এখানে বেলি ফুলের মালা-৫,০৬
০৫
————————-
‘ ওহে এলোকেশী কন্যা
চুলগুলো বাঁধিও তোমার,
আমার আনা মমতা মাখা
এক গাছি বেলি ফুলের মালায় ‘
এক গাছি বেলি ফুলের মালা রাখা বাদামি প্যাকেটে চিরকুটটা পেলো বিনী। আবির তার হাতে একটা বাদামী রংয়ের প্যাকেট ধরিয়ে দিয়েছিল। তার ভিতরেই বেলি ফুলের মালা আর সাদা কাগজে গোটা গোটা অক্ষরে এই চার লাইনের ছন্দ ছিল। আবিরের কাজে বিনীর মুখে কোনো অনুভূতির দোলাচল দেখা গেলো না। সে নিষ্প্রভ হয়ে তাকিয়ে আছে বেলি ফুলের মালার দিকে।
‘ চিরুনি নিয়ে কাছে এসো। চুলে বেণী করে মালাটা পড়িয়ে দেই। ‘
আবিরের কথায় বিনীর ভাবনায় ছেদ পড়ল। আবির বিছানায় বসে আছে। বিনী চিরুনি নিয়ে আবিরের কাছে গেলো। মেঝেতে পা গুটিয়ে আসান ধরে বসেছে বিনী। আবির ওর জট বাধানো চুলে জট ছাড়াচ্ছে। চুলের ভয়াবহ অবস্থায় সে হতাশ হয়ে বললো ‘ চুলের এমন অবস্থা কেন ? যত্ন নাও না। ‘
আবিরের কথার উত্তরে বিনী বললো ‘ চুলে মা আর আসফিয়া তেল দিয়ে দিত। বিয়ের ব্যস্ততায় এবার আসফিয়া খেয়াল করে দিতে পারেনি। আমি তেল দিতে পারিনা। ‘
আবির বিনীর কথায় হেসে বললো ‘ এতদিন তাহলে আসফিয়া আর মা তেল দিয়ে দিতেন। চিন্তার কিছু নেই। এখন থেকে আমি তেল দিয়ে দিবো। তাছাড়া আম্মা তো আছেনই। তোমাকে তেল দিয়ে দিবেন উনি। ‘
‘ আম্মা ? উনি তেল দিয়ে দিবেন ? ‘
বিনী অবাক হয়ে বলল। আবির ওর কথা শুনে জট ছাড়িয়ে এবার বেণী করতে করতে বলল ‘ হ্যাঁ আম্মা দিয়ে দিবে। আম্মা তো আফিফা ভাবীকেও দিয়ে দেন তেল। ‘
বিনী উত্তরে শুধু ওহ বললো। আবির এবার বললো ‘ আম্মা বকলে মন খারাপ করো না। উনি অমনই, কড়া ধরনের। কিন্তু আম্মা মোটেই খারাপ মানুষ নন। শুধু একটু স্ট্রিক্ট হওয়ার চেষ্টা করেন। আম্মা ভাবেন শক্তের ভক্ত আছে জম নেই। ‘
‘ আমি কিছু মনে করিনা। ‘
ব্যাস এতটুকুই যা বলার ছিল বিনীর। ও আর কথা বাড়ায়নি আবিরের সঙ্গে। আবির নিজেই কথা বলতে বলতে ওর চুলে বেণী করছে। বেণী শেষে আবির ওর চুলে কিভাবে কিভাবে যেন মালা পেঁচিয়ে পিন লাগিয়ে দিল। বিনী সেই বেণী সামনে এনে দেখলো আবির বেণী করেনি উল্টো দুই ভাগ চুলকে একটা আরেকটার সঙ্গে দড়ির মতো পেঁচিয়ে কোনোমতে বেধে রেখেছে। সেই সঙ্গে মালাটাও কোনোভাবে বেঁধেছে।
ছেলে মানুষের কাছ থেকে এর বেশী আশা করা অপরাধ। চুলে বেণী করা,তেল দিয়ে দেওয়া তাদের হাতের কাজ নয়। তবে আবির যেভাবেই বেণী করুক না কেন এতটা দায়িত্ব নিয়ে যখন করে দিয়েছে তখন এর প্রশংসা করা অবিশ্যম্ভাবী দায়িত্ব মনে হলো বিনীর। বেণীর হুট করেই কেন যেন আবিরের এই যত্নশীল দিকটা মনে লাগলো। আগে এমন করে কেউ তার যত্ন করেনি। করার কথাও না। পারিবারিক মর্যাদা অক্ষুণ্ণ রাখার জন্যই প্রেম সে করেনি।
‘ সুন্দর হয়েছে বেণী। ‘ বেণী থেকে বেরিয়ে আসা এলো চুলগুলো দেখে বললো বিনী।
আবির বিনীর কথায় খুশি হলো। বললো ‘ তাহলে এখন থেকে রোজ বেলি ফুলের মালা নিয়ে আসবো আর নিজের হাতে তোমার বেণীতে লাগিয়ে দিবো। ‘
বিনী স্রেফ মাথা নাড়ল। আবির ওর হসপিটালে যাওয়ার ব্যাগটা গুছিয়ে রেখে বিছানায় শুয়ে পড়লো। ঘরের বাতি নিভিয়ে আবিরের পাশে বিনীও শুয়ে পড়লো। কথা বলার জন্য আবিরের দিকে ফিরল সে। মুখের নিচে কনুই রেখে বলল ‘ বলছিলাম পরশুদিন তোমাকে আর আমাকে বাড়িতে যেতে হবে। এটা নাকি কি একটা নিয়ম। ‘
‘ বাড়ি যেতে হবে!! তা ভালো তো। তুমি তাহলে আম্মাকে জানিয়ে অনুমতি নিয়ে রেখো। দেখছোই তো কথা বলারই সুযোগ হচ্ছে না। তার উপরে যেহেতু তোমাদের বাড়ি যাবো তাই কয়েকদিনের ছুটিও নিতে হবে হাসপাতাল থেকে। পারবে না আম্মাকে বলতে ?’
