এমন_কেনো_তুমি,part_15,16

0
1049

#এমন_কেনো_তুমি,part_15,16
#ফাতেমা_তুজ
#part_15

” নাম কি তোমার? ”

” সিয়া। ”

মেয়েটির কথা শুনে থমকে গেল ফাতেমা। বুকের ভেতর কেমন উদ্বিগ্নতা খেলা করছে। মস্তিষ্ক খুব জলদি বুঝে গেল কেন আরহান আর সিয়ার গল্পের প্রতি এতো আগ্রহ মেয়েটির। ফাঁকা ঢোক গিলে মেয়েটার চোখের দিকে তাকালো। পুতুলের মতো চোখ নয় তবে স্বচ্ছ তাঁর চোখের মনি। সে শুধালো
” বাসায় জানে এখানে এসেছো? ”

” না। পালিয়ে এসেছি ম্যাম। না হলে আসতে দিতো না।”

” ঠিক করো নি মেয়ে। ফ্যামিলির কন্ট্রাক্ট নাম্বার দেও আমি কল দিয়ে আশ্বস্ত করে দিচ্ছি তাঁদের। বাবা মা কে চিন্তা দেওয়া ঠিক নয়। ”

” তাহলে পরবর্তী কাহিনী বলবেন তো ম্যাম? ”

” আগে বলো তো কাউ কে ভালোবাসো কি না? ”

নত জানু হলো মেয়েটি। হয়তো খুব ভালো বাসে কাউ কে। চোখ থেকে অশ্রু ঝরছে তাঁর। ধারণা করা যায় প্রিয় মানুষের প্রত্যাখান থেকেই এই ব্যথা। সেসব কিছুই ঘাটলো না ফাতেমা। মেয়েটার মাথায় হাত বুলিয়ে বলল
” কথা দাও আমি পুরো টা বলার পর যা বলবো শুনবে। আর মর্মার্থ গ্রহণ করবে। ”

” ইয়েস ম্যাম। কথা দিলাম শুনবো আপনার কথা। ”

” এই তো ভালো মেয়ে। ”

” আচ্ছা জলিলের কি হয়েছিলো। সিয়া আর আরহানের মাঝে কোনো বিভেদ তৈরি করেছিলো কি? কোথায় গেল আরহানের সিয়া! ”

আকাশ টা হুংকার দিয়ে উঠলো হঠাৎ। জানালা বার বার ডানা ঝাপটাচ্ছে। সেটা বন্ধ করে দিলো সে। আকাশ টা কেমন গুমোট রূপে সজ্জিত, যেন তাঁরা নিজ থেকে গলে যাচ্ছে আরহানের জীবন কাহিনী তে।

******

ইন্ডিয়ায় চলে যায় আরহান। তবে জলিলের ভালো মানসিকতা চলে না বেশি দিন। আবার নিজের পূর্ব রূপ ধারণ করে সে। কিন্তু সৃষ্টিকর্তা বোধহয় সেখানেই অন্তিম ঘটাতে চেয়েছিলেন। তাই তো জনগনের হাতে প্রাণ যায় জলিলের। তবে ঘটনা টা এমন ভাবে রটে গেলে ও মূলত তেমন টা হয় নি। রায়গঞ্জের সেই নেতা প্ল্যান করে মে’রেছিলো জলিল কে। কেউ বিপরীত মূখী বক্তব্য প্রদান করে নি। বরং স্বস্তি পেয়েছিলো এমন নরপশুর মৃ’ত্যু তে। জলিলের অত্যাচারে অতিষ্ঠ ছিলো পুরো এলাকা। মানুষের সম্মান থেকে শুরু করে অত্যাচার এমন কোনো জিনিস নেই যা করে নি সে। অনেকেই ভেবেছিলো দ্বিতীয় বারের হা’মলা তে জড়িত ছিলো আরহান। তবে সে দুর্ভাগ্যজনক ভাবে জড়িত ছিলো না।

