এমন_কেনো_তুমি,part_13,14

0
713

#এমন_কেনো_তুমি,part_13,14
#ফাতেমা_তুজ
#part_13

নাছোড়বান্দা হওয়া আরহান কে কিছু তেই রাজি করাতে পারলো না জলিল। তবে মস্তিষ্ক আনন্দে মেতে উঠেছে। মানসপটে চলছে রঙ লীলা। সেই অন্তত যুগ যুগ ধরে এমন স’ন্ত্রাসদের লোভ ছিলো নারী শরীরে। এরা নারীর দেহ কে বস্তু মনে করে কেবল। নিজ হাতে দরজা টা বন্ধ করলো জলিল। সামান্য একটু খোলা রাখলো যা দিয়ে ঘরের ভেতর টা দেখা যাবে। র’ক্তাক্ত বলহীন শরীর টা আর চলছে না। কান্না পাচ্ছে আরহানের। এ কেমন দৃশ্য এলো তাঁর জীবনে।
” ঐ দেখ দেখ, না দেখলে মিস করবি। ”

পিশাচ টার মুখে এক দলা থু থু মেখে দিতে ইচ্ছে হয়। তবে ক্ষমতা নেই। জলিল বাচ্চা দের মতো আচারন করছে। শরীরের প্রতি টা নিউরনে জাগিয়ে তুলেছে পুরুষত্ব। দুই চোখ দিয়ে ধ’র্ষণ করছে এক নারী কে। শুধু মাত্র শারীরিক অত্যা’চার কেই ধ’র্ষণ বলে না। এই পৃথিবী তে তৈরি হয়েছে আরো বহু প্রকার ধ’র্ষণ। মেয়েটির অঙ্গের বর্ণনা প্রদান করছে জলিল। যাতে করে আকৃষ্ট হয় আরহান। তবে আরহানের মন প্রাণ স্তব্ধ হয়ে আছে। সে শুধুই মুক্তি চায় এই নরক থেকে।
মেয়েটির কাপড় চেঞ্জ করা হয়ে গেলে ও জলিল এর মনের লালসা কমে নি। বরং জেগে উঠেছে কাম ভাব।
” এই ওরে ধর। ”

আরহান কে ধরতে বলে ভেতরে যায় জলিল। দরজা লাগানোর প্রয়োজন বোধ করে না সে। নিজ নিকৃষ্টতম রূপ টা দেখিয়ে দেয় সে। মেয়েটির স’ম্ভ্রম কে লুটে নিতে ব্যস্ত। আর আরহান শুধু সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করে যাচ্ছে। মানুষ কতো টা নিকৃষ্ট হয় তা যেন প্রমাণ দিতেই জন্ম হয়েছে জলিল নামক পাষাণের। অনাবৃত অবস্থা তেই একটা ছেলের কাছে ফোন দেয় সে। ছেলে টা ঘরের ভেতর প্রবেশ করে। জলিল বলে
” ওর হাতে ফোন দিয়ে বলবি দুই লাখ টাকা নিয়ে আসতে। ”

” আচ্ছা ভাই। ”

” আর শোন ঘটনা টা সাজাবি এমন ভাবে যেন, মেয়ে নিয়ে ধরা পরছে ও। আর সেই কারনেই দুই লাখ টাকা দিতে হবে। না হলে মান ইজ্জত চলে যাবে তাঁদের। ”

” ঠিক আছে ভাই। ”

ছেলেটা আসে আরহানের কাছে। দূর্বল শরীরে তাকায় আরহান। সব টা শোনার পর মনে হয় আ’ত্মহ’ত্যা করে বেঁচে যেতে। তবে সৃষ্টিকর্তা সে সুযোগ রাখেন নি। ফোন দেওয়া হয় আরহানের নানু বাড়ি তে। কারন আরহানের বাবা মা রয়েছেন ঢাকায়। ফোন ধরেন আরহানের বড় মামি। মায়ের মতো স্নেহ করেন তিনি। প্ল্যান মতো সব টা বলা হয় তাঁকে। সবাই আরো চিন্তিত হয়ে যায় কারন বলা হয় পুলিশে ধরা হয়েছে। খুব সম্ভবত তাঁরা ভাবছেন আরহান সিয়া কে নিয়ে ঘুরতে এসে ধরা খেয়েছে। কারন ফ্যামলি তে এই রিলেশন নিয়ে ঝামেলা চলছে। বাসায় কেউ মানছে না। তাঁরা সবাই খুব চিন্তিত হয়ে পরে। আরহান কে ফোনে কথা বলার সুযোগ দেওয়া হয় না।