আবিরের কথায় বিনীর আর বলা হলো না শাহিদা খাতুনের কাছ থেকে অনুমতি নিতে তার ভয় করছে। সে চুপ করেই রইলো। আজও তার রাতে ঘুম হয়নি। তবে ভোরের দিকটায় ঘুম চোখে ধরা দিয়েছিলো। নিদ্রার এই লোভাতুর হাতছানি সে উপেক্ষা করতে পারেনি। ঘুমিয়ে পড়ে ঘুমের নেশায়।
সকাল হয়েছে, বিনী ঘুম থেকে উঠে পরেছে। চুলে মোড়ানো বেলি ফুলের মালা চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে বিছানায় হুটোপুটি খাচ্ছে। বিনী বিছানায় উঠে বসলো। আড়মোড়া ভেঙে পাশ ফিরে তাকালো। আবিরের পরনের লুঙ্গি পায়ের হাঁটুর কাছে উঠে এসেছে। বিনী আবিরের জামা কাপড়ের অবস্থা দেখে হাসলো। হাত দিয়ে লুঙ্গিটা নামিয়ে দিল আর আবিরের কপালের উপর হেলিয়ে থাকা এলো চুলগুলো আলতো হাতের স্পর্শে ঠিক করে দিলো।
বিনী পরিপাটি হয়ে পূর্বের দিনের মতোই রান্নার পাড়ে চলে এসেছে। শাহিদা খাতুন আজ সকালের নাস্তায় ভেজা খিচুড়ি করবেন। খিচুরিটা নিজ হাতেই রাধবেন তিনি। বিনী সবজিগুলো কেটে দিলো আর চাল ধুয়ে দিল। এই ফাঁকে আফিফা জুহারিনকে এক দফা খাইয়ে এসেছে।
খাওয়া দাওয়া শেষে আজাদ সাহেব আর সাজ্জাদ সাহেব বেরিয়ে গেলেন কাজের উদ্দেশ্যে। জাদিদ ভার্সিটির উদ্দেশ্যে বেরিয়েছে আর জাবিয়া কলেজের জন্য বেরিয়েছে। আবির কাধে ব্যাগ নিয়ে সবাইকে বিদায় জানিয়ে হাসপাতালের উদ্দেশ্যে বের হলো। বিনী তখন রান্নাঘরে কাজ করছিল কিন্তু আবিরের বের হওয়ার খবরে এগিয়ে এলো না সে। শাহিদা খাতুন ব্যাপারটা লক্ষ্য করলেন।
শাহিদা খাতুন আবিরকে ডাক দিলেন। মায়ের ডাকে আবির অবাক চোখে তাকালে শাহিদা খাতুন ইশারা করলেন যেখানে আছে সেখানেই যেন দাড়িয়ে থাকে। তারপর তিনি বিনীকে ডাকলেন। বিনী কাজ করছিলো কিন্তু শাহিদা খাতুনের ডাকে উঠে এলো।
‘ জী, আম্মা ‘
বিনী খাবার ঘরে শাশুড়ির ডাকে ছুটে যেতেই শাহিদা খাতুন ওর হাতে একটা টিফিন বাক্স ধরিয়ে দিয়ে বলল ‘ আবিরকে দিয়া আসো। বউ হয়ে জামাইয়ের একটু খেয়াল না রাখলে জামাই কি তোমারে ভালোবাসবো ? এখন থেকা রোজ নিজে টিফিন বানাইবা আর নিজ হাতে দিয়া আইবা। ঠিক আছে ? ‘
শাহিদা খাতুনের ভরাট কণ্ঠে বিনী প্রতিবাদ করেনি। সে কোনোমতে মাথা নেড়ে সায় দিয়ে টিফিন বাটি নিয়ে দ্রুত পা চালাচ্ছে। আবির বেরিয়ে যাচ্ছিল হাসপাতালের উদ্দেশ্যে কিন্তু মায়ের ডাক শুনে দাড়িয়ে পড়েছে। বিনী দ্রুত এগিয়ে গিয়ে আবিরের সামনে দাড়ালো। আবিরের দিকে টিফিন বাক্সটা এগিয়ে দিয়ে বললো ‘ বাইরের খাবার খাওয়ার প্রয়োজন নেই। বাক্সে রাখা খাবারগুলো খেও। ‘
আবির সায় দেওয়ার ভঙ্গিতে মাথা নেড়ে টিফিন বাক্স হাতে নিয়ে বলল ‘ আম্মার কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে রেখো। ‘ বিনী উত্তরে মাথা নেড়ে সায় দিল আর আবির বিদায় নিয়ে বেরিয়ে গেলো। বিনী ধীর পায়ে রান্নাঘরে আবার এসে ঢুকলো। রান্নাঘরের মেঝেতে সে ছোট মাছ নিয়ে বসেছে। মাছ কুটতে কুটতেই সে শুনতে পড়লো বসার ঘরে টেলিফোন বাজছে।
বিনী টেলিফোনের শব্দে উঠতে নিয়েছিল কিন্তু শাহিদা খাতুন ইশারা করলেন উঠার প্রয়োজন নেই, উনি দেখছেন। বিনী আর উঠলো না। শাহিদা খাতুন হাতের পানি ফেলে এগিয়ে গেলেন। সোফায় বসে টেলিফোনটা কানে ধরলেন। ওপাশ থেকে জহির সাহেবের গলা শোনা গেলো। জহির সাহেব মিষ্টি হেসে সালাম দিলেন ‘ আসসালামু আলাইকুম, কে বলছেন ? ‘
‘ ওয়ালাইকুম আসসালাম। আমি শাহিদা খাতুন, মিসেস আজাদ বলছি। ‘
জহির সাহেব বেয়াইনের কথার প্রতি উত্তরে বললেন ‘ আমি জহির চৌধুরী, বিনীর বাবা। ‘
নতুন বেয়াইয়ের পরিচয় পেয়েও শাহিদা খাতুনকে আন্তরিক হতে দেখা গেলো না। উনি গাম্ভীর্য বজায় রেখে বললেন ‘ কেমন আছেন ভাইজান ?’
