এমন_কেনো_তুমি,part_17

0
1417

#এমন_কেনো_তুমি,part_17
#ফাতেমা_তুজ

সৃষ্টিকর্তার কাছে মাফ চায় আরহান। কারন এই বিয়ের জন্য তাঁর বাবা মা পায়ে ধরেছে অব্দি। যা একজন সন্তান হিসেবে লজ্জা আর পাপের সমতুল্য। আরহান মনে মনে স্থির করে বিনিময় প্রথা অবলম্বন করবে সে। আর যাই হোক তাঁতে করে কিছু তো পাবে মেয়েটি। সকলে চেয়ে আছে আরহানের শর্তের জন্য। বিস্ফোরণ ফাঁটাতে আরহান বলল
” বিয়ে করলে গরিব ঘরেথ মেয়ে কে করবো। ”

” আচ্ছা ঠিক আছে। তাহলে মেয়ে দেখতে যাবি কবে ? ”

” না। তোমরা দেখো, আমার কোনো পছন্দ অপছন্দ নেই। তবে মনে রেখো মেয়ে যেন গরিব ঘরের হয়।”

” আচ্ছা। ”

বাবা মা খুশি মনে চলে যান। ছেলে বিয়ে করতে রাজি হয়েছে এই অনেক। তবে কেউ কি জানে আরহানের মনের করুণ অবস্থা। এ জীবনের প্রতি নেই বিন্দু মাত্র মায়া। কিন্তু এখন দায় বদ্ধ ভাবে হলে ও বেঁচে থাকতে হবে ওকে। পরিবরারের জন্য হলে ও বেঁচে থাকতে হবে।

আরহানের কথা মতো গরিব ঘরের মেয়ে দেখা হয়। মনে মনে কিছু স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে আরহান। যদি ও এখানে ও অনুচিত কার্য রয়েছে তবে সেটা কেবল তাঁর মনের উপর। বাহ্যিক ভাবে তো ওর কোনো দোষ নেই। সব টা জানিয়েই বিয়ে করছে সে। গরিব ঘরের মেয়ে বিয়ে করার বিশেষ উদ্দেশ্য অন্তত পক্ষে মেয়ে টা আর তাঁর পরিবার শক্ত পোক্ত ছায়া পাবে। অর্থনৈতিক ভাবে হলে ও সুবিধা পাবে তাঁরা। সব কিছু ঠিক হলে ও ভেতর ঘর টা অন্ধকারে নিমজ্জিত। নেই কোথাও একটু সমীরন। চার পাশ টা ধোঁয়াশা লাগে। সিয়ার স্মৃতি গুলো গলা টিপে ধরে। বাঁচতে পারা টা যেন পৃথিবীর সব থেকে কঠিন তম কাজ।

সবাই মেয়ে দেখতে থাকে। পরিশেষে একটি মেয়ে কে পছন্দ হয় সকলের। রোজার মাসের শেষের দিকে বিয়ের ডেট ফাইনাল করা হয়। খুব সম্ভবত ঈদের তিন দিন পূর্বে সকলে যায় মেয়ের বাসা তে। বেশ কিছু টা ভয়ে ছিলেন তাঁরা। বড় ফ্যামলির সাথে সমন্ধ হওয়া টা চার টি খানি কথা নয়। তাঁদের জন্য আপ্যায়ন হতে হবে স্পেশাল ভাবে। যথেষ্ট সমাদরের চেষ্টা করে তাঁরা। আরহানের পছন্দ অনুযায়ী সকল খাবার রান্না করা হয়। সকলে বেশ হাসি খুশি। এর মাঝ থেকে একটা কথা ও বলে নি আরহান। যেখানে বিয়ে করা টা নেহাত ই বিনিময় প্রথা সেখানে কি যায় আছে কথা বলা না বলা তে। সকলে হয়তো ভাবছে ছেলে কথা বলছে না কেন। তবে সেসব কে পাত্তা দিচ্ছে না আরহান। সকলে একটু ভয়ে ই ছিলো। ছেলে সুন্দর, উচ্চ ফ্যামলি তাহলে নিশ্চয়ই অনেক দাবি থাকবে। মেয়ের খালু অধরে হাসি রেখে খুব সাবলীল ভাষাতেই প্রশ্ন করলো
” ভাই আমাদের থেকে ছেলের কি চাওয়া পাওয়া আছে যদি একটু ধারণা দিতেন তাহলে আমরা আগে থেকেই ম্যানেজ করতাম আর কি। ”