আরহানের মামি আর নানু কিছুতেই বিশ্বাস করেন না এই কথা। বৃদ্ধা নানু একাই বেরিয়ে যান নাতির খোঁজে। লোকেশন অনুযায়ী যান তিনি। তবে সেখানে কেউ নেই। পুলিশ স্টেশনে ও খোঁজ লাগানো হয় তবে নেই আরহান।

জলিলের লোকে রা ইচ্ছাকৃত ভাবে এই ভুল ঠিকানা প্রদান করেন হাল চাল বোঝার জন্য। এবার আবার ফোন করে তাঁরা। লোকেশন দেওয়া হয়।

” এই উঠ ঐ ব্রিজের কাছে নিয়ে আয়। ভাই তরে নিয়ে আসতে বলছে। ”

আরহান কে ধরে ব্রিজের আরেক টু কাছে নিয়ে যাওয়া হলো। আরহান ধপ করে বসে পরলো। অনেক টাই সকাল হয়ে গেছে। চারপাশে মানুষজন চলা ফেরা করছে। আরহান কে দেখছে অবাক হয়ে। দশ বারো জন ঘেরাও করে আছে ওকে। র’ক্তে ডুবে যাওয়া শরীর। আরহানের বড় মামি পাশ দিয়েই যাচ্ছেন। আরহান তখন নিচু হয়ে আছে সামান্য। মামি সামনে দিয়ে গেলে ও আরহানের চেহারা দেখে চিনতে পারেন না। তিনি চলে যান সামনের দিকে। ঘুরে আবার ফিরে আসেন তখন আরহান দেখতে পায় ওনাকে।
” মামি। ”

আরহানের কন্ঠ শুনে তিনি বিচলিত হয়ে যান। সামনে এসেই চিৎকার করে উঠেন। হাত বুলাতে থাকেন শরীরে।
” কি অবস্থা হয়েছে। ”

” মামি আপনি ওদের কাছে যাবেন না। আগে টাকার ব্যবস্থা করে আমাকে এখান থেকে বের করেন। ”

” তুই আয় আমার সাথে। আমি দেখবো তরে কে ধরছে আর এই অবস্থা করেছে।”

” ওরা ভালো না। আপনি যাবেন না। ”

” আমি দেখবো তারে। যে তোর অবস্থা এমন করছে। ”

আরহান আর মামি কে নিয়ে আসা হয় ব্রিজের ধারের সেই ঘর গুলোর কাছে। আরহানের ফ্যামিলি মেম্বার এসেছে শুনে ঘর থেকে বের হয় জলিল। এতো টাই বিকৃতি তাঁর মস্তিষ্ক যে ঠিক ঠাক প্যান্ট অব্দি পরে না।সামনে আসতে আসতে প্যান্ট এর জিপ লাগায়। তৎক্ষনাৎ তিনি বুঝে যান কোন মানুষের পাল্লায় পরেছে আরহান।
” আমার ছেলে কি করছে? ”

” আর বইলেন না ছেলেটা কতো ভদ্র। দেখতে শুনতে ও ভালো। তবে এই বয়সে এসে ভুল করে ফেলছে। একটা মেয়ের সাথে ধরা পরছে। তো যাই হোক যা হবার তো হয়েছেই। এখন কথা হচ্ছে ওরে ধরতে গিয়ে আমার দুই লাখ টাকা হারায় গেছে। আমার তো টাকা টা লস হয়ে গেছে এখন টাকা টা আমায় দিতে হবে। আপনার ছেলে কে নিয়ে যান। বংশ ভালো নাম আছে বদনাম হয়ে যাবে তাই ছেলে কে ছেড়ে দিলাম এই যা। বুঝাবেন ছেলে কে যাতে আর ভুল না করে।”

জলিলের নাটক বেড়ে গেছে। আরহান কে বাবা সমোন্ধন করে যাচ্ছে। কি ভালো তাঁর ব্যবহার। যেন ভাঁজা মাছ উল্টে খেতে ও জানে না। খুব রাগ হচ্ছিলো আরহানের।মামি বললেন
” আচ্ছা ঠিক আছে। আমার সাথে লোক দেন। আমি আমার ছেলে কে নিয়ে যাই। বাসায় গিয়ে টাকা দিয়ে দিবো। ”

” না না সমস্যা নাই। ছেলে এখানে সেইফ ই আছে। আপনি শুধু টাকা টা নিয়ে আসেন। ”