‘ আলহামদুলিল্লাহ আল্লাহর রহমতে ভালো আছি আপা। আসলে একটা জরুরী প্রয়োজনে টেলিফোন করেছিলাম। বিয়ের ব্যস্ততায় জামাইয়ের খাতির করতে পারিনি। আপনি যদি অনুমতি দেন তাহলে ওরা একটু কাল কিছু দিনের জন্য আসতো। ‘
জহির সাহেবের কথায় কিয়ৎপল মৌন রইলেন শাহিদা খাতুন। ভাবনা চিন্তা করে সময় নিয়ে বললেন ‘ নিশ্চই, আমার কোনো আপত্তি নেই এই ব্যাপারে। ‘
‘ ধন্যবাদ ‘
জহির সাহেবের সঙ্গে কথা শেষে রান্নাঘরে ঢুকেছেন শাহিদা খাতুন। বিনী বসে বসে মাছ কুটছিল। শাহিদা খাতুনকে ঢুকতে দেখে ভয়ে ভয়েই সে বললো ‘ আম্মা কে টেলিফোন করেছিল ? ‘
‘ তোমার বাবা ‘
শাহিদা খাতুনের গম্ভীর, ভরাট কণ্ঠে বিনী মুখ তুলে তার দিকে তাকালো কিন্তু শাহিদার চেহারা দেখতে পেলো না সে। উনি অন্যদিকে ফিরে কাজ করতে ব্যস্ত। বিনী খানিকটা ভয়াল গলায় বললো ‘ কি বললো বাবা ? ‘
‘ বলছিলেন তোমাকে আর আবিরকে কিছুদিনের জন্য তোমাদের বাড়ি থেইকা ঘুইরা আসতে। ‘
শাহিদা খাতুনের কথায় শান্তি পেলো বিনী। যাক তার কাজটা জহির সাহেবই করে দিলেন। কিন্তু চিন্তার বিষয় অন্য জায়গায়। শাহিদা খাতুন কি আদৌ রাজি হবেন ? অথচ আবির তো বললো অনুমতি নিয়ে রাখতে। অনুমতি নিতে না পারলে তো ও রেগে যাবে। বলে তো রেখেছে বিনীদের বাড়ি যাবে বলে হাসপাতাল থেকে ছুটি নিবে। এখন যদি বিনী ছুটি নিতে ব্যর্থ হয় তাহলে তো বেচারার এত ঘটা করে ছুটি নেওয়া ব্যর্থ হবে।
মন খারাপ করেই বিনী বললো ‘ আপনি কি বললেন ? ‘
‘ যেটা বলার সেটাই বলছি। ‘
শাহিদা খাতুনের কথায় মন খারাপ হলো বিনীর। ও মুখে শুধু ‘ ওহ ‘ বলে কাজে মন দিলেন। শাহিদা খাতুন ওর কাটা ছোট মাছগুলো ঝুড়িতে নিয়ে ধুতে ধুতে বললেন ‘ জলপাইয়ের আচার আছে। কিছুদিন আগেই বানিয়েছি বানাইসি। কাল যাওয়ার সময় মনে কইরা নিয়া নিও। আসফির তো পছন্দ। ‘
শাহিদা খাতুনের মুখে যাওয়ার কথা আর বোনের নাম শুনে চমকে উঠলো বিনী। অবাক হয়ে বড় বড় চোখে বললো ‘ তাহলে কি আমি আর আবির যাবো বাড়িতে ? ‘
‘ নাম ধইরা বলো কেন ? স্বামীকে নাম ধরে ডাকতে নেই। খুব প্রয়োজন হইলে ঘরে ডাকবা কিন্তু সবার সামনে ডাকবা না। আমি বইলা কিছু বলি নাই কিন্তু অন্যরা ছাড়বে না। আর তোমাদের বাড়ি যাওয়া নিয়া এত প্রশ্ন কেন ? নিয়ম যখন একটা আছে তখন তো পালন করতেই হইবো। নিয়ম পালন তো আর আমার অনুমতির অপেক্ষায় আইটকা থাকব না। কাল যাওয়ার সময় আবিররে নিয়া গিয়া ভাইজান, আপা আর আসফির জন্য মার্কেট থেইকা ভালো কিছু কিনা নিয়া যাইও। ‘