ওনার কথা তে বোঝা যাচ্ছে। যতো চাওয়া থাকুক না কেন তাঁরা ব্যবস্থা করার চেষ্টা করবে। আর মেয়ে কে এই বাড়ি তেই বিয়ে দিবেন। সকলের মাঝ থেকে প্রথম বারের মতো কথা বলল আরহান।
” বিশ লাখ টাকা ক্যাশ আর মিনিমাম দশ ভরি সোনার গহনা। ”

সবাই হা হয়ে তাকিয়ে আছে। তাঁদের মনে বোধহয় এমন প্রশ্ন জেগেছে শা’লার জামাই কথা বলে না এখন এটা বললো কি! স্টোক করবে করবে অবস্থা সকলের ই। অসহায় একটা হাসি মুখে ঝুলে আছে। খালু সেই অসহায় হাসি মাখা ভাব ঠোঁটের কোনে রেখে নিয়েই বললেন
” জামাই এটা কি বললেন আপনি! ”

” আমাদের পরিবার দেখে সমন্ধ করেন নাই? ”

” হ্যাঁ দেখেই করেছি। ”

” তো আমাদের পরিবার কে কেমন মনে হয়? ”

” ভালো পরিবার। ”

” আর? ”

” ধার্মিক। ”

” ধার্মিক পরিবার জেনেই সমন্ধ করেছেন। এখন কথা হচ্ছে ধর্মে কি যৌতুক নেওয়া আছে নাকি নাই। ”

” নাই। ”

” তো ধর্মে যৌতুক হারাম হলে আপনি কোন সাহসে এই প্রশ্ন করেন। ”

আরহানের শরীরে রাগ বাড়তে থাকে। সাজিদা বলেন
” আমার ছেলে এসব বিষয়ে খুব সেনসেটিভ। রাগ করে খুব। ”

” আমরা আসলে বুঝতে পারি নাই জামাই এভাবে রাগ করবেন। ”

কথার মাঝেই উঠে চলে আসে আরহান। কিসের বিয়ে কিসের কি। রাগের কারনে প্রতি টা শিরা জেগে উঠেছে। একটা ধার্মিক পরিবারের কাছে যৌতুক কতো টা অসম্মানের বিষয় সেসব তারাই জানেন।

আরহানের আচারণ সবাই কে মুগ্ধ করে। যেখানে যৌতুক এখন ফ্যাশন রূপে দাঁড়িয়েছে। সেখানে এরা নাকোচ করে দিচ্ছে। এমন ভালো পরিবার আর ছেলে হাত ছাড়া করতে চায় বা কে। মেয়ের বাড়ির লোকের খুশির অন্ত নেই। সবাই ছুটে আসে আরহানের কাছে। জাপটে ধরে অনুনয় করে বলেন
” জামাই আমাদের মাফ করে দাও। আমরা আসলে বুঝতে পারি নাই। ”

আরহানের প্রশংসায় পঞ্চমুখ তাঁরা। খুশি তে কেঁদেই দেন। গরিবের এই এক ব্যথা একটু খুশি তে অজস্র কান্নার ধারা নামিয়ে দেয়। সমস্ত টাই বুঝতে পারে আরহান। দীর্ঘশ্বাস লুকিয়ে ঘরে প্রবেশ করে। অন্তত পক্ষে আর্থিক ভাবে তো লাভবান হবে এরা।