জলিল দিবে না যখন তো দিবেই না। তাঁর কথা হচ্ছে টাকা দিয়ে তারপর ছেলে কে নিয়ে যান।
” আচ্ছা ঠিক আছে। তবে আমার ছেলের গাঁয়ে যদি আর একটা টোঁকা লাগে তো খবর আছে। ”

মামি থ্রেট দিয়ে চলে যায়। জলিল পৈশাচিক হাসে। আরহানের দিকে তাকিয়ে বলে
” কি ভাবছিস আমি তরে ছেড়ে দিবো? দুই লাখ টাকা নিয়ে আসুক তারপর আরো দাবি করবো। ”

কাহিনী শুরু করে দেয় জলিল। মামি টাকা নিয়ে আসেন। তবে বেশি দূর আগাতে পারে না কারন ততক্ষণে আরহানের ফ্যামিলির অনেকেই চলে আসছে। ভনিতা করলে হিতে বিপরীত হবে তাই ছেড়ে দেয় আরহান কে।
বাসায় নিয়ে আসা হলো। আরহানের শরীরের কন্ডিশন খুব ই খারাপ। ডাক্তার ও ডাকা হয়। সমস্ত খবর সাজিদার কানে ও চলে গেছে। সে ও এসে পরেছেন ঢাকা থেকে। তবে রাগ নাকের ডগায়। ওনার কথা হচ্ছে সিয়া কে নিয়ে লুকিয়ে দেখা করতে গিয়ে আরহান ধরা পরছে। প্রচন্ড রাগ হয় ওনার। হয়তো ছেলের শরীরের কন্ডিশন খারাপ দেখে তিনি খুব বেশি প্রতিক্রিয়া জানালেন না। তবে বেশ কিছু কথা শোনাতে লাগলেন। রাগ হয় আরহানের। জলিলের জন্য এতো কথা শুনতে হচ্ছে তাকে। শরীরে শক্তি নেই এক ফোঁটা তবু ও ছুট লাগায় কিচেনে। সেখান থেকে বঁ’টি নিয়ে ছুটে যায় বাহিরের দিকে। ওর উদ্দেশ্য জলিল কে মে’রেই ফেলবে আজ। তবে গেটের কাছে এসেই জ্ঞান হারিয়ে পরে যায়। ডাক্তার এসে সেলাইন প্রদান করেন। জ্ঞান ফিরতেই হাতে ক্যানেলা বাঁধা দেখে সে। আবার নেতিয়ে যায় শরীর টা। পরিলক্ষিত হয় মাহি ও তাঁর হাসবেন্ড কে। সমস্ত টা বলেছে মাহি। সকলেই বুঝতে পেরেছিলো আরহানের বিরুদ্ধে করা জলিলের ষড়যন্ত্র। তবে এখন সেটা পানির মতো পরিষ্কার।

***

চোখ বন্ধ করে শ্বাস ফেললো আরহান। কি বিভর্ষ ছিলো সেই স্মৃতি। এখনো গাঁয়ে কাঁটা দেয়। পরবর্তী সময়ে আরহানের বাবা ড্রাইভারের থেকে এসব শুনতে পায়। তাঁর ছেলের গাঁয়ে আঘাত করা ব্যক্তি কে তিনি কোনো মতোই ছেড়ে দিবেন না। পুলিশ এসে মহল্লার মোড় থেকে ধরে নিয়ে যায় জলিল কে। তবে জলিল তাঁর ক্ষমতার জোড়ে তিন চার দিনের মাথা তেই মুক্তি পেয়ে যায়।

*** এটা তো বাস্তব গল্প তাই না। আমি চাইলেই তো পারবো না যা ইচ্ছে লিখতে। এখন ঘটনা বোরিং লাগতে পারে। তবে এটা তে কিছু করার নেই। আশা করি বাস্তব জানতে কারো কোনো সমস্যা হবে না। ***

