এমন_কেনো_তুমি,part_3,4

0
847

#এমন_কেনো_তুমি,part_3,4
#ফাতেমা_তুজ
#part_3

আরহানের র,ক্ত লাল চোখ। ঘুম হয় না বহুদিন যাবত। মানসিক হসপিটালে থেকে শরীরে মেদ জমেছে। একশ কেজি ছুঁই ছুঁই প্রায়। যে ছেলেটি শরীর কে ফিট রাখতে পুরো ঘর এলোমেলো করে দিতো আজ সেই ছেলেটির কোনো ধ্যান নেই শরীরের প্রতি। উহু যন্ত্রমানব নয় সে। বুকের ভেতর এখনো কষ্ট অনুভব হয়। তবে বৈচিত্র পূর্ন জীবনের প্রতি মোহ নেই আর। ইহজগতে মনের ব্যথার থেকে বড় ব্যথা বোধহয় কিছু নেই। তাই তো দীর্ঘ অনেক গুলো মাস মানসিক হসপিটালে কাঁটিয়ে দিলো হাজার খানেক যন্ত্রনায় পাগল রূপে।

****

কিছু দিন পূর্বেই সিয়ার ভাই হয়েছে। ফুটফুটে মিষ্টি এক বাচ্চা ছেলে। ছোট্ট সিয়া ভাই কে পেয়ে আবেগে ভাসছে। আহা কি মনোরম সে দৃশ্য। পৃথিবীর সকল সুখ যেন ভালোবাসা তে নিহিত। দীপা কে সহ্য করতে পারে না সিয়া। কারন ওর প্রিয় একজনের সাথে খুব ভাব তাঁর। আরহান কে ভয় পেলে ও আরহানের সান্নিধ্য বেশ ভালো লাগে সিয়ার। খেলার সাথী হিসেবে গ্রহণ করেছে তাঁকে। আর সে যতোই ছোট হোক না কেন খেলার সাথীর ভাগ দিতে চায় কে?

আরহানের কোচিং চলছিলো।কারন ছাড়াই সিয়ার হঠাৎ হঠাৎ রেগে যাওয়া দেখতে পায় ওহ। বুঝতে পারে বাচ্চা মেয়েটি কে রাগাতে পারলে বেশ মজা হবে। সপ্তম শ্রেনীর কোচিং ক্লাসে মনোযোগ দিতে পারলো না ওহ। যার ফলে স্যারের কাছে বকা খেতে ও হলো। অবশেষে মজবুত প্ল্যান গড়লো আরহান। দেখবে এবার সিয়ার রিয়্যাকশন। তবে একটা কথা বলা বাহুল্য পঞ্চম শ্রেনী তে পড়ুয়া সিয়ার আচারন দেখলে মনে হয় পূর্ণ কিশোরী। বিষয় টা প্রায় লক্ষ্য করে আরহান।

বিকেলে রোজকার মতো খেলছিলো দীপার সাথে। আশে পাশে তাকিয়ে সর্তক হয়ে বলল
” শোন দীপা একটা প্ল্যান আছে আমার। ”

” কিসের প্ল্যান? ”

” সিয়া কে রাগানোর। ”

” ওকে কেন রাগাবি? এমনি তেই তো রেগে থাকে সব সময়। ”

” আরে শোন না, আমি দেখবো ওর অবস্থা। ”

” আচ্ছা বল। ”

এখানে বলা টা রিক্স হয়ে যাবে। তাই দীপা কে নিয়ে একটু দূরে সরে গেল। চার পাশে তাকিয়ে সামান্য ঝুঁকে ফিস ফিস করে বলল
” আমি একটা চিঠি লিখে দিবো। আর তোর কাজ সিয়ার সামনে সেটা পড়া। ”

” কিসের চিঠি। ”

” প্রেমের চিঠি। ”

” কিইই। ”

দীপার চিৎকার শুনে ধমকে উঠে আরহান। বলল
” ধীরে, আরে এটা তো এমনি এমনি। ”

” আচ্ছা। ”