আরহান সিয়ার জীবন চলতে থাকে। কোনো এক ফাঁক ফোকর গলে ফাঁকি দিয়ে চলে যায় মেয়েটা। হারিয়ে যায় অজানা রাজ্যের অতলে থাকা গভীরতায়। আর আরহানের জীবন হয় বিভীষিকাময় অনিশ্চিতের পথে। সিয়া দশম শ্রেনীর ছাত্রী তখন। একদিন হঠাৎ করেই মাথা ঘুরিয়ে পরে যায়। আরহান জানতে পারে বিষয় টা। দেখতে পায় সিয়ার মাথার এক পাশে অনেক টা ফুলে গেছে। জিজ্ঞেস করতেই সবাই বলে এমনিতেই পরে গেছে মাথা ঘুরিয়ে। আর সেই কারনেই মাথা ফুলে গেছে। তবে বিষয় টা ছিলো না এমন। পুরো ঘটনা এড়িয়ে যায় সিয়া।

বাবার ব্যবসায়িক কাজে চট্টগ্রামে গিয়েছিলো আরহান। মনে মনে অব্যক্ত প্ল্যান কষেছিলো সে। হয়তো এবার ভালোবাসা কে পূর্ণাঙ্গ রূপ দেওয়ার একটা ইচ্ছে ছিলো। তবে বিধাতা খেলা বদলিয়ে দেন। ফিরে এসে আরহান শুনতে পেলো সিয়া মা’রা গেছে। কথা টা বিশ্বাস হলো না একদম ই। চেঁচামেচি করতে লাগলো সে। সাজিদা এসে জাপটে ধরলেন ছেলে কে। তবে আরহানের মস্তিষ্ক ফাঁকা। সিয়া মা’রা গেছে শব্দ টা ব্রেন ঠিক নিতে পারছে না। জ্ঞান হারিয়ে ফেলে সে।

ছেলের পাশেই বসে আছেন সাজিদা। চোখ দুটো ভিজে একাকার। ফারেগ সাহেব ও খুব চিন্তিত। আরহান কে সামাল দিবেন কি করে তাঁর পরিকল্পনা সাজাচ্ছেন। তবে পরিকল্পনা কিছু তেই মিলছে না।
” আমার ছেলে টা ম’রে যাবে। ”

” অনাথা কথা বলো না। ”

” জ্ঞান ফিরলে কি বলবে তুমি? ”

” জানি না আমি। কিছু জানি না। ”

মাথা নিচু করে বসে রইলেন ফারেগ সাহেব। সিয়ার মাথায় টিউমার ছিলো। ছোট থেকেই ধরা পরে এটা। তবে তখন টিউমার টা এতো টাই ছোট ছিলো যে অপারেশন করার মতো পরিস্থিতি তে ছিলো না। আর যাঁর দরুন টিউমার টা নিজের কার্যকলাপ করতে পারে অতি সহজেই।প্রায় সময় ই সিয়ার মাথা ব্যথা করতো। আর সেদিন মাথা ঘুরে পরে গিয়ে সিঁড়ি তে প্রচুর ব্যথা পায় টিউমারের সাইটে। দিন দিন পরিস্থিতি খারাপ হতে থাকে তবে আরহান কে বুঝতে দেওয়া হয় না বিষয় টা। ভালোবাসার সিয়া চলে যায় সৃষ্টিকর্তার কাছে। পেয়ে ও হারিয়ে ফেলে আরহান। নিজের ভালোবাসা কে শেষ দেখার সুযোগ অব্দি হয় নি। আর না হয়েছে ক’বরের এক মুঠো মাটি দেওয়ার।

****

চোখ মুছলো সিয়া। প্রতি টা শব্দে কেঁপে উঠেছে তাঁর হৃদয়। যদি ও বিস্তারিত বর্ননা করা হয় নি তবে সেই দৃশ্য যেন নিজ চোখে দেখতে পেল সে। মেয়েটার খোলা চুলে হাত গলিয়ে দিলো ফাতেমা। সিয়ার মন পরে নিয়েছে সে। তাই বলল
” মানুষ তো ভালোবাসা পেয়ে ও হারিয়ে ফেলে। আর তুমি না পেয়েই নিজেকে সব থেকে বেশি ব্যথিত মনে করছো? তাহলেই ভাবো আরহান চরিত্র টা কতো টা কষ্টে তৈরি হয়েছে। ”

” ম্যাম, আমি একজন কে খুব ভালোবাসি। তবে সে আমায় ভালোবাসে না। কষ্ট হতো আমার। খুব বেশি কষ্ট হতো। কিন্তু এখন আমার ধারণা বদলে গেছে। ”

” কেমন? ”

” আমি বুঝতে পেরেছি ভালোবাসা পেয়ে ও হারিয়ে ফেলার যন্ত্রনা আরো বেশি হয়। আমি আর কখনোই নিজেকে অসুখী মনে করবো না। এখন থেকে খুব ভালো করে পড়াশোনা করবো। ”