বিনীর আনন্দ দেখে কে। আনন্দে ওর চোখে জল এলো। ও মাছ গুছাতে গুছাতে বললো ‘ আপনি অনেক ভালো আম্মা। ‘
শাহিদা খাতুন যেন বিনীর কথা শুনেও শুনলেন না। মুখে বলতে থাকলেন ‘ পেঁয়াজের আচারও বানাইছিলাম। ওইটা নিয়া যাইও। তোমার আম্মারে বলিও তার মেয়ে আমাগো বাড়িতে খুশি আছে। যেন চিন্তা না করে। মনে থাকবে তো ? ভুইলা যাইও না বলতে। মনে কইরা বলবা। ‘
বিনী শুধু আনন্দে মাথা নাড়ল। তার চোখে জল এখন ছলছল করছে। আনন্দের জোয়ারে তার গলা দিয়ে শব্দ বের হচ্ছে না। কোনোমতে গলা ভিজিয়ে বললো ‘ ভুলবো না আম্মা। ‘
—-
বিনী কাজকর্ম শেষে খাওয়া দাওয়া করে কি করবে বুঝতে পারলো না। বাড়ির সকলেই ঘুমোচ্ছে এখনও। বাড়িতে নতুন এসেছে সে। তার বিয়ের মাত্র দুইদিন।এখনই রান্নাঘরে ঢুকে শাহিদা খাতুনকে না জানিয়ে তার শখের রান্নাঘরে রান্না করাটা দৃষ্টি কটু। কিন্তু কিছু করারও তো নেই।
কিন্তু বিনীকে বেশিক্ষন অপেক্ষা করতে হলো না। পাঁচটা বাজতেই ঢুলু ঢুলু চোখে জাবিয়া এসে হাজির। সে জানালো শাহিদা খাতুন বিনীকে ডাকছে। বিনী শাশুড়ির ডাকে দ্রুত ছুটে গেলো। বসার ঘরে বসে আছেন শাহিদা খাতুন।
বিনী ঘরে ঢুকতেই দেখলেন শাহিদা খাতুন আফিফার চুলে তেল দিয়ে দিচ্ছেন। বিনীকে দেখে উনি বললেন ‘ দুই মিনিট বসো। চুলের তো তুমি কাকের বাসা বানাইসো। আগে বড় বউরে তেল দিয়া দেই তারপর তোমারে ধরতেছি। বুঝিনা এসব ভাই। মানুষ এখন কত কত ইস্টাইল করে। ‘
শাহিদা খাতুনের কথায় বিনী শাহিদা খাতুনের পাশে গিয়ে বসল। আফিফাকে তেল দিয়ে দেওয়া শেষে আফিফাকে উঠিয়ে দিলেন আর বিনীকে সামনে এসে বসতে বললেন শাহিদা। বিনী শাশুড়ির কথা মতোই কাজ করলো। শাহিদা বিনীর মাথায় তেল দিয়ে দিতে দিতে বললেন ‘ চুলের এই অবস্থা কেন ? একেবারে ঝাড়ুর মতো লাগছে। একটু তেল দিতে হয় তো নাকি ? ‘
বিনী শাহিদা খাতুনের কথায় মাথা নেড়ে সায় দিল। শাহিদা তার চুল টেনে টেনে তেল দিয়ে দিচ্ছে। তেল দিতে দিতেই তিনি বললেন ‘ পারলে জামাইরে দিয়া একটু চুলে তেলতুল দেওয়াইবা। পুরুষ মানুষরে বেশি ছাড় দিতে নাই। বেশী স্বাধীনতা পাইলে মাথায় চইড়া বসে হেরা। এগুলান তো বলার বিষয় না। আর যেন অমন ফাটা ফাটা চুল না দেখি। আমি কি বলছি বুঝছ ? ‘
বিনী এবারেও মাথা নাড়ল। শাহিদা খাতুন আরও অনেক কথা বললেন কিন্তু সেদিকে বিনীর মন নেই। সে ভাবতে ব্যস্ত শাহিদা হয়তো সামনে দিয়ে নিজেকে কঠিন দেখান কিন্তু উনি ভিতর দিয়ে নারিকেলের মতোই নরম। উনার শাসন ভরা কথা শুনলেও বুকটা সুখ সুখ অনুভব হয়। বিনীর শুধু ইচ্ছে করে শুনেই যাক মানুষটার কথা।
~চলবে ইনশাআল্লাহ্….