আরহান বেশ ভালো লিখতে পারে। চট জলদি লিখে ফেললো কয়েক লাইন। যেহেতু এখন সিয়া নেই তাই ঠিক করলো সন্ধ্যার দিকে দীপার হাতে তুলে দিবে এটা।

যেই ভাবা সেই কাজ। সন্ধ্যা হলো, সিয়া এখন বাসাতেই। করিডোর দিয়ে যাচ্ছিলো ঠিক তখনি দীপার হাতে চিঠি টা দিলো আরহান। যা স্পষ্ট দেখতে পেলো না সিয়া। ভ্রু কুটি করে তাকিয়ে রইলো ওদের দুজনের দিকে। দীপা প্ল্যান অনুযায়ী চিঠি টা পড়তে লাগলো তবে ততক্ষণে চলে গেছে মেয়েটা। চিঠি টা ছিলো এমন
” প্রিয় তোমার মায়াবী চোখে আমি হারিয়ে যাই সব সময়। খুব ভালোবাসি তোমায়। জানো তো তোমায় না দেখলে আমার অবস্থা কাহিল হয়ে যায়। ”

বস্তুত চিঠি টার কিছু অংশ কপি করা। সিয়া ঘর থেকে আবার ফিরে এলো।ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে রইলো ওদের দুজনের দিকে। ওর মস্তিষ্ক অনেক কিছুই বলছে তবে কিছু ঠাওর হলো না। বিরক্তি নিয়ে আবার চলে গেল।

এর ই মাঝে ঘটে গেল আরেক বিপত্তি। দীপার মাসি ছিলেন মানসিক রোগী। বয়স ত্রিশ পেরিয়ে গেলে ও আচারণ বাচ্চা দের মতোই। আরহান যখন দীপা কে চিঠি দিচ্ছিলো তখন তিনি দেখে ফেলেন সেটা। হঠাৎ করেই লাফিয়ে উঠেন তিনি। চিৎকার করতে করতে বলেন
” আমি দেখেছি, আমি দেখেছি। ”

ভয় পেয়ে যায় দীপা। মাসির কাছে গিয়ে বলে
” চুপ করো তুমি। চেঁচাবে না একদম। ”

কিন্তু কে শোনে কার কথা। দীপা কে পাত্তা না দিয়ে চিৎকার করতে থাকেন তিনি। খুব ভয় পায় দীপা। কাঁপতে কাঁপতে বলে
” আমি কিছু জানি না। আরহান ই আমাকে চিঠি টা দিয়েছে। ”

আরহানের অবস্থা তখন দেখার মতো। পালিয়ে বাঁচার জো নেই। পাগলের মতোই মাসি একই বুলি আওড়াতে থাকে। এতো জোড়ে চেচানোর ফলে দীপার নানু এসে পরেন সেখানে।
” কি হয়েছে? ”

” আরহান দীপা কে দিয়েছে। ”

” কি দিয়েছে? ”

” ঐ যে ”

দীপার হাতের চিঠির দিকে নির্দেশনা দেয় মাসি। নানু খপ করে চিঠি টা নিয়ে যান। পড়ার পর বুঝতে পারেন সব। সামান্য রাগ নিয়েই তিনি আরহানদের বাসায় যান। দীপা আর আরহান একে অপরের মুখ চাওয়া চাওয়ি করছে। কি থেকে কি হয়ে গেল।

সাজিদার ঘুম খুব গভীর। ঘুমে বিরক্তি একদম ই পছন্দ নয় ওনার। তাছাড়া এক বার ঘুমালে উঠতে পারেন না সহজে। তাহলে প্রচুর মাথা ব্যথা করে। নানু গিয়ে বলেন
” আপনার ছেলে আমার নাতনি রে কি দিছে দেখেন। ”

সবে মাত্র ঘুম টা লেগেছিলো। ঠিক ঠাক শুনলেন না সাজিদা। এক পলক তাকিয়ে বললেন
” আপনি রাখেন কাল সকালে আমি দেখবো। ”

