এখানে বেলি ফুলের মালা-৭,০৮

0
302

এখানে বেলি ফুলের মালা-৭,০৮

০৭
————————-

বাসায় কলিং বেল বাজছে। বিনী রান্নাঘরে ছিল আর আসফিয়া ছিল খাবার ঘরে। কলিং বেল বাজার শব্দে সঙ্গে সঙ্গে সালমা ইসলামের কান খাড়া হয়ে গেছে। খাবার ঘর থেকে সদর দরজা কাছে হওয়ায় আসফিয়া এগিয়ে গেলো দরজা খুলতে। দরজা খুলতেই দরজার ওপাশে পরনে এক কালো শার্ট ছেলেকে দেখলো সে। ছেলেটা অন্য পাশে ফিরে আছে।

‘ জি, কাকে চাই ? ‘

আসফিয়ার কথায় জাদিদ সামনে ফিরলো এবার। তবে সপ্তদশী আসফিয়ার সদ্য প্রস্ফুটিত গোলাপের পাপড়ির মতো ভরা টসটসে সৌন্দর্যের সামনে তার পুরুষালি সৌন্দর্য্য ফিকে পড়ে গেলো। সে তাকিয়ে রইলো অদ্ভুত সম্মোহিত চোখে। বিনীদের বাসায় আগে শুধু বিয়ের দিনই এসেছিল। বিনী আর আবিরের বিয়ের কথাবার্তা চলাকালীন তার এক্সাম থাকায় সে আসতে পারেনি।

বিয়ের দিনও তো এসেছিল জাদিদ। তখন তাহলে এই সুন্দরী কমলা ছিল কোথায় ? কোথায় তাকে তো চোখে পড়েনি। জাদিদকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে আসফিয়া ভ্রু কুঞ্চিত চোখে কিছু বলতে চেয়েছিল কিন্তু তার আগেই বিনী এসে হাজির। বেসন মাখানো হাতে জাদিদকে দেখে সে বললো ‘ যাক এসেছ। তোমার জন্য চিন্তা হচ্ছিল। এর আগে মাত্র একবার এসেছ। বলা যায়না পথ চিনে আসতে পারতে কিনা। দাড়িয়ে আছো কেন ? ঘরে আসো না। ‘

বসার ঘরের সোফাতে বসে আছে জাদিদ। তার সামনেই মুখোমুখি সালমা ইসলাম। তিনি তীক্ষ্ণ নজরে ওকে দেখছেন যেন অপরাধীর অপরাধ জরিপ করছেন। জাদিদ সালমা ইসলামের এই দৃষ্টির সামনে অসস্তিতে পড়ে যাচ্ছে কিন্তু কিছু বলতেও পারছে না। তাকে অসস্তির হাত থেকে বাঁচাতেই বিনীর আগমন। ও পেঁয়াজু,বেগুনি, আলুর চপ ভেজে এনেছে। ওকে চা, নাস্তা নিয়ে ঢুকতে দেখে জাদিদ বললো ‘ কি প্রয়োজন ছিল এতকিছু করার ? আমি তো আর থাকতে আসিনি। ‘

‘ আমার কি করার প্রয়োজন ছিল সেটা নাহয় আমিই বুঝবো। তুমি শুধু খাও। আসফিয়া পানির গ্লাসটা নিয়ে আয়। ফেলে এসেছি গ্লাস। ‘

জাদিদের কথার বিপরীতে বললো বিনী। বিনীর ডাকে আসফিয়া পানির গ্লাস নিয়ে এলো। জাদিদের সামনে থাকা টি টেবিলে গ্লাস রাখলো সে। গ্লাস রেখে সোজা হয়ে হাঁটা দিতে গিয়েই সে লক্ষ্য করলো জাদিদ তার দিকে তাকিয়ে আছে। সেই দৃষ্টিতে নেই কোনো লালসা কিংবা কামুকতা। শুধুই আছে মুগ্ধতা। জাদিদের এই মোহময়ী দৃষ্টির সামনে বেশিক্ষণ টিকলো না আসফিয়া। দ্রুত সে বসার ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো।

আবিরের চাচাতো ভাইয়ের আগমনে বেশ বিরক্ত সালমা ইসলাম। এমনিতেই মেয়ের যৌথ পরিবারে বিয়ে মেনে নিতে পারছেন না। তার উপরে মেয়ে বাপের বাড়ি আসতে না আসতেই শাশুড়ির ফোন আর এখন দেবরের আগমন। বিনীর বিয়ের পর থেকে তার শশুর বাড়ির প্রত্যেকের কাজেই যেন সালমা ইসলাম অনৈতিকতা খুঁজে পাচ্ছেন। উনি শুধু শুধুই বিরক্ত হয়ে পড়ছেন।

চা, নাস্তা খাওয়া শেষে বিনীর কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বেরিয়ে পড়লো জাদিদ। সে অবশ্য আশা করেছিলো যাওয়ার পূর্বে একবার হলেও আসফিয়ার চাঁদ মুখখানা তার নজরে পড়বে কিন্তু আসফিয়া সেই সময়ের পর আর দেখা দেয়নি। বাধ্য হয়েই মন খারাপ বেশে সে ফিরে গেলো ক্লান্ত,পরাজিত পথিকের ন্যায়।

