এবারও_তুমি_বুঝলেনা,অন্তিম_পর্ব

0
2033

#এবারও_তুমি_বুঝলেনা,অন্তিম_পর্ব
#Alisha_Anjum

অধর ঘামছে। এমন জঘণ্য পরিস্থিতিতে সে কখনো পরেনি। মান সম্মান কি আজ সত্যিই যাবে? অধর ফিরে চাইলো নিধির দিকে। নিধি মুচকি হাসলো। অতপর নিজের দুহাত দিয়ে চুল মুখ মন্ডল এলোমেলো করে ফেলল। এগিয়ে গেলো দরজার দিকে। অধর কাঁপা কাঁপা কন্ঠে পেছন থেকে বলে উঠলো

— এমন করিস না প্লিজ। আমার মান সম্মান…. মুহিব তোকে ছেড়ে গোছে এটা তোর দূর্ভাগ্য। আমার সংসার ভাঙিস না তুই।

নিধি শান্ত চোখে শুনলো অধরের কথা। কিন্তু তার নিঠুর ঘৃণ্য মনমানসিকতার এতটুকুও পরিবর্তন আসলো না। কোনো ভাবান্তরই হলো না তার। সে অধরের দিকে চোখ রেখেই খট করে দরজা খুলে দিলো। ওমনি হুড়মুড় করে লোকজন ঢুকে পটলো। লজ্জায় অধরের মাথা ঝিম ঝিম করছে। সে সাহস পাচ্ছে না সামমনে তাকানোর। এমন পরিস্থিতিতে পরার মতো নির্লজ্জ মাথা ভাঙা কাজ আর বুঝি নেই। নিধি মুখে ওড়না চেপে নত মুখে দাড়িয়ে ছিল। ভির থেকে একটা লোকের কন্ঠ ভেসে এলো

— কি হয়েছে? এই ছেলে এখানে কি করে? মেয়েদের ট্রায়াল রুমে?

প্রশ্নটা শুনে নিধির মনে পৈশাচিক আনন্দ হলো। সে মাথা তুলে চাইলো। গলার স্বর পরিবর্তন করে যেই না কিছু বলব ঠিক তখনই একটা কণ্ঠস্বর যেন নিধির প্রাণটা বুক থেকে টেনে গলায় আনলো। সম্মুখে মুহিবও ছিল। সে তীব্র রাগ চোখে মুখে নিয়ে সবার উদ্দেশ্যে বলে উঠলো

— আপনারা ভুল ভাবছেন। আসলে ওরা স্বামী স্ত্রী। আমার বন্ধু ও। আমি চিনি। হয়তো মেয়েটার বাচ্চা নিয়ে ড্রেস চেঞ্জ করতে সমস্যা হচ্ছিল তাই ও বাচ্চা বাইরে নিয়ে আসতে চেয়েছিল।

উৎসুক জনতা মুহিবের কথায় যেন ভীষণ মন খারাপ করলো। তাদের মজা নেওয়া হলো না, উৎপাদ দেখা হলো না। একেকজন এজেজ কথা মুখে বিড়বিড় করতে করতে প্রস্তান করলো। ভীড় কমে পরিবেশ স্বাভাবিক হলো। মুহিব এগিয়ে গেল নিধির পানে। নিধির বুক ধুকপুক করছে। প্রচন্ড ভয়ে তার হাতপা কাঁপাকাপি করছে। সে স্বপ্নেও ভাবেনি এমন নাট্যকর পরিস্থিতিতে মুহিবের আগমন হবে। নিধি ভয়ে আগেই গা থেকে ময়লা ঝাড়তে চাইলো