চিঠি রেখে নানু চলে যান। আরহানের পা কাঁপাকাপি করছে। প্রচন্ড রাগি সাজিদা। খুব ভালো করেই বুঝতে পেরেছে কাল সকালে কিয়ামত ঘটতে চলেছে।সারা রাত ভয়ে ঠিক ঠাক ঘুম হলো না ওর। এতো টাই ভয় পেল যে রাতে বিছানা ভিজিয়ে ফেলল।

সকাল বেলা উঠে গোসল করে ড্রেস চেঞ্জ করে ফেলে। সাজিদা তখন নাস্তা বানাচ্ছিলেন। সুযোগ টা গ্রহন করে ওহ। না বলেই স্কুলে চলে যায়। পরে যা হবে দেখা যাবে।

দুপুরের দিকে সাজিদা স্কুলে আসেন। আরহানের বন্ধু রাব্বি বলে
” আরহান তোর মা এসেছে, কোথায় যেন যাবে তোকে নিয়ে তাই তিন দিনের ছুটি ও নিয়েছে। ”

আরহানের কপাল বেয়ে ঘাম নেমে যায়। আনমনেই আওড়াতে থাকে ” কোথাও তো যাবে না। ছুটি তো নিয়েছে আমারে মা,রার পর আমি যে তিন দিন বিছানা থেকে উঠতে পারবো না সেই কারনে। ”

সাজিদার আচারণ এতো টা স্বাভাবিক যে দেখে বোঝার উপায় নেই কি হতে চলেছে। খুব সুন্দর ভাবেই বাসায় এসে পরে। দরজা দিয়ে প্রবেশ করবে আরহান, ঠিক তখনি ওর কলার চেপে ধরেন সাজিদা।
আরহানের আর বুঝতে বাকি নেই এখন কিয়ামত হতে চলেছে। দরজার পাশেই ছিলো লাঠি। সেই লাঠি দিয়ে লাগাতার মা,রতে থাকেন ওনি। ব্যথায় কঁকিয়ে উঠে আরহান। তাঁতে বিন্দু মাত্র ভ্রু ক্ষেপ নেই সাজিদার।
” কোন হাত দিয়ে লিখছিস তুই, এ হাত আগুনে পুড়াবো আমি। হারা,মির বাচ্চা। ”

সাজিদার চিৎকারে পুরো বাসায় খবর রটিয়ে যায়। সবাই আসতে থাকে একে একে। গরম খুন্তি দিয়ে ওর হাতে চাপ দেন সাজিদা। তখনি চামড়া উঠে আসে। নরম সাদা মাং’সের অবস্থান ভেসে উঠে। অসহ্য ব্যথা অনুভব হয় ওর।

ছুটে আসেন সিয়ার মা সুমনা। কোনো মতে ছাড়িয়ে নিয়ে যান নিজেদের ঘরে। সাজিদার ভয়ঙ্কর রূপে অন্য কেউ আগাতে সাহস পায় নি। আরহান কাঁদতে থাকে হাতের দিকে তাকিয়ে।

সিয়াদের ঘরে জমায়েত হয় সবাই। দীপা আফসোস করে বলে
” আমি আমার ঘাড়ে দোষ নিলেই ভালো হতো। বড় জোড় দুটো থাপ্পড় খেতাম। ”

” আমি জানলে বিচার ই দিতাম না। ওকে ডাক দিয়ে কয়টা কথা বোঝাতাম। ইসস ”

সবাই আফসোস করতে লাগলো। তবে আফসোস নেই দুটো মানুষের মনে।
একজন সাজিদা আর অন্য জন সিয়া। আরহানের দিকে তাকিয়ে কটমট করছে ও। রুমের এক কোনায় দাঁড়িয়ে আছে। আরহান তাকাতেই দাঁত কিড়মিড় করে বলল
” একদম ঠিক হয়েছে। উচিত শিক্ষা হয়েছে। আন্টি আর কয়টা দিলো না ক্যান? আরো দেওয়া দরকার। ”

আরহান নির্বিকার স্তব্ধ। অন্য সময় হলে সামান্য পরে গিয়ে ও ব্যথা পেলে যে মেয়েটা পুরো মহল্লা মাথায় করে ফেলে সেই মেয়েটা আজ এ কথা বলছে। এতো টা খুশি সে?