স্মিত হাসলো ফাতেমা। রাত অনেক হয়েছে তাই ঘরে যেতে বললো সে। তবে সিয়া উৎখুস করতে করতে একটা প্রশ্ন করলো
” এটা কল্প নয়, বাস্তব কাহিনী তাই না ম্যাম? ”

আঁতকে উঠলো ফাতেমা। শরীর কাঁপছে তাঁর। সিয়া চলে গেল তাঁর জন্য রাখা ঘর টি তে। ক্লান্ত লাগছে খুব। আরহানের সিয়া যখন মা’রা যায় তখন হয়তো এই সিয়ার মতোই ছিলো সে। তবে গল্প কি এখানেই শেষ? উহু শেষ হয় নি গল্প। সিয়া কে হারিয়ে আরহানের অবস্থা আর তাঁর পরের জীবন নিয়ে ও তো চলছে চলমান গল্প।সৃষ্টিকর্তা এই আরহান কে তো এখনো বাঁচিয়ে রেখেছেন। তবে তাঁর উদ্দেশ্য সত্যিই অজানা।

***

ফারেগ ফজরের নামাজে গেছেন। আরহান তাঁর রুমে ঘুমিয়ে আছে। ছোট ভাই রা মাদ্রাসা তে। বাসায় একা জেগে আছেন সাজিদা। জেগে উঠলো আরহান। দুই চোখের কার্নিশে জমেছে মুক্ত দানার মতো জল। একটি স্মৃতি মনে আসে। চার পাশ কে খুব ভয় পায় সিয়া। সব সময় বলতো আরহান নাকি ওর হিরো। যে ওর সাথে থাকলে সব কিছু অন্য রকম লাগে। গুন্ডামি করতে ইচ্ছে হয় তাঁর। তখন আরহান বলতো
” কেন? ”

” অজানা শক্তি আসে। সবাই কে বকতে ইচ্ছে হয়। ”

” কেউ কিছু বললে? ”

” তুমি আছো না। ”

সিয়ার ভরসা মাখা পুতুল চোখ কল্পনায় দেখতে পায় আরহান। শরীর কাঁপতে থাকে অবলীল ভাবে। শূন্যতায় লেপ্টে যায় মানসপট। এতো টাই যন্ত্রনা অনুভব হয় যে পাগল হয়ে যায় আরহান। ওর রুমের দরজা টা লোহার। নেশাক্ত মানবের মতো আশে পাশে খুঁজতে থাকে কোনো বিশেষ কিছু। চোখ লাগে বাবার মাথার পাগড়ি তে। কোনো মতে ফ্যানে লাগিয়ে দেয় ফাঁ’স দেওয়ার জন্য। সবে মাত্র ফজরের নামাজে বসেছেন সাজিদা। চেয়ার পরার আওয়াজে নামাজ থেকে উঠে আসেন তিনি। কথায় আছে মায়ের মন কখনো ভুল বলে না। তিনি হয়তো আন্দাজ করেছিলেন। দরজা লাগানো, তিনি ধাক্কা তে থাকেন দরজা। চিৎকার করে বলতে লাগলেন
” বাবা তুই আমার দিকে, আল্লাহর ওয়াস্তে আমার দিকে তাকা। তরে ছাড়া ম’রে যাবো বাবা। তুই ফিরে আয়। আমি ম’রে যাবো বাবা। আল্লাহর ওয়াস্তে ফিরে আয় বাবা।”

প্রতি টা কথা আরহান শুনতে পাচ্ছিলো। চোখ দিয়ে নেমে যাচ্ছিলো অশ্রুর ধারা। মায়ের জন্য কষ্ট হচ্ছিলো তাঁর। তবে ফিরে আসার পথ নেই। এখন তো একটাই উদ্দেশ্য এই জীবন থেকে মুক্তি পাওয়া।

** সিয়ার ঘটনা লিখতে আমার হাত কাঁপে। চোখ ভিজে যায়। আমি বা আরহান কেউ ই সিয়ার শেষ চরিত্র বিস্তারিত জানি না। কারন আরহান যখন চট্টগ্রাম থেকে এসেছে তখন সিয়া আর নেই। সে সবার মুখেই এসব শুনেছে। জানেন তো আজকে কেউ একজন প্রচুর কাঁদবে। রোজ কাঁদে সে। যেমনটা প্রতি টা ঘটনা লিখতে গিয়ে কেঁদেছি আমি ও। তবে একটা কথা বলবো যদি আরহানের কান্না মিশ্রিত কন্ঠ শুনতে পেতেন তাহলে বুঝতেন মানুষ টার কষ্ট কতো। আমি চাইলে ও পারছি না তাঁকে লিখতে, কারন সে বাস্তব আর আমার লেখা কল্প জগতের অংশ মাত্র। **