— মুহি……

কথাটা শেষ করার আগেই মুহিব ঝট করে নিধির গাল চেপে ধরলো। প্রচন্ড ব্যাথায় নিধির গা কেঁপে উঠলো। অধর এতোক্ষণ সব আশ্চর্য দৃষ্টিতে দেখছিল। সে উঠে এসে মুহিবের পাশে দাড়ালো। মুহিব হঠাৎ কি মনে করে স্তব্ধ হয়ে গেলো। নিধির হাত শক্ত করে ধরে অন্য হাতে ছেলেকে কোলেে তুলে নিলো। মুখে অধরের উদ্দেশ্যে বলল

— আমার সাথে আয়।

টানতে টানতে মুহিব নিধিকে মল থেকে বাইরে আনলো। অধর যাচ্ছে মুহিবের পিছু। মুহিব অশেষে থামলো তুলনামূলক কোলাহল পূর্ণ জায়গায়। নিধির হাত ছেড়ে সে প্রথমেই অতি আক্রশে শক্ত হাতের একটা থাপ্পড় মারলো নিধিকে। যতো জোর ছিল তার। নিধি ছিটকে দূরে চলে গেলো। মুহিবের রাগ নিবারণ যতোক্ষণ না হয় ততক্ষণ সে কি করবে নিজেও জানে না। সে চোখে থোকা থোকা ঘৃণা নিয়ে হনহন করে এগিয়ে গেল নিধির দিকে। অধর নিশ্চুপ অদূরে দাড়িয়ে শান্ত চোখে দেখছে। তার না মুহিবকে আটকাতে ইচ্ছে করছে না উষ্কাতে ইচ্ছে করছে।

নিধি ব্যাথায় গাল ভাসিয়ে দিচ্ছে চোখের জলে। মুহিব এবার তার বলিষ্ঠ হাতে গলা চেপে ধরেছে নিধির। নেহাল এমন পরিস্থিতিতে হাউমাউ করে বিরতি নিয়ে নিয়ে কান্নার রোল তুলছে। মুহিবের তোয়াক্কা নেই। সে সজোরে নিধির গলায় চাপ দিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠলো

— বে*শ্যা। সবকিছু তোর কাছে নাটক মনে হয়? পৃথিবীটা একটা নাটক সিনেমা মনে হয়? এই, তোর কি মনে হয় তোর মতো ইবলিশ গুলা দুনিয়ায় রাজত্ব করবে আর আল্লাহ উপরে বসে বসে দেখবে?

নিধির চোখ দিয়ে গলগল করে পানি বইছে। দু’হাতে প্রচন্ড খামচাখামচি করছে মুহিবের হাত। কিন্তু তার আশা পূরণ হচ্ছে না। বরং তাকে নাভিশ্বাস নিয়েই শুনতে হচ্ছে

— তুই যেমন ভেবেছিলি নাটক করবি। ঠিক তেমনই আমিও নাটকের মতোই কাকতালীয় ভাবে উপস্থিত। তুই ভুলে গেছিলি তোর শশুড় বাড়ি ঢাকাতেই। নাটকটা দূরে করা উচিত ছিল তোর।

কথাগুলো বলে মুহিব পূর্ণ দৃষ্টিতে দেখলো নিধিকে। নিধির হাল বেহাল। এখুনি বুঝি শ্বাস রোধ হয়ে মারা যাবে। মুহিবের ইচ্ছে করছে সত্যিই মেরে ফেলতে। কিন্তু সব ইচ্ছা পূরণ হয় পৃথিবীতে?
মুহিব হাত সরিয়ে নিলো। নিধি ছচাড়া পেয়ে হাঁপাতে হাঁপাতে বসে পরলোো মাটিতে। মুহিবের চোখ জলে ছলছল করছে। কি না করেছে মুহিব নিধির জন্য? অথচ তার অত্যন্ত প্রিয়, আদরের বউ তার ব্যার্থতাকেই শুধু ভালোবেসে গেলো। মুহিব ফিরে চাইলো অধরের দিকে। নেহালের দিকে একবার চাইলো। তারপরই হঠাৎ এই পাথুরে পুরুষ বুক ফেটে কান্না বেরিয়ে আসতে চাইলো। নিঃশব্দের গুমড়ে মরা কান্না। চোখ দিয়ে অজান্তেই বহরে পানি নামলো। মুহিব ছেলেকে শক্ত করে জাপটে ধরলো। লুকাতে চাইলো সকল কান্না ছোট ছেলের মাঝে। অধর এবার এগিয়ে এলো মুহিবের দিকে। তার বুকটাও অজানা কারণে বিষিয়ে উঠছে। হয়তো প্রিয় বন্ধুটার চোখের পানিতে সে আহত। কম্পিত কন্ঠে অধরকে বলতে শোনা গেল