” আম্মু ক্যান তুমি ওরে ছাড়িয়ে নিতে গেলা। আরো দেওয়া দরকার ছিলো। আমি হলে আরো কয় টা দিতাম। আল্লাহ বিচার করছে। চিঠি লেখা হচ্ছে, অন্য মেয়ে রে চিঠি দেয় আবার। আরো কয়টা খাওয়া উচিত ছিলো। ”

আরহানের ইচ্ছে হলো সিয়ার গলা টি,পে দিতে। এতো মা,র খেয়েছে ওহ। অথচ বলছে আরো দেওয়া উচিত। কি অসভ্য আর ফাজিল মেয়ে!

———

দু চোখের কোন বেয়ে পানি নেমে গেল আরহানের। স্মৃতি টুকু ভেসে উঠেছিলো কোনো এক কারনে। কি সুন্দর সে দৃশ্য। আরহানের ঠোঁটের কোনে স্মিত হাসি ফুটলো। সে সময়ে মা,রের কারনে ব্যথায় জ্বর ছিলো খুব। কদিন যেন জ্বরে পরে ও ছিলো। ঠিক ঠাক মনে হচ্ছে না ওর। মাথা টা কেমন যেন লাগছে। ঔষধ এর হাই পাওয়ারে সব কেমন ঝাপসা হয়ে গেল।

চলবে

#এমন_কেনো_তুমি
#ফাতেমা_তুজ
#part_4

আরহানের কিছু সমস্যার কারনে ডাক্তার বললেন আর কিছু দিন পরে রিলিজ দিবে ওকে। সাজিদা একটু অমত করছিলেন কিন্তু পরে বুঝলেন ছেলের শরীর স্বাস্থ্য ভালো হওয়া জরুরী সবার আগে। ফারেগ কথা বলতে লাগলেন। সাজিদা বললেন
” আমি একটু দেখা করে আসি? ”

” হুম যাও। ”

সাজিদা চলে এলেন ছেলের কাছে। পায়ের আঙুলের সাহায্যে মেঝে তে আঁকি বুকি করতে ব্যস্ত আরহান। সুস্থ থাকা সত্তে ও বাহিরের আলো গাঁয়ে মাখার সুযোগ হয় নি। এক ধরনের মানসিক সমস্যা এখনো বিদ্যমান। চৌদ্দ মাস মানসিক হসপিটালে কাটানোর পর একটা মানুষের পরিস্থিতি কি হতে পারে তা ধারণা করা যায় না। ছেলের পিঠে হাত বুলিয়ে দিলেন সাজিদা।হালকা মাথা উঁচু করে তাকালো আরহান। চোখ দুটো মারাত্মক লাল। তবে এ চোখে আকুলতা জড়িয়ে আছে।

” আম্মু, সিয়া। ”

থমকে গেলেন সাজিদা। দু চোখ বেয়ে পানি নামতে লাগলো। মুহুর্তেই হাউমাউ করে কেঁদে উঠলো আরহান সাথে সাজিদা ও। দুজনে যেন প্রতিযোগিতায় নেমেছে। এতো ব্যথা সহ্য করা যায় না।

****

সিয়ার ভয় মিশ্রিত চাহনি সব থেকে বেশি ভয় পায় আরহান। এর পেছনে বিশেষ কিছু কারন ও রয়েছে। আরহান কে ভয় পেলে কাঁদতে থাকে সিয়া। শুধু তাই নয় কান্নার সাথে আরহানের পিঠে চর থাপ্পড় মারে। আর সেই থাপ্পড় এর ভয় টাই বেশি ওর। সিয়া ছোট থেকেই বায়না ধরে বৃষ্টি তে ভেজার। আর সেটা ও আরহান কে সাথে নিয়েই। সিয়া এখন ষষ্ঠ শ্রেনীর ছাত্রী আর আরহান নবম। আজ ও আকাশে মেঘ করেছে। আরহানের মন টা খারাপ হয়ে গেল। বৃষ্টি তে ভেজার বায়না ধরবে মেয়ে টা। ভাবনার মাঝেই সিয়া চলে আসে। আরহান মুখ বাঁকিয়ে বলে
” কি হয়েছে? ”