বি : দ্র : ভুল ত্রুটি মাফ করবেন।

চলবে

#এমন_কেনো_তুমি [ সত্য ঘটনার অবলম্বনে ]
#ফাতেমা_তুজ
#part_14

নীরবতায় পরিপূর্ণ অডিটোরিয়াম। প্রতি টা মানুষের দৃষ্টি রয়েছে মাইক হাতে থাকা লেখিকা ফাতেমা তুজ এর দিকে। সম্প্রতি তিনি একটি বই প্রকাশ করতে চলেছেন। মেডিকেলের ছাত্রী সে। বই প্রচারের জন্য প্রকাশক রা একটি প্রেস কনফারেন্স এর আয়োজন করেছিলেন। সেখানে প্রকাশিত বই গুলোর লেখক লেখিকা রা তাঁদের বই সম্পর্কিত কথা বলবেন। তাঁর ই একজন ছিলেন ফাতেমা তুজ। সবাই নিশ্চুপ হয়ে ছিলো। এর ই মাঝ থেকে কৌতুহলী এক শ্রোতা বললেন
” ম্যাম তারপর কি হয়েছিলো? আরহানের জীবন নিশ্চয়ই এখানেই থেমে নেই। আর জলিল নামক নরপ’শুর কি কোনো শাস্তি হয় নি? ”

ফাতেমা লক্ষ্য করলো যিনি এই প্রশ্ন করেছেন তাঁর বয়স খুব ই অল্প। ষোড়শী বয়সের টগবগে কিশোরী। শুধু মেয়েটি নয় বরং এখানে থাকা সমস্ত মানুষের মনেই এক ই প্রশ্ন। তবে ফাতেমা তো আর জানাবে না। তাহলে গল্পের টুইস্ট তো শেষ হয়ে যাবে।
” গল্প তো চলমান তাই না। আর শেষাংশ জানতে হলে তো বইয়ের জন্য অপেক্ষা করতেই হবে। ”

” ম্যাম প্লিজ আরেক টু বলুন না। ”

” উম তাহলে মজা থাকবে না। ”

কিশোরী মেয়ে টি চুপ হয়ে গেল। ফাতেমা লক্ষ্য করলো মেয়েটির দুই চোখে অগ্নি জ্বলছে। মেডিকেলের শেষ বর্ষের ছাত্রী সে। বয়স খুব বেশি নয়। তবে কিশোরী দের মন বুঝতে পারে সে। স্মিত হেসে ধন্যবাদ প্রদান করলো সকল কে। আর বললো বইয়ের সাথে থাকতে। কিছু সাংবাদিক প্রশ্ন করলো তাঁকে। খুব যত্ন নিয়ে এড়িয়ে গেল প্রশ্ন গুলো। সব গল্পের শেষ তো হয় না। কিছু গল্প তো চলমান ই থেকে যায়।

ক্লান্ত শরীর টা কাউচে এলিয়ে দিলো ফাতেমা। জীবনে অভাবের শেষ নেই। অর্থনৈতিক অভাব থাকলেই সেটা কে অভাব বলে না। প্রিয় মানুষের অভাব কে ও অভাব বলে। দীর্ঘশ্বাস টানলো সে। এই যে বাইশের যুবতি সে অথচ কোনো প্রেমিক পুরুষ নেই তাঁর জীবনে। তবে কল্পনায় রয়েছে এক টা ছোট্ট সংসার। যেই সংসারে রয়েছে এক বিদেশী পুরুষ। যাঁর চোখের মনি স্বচ্ছ নীল। অসম্ভব ভালোবাসা সেই পুরুষের অন্তরে। ঘড়ির কাঁটা ঢং ঢং শব্দ তুলে। অর্থাৎ রাত বারো টা বাজে। নিজ ভাবনা কে এগুতে দিতে চায় না সে। তবে ভাবনা তো মস্তিষ্কের সাথে সংযুক্ত আর সেটা চাইলেই সরানো যায় না। লোকে বলে বিজ্ঞানের স্টুডেন্ট মানে মাথা খারাপ। ফাতেমা নিজে ও মানে এই কথা। বিজ্ঞান আর কল্প জগতে বসবাসরত মানুষ রাই জানে কতো টা কঠিন লড়াই তাঁদের মস্তিষ্কে। মাথায় সামান্য ব্যথা অনুভব হয়। কিচেন থেকে কফি নিয়ে এসে ব্যলকনিতে বসলো সে। বহুতল ভবনে থাকাতে বাতাসের বেগ প্রচন্ড। এলোমেলো করে যাচ্ছে পিঠ অব্দি ছড়িয়ে থাকা আধ ভাঙ্গা চুল গুলো। চাঁদের আলো ছিটকে পরছে এই মুখে। নিজের জন্য মায়া হলো খুব। কবে পাওয়া যাবে কল্পনার সেই বিদেশী পুরুষ?