এতক্ষণ সালমা ইসলামের প্রত্যেকটা পদক্ষেপ লক্ষ্য করেছে বিনী। ও জানে সালমা ইসলাম ওর শশুর বাড়ির লোকদের পছন্দ করেন না। এর পিছনে অন্যতম কারণ হলো তার অমতে বিনীর বিয়ে যৌথ পরিবারে হয়েছে। উনি কখনোই চাননি উনার দুই মেয়ের একজনও যৌথ পরিবারে বিয়ে করুক। নিজে এত বছর যৌথ পরিবারে বিয়ে করে শাশুড়ি, ননদ, জায়েদের কাছে অত্যাচারিত হয়েছেন। নিজের মেয়ের বেলায় এমনটা তিনি মেনে নিবেন না।

সালমা ইসলাম তার বেলায় ঘটা ঘটনাগুলোর জন্য অবচেতন মনেই ধরে বসে আছেন যৌথ পরিবারে বিয়ে হওয়া মানেই জীবন নষ্ট হয়ে যাওয়া। কিন্তু উনার খেয়ালে নেই সব মানুষ এক নন। যেই মানুষটার মনেই যৌথ পরিবার সম্পর্কে এত বড় খারাপ ধারণা পুষে রাখা তাকে আর বোঝানো যায় না। অবুঝকে বুঝানো সম্ভব কিন্তু যে বুঝেও বুঝতে চায় না তাকে বুঝানো সম্ভব নয়।

—-

দরজা ধাক্কানোর শব্দ শোনা যাচ্ছে। রুনা চুলায় তরকারি রেখেই দ্রুত ছুটে গেলো দরজা খুলতে। রান্নাঘর ছেড়ে বেরোনোর আগে নূরজাহানকে বলে এসেছে তরকারিটা যেন দেখেন। দরজা খুলতেই ক্লান্ত শরীরে ঘামে ভিজে জবজবে হয়ে উঠা সরাবের দেখা মিলল। হাতে বাদামি রঙের কাগজ মোড়ানো চারকোনা বস্তু।

রুনা দরজা খুলতেই সরাব ঘরে ঢুকলো। রুনা সরাবকে ফিরতে দেখে রান্নাঘরের দিকে গেলো। সরাব তখন সবে গায়ের শার্ট ঝুলে মেঝেতে বসেছে। রুনা শরবত হাতে ওর কাছে এসে দাঁড়িয়েছে। ওর দিকে শরবতটা বাড়িয়ে দিয়ে রুনা বললো ‘ শরবতটা খাও ‘।
সরাব হাত বাড়িয়ে গ্লাসটা নিয়ে ঢকঢক করে খেয়ে নিল শরবত। সে আজ বড্ড ক্লান্ত। মাথা যেন ধরেছে।

শরবতের গ্লাসটা সরাবের হাত থেকে নিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো রুনা। যাওয়ার আগে বলে গেলো সরাব যেন দ্রুত হাত মুখ ধুয়ে খেতে আসে। সরাব সেই মতে জামা কাপড় বদলালো তারপর হাত মুখ ধুয়ে খেতে বসলো। নূরজাহান আজ অনেকদিন পর ছেলের সঙ্গে হেসে হেসে কথা বলছেন। সারাদিন রুনার সঙ্গ পেতে এখন আর ক্ষণে ক্ষণে মেজাজ হারান না।

‘ রুনাকে নিয়ে কাল কাছে কোথাও থেকে ঘুরে আসিস সরাব। মেয়েটা আমার সারাদিন ঘরে থাকে। তোদের বিয়ের পরে তো তোরা একসঙ্গে কোথাও যাসনি। ‘

নূরজাহান ব্যবহার যতই খারাপ করেননা কেন সরাব কখনও উনার কোনো কথার উপরে কিছু বলেনি কিংবা অবাধ্য হয়নি। কাজেই রুনাকে বাইরে নিতে গিয়ে ঘুরিয়ে আনার প্রস্তাবটা তার কাছে অসম্ভব কিছু মনে হলো না। তাছাড়া এমনিতেও তো এক না একদিন তার রুনাকে মেনে নিতেই হবে। আর যাই হোক রুনা তো তারই বিয়ে করা বউ।

নূরজাহানের কথায় রুনা আপত্তি করেছিল কিন্তু নূরজাহানের দৃঢ় ইচ্ছার সামনে রুনার সেই আপত্তি ফিকে পড়ে যায়। তাছাড়া তাকে বাইরে নিয়ে যাওয়া নিয়ে সরাব আপত্তি তো দূর উল্টো এক কথায় মেনে নেয়। সরাবের এই পরিবর্তনে স্তম্ভিত রুনা আর কথা বাড়ায়নি। সে চুপচাপ থাল প্লেট নিয়ে উঠে রান্নাঘরের দিকে যায়।