— মুহিব?

ডাক শুনে মুহিব স্থির হলো। চোখের পানি মুছে উঠে দাড়ালো সে। মায়াবী দৃষ্টিতে অধরের দিকে তাকিয়ে বলল

— আমি বিশ্বাস করি অধর। তুই কেমন আমি জানি।

বন্ধুর বিশ্বাস দেখে অধর আনন্দে স্তব্ধ হয়ে গেলো। ঝট করে জাপটে ধরলো। প্রত্যেকটা সম্পর্কের মূল ভিত্তি হলো বিশ্বাস। মুহিব অধরের পিঠে হাত দিয়ে আছে। দাতের ভাজে ঠোঁট।

— নিধিকে নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার পর খুব আর্থিক সংকটে ছিলাম। এর মধ্যে আবার নেহাল এলো। অধর বিশ্বাস কর আমি সবসময় সবরকম চেষ্টা করেছি বউ বাচ্চা সুখে রাখার জন্য। কিন্তু….. কিন্তু নিধি এটা বুঝলো না। ও আমার সাথে ঝগড়া করে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়। আর টাকা নেই, আমার বউ বাচ্চাকে নাকি খাওয়ানোর যোগ্যতা নেই। পাঁচ দিন হলো আমি ওদের খুঁজছি। পাইনি। আজ মলে এসেছিলাম একটা শার্ট কিনতে। তখনই তোকে আর নিধিকে চোখে পরলো।

মুহিব বিরতিহীন কথাগুলো বলে থামলো। অধর মুহিবের কথায় ভীষণ অবাক। সে মুহিব কে ছেড়ে সোজা হয়ে দাড়ালো। নিধির সাথে তো মুহিবের কথার কোন মিল নেই? অধর ভীষণ উৎসুক হয়ে জানতে চাইলো

— মানে? নিধি যে আমায় বলেছিল তুই আরেকটা বিয়ে… মানে নিধি সব মিথ্যে….

অধর উত্তেজনায় মাথায় হাত দিলো। নিধি এতো খারাপ! ছিহঃ!

— সবকিছু তোর মতো করে ভাববি না অধর। সবাই তোর মতো পরিষ্কার পানি। ঘোলা পানির মতো অনেক মানুষ আশেপাশে।অধর মুহিবের কথা শুনলো। আফসোসের কোন সীমান্ত সে খুঁজে পাচ্ছে না। এক তীব্রতর ঘৃণার দৃষ্টি অধর ছুড়ে মারলো নিধির দিকে। ভাবতেই তার দম বন্ধ লাগে যে সে নিজের সংসারে নিজ হাতে ধ্বংসকারীকে নিয়ে গিয়েছিলো।

মুহিব অধরের আশ্চর্য ভাব দেখে হাসলো। সে অধিক শোকে পাথর বনে। এগিয়ে গেল নিধির দিকে। নেহাল তার কোলে। নিধি মুহিবকে অগ্রসর হতে দেখে এগিয়ে এসে জাপটে ধরলো মুহিবের পা। কান্নারত কন্ঠে বলল