******

আরহানের গল্প শেষ হয় নি। হয়েছে একটি অধ্যায়ের শেষ। জলিলের থেকে মুক্তি পেলে ও প্রচন্ড অসুস্থতায় ভুগে আরহান। নিজের এলাকায় চলে এসে ও শান্তি নেই। কোনো ভাবে রটে গেছে পুরো বিষয় টা। সব থেকে চমকায়িত বিষয় হচ্ছে সত্য প্রচার ঘটে নি। বরং জলিল যেভাবে ঘটনা সাজাতে চেয়েছে ঠিক তেমনি ভাবে রটে গেছে বিষয় টা। লোকে বলে নারী নিয়ে ধরা পরা পৃথিবীর সব থেকে নিকৃষ্ট অপরাধ। আরহান ও তাঁদের দলে নাম লিখিয়েছে। বিনা দোষে লোকের চোখে ছোট হতে হচ্ছে তাকে। থেমে থাকে নি লোক মুখেই। চলে গেছে ওর শেষ আশ্রয়স্থল সিয়ার বাসা তে। পুরো সত্য সিয়া জানলে ও সিয়ার ফ্যামলি অবগত ছিলো না। যেই পরিবার আরহান কে ছেলের মতোই ভালোবাসে। আজ সেই পরিবার লোক মুখে শুনে এসে সিয়া কে বলছে আরহান নাকি কোন মেয়ে কে নিয়ে ধরা খেয়েছে। কথা টা শোনা মাত্র ই আরহানের বুকে ব্যথা অনুভব হয়। বিষয় টা ওর মস্তিষ্ক নিতে পারে না ঠিক। তবে সেই মুহুর্তে কিছু করার ও থাকে না।

রায়গঞ্জের প্রভাব শালী নেতার সাথে জলিলের সম্পর্ক ছিলো। কোনো কারনে সেই নেতা কে রাস্তায় ধাক্কা দেয় জলিল। যা পুরো এলাকায় জানা জানি হয় আর সেটা খুব অসম্মানের বিষয় হিসেবে ধরা পরে নেতার মানসপটে। এই সুযোগের আশা নিয়েই বসে ছিলো আরহান। সুযোগ সন্ধানী আরহানের মনে প্ল্যান আসে।মস্তিষ্ক ঠিক নেই এখন। তাছাড়া এলাকার কারো সাথে যোগযোগ ও নেই।সকলের থেকে দূরে অবস্থান করে এখন। রোজ সন্ধ্যা তে জলিলের আড্ডা খানার সামনে অপেক্ষা করে আরহান। সচরাচর যেই মডেলের কস্টিউম পরে তাঁর বিপরীত ধাঁচের কস্টিউম পরে আসে সেই আড্ডা খানার পাশে। আর মুখে পরা থাকে কালো রঙের মাক্স। দিন যায় তবে জলিল কে বাঘে পাওয়া যাচ্ছে না। এমনি একদিন সন্ধ্যা সাত টা হবে তখন জলিল কে পেয়ে যায় আরহান। একাই আসছিলো সে। কিছু টা নেশাতুর অবস্থায়। কাছে যায় আরহান। বলে
” কেমন আছেন? ”

” সর। ”

” আমাকে চিনতে পারছেন? ”

” না চিনি নাই। কে তুই? ”

” এই যে যাঁর লাইফ টা নষ্ট করে দিয়েছেন। ঐ যে সেদিন আটকে রাখলেন একটা মেয়ে নিয়ে। বললেন এটা করবেন সেটা করবেন মা’র্ডার করবেন নাকি। মাথায় আলকাতরা মাখিয়ে দিবেন। জানেন তো আমি এখন এলাকায় মুখ ই দেখাইতে পারি না। ”

” সেদিন ছেড়ে দিছি। আজ কিন্তু মে’রে ফেলবো। যা এখান থেকে। ”

কথা শেষ করে আরহান কে ধাক্কা দেয় জলিল। আরহানের মাথায় রাগ জমে আছে। সিয়ার ফ্যামিলির সম্মুখে যেতে পারছে না সে। মান সম্মান যেন মাটির সাথে মিশে গেছে। প্রাণের ভয় তো নেই আর। সাথে ছোট একটা নাইফ ছিলো। একদম ই চিকন সরু লোহার নাইফ। র’ক্ত গরম জলিলের পে’টের ভেতর সেটা দিয়ে আ’ঘাত করে দেয় আরহান। নেশাক্ত থাকাতে বুঝে উঠে নি জলিল। হাত কাঁপতে শুরু করে আরহানের। মা’র্ডার কি জিনিস জানা নেই তাঁর। তৎক্ষনাৎ সেখান থেকে চলে যায় সে। কথা টা জানার পর ফারেগ দ্রুত গতিতে ইন্ডিয়া তে পাঠিয়ে দেন ছেলে কে। পরবর্তী তে আরহান জানতে পারে এক দেড় মাস পর জলিল সুস্থ হয়ে ফিরে আসে। মৃত্যু কে কাছ থেকে দেখে ভয় পেয়ে যায় সে। নামাজ পড়া শুরু করে। তওবা করে, একদম ই ভদ্র লোকে পরিণত হয়ে যায়। তবে কথায় আছে কুকুরের লেজ কখনোই সোজা হয় না। জলিল ও ছিলো তদ্রুপ।