সরাব মেঝেতে কুপি জ্বালিয়ে দোকানের কাজ নিয়ে বসেছে। সকালে যেই হিসাবখানা মিলাতে পারেনি এখন তাই মিলাচ্ছে। তার হিসেব মিলানোর মাঝেই রুনা কাজ সেরে উঠানের শুকনো কাপড়গুলো নিয়ে এসে ঘরে এসে ঢুকলো। বাকি ঘরগুলোর কুপি নিভিয়ে দিয়েছে। এমনিতেই তেলের যা খরচ বাড়ছে তাতে তাদের মতো মধ্যবিত্ত পরিবারের বেচেঁ থাকা কষ্টের হয়ে দাড়াবে।

সামর্থ্য থাকলেই সবসময় খরচ করতে নেই। ভবিষ্যতের জন্যও জমানো প্রয়োজন। সরাব কাল রুনাকে হাত খরচের টাকা দিয়েছিলো। রুনা তার পুরোটাই তুলে রেখেছে। সে তো ঘরেতেই থাকে কাজেই টাকা খরচ করার প্রয়োজন নেই। এর থেকে বরং টাকাটা তোলা থাকলে সেটা এক সময় ঘরের প্রয়োজনে কাজে লাগানো যাবে।

রুনা ঘরে ঢুকেই বিছানার উপর ফেলে রাখা শুকনো কাপড় গুছাতে ব্যস্ত। তাদের বাড়িটা ছোট। দুটো ঘর আর একটা রান্নাঘর সঙ্গে বাড়ির সামনে প্রকান্ড আঙ্গিনা। তবুও ঘরদোর পরিষ্কার করতে গিয়ে সারাদিন সময় লেগে যায়। সকাল থেকে উঠেই ভাত বসানো তারপর তাড়াতাড়ি করে সরাবযে ভাত দেওয়া থেকে শুরু করে রাতে শুকনো কাপড় গুছিয়ে রাখা পর্যন্ত সবই সে আর নূরজাহান মিলে করে। তিনজন মানুষের সংসারে যা কাজ থাকে তার সব নূরজাহান এবং সে মিলে করাতে পরিশ্রম কম হয়।

সরাব তার হিসেবের খাতায় সংখ্যা বসাতে বসাতে বললো ‘ কাঠের টেবিলের উপর একটা বাদামী রংয়ের চারকোনা প্যাকেট আছে। ওটা নিয়ে এখানে এসে বস তো। ‘
রুনা তখন কাপড়গুলো গুছিয়ে রেখে বেতের চেয়ারের উপর রাখছিল। সকালে উঠে যার যার ঘরে কাপড়গুলো রাখবে। সরাবের কথায় কাঠের টেবিলের দিকে নজর দিল সে। একটা চারকোনা পেট মোটা বাক্স রাখা। রুনা সেটা হাতে তুলে নিয়ে সরাবের সামনে কুপি জ্বালানো আলোতে গিয়ে বসলো।

‘ বাক্সটা খোল ‘

রুনা সরাবের কথায় কিছুক্ষণ ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থেকে বাক্সটা খোলার কাজে হাত দিল। বাদামি রং এর মোড়ক সরাতেই করতেই ধীরে ধীরে উন্মোচন হলো রুনার কলেজের বইগুলো। রুনা তার নিজের বই দেখে অবাক হয়ে বললো ‘ এগুলো তো আমার বই। তোমার কাছে কি করে ? ‘

‘ বিয়ের বাহানা দিয়ে এই কয়দিন তো ঠিকই পড়াশোনা ছেড়ে ঘুরে বেড়িয়েছিস। এখন থেকে আর এসব চলবে না। আজ থেকে রোজ পড়তে বসবি। রোজ তো কলেজ যেতে পারবি না কাজেই শুধু পরীক্ষাটা দিলেই হবে। বিয়ে করে পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যাবে এমনটা হতে দিবো না আমি। ‘

রুনা সরাবের কথায় আজ শুধু অবাকই হচ্ছে। সরাব তাকে নিয়ে এত ভাবছে, তার পড়াশোনা বন্ধ হোক চায় না। সরাবের এই অল্প স্বল্প যত্ন তার মনে আনন্দের ধুম লাগিয়ে দিয়েছে। সে শুধু কোনোমতে মাথা নেড়ে বললো ‘ আচ্ছা ‘। সরাব ওর হিসাবের খাতায় সংখ্যা বসাতে বসাতে বললো ‘ পাশের বাড়ির রুমা খালা আছেন, উনি অনার্স পাস। উনার কাছেই এখন থেকে রোজ পড়বি। উনি নিজে এসে পড়িয়ে যাবেন তোকে। আমি কথা বলে রেখেছি তার সাথে। চলবে না ? ‘

রুনা সরাবের কথায় হাসলো। বলল ‘ দৌড়বে ‘। সরাব আড়চোখে একবার রুনাকে দেখলো। রুনার চোখে জল আর ঠোঁটে হাসি। মেয়েটার সঙ্গে ভালো করে কথা বলে আজ তার শান্তি লাগছে। এই কদিন সে কথাই বলেনি ওর সাথে। কিন্তু এখন আর এমন করবে না। রুনা তো ওর নিজের বিয়ে করা বউ।