” বৃষ্টিতে ভিজবো। ”

” তো আমি কি করবো? ”

” তুমি ও ভিজবা। ”

” ভিজবো না আমি। ”

” ভিজবে মানে ভিজবে। ”

” আমি কি তোমার মতো বাচ্চা সিয়া? ”

” আমি বাচ্চা? ”

” হু। ”

রাগ হয় সিয়ার। আরহান বিস্মিত চোখে তাকাতেই কান্না মাখানো স্বরে সিয়া বলল
” এমন কেন তুমি? সব সময় এমন করো।”

গট গট পায়ে চলে যায় সিয়া। আরহান শ্বাস ফেলে। ছোট সময়ের খেলার সাথী সিয়া। এটা ঠিক যে একসাথে বৃষ্টি তে ভিজেছে বহু বার। তবে এখন তো কৈশোর জীবনে পদার্পণ করেছে। এখন তো লোক মুখে নানান কথা শোনার আশংঙ্কা থাকবে।

মেয়েটার প্রতি অদ্ভুত মায়া কাজ করে ওর। তাই চলে যায় সিয়ার কাছে। তখন ওর হাসি ছিলো অতল সমুদ্রে ভেসে থাকা এক টুকরো কাঠের ন্যায়। কি সুন্দর হাস্যময় চাহনি। পুতুলের মতো চোখ গুলো দিয়ে ড্যাব ড্যাব করে দেখছিলো আরহান কে। ছেলেটার বুকের ভেতর ছ্যত করে উঠে। মায়াবি শ্যাম কন্যা বুকের ভেতর ঝড় তুলে দিয়েছে।

” কি হলো, আরে আসো না কেন? ”

আরহানের হাত ধরে ছাঁদে নিয়ে যায় সিয়া। বৃষ্টি তে বাচ্চা দের মতো খিল খিল করে হাসতে থাকে মেয়েটা। সিয়ার হাসি মারাত্মক। প্রচন্ড শব্দ করে হাসে মেয়েটা। বিষয় টা পছন্দ নয় আরহানের। ওর কেবলি মনে হলো মেয়েটা কে হাসতে বারণ করতে হবে। এতো জোড়ে হাসলে লোকে কি বলবে?

———-

আরহানের কান্না থেমেছে মাত্র। নাক টেনে বলল
” আমি কবে যাবো আম্মু? ”

” কিছু দিন পরেই যাবি বাবা। ”

” আরমান, ইমরান আসে নি? ”

” মানসিক হসপিটাল তো তাই নিয়ে আসি না। তুই বাবা চিন্তা করবি না একদম। আর মাত্র কয়েক দিন। ”

” হুম। ”

ছেলের কপালে অজস্র চুম্বন এঁকে দিলেন সাজিদা। বিদায়ের সময় চোখ ভিজে গেল আরহানের। খুব করে মন চাইলো বাবা মা কে জড়িয়ে রাখতে। বলতে ‘ তোমরা যেও না প্লিজ। এই অন্ধকারে আমার দম বন্ধ হয়ে আসে। কিন্তু বলা হলো না সেই কথা। ছল ছল নয়নে তাকিয়ে রইলো যাওয়ার পানে।মানুষের জীবন কতো ভাবে পরিবর্তন হয়। এই যে ছোট্ট রুম টার মাঝে কাঁটিয়ে দিলো এতো গুলো মাস। যাঁর স্পেশাল ডেকোরেশন ছাড়া চলে না সেই ছেলেটা আজ পরে আছে ছ্যত ছ্যতে বিছানায়। হাসলো আরহান, খিটমিটে হাসি। যা চাঁপা পরে রইলো ছোট্ট ঘর টার আবদ্ধ দেয়ালের ভেতর।