বি : দ্র : ভুল ত্রুটি মাফ করবেন।

চলবে

#এমন_কেনো_তুমি [ সত্য ঘটনার অবলম্বনে ]
#ফাতেমা_তুজ
#part_16

দূর্বল শরীর নিয়ে চোখ বন্ধ করে আরহান। অপর পাশ থেকে সাজিদা হিতাহিত জ্ঞান শূন্য হওয়ার মতো করে চেঁচিয়ে যাচ্ছেন অবিরত ভাবে। দূর্বল শরীর নিয়ে বিছানা তে চেয়ার নেওয়ার কারনে চেয়ার টা পরে গিয়েছিলো। আর সেটার শব্দ ই পেয়েছিলেন সাজিদা তাই ছুটে আসেন। আরহান আবার চেয়ার টা উঠালো। পাগরি দিয়ে বাঁধা ফাঁ’সে ঝুলে গেল সে। প্রচন্ড কষ্ট হচ্ছে তাঁর। তবু ও চাইছে মন কেন মৃ’ত্যু ঘটছে না। কেন এতো সময় লাগছে মৃ’ত্যুর। কষ্টে গলা শুকিয়ে যাচ্ছে। নিশ্বাস গুলো যেন চলে গিয়ে ও যাচ্ছে না। উপায় না দেখে সাজিদা ফোন করেন ফারেগ সাহেব কে। আর দরজায় আ’ঘাত করতে করতে অনড়গল বলে যাচ্ছেন
” আমার দিকে তাকা বাবা, আমার দিকে তাকা। দোহাই তোর, আমি মরে যাবো বাবা। আমি বাঁচবো না তরে ছাড়া। বাবা আল্লাহর ওয়াস্তে আমার দিকে তাকা। ”

সব গুলো কথাই স্পষ্ট কানে আসে আরহানের। শরীর কাঁপুনি দিয়ে যাচ্ছে। চোখ দিয়ে ঝরছে পানি। তবে দেহ থেকে থাকে প্রাণ যাচ্ছে না। না চাইতে ও গলা কাঁ’টা মুরগির মতো ঝাঁকতে থাকে শরীর। মন আর শরীরের মাঝে সর্ম্পক থাকলে ও বিশেষ কিছু কার্য তো যে যাঁর মতোই করে। না চাইতে ও মুখ দিয়ে আর্তনাদ নেমে আসে। তবু প্রাণ যাচ্ছে না। এ কেমন যন্ত্রণা!

প্রায় বিশ মিনিট পর দরজা ভেঙে প্রবেশ করেন সবাই। সাজিদার মাথায় হাত। তিনি ভেবেছেন তাঁর ছেলে আর নেই ইহজগতে। তবে গলা তে থাকা দ’ড়ির দিকে চেয়ে আশা জাগে সকলের মনে। প্রায় বিশ মিনিট ঝুলে থেকে ও প্রাণ যায় নি আরহানের। মুখ দিয়ে সাদা লালা বেরিয়ে এসেছে । ঘোলা চোখে দড়ি বেঁধেছিলো সেই কারনে গলায় না লেগে সেটা থুতনির দিকে উঠে আসে। আর আল্লাহর রহমত থাকায় বেঁচে যায় আরহান।

