বিয়ে ঠিক করেছি। ‘
বিয়ের কথা শুনে আসফিয়ার চোখ,মুখ শক্ত হয়ে গেলো। ও শক্ত গলায় বলল ‘ জাদিদের সঙ্গে কথা বলবো আমি। ‘

‘ প্রয়োজন নেই, আমি কথা বলে নিয়েছি। এও জানিয়েছি তোর সামনে বিয়ে যেন তোর জন্য দোয়া করে। ছেলে সবই শুনেছে। কিছু বলেনি। আর বলবেও বা কোন মুখে ? না আছে চাকরি আর না আছে কোনো ডিগ্রি। এখনও পড়াই শেষ হলো না ওর। হলে নাহয় তোকে ঘরে তুলতো। এসব নেই বলেই তো হার মেনে নিয়েছে। ‘

সালমা ইসলামের কথায় নির্বাক আসফিয়া। সে শুধুই পাথুরে মূর্তির মতো শাড়ি নিয়ে বাথরুমে ঢুকলো। মেয়েকে রাজি হতে দেখে সালমার মুখে হাসি ফুটলো। যাক কথাটা কাজে দিয়েছে। মেয়েদের বিয়ে দেওয়ার জন্য এমন কত কথাই তো বলতে হয়। আসফিয়াকে তিনি পুরোপুরি সত্য বলেননি। জাদিদকে তিনি আসফিয়ার খবর জানিয়েছেন ঠিকই কিন্তু সে কিছু বলেনি কথাটা একেবারেই ভুল।

বরং সে অনেক চেষ্টা করেছে সালমা ইসলামকে যেন আসফিয়াকে বিয়ে না দেওয়া হয়। কিন্তু এসব কি আর মেয়েকে বলা চলে ? বললে মেয়ে নিশ্চই তৈরি হতে রাজি হতো না। আর সেটা হলে তো হবে না। সালমা ইসলাম যেভাবেই হোক মেয়ের বিয়ে বান্ধবীর ছেলের সঙ্গে দিয়েই ছাড়বেন।

বুকে একরাশ অভিমান নিয়েই শাড়ি পড়ে তৈরি হলো আসফিয়া। তার বিয়ের কথা শুনে জাদিদ কিছুই বললো না। একবারের জন্যও অনুরোধ বলে তার মাকে বিয়ে দিতে বারণ করলো না ? এমনটা কি করে পারলো সে ? এরকম একটা কাজ করতে তার বুকে বাঁধলো না ?

বিভিন্ন রকমের মানসিক দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়া আসফিয়া আর বিবেক দিয়ে ভাবতে পারলো না যে তার বেয়াই সাহেব এমন একটা কথা কখনোই বলতে পারে না। অভিমানী মন নিয়েই সে রাজি হয়ে গেল বিয়েতে। শুরু হলো জহির সাহেবদের বাড়িতে বিয়ের আয়োজন। চলতে লাগলো আসফিয়ার বিয়ের কেনাকাটা।

এরই মাঝে সায়লা সুলতানা এসে স্বামী,পুত্র সমেত আসফিয়াকে পছন্দ করে আংটি পরিয়ে দিয়ে গেছিলেন। তার মতে এই বয়সে মেয়েরা থাকে আগুন সুন্দরী। তাই এদের হাতছাড়া করতে নেই। তাছাড়া এমন অল্প বয়সী মেয়ে নিজের ছেলের জন্য আর দ্বিতীয়টি খুঁজে পাবেন কি করে ? তাইতো দেখেই বিয়ের দিন ক্ষণ সব ঠিক করে ফেললেন।

~চলবে ইনশাআল্লাহ্…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here