—-

আবিরের জন্য অপেক্ষা করতে করতে বিনী ঘুমিয়ে পড়েছিল। রাত তখন আনুমানিক তিনটে। বিনীর হঠাৎ ঘুম ভেংগে গেল। ঘুম ভেংগে সে নিজেকে বিছানায় আবিষ্কার করলো অথচ সে খাবার টেবিলে আবিরের জন্য বসে অপেক্ষা করছিল। তাহলে এখানে এলো কি করে সে ? বিনী চিন্তিত হয়ে অন্য পাশে ফিরলো কিন্তু আরেক পাশে ফিরতেই দেখলো আবির তার পাশেই হাতের উপর মাথা রেখে শুয়ে আছে।

আবিরকে দেখে খানিকটা চমকেই উঠলো বিনী। আবির কখন ফিরেছে সে টের পায়নি। অথচ আবির কি নিশ্চিন্তে তার দিকে তাকিয়ে আছে অপলক চোখে। তার দৃষ্টির নেই কোনো নড়চড়। বিনীকে জেগে উঠতে দেখেও আবিরের মুখে কোনো রা নেই। সে ঘরের হলদে টিমটিমে বাতিতে এক নজরে দেখে যাচ্ছে বিনীকে।

হলদে টিমটিমে আলোতে বিনীর চোখ মুখ পুরোপুরি দেখা যাচ্ছে না তবে মুখের অদল বোঝা যাচ্ছে। আবির তাকিয়ে আছে বিনীর দিকে। বিনীর মায়া মায়া মুখখানা তার খুব প্রিয়। মনে হয় যেন এই মায়া ভরা অদলের মায়া সে কোনওদিন কাটাতে পারবে না।

বিনী অবাক হয়ে দেখছে আবিরকে। আবিরের এই দৃষ্টি সে এমন আগে দেখেনি। বাহিরে পাল্লা দিয়ে বৃষ্টি ঝরছে। যেন এই গুরুগম্ভীর পরিবেশকে নিমেষেই প্রেমময় করে তুলবে। ক্ষণে ক্ষণে বাজও পড়ছে। বিনী কখনও বাজের শব্দে ভয় পায় না। কিন্তু আবিরের ওই ঘোর লাগা দৃষ্টির দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে যখন অন্যমনস্ক ভঙ্গিতে বাজের শব্দ পেলো তখন সে কেপে উঠলো।

ভয়ে বিনীর কমলার কোয়ার মতো ঠোট দুটো কেপে উঠলো। শরীর কাটা দিয়ে উঠেছে। আবির কেমন সম্মোহন চোখেই সরে এলো ওর দিকে। ওর মায়াবী মুখখানা নিজের দুই হাতের আজলা ভরে তুলে নিলো। নিঃশব্দে অধরে অধর ছুয়ে দিয়ে নিজের প্রচ্ছন্ন অনুভূতির জানান দিলো। আবিরের অধরের স্পর্শে বরাবর নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে নিজেদের অন্তরঙ্গতার ব্যাপারটা এড়িয়ে যাওয়া বিনীও যেন কেমন এলোমেলো হয়ে গেলো।

বিনীর এই কদিনের সংযমে ভাঙন ধরেছে। চোখ দিয়ে গড়িয়ে পড়ছে ফোঁটা ফোঁটা অশ্রু। সেই এক রত্তি অশ্রুর দিকে তাকিয়ে মেঘ রাজ যেন হেসে উঠলেন। তিনি এক ইশারায় এলো হাওয়া এবং অভিমানী বর্ষণ দুয়েরই গতি বাড়িয়ে দিলেন। বিনীর লম্বা বেণীতে গেঁথে থাকা আবিরের কিয়ৎক্ষণ পূর্বে আনা বেলি ফুলের মালা চূর্ণ বিচূর্ণ হতে শুরু করেছে। নিঃশব্দ রাত হয়ে উঠেছে বেলি ফুলের মালায় জড়ানো এক অন্যরকম বিষণ্ণময় ভালবাসার রাত।

~চলবে ইনশাআল্লাহ্
মিফতা তিমু

ছবিয়াল: Maksuda Ratna

এখানে বেলি ফুলের মালা-৮
————————-

সবে সকাল আটটা…চারদিকে ঝলমলে রোদ্দুর। কাল মাঝ রাতের দিকে যে এত ঝড়,বৃষ্টি হয়েছে তার এখন কোনো নাম গন্ধই নেই। সূর্যি মামা পূর্বে উকি দিয়ে বহু ক্ষণ পূর্বেই। গরম গরম ভাত সরাবের পাতে বেড়ে দিয়ে বসেছে রুনা। নূরজাহান খেয়ে উঠেছেন একটু পূর্বে। সরাব এতক্ষণ ঘুমোচ্ছিল কিন্তু মাত্র উঠে হাত,মুখ ধুতে গিয়েছে সে। জামা, কাপড় বদলে একেবারে তৈরি হয়ে পাটিতে বসলো ও।