দুই তিন দিন পর। সবাই এখন চোখে চোখে রাখে আরহান কে। একা থাকতে দেওয়া হয় না। মানুষ যখন নিজের জীবনের মায়া ত্যাগ করে তখন আর ভয় হয় না কিছু তেই। সকলের চোখ কে ফাঁকি দেওয়ার জন্য শুরু হয় অভিনয়। ঠিক মতো খাবার খাওয়া, খুব ই সাধারণ আচারন করা। যেন নিজ ভালোবাসার শোক ভুলে গিয়ে নতুন উদ্যমে বেঁচে থাকার প্রত্যয় নিয়েছে আরহান।
বন্ধু দের সাথে বের হয় সে। খুব স্বাভাবিক হাসি খুশি তাঁর আচারণ। এক বন্ধুর ফার্মাসি ছিলো। সেখানেই উপস্থিত হয় সে। পল্লি চিকিৎসকের কোর্স করা ছিলো। তাই ঔষধ সম্বন্ধে কিছু টা ধারণা ও ছিলো। বন্ধুর সাথে খুব ভালো আচারণ করতে থাকে। যেন সেই আগের আরহান ফিরে এসেছে সকলের মাঝে। পকেটে টাকা নেই। তাছাড়া পরিস্থিতি জানা থাকা তে কোথাও কোনো প্রকার ঔষধ দিবে না ওকে। সন্দেহ করবে শতভাগ। কৌশলে বন্ধুর অগোচরে তেরো চৌদ্দ টা ঔষধ নেয়। যাকে সহজ কিংবা মান বাংলায় বলা হয় চুরি।

আড্ডা শেষে বাসায় ফিরে আসে। দোতলা তে উঠার সময় ভেতর টা জ্বলসে যাচ্ছিলো। তীব্র যন্ত্রণা তে সব গুলো ঔষধ মুখে দেয়। রাগে দুঃখে ট্যাবলেট গুলো চাবাতে শুরু করে। দুই তলা থেকে তিন তলা আর তিন তলা থেকে চার তলা। এই সামান্য সময়েই কাজ করে ঔষধ। দুর্বল শরীর কে চেপে ধরে নিজের মাঝে। দরজার কাছে এসে পরে যায় আরহান।

জ্ঞান ফিরলে নিজেকে দেখতে পায় হসপিটালের বেডে। গলা দিয়ে পাইপ ঢোকানো। কি সব ঔষধ আর পানি দেওয়া হচ্ছিলো পেটে। সে যে কি যন্ত্রনা তা অনুভব ছাড়া বলা দুষ্কর। মনে হয় এই ভাবে বেঁচে থাকার থেকে মৃ’ত্যু অধিক শ্রেয়।

এমন নানা পাগলামি চলতে থাকে আরহানের। বাসার সবাই ও পাগল হয়ে যায় আরহান কে সামলাতে গিয়ে। সিয়ার চলে যাওয়া স্পষ্ট ভাবে বর্ণনা করে দিয়েছে এই পৃথিবী তে আরহানের জন্য সুখ, স্বাচ্ছন্দ্য সব কিছুই হারাম। একটা সময় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় আরহান কে মানসিক হসপিটালে ভর্তি করানো হবে। রিহেব এর মতো একটি মানসিক হসপিটাল। আর তারপর শুরু হয় আরহানের আরেক জীবন। যা সম্পর্কে আগেই বলা হয়েছে।

****

ঘুমে চোখ বুঝে আসছে ফাতেমার। পাশের রুমে গিয়ে দেখলো ঘুমিয়ে আছে সিয়া। বইয়ের পাণ্ডুলিপি জমা দিতে হবে খুব শ্রীঘই। সেই কারনে গল্প টা লিখে যাচ্ছিলো সে। তবে রাত অনেক এখন ঘুমানো দরকার। ফোন স্ক্রল করতে গিয়ে দেখতে পেল গল্প জগতের সেই আরহানের ম্যাসেজ। লোক টা ঘুমায় না। বলতে গেলে নিশাচর এক প্রানী। ইচ্ছাকৃত নয় এটা অনিচ্ছাকৃত ঘটে চলেছে তাঁর জীবনে। যতো টুকু লিখেছে সেটা পাঠিয়ে দিয়ে ঘুমাতে গেল ফাতেমা। সে জানে আরহানের পেছনে থাকা মানুষ টা এই অংশ পড়ে আজ ও কাঁদবে। তবে অসহায় এই পৃথিবী তে কিছু ই যে করার নেই। চাইলে ও সিয়া কে ফিরিয়ে দেওয়ার সাধ্য নেই।

———

ইদানিং একটু বেশিই অসুস্থতায় ভুগছে আরহান। ফারেগ সাহেব চিন্তা করলেন ডাক্তারের সাথে দেখা করবেন। ডাক্তারের চেম্বারে যেতেই তিনি এক ভয়ঙ্কর কথা জানালেন।
” আমরা তো আগেই বলেছি ফিরে গিয়ে ওকে বিয়ে দিবেন। ”

” হ্যাঁ কিন্তু বিয়ের কথা বললেই তো রেগে যাবে।”