****

ধুম করে বিদ্যুৎ চমকানোর আওয়াজে ধরমরিয়ে উঠে ফাতেমা। আকাশ মেঘলা হয়ে আছে। বৃষ্টির ফোঁটা পরা শুরু করেছে ইতিমধ্যেই। মনে পরে অন্য ব্যলকনি তে কাপড় শুকাতে দিয়েছিলো সে। তৎক্ষনাৎ বারান্দায় গিয়ে কাপড় নিয়ে এলো। তবে দুঃখের বিষয় বৃষ্টির ঝাপটা এসে অনেক টাই ভিজে গেল সে। কাপড় রেখে বাথরুম থেকে চেঞ্জ করে আসা মাত্র ই কলিং এ শব্দ হলো। না চাইতে ও কপালের মাঝে সূক্ষ্ম ভাজের সৃষ্টি হলো। তোয়ালে রেখে ড্রয়িং রুমে আসলো। রাত সাড়ে বারো টা। এতো রাতে কে আসতে পারে?
দরজা না খুলে দারোয়ান কে কল করলো সে। দারোয়ান বলল
” ম্যাডাম আমিই এসেছি। ”

” এতো রাতে কি দরকার আঙ্কেল? ”

” একটা মেয়ে এসেছে ম্যাডাম। এতো বার বললাম অনেক রাত তবু ও যাচ্ছিলো না। দেখা করেই নাকি যাবে সে। কথার মাঝেই তুমুল গতিতে বৃষ্টি নেমে গেছে। এখন কি করবো বুঝতে পারছি না। এতো রাতে ঝড় বৃষ্টি তে একা ছাড়বো যে কেমন যেন লাগছে। বুঝেন ই তো পরিস্থিতি। তাই ভাবলাম আপনার সাথে দেখা করিয়েই দেই। ”

” কোন মেয়ে এসেছে আঙ্কেল। ”

” কি যেন নাম বললো, একদম ই অল্প বয়সী। ”

কেমন যেন মনে হলো ফাতেমার। বার বার অডিটোরিয়ামের সেই মেয়ের মুখ টা ভেসে উঠলো। তাই বলল
” আচ্ছা আমি দরজা খুলে দিচ্ছি। ”

” জী ম্যাডাম। ”

দরজা খুলে সেই মেয়ে টা কে দেখে চমকায়িত হলো ফাতেমা। তবে ভাব এমন দেখালো যেন ওর জন্যই অপেক্ষা করে বসেছিলো। মেয়েটা ভিজে একাকার প্রায়। কাঁপছে হালকা। ইশারায় দারোয়ান কে চলে যেতে বললো সে। মেয়েটি ঘরে প্রবেশ করলো। তোয়ালে বাড়িয়ে দিয়ে ফাতেমা বলল
” ভিজে যা তা অবস্থা। দেখি আমার ছোট বোনের কস্টিউম লাগে কি না তোমার। ”

মেয়েটা কিছু বললো না। সে দাঁড়িয়ে রইলো। ফাতেমা ছোট বোনের কস্টিউম নিয়ে এলো। ওর বয়সীই মেয়েটা। ইশারায় বাথরুম দেখিয়ে দিলো ফাতেমা। মেয়ে টা চলে যেতেই কিচেন থেকে ধোঁয়া উঠা দুই কাপ কফি নিয়ে এলো। মনে ঘুরছে নানান প্রশ্ন। বাচ্চা একটা মেয়ে এতো কৌতুহলী কেন?

** গল্পের প্রয়োজনে আমাকে নিয়ে লিখলাম একটু। যদি ও কখনো লিখা হয় নি নিজেকে নিয়ে। আমি চরিত্র টা কিন্তু কাল্পনিক একদম। **

বি : দ্র : ভুল ত্রুটি মাফ করবেন।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here