সরাবের পাতে এক পাশে আলু ভর্তা এবং শিং মাছ দিয়ে আলুর তরকারি দিলো রুনা। রুনার তরকারি দেওয়া হতেই সরাব দ্রুত খাওয়ার কাজে মন দিল। খেয়ে বের হতে হবে তার। আজ তাড়াতাড়ি কাজ শেষ করে দুপুরের দিকে ফিরবে তারপর খেয়ে দেয়ে রুনাকে নিয়ে কাছের এক পার্কে যাবে। রুনার সঙ্গে তার বিয়ে হয়েছে এবং সে রুনাকে তার ভরণ পোষণও দিচ্ছে কিন্তু সেটা আক্ষরিক অর্থে। তাদের বিয়ের পর এখন পর্যন্ত শরীয়ত সমেত সে স্বামীর সব দায়িত্ব পালন করে উঠতে পারেনি।

সরাব তার চিন্তা ভাবনা করতে করতেই ভাত খাচ্ছিল কিন্তু লক্ষ্য করলো রুনা খাচ্ছে না, ঠোঁটের কোণে হাসি নিয়ে তাকে এক দৃষ্টে দেখে যাচ্ছে। সরাব জানে রুনা তাকে রেখে খায়না কখনও। কিন্তু এখন সে খাওয়া সত্ত্বেও খাচ্ছে না কেন ? সরাব বললো ‘ কি ব্যাপার ? খাচ্ছিস না কেন ? ‘

‘ তুমি খাও, আমি পরে খাচ্ছি। ‘

রুনার সুমিষ্ট হাসি দেখে খানিকটা অবাক হলো সরাব। রুনার হাসিটা বড্ড সুন্দর। একটু বাড়াবাড়ি রকমেরই সুন্দর বলা যায়। হাসলে তার গণ্ডদেশে টোল পড়ে। রুনাকে সরাব আগেও হাসতে দেখেছে কিন্তু কোনওদিন এভাবে মন দিয়ে তার সেই টোল পড়া হাসি দেখেনি। দেখলে হয়তো বিনী নামক সেই বসন্তের কোকিলের প্রেমে সে পড়তো না যে এসেছিল তার জীবনে শুধুই ক্ষণিকের জন্য।

‘ আমার পরে খেতে হবে কেন ? আমার সঙ্গে খেলে কি সমস্যা ? তোর কি আমার সঙ্গে খেতে বসা পছন্দ না ? ‘

সরাবের কথায় রুনা বললো ‘ হ্যাঁ বলেছে তোমাকে!! তোর কি আমার সঙ্গে খেতে বসা পছন্দ না ?’ শেষের কথাটা রুনা সরাবের মতোই ভেঙ্গিয়ে বললো। সরাব ওর কথা বলার ধরন দেখেও কিছু বলল না। সে নিজে খেতে ব্যস্ত। রুনা তার পাতে ভাত বাড়ছে।

—-

কলেজ শেষে বান্ধবীদের সঙ্গে করে বাড়ির দিকে হাটা দিবে আসফিয়া। বাড়ি থেকে তার কলেজের পথ অনেকটা। তাই পুরোটা পথ যাতে একা আসা যাওয়া করতে নাহয় তাই সে কিছু বান্ধবী জুটিয়ে নিয়েছে। রোজকার মতোই বান্ধবীদের নিয়ে কলেজের বাহিরে এসে দাঁড়িয়েছিল কিন্তু আজ কলেজের সামনে এক নতুন মুখ দেখতে পেলো আসফিয়া। কলেজের সামনে দাড়িয়ে আছে এক সুদর্শন চেহারার চেনা পুরুষ।

জাদিদের ভার্সিটি থেকে আসফিয়ার কলেজের দুরত্ব বেশি নয়। পায়ে হেঁটে মাত্র দশ মিনিট। সেই সুযোগ কাজে লাগিয়েই ভার্সিটি শেষে আসফিয়ার কলেজের সামনে এসে দাঁড়িয়েছে জাদিদ। জাদিদকে দেখেও কোনো প্রতিক্রিয়া করলো না আসফিয়া। বরং সে না দেখার ভান করে এড়িয়ে এগিয়ে গেলো।

আসফিয়ার দুই বান্ধবী রানী আর কুসুমও লক্ষ্য করেছে জাদিদকে। কিন্তু নিত্য দিনের পথচারী ভেবে আর তাকে নিয়ে ভাবান্তর দেখা দেয়নি তাদের মাঝে। তারা নিশ্চিন্তেই বান্ধবীর পিছনে এগিয়ে গেছে। আসফিয়াকে এগিয়ে যেতে দেখে জাদিদও এগিয়ে গেলো ওদের পিছনে। তবে তা দূরত্ব বজায় রেখে।