— ক্ষমা করে দেও আমাকে।

মুহিব স্থির নয়নে তাকিয়ে রইল নিধির দিকে। সেকেন্ড কয়েক পর আকস্মিক এক লাথি দিয়ে এক হাত দূরে ফেলল নিধিকে। নিধি বোধ হয় ব্যাথা পেল বেশ। কিন্তু মুহিবের একটুও মায়া হলো এই ছলনাময়ীর প্রতি। সে এগিয়ে গিয়ে বলল

— লোভে পাপ পাপে মৃত্যু। তোকে আমি শাস্তি দেওয়ার কেউ না। দেবে তো আল্লাহ। আমি স্বামীর মনে এতদিন তুই যে আঘাত করেছিস আল্লাহ যেন তার বিচার করে।

মুহিব অতি কষ্ট বুকে নিয়ে বলল কথাগুলো। একটা পাথুরে পুরুষ হৃদয় কতটা আাঘাত প্রাপ্ত হলে এমন করে বিচার দিতে পারে?

— খুব ভালোবেসেছিলাম। তুই ভালোবাসা নিতে জানলিনা। টাকাটাই তোর কাছে বড় হলো। থাক তুই। আমি আমার ছেলেকে নিয়ে চলে যাচ্ছি। না না… এটা ভাবিস না যে ছেলেকে তুই দিবি না। আমি আমার ছেলেকে নিয়ে এই দেশ ছেড়েই চলে যাবো। তোর মতো নিকৃষ্ট নারীর ধারে কাছেও ঘেষতে দেেবো না আমার ছেলেকে।

কথাগুলো বলে মুহিব পিছু ফিরলো। আর কখনো পেছন ফিরে চাওয়ার বাঞ্ছনা তার নেই। অধরের দিকে তাকিয়ে বলল

— অধর, কখনো ঘরের মানুষের চেয়ে বাইরের মানুষকে বেশি মুল্য, বিশ্বাস দিস না।

কথাটা বলে মুহিব নিজের মতো করে চলে যেতে লাগলো। অধরের মাথা নিচু। সত্যিই সে তিশুর সমান মূল্য নিধিকে দিয়ে ভুল করেছে। তবে লক্ষ শুকরিয়া! বড় কিছু হওয়ার আগে সে মুক্তি পেয়েছে নিধির ছোবল থেকে। অধর আর এক মুহুর্ত দেরি করলো না। তিশুর কাছে যেতে হবে। অধর হন হন করে তৃষ্ণার্ত পথিকের মতো ছুটলো। পেছন থেকে হুট করে নিধি ডেকে উঠলো। কানে পৌছালেও অধর মনে পৌছাতে দিলো না। সে একটুও পেচন ফিরলো না। বরং চলতে লাগলো, ছুটতে লাগলো প্রিয়তমার উদ্দেশ্যে।

নিধি হা হুতাশ করতে লাগলো। উঠে দাড়াতে পারছে না কোমরের ব্যাথায়। কি হলো তার? একুল ওকুল দু কুলই ভাঙলো। শেষে তার ভালোবাসার সন্তানটাও নিয়ে গেল মুহিব। নিধি চিৎকার করে কাঁদছে। আক্রশে সে মাটির উপর হাত দিয়ে আঁচড়া আঁচড়ি করতে লাগলো। সবাই নিজ নিজ পথ বেছে নিয়েছে। কিন্তু তার একাই থাকতে হবে। নিঃসঙ্গ হয়ে।

.
দুলে দুলে হাওয়া আসছে ঘর প্রাঙ্গণে। তিশু তখন অধরের প্রতি প্রেম নিবেদনে ব্যাস্ত। মনে মনে শত কথা বলা হচ্ছে তার অধরের সাথে। তিশু বেলকনিতে চেয়ারে বসে ছিল। হঠাৎ অকারণে সে উঠে দাড়ালো। বেলকনির গ্রিলর ফাকে বাড়িয়ে দিলো শ্যাল বর্ণের কোমল হাতটা। সামনেই কৃষ্ণচূড়া গাছ। টকটকে ফুল যেন আপন লনে এসে ধরা দিলো তিশুুর হাতে। তিশু যত্ন করে ডাল থেকে ফুলের বিচ্ছেদ করলো। চুল গুলো তার খোঁপা করা ছিল। লম্বা চুলের খোঁপা উন্মুক্ত করে সে কানে গুঁজে নিলো ফুল। মন থেকে হঠাৎই প্রশান্তিময় পরিবেশে উঠে আসলো এক পঙক্তি