পঞ্চ ব্যঞ্জন শুনেছিলো আরহান। তবে এই মুহূর্তে তাঁর সামনে সতেরো ব্যঞ্জন সাজানো। আরহানের পছন্দ অনুযায়ী সতেরো রকমের খাবার করা হয়েছে। ভর্তা থেকে শুরু করে মাছ মাং’স। বলতে গেলে গরিবের সামর্থ্য পাড় করে নিয়েছে। বিষয় টা সত্যিই চোখে পরার মতো। এতে করে বোঝা যায় আরহান কে কতো টা চায় ওনারা।

আরহানের আপ্যায়নের জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয় মিমি কে। বেশ দুষ্টু প্রকৃতির মেয়ে মিমি। কিছু টা সিয়ার মতোই দুষ্টু। আরহানের পাশে বসে ফাজলামি শুরু করে দিয়েছে। ভাতের পাতে মরিচ দিচ্ছে তো আবার অন্য কিচ্ছু দিচ্ছে। আরহান কিছুই বলছে না। বরং সব টা হজম করে নিচ্ছে সাবধানে। অন্তরে শান্তি নেই অথচ মুখে ফোটানো অভিনয়ের হাসি। রোজার ঈদের দুই সপ্তাহ পর বিয়ের ডেট ফাইনাল করা হয়। সকলে তৃপ্তি নিয়ে ফিরে আসে।

রাতের বেলায় অচেনা নাম্বার থেকে কল আসে। আরহান রিসিভ করে বলে
” কে? ”

” মিমি। ”

” দুঃখিত চিনলাম না ঠিক। ”

” সেকি কথা আংটি পরানোর সময় নাম শুনেন নি? ”

এবার আরহান বুঝতে পারলো কে এই মিমি। বলতে গেলে সত্যিই নাম জানার প্রয়োজন বোধ করে নি সে। শুধু মাত্র নিজেকে মানানোর চেষ্টা চালাচ্ছে। নানান কথায় আসর জমিয়ে দিলো মিমি। তবে আরহান শুধু হু হা করছে। তবে মিমি যেন সিয়ার অনুরূপ। খুব বেশিই পাকনা মেয়ে। দেখা স্বাক্ষাৎ হওয়ার পর পর ই ওনি কল্পনা করে নিয়েছেন সংসার অব্দি। এসব যেন তাঁর কতো দিনের সাজানো। কথা গুলো হাসি মজার হলে ও আরহানের মনে বিন্দু মাত্র ফিলিং নেই।

এভাবেই দিন যেতে লাগলো। মিমি নিজ থেকেই ফোন দিতো। আরহান শুধুই শ্রোতার ভূমিকা পালন করতো। এভাবেই একদিন মিমি বলল
” একটা কথা বলি। ”

” হু। ”

” একটা ছেলে আমার পেছনে দুই বছর যাবত ঘুরছিলো। সেই কারনে কিছু টা মায়া হয়ে যায় আমার। আর আমি না ওকে হ্যাঁ বলে দিয়েছিলাম। তবে বিশ্বাস করেন আমি যদি আগে জানতাম আমার পরিবার বিয়ের প্ল্যান করেছে তাহলে এটা ও বলতাম না। ”

” বুঝলাম। তো কি চাও তুমি। বিয়ে ক্যানসেল করে দিবো কি? ”

” আরে না না। আমি কি সেটা বলেছি নাকি। কথা টা জানালাম পরে শুনলে যেন আপনি সন্দেহ না করেন আমায়। ”

” ওহ। ”

আরহান ওকে পাত্তাই দিচ্ছে না। অথচ মিমি নানান ভাবে আঁকড়ে নিচ্ছে ওকে। প্রচন্ড কেয়ারে করছে সে। যেন আরহানের সাথে বহু দিনের প্রণয় রয়েছে তাঁর। এসব দেখে মনের ভেতর কেমন করে উঠে ছেলেটার। মন কে বোঝাতে চেষ্টা করে নানান ভাবে। এক পর্যায়ে স্থির হয় যে আর যাই হোক না কেন মেয়ে টা কে কষ্ট দিবে না সে। ভেতর থেকে না হোক উপরে উপরে খুশি রাখবে সে।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here