ছবিয়াল: Maksuda Ratna
এখানে বেলি ফুলের মালা-৬
————————-
পরের দিনের জন্য সবজি কেটে রাখছেন শাহিদা খাতুন আর বিনী। আফিফা আর জাহানারা রান্নাঘরে রাতের খাবার জ্বাল বসাচ্ছেন। বিনী কাজ করতে করতে নীরবে শাহিদা খাতুনের কথা শুনছে। ওদের কথাবার্তার মাঝেই আবির ফিরলো। আজ একটু দ্রুতই ফিরেছে সে। সে বাড়ি ফিরতেই শাহিদা খাতুনের চেহারার ভাব বদলে গেলো। উনি গম্ভীর মুখে ছেলেকে টিটকারী মেরে বললেন ‘ বিয়া করলা অথচ বউ সেবার নাম নাই। এই লেগাই বউয়ের মাথার চুলের এই অবস্থা। একেবারে কাকের বাসা হইয়া আছে। ‘
আবির শাহিদা খাতুনের কথা শুনলো তবে উত্তর দিলো না। ছেলেকে চুপ দেখে শাহিদা বললেন ‘ যেমন বাবা তেমন তার ছেলে। বাপে জীবনে চুলে তেল দিয়ে দিবার চায় নাই। ছেলেগুলাও হের মতোই রসকষ ছাড়া হইসে। বউয়ের সেবা করলে যে সওয়াব হয় হেইডা আর কেউ জানেনা। ‘
আবির এতক্ষণে মুখ খুললো। বললো ‘ আমি জানতাম বিয়ে হওয়ার পর মায়েরা ছেলেদের আরও নিজের দিকে টানার চেষ্টা করে ছেলে হারানোর ভয়ে। কিন্তু আপনার আপনার ছেলের থেকে ছেলের বউয়ের প্রতি চিন্তা বেশি। আমাকে দেখি উল্টো বিনীর সেবা করতে বলছেন। ‘
‘ তোমার কি আমারে ওসব মায়ে গো মতো মনে হয় যারা এত বছর পাইলাপুইসাও বিয়ের পর ছেলেরে হারাতে ভয় পায় ? তয় জাইনা রাখো আমি অমন মহিলা না। আমি জানি আমি মইরা গেলেও আমার ছেলেরা আমারই থাকবো। কিন্তু বিয়ের পর হেরা শুধু আমার ছেলে না,আরেক মাইয়ার স্বামীও। তাই তাগো ভালো স্বামীও হইতে হইবো। আমাগো বাড়ির বউয়েরা শুধু বউ না আমাগো সম্মানও । হেগো অবমাননা আমি শাহিদা খাতুন, বাইচা থাকতে মানুম না। ‘
আবির মায়ের কথা শুনে হাসলো আর বিনী হতবাক চোখে তাকিয়ে রইলো। আবির সিড়ি দিয়ে উঠে যেতে যেতে শুনলো শাহিদা খাতুন বিনীকে বলছেন ‘ যাও জামাইয়ের পিছে পিছে যাও। জিজ্ঞেস করো কিছু লাগবো কিনা। ‘
শাশুড়ির কথার অবাধ্য হলো না বিনী। সে আবিরের পিছু পিছু ঘরে এলো। আবির ঘরে এসে দপ্তরের ব্যাগ থেকে বেলি ফুলের প্যাকেটখানা নামিয়ে রাখলো। ঘর্মাক্ত শার্ট খুলতে খুলতে বললো ‘ আম্মা কিন্তু তোমাকে বেশ পছন্দ করেন। চুলে কি আম্মা তেল দিয়ে দিয়েছেন ? ‘
বিনী মাথা নেড়ে সায় দিল। তার ইশারা দেখে আবির বললো ‘ বলেছিলাম না আম্মা শুধু বাইরে দিয়েই শক্ত। আসলে সে তার ছেলের বউদের ছেলেদের থেকেও বেশি ভালোবাসেন। ‘
আবির বাথরুমে ঢুকেছে গোসলে। বিনী ওর প্রয়োজনীয় জিনিস বিছানার উপর সাজিয়ে রেখে নিচে মেনে এসেছে। বেলি ফুলের মালাটা সে সযত্নে তুলে রেখেছে, রাতে আবির তাকে নিজ হাতে পড়িয়ে দিবে। বিনী নিচে এসে দেখলো শাহিদা খাতুন টেবিলে খাবার সাজাচ্ছেন। দেয়াল ঘড়িতে রাত সাড়ে নটা বাজতে আর পাঁচ মিনিট বাকি। একটু পরেই আজাদ সাহেব ও সাজ্জাদ সাহেব এসে হাজির হবেন রাতের খাবার খেতে। অফিস থেকে ফিরে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন এতক্ষণ তারা।
বিনীও হাতে হাতে সবকিছু এগিয়ে দিল। খাওয়া দাওয়া হলো। খেতে বসে কথা কেউ বলেনি। সবশেষে শাহিদা খাতুন বিনী আর আফিফাকে বললেন ‘ তোমরা ঘরে যাও। ঘরের জানালা,দরজা আমি আর জাহানারা লাগায় দিমু। ‘
শাশুড়ির কথা অগ্রাহ্য কেউই করেনি। আফিফা গেল নিজের ঘরের দিকে আর বিনী উপরে উঠে এলো। ঘরে ঢুকেই সে দেখলো আবির তার জন্য বেলি ফুলের মালা হাতে বিছানায় বসে আছে। বিনী ওর দিকে এগিয়ে গিয়ে ওর সামনে পিঠ দিয়ে মেঝেতে বসে বললো ‘ বেণীটা খুলো না। আম্মা করে দিয়েছেন। ‘