” আমার আর অধরের ভালোবাসার কথা শুনবে তুমি কৃষ্ণচূড়া? ”

” আমার তিশুর বেশি বোঝার কথা, বলবো তোমায় কৃষ্ণচূড়া?”

অধরের কন্ঠ। তিশুর মনে যেন ঘন্টা বাজলো। সে তড়িৎ গতিতে মাথা ঘুরালো। অধর দাড়িয়ে আছে মিষ্টি হাসি নিয়ে। চোখে ক্লান্তি, মাথার চুল এলোমেলো। তিশুর কাছে অবিশ্বাস্য মনে হচ্ছে। সত্যিই তার অধর এসেছে? তিশু অবাক হয়ে বলল

— অধর? তুমি? আমি সত্যি…..

বিষ্ময়ে তিশু কথা বলতে পারছে না। তার হাত আপনাআপনি মুখে চলে গেছে অবাকের দরুন। অধর এগিয়ে এলো তিশুর দিকে। আলতো স্পর্শে মুখ থেকে হাত নামিয়ে দিলো তিশুর। আনন্দে তিশুর চোখ টুপ টুপ করে জল বিসর্জন দিলো বারকয়েক। তিশু অবাকতা কাটিয়ে উঠে অধরের আপাদমস্তক দেখতে লাগলো। তার অধর ঠিক আছে! তিশু অধরের দু হাতের উপর হাত রেখে বলল

— তুমি ঠিক আছো। অধর আমি প্রায় তোমার কাছে গিয়েছিলাম কিন্তু তখনই বজ্রপাত….

তিশুর আচমকা হাউমাউ করে কান্না পেলো। সে শক্ত করে জরিয়ে ধরলো অধরকে। বুকে মুখ লুকিয়ে যেন দেহ মন ছেড়ে কান্না করে দিলো। অধর থামালো না। শক্ত করে জরিয়ে রাখলো তিশুকে। তার চোখেও জলের চিক চিক খেলা।

তিশু কাঁদছে। হঠাৎ কাঁদতে কাঁদতে তার মনে একফালি অভিমান জমলো। সে ছিটকে দূরে সরে গেলো অধরের থেকে। চোখ মুখ মুছে একদম স্মার্টলি দাড়ালো। অধর অবাক হলো। সে হা হয়ে তাকিয়ে আছে তিশুর দিকে। কি হলো হঠাৎ? অধর প্রশ্ন করার জন্য এগিয়ে যেতেই তিশু কড়া গলায় বলে উঠলো

— আসবেন না আমার কাছে। আপনার সাথে কথা নেই। আপনি যান না ঐ নিধির কাছে। আমি তো আপনার কিছুই না।

তিশর কথায় অধর বোকা বনে গেলো। ক্ষণিক পরে সে নিশ্বব্দে হেসে এগিয়ে গেলো নিধির দিকে। নিধির অমতেই পেছন থেকে শক্ত করে জরিয়ে ধরলো তিশুকে। তিশুর কাঁধের উপর থুতনির ভর দিয়ে বলল

— আমি ভীষণ সরি বউ। রাগ করে না আমার টিস্যু।

টিস্যু শব্দ শুনেই তিশু চোখ পাকিয়ে চাইলো অধরের দিকে। অধর উচ্চস্বরে হেসে দিলো।

— আচ্ছা তুমি আমাকে খুঁজে বের করলে কিভাবে?