জাদিদের থেকে মিটার কয়েক সামনেই আসফিয়া এবং তার বান্ধবীরা হাঁটছে। রানী আর কুসুম গল্পে ব্যস্ত। আসফিয়া কথা বলছে না, সে শুধুই তার দুই সখীর কথা শুনছে। জাদিদের হাসি পেলো। একটা আস্ত মানুষ এই তিনজনের পিছন পিছন হাঁটছে অথচ এখন পর্যন্ত কেউ ঘাড় ফিরিয়ে দেখলো না। স্বাভাবিক মানুষ হাঁটলেও তো চারদিকে নজর রাখে। অথচ তারা মশগুল নিজেদের গল্পে।

আসফিয়াদের বাড়ি থেকে কিছুটা আগেই কুসুম আর রানীর বাড়ির রাস্তা আলাদা হয়ে যায়। তিনজন যাচ্ছে তিন দিকে। আসফিয়া তার বন্ধুদের ছেড়ে বাকি রাস্তা একলা যাওয়ার জন্য এগোলে আসফিয়াকে একা পেয়েও জাদিদ এগিয়ে গেলো না। সে পূর্বেই মতোই দূরত্ব বজায় রেখে হাঁটছে।

আসফিয়া বান্ধবীদের থেকে আলাদা হয়ে কিছুটা এগোতেই হঠাৎ দাড়িয়ে পড়ল। পিছন ফিরে জাদিদকে বলল ‘ আপনি কি আমায় অনুসরণ করছেন ? ‘
এই প্রথম আসফিয়া জাদিদের সঙ্গে কথা বলেছে। জাদিদ আসফিয়ার কথা শুনে এগিয়ে গেলো। আসফিয়ার পাশাপাশি সামান্য দুরত্ব বজায় রেখে হাঁটতে হাঁটতে বললো ‘ মোটেই না। আমি ভার্সিটি থেকে ফিরছিলাম। ‘

‘ কিন্তু আপনার ভার্সিটি তো আমার কলেজের উল্টো দিকে পড়ে। তাহলে আপনি এখানে আমার কলেজের সামনে কি করছিলেন ? আমার কলেজ দেখছিলেন বুঝি ? ‘

জাদিদ জানে সে অনেকক্ষণ পূর্বেই ধরা পড়ে গেছে। তবুও আসফিয়ার এই কথায় সে হাসি আটকে রাখতে পারলো না। ঠোঁট চেপে হেসে দিল সে। আসফিয়া ওর হাসি দেখে কিছু বলল না। একাকি,নীরবে তারা পথ চলতে লাগলো। আসফিয়াদের বাড়ির গলির কাছে এসে জাদিদ আর এগোলো না।

আসফিয়ার সঙ্গে জাদিদের পথ অতটুকু অব্দিই। এখন বাকিটা আসফিয়া একলা চলবে। জাদিদ থেমে গেছে, তার সঙ্গে আর এগোবে জানার পরও থামলো না আসফিয়া। সে নিরন্তর পথ চলতে চলতেই একসময় পিছন ফিরে বললো ‘ এভাবে করে রোজ উস্কোখুস্কো চুলে, আলুথালু হয়ে আমার সামনে এসে দাঁড়াবেন না বেয়াই সাহেব। এই সমাজ আপনার চাওয়া কখনোই বুঝবে না। ‘

জাদিদ এক দৃষ্টে তাকিয়ে আছে আসফিয়ার যাওয়ার পথে। আসফিয়া এরপর আর একবারও তার দিকে ফিরে তাকায়নি। সে হেঁটে যাচ্ছে আপন মনে। একসময় তার মায়াবী অবয়ব গলির মোড়ে হারিয়ে গেলো। জাদিদ দীর্ঘশ্বাস ফেলে ফিরতি পথে হাঁটা দিলো। বইছে মৃদু হাওয়া সঙ্গে ঝরা পাতার খচখচ শব্দ।

—-

কাল ধুয়ে দেওয়া কাপড়গুলো ছাদ থেকে তুলে এনেছে বিনী। এখানে তার শাড়ি আর আবিরের শার্ট, প্যান্ট, লুঙ্গি আছে। কাপড়গুলো বিছানায় রেখে সে গুছাতে ব্যস্ত। আবির তখন ঘরের এক কোণায় থাকা আরাম কেদারায় বসে নিত্য দিনের খবরের কাগজ পড়ছে আর এক সিপ এক সিপ করে চায়ে চুমুক দিচ্ছে। খবরের কাগজ পড়তে পড়তেই ‘ ঘুড়ে বেড়ানো ‘ শিরোনামে একটা পার্কের ছবিতে নজর পড়লো আবিরের।

আবির আর বিনীর বিয়ের পর থেকে তারা একদিনও কোথাও একসঙ্গে ঘুরতে বের হয়নি। আবিরের মনে হলো সে এখন ছুটিতে আছে, শশুর বাড়ি এসেছে। এটাই মোক্ষম সময় তার আর বিনীর বাহিরে বেড়াতে যাওয়ার। দূরে কোথাও নয়, এখানেই কাছের কোনো পার্কে।