****

রিলেশনের কয়েক বছর পার হলো। সিয়া তখন নবম শ্রেনীর ছাত্রী। শ্যাম কন্যার মায়াবী পুতুল চোখে কতো বার হারিয়েছে আরহান তাঁর হিসেব নেই। মেয়ে টা কে দারুণ শাসন করতো আরহান। তবে ওর আচারণে মুগ্ধ হতো বেশ। সিয়া অন্য দের থেকে আলাদা। ওর অনুভব শক্তি অন্য রকম। ছোট থেকে সমস্ত কিছু চটজলদি বুঝে যেতো। আরহান ভাবতো মেয়েরা বুঝি রোমান্টিক হয় না। তবে ওর ধারণা কে বদলে দিয়ে সিয়া ছিলো অত্যাধিক রোমান্টিক। কখনো কখনো হাসতো আরহান। এমন একজন মানুষের সাথে প্রণয় হয়েছে যে কিনা নিজ হাতে ওর ভালোবাসা গড়ে দিয়েছে। ভালোবাসা কি, অনুভূতি কাকে বলে সংঙা দিয়ে দিয়ে বুঝিয়েছে। আর জয় করে নিয়েছে ওর মন। বহু দিন পর স্কুলের পাশের মোরে বন্ধুদের সাথে আড্ডায় জমায়েত করেছে আরহান। বরাবর ই ছেলেটার হাব ভাবের কারনে বন্ধু মহলে বেশ নাম ডাক। আরহান কে সবাই বেশ পছন্দ ও করে। ছেলেটার কন্ঠে জাদু আছে। দারুণ ভয়েস ওর। সুমন বলল
” একটা গান ধর না আরহান। ”

” গান ধরবো? উহুহ ভালো লাগছে না। ”

” আহা ধর না একটা গান। আচ্ছা আমরা সবাই মিলেই না হয় গাইবো। ”

মারুফ এর কথায় জোস পেল সুমন। এবার দুজন মিলে জোড় করতে লাগলো। আরহান হাত উঁচিয়ে বলল
” আচ্ছা গাইবো তো। ভেবে নিতে দে। ”

কিছুক্ষণ ভাবলো আরহান। বেলা বোস ওর খুব প্রিয় গান। তাই সেই গান টাই সকলে মিলে গাইতে শুরু করলো।

” চাকরিটা আমি পেয়ে গেছি বেলা শুনছো ”
” এখন আর কেউ আটকাতে পারবে না।”

” সমন্ধ টা এই বার তুমি ভেস্তে দিতে পারো ”
” মা কে বলে দাও বিয়ে তুমি করছো না। ”

” চাকরিটা আমি পেয়ে গেছি বেলা শুনছো ”
” এখন আর কেউ আটকাতে পারবে না। ”

” সমন্ধ টা এই বার তুমি ভেস্তে দিতে পারো ”
” মা কে বলে দাও বিয়ে তুমি করছো না। ”

” চাকরিটা আমি পেয়ে গেছি বেলা সত্যি ”
” আর মাত্র কয়েক টা মাস ব্যাস।”

” স্টার্টিংয়েই ওরা এগারো শো দিবে, তিন মাস পরে কনফার্ম। ”

” চুপ করে কেন বেলা শুনছো না ”
” এটা কি 2441139 ”

” বেলা বোস তুমি পারছো কি শুনতে? ”
” দশ বারো টা রং নাম্বার পেরিয়ে তোমাকে পেয়েছি ”

” দেবো না আর কিছু তেই হারাতে। ”

গান শেষে হৈ হৈ করলো সবাই। স্মিত হেসে ফোনে মনোযোগ দিলো ছেলেটা। বন্ধু গুলো পাগল বটে।

কয়েক মিনিট যেতেই সুমন বলল
” আরহান, আরহান দেখ ভাবি আসতেছে।”

সুমনের কন্ঠ কানে যেতেই সে দিকে তাকালো আরহান। সিয়া আসছে, সাথে ওর বান্ধবী রা ও আছে। প্রচন্ড জোড়ে হাসে মেয়েটা। আজ ও তাঁর ব্যতিক্রম নয়। চোখ দুটো সরু করে তাকিয়ে রইলো আরহান। সব সময় সিয়া কে বলে ‘ এতো জোড়ে হাসবা না, লোকে কি বলবে। কিন্তু মেয়েটা একি কাজ করে সব সময়।