— মনের কানেকশন থেকে।

কথাটা বলে অধর চোখ টিপে দিলো। তিশু হাসলো। ভীষণ ভালো লাগছে তার। অধরের দুষ্টুমির পর আর পেছনের কাহিনি শুনতে ইচ্ছে হচ্ছে না। থাক না! পরেই শোনা যাবে। কিন্তু এই ভালোবাসাময় মুহূর্তের মাঝে তিশুর একটাই দুঃখ। নিলীমার মতো একটা মিষ্টি নেই তার। তিশুর মন ভারি হয়ে গেল। সে অধরের উদ্দেশ্যে বলল

— আমাদের তো আল্লাহ সবই দিয়েছেন। একটা বাচ্চা কেন দিলেন না?

অধর তিশুর কাধ থেকে থুতনি তুলল। চরম বিরক্ত নিয়ে বলল

— এর জন্য কিন্তু আমি মন খারাপ করতে না করেছি তিশু। এখন কিন্তু আমার রাগ হচ্ছে।

তিশুর দুঃখ তবুও ঘুচলো না। অধর শেষে তিশুকে ছেড়ে বেরিয়ে গেল ঘর থেকে। তিশু বিব্রত হলো। অধর কি খুব রাগ করলো? কিন্তু তিশুর ভাবনার অবসান ঘটিয়ে একটু পর অধর নিলীমাকে কোলে নিয়ে ঘরে ঢুকলো। তিশুর দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলল

— নাও। মেয়ে এনে দিয়েছি। এবার খুশি?

তিশু কিছু বলল না। শুধু হাসলো। দুধের সাদ কি আর ঘোলে মেটে? কিন্তু তবুও তিশু খুশি হলো। দুধের সাদ হয়তো ঘোলে মেটে না কিন্তু ঘোলও তো দুধের তৈরি।তিশু হাত বাড়িয়ে কোলে নিল নিলীমাকে। ভীষণ সুন্দর মুহুর্ত হঠাৎই তার মন আরো সুন্দর করে তুলতে চাইলো। অধরের পাক্কা গিন্নি কিন্তু পাকা গলায় গানও গাইতে পারে। তবে সেই গানের স্বাদ নেওয়ার অধিকার শুরু অধরের জন্য রেখেছে তিশু। তিশু অধরের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে মুচকি হাসলো। গলা ছেড়ে ভীষণ আনন্দ মনে চেপে গেয়ে উঠলো

কোন গোপনে মন পুড়েছে
বৃষ্টি থামার পরে
আমার ভিতর ঘরে…… (২)

নয়ন কালো মেঘ জমালো
ঝিনুকের অন্তরে
আমার ভিতর ঘরে….. (২)

কোমল ধানের শিষে…..
………………..

অধর মুগ্ধ দৃষ্টিতে সদ্য প্রেমে পরা তরুণের মতো তাকিয়ে আছে তিশুর দিকে। বড্ড সুন্দর এই মুহূর্ত। বড্ড মায়াবী তিশুর কন্ঠ। অধর চাইলো, মনে মনে হাজার বার চাইলো এই মুহূর্ত থমকে যাক। তার ভালোবাসার মানুষের কন্ঠের মধু সে পান করুক আজীবন।

পাশের রুমের বেলকনিতে বসে ছিল নিশান। তার মনেও ভেসে উঠছে প্রিয়তমার প্রেমের মুহূর্ত গুলো। তার মারিয়ার পাগলামি, ভালোবাসা, খুনসুটি গুলো। একদিন তারও এভাবেই গোপনে মন পুড়েছিল। প্রেমিক হৃদয় কাতর ছিল মারিয়ার জন্য। আজও কাতর। কিন্তু ভালোবাসার মানুষটা তার পাশে, পাজরে, সম্মুখে আজ নেই।

সমাপ্ত

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here