বিনীর কথায় আবির হাসলো। বিনীর চুলে মালা জড়াতে জড়াতে সে বলল ‘ বুঝেছি। দুই শাশুড়ি,বউ মিলে এক দল হয়ে আমাকে শায়েস্তা করবে। আফিফা ভাবি তো এমনি করে। ভাইজানের উপর রেগে গেলে আম্মার কাছে নালিশ করে। আর আম্মা দেয় ভাইজানকে এক ধমক। আম্মার ধমক খেয়ে ভাইজান ওখানেই স্তব্ধ। আমরা দুই ভাইই আব্বা অপেক্ষা আম্মাকে একটু বেশি ভয় পাই। ‘
মালা গাঁথা শেষে বিনী তার বেণীর গোছা সামনের দিকে এনে দর্পণের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। দর্পণে তার শাড়ি পড়া, বেণীতে বেলি ফুল জড়ানো প্রতিবিম্ব দেখা যাচ্ছে। কালও আবির মালা গেঁথে দিয়েছিলো। কিন্তু পার্থক্য শুধু এটাই কাল সেটা বেণী করেছিল আবির আর আজ সেটা শাহিদা খাতুন। বিনীর মনে হচ্ছে তার মনে থাকা যৌথ পরিবারের প্রতি ভয়টা যেন আস্তে আস্তে কেটে যাচ্ছে। তার মনে হচ্ছে যৌথ পরিবার অতটাও ভয়ানক নয় যতটা লোকে বলে। তার মা সালমা ইসলাম শুধু শুধুই চিন্তা করছিলেন।
—-
আবিরকে জড়িয়ে ধরে তার বুকে মাথা রেখে শুয়ে আছে বিনী। আবির ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। বিনী ঘুম ঘুম পাচ্ছে। সে হাই তুলতে তুলতে আবিরকে বললো ‘ শুভ রাত্রি ‘।
আবির হাসলো। বললো ‘ এখন থেকে তাহলে রোজ আমায় জড়িয়ে ধরে ঘুমিও। বালিশে তো আর তোমার ঘুম হয়না। ‘
আবিরের কথায় বিনী কিঞ্চিৎ লজ্জাই পেলো কিনা।সে আবিরকে ছেড়ে সরে যেতে চাইলো কিন্তু আবির ছাড়লে তো। আবির ওকে আগলে ধরে রেখেছে। অগত্যা বিনী আর জোরাজুরি করলো না। আবিরকে জড়িয়ে ধরেই সে ঘুমের রাজ্যে পাড়ি দিলো।
—-
বিনীদের বাড়ি যাওয়ার আগে ও বাড়ির সবার জন্য কেনাকাটা করতে বেরিয়েছিল আবির আর বিনী। কাজ শেষে দুজনেই ফিরে এসেছে। বাড়ি ফিরতেই শাহিদা খাতুন তাকে আর আবিরকে তাড়া দিলেন বেরিয়ে পড়ার জন্য।
শাহিদা খাতুন একে একে বেশ কয়েকটা আচার বিনীর ব্যাগে ভরে দিলেন। সঙ্গে কিছু তরী তরকারীও দিলেন। সব মিলিয়ে বিনীদের তিনটে ব্যাগ হয়েছে। সবগুলোই গাড়িতে তোলা হয়েছে। মদু কাকা তুলে দিয়েছেন। মদু কাকা হলেন আবিরদের পুরনো ড্রাইভার। সবাইকে বিদায় জানিয়ে আবির আর বিনী উঠে বসলো গাড়িতে। গাড়িতে উঠার আগে বিনী শাহিদা খাতুনকে তার আর আজাদ সাহেবের ওষুধ মনে করে খাওয়ার কথা মনে করিয়ে দিয়েছে।
অবশেষে বিদায় নিয়ে বিনীদের বাড়ির উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করলো ওরা। পথ স্বল্প তাই পৌঁছাতে বেশি সময় লাগলো না। ওরা পৌঁছতেই জহির সাহেব আর সালমা ইসলাম সঙ্গে আসফিয়া বেরিয়ে এলেন। বিয়ে হয়ে যাওয়ায় মেহমান সব চলে গেছে আর প্রকান্ড বাড়িটাও খালি। সব জিনিস গুছিয়ে বিনী আর আবির গেলো ঘরে বিশ্রামের জন্য।
—-
দোকানে বসে হিসাবের অঙ্ক কষছে সরাব। এই মাসের হিসাবটা কিছুতেই মিলছে না। বারবার জগাখিচুড়ী হয়ে যাচ্ছে। আসল কথা মাথায় এক চিন্তা রেখে অঙ্ক কষতে বসলে এমনই হয়। বাধ্য হয়েই মাথা ঠাণ্ডা করতে অঙ্ক ছেড়ে উঠলো সরাব। মজুমদার মিয়াকে দোকানের দেখাশোনার কাজে বসিয়ে রেখে সে এগোলো টংয়ের দোকানের দিকে। এখন এক কাপ আদা চা খেলে তার মাথাটা ঠান্ডা হবে।
দোকানের বেঞ্চিতে বসে চায়ের কাপে চুমুক বসাচ্ছিল সরাব। এমন সময় তার বিপদের বন্ধু আশরাফ এসে হাজির। এক কাপ দুধ চা দিতে বলে সে সরাবের পাশেই বসল। গম্ভীর মুখে বললো ‘ শুনলাম তুই তোর কাকাতো বোন রুনাকে বিয়ে করেছিস ? ‘