যেই ভাবা সেই কাজ। আবির ভাবলো বিনীকে এখন বলবে না। বিকেলে হুট করে না জানিয়ে নিয়ে যাবে তারপর চমকে দিবে। তাই আবির আর তার মনে মনে চলা পরিকল্পনা সম্পর্কে উচ্চবাচ্য করলো না। তারা নিত্য দিনের মতোই দুপুরে খাওয়া দাওয়া করলো তারপর সবশেষে বিশ্রাম নিতে যে যার যার ঘরে গেলো।

বিকেলে বিনীর ঘুম থেকে উঠতেই আবির তাকে বললো তৈরি হয়ে নিতে, তাদের বাহিরে যেতে হবে। আবিরের কথায় বিনী খানিকটা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো ‘ বাহিরে কোথায় ? আগে বললে না যে ? ‘

‘ আছে এক জায়গা। আগে জানতাম না, হঠাৎ করেই ঠিক হলো। ‘

আবির তখন হাতে ঘড়ি পড়তে ব্যস্ত তাই বিনী আর কোনো কথা বাড়ালো না। ও শাড়ি পরে তৈরি হয়ে নিলো। দর্পণের দিকে তাকিয়ে কপালের মাঝখানটায় কালো টিপ জুড়ে দিল। হাতে এক গোছা কাচের চুড়ি আর কপালে টিপ। এ যেন কোনো স্বর্গের দুয়ার খুলে বেরিয়ে এসেছে রূপমাধুরী। আবির বিনীকে দেখে কিছু বলতে গিয়েও যেন বললো না। স্রেফ এগিয়ে গিয়ে বিনীর কপালের টিপটা ঠিক করে দিলো।

—-

রুনার খুশি যেন আজ ধরা যায় না। সে শাড়ি পড়ে রিমঝিম নূপুর পায়ে বেণীতে বকুল ফুলের মালা জড়িয়ে ঘরময় বিচরণ করছে। তার মৃদু খিলখিলে হাসি বাতাসের গায়ে ঝংকার লাগাচ্ছে। নূরজাহান নিজের ঘরের দরজা লাগিয়ে ঘুমোচ্ছেন আর রুনা আছে সরাবের প্রতীক্ষায়। সরাবের আজ দুপুরে বাড়িতে ফেরার কথা ছিল কিন্তু সে জরুরি কাজে আটকে পড়ে আর ফিরতে পারেনি বাড়ি। তবে মজুমদার মিয়াকে দিয়ে খবর পাঠিয়েছে যে সে অবশ্যই বিকালে রুনাকে নিয়ে বেরোবে। রুনা সেই প্রতীক্ষাতেই দিন গুনছে।

রুনার অপেক্ষার দীর্ঘতম প্রহর কাটিয়ে যখন সরাব বাড়ি ফিরলো তখন প্রায় বিকেল পাঁচটা। চারটা থেকে রুনা তার অপেক্ষায় বসে আছে কিন্তু সরাবের কোনো দেখা নেই। বিষণ্ণ রুনা তখন চোখের কাজল লেপ্টে দিয়ে অভিমানী মেঘবতীর মতো কাদতে বসেছে। সে যখন হু হু করে কাদতে ব্যস্ত তখনই সরাব এসে ঘরে ঢুকল। রুনাকে কাদতে দেখে সে এগিয়ে গেলো। রুনার সামনে মেঝেতে বসে রুনার কাধে হাত রেখে বলল ‘ কিরে কাদছিস কেন ? ‘

দুঃখিনী রুনা যখন কাদতে কাদতে সরাবের ডাক শুনে মাথা তুললো তখন এই প্রথম সরাবের মনে হলো রুনার হাসির সঙ্গে সঙ্গে তার চোখ দুটোও নজরকাড়া। হরিণী চোখের সঙ্গে দোহারা চেহারা যেন একটু বেশিই মানিয়ে গেছে। ঠোঁট দুটো গোলাপের পাপড়ির মতোই কোমল আর সতেজ। সরাব ভাবলো এই দোহারা সুন্দরীকে কেন সে আগে দেখেনি ? দেখলে অতিথি পাখির ফাঁদে পড়তে হতো না তার ।

সরাবের মনে এক কঠিন ধারণা ছিল যে একমাত্র বিনীর চোখই তার কাছে সৌন্দর্যের প্রতিমা। অথচ জলে ভেসে যাওয়া রুনার হরিণী ছলছল চোখ যেন অন্য কিছু বলে। তাকে নিজের দিকে সমুদ্রের ভাটার মতোই টানতে টানতে বলে ‘ এসো সরাব এসো, এই অনিন্দ্য সুন্দরীর চোখের প্রেমে পড়ো। ‘

” তুমি এত দেরি করলে ? আমি ভেবেছিলাম তুমি ফিরবেই না। ”

সরাব ব্যস্ত ছিল রুনার চোখের ভাষা বোঝার দায়িত্বে। কিন্তু রুনার ডাকে তার গতি হলো। সে খানিকটা হেসে রুনার গোলগাল মুখে হাত রেখে বলল ‘ কথা যখন দিয়েছি তখন ফিরবোই। তুই বস… আমি তৈরি হয়ে আসছি। ‘
কথাগুলো বলে সরাব উঠে গেলো আর রুনা এই কদিনে প্রথমবার সরাবের কণ্ঠে তার প্রতি স্নেহ পেয়ে আনন্দে ঝলমল করে উঠল।