হঠাৎ করেই আরহানের চোখ গেল সিয়ার হাতে। মেহেদী পরেছে ওহ। সিয়ার রাঙা হাত খুব পছন্দ ওর। আরহান লক্ষ্য করেছে অন্য মেয়েরা ও মেহেদী পরে হাতে তবে সিয়ার মতো সুন্দর লাগে না। হয়তো বুকের ভেতরে থাকা অনুভূতিই এর কারন। তবে আজ খুব রাগ হচ্ছে ওর। সিয়ার হাত এতো সুন্দর কেন লাগবে? সবাই কেন তাকাবে ওর সিয়ার দিকে। রাগে লাল হয়ে যাচ্ছিলো। ইচ্ছে হচ্ছে সিয়ার গালে চর বসিয়ে দিতে। ওর কথা হলো ‘ সিয়া শুধু মাত্র ওর জন্য মেহেদী পরবে। দরকার হলে রোজ পরবে। তবে অন্য কেউ যেন না দেখে। হঠাৎ করেই আরহানের সাথে চোখাচোখি হয় সিয়ার। ভয় পেয়ে যায় মেয়েটা। কাঁপতে কাঁপতে যা তা অবস্থা। অবাক হয় আরহান। সিয়া কে কিছু বলে নি ও তবু ও কেন ভয় পাচ্ছে সিয়া? বিষয় টা খুব ভাবাচ্ছে ওকে। তবে সব থেকে বড় ঝটকা লাগলো তখনি যখন পাগলের মতো মেহেদী ভর্তি হাত জামায় মুছতে লাগলো মেয়েটা। সকলে চমকিত, হা হয়ে গেছে মুখ। কোনো মতে রিক্সা থামিয়ে বান্ধবী দের ফেলেই চলে গেল সিয়া। পরিবেশ আপাততো ভারী হয়ে গেছে। বিষয় টা এতো দ্রুত ঘটেছে যে ভাষা হারিয়ে ফেলেছে সবাই।
” এটা কি হলো, ভাই ভাবি এটা কি করলো?”

” সেটাই তো। এটা কি করলো ভাবি? হঠাৎ করেই সব জামায় মুছে চলে গেল। ”

আরহান উত্তর দিতে পারলো না। তাকিয়ে রইলো পিচ ঠালা রাস্তা তে। সিয়ার বান্ধবী রা ও একে অপরের দিকে তাকাতে লাগলো। বিষয় টা বুঝতে পারলো তখনি যখন দেখলো সামনে আরহান বসে আছে।

মেয়ে তিনটে কাছে আসলো। আরহান বিস্মিত হয়ে আছে এখনো। সিয়ার বান্ধবীরা বলতে লাগলো
” এটা ঠিক হলো না ভাইয়া। আমরা শখ করে ওরে মেহেদী দিয়ে দিছি। ”

” আরে আমি তো কিছু বলি ই নি। ”

” সেটাই তো। তবু ও জামায় মেহেদী মাখালো। ”

সকলে এক জোগে হাসতে লাগলো। ওদের হাসি দেখে আরহান নিজে ও হেসে ফেললো। পুরো বিষয় টা ওদের মাথার উপর দিয়ে গেল। কি একটা অবস্থা!

——-

কান্নার মাঝে ও হেসে ফেললো আরহান। পাগলি সিয়ার কান্ড গুলো ছিলোই এমন। সেই ঘটনার পর বাড়ি ফিরতেই সাতাশ আটাশ বার স্যরি বলে সিয়া। আরহান তখন মুখ টিপে হাসছিলো। মেয়েটা কতো টা ভয় পেয়েছিলো কে জানে। সাধারণ এক চাহনি তেই মন পড়ে ফেলেছিলো হয়তো। বুকে হাত দিয়ে অশ্রু সিক্ত নয়নে মেঝে তে তাকিয়ে রইলো আরহান। বিড়বিড় করে বলল ” এমন কেন তুমি “। তবে ওর উত্তর দিলো না কেউ। দেয়াল বন্দীই থেকে গেল হাজারো কথা আর না পাওয়া উত্তর বিশেষ। শুধুই পরে রইলো ওহ আর ওর ভালোবাসা।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here