” দেখুন বিয়ে টা জরুরি। আমরা তো বিশেষ ধরনের মেডিসিন দিয়েছি যাঁর কারণে শারীরিক ভাবে একটা সমর্থন প্রয়োজন হবে। আর সে বিয়ে করতে রাজি ও হবে। ”

ফারেগ সাহেব চিন্তিত হয়ে গেলেন। বহু পূর্বেই ডাক্তার বলেছিলেন বিয়ের কথা। সেই কারনে মেয়ে দেখে ও রাখেন ওনারা। এর জন্য মিথ্যে এক উপায় অবলম্বন করেন তাঁরা। বলেন আরহান বিদেশে রয়েছে। ফিরে এলেই বিয়ে হবে। ভালো একটা সম্পর্ক ও তৈরি হয়ে গেছে। আসা যাওয়া ও ছিলো। কিন্তু আরহান তো স্বাভাবিক ভাবেই মানতে চাইবে না। মনে মনে স্থির করলেন বিয়ের কথা জানানো হবে। আরহান কে সব টা জানানোর পর আরহান তীব্র প্রতিবাদ জানালো। সে বললো কিছু তেই বিয়ে করবে না সে। মনে একজন কে রেখে আরেক জন বিয়ে করে কেউ ই সুখী হবে না। তাছাড়া মেয়েটার প্রতি অবিচার হবে তখন। তবে সমস্যা হয় আরহানের ছবি দেখে মেয়েটা মনে মনে এক টা ঘরের আয়োজন করে ফেলে। এক টা অনুভূতির জন্ম হয় মনে। বিষয় টা জানার পর মেয়েটা কে বোঝায় আরহান। মেয়েটা ঝমঝমে কেঁদে উঠে। আরহান অসহায় কিছুই করার নেই তাঁর। উল্টো বিয়ে করলে মেয়েটার সাথে অন্যায় হবে। ব্যক্তিগত ডাক্তার নানান রকমের পরামর্শ দেন। যা ডাক্তার হিসেবে রোগীর জন্য সঠিক তবে মানুষ হিসেবে অনুচিত। আরহান সেসব কে পাত্তা না দিয়ে কষ্ট কে আঁকড়ে ধরে।

আরহানের দাদা দাদি বেঁচে আছেন এখনো। নাতির অবস্থা দেখে অসহায় বোধ করেন দুজনেই। বৃদ্ধ দাদার বয়স ১০৩। বিয়ে তে দ্বিমত থাকা তে পা ধরে বসেন তাঁরা। বলেন ” বংশের প্রথম নাতির বিয়ে দেখতে চান ওনারা। ”

তবে আরহান রাজি হয় না। কিছু দিন চলে যায় এভাবেই। সিয়ার স্মৃতি গুলো তাড়া করে বেড়ায় ওকে। সাথে শুরু হয় শারীরিক অসুস্থতা। জ্বর ঠান্ডা মাথা ব্যাথা লেগেই থাকে। প্রেসার বেড়ে যায় খুব। এমন কি নাক দিয়ে র’ক্ত পরা শুরু হয়। ফারেগ আর সাজিদা আবার অনুনয় করেন। বলেন
” বাবা বিয়ে টা কর। ”

” কতো বার বলবো তোমাদের? ”

” সব সময় তো আমরা থাকবো না। একটা সময় তো কাউ কে না কাউ কে লাগবেই। ”

দাদা, নানার গোষ্ঠীর সবাই বুঝাতে শুরু করে। আরহান কিছু তেই বিয়ে করবে না। মাত্র বাইশ বছর আরহানের। সহসা এই সময়ে কোনো ছেলে কেই বিয়ে দেন না বাবা মা। বস্তুত অসুস্থতা আর সিয়ার শোক ই এই কারণ। তাঁদের ভাবনা বিয়ে করলে ছেলের মন মানসিকতার পরিবর্তন ঘটবে। হয়তো বউ এর সান্নিধ্যে পেয়ে ভুলে যাবে অতীত। আর নানান সমস্যা তো রয়েছেই। দিন যায় আরো সাজিদা আর ফারেগ সাহেব আরো বোঝাতে থাকেন। অতিষ্ঠ হয়ে যায় আরহান। বাবা মায়ের মুখ চেয়ে বলে সে বিয়ে করবে। কিন্তু…….

বি : দ্র : ভুল ত্রুটি মাফ করবেন।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here