—-

আবিরের সঙ্গে পার্কে এসে দাড়িয়েছে বিনী। আবির তাকে নিয়ে পার্কে আসবে এই আশা সে করেনি। কাজেই সে চমকে গেলো। সে শুধু অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল আবিরের গমন পথে। আবির তার জন্য বাদাম কিনতে গেছে। তাকে পার্কের এক বেঞ্চে বসিয়ে দিয়ে গেছে। বাদাম কিনে যখন আবির ফিরছে তখন তার চোখে মুখে সুন্দর এক হাসি। বিনীর জন্যই যেন সেই হাসি।

‘ পার্কে আসবো এটা আমাকে আগে বললে না কেন ? ‘

বিনীকে বাদামের খোসা ছাড়িয়ে দিচ্ছিল আবির। বিনীর কথা শুনে খোসা ছাড়াতে ছাড়াতেই বললো ‘ ভাবলাম বিয়ের তো কয়দিন হলো কিন্তু তোমাকে নিয়ে কোথাও গেলাম না। তাই ভাবলাম শশুর বাড়ি এসেছি, ছুটি আছে যখন একটু ঘুরিয়ে নিয়ে আসি। তোমার নিজেরও একটু ফ্রেশমেন্ট দরকার। বলা যায়না আবার কখন না কখন সুযোগ হয়। ‘

আবিরের কথায় বিনীর ঠোঁটের কোণ বেকে গেলো। যেন সে সকলের অলক্ষে প্রচ্ছন্ন হাসছে। আবিরও তার সেই হাসি দেখেনি কিন্তু হাসতে হাসতেই যখন বিনী অন্যদিকে তাকালো তখন ওর ঠোটের কোণে থাকা হাসি মুছে গেলো। সরাব এক অচেনা মেয়ের সঙ্গে পার্কে এসেছে। বিনী চিনে না সেই মেয়েকে কিন্তু সে আন্দাজ করতে পারছে মেয়েটা হয়তো সরাবের স্ত্রী। প্রেমিকা যে নয় সেটা সে ওদের দেখেই বুঝতে পেরেছে। দুজন একে অপরের পাশাপাশি হাঁটছে।

বিনী এবার বিষণ্ণ হাসি হাসলো। তার অনুপস্থিতি সরাবের জীবনে এত পরিবর্তন আনবে তার জানা ছিল না। কিন্তু সরাবকে ওই অচেনা মেয়ের সঙ্গে ভালই মানিয়েছে। কি সুন্দর মায়া মায়া মুখ মেয়েটার। দেখলেই যেন মন,প্রাণ জুড়িয়ে যায়। বিনী সেইদিকে এক দৃষ্টে তাকিয়ে থেকে তার প্রিয় মানুষটার সুখী মুহূর্ত অবলোকন করছে। এমন সৌভাগ্য হয় কতজনের।

সরাব রুনাকে বেঞ্চে বসিয়ে রেখে নিজে বাদাম আনতে এগিয়ে গেছে। রুনার গরম গরম খোসাওয়ালা বাদাম খুব প্রিয়। বাদাম নিয়ে ফিরতে ফিরতে সে ভাবলো রুনা আজ বাইরে বেরিয়ে অনেক খুশি। আনন্দে মেয়েটার চেহারায় এক অন্যরকম দ্যুতি খেলা করছে। এই প্রথম যেন কারোর খুশির কারণ হতে পেরে অদ্ভুত এক প্রশান্তি অনুভব করলো সরাব। প্রশান্তিতে তার চোখে মুখে হাসি ছড়িয়ে গেলো। কিন্তু তার সেই হাসি মিলিয়ে গেলো যখন রুনার থেকে খানিকটা দূরে থাকা বেঞ্চে বিনী আর তার সঙ্গে বসা এক যুবককে দেখলো সে।

বিনী ও তার পাশে বসা যুবককে দেখে সরাবের মুখভাব থমথমে হয়ে উঠলো। তার এতক্ষণের হাস্যোজ্জ্বল চোখ দুটো খানিকটা চোখের জলে জ্বলজ্বল করে উঠলো। ও শক্ত চোখে সেই দিকে তাকিয়ে চোখ দুটো সহসাই বন্ধ করে ফেললো। না এভাবে হেরে গেলে চলবে না। মানিয়ে নিতে হবে সবটা। নিজের জন্য আর রুনার জন্য। এই মেয়েটা তাকে ভালোবেসে নিজের সবকিছু ছেড়ে এসেছে। সে পারেনা এভাবে তার বিশ্বাসের সঙ্গে খেলা করতে।

~চলবে ইনশাআল্লাহ্….
মিফতা তিমু

ছবিয়াল: Maksuda Ratna

( মন্তব্য আবশ্যক )

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here