‘ হ্যাঁ ‘
সরাবের কথায় অসন্তুষ্টি নিয়ে আশরাফ বললো ‘ মানলাম বিনীদৃতাকে ভুলতে পারছিস না। তাই বলে এখন বিয়ে করে অন্য মেয়ের জীবন কেন নষ্ট করলি ? আগে কিছুদিন অপেক্ষা করা যেত না নাকি ? আগে তুই ওই মেয়েকে নিজের মাথা থেকে ঝাড়তি তারপর নাহয় বিয়ে করতি। ‘
‘ বিনীকে পছন্দ করতাম তারমানে এই না তার বিয়ে হয়ে যাওয়াতে তার দুঃখে আমি শোকাহত হয়ে আজীবন চিরকুমার থেকে যাবো। আমার আম্মা আছেন। তার দেখাশোনার জন্যও একজন প্রয়োজন। ‘ সরাব বিরক্তি মুখে বললো।
‘ কাকীর প্রয়োজনটা দেখলি অথচ নিজের সুখটা দেখলি না। ‘ এক প্রকার আফসোসের সুরেই বললো আশরাফ।
আশরাফ আর কোনো কথা বাড়ায়নি। সে সরাবের সঙ্গে নীরবেই চা খাচ্ছে। তাদের চা খাওয়ার মাঝেই অনির্বাণ এলো। সেও চা দিতে বলে সরাবদের মুখোমুখি বসলো। জিজ্ঞেস করলো ‘ বিনীদৃতা এসেছে জানিস ? ‘
অনির্বাণের কথায় আশরাফকে বিস্মিত দেখালেও চমকালো না সরাব। সে চা খেতে খেতে বললো ‘ বিয়ে হয়েছে তার। বিয়ের পর স্বামী নিয়ে বাবার বাড়ি ঘুরতে আসবে এটাই স্বাভাবিক। এটা সবে শুরু, তোর আর আমার জন্য তো ওর বাবার বাড়ি ঘুরতে আসা ও বিসর্জন দিবে না। ‘
অনির্বাণ আর আশরাফ দুজনেই দীর্ঘশ্বাস ফেললো। বিনীর বিয়ে হয়ে যাওয়াতে যে তাদের বন্ধু এরকম হয়ে যাবে এটা তাদের জানা ছিল না। দোষটা কি ছিল সরাবের ? তার ভালোবাসায় তো কোনো খাদ ছিল না। তাহলে এত ভালোবেসেও কেন মানুষটাকে পেলো না ?
—-
দুপুরে সকলে একসঙ্গে খেতে বসেছে। জহির সাহেব আবিরের দিকে মুরগি রোস্টের বাটিটা এগিয়ে দিয়ে বললেন ‘ বাবা বেশি করে নাও। কোনো সংকোচ বোধ করো না। এটা তোমারই বাড়ি। ‘
‘ নিচ্ছি বাবা। ‘
আবির জহির সাহেবের কথায় নিচ্ছি তো বলে দিলো কিন্তু আদতে সে সংকোচ ঠেলে আগ বাড়িয়ে কিছুই নিতে পারছে না। সালমা ইসলাম আবিরের এই সংকোচ দেখে নিজ হাতে তরকারি দিয়ে দিলেন ওর পাতে। সম্মানিত চোখে আবির মাথা নুইয়ে সম্মান জানালো সালমা ইসলামকে এবং খাওয়ায় মন দিল।
জহির সাহেব এবং আবিরকে খাইয়ে দিয়ে আসফিয়া, বিনী এবং সালমা ইসলাম একসঙ্গে আসফিয়ার ঘরে খেতে বসেছেন। ইচ্ছে করলে সবার সঙ্গেই খেতে পারতেন কিন্তু সালমা ইসলামের হুট করে আলাদা করে মেয়েদের নিয়ে একসঙ্গে খাওয়ার মনোবাসনা জেগে উঠেছে।
বিনী খেতে খেতে লক্ষ্য করলো সালমা ইসলাম কথা বলছেন না। বিনী ধীর লয়ে বললো ‘ মা বিয়েটা নিয়ে কি তোমার এখনও আপত্তি আছে ?তুমি এসে থেকে আবিরের সঙ্গে কথা বলনি। ‘
বোনের কথায় চোখ তুলে তাকালো আসফিয়া। সে জানতো সালমা ইসলামের মেয়ে যৌথ পরিবারে বিয়ে দেওয়া নিয়ে আপত্তি আছে। কিন্তু তাদের মা যে সেই রাগ এখনও পুষে রেখে নতুন জামাইয়ের সঙ্গে কথা বলেনি সেটা তার জানা ছিল না।
মেয়ের কথার জবাবে কিছু বললেন না সালমা ইসলাম। বিনী খেতে খেতেই বললো ‘ যৌথ পরিবারে বিয়ে হয়েছে ভেবে তুমি যদি আবির এবং ওর পরিবারের সাথে সুসম্পর্ক না রাখো তাহলে সেটা তোমার সবথেকে বড় ভুল হবে। ‘
এরপর আর কথা হয়নি সালমা ইসলামের সঙ্গে বিনীর। হাত ধুয়ে সে ঘরে চলে এসেছে। আবির তখন ওর জন্য বসে অপেক্ষা করছিল। ওকে ফিরতে দেখে সে নড়েচড়ে বসলো। বিনী গিয়ে ওর পাশে শুয়ে পড়লো। বললো ‘ এখানে তো চলে এলে। এখন আমার জন্য বেলি ফুলের মালা আনবে কে ?’
‘ কোনোকিছুই আমাকে তোমার জন্য বেলি ফুলের মালা আনা থেকে আটকাতে পারবে না। মালা তুমি পেয়ে যাবে। ‘
বিনী আবিরের কথার প্রতি উত্তরে কিছুই বলতে পারেনি কারণ ততক্ষণে সে গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। তার আর জগৎ সংসারের প্রতি মন নেই। সে হারিয়েছে নিদ্রার রাজ্যে। বিনীকে ঘুমাতে দেখে আবির ভাবলো সময় আছে ঘুমিয়ে নেওয়া যায়। সেও শুয়ে পড়লো।
—-
বিনীর ঘুম ভাঙলো আসফিয়ার ডাকে। আসফিয়া ওকে পাশ থেকে ডাকছে। বিনী বিছানা ছেড়ে উঠে বসলো। ওকে উঠতে দেখে আসফিয়া বললো ‘ আপা তুই বসার ঘরে চল। ‘
‘ কেন ? ‘ হাই তুলতে তুলতে বললো বিনী।
‘ শাহিদা আন্টি টেলিফোন করেছেন। ‘
শাহিদা খাতুনের কথা শুনে বিনী বিছানা ছেড়ে নেমে দ্রুত হাঁটা দিলো। বসার ঘরে তখন গম্ভীর মুখে সালমা ইসলাম বসেছিলেন। মেয়ে সবে বাপের বাড়ি এসেছে। এখনই তার শাশুড়ির ফোন করা উনার মনঃপুত হয়নি। বিনীকে ঢুকতে দেখে উনার কুঞ্চিত ভ্রু আরও কুচকে গেলো।
‘ আসসালামু আলাইকুম আম্মা ‘ সোফায় বসে কানে টেলিফোন ধরে বললো বিনী।
‘ সবকিছু নিলা অথচ বোনের লেইগা জলপাইয়ের আচারটা নিলা না। এমনে কেউ ভুইলা যায় ? ‘
শাহিদা খাতুনের কথা শুনে বিনীর কণ্ঠ খাদে নেমে গেলো। ও মৃদু গলায় অপরাধী সুরে বলল ‘ দুঃখিত আম্মা। মনে ছিল না। ‘
‘ হইসে হইসে এখন আর মন খারাপ করবার কোনো দরকার নাই। বাপের বাড়ি গেছো, এই কয়দিন প্রজাপতির মতো উইড়া বেরাইবা। ভুইলা গেছো বইলা মন খারাপ করবা না। আমি জাদিদরে পাঠাইসি। ও আচার নিয়া যাইতাছে। ‘
শাহিদা খাতুনের আদর মাখা শাসন শুনে বিনীর মনটা শান্ত হলো। আজ সারাটাদিন এই মানুষটার কথা শোনার জন্যই মনটা খচখচ করছিলো। ও বললো ‘ এত কষ্ট করার প্রয়োজন ছিল না আম্মা। দ্বিতীয়বার নাহয় নিয়ে আসতাম। ‘
‘ তোমার দ্বিতীয়বার যাওয়ার আশায় বইসা থাকা বোকামি। কখন না কখন যাবা সেই আশায় বসে থাকবো নাকি। বেশি কথা না বইলা জাদিদের কাছ থেইকা আচার নিবা আর তোমার আম্মার জন্য আমসত্তা পাঠাইছি। ওটাও নিও। এখন রাখো, সন্ধ্যার নাস্তার যোগান দেয়া লাগব। ‘
‘ আসসালামু আলাইকুম আম্মা। ‘
‘ ওয়ালাইকুম আসসালাম বউ ‘
নিজের চাওয়ার চেয়েও বেশি সম্মান শাশুড়ির কাছ থেকে পেয়ে অশ্রুসিক্ত বিনী যখন টেলিফোনটা রাখলো সন্দেহপ্রবণ সালমা ইসলাম তখনও তার দিকে এক দৃষ্টে তাকিয়ে। মেয়ের চোখের পানি দেখে তার সন্দেহ হচ্ছে। মায়ের এই দৃষ্টি দেখে দীর্ঘশ্বাস ফেললো বিনী। আসফিয়াকে বললো ওর চাচাতো দেবর জাদিদ আসছে, সে আসলে যেন বিনীকে ডাকা হয়। আসফিয়া বোনের কথায় বললো সে ডেকে দিবে। বিনী ঘরের দিকে গেলো। তার একটু পরিপাটি হওয়া দরকার তাছাড়া আবির কোথায় সেটাও দেখতে হবে। ঘুম থেকে উঠে পায়নি তাকে।
~চলবে ইনশাআল্লাহ্….
(এই উপন্যাস শুরু করেছি ঠিকই কিন্তু এখন আমি অথৈ সাগরে। এই ধরনের উপন্যাস লেখা সহজ নয়। আমি আমার নরমাল কমফোর্ট জোন থেকে বেরিয়ে আলাদা সেক্টরে লিখছি তাই বারবার লিখেও কেটে দিতে হচ্ছে শুধুমাত্র আমার সবসময়কার মডার্ন যুগ লিখে ফেলছি বলে।)